মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ১৭
তানিয়া রহমান
মেহবুব অপুর রুমে এসে বলল- কি করছ
পিসি থেকে মুখ সরিয়ে অপু দেখলো মেহবুব ওর কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে, মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল – এ্যাসাইনমেন্টের জন্য কিছু ইনফরমেশন লাগবে তাই গুগলে সার্চ করছি
– এসব এখন রাখ,কথা আছে, তোমার মায়ের রুমে এস
ঋতুর ঘড়ে অনেক দিন আসা হয় না মেহবুবের,রুমে ঢুকে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল, ছিমছাম সুন্দর সাজানো গোছানো, কত শত সুন্দর মুহূর্ত কেটেছে এই ঘড়ে ঋতুর সাথে মেহবুবের।ঋতুর হাস্যোজ্জ্বল ছবির দিকে তাকিয়ে মেহবুব মনে মনে বলল “কেন তুমি চলে গেলে আমাকে এমন এলোমেলো করে দিয়ে ”
অপু দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলো মেহবুব ঋতুর ছবির দিকে তাকিয়ে আছে, অপুর ভিতরটাও কেঁপে উঠল মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে, নিজেকে সামলে অপু বলল- বাবা আসব
– এস
– কি বলবে
মেহবুব নিজের পাশের ফাঁকা জায়গা দেখিয়ে বলল- বোস
বাবার পাশে বসে মেহবুবের কাঁধে মাথা রাখলো অপু
– মাম্মাকে খুব মিস করি
– আমিও করি,মাথায় হাত বুলিয়ে বলল মেহবুব
– কি বলবে বলছিলে
– আমরা নিকেতনে শিফট করবো
– মাম্মাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাব না বাবা
– অপু! মা আমার, খুব মন দিয়ে আমার কথা শুনো
মেহবুবকে এক হাতে জরিয়ে বলল অপু- বল শুনছি
– এই ফ্ল্যাট আমার কাছেও ভীষণ precious, তোমার মা আর আমি একটু একটু করে জমিয়ে এটা কিনেছিলাম, আমাদের প্রথম সংসার, তোমার জন্ম কত কত মেমোরেবল মোমেন্ট জরিয়ে আছে এখানে ইচ্ছে করলে অনেক আগেই নিকেতনে শিফট করতে পারতাম কিন্তু এখান থেকে যেতে মন চাইনি কখনো, এখনো চাইছে না, কিন্তু সময়ের সাথে ইচ্ছেটাও বদলে যায়, তোমার আন্টির সঙ্গে যে বিশ্রী ঘটনা ঘটেছে আমি চাই না এরকম আরও ঘটুক, তুমি অমত করোনা,সময় যখন বদলে যেয়ে আবার আমাদের অনুকূলে ফিরবে তখন না হয় ফিরে আসব
– এই ফ্ল্যাটের কি হবে
– যেমন আছে তেমনই থাকবে, মাঝে মাঝে এসে দেখে যাব তোমার মাকে
– কবে যাব
– তুমি গুছিয়ে থাক সময় হলে বলব
– ওকে!
ঝকঝকে সাদা প্রাডো ঢুকে গেল নিকেতনের ছোট্ট ডুপ্লেক্স বাড়িতে, লন,সুইমিংপুল আর চোখ ধাধানো গার্ডেন দেখে ইরিনের মনটা ভাল লাগায় ভরে গেল,
ইরিন মেহবুবকে বলল-এটা কার বাড়ি
– ভিতরে এস বলছি
নিচতলার এল শেপে লিভিং ডাইনিং, আর কিচেন, ডান দিকের দেয়াল জুড়ে অপুর ছোট থেকে বড় বেলার কতরকম ছবি, মাঝের ছবিটায় চোখ আটকে গেল ইরিনের,অপু হাসি হাসি মুখ করে দু’হাতে আগলে আছে ইরিন আর মেহবুবকে।মেহবুব ইরিনের পিছনে দাঁড়িয়ে বলল- এখন কি বুঝতে পারছো এটা কার বাড়ি
-পারছি
মেহবুব ইরিনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল,ইরিনের কাজলে টানা স্বচ্ছ স্রোতহীন চোখে নিজের চোখ জোরা তুলে ধরলো, গভীরে দৃষ্টি ফেলে বলল- তোমার চোখে আমার ছবি আঁকবে ইরা
– রংতুলি হারিয়ে ফেলেছি
– আমি খুঁজে দিই
– রঙগুলো সব ঝড়ে গিয়েছে অশ্রু হয়ে
– একবার বলে দেখ রঙধনুর সাতটি রঙ লুটিয়ে দিব তোমার পায়ের কাছে
– বড্ড অগোছালো মন ছবি আঁকতে ভুলে গেছে
– মেঘের কাছ থেকে জল এনে রঙধনুর রঙে মিলিয়ে দিব, গুছিয়ে দিব সবকিছু তুমি শুধু ভাবনার জালে আমাকে বুনো
– ভয় হয়
– কিসের
– যদি চোখের জলে রঙ ধুঁয়ে যায়
– একবার ভরসা করে দেখ রঙ ধোঁয়া জল সুতোয় গেঁথে তাজ বানিয়ে নিব
-আমাকে একটু সময় দিন প্লিজ!
মেহবুব ইরিনেকে জরিয়ে ধরে বলল- বেশতো দিলাম।
অফিসের গেট দিয়ে ঢোকার সময় গাড়ির জানালা দিয়ে মেহবুব খেয়াল করলো মনির ইমরানের সঙ্গে হাতাহাতি করছে।দ্রুত হেটে রুমে এসে মেহবুব ইমরানকে কল করলো
– অফিসের সামনে এসব কি ইমরান
– স্যার মিঃ মনির স্ল্যাং ল্যাংগুয়েজ ইউজ করছিল আপনাকে আর ম্যামকে নিয়ে
– ওকে পাঠিয়ে দাও
– সাথে রিভলবার আছে স্যার
– ওটা তোমার কাছে রেখে উপরে পাঠাও
মনিরের ঠোঁটের একটা পাশ কেটে রক্ত বের হচ্ছে, কপালের বা পাশ ফুলে ছোট্ট বলের মত দেখাচ্ছে।
মেহবুব টিস্যু বক্স এগিয়ে দিয়ে বলল – ব্লাড মুছে নে
মনির টিস্যু নিয়ে মুছতে শুরু করলো
– ইরাকে আর কত নিচে নামাবি মনির
চোখ তুলে তাকালো মনির তারপর বলল- ইরিকে তুই কোথায় লুকিয়েছিস
– ও কি লুকানোর জিনিস
– হেয়ালি রাখ,কোথায় শিফট করেছিস ওকে নিয়ে
– তুই খুঁজে বের কর
মনির তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল – আমার পিছনে টিকটিকি লাগিয়েছিস কেন
– তোর এরকম কেন মনে হলো
মনির তাচ্ছিল্য নিয়ে বলল – ওদের বলিস আমার কাছে ট্রেনিং নিয়ে কাজে নামতে
– রিভলবার নিয়ে কেন এসেছিস আমাকে মেরে ফেলতে
মনির চুপ করে রইল
– তোর কি মনে হয় আমাকে মেরে ফেললেই সব সমস্যার সমাধান
– বিশ্বাসঘাতকদের বেঁচে থাকতে নেই
– নিজের মত সবাইকে ভাবিস না
মনির হঠাৎ নরম কন্ঠে বলল – দোস্ত দে না ফিরিয়ে ওকে,আমি আর পারছি না, ও ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই
– তোর জন্য ইরার রঙহীন ভালবাসা ধূসর প্রজাপতি হয়ে উড়ে গিয়েছে, মিছে কেন টানা হেঁচড়া করছিস
মনির অপলক দৃষ্টি নিয়ে মেহবুবের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল ” সত্যি কি! ”
চলবে
কপি করা যাবে না