#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান
#পর্ব-৭

সময় গড়িয়ে চলেছে।
সেদিনের পর রোদ্রি ভেবেছিল ফারহান হয়তো আর অসভ্য আচরণ করবেনা তার সাথে।কিন্তু তার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে ফারহান তার আচরণে বহাল আছে।কারণে অকারণে সুযোগ পেলেই রোদ্রিকে বাজেভাবে ছুঁয়ে দেয় সে।ব্যাপারটা একদমই সহ্য হয়না রোদ্রির।কিনতু ভাই ভাবির কথা ভেবে কিছু প্রকাশ করেনা সে।

সন্ধ্যাবেলা নিজের রুমে রেডি হচ্ছিল রোদ্রি।আজ রাতে ফারহানের সাথে একটা পার্টিতে যেতে হবে তাকে।নামিদামি বিজনেস ম্যানরা আসবে সেখানে তাই ফারহান কেও ইনভাইট করা হয়েছে।তাই রোদ্রিকেও যেতে হবে তার সাথে।সে মানা করেছিল কিন্তু ফারহানের কথার সাথে পেরে ওঠেনি।বাধ্য হয়ে রাজি হতে হয় তাকে।একটু পরেই তাকে নিতে আসবে ফারহান।

মেরুন কালারের একটা থ্রিপিস পরেছে রোদ্রি।চুলগুলো ছাড়া তবে মাথায় ঘোমটা দেয়া ওড়না দিয়ে।ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক আর চোখে কাজল ছাড়া আর কোনো সাজগোজ নেই।তবে এতেই যেনো অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে।রোদ্রির গায়ের রং ফর্সা না।সে উজ্জল শ্যামলা সেজন্যই বোধহয় মেরুন রংটা বেশি মানিয়েছে।
রোদ্রির হাত ধরে গাড়িতে বসাল ফারহান।রোদ্রির পাশে বসে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টান্ট দিতে বলল।
ফারহান বসতেই রোদ্রি একটু চেপে গেল।

-তোমাকে তো আজ খুব হট দেখাচ্ছে জান।আজকে কিছু করে ফেললে কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবে না।বলেই বাঁকা হাসল ফারহান।

ফারহানের কথায় বুক কেঁপে উঠল রোদ্রির।শক্ত কন্ঠে বলল সে,

-এসব কি বলছেন আপনি?

-ডোন্ট বি এ্যাঙরি জান।রাগছো কেন?আমিতো তোমার প্রশংসা করলাম।

চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকল রোদ্রি।

-ওখানে যেয়ে কিন্তু আমার সাথে সাথেই থাকবে।ঠিকাছে?

-হুম।

এককোণায় ফারহানের পাশে চুপ করে বসে আছে রোদ্রি।তার পাশে বসেই ফারহান ড্রিংক্স করছে সাথে তার আরো দু তিনজন বন্ধু আছে।

আশেপাশের মেয়েগুলার ড্রেস-আপ দেখে মাথায় রাগ উঠে গেছে ওর।মনে মনে ভাবছে,এদের কি বাসায় কাপড় নেই?কারো কারো জামা তো হাঁটু অবধি যায়নি।পুরো জায়গাটা প্রায় অন্ধকার।আবছা আবছা নীল আলো।স্লো মোশনে একটা ইংরেজি গান বাজছে।
ড্রিংক্স এর গন্ধে বমি পাচ্ছে রোদ্রির।ফারহানকে ছাড়া কাউকেই চিনেন সে আর আশেপাশের মানুষগুলোকেও বিশেষ সুবিধার লাগছেনা তার।অগত্যা এখানে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই তার।

-ফারহান?শুনছেন?চাপা গলায় ডেকে উঠে রোদ্রি।
ফারহান তাকাতেই ওর লালচোখগুলো দেখে আৎকে উঠে রোদ্রি।তবে স্বাভাবিক কন্ঠেই ফারহান বলে,

-হ্যাঁ,বলো।

-আপনি ঠিক আছেন?

রোদ্রির প্রশ্নে ভ্রু কুচকালো ফারহান।তার কি হবে?

-আমার কি হবে জান?

-না কিছুনা।বলছিলাম যে,আপনি এতো খাচ্ছেন কেনো এইসব?কিছু হয়ে গেলে?

-কিছু হবেনা।তুমি…হঠাৎই থেমে যায় ফারহান।সামনের দিকে ইশারা করে বলে,

-ওটা নীরাদ না?

সামনে সত্যিই নীরাদকে দেখে চমকে উঠে রোদ্রি।মি.নীরাদ এখানে কিভাবে আসবে?পরক্ষনেই নিজের উপর বিরক্ত হয় এটা যেহেতু বিজনেসম্যানদের পার্টি তো এখানে নীরাদের আশাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

মৃদু গলায় জবাব দিলো সে,

-জি।

ততক্ষনে নীরাদ তাদের টেবিলের কাছে চলে এসেছে।রোদ্রিকে দেখে অবাকের সাথে খুশিও হয় সে।

ফারহান উঠে সৌজন্যর হাত বাড়িয়ে দেয়।

-হ্যালো,নীরাদ সাহেব কেমন আছেন?

-জি ভালো।আপনি?

-এইতো ভালোই।বউ সাথে থাকলে কি আর খারাপ থাকা যায় বলেন?

নীরাদ কিছু বললোনা।রোদ্রির দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো।রোদ্রিও জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো।

ফারহান ড্রিংক্সের গ্লাস এগিয়ে দেয়।বসতে বলে তাদের সাথে।নীরাদ ভদ্রভাবে এড়িয়ে যায়।সে ড্রিংকস করেনা।

ফারহান আবার বসে যায় ড্রিংক্স করতে।রোদ্রি বারবার মানা করছে আর খেতেনা।

একপর্যায়ে হুঁশ হারিয়ে ফেলে সে।রোদ্রিকে জোড় করে উপরতলায় নিয়ে যায়।এত মানুষের সামনে রোদ্রি চিৎকারও করতে পারছেনা।ফারহানের শক্তির সাথে কোনোভাবেই পেরে উঠছেনা সে।
ফারহান যেনো নিজের মধ্যে নেই।তার মাথায় চলছে শুধু রোদ্রিকে পাওয়ার নেশা।আর কিছুনা।
একটা রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিল সে।ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় রোদ্রির।তবে কি আজ খারাপ কিছু হতে চলেছে?

চলবে??

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here