#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-৮
ফারহান দরজা বন্ধ করে পিছনে ফিরে রোদ্রির ভয়ার্ত চোখে চোখ পরে তার।শব্দ করে হেসে উঠে সে।
হাসির শব্দে ভয়টা দিগুন হয়ে যায় রোদ্রির।চোখের পানি ছেড়ে দেয় সে।
একপা একপা করে রোদ্রির দিকে এগিয়ে যায় ফারহান।রোদ্রিও পিছাতে থাকে।একসময় টেবিলের কোনায় পা লেগে পড়ে যেতে নেয়।পড়ে যাওয়ার আগেই হাত ধরে কাছে টেনে নেয় ফারহান।একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রোদ্রিকে।ফারহানের সপর্শে শরীর কেঁপে উঠে রোদ্রির।ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে সে।চোখের কোঁণ দিয়ে টপটপ করে গড়িয়ে পরে পানি।কাঁপা গলায় বলে,
-ফারহান প্লিজ ছাড়ুন।এমন করবেন না।
-কেনো জান?আমাকে ভালো লাগে না?হুম?
ফারহান পুরোই মাতাল।কনঠ জড়িয়ে আসছে তার।কথাবার্তায় কেমন যেন জড়তা।
রোদ্রি বুঝতে পারছে ফারহান নিজের মধ্য নেই।রেগে কথা বললে সে আরো এগ্রেসিভ হয়ে পরতে পারে।তাই অনুরোধের সুরেই বলে,
-ফারহান আপনি আমাকে ছাড়ুন।এসব ঠি ক না।আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না?ছাড়ুন বলছি।বলে ফারহানের বাহুতে হাত দিয়ে ধাক্কা দেয় রোদ্রি।কিন্তু সরাতে পারে না।
এবার আর সামলাতে পারেনা ফারহান।একহাত দিয়ে রোদ্রির মুখ চেপে ধরে।ওড়না সরিয়ে ফেলে দিয়ে খুব রুডলি গলায় ঠোঁট চেপে ধরে।অনবরত হাত দিয়ে ধাক্কা দেয় রোদ্রি।কোনোভাবেই ছাড়াতে পারেনা নিজেকে।মনে মনে বারবার আল্লাহকে ডাকে।
উপরতলার ওয়াশরুমে এসেছিল নীরাদ।বের হতেই দেখলো রোদ্রিকে নিয়ে রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো ফারহান।
কপাল কিনচিত কুচকে এলো তার।রোদ্রি সেরকম মেয়েই না যে ফারহানের সাথে রুমে রাত কাটাবে।তবে কি ফারহান জোর করছে রোদ্রির সাথে?ভাবতে ভাবতেই সেই রুমের দরজার সামনে যায় নীরাদ।কিছুক্ষন অপেক্ষা করে তাদের বের হওয়ার জন্য।বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেলেও তারা বের হয়না।রুমের থেকে তেমন আওয়াজ পাচ্ছেনা সে।বাধ্য হয়েই দরজায় কান লাগালো নীরাদ।মৃদু কন্ঠে চাপা কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়।ভয় পেয়ে যায় নীরাদ।রোদ্রির কিছু হলোনাতো?
দরজা ধাক্কায় সে।ভরাট গলায় ডাকে,
-মিস.রোদ্রি?মিস রোদ্রি?
নীরাদের কন্ঠ শুনে যেন প্রান ফিরে পায় রোদ্রি।ডাকতে চায় তবে পারেনা।শক্ত করে মুখ চেপে আছে ফারহান।
মুখ দিয়ে জোরে জোরে “উমম””উমম” শব্দ করে সে।
-মিস.রোদ্রি?আপনি ঠি ক আছেন?
এবার ফারহানের হাতে কামড় বসায় রোদ্রি।”নীরাদ,প্লিজ বাঁচান আমাকে”বলে চিৎকার দেয় সে।
ফারহান একবার তাকিয়ে আবারো মুখ ডুবায়।তার কানে কোনো কথাই যাচ্ছেনা।
রোদ্রির চিৎকার শুনে নীরাদ দ্রুত কয়েকবার কাঁধ দিয়ে বাড়ি দেয় দরজায় একপর্যায়ে ছিটকিনি খুলে যায় দরজার।ভেতরে ঢুকে এই অবস্থা দেখে দৌড়ে ফারহানের কলার টেনে রোদ্রির কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়।রাগে কপালের রগগুলো ফুলে উঠেছে নীরাদের।ফারহানের নাক বরাবর একটা ঘুষি মারতেই নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে।এমনেই মাতাল ছিল তার উপর আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পরে যায় ফারহান।
আবারো ফারহানকে মারার জন্য হাত বারাতেই আচমকা রোদ্রি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নীরাদকে।নীরাদের বুকে মাথা রেখে পিঠের দিকের শার্ট খামছে ধরে জোরে শব্দ করে কান্না করে দেয়।অস্থির হয়ে উঠে নীরাদ।রোদ্রির কান্না সহ্য হয়না তার।মেয়েটার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে সে।রোদ্রিকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও ধরেনা।আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।কান্নার বেগ আরো বেড়ে যায়।এখনো মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে নীরাদ।
-মিস.রোদ্রি?শান্ত হোন।আপনি ঠি ক আছেনতো।কিছু হয়নি।
কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে রোদ্রি।থেমে থেমে বলে,
-আপনি…আপনি না থাকলে তো….
-আচ্ছা,আমি আছিতো।কান্না থামান।ভয়ের কিছু নেই।
রোদ্রিকে আলতো করে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয় নীরাদ।কেউ এই অবস্থায় দেখে ফেললে ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।
মেঝে থেকে ওড়নাটা তুলে রোদ্রির হাতে দেয়।দ্রুত গায়ে জড়ায় রোদ্রি।মনে মনে আল্লাহর কাছে হাজারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নীরাদকে পাঠানোর জন্য।
চোখের কাজল লেপটে গেছে।লিপস্টিক ছড়িয়ে গেছে।কাঁদতে কাঁদতে চোখফুলিয়ে ফেলেছে রোদ্রি।
পকেট থেকে রুমাল বের করে এগিয়ে দেয় রোদ্রির দিকে।নরম গলায় বলে,
-মিস.রোদ্রি মুখটা মুছে নিন।আর ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন।আপনাকে বাসায় দিয়ে আসব আমি।রাত হয়ে গেছে।
মাথা কাত করে সম্মতি দেয় রোদ্রি।হাত উঠিয়ে ফারহানের দিকে ইশারা করে।
-ওকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবেনা।ওকে আমি দেখছি।আপনি যান।কন্ঠে তীব্র রাগ প্রকাশ প্রায় নীরাদের।
_______________
মাথা নিচু করে গাড়িতে বসে আছে রোদ্রি।হাত দিয়ে চোখ মুছছে বারবার।পাশেই নীরাদ ড্রাইভ করছে।
-তো আপনি আপনার ভাইয়া ভাবির কথা ভেবে চুপ ছিলেন?ফারহান যে দিনের পর দিন আপনার সাথে এমন আচরণ করেছে,আপনার কি মনে হয় আপনার ভাই ভাবি এগুলো জানলে খুব খুশি হতো?আপনি মারাত্মক বোকা একজন মেয়ে।উনাদের যদি আপনি একবার জানাতেন তাহলে হয়তো আজ এই পরিস্থিতি তৈরিই হতোনা।
আপনি কি বুঝতে পারছেন আমার কথা?
কাঁদতে কাঁদতেই উপর নিচে মাথা নাড়ায় রোদ্রি।
কিছুক্ষণ রোদ্রির দিকে তাকিয়ে থাকে নীরাদ।মেয়েটা মনে হয় আজকে চোখের সব পানি শেষ করেই ক্ষান্ত হবে।
-কান্না করা বন্ধ করেবেন না তাইতো?ওকে ফাইন।কান্না করেন।তারপর যখন মাথা ব্যাথা করবে তখন বুঝবেন।এমনেও আপনি নিজের ভালোটা বুঝেননা।আসলে যারা বুঝতে চায়না তাদের বুঝিতে লাভ নেই।
আর আমার কথা শুনে তো আপনার কোন লাভ নেই।আমি তো বাইরের মানুষ।
-আপনি ভুল বুঝছেন।আমি সেরকম বলিনি।আমি..
-আমি তো তাও ভুল বুঝেছি মিস।আপনি তো ভুল ঠি ক কিছুই বোঝেন না।
রোদ্রি কিছু বলেনা।মন খারাপ হয় তার।নীরাদ রেগে আছে।তার সাথে রাগ না দেখালেও সে বুঝতে পারছে।
__________
বাসায় পৌছে কলিংবেল বাজাতেই গেট খুলে মিরা।খুলতে খুলতেই বলে,
-তোর এতো দেরি হলো…এতটুকু বলে থেমে যায় মিরা।সামনে নীরাদের পাশে রোদ্রিকে দেখে অবাক হয়।
বিস্মিত কন্ঠে বলে-
-নীরাদ তুমি?এতরাতে?রোদ্রি..তোমার সাথে?তোর চোখমুখ এমন দেখাচ্ছে কেন রোদ্রি?কি হয়েছে!!
-ভাবি,ওকে রুমে যেতে দিন।আমি বলছি কি হয়েছে।আর রিদান ভাইয়া কি জেগে আছেন?আপনাদের সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
-আসো ভেতরে আসো।রোদ্রি রুমে যা।আর নীরাদ আসো, রিদান জেগেই আছে।
রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো রোদ্রি।ও ভাবতেও পারেনি আজকে এমন কিছু হবে।নীরাদের করা কেয়ারগুলো প্রচন্ড ভালো লাগে ওর।কেমন একটা শান্তি শান্তি লাগে।মনে হয় নীরাদ পাশে থাকলে ওর কোন খারাপ হতে পারবেনা।নীরাদ ওর সাথে খারাপ কিছু হতেই দিবেনা।
কিছুদিনের পরিচয় অথচ কত ভরসাপূর্ণ অনুভূতি।
একটা কথা আছেনা,
ভালোবাসার জন্য অনন্তকালের প্রয়োজন নেই।
একটি মূহুর্তই যথেষ্ট!
—–ইভান তুর্গেনিভ
চলবে….???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here