#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২০

নিতু চুপচাপ বসে আছে।চোখমুখ নির্জীব,নিষ্প্রাণ এবং নিষ্প্রভ।মা-বাবা সবার কথাই শুনলো,বুঝলো।কিন্তু কথা হলো আবরাহাম যে তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে,ও তো এখন অন্য আরেকজনের স্ত্রী।মানে বিবাহিত।এখন এসব বিষয় তো ও পরিবার আর জানে না।আর জানাতে গেলেই তো পরিবারের বিশ্বাসটা চলে যাবে।গ্রামের লোকজন যা বলতেছে তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে ভাববে।তাহলে নিতু কি রিহানকে বিয়ে করে ভুল করে ফেললো কোনো?মুহূর্তে নিতুর চোখে পানি চলে আসে।উপায়ন্তর না পেয়ে প্রিয়াকে কল করে।প্রিয়া কল রিসিভ করতেই,

“প্রিয়া!”

বলেই আরেকটু উঁচিয়ে কেঁদে ফেলে।প্রিয়া শুধায়,
“কি হয়েছে,নিতু?দেয়ার ইজ সামথিং রং?”

“প্রিয়া আমি ভুল করে ফেলেছি।”
“কি ভুল?”
“রিহানের সাথে…!”
“বিয়ে করে ফেলেছিস তাইতো?”
“এটা তোর প্রতিকূলত মোকাবেলার সবথেকে বড় সল্যুউশন নিতু।যে যাই বলতেছে,একটা বদনাম রটিয়েছে না?এসব বলার পর কেউই তোকে বিয়ে করতে যাবে না।অথবা গ্রামের লোকজনের মুখে,বা তোর পরিবারের ভাবনাও তাই।আর এটাই হওয়া স্বাভাবিক! বাট,রিহান তোকে বিয়ে করার পর তোর মাঝে একটা পাওয়ার চলে এসেছে। যে যাই বলবে দেখিস গাঁয়ে লাগবে না এখন আর!”
“তুই যা ভাবতেছিস তা না।বিষয়টা এখন অন্যদিক ঘুরে গেছে।”
“মানে?”
“ওই আবরাহাম কিছুই বিশ্বাস করতেছে না।ও আমাকেই বিয়ে করবে।ওর বাবা এসেছে সন্ধের দিকে।এসে আমার বাবাকে এসব বলে গেছে।এখন আমার পরিবার খুশি খুব।”
“তাহলে তো ঝামেলা বেঁধে গেলো।রিহানকে জানিয়েছিস এসব?”
“আমার লজ্জা করে ওর সাথে কথা বলতে।”
“প্রিয়া খিলখিল করে হেসে দেয়।”

হাসি থামিয়ে তারপর বলে,
“লজ্জা পাওয়া টা ত স্বাভাবিক। আজ তোদের বাসর হওয়ার কথা।কিন্তু পরিস্থিতির কারণে দুইজন দুই প্রান্তে।মনের ভেতর অস্থিরতা আর অস্থিরতা..! ”
“প্লিজ চুপ করবি।এখন সমাধান বের কর।আমি চিন্তায় শেষ।”
“কোনো টেনশন নয়,বেইবি।আমি দেখি কি করা যায়।”

প্রিয়া কল রেখে দেওয়ার পরই নিতু ওর পেছনে কাউকে আবিস্কার করে।মানে তোহা দাঁড়িয়ে আছে।তোহাকে দেখামাত্র নিতু কেমন যেনে চাঞ্চল্যকর হয়ে যায়।তা দেখে তোহা হেসে দেয়।আর বলে,

“আমি কিন্তু তোর কথোপকথন সব শুনেছি।কালকে রাত তাহলে এই কাজ সেরে আসলি?তাই তো বলি গ্রামের লোকতে আর কানঠাঁসা না।কিছু সত্য বিধায়ই তো রটাচ্ছে।আর সেটা রিহান।হিহিহিহিহি।”

নিতু নিজেকে স্বাভাবিকতায় রেখে জবাব দিলো,
“তুই যেমনটি ভাবছিস তেমন কিছুই নয়।”

তারপর নিতু তোহাকে সবকিছু খুলে বলে।তোহা সব শুনার পর চোখমুখে চিন্তা ফুঁটে উঠে বান্ধবীকে নিয়ে।পরক্ষণে আবার সাহস দেয়,

“আরেহ বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে এত চিন্তা কিসের। কেউ কিছু করতে পারবে না। তুই রিহান ভাইয়ার সাথে কথা বলা।”

এভাবে অনেকক্ষণ ধরে কথা হয় নিতুর তোহার সাথে।তোহা শেয়ার করে ওর জীবনকাহিনী।ওর পরিবারও ওকে জোর করে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে চাচ্ছে।কিন্তু ও ভালোবসে করিমকে।এবং করিমও ওকে পছন্দ করে।কিন্তু বাসায় করিম ভাইয়ের কথা তুললেই ওকে মারধর শুরু করে।বলতে বলতে কেঁদে দেয় তোহা।আসলেই নিতু যেবার তোহার সাথে ঘুরতে বের হলো বাইরে,সেদিন কিছুটা নিতু আন্দাজ করে ফেলে তোহা করিম ভাইকে পছন্দ করে।নিতু শুধায়,
“বিয়ে তো এখনে হয় নি,না?”
“নাহ।ঈদের পর হবে ঠিক করে রেখেছে।”
“এনগেজমেন্ট তো হয়েছে,না?”
“হ্যাঁ।এই দ্যাখ আংটি।”হাত বাড়িয়ে।
“চিন্তা করিস না।ঈদ হতে এখনো অনেক দেরী আছে।আমার সমস্যাটা সমাধান করে নিই।তারপর তোরটা দেখি।”
“জানিস?নিতু?করিম ভাই প্রতিরাতে আমাকে কল করে ফোনে কান্না করে।”
“বুঝতে পারতেছি আমি।চিন্তা করিস না।”

এভাবে কথা বলতে বলতে দশটা বেঁজে যায়।তোহার চলে যাওয়ার সময় হয়ে যায়।তোহা চলে যাওয়ার পর নিতু ওর ফোনটা হাতে নেয়।দেখে ত্রিশটা কলের নোটিফিকেশন ওর স্ক্রিনে।আর নাম্বারটি রিহানের। তোহার সাথে কথা বলার সময় রিহান এতবার কল দিয়েছে ওর ফোনে!

———————————-
নিতুর মা নিতুকে নিতুর রুমে এসে খাবারটা দিয়ে যায়।নিতু ভাবলো না খেয়ে থাকবে।কিন্তু পেটের হাড্ডি,কলিজা সব মুচড়াচ্ছে খিদায়,তাই না খেয়ে আর পারলো না।নিতু খাবার শেষ খাটে সোঁজা হয়ে শোয়।আবার ফোনটা বেঁজে উঠে।রিহানের কল!

নিতুর ভেতরটা চাপা অস্বস্তি, আর মনে ভয়।কল রিসিভ করতে কেমনজানি লাগছে নিতুর আজকে!রিহানের কল বাঁজতেই আছে।পরক্ষণে রয়েসহে নিতু সাহস নিয়ে কলটা রিসিভই করে ফেললে এবার।রিসিভ করা মাত্রই রিহানের খেঁটকি!

“আর ইউ ম্যাড,নিতু?কতটা ইম্পর্ট্যান্ট কল হতে পারে।কলটা রিসিভ করবে না?”

নিতু বার কয়েক সেকেন্ডস চুপ করে থাকে প্রথমে।পরে থেমে থেমে বলে,
“আ-স-লে ফোনের কাছে ছিলাম না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে মানছি।বাসায় কি হয়েছে তোমার।একটু ভালো করে খুলে বলো তা আমাকে।প্রিয়ার কথা বুঝতেছি না।”

নিতু রিহানকে সব বলে।বলতে বলতে গলাটা ভেঙ্গে আসে নিতুর।রিহান নিতুর অবস্থা বুঝতে পারতেছে।তবে নিতু কেঁদে কি ই বা করতে পারবে।সবটা তো রিহান নিজেকেই করতে হবে।আর তা কৌশলে!
নিতুকে আশ্বস্ত করতে থাকলো।বললো,

“কান্না থামাও নিতু, প্লিজ!কিছুই হবে না। আমি আছি না সাথে?”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here