#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-২০(সমাপ্তি পর্ব)
কাঁচের জানালার টেনে দেয়া পর্দার ফাঁক দিয়ে সকালের মিষ্টি রোদের সুক্ষ রশ্মি চোখের উপর পরতেই নড়েচড়ে উঠলো রোদ্রি।ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে সে।ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করছেনা।কোনমতে চোখ খুলে মুখটা পাশে ঘুরাতেই থমকে গেল সে।নীরাদ তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নীরাদের নি:শ্বাস এসে রোদ্রির চোখেমুখে আছড়ে পরছে।নীরাদের হাতের শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ সে।
নীরাদ মুচকি হেসে রোদ্রির এলোমেলো চুলগুলো মুখের থেকে সরিয়ে দিল।এখনও তার দৃষ্টি স্হিরভাবে রোদ্রির চোখে আটকে আছে।
রোদ্রি চোখগুলো ছোট ছোট করে প্রশ্ন করে,
-এভাবে,কি দেখছেন?
-“আমার রোদ্রিকে।”নীরাদের সোজাসাপটা উওর।
রোদ্রি চোখ নামিয়ে নেয়।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
-হাত সরান।আমি উঠবো।
নীরাদ হাত না সরিয়ে ফট করে রোদ্রিকে ঘুরিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।হাতটা আলগা করে দিতেই রোদ্রি দ্রুত উঠে যায়।
মনে মনে হাসে নীরাদ।ভাবে,মেয়েটা এতো লজ্জা পায়!!বিয়ের পর লজ্জা যেন আরো বেড়ে গেছে।
সে কি বুঝেনা”তার লজ্জামাখা চোখের চাহনি,মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে সে বারবার খুন হয়”।
__________
ভাইয়ের বাসা থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।বিদায় নিয়ে দ্রুত গাড়িতে বসে নীরাদ।রোদ্রির সিটবেল্ট বেঁধে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
খুব খুশি দেখাচ্ছে রোদ্রিকে।নীরাদ আড়চোখে একবার পরখ করে নিল তাকে।তারপর সামনে তাকিয়ে ড্রাইভিংয়ে মনযোগ দিল।রোদ্রি আশেপাশে থাকলে সে কোন কিছুতেই মন দিতে পারেনা।তার অবচেতন মনের সকল অনুভূতি সেই রোদ্রিতে গিয়েই আটকে যায়।কবে,কখন কিভাবে যে মেয়েটাকে এত বেশি ভালোবেসে ফেললো সে নিজেও জানেনা।এসব ভাবতে ভাবতেই ঠোঁটের কোঁণে হাসি ফুটে তার।
এতক্ষণ ধরে নীরাদকে পর্যবেক্ষন করছিল রোদ্রি।সিটে মাথা কাত করে এলিয়ে নীরাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো সে।
নীরাদকে এভাবে হাসতে দেখে ভ্রু কুচকে এলো তার।জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলল,
-আপনি হাসছেন কেনো?
নীরাদ ফিরে তাকায়।রোদ্রির মুখের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখে।
রোদ্রি আবার বলে,
-বলেন।
-মাথা এভাবে রেখেছো কেন?ঘাড়ে ব্যাথা করবে পরে।দেখি সোজা করো।
বলে নিজেই রোদ্রির মাথা সোজা করে দেয়।
রোদ্রি মুচকি হাসে।নীরাদের এই ছোট ছোট কেয়ার গুলা সে খুব করে ভালোবাসে।
নীরাদ এমন ধাঁচের মানুষের মধ্যে পড়ে যারা কিনা ভালোবাসতে বাধ্য করে।এরকম মানুষদের ভালো না বেসে থাকা যায় না।এদেরকে ভালোবাসা বাধ্যতামূলক।আর ভালো না বাসাটা প্রকৃতির নিয়মের বাইরে।
জ্যামে আটকে আছে তাদের গাড়ি।নীরাদ ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে।রোদ্রি অধৈর্য দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।জ্যামের মধ্যে বসে থাকা তার কাছে প্রচন্ড অসহ্য একটা বিষয়।
গাড়ির গ্লাসে “ঠক ঠক” শব্দে দুজনেই সেদিকে তাকায়।একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখে গ্লাস নামায় রোদ্রি।
মেয়েটা একটা বেলি ফুলের মালা এগিয়ে দিয়ে মিষ্টি কন্ঠে বলে,
-আফা,নিবেন?
রোদ্রি মাথা এগিয়ে মেয়েটাকে দেখে।বেশ মিষ্টি দেখতে মেয়েটা।
রোদ্রি কিছু বলবে তার আগেই নীরাদ বলে,
-নাও।
রোদ্রি মেয়েটার হাত থেকে মালাটা নেয়।একহাত বাড়িয়ে মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
নীরাদ ওয়ালেট বের করে “পাঁচশ টাকার”একটা নোট এগিয়ে দেয় বাচ্চাটাই দিকে।বাচ্চাটা ইতস্তত গলায় বলে,
-এত টাকা ভাংতি হইবোনা স্যার।
নীরাদ হাসিমুখে বলে,
-ভাংতি লাগবেনা।তুমি রেখে দাও।
মেয়েটার মুখে হাসির ঝলকানি দিয়ে উঠে।দৌড়ে দৌড়ে সামনে যায় সে।তারই সমবয়সী কিছু মেয়েদের সাথে গিয়ে খুশিতে মেতে উঠে।
জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে ততক্ষনে।রোদ্রি একহাতে মালাটা পেচিয়ে নিয়েছে।এই অতি ক্ষুদ্র জিনিসটাই তার কাছে অনেক মূল্যবান।
বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে নেয় মনিরা আহমেদ,রোদ্রি আর নীরাদ।
খাওয়া শেষে রোদ্রি মনিরা বেগমের রুমে যায়।তাকে ওষুধ খাইয়ে দেয়।
আকাশে মেঘ ডাকছে বৃষ্টি হবে বোধহয়।ঠান্ডা বাতাস হচ্ছে তাই মনিরার রুমের জানালাগুলো ভালো করে আটকে দেয় সে।
মনিরা আহমেদ স্নেহের সহিত হাত বুলায় রোদ্রির মাথায়।ভাগ্য করে এমন মিষ্টি একটা বউ পেয়েছে সে।
___________
গভীর রাত।
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে।ঠান্ডার থেকেও ঠান্ডাময় আবহাওয়া বিরাজ করছে।শীতল বাতাসে মুখিয়ে উঠেছে পরিবেশ।
বিছানায় এলোমেলোভাবে ঘুমিয়ে আছে রোদ্রি।হঠাৎ কারো ক্ষীণ ডাকে আধো আধো ভাবে চোখ মেলে সে।
নীরাদ ডাকছে তাকে।
-হু,বলেন।(ঘুম জড়ানো কন্ঠ তার।)
-উঠো।
রোদ্রি চোখমুখ কুঁচকে তাকায়।
-কেনো?
-বৃষ্টি হচ্ছে।ভিজবো।ছাদে চলো।
নীরাদের এই তিনটি বাক্যেই যথেষ্ট ছিল রোদ্রির ঘুম উড়ে যাওয়ার জন্য।হুড়মুড় করে উঠে বসে সে।অস্থির কন্ঠে দ্রুত বলে,
-আপনি ঠি ক আছেনতো?আপনারতো কোনোকালেই বৃষ্টি পছন্দ না।আজ হঠাৎ ভিজতে চাইছেন তাও আবার এই মাঝরাতে।….জর এসেছে নাকি?
বলে নীরাদের কপালে হাত রাখে রোদ্রি।
নীরাদ হেসে দেয়।কপালে রাখা রোদ্রির হাতটা নামিয়ে হাতের উল্টো পিঠে চুমু খায়।
-আমি একদম ঠি ক আছি।এত প্রশ্ন না করে দ্রুত ছাদে চলো।কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলে,
-আমি জানি তোমার মাঝরাতে বৃষ্টিতে ভেজার খুব শখ।
রোদ্রি চমকায়।বেশ কয়েকমাস আগে সে নীরাদকে কথার ছলেই তার এই ইচ্ছাটা বলেছিলো।নীরাদ এখনো মনে রেখেছে ভেবে খুবই অবাক হয় সে।
-আপনি এখনো মনে রেখেছেন সেটা?(রোদ্রির কন্ঠে স্পষ্ট বিস্ময়।)
নীরাদ উওর দেয়না।কেবলমাত্র একটু হাসে।
ছাদের ঠি ক মধ্যখান টায় দাড়িয়ে আছে নীরাদ রোদ্রি।বৃষ্টি তুমুলবেগে ভিজিয়ে দিচ্ছে তাদের।দুহাত মেলে বৃষ্টি উপভোগ করছে রোদ্রি।শাড়ি লেপটে আছে শরীরে।স্নিগ্ধ মোহনীয় লাগছে তাকে।হঠাৎ নীরাদ বলে,
-চোখবন্ধ করো।
রোদ্রি বিনাবাক্য চোখবন্ধ করে।কেন জানি প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে না তার।মনে হচ্ছে,যা হচ্ছে হোক না।
নীরাদ হাঁটু গেড়ে বসে।একহাতে সদ্য ফোঁটা একগুচ্ছ লালগোলাপ ধরা।বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার সেগুলো।ছাদের এককোণায় বেশ কিছু গোলাপ গাছ আছে।সেখান থেকে মাত্রই নিয়ে এসেছে সে।
গোলাপগুলো বাড়িয়ে রোদ্রির দিকে ধরে বলে,”চোখ খুলো”।
রোদ্রি চোখ খুলে নীরাদকে এভাবে দেখে থমকে যায়।বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
নীরাদ বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে বলে,
-আই নো,যে এটা একটু অদ্ভুত।কিন্তু তোমাকে কখনোই সেভাবে বলা হয়নি।সবাইতো বিয়ের আগেই প্রপোজ করে,আমি নাহয় একটু অন্যরকম করে বিয়ের পরেই প্রপোজ করলাম।একটু থেমে বলে,”তোমাকে কখন এতটা ভালোবেসে ফেলেছি জানিনা তবে তুমি আমার প্রতিটা শিরায় শিরায় মিশে গেছো।তুমিহীন আমিকে ভাবতেও আমার ভয় লাগে। সবসময় আমার পাশে থেকে এভাবেই আমাকে গুছিয়ে রেখো।
এই একগুচ্ছ#ভেজাগোলাপ এর সঙ্গে আমার ভালোবাসা গ্রহণ করো প্রিয়।
রোদ্রির চোখ দিয়ে নোনাস্রোত বেয়ে পড়ে।বৃষ্টির পানির সাথে মিশে যায় সেই পানি।কাঁপা হাতে ভেজাগোলাপ গুলো নেয় সে।
নীরাদের পাগলামিতে আজ বিস্মিত সে।
নীরাদ দাড়িয়ে যায়।।দুহাতে কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে নেয় রোদ্রিকে।
নেশা ভরা কন্ঠে বলে,
-তোমাকে আমি সুস্থ মানুষের মতো ভালোবাসতে পারবোনা।কারণ আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি।
রোদ্রি লজ্জায় নীরাদের বুকে মুখ লুকায়।লোকটা সবসময় লজ্জায় ফেলে তাকে।
নীরাদ দুহাত রোদ্রির দুই গালে রাখে।রোদ্রির মুখটা বুক থেকে উঠিয়ে নেয়।শীতে রোদ্রির ঠোঁটগুলো থরথর করে কাঁপছে।রোদ্রির কাঁপা ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয় নীরাদ।পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে রোদ্রি।
বৃষ্টির বেগ ক্রমশ বাড়ছে।সেই সাথে বাড়ছে তাদের ভালবাসার গভীরতা।
________সমাপ্ত________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here