#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-১৮
“এ্যাঁ কি? আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
হাত টেনে সোঁজা চিকন গলিটার দিকে নিয়ে যাচ্ছে রিহান।নিতুর কথায় কোনো কর্ণপাতই করছে না।নিতু আবার বলে,
“আহা ছাড়ুন…! ”
কিছুটা দূর যাওয়ার পর রিহান এবার থামে।আর নিতুর হাত ছাড়ে।বেচারী নিতু হাঁপিয়ে গেছে।রিহান নিতুর দিকে স্বাভাবিক চোখে তাকায়।নিতুরও চঞ্চলা চোখ রিহানের দৃষ্টি দেখে থেমে যায়।নিতু বলা যায় এখন একদম চুপ।রিহন বলে,
“আজ আমরা বিয়ে করবো!”
নিতুর ভ্রু-যুগল কুঁচকে এলো যেনো।মানে রিহানের কথাটা তার ঠিক বোধগম্য হলো না।রিহান বললো,
“এত বুঝাতে পারবো না।চলো আগে বিয়েটা সম্পূর্ণ করি।পরে সব প্রশ্নের উত্তর জেনে নিও।আর তোমাকে তো গ্রামের বাড়িতে ফিরতে হবে,তাই না?”
বলে আর নিতুকে কথা বলার সুযোগ দিলে না।হাতটা শক্ত করে ধরে নিতুর দুই কদমে কাজী অফিসে ঢুকে যায়।কারণ তাদের সামনেই কাজী অফিস ছিল।বিয়েটা হয়ে গেলো।
নিতুর বিশ্বাস হচ্ছে না এখনো কোনোকিছু।
ঘোরের ভেতর আছে সে।সবকিছু যেনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে।পাশের সিটে বসা মানুষটা যেনো কারো ছায়া,মানব নয়।নিতু নিজেকে ধাতস্থ,শান্ত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে সাথে।এরকম নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে করতে কতটা মিনিট কতটা ঘন্টা শেষ করেছে তার হিসেব অজানা।হিসেব তখনই জানা হয়েছো যখন রিহান বললো,
“চলে এসেছো তোমাদের স্টেশনে।গাড়ি থেকে নেমে রিক্সা নিবা।রিক্সায় করে বাসায় পৌঁছাবা।ঠিক আছে?”
নিতু রিহানের কথায় জবাব দিলো না।তবে বাধ্য মেয়ের মতন গাড়ি থেকে নেমে গেলো।রিহান পেছন থেকে ঢেকে উঠলো,
“আর শুনো?”
বলে রিহান স্টিয়ারিং এর সামনে থেকে একটা ডায়েরী নেয়।তারপর তা নিতুর দিকে এগিয়ে দেয়।বলে,
“এইটা নাও।”
নিতু কিছুটা ভড়কে যায় ডায়েরীটা দেখে।কারণ,ডায়েরী তে কি এমন আছে যে ডায়েরী দিচ্ছে।মনে জাগা প্রশ্নটা নিতু মনেই চেপে রাখলো মুহূর্তে। তারপর তা হাতে নিল।রিহান আবার বললো,
“সাবধানে যেও।”
নিতু রিহানের ডায়েরীটা একহাতে নিয়ে অন্যহাত রিক্সা থামালো।আর হ্যাঁ,আরেকটা কথা,রিহান নিতুর ট্রলিটা গাড়িতেই রেখে দিয়েছে।এটা নিয়ে গ্রামে ফিরলে গ্রামের লোক আরো বাঁজে বাঁজে মন্তব্য করবে।নিতু রিক্সায় উঠতে ফোনে টুং করে মেসেজ আসে।নিতু চেক করে,
“,আর শুনো?তোমাকে গ্রামের মানুষজন অনেক অনেক কথা শুনাবে এখন কারো কথা কানে নিবা না।যদি বলে কোথায় গিয়েছো? সোঁজা একটা উত্তর দিবে,” বান্ধবীদের বাসায়!”
নিতু মেসেজটা পড়া শেষ করে পাশে তাকালো।দেখলো রিহানের গাড়ি এখনে সেখানে।হয়তো রিহান এখন তার দিকেই তাকিয়ে আচে।নিতু মাথাটা খানিকটা নুইয়ে আনার মতন করে রিকশাওয়ালাকে বললো,
“তাড়াতাড়ি চলুন,মামা।”
নিতু গ্রামের রাস্তায় পা রাখতেই গ্রামের মানুষগুলার হৈচৈ শুরু করে দিলো।তারসাথে বাঁজে বাঁজে কথা!নিতু কান চেপে ধরলো।জানে এরা অনেক কথাই বলবে।অনেক কথাই শুনাবে!নিতু সবাইকে উপেক্ষা করে বাড়ির রাস্তায় পা রাখলো।বাড়িতে এসে দেখে ঘর-বাড়ি দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।নিতু ভাবীর ঘরের দিকে প্রথমে গেলো।দরজায় আলতো টোকা মারলো।নিতু দরজার সাামনে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার মাঝেই গ্রামের কিছু বুড়ো, জোয়ান মহিলা মাথায় আঁচল টেনে উঠোনে এসে দাঁড়ালো। উদ্দেশ্য নিতুকে দেখবে।গ্রামে এই একটা সমস্যা, যখন কারো কিছু শুনবে তখন এরা নিজের কথা বাদ দিয়ে আরেকজনকে নিয়ে কানাকুয়ো করতেই পছন্দ করে বেশি।নিতুর ভাবী দরজা খুললো না।নিতু মলীন চোখমুখ নিয়ে আবার বাবা-মার ঘরের দিকে গেলো।সেখানেও টোকা মারলো।উনারাও দরজা খুললেন না।তা দেখে কয়েকজন মহিলা হেসে উঠলেন।একজন পাশ থেকে বলে উঠলেন,
“কেউই দরজা খুলবে না।”
আরেকজন আবার,
“বাড়ির কথা বাদ দেন।ওরে তো গ্রামেও জায়গা দেওয়া হবে না।ওর জন্যে গ্রামের অন্য মেয়েদের কি বদনাম রটাবে নাকি?ওদের কি বিয়ে দেওয়া লাগবো না?”
“যেই পোয়ার কাছ থেকে ফিরে আসছো তারকাছে ফিরে যাও।”
“ভাতার মনে হয় এক রাত্তির রাইখা এখন সকালে ছাইড়া দিছে।”
নিতুর এবার রাগ উঠেছে চরম মাত্রায়!গলার স্বর উঁচু করে বলে উঠে,
“মায়ের বয়সী হয়ে এসব কি বলতেছেন আপনি?”
“কি বলতাছি মানে?আরেক ফোলার লগে ভাইগা মা-বাবার মান ইজ্জত খাইছস এখন বললে দোষ?!”
“দেখুন আপনাদের ভাবার ভুল আছে।আমি কোথাও যাইনি।আমি আমার বান্ধবীদের বাসায় গিয়েছি।”
“মাইয়া কি ডাহা মিথ্যা কথা কয়,দেখছো?”
“যাবেন আপনারা?না তাড়িয়ে দিব!”
“তুই আমাদের তাড়াবি?তোরে আমরা তাড়ামু!”
“না বুঝে না শুনে আপনারা কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করতেছেন!”
বলে নিতু দরজায় জোরে শব্দ করে বারি মারে,
“মা?দরজা খুলো?”
এভাবে দুই তিনবার বলার পর ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয়।নিতু ঘরে ঢুকে পড়ে।নিজের রুমে যেয়ে কাঁদতে শুরুা করে।এরমাঝে বাইরে সব চুপচাপ!নিতু এখন শুধু নিতুর কান্না টুকুর আওয়াজই শুনতে পাচ্ছে। নিতু কান্নার গতি থামিয়ে দেয় সাথে সাথে।আর জানালায় চোখ রাখে।চোখ রাখতেই দেখে মাওলানা,মানে আবরাহামের বাবা।উনি গ্রামের মানুষদের কিছু বলতেছে।নিতু বিছানা থেকে উঠে জানালার দিকে এগিয়ে যায়।কান খাঁড়া করে উনি কি বলেন,
“আপনার আপনাদের বাসায় ফিরে যান।ও যেহেতু ফিরে এসেছে দেখি কি করা যায়।আপনারা গ্রামের মানুষজন এসব নিয়ে কানাকুয়ো করবেন না।এতে আামাদের গ্রামেরই মানসম্মান যাবে!”
সবাই মাথা নাড়ে।
“আচ্ছা তাহলে বিদেয় হও সবাই।”
সবাই সাথে সাথে যে যার স্থান ত্যাগ করে।তারপর মাওলানা লুৎফরকে ডাকেন,
“লুৎফর আমি তোমাদের বাসায় সন্ধায় আসছি এই ব্যাপারে কথা বলার জন্যে।”
“জ্বী,আচ্ছা। ”
মাওলানা চলে যায়।নিতু এবার নিজের ঘর থেকে বের হয়।মাকে দেখে রোয়াকের এককোণে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।বলে,
“মা?”
নিতুর মা জবাব তুলেন নি।
“মা তুমি আমাকে ভুল বুঝতেছো!আমি কারো সাথে পালিয়ে যাই নি।বিশ্বাস করো মা আমাকে।”
নিতুর মা তারপরও কিছু বলেননি।নিতুর বাবা ঘরে আসে।বাবার দিকে এগিয়ে যায় নিতু,
“বাবা তুমি আমাকে বিশ্বাস করো।”
“আমি এ ব্যাপারে আর কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।”
বলে চলে যান নিজের ঘরে।নিতু নিজের ঘরে ফিরে আসে ব্যর্থ মনে।এসে বিছানায় কিছুক্ষণ শুয়ে পড়ে।কেনজানি কেনোকিছুই ভালো লাগতেছে না এখন।বেশি ভালো লাগতেছে না রিহানের ওই কান্ডে।মনে মনে এখন কেনজানি নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে পরিবারের কাছে।আর গ্রামের মানুষদের কথা ভাবলে রিহান যেনো তার একটা শক্তি।ভয় নেই কোনো,যে যা ইচ্ছে বলুক।এধরণের হাজারো ভাবনা ক্লান্ত মস্তিষ্ককে মেলে দিয়ে কখন যে চোখ লেগে আসে বুঝতে পারে নি।পরে ঘুম ভাঙ্গে ভাবীর গলার শব্দে।
চলবে…