#ভালোবাসার_রোজ[পর্ব-১১]
#আফরোজা_আনজুম

ইদের সারাটা দিন নিঠুল ভাইয়ের অপেক্ষায় ছিলাম। বছরের দুই ইদ তারা তাদের গ্রামে কাটায়। এবারও তাই হলো। প্রতিবার ইদের দিন বিকেলে বা সন্ধ্যার পরে আমাদের এখানে আসে। ভেবেছিলাম এবারও তাই হবে। তাই সবাই বেড়াতে যেতে বললেও আমি বের হলাম না। নিঠুল ভাই যদি চলে আসে! দেখা না হয় তার সাথে! বিকেলের দিকে রান্নাঘরে গিয়ে তার পছন্দের পায়েস রান্না করলাম,সমুচাও বানালাম নিজ হাতে। রান্নাঘরে খুঁচাখুঁচি করায় আম্মু বিরক্ত হলো। জিজ্ঞেস করলে বললাম, ” তোমাদের এতো মেহমানের রান্না করতে কষ্ট হবে তাই হেল্প করছি।”

ছোট চাচী জানালো তারা রান্না করেই ফেলেছে। শুনে আমতা আমতা করে বললাম আমার খেতে ইচ্ছে করছে তাই। আম্মু সরু চোখে তাকালো আমার দিকে। তা দেখেই আমার মনে পড়লো আমি তো পায়েস খাই না। খেলেই বমি আসে। হাসার চেষ্টা করে বললাম তোমাদের জন্য রাঁধছি আম্মু। কখনো রাঁধি নি তো তাই সরাসরি বলতে লজ্জা লাগছে। বিকেলে ইদের জামা পড়ে হালকা সাজ দিলাম। সেটা দেখেও আম্মুর সন্দেহ হলো। বললো, ” সারাদিন এতো করে বললাম ইদের জামাটা পর। পরিস নি। এখন জামা পড়ে কোথায় বের হচ্ছিস আমাকে না জানিয়ে?”

কী আর করার! আম্মুর সামনে থেকে পালিয়ে রুমে বসে রইলাম। এলো না নিঠুল ভাই। ভীষণ কান্না পেলো আমার। কতো কিছুই না করলাম আর সে এলোই না। সে এলো পরদিন বিকেলে। রুম থেকে বের হলাম না আমি দেখা দেবো না বলে। কিছুক্ষণ পর আম্মু এসে বকে গেলো অসামাজিক, একঘরে বলে। বকা শুনে ফ্রিজ খুলে কালকের রান্না করা পায়েসের বাটি নিতে গেলাম। এতো কষ্ট করে রাঁধলাম তার জন্য সেটা তাকে জানাতে হবে না! কিন্তু কোথাও বাটি দেখতে পেলাম না। ছোট চাচী জানালো তাদের জন্য রেঁধেছি তাই তারা খেয়ে ফেলেছে। আমি খাই না বলে রাখে নি। কী বলবো বুঝতে পারলাম না। নিঠুল ভাইয়ের সামনে যেতেই সে প্রথমে বললো, ” কী রে তুই এমন ফকিরের মতো হয়ে আছিস কেন? ইদের তুন জামা কিনিস নি?”

আমি কাটকাট গলায় জবাব দিলাম, ” না, কিনি নি।”

সে যেন আমার কথাটা বিশ্বাস করেছে এমনভাবে বললো, ” কী বলিস! তোর আব্বু তোকে জামা কিনে দেয় নি ইদে? এতো কিপ্টে! কতোটা কিপ্টে হলে বাবা মেয়েকে ইদে জামা কিনে দেয় না। ও মাই গড! এতো টাকা কী করবে তোর আব্বু?”

তার সামনে যাওয়ায় ভুল হয়েছে আমার। চলে আসলাম সেখান থেকে। ঘন্টা খানেক পর রোবাকে দিয়ে ডাকলো আমায়। রোবা এসে বললো, ” সালামি না পেয়ে রুমে বসে কাঁদছো? নিঠু ভাই চলে যাচ্ছে। তোমাকে ডাকে।”

দুইবার এসে ডাকার পর গেলাম। আম্মু বলে, ” সালামি দেয় নি বলে রাগ করে রুমে বসে থাকবি? ছোট নাকি তুই? তোর সালামি নেওয়ার বয়স আছে? ”

নিঠুল ভাই পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে আমার সামনে আসলো। কচকচে, নতুন দশ টাকার নোট কতক গুলো বের করে আমার হাতে গুঁজে দিলো। আম্মু দিতে বারণ করছে। নিঠুল ভাই গা জ্বলানো হাসি দিয়ে বললো, ” ছোট বাচ্চা! মন খারাপ করেছে দেখছো না?”

আম্মু চলে গেলে আমিও হাঁটা ধরলাম। অসভ্যটা আমার নামে কীসব বলেছে! সালামির জন্য মন খারাপ,রাগ করেছি! সে আমার হাত টেনে বললো, ” সালাম না করেই সালামি নিয়ে পালাচ্ছিস কেন বেয়াদব?”
আবার হাত উল্টিয়ে নিয়ে বলে, ” মেহেদী পরেছিস! আমার নাম লিখতে পারিস নি?”
তার হাত দেখিয়ে বললো, ” এই দেখ আমার হাত! আমাদের পিচ্চিকে দিয়ে আঁকিয়েছি। তুই আমার নামের প্রথম অক্ষরটা পর্যন্ত লিখতে পারিস নি! এই তোর ভালোবাসা!”

” আমি তোমাকে ভালোবাসি কে বললো? আমি বলেছি নাকি!”

সে হেসে বললো, ” আমি কখন বলেছি তুই আমাকে ভালোবাসিস! আমি তো বলেছি ‘ এই তোর ভালোবাসা ‘! তুই নিজেই আগ বাড়িয়ে জানিয়ে দিলি যে তুই আমাকে ভালোবাসিস। ”

” একদম না। তোমার মতো নিষ্ঠুরকে আমি কখনো ভালোবাসি নি,ভালোবাসবোও না।”

সে আমার হাতে টুপ করে চুমু খেয়ে হেসে বললো, ” এগুলো তোর মুখের কথা। আমাকে দেখার জন্য কে ছটফট করে, লুকিয়ে লুকিয়ে আড়চোখে দেখে কে তা আমার জানা আছে। এমন আরেকবার বললে চুমু দেওয়ার বদলে কামড় দিবো।”

#চলবে…
( আজকে আর লিখতে পারি নি। ছোট হয়ে গেলো। দুঃখিত।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here