#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-১৫

হলুদ করে ফিরতে বেশ দেরি হয়ে যাওয়ার বাসায় ফিরে গোসল করেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো রোদ্রি।

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই দেখলো মৌ পাশে নাই।ওর সাথেই তো ঘুমিয়েছিলো।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় এগারোটা বাজে।।এত বেলা হয়ে গেছে অথচ ওকে কেউ ডাকেনি কেন?

নিচে নেমে দেখলো ওর চাচা চাচীরা সবাই আছে।সকালেই হয়তো চলে এসেছে।সন্ধ্যায়ই ছোট আয়োজন করে রোদ্রির বিয়ে পড়ানো হবে।যদিও রিদানের ইচ্ছা ছিলো বোনের বিয়ে ধুমধাম করে দিবে।তবে রোদ্রির ইচ্ছাটাকেই প্রাধান্য দিয়েছে সে।

হঠাৎই মৌ দৌড়ে আসলো।উত্ফুল্লভাবে বললো,

-চলো চলো আপু তোমাকে মেহেদি লাগিয়ে দেই।

মৌ এর কথার মাঝেই মিরা বললো,

-আরে মেয়েটা কিছু খাক আগে..নাস্তা টা করে নিক তারপর নাহয় মেহেদি লাগিয়ে দিস।এমনেও আজকে বিশেষ একটা দিন।বিভিন্ন কাজে পরে খাওয়ার সময় পাবেনা।

-আচ্ছা যাও খেয়ে নাও।বলে একটা বোকা বোকা হাসি দিলো মৌ।

বসে থাকতে থাকতে পা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে রোদ্রির।
মৌ বসে বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে মেহেদি লাগাচ্ছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে নিখুঁতভাবে রোদ্রির হাতে মেহেদি লাগাতে পারাটাই তার জীবনের মূল লক্ষ্য।
রোদ্রি অধৈর্য গলায় বললো,

-মৌ আর কত লাগাবি?হয়েছে তো,অনেক সুন্দর লাগছে।

-আরে ধুর..চুপ থাকো তুমি।ভাইয়া বলে দিয়েছে আমাকে পুরো দুই হাত ভরে মেহেদি লাগিয়ে দিতে।যদি না লাগাও তাহলে জোর করার পারমিশন টাও দিয়ে দিয়েছে।বুঝলা?সো এখন নো কথাবার্তা।

মৌ এর কথায় রোদ্রি অবাক হওয়ার শেষ পর্যায়ে পৌছে গেল।ভ্রু কুচকে বিস্মিত নয়নে বললো,

-মানে?

মৌ এর হুঁশ ফিরলো এতক্ষনে,কোন কথাই পেটে চেপে রাখতে পারেনা সে।নীরাদ তাকে বলেছিলো রোদ্রিকে না বলতে।তবুও সে বলেই দিলো।
জিভে কামড় দিয়ে বললো,

-না কিছুনা।হেহে।

-উনি তোকে কি বলেছেন?

কাঁচুমাচু হয়ে গেল মৌ।

-আসলে আপু,ভাইয়া বলেছে তোমাকে মেহেদি লাগিয়ে দিয়ে সুন্দর করে ছবি তুলে তাকে পাঠাতে।তোমাকে অবশ্য বলতে নিষেধ করেছিলো কিন্তু আমিতো বলেই দিলাম বাদ দাও তুমি ভাইয়াকে না বললেই হবে।

-আচ্ছা,বলবোনা।বলে মুচকি হাসলো রোদ্রি।তার কেমন যেন খুশি খুশি লাগছে।জানেনা কেন?কিনতু খুব খুশি লাগছে।
___________
ফোনের স্ক্রীনে থাকা ছবিটাতে রোদ্রির মেহেদি রাঙা হাত দুটোর দিকে চেয়ে আছে নীরাদ।মেহেদির মাঝেই তার নামটা ফুটে আছে।হাহ্,অবশেষে তার প্রেয়সীর হাতে তার নাম।
কোমল হাতদুটো মেহেদির রঙে কেবলমাত্র তার জন্যই রাঙানো হয়েছে।
বধুবেশে শুধু তার জন্যই অপেক্ষা করবে তার প্রেয়সী।ভালোবাসাটা মানুষকে জীবনসঙ্গি হিসেবে পাওয়ার কথাটা ভাবতেও কেমন প্রশান্তি অনুভূত হয়।

কনের সাজে একদম পুতুলের মতো লাগছে রোদ্রিকে।লাল বেনারসির তার গায়ে।মোটামোটি ভারি সাজ।গয়নাগাটি পড়ানো।পুতুলের মতোই বসে আছে সে।নিচে কাজী চলে এসেছে।নীরাদরাও হয়তো চলে আসবে কিছুক্ষণ পড়ে।
কিছুক্ষণ পরেই তার মানুষটার অর্ধাঙগীনি হয়ে যাবে সে।তাদের অপ্রকাশিত ভালোবাসা পবিত্রতা পেয়ে যাবে।
___________
তিনবার”কবুল”বলে বিয়েটা হয়ে গেলো রোদ্রি আর নীরাদের।এখনো নীরাদ কে দেখার সুযোগ হয়নি রোদ্রির।
কাজি তার সম্মতি নিতে উপরে এসেছিলো।সে কবুল বলে সাইন করে দিতেই নিচে চলে গেছে।

সবার সাথে হাসিমুখেই কথা বলছে নীরাদ।অবশেষে তাদের বিয়েটা হয়েই গেছে।কিন্তু রোদ্রি এখনো নিচে নামছেনা কেন?সে কি বুঝতে পারছেনা তাকে বধুবেশে দেখার জন্য নীরাদ কতটা উযদগ্রীব।

অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো দুজনেরই।
রোদ্রিকে নীরাদের পাশে বসানো হলো।নীরাদ জানে রোদ্রি বরাবরই বেশি লজ্জা পায়।আজকেও তার ব্যাতিক্রম না।উল্টো আজতো লজ্জা পাবার পরিমাণটা একটু বেশিই,বউ বলে কথা।যদিও এই লজ্জা পাওয়াটাকেও ভীষণ ভালোলাগে নীরাদের।

ছবি তোলার জন্য একটু ক্লোজ হতে বললে নীরাদ একহাত দিয়ে রোদ্রিকে পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরে।ধীর কন্ঠে বলে,

-এতো লজ্জা না পেয়ে ক্যামেরার দিকে তাকান মিসেস.নীরাদ।

রোদ্রি হেসে দেয়।নীরাদ মুগ্ধ হয়ে দেখে সে হাসি।নিজেও হেসে দেয়।এ যেন প্রাপ্তির হাসি।একরাশ পুর্ণতায় পরিপূর্ণ হাসি।

চলবে….

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here