মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ৩
তানিয়া রহমান

কেবি স্কয়ারে বসে আছে মেহবুব।এসির বাতাসেও দরদর করে ঘামছে,জীবনে সে বহু ভাবে বন্ধুদের উপকার করেছে কিন্তু বিয়ে করেও যে উপকার করা যায় এটা ভাবতেই কেমন অস্বস্তি কাজ করছে। তৃতীয়বারের মতো বরফ শীতল গ্লাস মুখের কাছে তুলে ধরলো মেহবুব।
ইরিন বলল- আরও পানি অর্ডার করব
মেহবুব দু দিকে মাথা নাড়ালো যার অর্থ না
ইরিন আবার বলল -আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আছে
মেহবুব এবার আরও দ্রুত দু’দিকে মাথা নাড়ালো
ইরিন হেসে বলল – আমার কিন্তু অনেক কিছু জিজ্ঞেস করার আছে
মেহবুব এবার প্রথম কথা বলল- জ্বি বলুন
– আপনার কোন বেবী আছে
– একটা মেয়ে
– কোন ক্লাসে পড়ছে
– ঢাকা ভার্সিটিতে ফিজিক্সে অনার্স
– ওয়াও!আপনার মেয়ের কোন ছবি আছে
মেহবুব সেলফোন থেকে ছবি বের করে ইরিনকে ফোন এগিয়ে দিল।ছবি দেখে ইরিন বলল- খুব সুন্দর! কি নাম ওর
– অপরাজিতা, আমি ওকে অপু বলে ডাকি
– আপনি যে বিয়ে করছেন ও জানে
– না বলিনি
– আপনি ওর সঙ্গে কথা বলুন কিন্তু ভুলেও ডিল টিলের কথা বলবেন না, এটা আপনার এবং আমার দুজনের জন্যই অপমানজনক
– জ্বি বলব না
– গার্ডিয়ান বলতে আমার বড় ভাই – ভাবী ছাড়া কেউ নেই, ওদেরকে আপনার কথা বলেছি, ভাইয়া আপনার সঙ্গে পরিচিত হতে চাচ্ছে।
মেহবুব কেশে উঠলো, এই ষাটে পা দেয়া বুড়োকে আবার দেখাদেখির কি আছে বুঝতে পারলো না। মিনমিন করে বলল – এটাতো ওরকম অর্থে বিয়ে না
– সে যেরকম অর্থেই হোক আমিতো আর রাস্তার মেয়ে নই যে আপনার সঙ্গে ঢ্যাংঢ্যাং করে হাটা দিব
– ছিঃছি আমি আসলে ওভাবে বুঝাতে চাইনি
– আপনি আজ বিকেলে আমাদের বাসায় আসতে পারবেন
– আজই যেতে হবে
– হুম ভাইয়া সেরকমই বলছিল
মেহবুব মনে মনে বলল ” বন্ধুকে সাহায্য করতে যেয়ে নিজেইতো নাজেহাল হয়ে যাচ্ছি,সামনে আরও কত কি আছে কে জানে
মেহবুব, প্রিতম আর রুনার সামনে বসে আছে পাশে ইরিন।প্রিতম আর রুনা যেভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে তাকে দেখছে তাতে মেহবুবের মনে হল চিড়িয়াখানার সবচেয়ে দূর্লভ জন্তু সে।
মেহবুব মাথা নিচু করে বসে আছে, প্রিতম আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলল- ইরিনকে বিয়ে করতে হলে আপনাকে একটা কথা দিতে হবে
মেহবুব মাথা নিচু করেই বলল- জ্বি বলুন
– কোনভাবেই আপনি ইরিনকে কষ্ট দিতে পারবেন না এই শর্তে রাজী হলে বিয়ে হবে।
– আমি রাজী

ইরিন বসুন্ধরা শপিংমলে এসেছে অপু আর মেহবুবকে বিয়ের শপিং করে দেওয়ার জন্য। সেলসম্যান বিভিন্ন প্যাটার্নের কাঞ্জিভরম শাড়ী দেখাচ্ছে। অপু বলল- আন্টি এত ভারী শাড়ী আমি নিব না, তুমি বরং আমাকে জামদানী কিনে দাও
– ইরিনা সেলসম্যানকে বলল- জামদানী হবে
– জ্বি ম্যাম
ইরিন বেবী পিংক কালারের জামদানী কিনে দিল অপুকে আর মেহবুবকে কিনে দিল রয়েল ব্লু কালারের পাঞ্জাবি আর রাডো ঘড়ি।
মেহবুব জানে ইরিন তার বাবার সম্পত্তির একটা বিশাল অংশের মালিক, টাকার অভাব নেই কিন্তু তাই বলে এত দামী ঘড়ি তার কাছে বিলাসিতা ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না।
মেহবুব আমতা আমতা করে ইরিনকে বলল- আমার মনে হচ্ছে এত দামী ঘড়ির প্রয়োজন নেই, এটা জাস্ট বিলাসিতা
– বিয়েতে না হয় একটু বিলাসী হলেন
– আমার অস্বস্তি হচ্ছে
– হোক, সবসময় সবকিছু যে স্মুথলি হবে সেটা কেন ভাবছেন
মেহবুব আর কথা এগুলো না ও বুঝে গিয়েছে এ মেয়ে কথা শোনার নয়।

– বাসায় এসে অপু রাগ হয়ে মেহবুবকে বলল- বাবা এটা তুমি কেন করলে
– আমি আবার কি করলাম
– তুমি আন্টিকে কেন কিছু কিনে দিলে না
– ও হ্যাঁ তাইতো,এটাতো আমার মাথায় আসেনি
-এখনই চল
– কোথায়
– আন্টির জন্য শপিং করবো
– এখনি কেন কাল যাব
– না এখনই যাবে

মেয়েকে নিয়ে আবার বসুন্ধরা শপিংমলে এল মেহবুব। নুড কালারের কাঞ্জিভরম শাড়ী কিনে মেহবুব সেলসম্যানকে বলল- আরও একটা কাতান দেখান
অপু বলল- কার জন্য বাবা
মেহবুব আনমনে বলল- বিয়ের শপিং জোরায় জোরায় করতে হয়
সবুজ রঙের সানন্দা আর নুড কালারের কাঞ্জিভরম নিয়ে যখন ফিরছিল তখন অপু বলল- বাবা চল ম্যাচিং ব্লাউজ নিয়ে নিই এত তারাতাড়ি তো বানানো যাবে না
মেয়ের কথায় সায় দিল মেহবুব
আন্ডারগার্মেন্টস শপে মেহবুবকে ঢুকিয়ে দিয়ে অপু বলল- তুমি কিনে ফেল আমার একটা জরুরী কল এসেছে কথা বলে আসছি
মেহবুব মেয়ের বাহানা বুঝতে পারলো।
ম্যাচিং পেটিকোট ব্লাউজ কেনার পর সে একটা ভয়াবহ কাজ করে ফেলল,ম্যাচিং কাচুলি, প্যান্টি আর দুটো নাইটি কিনে ফেলল।
বিল পে করার পর সেলসগার্ল যখন শপিং ব্যাগ হাতে দিল তখন মেহবুবের মনে হল”এটা সে কি করল!ব্লাউজ, পেটিকোট পর্যন্ত ঠিক ছিল কিন্তু বাকীগুলো?” অপু দেখে কি ভাববে!এটা মনে হতেই মেহবুবের পানি পিপাসা পেল।
কাঁচের দরজা ঠেলে বাইরে আসতেই অপু কোথা থেকে যেন উড়ে এসে বলল- বাবা তারাতাড়ি চল আন্টির জন্য রিং নিতে হবে
শপিং করার বিশাল ঝামেলায় মেহবুবের এক ফাঁকে মনে হল “মনিরকে দু ঘা লাগিয়ে দিতে, শালা আর মানুষ পেল না, তার কাঁধেই বন্দুক রেখে শুট করতে হবে?
চলবে
কপি করা যাবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here