#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২২
সন্ধা নেমে এলো।পাখিরা তাদের নীড়ে ফিরে গেলো।রাস্তাঘাট, লোকালয়,জনপদ সব নির্জন,নিস্তব্ধে।কোথাও কোনো আওয়াজ নেই।সব শুনশান।আঁধার যতই ঘনিয়ে আসছে নিতুর মার বুকের ভেতরে একটা চাপা উত্তেজনা ছুঁয়ে যাচ্ছে।মনের ভেতর স্বস্তি মিলছে না।লম্বা বারান্দাটার লম্বা লম্বা পায়ে একবার এ মাথায় আসেন।আবার ওপাশে যান।আর চোখজোড়া দৃষ্টি বারবার ছুটে বাড়ির সরু রাস্তাটার দিকে।হাবভাবে ঢের বুঝাই যাচ্ছে কারো জন্যে অপেক্ষা করছেন হয়তো।এমন সময় লুৎফর ঘর থেকে বের হয়ে বারান্দায় আসেন।সরু রাস্তাটার দিকে একপলক তাকিয়ে বলেন,
“মাওলানারা কি আসবে না?আমাদের কি মিথ্যে আাশ্বাস দিলো নাকি?রাত হয়ে গেছে।”
নিতুর মা পাঁচ-ছয় সেকেন্ডের মতন চুপ করে থাকেন।তারপর গরম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্বামীর দিকে কটাকটা চোখে তাকান।তাকানোর চাহনিতে তীব্র রাগ ফুটে উঠেছে।লুৎফর বুঝে গেলেন রাগটা নিতুর প্রতি।নিতুর মা ছ্যাৎ ছ্যাৎ গলায় বলে উঠেন,
“রাত হয়ে গেছে।ভাবছো আবরাহামরা আসবে?এটা স্বপ্ন!এটা স্বপ্ন শুধু!কেউই আসবে না। কেউই এই মেয়েকে আর বিয়ে করবে না।নিজের সব নিজের হাতেই শেষ করে দিয়েছে এই মেয়ে!”
“কিন্তু আবরাহাম তো আজকে সকালে এসে বললো নিতুকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে।এতটা মিথ্যে আশ্বাস কীভাবে দিতে পারলো!”
“সবাই ই এভাবেইই আশ্বাস দিয়ে যাবে..!”
বলে নিতুর মা রাগী মুখটা নিয়ে হর্ণ পায়ে নিজের রুমে চলে যান।
নিতুর দরজার ফাঁক দিয়ে মা-বাবার সব কথা শুনতে পায়।মা তার উপর রেগে আছে আবরাহাম আসছে না দেখে।তবে,নিতু বুঝতে পারছে না আবরাহাম কেনো আসে নি!সকালেই তো তাকে বলে গেলো নিজ মুখে।এটা নিয়ে নিতুর আফসোস নেই।কেঁটে পড়েছে।তার এখন ভীষণ রকমের ভালো লাগছে।আপনাই মুখে একটা হাসি ফুঁটে উঠলো নিতুর।
—————————————–
মেয়েটার বিয়েটা আজকে আর হলো না।যারা খুব আশ্বাসের সহিত কথা দিলো আর তারা সরে গেলো।অথচ কতই না বিশ্বাস করার মতন ছিল তাদের কথাগুলো!তাহলে বিপদের সময় কি তাদের সেটা কি মায়া ছিল নাকি শুধুমাত্র করুণা?লুৎফর মায়া এবং করুণার মাঝে খুবই এলোমেলো হয়ে যায়।যখন সে খুব ছোট্ট ছিল।মা-বাবা যখন মারা যায় ডায়েরিয়া অসুখে।লুৎফর তখন বড্ড একা হয়ে যায়।কেউ ছিল না তাকে দেখার মতন।পরে চাচা ছিল একজন।খুব আপন চাচা না অবশ্যি।বাবার মামাতো ভাই।সে লুৎফরের প্রতি খুবই মায়া হয়।লুৎফরের সব দায়িত্ব নিজে নিবে বলে জানায়।সেইদিন লুৎফর ভেবেছিলো তার আর কোনো চিন্তা নাই।চাচার কাছে থাকবে।খাবে। এমনকি পড়বেও।কিন্তু এই আশাগুলো ঠিক একমাসের মাথায় খোলাসা হয়ে যায়। চাচা জানায় সে আর লুৎফরের দায়িত্ব নিতে পারবে না!পৃথিবী কেমন,কীরকম সেদিনের পর থেকে লুৎফর চিনে যায়।আরো বুঝতে শিখে চাচার ওটা মায়া ছিল না।শুধুমাত্র করুণা ছিল।মায়া থাকলে পরে আর এভাবে ছেড়ে দিতেন না।
ভাবতেই লুৎফরের চোখজোড়া কেনজানি খুব ঝাঁপসা হয়ে এলো।লুৎফর চোখজোড়া খুলে ফেললো।ঘরটা ঘুটঘুটে অন্ধকারময়।পাশে নিতুর মা শুয়ে আছে।তাকে দেখা যাচ্ছে না। শুধু তার নাঁক ডাকার শব্দ কানে আসছে।লুৎফর কাঁত হয়ে শুলো এবার।আর মেয়ের সামনের দিনগুলোর কথা কঠিনভাবে ভাবতে থাকলো।কি হবে মেয়ের?
——————————————
কলের আওয়াজে নিতুর ঘুম ভেঙ্গে যায়।হাতরিয়ে ফোন তুলে নেয় কানে।প্রিয়ার গলার স্বর,
“হেলো,নিতু?শুনছিস?”
“হু।” ঘুমা চোখে।
“নিতু?আমাদের সব ডিপার্টমেন্টের শর্ট টাইমের জন্যে নাকি একটা ইনকোর্স পরিক্ষা হবে।পরিক্ষাতে সব শিক্ষার্থীকে উপস্থিত হতে বলেছে।”
দাউদাউ করে নিতু চোখ খুলে ফেলে।উঠে বসে।বলে,
“পরিক্ষা! কে বলেছে তোকে?”
“ভার্সিটির ওয়েবসাইটে দেখলাম।চেইক করে দ্যাখ।”
“আচ্ছা,বিশ্বাস করেছি।কিন্তু বন্ধের মধ্যেই বা কেনো?এখন না আমাদের সামার ভেকেশন চলে?আর কিই বা পরিক্ষা নেবে।ভার্সিটির অথোরিটি কি দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে?”
“আরেহ নাহ! পরিক্ষাটা নাকি খুবই ইম্পর্ট্যান্ট।ইন্টারন্যাশনালি হবে।কয়েকটি দেশ মিলে নাকি এই পরিক্ষাটি আয়োজন করেছে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাই করতে।তারমধ্যে ঢাবিকেও নিয়েছে।”
“ওহ আচ্ছা। তাহলে পরিক্ষাটিতে এটেন্ড করবো না।”
“ফাইনালের সাথে নাকি এখানের কিছু মার্কস যোগ হবে।”
নিতু দুই সেকেন্ডের মতন চুপ থেকে তারপর বলে,
“পরিক্ষাটা কবে হতে পারে?'”
“আজ/কালকের মধ্যে নোটিশ দিয়ে দেবে তাই ই বলা হয়েছে।”
“আচ্ছা।”
ঠিক বিকেলের মধ্যেই পরিক্ষার ডেট দিয়ে দেয়।পরিক্ষাটি আগামী সোমবার।মানে আর মাত্র দুইদিন পর।নিতু ঘর থেকে বেরুলো।উঠেনে এসে চারপাশে তাকালো লুৎফরের খোঁজে।বাবাকে বলবে বিষয়টা এখন যে পরিক্ষা নিবে ভার্সিটি।বাবাকে বাদাম গাছের সামনেই পেয়ে গেলো।আগের মতন আর বাবার সাথে কথা বলতে পারে নি।মনের ভেতর জড়তা কাজ করছে কেনজানি।মেয়ের চুপচাপ দাড়িয়ে থাকা দেখে লুৎফর জিজ্ঞেস করেন,
“কিছু বলবি?”
নিতু মাথা নেড়ে “হ্যাঁ” বলে।
“বল।”
তারপর নিতু তার পরিক্ষার কথা বাবাকে জানায়। লুৎফর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জবাব দেন,
“যাবি।পরিক্ষা দিবি আর কি!”
বলে মেয়েকে পাশ কেঁটে চলে যান।লুৎফরও যে নিতুর উপর অভিমান করে আছে নিতু বুঝতে পারছে ঠিক।
———————
পরের দিন নিতু বিদেয় নেয় বাসা থেকে।আসার সময় মাকে,বাবাকে, ছোট বোনকে,ভাবীকে এবং ভাইকে জানিয়ে বিদেয় দেয়।কেউই নিতুর কথার জবাব তুলে নি,ছোট বোনটি ছাড়া!উদাসীন, উন্মনা মনে বাসস্ট্যান্ডে চলে আসে নিতু।বাসের টিকিট হাতে নিবে,এমন সময় পেছন থেকে,
“নিতু?”
নিতু পেছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় খুব!রিহান!আর তারসাথে তার গাড়ি।নিতু বলে,
“আপনি? এই সময়? এখানে?”
রিহান মু্চকি হাসে।বলে,
“রাতেই রওনা দিয়েছি।আমি জানতাম তুমি আজ ঢাকায় ব্যাক করবে।”
বার্তাবাহক প্রিয়াই জানিয়েছল রিহানকে নিতু বুঝলো। তবে তার বলার আর কোনো ভাষা থাকলো না মুখে।ঠায় দাড়িয়ে রইলো নিতু।রিহান এগিয়ে এসে নিতুর হাত টান দিয়ে নিয়ে এলো।নিতু পেছনে তাকালো।মানে কাউন্টারে টাকা জমা দিয়েছে টিকেটের!রিহান জবাব দিলো,
“ওটা ওরা নিয়ে যাক।সমস্যা নেই।!
নিতুকে গাড়িতে বসালো রিহান।
চলবে……