#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৩

দীর্ঘ ৭ ঘন্টার মতন জার্নি হলো তাদের।তারা এখন শাহবাগের কাছাকাছি। রিহান মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।নিতু বাইরের ব্যস্ত নগরীর দিকে তাকিয়ে আছে।এমন সময় রিহান নিতুর দিকে একফোঁড় তাকায়। মাথার চুলগুলো কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে।মুখশ্রীতে বিন্দু বিন্দু ঘাম ছুটেছে।চোখে নিষ্প্রাণতার ছাপ।রিহান বুঝেছে লং জার্নিতে মেয়েটা ভীষণ ক্লান্ত এখন।রিহানের কেনজানি খুব ইচ্ছে হলো নিতুকে আজ হলে না ফিরতে দিতে।নিজের সাথে নিজের বাসায় নিয়ে যেতে।াকিন্তু অবাধ্য মনের এই উঁকিঝুঁকি ইচ্ছে গুলি মুহূর্তে আবার মনের কোণে ঢাকা পড়ে গেলো।সে জানে নিতু কখনোই তারসাথে এখন যেতে রাজি হবে না।

————————-
নিতুকে হলে পৌঁছে দিয়ে রিহান চলে গেলো।এসে দেখে প্রিয়া হলে নাই।সে আসো নি হয়তো।নিতু কল করে ওকে।দুই তিনবার রিং হওয়ার পর কল রিসিভ করে প্রিয়া।

“হ্যাঁ,বল…।”
“আসবি না?”
“বাসা থেকে মা যেতে দিচ্ছে নারে।বলে হলে যাওয়ার দরকার নাই।পরিক্ষাটা বাসা থেকে যেয়ে দিয়ে আসতে।ভার্সিটি বন্ধ।এখন হলে যাওয়া বাড়তি ঝামেলা।এসব বলে।”

নিতু বেজার মুখে প্রিয়ার কলটা কাঁটে।তার দুইদিন পর নিতুর পরিক্ষাটা শেষ হয়।প্রশ্ন মোটামুটি ভালোই কমন পড়ে।এখন রেজাল্ট দিলে বাকিটা বুঝা যাবে।নিতু হলে ফিরতে শুনে,
যেসব স্টুডেন্ট হলে ঢুকেছে পরিক্ষার জন্যে,সবাই আজ অথবা কালকে হল ছাড়তে।ভার্সিটি যেহেতু বন্ধ ছিলো আর ভার্সিটি বন্ধ অবস্থায় পরিক্ষাটি নেওয়া হয়েছিল।যারা ঢাকার বাইরের তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র পরিক্ষাতে এটেন্ড করার জন্যে।এখন আর হলে থাকতে পারবে না।ভার্সিটি খুললে হলে আবার আসতে পারবে।নিতু ব্যাগপ্যাগ সব গুছিয়ে নেয়।আগামী কাল চলে যাবে মনস্থির করে।কিন্তু আজকে ঠিক সন্ধের পর নিতুর গ্রামেরা বাড়ি থেক কল আসে।কলটা নিতুর মা করেছে।নিতু কলটি রিসিভ করতেই,নিতুর মার রাগান্বিত গলার স্বর,

“ঢাকা থেকে বাড়িতে ফেরার আর চিন্তাভাবনা কখনোই করিসা না!যেখানে আসিস সেখানেই থাক।তোর ওই চেহারাটা আমরা কেউই আর দেখতে চাই না।”

বলে নিতুর মা কলটা কেঁটে দেন।নিতু কেনজানি এবার না চাইতেও কিছুটা আওয়াজ তুলে কেঁদে উঠে।এ কান্নাটা কিছুটা সময় ধরে পার হয়।ফোনকল বাঁজে। নিতুর সেইদিকে মন নাই।দেখেছে বার কয়েক। কিন্তু কলটা রিসিভ করার ইচ্ছে নাই।রিহানের কল ছিল সব!এরমাঝে রিং কেঁটে আবার রিং বাঁজে।নিতুর চোখমুখে বিতৃষ্ণাকর রাগ ফুঁটে উঠে।ফোনটা হাতে তুলে নেয় নিচ থেকে।রিসিভ করে।বজ্র কন্ঠে বলে উঠে,

“চাচ্ছেন টা কি আপনি?আপনি আমার সব শেষ করে দিয়েছেন।পরিবারের কাছে এখন আর মান পাই না।সবাই পর করে দিয়েছে শুধুমাত্র আপনার কারণে।আসলে ভুল তো সব আমারই ছিল।কেন ভালোলেগেছে আপনাকে,আর কেনো এতটা ভালোবেসেছি আপনাকে।আর প্রায়শ্চিত্ত ফল এখন ভোগ করছি।”.
বলে নিতু আবারো ফুঁপিয়ে উঠে।রিহান হঠাৎ নিতুর এমন কথার অর্থ না বুঝতে পেরে কিছুটা শান্তভাবে জিজ্ঞেস করে,

” কি হয়েছে নিতু্?তুমি ঠিক আছো ত?নিতু?নিতু?”

নিতু রিহানের কথার জবাব তুললো না।কলটা কেটে আবারো শব্দ করে দুই হাঁটতুে মাথা গুঁজে আরম্ভ করে দিলো।প্রায় দুইঘন্টা পর দরজার ওপাশ থেকে প্রিয়ার গলার শব্দ শুনতে পায়,

“নিতু?নিতু দরজা খোল!”

প্রিয়ার গলার স্বরে নিতুর এতক্ষণে হুঁশ হয়।ফ্লোর থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিয়েই প্রিয়াকে ধরে আরেক দফা কেঁদে দেয়।বারবার বলতে থাকে,

“আমি রিহানকে বিয়ে করে ভুল করে ফেলেছি নিতু!অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।আমার মা-বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।”
“কুল নিতু!কিছুই হবে না।সব ঠিক হয়ে যাবে।রিহান সব ঠিক করে দেবে।”
“কবে ঠিক করে দেবে সে?আর কবে?”
বলতে বলতে আবার কাঁদে।

প্রিয়া শুধায়,
“বাইরে চল।রিহান ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে ও পাগলের মতন এখানে নিয়ে এসেছে।”
“ও আসছে আমি কি করবো!”
“নিতু জেদ ভালো না।ভালেবাসায় এরকম হয়ই।কিছু দিক একে-অপরের জন্যে কিছুটা হলেও সেক্রিফাইস করা লাগে।”
“আর কত সেক্রিফাইস করতে হবে?পরিবারকে হারাতে বসেচি।”

প্রিয়া জানে এই মেয়েটার মাথা খারাপা হয়ে গেছে।এখন বুঝিয়ে আর লাভ নাই।যা বুঝাবে রিহান ভাইয়া।নিতুর পোটলাপাটলি সব হাতে নিয়ে নেয় প্রিয়া।তারপর নিতুর হাত টেনে নিতুকে বাইরে নিয়ে এসে।নিতুর কান্নামাখা এবং রাগমাখা মুখটা দেখে রিহানের ভেতরটা নড়ে উঠে।প্রিয়া রিহানের সামনে নিতুকে এনে বলে,

“নেন আপনার সম্পদ!একে সামলান এবার।আমি চলে যাচ্ছি রাত হয়ে যাচ্ছে খুব।”

বলে প্রিয়া আর দাঁরালো না।হনহম পায়ে চলে গেলো।চলে যাওয়া মাত্রই রিহান বলে,

“নিতু গাড়িতে উঠো।”

“আমি কোথাও যাবো না!”

রিহান হাবভাব দেখেই বুঝে ফেলে মেয়েটা স্বাভাবিকে নেই।তাই দুইহাতে তুলে নিয়ে গড়িতে বসিয়ে দেয়।তবে নিতু ছোটাছুটি করে খুব রিহানের হাত থেকে ছুটার জন্য,লাভ বিশেষ হয়নি।গাড়ি চলে।রাত দশটা বাজে।তাই জ্যাম খুবই কম।বিশ মিনিটের ভেতর বাসায় পৌঁছে যায় নিতুকে নিয়ে রিহান।বাসায় এনে স্নেহাকে বলে,

“তোর ভাবীর সাথে কথা বল।আমি আসতেছি ফ্রেশ হয়ে।”

স্নেহা খিলখিল করে হেসে উঠে।স্নেহার হাসিতে বুঝা গেলো সে সব যেনো আগে থেকেই জানে।রিহান চলে গেলে স্নেহা নিতুকে বলে,

“ভাবী খুবই ক্লান্ত তুমি,না?ফ্রেশ হয়ে আসো ভাবী।”

স্নেহার দিকে হালকা চোখে তাকিয়ে,
“লাগবে না,স্নেহা। ”
“খাওয়াদাওয়া করেছো ভাবী?”

নিতু চুপ থাকে।স্নেহা শুধায় আবার,
“ভাবীর কি মন খারাপ? ”

রিহান ঝপটপ ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়প আসে।স্নেহার কথোপকথন শুনে।বলে,
“খাবার রেডি কর স্নেহা।তোর ভাবী মনে হয় কিছুই খায়নি আজ সারাদিন।”

স্নেহা মাথা নেড় ডাইনিং এ চলে যায়।নিতুকে রিহান ওর রুমেই প্রথমে নিয়ে আসে।স্নেহা বের হয়ে গেলে রুমের দরজাটা বন্ধ করে দেয় রিহান। নিতুর দিকপ এগিয়ে,
“যাও ফ্রেশ হয়ে আসো নিতু!”

নিতু অন্যদিক তাকিয়ে থাকে।রিহান আবারো,
“নিতু?আমাকে শুনতে পাচ্ছো?”

নিতু এবার রিহানের দিকে তাকায়।তাকাতেই উঠে দাঁড়ায়।রিহানের কাছে এসে ঝাঁঝ গলায়,

“আমার সব শেষ করে দিয়ে এবার খুশি আপনি?খুশি?”

রিহান তাকিয়ে আচে।
“কথা বলছেন না যে? জবাব দিন!”

রিহান দায়সারা ভঙ্গিতে,
“জবাব যদি না দিই?”

নিতুর রাগটা আরো বেড়ে গেলো।রিহান তা বুঝতে পারলো।নিতুকে থামাতে দুই হাত শক্ত করে ধরলো।বললো,

“একদম রাগ করে না বউ!একদমই না!”
“হাত৷ ছাড়ুন!হাত ছাড়ুন বলছি!”

রিহান আরো শক্ত করে ধরলো।
“আহা,লাগছে খুব!”

রিহান বললো,
“ছাড়বো। যদি কথা দাও এখন ফ্রেশ হয়ে আসবে।”

রিহানের মুখের দিকে তাকালো নিতু।ছেলেটার ভাবভঙ্গি ভালো ঠেকছে না।মানলে উল্টাপাল্টা যদিা কিছু করে বসে।তাই রাজি হয়ে যায়।রাজি হতেই রিহাম আরেকটা শর্ত জুড়ে দেয়,

“আজ একটা নীল রঙ্গের শাড়ি পড়বে।”

নিতু জিদ্দি কী করতে যেয়েও রিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে মেনে নেয়।স্নান সেরে ধবধবে শরীারে নীল শাড়ি পড়ে রিহানের সামনে যেনো একটা হুর-পরী এসে দাঁড়ায়।রিহানের চোখজোড়া স্থির হয়ে যায় মুহূর্তে।নিতু বেলকনিতে যায় জামাকাপড় মেলতে।এমন সময় বাইরে থেকে,

“ভাইয়া-ভাবী খেতে আসো।আমরা সব রেডি করেছি।”

রিহানের টনক নড়ে উঠে।রিহান নিতুর দিকে তাকিয়ে,
“খেতে আসো নিতু!”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here