মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ৬
তানিয়া রহমান

মিলা আর ফুফুআম্মা এত যত্ন নিয়ে ব্রেকফাস্ট সার্ভ করছে যা দেখে মেহবুবের এক সময় মনে হলো নিজেই নিজের ঘড়ের গেস্ট।আর চোখে ইরিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো সবুজ শাড়ীতে পরী পরী লাগছে।অস্ফুট ভাবে বলল “এ মেয়ে এত সুন্দর কেন ”

মিলা জুসের গ্লাসটা ইরিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল – খাচ্ছ না কেন ভাবী
ইরিন স্মিথ হাসলো
মেহবুবের বড় ফুফুআম্মা আমেনা বেগম তীর্যক দৃষ্টি নিয়ে ইরিনকে দেখে বলল- তোমার নাম কি
– ইরিন
– কত বছরের সংসার ছিল তোমার আগের স্বামীর সাথে
ইরিন মেহবুবের দিকে তাকালো। মেহবুব বলল- এসব কি ধরনের প্রশ্ন
আমেনা বেগম রেগে বলল- তুই চুপ কর,হুট করে বিয়ে করে নিলি যাচাই বাছাই করার সুযোগ পর্যন্ত দিলি না
ইরিন অভিমানের সুরে বলল- উনত্রিশ বছর
আমেনা বেগম তাচ্ছিল্য নিয়ে বলল – কি অপরাধ করেছিলে এত বছরের সংসার ভেঙ্গে গেল
মেহবুব আর নিতে পরলো না, চেচিয়ে অপুকে ডাকতে লাগলো – অপু!অপু!
অপু তার এত বছরের জীবনে বাবাকে এমন উঁচু স্বরে কথা বলতে দেখেনি।দৌড়ে এসে বলল- বাবা ডাকছো
মেহবুব মুখে কাঠিন্য এনে বলল- ফুফুআম্মাকে মেলবোর্নে কল ধরিয়ে দাও,বড়আপা কথা বলতে চেয়েছিলে গতকাল
– কাল কথা বলতে চেয়েছিলে আর আজ বলছিস আমেনা বেগম বলল
– তুমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলে
অপু বাবার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করে বলল – কিন্তু বাবা
– কোন কিন্তু নয় আমি যা বলছি তাই কর
অপু আমেনা বেগমকে নিয়ে নিজের রুমে চলে এল।
ইরিন হাফ ছেড়ে বাঁচল। এতক্ষণ তার মনে হয়েছিল সে ডাইনিঙে নয় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। মেহবুব ইরিনের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বলল – স্যরি
– ইটস ওকে

দুপুরে লাঞ্চ করে মিলা আর আমেনা বেগম চলে গেল। মেহবুব নিজের রুমে রেস্ট নিচ্ছল, ইরিন দরজায় দাঁড়িয়ে নক্ করলো। মেহবুব দরজা খুলে বলল- ওহ্ আপনি, আসুন
– আসব না
– তাহলে
– গেস্টতো চলে গিয়েছে চেঞ্জ করে কামিজ পরতে পারি
মেহবুব মাথা চুলকে বলল- শাড়ীতে কি সমস্যা
– শাড়ী পরে অভ্যেস নেই তারউপর এত ভারী শাড়ী
মেহবুবের মনে হলো “তাইতো এই গরমে প্রায় সারাটি দিন মেয়টা কাতান পরে আছে এটা তার বোঝা উচিৎ ছিল। ”
মেহবুবকে চুপ থাকতে দেখে ইরিন আবার বলল – সুতি শাড়ী আনা হয়নি কাল বাসায় যেয়ে নিয়ে আসব
– আপনি ঘন্টা খানিক ওয়েট করুন আমি আসছি
ওয়ালেট প্যান্টের পকেটে গুঁজে বেরিয়ে গেল।

আধ ঘন্টা পর
আম্বিয়া দরজা খুলে দেখলো ঋতুর বোন সেতু এসেছে। ঘড়ে ঢুকতে ঢুকতে সেতু বলল- দুলাভাই নাকি বিয়ে করেছে
– জ্বে আম্মা
– বউ দেখতে কেমন
আম্বিয়া হাসি হাসি মুখ করে বলল – এক্কেরে পুতুলের নাহাল
– তোমাদের ঐ পুতুল কই, আপার রুমে
– জ্বে না, গেস্ট রুমে
সেতুর মনে কিছুটা শান্তি এল।
অপু এসে সেতুকে জরিয়ে ধরে বলল- খালামনি! কেমন আছ
– কেমন আর থাকবো বল্ এই বুড়ো বয়সে তোর বাবা আবার বিয়ে করলো যখানে তোরই বিয়ের বয়স। আসলে পুরুষ মানুষের ছোক ছোক স্বভাব কখনো যায় না
– কি সব বলছো,তাছাড়া বাবা লোনলি হয়ে গিয়েছিল।
– তুইতো তোর বাবার সাত খুনও মাফ করবি,চল্ নতুন বউ দেখি
ইরিন বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল, কাল থেকে রেস্টলেস,মাথাটা জ্যাম হয়ে আছে। অপু দরজায় নক্ করে বলল – আন্টি আসব
ইরিন শোয়া থেকে উঠে বসে বলল- এস
ঘড়ে ঢুকে সেতু ইরিনকে দেখে চমকাল।এই মেয়েতো সাক্ষাৎ পরী।তার বোন ছিল উজ্জ্বল শ্যামলা আর এই মেয়ের গায়েতো হলুদ ছড়ানো।
সেতু তার আপার সংসারে নতুন কারো আধিপত্য মেনে নিতে পারছে না। নিজেকে ধাতস্থ করে বলল – এরকম কাতান পরে সঙ সেজে আছেন কেন
ইরিন সেতুর কথায় অপ্রস্তুত হয়ে গেল। একদম অচেনা একজন মানুষ এরকম বিশ্রী করে কিভাবে কথা বলতে পারে
ইরিন আমতা আমতা করে বলল – না মানে সুতি শাড়ী আনা হয়নি
– দুলাভাইকে কিভাবে ভুলালেন ঐ রুপ দিয়ে
অপুর এবার আর সহ্য হলো না, রাগ হয়ে বলল- তোমারা পেয়েছোটাকি শুনি সকাল বেলা দাদু শোনালো এখন আবার তুমি শোনাচ্ছ, সমস্যা কি তোমাদের
– শুনিয়েছি বেশ করেছি

মেহবুব দু’হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে ইরিনের ঘড়ে ঢুকলো, সেতুর দিকে তাকিয়ে বলল – কি অবস্থা? কখন এসেছো
সেতু মেহবুবের কথার জবাব না দিয়ে বলল – দুলাভাই কাজটা কি ঠিক করলেন
– কোন কাজ
– এই বয়সে এসে বিয়ে করে নিলেন
মেহবুব হাসতে হাসতে বলল- বিয়েইতো করেছি লিভ টুগেদারতো করছি না
ইরিনের হাতে শপিং ব্যাগ দিয়ে আস্তে করে বলল – সুতি শাড়ী আছে চেঞ্জ করে ডাইনিঙে আসুন।
তারপর মেহবুব সেতুকে বলল- চল শালিকা চা কফি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করো

কফিতে চুমুক দিয়ে সেতু বলল- একটা কাজ ভাল করেছেন
মেহবুব সরু চোখে তাকিয়ে পিন্চ করে বলল – আমি তাহলে ভালো কাজো করি
– আপার ঘড়টাযে ঐ মেয়েকে দেননি এটা ভাল লাগছে
– নিজেকে যখন দিয়ে দিয়েছি তখন রুমে কি এসে যায়
– এত বড় মেয়ের সামনে বাসর ঘড় সাজিয়ে বাসর করেছেন আপনার বোধ বুদ্ধি এতটা লোপ পাবে ভাবিনি
– বিয়ে করতে যখন লজ্জা পাইনি বাসর করতে সমস্যা কোথায়

বেগুনি রঙের শাড়ীর সাথে লাল রঙের স্লিভলেস ব্লাউজ পরে ডাইনিঙে এল।ভেজা চুলে স্নিগ্ধতায় ভরে গেছে ও মুখ আর লাল ব্লাউজটা তার হলুদ রাঙা শরীরে সূর্যের মতো আভা ছড়াচ্ছে।
মেহবুবের চোখে নেশা ধরে গেল , সেতু মেহবুবের দিকে একবার তাকিয়ে ইরিনকে বলল- এতটা খোলামেলা পোশাক পরে কোন পুরুষের সামনে না আসাই ভাল
ইরিন সেতুর কথা শুনে থমকে দাড়ঁলো, মেহবুবের চোখে চোখ রেখে বলল- আমি রুমে যাচ্ছি
– মেহবুব সেতুর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল – কার সঙ্গে কেমন বিহেভ করতে হয় আজও শিখলে না
চলবে
কপি করা যাবে না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here