#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-১৪
পুরো ছাদ সাজানো হচ্ছে ফুল দিয়ে।লাইটিং করা হচ্ছে আনাচে কানাচে।
নীরাদ বাসার ছাদটা বেশ সুন্দর আর বড়।এজন্য এখানেই হলুদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বিয়েতে অযথা খরচ করা রোদ্রির পছন্দ না।তাই কিছুটা সাধারন ভাবেই বিয়েটা করতে চায় সে।
মৌ কালকে এখানেই থেকে গিয়েছিলো।
বিকেল হতেই রোদ্রিকে জোড় করে বসিয়ে সাজাতে শুরু করে করে সে।করুন কন্ঠে রোদ্রি বলে,
-বোন,বেশি সাজ দিস না প্লিজ।ভুতের মতো সাজার থেকে না সাজাই ভালো।
-ধুর,আমি কি তোমাকে ভুত সাজাবো নাকি?
জবাবে জোরপূর্বক হাসলো রোদ্রি।প্রথমত সাজগোজ তার অপছন্দ না হলেও তেমন পছন্দও নয়।
দ্বিতীয়ত ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে মেকআপ করার মতো ধৈর্য তার নেই।সে বরাবরই খুব অস্থির একটা মেয়ে।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে ঘড়ি পরছিলো নীরাদ।পরণে তার হলুদ রংয়ের পানজাবি আর সাদা পায়জামা।তাড়াতাড়ি চুলটা ব্রাশ করে ফোন হাতে সোজা ছাদে গেলো সে।
তাদের কোন আত্মীয় নেই।শুধু তার মা আর সে।নীরাদের বাবা মা ভালোবেসে পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করেছিল।তারপর থেকেই তাদের সাথে পরিবারের কারো কোনো সম্পর্ক নেই।
ছাদের যেয়ে লাইটিং এর কাজ দেখছিলো নীরাদ।রোদ্রির যেহেতু জমকালো পছন্দ নয় তাই হালকা আলোয়ই ছাদটাকে স্নিগ্ধ করে তোলার প্রচেষ্টা
হলুদ রং আর সাদা পাড় দেয়া একটা শাড়ি পরেছে রোদ্রি।পরণের গহনা গুলো গোলাপফুলের।আর্টিফিসিয়াল ফুল নয় একদম তাজা ফুল।হলুদ শাড়ির সাথে লালগোলাপের গহনাগুলো যেন একটু বেশিই মানিয়ে গেছে।
নিজেকে আয়নায় দেখে মৃদু হাসলো রোদ্রি।তার আজকে হলুদ তাও আবার নীরাদের সাথে ভাবতেই কেমন অবাক লাগছে।এইতো কয়দিন আগেই আকস্মিকভাবে তার সাথে নীরাদের দেখা হয়েছিল।জীবনের অতি আকাঙক্ষিত অধ্যায়গুলো মনেহয় এমন হঠাৎ করেই হয়।
_____________
নীরাদের বাসায় ঢুকতেই মনিরা এগিয়ে আসলো।মুগ্ধ নয়নে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
-মাশআল্লাহ।তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে মা।
মনিরার কথা শেষ হতে না হতেই মৌ ফট করে বললো,
-আরে আন্টি,আপনার ছেলের পছন্দ আছে বুঝলেন।
রোদ্রি থতমত খেয়ে মৌ এর দিকে তাকাল।এই মেয়েটা যে কি!!
মৌ এর কথায় শব্দ করে হেসে দিলো সবাই।
-এই ফুলগুলা নিচে রেখে আসো।আর তাড় গুলা সরাও,দেখতে বাজে লাগছে…আর…
এতটুকু বলেই থেমে গেল নীরাদ।রোদ্রিকে দেখে থমকে গেলো।যেনো সাক্ষাত ফুলপরি।
-আর কি স্যার?
-না কিছুনা।যাও।
ছাদের ডেকোরেশন দেখে মুগ্ধ রোদ্রি।এত সুন্দর লাগছে!!শুধু ফুল আর লাইট দিয়েই সাজানো তবুও অসম্ভব সুন্দর।
রোদ্রি আর নীরাদ বসলে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিল মৌ।
______________
-সমস্যা কি তোমার?
নীরাদের এমন রাগি গলা শুনে দ্রুত ওর দিকে তাকাল রোদ্রি।
-জি মানে?
-মানে এতো জালাচ্ছো কেন হ্যাঁ?
রোদ্রির মুখটা চুপসে গেলো।করুণ কন্ঠে বললো,
-আপনি এভাবে বলছেন কেন?আমি কি করেছি?
রাগি ভাবটা আর ধরে রাখতে পারলনা নীরাদ হেসে দিলো।আদরমাখা কন্ঠে বললো,
-করেছো তো।ইনফ্যাকট এখনো করছো।এইযে আমাকে বারবার পাগল করছো।আমার মাথার ভেতর সারাক্ষণ ঘুরঘুর করছো।তোমার রুপে যে আমি বারবার মুগ্ধ হচ্ছি রোদ্রি।কি করা যায় বলোতো?
রোদ্রি সস্তির নি:শ্বাস ছাড়ে।সে ভেবেছিলো নীরাদ আসলেই রাগ করেছে।
-কিছু করা লাগবে না আপনার।আপনি তাকিয়েন না আমার দিকে তাহলেই তো হয়।তাকাবেন ও না মুগ্ধা হবেন না।বলে একটা গা জ্বালানো হাসি দিলো রোদ্রি।
-আমার বউ এর দিকে আমিই তাকাবো না?
রোদ্রি হাসি বন্ধ করে।নীরাদ “বউ” বলায় লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায় রোদ্রি।বউ?হ্যাঁ,বউই তো।সে বউ।তার নীরাদের বউ।
নীরাদ আবারো হাসে।তার লজ্জাবতীর কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
-এত লজ্জা রাখো কোথায় বউ?
-আপনার মাথায়।…চুপ করেনতো।
এভাবেই বিভিন্ন খুনসুটির মধ্য দিয়ে সবার হলুদ লাগানো শেষ হয়।সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে রোদ্রির গালে হলুদ লাগিয়ে দেয় নীরাদ।
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here