#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-১৩
সকালে নীরাদের পাঠানো সবুজ রংয়ের জামদানী শাড়িটাই পরেছে রোদ্রি।হাল্কা সুতার কাজ করা শাড়িটার মধ্যে।চুলগুলো খোঁপা করে ফুল গুঁজে দেয়া।এই গাজরাটাও নীরাদের দেয়া উপহারের সাথেই ছিলো।কানে আর গলায় হাল্কা সর্ণের গহনা।আর মুখে হাল্কা সাঁজ।
সচরাচর শাড়ি পরা হয়না রোদ্রির।তাই শাড়ি সামলাতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।নেহাতই নীরাদের দেয়া বলে নয়তো আজও থ্রিপিস পরেই কাটিয়ে দিত সে।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখছিলো সে,হঠাৎই কারো চিৎকারে চমকে উঠলো সে।গলাটা তার চিরচেনা।
-তুইতো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি মৌ।এভাবে কেউ চিৎকার করে।
দৌড়ে এসে রোদ্রিকে জড়িয়ে মৌ।রোদ্রির ছোটচাচার ছোটমেয়ে মৌ।বয়সে মাত্র দেড় বছরের ছোট।যখন তারা ওই বাসায় ছিলো তখন ওই ছিলো রোদ্রির একমাত্র সঙ্গি।কিন্তু এখানে আসার পর তেমন একটা দেখা হয়না তাদের।আজ প্রায় অনেকদিন পর দেখা হলো তাই হয়তো আবেগ ধরে রাখতে পারেনি মৌ।
-উফফ তোমাকে যা লাগছেনা রোপু।দুলাভাই তো চোখ সরাতেই পারবেনা।
মৌ এর মাথায় আলতো করে বাড়ি দিলো রোদ্রি।কান টেনে বললো,
-বেশি পেকে গেছিস না?..আচ্ছা কে কে এসেছে?
-আমি,আব্বু-আম্মু,আবিদ ভাইয়া।চাচা-চাচী আসতে পারেনি,জানোইতো চাচীর শরীর খারাপ।চাচীকে বাসায় একা রেখে চাচাও আসতে পারেনি।
-হুম,বুঝেছি।
-আচ্ছা,দুলাভাই দেখতে কেমন?আমিতো দেখিনি পর্যন্ত।তোমার কাছে ছবি আছে?
-আজকে আসলেই দেখে নিস বোন।ঠিকাছে?
বলে গাল টেনে দিল মৌ এর।
___________
কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে রোদ্রির।এর আগেও তো কতবার নীরাদের সামনে গিয়েছে সে।তবে আজ এতটা লজ্জা লাগছে কেন?সিড়ি দিয়ে একহাতে কুচি সামলে নামছে সে।নামতেই মিরা ঘোমটা টেনে দেয় তার মাথায়।ঘোমটা ধরে মুখ তুলে তাকাতেই সর্বপ্রথম নীরাদের চোখে চোখ পরে রোদ্রির।গভীর দৃষ্টিতে তাকে পর্যবেক্ষন করছে নীরাদ।নীরাদের পরণেও সবুজ পানজাবি।
আচ্ছা কি এতো দেখছে লোকটা?
দৃষ্টি যেন সেখানেই আটকে গেছে নীরাদের।রোদ্রিকে কখনোই শাড়িতে দেখেনি সে।আজই প্রথম।
সকালে কেবল শখ করেই শাড়িটা কিনেছিলো রোদ্রির জন্য।এখন মনে হচ্ছে তার শখ করাটা সার্থক।
মৌ হাত ধরে নীরাদের পাশে বসালো রোদ্রিকে।
সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল নীরাদ।সচেতনভাবে রোদ্রির দিকে মাথা ঝুকালো সে।চাপা গলায় বললো,
-তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে।
নীরাদের মুখে “তুমি” শুনে অদ্ভুত ভালোলাগল রোদ্রির।নীরাদের থেকে অনেক ছোট হওয়া সত্তেও নীরাদ সবসময় তাকে”আপনি”বলেই ডাকতো কিনা।
লজ্জায় কিছুই বলতে পারলোনা রোদ্রি।
নীরাদের হাতে আংটি দিলো মনিরা।
একহাতে আংটি নিয়ে আরেকহাত এগিয়ে দিলে রোদ্রির দিকে এগিয়ে দিলো নীরাদ।আলতো করে নীরাদের হাতের উপর হাত রাখলো রোদ্রি।নীরাদ আংটি পরিয়ে দিতেই বড়রা “আলহামদুলিল্লাহ”বলে উঠলো।
হেসে উঠলো নীরাদ।নিজের হাত বাড়িয়ে দিলে রোদ্রিও আংটি পড়িয়ে দেয় তাকে।
এতক্ষন ধরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসবের বিভিন্নভাবে ছবি তুলছিলো মৌ।আংটি পর্ব শেষ হতেই দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলো সে।
ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো,
-এই এখন আমি ওদের ছবি তুলবো।রোপু তুমি একটু চেপে বসো না।আর ভাইয়া আপনিও।
রোদ্রি না চাপলেও নীরাদ চেপে বসলো রোদ্রির দিকে।ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতেই বললো,
-এত লজ্জা পেলে হবে?একটু তো হাসো।
বেশ কিছু ছবি তুলে মৌ।তারপর ক্যামেরাটা আবিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
-আমার কিছু ছবি তুলে দেতো ভাইয়া।তোদের চক্করে আমারই ছবি তোলা হলোনা।
বোনের কান্ডে না হেসে পারেনা আবিদ।ক্যামেরাটা নিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে।
সবাই খাওয়া দাওয়া করছে।এতক্ষন সেখানেই ছিল রোদ্রি।
সবাই একটু ব্যস্ত হতেই উপরে উঠে যায় রোদ্রি।নিজের রুমের সামনে দাড়িয়ে নিচু হয়ে শাড়ি টেনে ঠি ক করে নেয়।
-শাড়ি পড়তে অসুবিধা হয় তোমার?
পিছন থেকে নীরাদের কন্ঠ শুনে হকচকিয়ে যায় রোদ্রি।সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে,
-নাহ্,আসলে সচরাচর পড়া হয়না তো।তাই একটু…পড়তে পড়তে অভ্যাস হয়ে যাবে।
-ওহ্,তাহলে বিয়ের পর শাড়ি পরার প্ল্যান ম্যাডামের।হুম?
একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নেয় রোদ্রি।সবসময়ই কি তাকে লজ্জায় ফেলবে নাকি নীরাদ।
-হ্যাঁ তো?আপনার কোন সমস্যা?
-না তো।আমার কোনো সমস্যা নেই।বলে হেসে দেয় নীরাদ।এ যেনো তৃপ্তির হাসি।
____________
রাতের বেলা ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে নীরাদ।মনে মনে ভাবছে,
-আর মাত্র কিছুদিন রোদ্রি।তারপরেই তোমাকে সম্পূর্ণভাবে নিজের করে পাবো।
চলবে…