#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-২

সকালে ভাইকে নাস্তা খাইয়ে দিচ্ছিল রোদ্রি।ভাবি রান্না করছে রান্নাঘরে।

-কালকে তোর অনেক কষ্ট হয়েছিলো বোন?তোর ভাবি প্রেগন্যানট এই অবস্থায় ওকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছিলি।তার উপর গাড়ি ছিলো না।

-কি যে বলোনা।তুমি হসপিটালে আর আমরা কি বাসায় বসে থাকবো নাকি?বাদ দাও তো এসব,তোমার ব্যাথা কমেছে?

-কমেছে…কালকে নীরাদ ছেলেটা না থাকলে যে কি হতো।ও ঠি ক সময়ে না আসলে ওইখানেই পড়ে থাকতাম আমি।ভীষন ভালো ছেলেটা।পাশের এলাকায়ই থাকে।তোকে ওই ফোন দিয়ে জানিয়েছিল না?

-হুম।এখন ওষুধ গুলা খাওতো ভাইয়া।

রোদ্রি ওষুধগুলো দিয়ে পানি খাইয়ে দিচ্ছিল রিদানকে।তখনই ফোন বেজে উঠল।ফোনের দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড বিরক্তি লাগলেও ভাইয়ের সামনে তা প্রকাশ করলোনা।মুখে একটা কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে ফোনটা হাতে নিল।

-ফারহান ফোন করেছে?

-হু।

-যা তুই ঘরে যেয়ে কথা বল বোন।আমি একটু ঘুমাবো।

-আচ্ছা।

ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিল রোদ্রি।ফোনটা এখনো অনবরত বেজেই চলেছে।লোকটার সাথে কথা বলতে হবে ভেবেই অসহ্য লাগছে।

-হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম।

-ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো জান?

-দেখুন,আপনাকে আমি এসব বলতে মানা করেছি।আপনার সাথে এখনো বিয়ে হয়নি যে আপনি আমাকে জান ডাকবেন।

-রাগ করছো কেন জান?বিয়ে হয়নি কিন্তু হয়ে তো যাবে এবং খুব শীঘ্রই।

-অসহ্যকর।

কথাটা আস্তে বললেও ফোনের এপাশ থেকে ফারহান ঠি কই শুনে ফেলল।

-এই অসহ্যকর মানুষটাকেই তোমার আজকে সারাটা বিকাল সহ্য করা লাগবে।সো বি প্রিপেয়ার্ড।

কথাটা শুনে ভ্রু কুচকে এল রোদ্রির।খানিকটা অবাক হয়ে বলল,

-মানে?

-মানে দেখা করছি আমরা। তোমাকে নিতে আসব বিকালে।রেডি হয়ে থেকো।

-ইমপসিবল!!আমি যেতে পারবোনা।সরি।

-কেনো?

-ভাইয়া ভাবির অনুমতি না নিয়ে আমি কোথাও যাইনা।

-তোমার ভাবির থেকে পারমিশন নিয়েই আমি তোমাকে বলেছি।এরপর নিশ্চয়ই তোমার কোনো সমস্যা থাকার কথা না?

রৌদ্রি কিছুক্ষণ চুপ থেকে অনুরোধের সরে বলল,

-প্লিজ আজকে না..আমি..

-আর কোন কথা নয়।বিকেলে যেন লেট না হয়।….আই জাস্ট নিড ইউ টুডে।

খট করে কেটে গেল ফোনটা।ঠাস করে ফোনটা ছুড়ে মারলো রৌদ্রি।খুব করে কান্না পাচ্ছে ওর।খুব!!

রোদ্রির বয়স যখন ৬ বছর তখনই ওর বাবা মারা যায় হার্ট আ্যাটাকে।বাবার মৃত্যুর শোকে সাতদিনের মাথায় ওর মা ও স্ট্রোক করে।এতিম হয়ে যায় দুই ভাইবোন।।তারপর কয়েকবছর চাচাদের সাথে নিজেদের বাড়িতেই ছিলো।ধীরে ধীরে রিদান নিজের বিজনেস দাঁড়া করায়।সেই ভিত্তিতেই আজ সে সফল বিজনেসম্যান।বর্তমানে ওরা যেই বাসায় থাকে সেটা রিদান নিজের টাকায় কিনেছে।
ওদের বাবা যখন মারা যায় তখন ওদের বাসায় জমিজমা নিয়ে বেশ ঝামেলা চলছিল।কয়েকবার ওর চাচাদের সাথে ঝগড়াও হয়েছিলো ওর বাবার।এর মধ্যেই হঠাৎ ওর বাবার এট্যাক হয়।ডাক্তার বলেছিলো অতিরিক্ত টেনশনের কারনে এট্যাক হয়েছিলো।তখন থেকেই রিদান বাবার মারা যাওয়ার পিছনে ওর চাচাদের দায়ী করে।ওর ধারনা এই সম্পত্তিজনিত কারনেই ওর বাবা টেনশনে ছিলো।
বিয়ে করার পর রিদান আর ওই বাসায় থাকেনি।বউ আর বোনকে নিয়ে নিজের বাসায় চলে আসে।
ছোট থেকে এই ভাই ই রোদ্রিকে আগলে রেখেছে।আর ভাবি তো যেন ওর মা।নিজের সন্তানের মতোই আদর করে।ভাই-ভাবির উপর কখনোই কোনো কথা বলেনা রোদ্রি।কখনো বলতো পারবেওনা।আর বলতে চায়ওনা সে।
ফারহান ভাইয়ার বন্ধুর ছোট ভাই।ভাইয়ার পছন্দের ছেলে।রিদান যখন তার মতামত জানতে চেয়েছিলো তখন “না” বলতে পারেনাই রোদ্রি।তার সাথে বাগদান হয়ে গেছে রৌদ্রির।হয়তো বিয়েটাও হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়িই।
এমন না যে রৌদ্রি কাউকে ভালোবাসে।ফারহানকে বিয়ে করতে তার কোনো সমস্যাও ছিল না।কিন্তু লোকটা সবার সামনে যতটা ভালো দেখায় সে ততটা ভালোনা।সুযোগ পেলেই রোদ্রির সাথে অসভ্যতামি করে সে।তার কথাবার্তাও বিশেষ সুবিধার লাগেনা রোদ্রির কাছে।

_______________
সন্ধ্যা ৬:৩০ বাজে।গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে নীরাদ।কোন উদ্দেশ্য নেই।এমনেই ঘুরতে বেরিয়েছে।কালকে রাতের পর থেকেই ভালো লাগছেনা তার।রাতে ঘুমও হয়নি ঠি ক মতো।মনের মধ্য বারবার একটা অদ্ভুত ইচ্ছা জাগছে।কারণটা তার জানা নেই তবে তার খুব মিস.রোদ্রিকে দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে।
রোদ্রিদের বাসার কাছেই একটা জায়গায় গাড়ি থামিয়ে অযথাই দাড়িয়ে আছে সে।
হঠাৎই একটা গাড়ি থামলো ওদের বাসার সামনে।রোদ্রিকে বের হতে দেখে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো নীরাদের।দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেল সে।

-মিস.রোদ্রি।কেমন আছেন?

পাশ থেকে কারো ডাকে চমকে উঠলো রোদ্রি।চোখ ঘুড়িয়ে নীরাদকে দেখে বেশ অবাক হলো।

-জি,ভালো।..আপনি এখানে?

-এসেছিলাম একটা কাজে।আপনার সাথে দেখা হয়ে গেলো।বেশ উৎফুল্ল শোনায় ওর গলা।

রোদ্রি কিছু বলবে তার আগেই ফারহান পাশে এসে দাঁড়ায়।হাত ধরে রোদ্রির।রোদ্রি ছাড়াতে চায় কিন্তু পারেনা।শক্ত করে ধরে আছে ফারহান।বিষয়টা চোখ এড়ায়না নীরাদের।

-কে উনি?

-উনিই কালকে ভাইয়াকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলো।

ফারহানের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় নীরাদ।হাসিমুখে বলে,
-আমি নীরাদ আহমেদ।

ফারহানও হাত মেলায়।

-আমি ফারহান চৌধুরি।নাইস টু মিট ইউ।

রোদ্রিকে জিজ্ঞেস করে,

-কে হয় উনি আপনার?কাজিন?

-নাহ্।আমার বাগদত্তা…

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here