#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-১৭
নিচে নামতেই দেখে মনিরা টেবিলে নাস্তা নিয়ে বসে আছে।পাশে মৌ ও আছে।কাল রাতে রোদ্রির সাথে মৌ ই এসেছে।
রোদ্রি ঠোঁটের কোঁণে হাসি বজায় রেখেই চেয়ার টেনে বসলো।নাস্তা খাচ্ছে আর টুকটাক কথা হচ্ছে তাদের।হঠাৎই মনিরা বললো,
-তোকে কালরাতে উপহার দেয়নি নীরাদ?
মৃদু কন্ঠে রোদ্রি বললো,
-দিয়েছে।
-কি দিয়েছে?
হাত বাড়িয়ে বালা দুটো দেখালো রোদ্রি।
-বাহ্,আপু খুব সুন্দর তো।
-মাশাআল্লাহ।তোরা সুখী হ মা।বলে রোদ্রির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল মনিরা।
নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয় রোদ্রির।এরকম শাশুড়ি পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার।ছোট থেকেই মায়ের আদর সেভাবে পায়নি সে।মায়ের অভাবটা সবসময়ই অনুভব হতো।যদিও ভাবি তাকে সবসময় মায়ের মতো করেই আগলে রাখতো।তবুও ভাবিকে তো আর মা ডাকা যায় না।মনিরাকে সে মা বলে ডাকে।মা ডাকটাই মধুর।
_________
নীরাদের পুরা বাড়ি সাজানো হয়েছে।ঝলমলিয়ে উঠেছে “আহমেদ ভিলা”।একটা উৎসব উৎসব ভাব।
বিয়েটা রোদ্রির ইচ্ছায় ছোট করে হলেও রিসিপসনটা নীরাদ বড় আয়োজন করেই করবে।নীরাদের অফিসের মানুষজন আসবে।বন্ধুরা আসবে।তার উপর নীরাদের উৎসাহ,ইচ্ছা দেখে আর না করতে পারেনি রোদ্রি।
সেই সুবাদেই জমকালো আয়োজন করেছে নীরাদ।
মেহমান আসা শুরু করে দিয়েছে।খালি বাড়িটা মানুষ জনে পরিপূর্ণ।রোদ্রির পরিবারের সবাইও চলে এসেছে।
সফল বিজন্যাসম্যান নীরাদ আহমেদ এর স্ত্রী কে দেখার জন্য মুখিয়ে আছে সবাই।এমন সময়ই লাইট কিছুটা নিভিয়ে গেলো।সিড়ির ওপর যেয়ে পরল সব লাইট।সবার চোখ এখন সেদিকেই।
রোদ্রির হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে নামছে নীরাদ।এতো মানুষ দেখে যাতে রোদ্রি নার্ভাস না হয় তাই শক্ত করেই হাতটা ধরে আছে সে।প্রেস মিডিয়ার কয়েকজনও এসেছে।তারা ছবি তুলছে।নীরাদ অবশ্য চেয়েছিলো এরা যেন না আসে।
পরে ভাবলো ওর বিয়ের ব্যাপারটা এরা আবার খারাপ ভাবে প্রচার করতে পারে।যেটা না হওয়াই ভালো।
একটা কালো রংয়ের গাউন রোদ্রির পরণে।গাইনের মাঝে কালো পাথরগুলো ঝলঝল করছে।পরণের গয়নাগুলো ডায়মন্ডের।চিকচিক করছে সেগুলো কানে গলায় হাতে।
নীরাদ পরেছে ব্ল্যাক সুট।আগাগোড়াই কালো পরেছে সে।
দুজনকে দেখে যে কারোরই চোখ আটকে যাবে।উপস্থিত সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।
সবার মুখে একটাই বুলি”মেইড ফর ইচ আদার”।
সিঁড়ি থেকে নেমে নীরাদ রোদ্রির হাত ছেড়ে নরম কন্ঠে বললো,
-যাও,ভাই ভাবির সাথে দেখা করো।
রিদান মিরা এগিয়ে এসে রোদ্রিকে জড়িয়ে ধরল।মাত্র একদিন হয়েছে রোদ্রি তাদের থেকে দূরে তাতেই যেন বহুকাল মনে হচ্ছে তাদের।বোন সুখে আছে দেখে খুশি হয়ে উঠে রিদানের মন।আজ ভাই হিসেবে সার্থক সে।
-কেমন আছিস বোন?ভাইকে মনে পরেনি?
-পরেছে,খুব মনে পরেছে।কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে রোদ্রি।
-এই এখন আবার কান্না করে দিস না পাগলি মেয়ে।সাজ নষ্ট হয়ে যাবে কিন্তু।ভুতের মতো দেখাবে তারপর বুঝিস।
রোদ্রি হেসে দেয়,কিছু বলবে তার আগেই নীরাদ বলে,
-আমার বউকে কাঁদলেও ভুতের মতো দেখাবে না ভাবি।
-হুম,হয়েছে।বলে হাসলো মিরা।তার হাসিতে হাসি মিলাল রিদানও।
স্টেজে উঠে মাইক হাতে নিলো নীরাদ।ভরাট কন্ঠে স্বাগত জানালো সবাইকে।রোদ্রিকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিল সবার কাছে।
ফর্মালিটিস শেষ করে স্টেজে বসলো তারা।সবাই এসে এসে ছবি তুলছে তাদের সাথে।
_________
রাত প্রায় বারোটা বাজে।মেহমানরা চলে গেছে ঘন্টাখানেক আগেই।এতক্ষণ পরিবারের সবাই মিলে কথা বলছিলো।বেশি রাত হয়ে যাওয়াতে রিদান মিরা আর ওর চাচারা একটু আগেই রওনা দিয়েছে।
রোদ্রির মুখ থেকে হাসি সরছিলোই না।ভাই যাওয়ার সময় মনটা একটু খারাপ হয়েছিলো তার।
পরক্ষণেই নীরাদ যখন বললো কাল দেখা করিয়ে নিয়ে আসবে তখন থেকে সেই খারাপ লাগাটাও চলে গিয়েছে।
ঘুমানোর জন্য বিছানাটা একটু ঝেড়ে দিচ্ছিলো রোদ্রি।নীরাদ সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।
বালিশ গুলো ঠি ক জায়গায় দিয়ে নীরাদকে বললো রোদ্রি,
-আপনি এখন ঘুমাবেননা?
-হ্যাঁ,এইতো কাজ শেষ আমার।বলে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দিলো নীরাদ।
সেই সময়ই ফোনটা টুংটাং শব্দ করে উঠলো রোদ্রির।এতরাতে কে মেসেজ করেছে ভেবে দ্রুত ফোনটা হাতে নিল রোদ্রি।মেসেজেটা দেখে ভয়ে গলা শুখিয়ে কাঠ হয়ে গেলো তার।মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলো মুহুর্তেই।নীরাদ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ভয়ার্ত চোখে কাঁপাকাঁপা হাতে ফোনটা এগিয়ে দিলো সে নীরাদের দিকে…
চলবে..