মনের কোণে🥀
#পর্ব_১৭
আফনান লারা
.
মামি টেবিলে খাবার সাজাচ্ছেন আর দূরে বসে থাকা নাবিলকে দেখছিলেন।তার মন ভীষণ খারাপ,যেন হাত তার নিজের পুড়েছে।লিখির হাত পুড়েছে বলে সে নিজেকে দোষারোপ করছে এখন।মামি শেষে সব কাজ ফেলে বললেন,’নাবিল??’
নাবিল অন্যমনস্ক ছিল বলে উত্তর দিলো না।মামি আবারো ডাকলেন,এবারও সাড়া আসেনি বলে কাছে এসে বসে বললেন ‘নাবিল?মেয়েটা তো নিজের হাতে খেতে পারবেনা।তুই গিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে আয় না বাবা’
নাবিল গাল ফুলিয়ে বললো,’পারবোনা।ওর জেদ নিয়ে থাকুক,আমি এত ছোট হতে পারবোনা আর’
‘রাগ এক পাশে রেখে আগে মেয়েটার কথা ভাব।তুই না খাওয়ালে সে কি আমার হাতে খাবে?বলবে রেখে দেন পরে খেয়ে নিব,এটা বলে আর পরেও খাবেনা।তোরা তো এখন চলে যাবি বাসায়।তোদের দুজনের যে রাগ!এমন করে মেয়েটা না খেয়েই রয়ে যাবে’
বাধ্য হয়ে নাবিল খাবার প্লেট নিয়ে চললো রুমের দিকে।লিখি ওখানে হেনার সাথে কথা বলছিল।লিখির বাবার লোকেরা নাকি অন্য এলাকায় খোঁজ পেয়েছে ওর তাই সবাই দল বেঁধে ওদিকেই আসছে।লিখির ভয় হলো।
না জানি এখানে এসে পড়ে!বিছানা ছেড়ে ছুটতে গিয়ে নাবিলের সাথে ধাক্কা লেগে গেলো ওর।
‘কোথায় যাচ্ছো?’
‘ভাইয়ারা নাকি আমার খোঁজ পেয়ে দলবল নিয়ে আসতেছে’
‘তোমার খোঁজ পেলো কি করে?এটা তো অসম্ভব ‘
কলিংবেল বেজে উঠলো তখনই।নাবিলের ভয় হলো,তাই খাবারের প্লেট রেখে লিখির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো পিছনের দরজার দিকে।তারপর বাসার পাশ দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো পাঁচ/ছয়জন ছেলে লিখির খোঁজ করছে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে।
এত তাড়াতাড়ি এই বাসার খোঁজ পেলো কি করে সেটাই মাথায় ধরছেনা।
নাবিল চটজলদি ওকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো।তারপর ফ্ল্যাটে ঢুকে দরজা আটকে দুজনে একসাথে ফ্লোরে বসে হাঁটু ভাঁজ করে চুপ করে আছে এখন।
লিখি ফিসফিস করে বললো,’যদি এখানেও এসে পড়ে?’
‘আসবেনা।আমি আছি কিনকরতে?মে*রে ভূত বানিয়ে দেবো। তাও তোমায় নিয়ে যেতে দেবোনা’
‘আপনি পারবেননা,আমার ভাইয়া কুস্তিগির ‘
‘আর আমি বক্সিং চ্যাম্পিয়ন। আচ্ছা খিধে পেয়েছে তোমার?’
‘হুম’
‘ওনারা যাক তাহলে মামির থেকে খাবার নিয়ে এসে খাইয়ে দিবো’
‘লাগবেনা।আমি আমার হাতে খেতে পারবো।আপনি যান না ঐ চিকনি চামেলির সাথে পুতুপুতু করেন”
‘আবার?আচ্ছা যাও আর কোনোদিন ঐ মেয়েকে নিয়ে কথা তুলবোনা।তাও খোঁচা দিওনা তো।’
কলিংবেল বাজছে।লিখি ভয়ে নাবিলের হাত খাঁমছে ধরলো।নাবিল ওর হাতটা ছাড়িয়ে দরজার কাছে গিয়ে বললো,’কে?’
‘আমি’
‘আমি কে?’
‘মনিশা,আহসান হোসেনের মেয়ে’
‘ওহ!’
নাবিল দরজা খুলে দিলো এবার।মনিশা মুচকি হেসে বললো,’গল্প করতে এলাম আপনাদের সাথে।গল্প করা যাবে?’
লিখি রাগে শেষ হয়ে যাচ্ছে,তাও কিছু বলছেনা।মনিশা জোর করে ভেতরে ঢুকে গেলো।গিয়ে বললো,’ওমা!আপনারা দেখি কোনো ফার্নিচার আনেননি।শোবেন কিসে?’
‘তোমার মাথায় বিছানা পেতে’
‘কিছু বললেন আপি?’
‘না কিছুনা বসো না।ফ্লোরেই বসো গল্প করতে।
মনিশা ধপ করে লিখির পাশে বসে গেছে।নাবিল আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল।লিখির চাহনি দেখি অন্যরুমে চলে যাচ্ছিল কিন্তু মনিশা ওকে থামিয়ে বললো,’আমাদের সাথে গল্প করবেন আসুন।’
লিখি জোর গলায় বললো,’না! উনার ফোনে একটা কাজ আছে।তাই না??যান কাজটা সেরে আসুন’
‘আরে না না।কিসের কাজ?ওসব কাজ পরে হবে।আসুন না ভাইয়া আমরা একসাথে গল্পগুজব করি’
নাবিল পড়েছে বিপাকে।মনিশা পারছেনা জোর করে বসিয়ে দিচ্ছে।নাবিল হাজার মানা করার পরেও সে কথার জোরে আটকে ফেলছে বারবার।
শেষে নাবিল লিখির হাত টেনে ধরে উঠিয়ে বললো,’আমরা দুজন একটু মামার বাসায় যাব।তুমি পরে এসো কেমন?’
মনিশার জবাবের আশা না করে নাবিল লিখিকে নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে গেছে।দরজায় হাত রেখে বললো,’তুমি কি যাবে নাকি আমাদের বাসায় থেকে যাবে?’
মনিশার তো মেজাজ গেলো বিগড়ে।হনহনিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে।লিখি হাসতে হাসতে শেষ।
‘মামার বাসায় একটু পর যাবো।আপাতত এখানেই বসে থাকি।ওরা গেছে কিনা বাবুকে কল করে জেনে নিতে হবে আগে।’
নাবিল তাই ফোন বের করে বাবুকে কল করলো।
‘হ্যালো বাবু?’
‘তুই কে?
‘আপনি কে?’
‘এই বাবু ছেলেটার কি হস তুই?’
‘আপনি কে বলছেন?’
‘আমি ওসমান।লিখিকে চিনিস?তোর সাথে বাবুর কি সম্পর্ক?তুই লিখির ব্যাপারে কিছু জানিস?জানকে বলে ফেল, নাহলে ফোনের উপর দিয়ে তোর গলা টিপে ধরবো’
নাবিল লিখির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’লিখির জামাই আমি।কার গলা টিপবা চিন্তা করো ওসমান ভাইয়া।ওহ হো!শালা আমার!!’
ওসমান তো রেগে মেগে আরও কত কি বলতে চাইলো কিন্তু নাবিল ততক্ষণে ফোন অফ করে ফেলেছে। লিখির ভয় আরও বেড়ে গেলো।চিন্তিত হয়ে বললো,’কি দরকার ছিল এত সব বলার? ভাইয়া এখন অনেক রেগে যাবেন।কি না কি করে বসে!যদি আপনার মামা মামির কিছু করে ফেলে?’
‘আমার মামা রিটায়ার্ড আর্মি।কি করবে তারা?মামার পেশার কথা শুনে পালাবে।এই জন্য আমি এত নিশ্চিন্ত। নাহলে তাদের জীবন রিস্কে ফেলতাম না’
এরপর দরজা বন্ধ করে রেখে আবারও ফ্লোরে বসে থাকলো দুজনে।লিখি ওড়না দিয়ে আঙ্গুল বাঁধছে আর খুলচে।নাবিল ফ্লোরে আঙ্গুল দিয়ে নিজের নাম লিখতে লিখতে বললো,’আমার বাবা যখন ধাওয়া করবে তখন আমি যেখানেই লুকিয়ে থাকিনা কেন,ঠিক ধরে ফেলবে। তোমার ভাইয়ার লিংক তেমন স্ট্রং না,দূর্বল।আমার বাবার লোকেরা হলে এতক্ষণে ধরে ফেলতো আমাদের।এত কাছে হয়েও মিস করতোনা’
‘আমার খিধে পেয়েছে ভীষণ। চলুন না আপনার মামার বাসায় যাই’
‘যদি তোমার ভাইয়েরা থেকে থাকে?কল তো দিলাম।দেখলে তো তোমার ভাইয়া ধরেছে।আর একবার দিলে যদি ওরাই ধরে তাহলে সন্দেহ করবে যে আমরা আশেপাশে আছি।’
‘আমার খিধে সহ্য হয়না।বাহিরে থেকে কিছু এনে দিননা।ভাইয়ারা তো আপনাকে চিনেনা’
‘ আচ্ছা বোসো’
নাবিল তৈরি হয়ে চলে গেছে।লিখি নাবিলের বাছাই করা রুমটাতে ঢুকেছে দেখার জন্য।রুম পেরিয়ে বেলকনিতে ওর কালকের রাখা ভেজা টিশার্টটা দেখতে পেলো আগে।ওটা এখন শুকিয়ে গেছে।তাই রেলিং থেকে হাতে নিয়ে নিচে তাকালো লিখি।দশতলা দালানটার চার তলায় তারা থাকে।নাবিলকে দেখা গেলো হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছিলো।লিখি এক দৃষ্টিতে ওর চলে যাওয়া দেখছে।কি ব্যাপার ফোন বাজছে কোথায়?
লিখি পেছনে ফিরে দেখলো ফ্লোরে নাবিলের ফোন।ভুলে রেখে গেছে মনে হয়।এগিয়ে এসে দেখলো নিকনেম সেভ করা ‘আম্মু’
কৌতুহল নিয়ে রিসিভ করেছে লিখি।
‘হ্যালো ভাইয়া,আমি নাহিদ,এটা তোমার নাম্বার জানি আমি।আম্মু সবসময় এই নাম্বার থেকে তোমায় কল করে।আমার কথা কি তোমার মনে পড়েনা?কতবার একসাথে আইস্ক্রিম খেয়েছি, কতবার একসাথে পুকুরে গোসল করেছি (হ্যাঁ তারপর কি বলবো?আচ্ছা আচ্ছা!)কতবার একসাথে ঘুমিয়েছি।আমাকে ভুলে গেলে?একবার কি বাসায় আসতে ইচ্ছে করেনা তোমার?হার্ট এটাক হয়েছে আমার জানো?’
সেই কি বুকে ব্যাথা।আহ হা!!এখনও ব্যাথা।
(কি বলছো?আমার না তোমার??ওহ ওহ!!)
সরি সরি, ভাইয়া আমার বুকে ব্যাথা না,আব্বুর বুকে ব্যাথা,তুমি প্লিজ চলে আসো।বাবা আইজেকেএলে ভর্তি, না না!!!আইসিইউতে ভর্তি।জলদি চলে এসো’
লিখির মাথার উপর দিয়ে গেলো সব।তবে যা বুঝলো, মনে হচ্ছিল বাচ্চা ছেলেটাকে কেউ একজন সব শিখিয়ে দিচ্ছিলো।সে সব রিপিট করছিল শুধু।এসব মনে করে খুব হাসি পাচ্ছে লিখির।কি বোকা ছেলেটা!!’
চলবে♥