#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-১৬
৪১.
নিতু বাড়িতে এলো।নিতুর মা নিতুকে দেখে গদগদ খুশি হয়ে গেলো।থুতনিতে এবার হাত রেখে বললো,
“কিরে নিতু?ঢাকায় থেকেও মোটা হসনি?এরকম চিকনা থাকলে কেউ পছন্দ করবো?
নিতুর মার শেষ কথাটা নিতুর কেনজানি ভালো লাগলো না।তারপর আলতো একটা ঢোকর গিলে মৃদু হাসলো।বললো,
” মোটা হতে বলছো?আমারতো চিকনই থাকতে ভাল্লাগে।তাই চিকন থাকি।”
“তোরে বিয়ে দেওয়া লাগবো না?”
নিতুর মা সচরাচর এরকম কথা বলেন না।কিন্তু মায়ের কথার এ কেমন পরিবর্তন! নিতু আবারো কিছুটা ধাতস্থ করলো।এমন সময় দূর থেকে টলটল পা ফেলে ছোট্ট একটা বাচ্চাকে এদিকে আসতে দেখলো।তার দুই ঠোঁটের ফাঁকফোকরের দাঁত গুলো চিকচিক করছে হাসিতে।নিতু এগিয়ে যেয়ে তাকে কোলে তুলে নিলো।গালে চুমু বসালো।আদর করতে করতে বললো,
“কত বড় হয়ে গেছে আম্মুটা!”
বলতে বলতে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।নিতুর মা নিতুর পেছনে পেছনে নিতুর ব্যাগ হাতে নিতুর সাথে এগুতে থাকলো।তারপর তিনি ব্যাগ নিয়ে ঘরে ঢুকে গেলো।আর নিতু উঠোনে এসে দাঁড়ালো।নিতুর ভাবী এগিয়ে এলো।বললো,
“কেমন হয়েছে পরিক্ষা?”
“ভালো,ভাবী।কেমন আছো তোমরা?”
“আলহামদুলিল্লাহ। তা দাঁড়িয়ে কেনো?ঘরে যা,নাহলে তোর ভাইয়ার ঘরে যেয়ে বস।”
ভাবী কি নরম সুরে কথা বলছে নিতুর সাথে।ভাবীর কথার খুব পরিবর্তন দেখেছে নিতু,যবে থেকে সে টিউশন শুরু করেছিল।কারণ,নিতুর বাবাকে এখন আর নিতুকে টাকা দেওয়া লাগে না।উনার দোকানের আয় সব উনার সংসারেই যায়।আর নিতুর ভাইকেও মা-বাবাকে এখন আর ওতটা দেখা লাগে না।সবাই সবার মতন।কেউ কারো ঝামেলায় নাই।পৃথিবীটা বড্ড অভিমানী।কেউ কারো দায়িত্ব নিতে চায়না।হোক তা আপন আর পর।নিতুকে নৈশব্দে একটা নিশ্বাস ছাড়লো।তারপর ভাবীকে বললো,
“ভাবী?লিয়ার জন্যে দুইটা জামা এনেছি নিউ মার্কেট থেকে।”
বলে নিতু ভাইঝিকে কোল থেকে নামিয়ে ঘরে যায়।মা ঘরে নিতুর ব্যাগটা নিয়ে গেছেন।নিতু ব্যাগ থেকে ভাইঝির জামার ব্যাগটা হাতে করে বাইরে নিয়ে আসে।ভাবীর হাতে তুলে দেয়।ভাবী বলেন,
“আহা,কেনো খামোখা ওতগুলো নষ্ট করতে গেছিস?”
“আমার জন্যে এনেছি।আর কিসের টাকা নষ্ট।”
অনেক কথা বলেছিস।এবার কলপাড় থেকে হাতমুখ ধুঁয়ে এসে খেতে আয়।আমি ভাত বাড়তেছি।না খেতে খেতে কেমন শুঁকিয়া গেছে।”
নিতু ভাইজির গালে আলতো ছুঁয়ে কলপাড়ের দিকে চললো।পেছনে পেছনে নিতুর মা সাবান হাতে এলো।কলপাড়ের উপর সাবানটা রাখতে রাখতে বলেন,
“সাবান রাখলাম।তাড়াতাড়ি আয়।”
৪২.
নিতু খেতে বসলো।খাওয়ার অর্ধসময়ে নিতুর মা জোরে একটা হাঁক ছেড়ে নিজ মনে বলে উঠলেন নিতুকে,
“নিতু?চৌকিদার বাড়ির আব্দুল আজিজ মাওলানা ভাইকে চিনিস?”
নিতু ভাত খাওয়া মগ্নতায় উত্তর করলো,
“নাহ।”
“কি বলিস?ছোট্ট বেলায় না কত উনাদের বাড়ি যেতিস?আব্দুল ভাইয়ের ছেলে আবরাহামের সাথে খেলা করতিস?ওকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডকতিস?ও তো তোর তিন বছরের বড়।আব্দুল ভাই তোর এবং আবরাহামের দুষ্টমি দেখে তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে?”
“মা,সেই ছোট্ট বেলার কথা মনে পড়তেছে না।”
বলে নিতু আরেক লোকমা ভাত মুখে ফুঁড়ে।নিতুর মার চোখমুখে উত্তেজনাকর ছাপ।নিতু মার দিকে তাকায়।বলে,
“মা আমার মনে নাই একদম।”
নিতুর মা এবার হাসলেন মেয়ের ইনোসেন্ট মুখের দিকে তাকিয়ে।সাথে সাহসও পেলেন এতক্ষণের চেপে রাখা মনের কথাটা মেয়ের কানে পাড়তে।বলেন,
“নিতু?আজিজ ভাই অনেক ভালো।এলাকায় গরীব-দুঃখী মানুষদের টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করেন।আর উনার ছেলে আবরাহাম, সেও মাশাআল্লাহ। সে ত তোর এবার অনার্স পাশ করে বেরুতেই ইসলামী ব্যাংকে চাকরি হয়ে গেছে।”
“আচ্ছা।”
নিতুর মার পুরো কথা যেনো শেষ হলো না।মেয়েকে আরো কিছু বলতে চাইলেন।কিন্তু মেয়ের এরমাঝে খাওয়া শেষ।সটকে উঠে চলে গেলো নিজের রুমে।নিতুর মার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
৪৩.
নিতু শুয়ে আছে।হঠাৎ কপালে কারো হাতের স্পর্শ পায়।নিতু বুঝতে পারলো ওর বাবা।দোকান শেষ করে ঘরে ফিরেছে।নিতু উঠে বসলো।লুৎফর আলী ঘামময় মুখে বলে উঠলেন,
“খাওয়াদাওয়া করেছিস, মা?”
“হ্যাঁ,বাবা।”
“আচ্ছা,তাহলে এবার ঘুমা মা। কাল কথা হবে।”
নিতুর মা-বাবা চলে যায়।নিতু ঘুমানোর চেষ্টা করতে হঠাৎ মস্তিষ্ক সচল হয়ে ওঠে।নিতুর মা ফিসফিস গলায় বলে উঠে,
“মেয়েকে তো বলতে পারতেছি না।”
“মেয়ে রাজি হবে?”
“জানি না।তবে আবরাহাম কি খারাপ?ছেলের বাবা একজন মাওলানা। ছেলে ব্যাংকে চাকরি করে।তারউেরমপরিচিত আমাদের।এরথেকে ভালো পাত্র আর কি হতে পারে আমাদের জন্যে?আমাদের তো কপাল ভালো মেয়ে ঢাকা ভার্সিটতে পড়তেছে বিধায় ওরা আমাদের সাথে সম্বন্ধতা করতে আসছে।”
“দেখো যেটা ভালো হয়।”
এটুকুন শুনলো।নিতু এবার পরিষ্কার হলো সে আসা মাত্রই তার মা তার সাথে কেনো এভাবে কথা বললো!তার জন্যে পাত্র দেখতেছে?নিতু আর বিছানায় পিঠ রাখতে পারলো না।সটাং উঠে বসলো।মাথাটা শূন্য হয়ে গেলো।বুকটা বিক্ষিপ্ত।বুক চেপে ধরলো খুব জোরে।
৪৪.
নিতু বসে আছে রুমে একা একা।ওর মা পাশে এসে বসলো।আগের মতন আবার একটা হাঁক তুললো।হঠাৎ বলে উঠলো,
“নিতু?তোর সাথে সব মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।তোর বান্ধবী তোহারও তো শুনলাম বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে করিমের সাথে আজ ভোরে দেখা হয়েছে আর সে বললো।”
তোহার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে?অনেকগুলা মাস হলো মেয়েটার সাথে তার যোগাযোগ হয়নি।আসলে নিজের ক্লাস,টিউশন সব মিলিয়ে চাইলেও সময় বের করে বান্ধবীর সাথে একটুখানি কথা বলার সুযোগ হয়নি।আবার বলবে বলবে বলেও ব্যস্ততায় চাপা পড়ে বেমালুম ভুলেই গেলো।নিতুর মনটা এবার আরো খারাপ হয়ে গেলো।সে মাথা নুইয়ে নিলো।নিতুর মা বলেন,
“আর বেশি দেরী করলেও বয়স বেড়ে যাইবো।মেয়ে মানুষ!”
নিতু এবার মায়ের চোখের তাকিয়ে বলে উঠলে,
“আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে তাই বলতে চাচ্ছো, তাই না মা?”
“নিতু একটা ভালো সম্বন্ধ আসছে।ঔ আবরাহাম ছেলে ব্যাংকে চাকরি করে।ওর বাবা মাওলানা।এমন ছেলে।আমি কত খুশি হয়েছি।তাও যখন শুনছে তুই ঢাকা ভার্সিটিতে পড়স।”
নিতু ধাতস্থ করে নিলো মনে মনে।তারপর বললো,
“আমার পড়াশুনা শেষ হয়নি।”
“আরেহ,ওরা বলেছে তোকে পড়াবে।তুই যতটুকু পর্যন্ত পড়তে চাস।”
“এইটা একটা এক্সকিউজ। বিয়ের পরে পড়া আর হবে না।”
“আরেহ,ছেলে শিক্ষিত।পড়াবে!কি বলিস!”
“তুমি যতটা সহজভাবে বলো,ততোটাও সহজ নয় মা।যাইহোক,সবথেকে বড় কথা হলো আমার পক্ষে সম্বব না।আমি পরাশুনা শেষ করি।একটা চাকরিবাকরি করবো।তারপর দেখি।”
“নিতু?তোর ভালোমন্দ দেখার অধিকার আমাদের নেই?তুই এসব বলিস না।কালকে তোকে ছেলেরা তোকে দেখতে আসবে।তোর বাবাকে দিয়ে বলে দিচ্ছি।”
বলেই তরতর করে উঠে চলে যান নিতুর মা।নিতুর আগের মতনই নির্জীব বসে থাকে।এভাবে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর হঠাৎ পাশ থেকে হাতে তুলে নেয়।ফেসবুক ওপেন করে। আইডি সার্চ করে।সামনে ভেসে উঠে রিহানের হাসিমাখা প্রোফাইল ফটো।নিতুর কান্না চলে আসে।
চলবে…
(অনেকদিন পর দিলাম।পার্সোনাল কিছু সমস্যা ছিল।তারপরও প্লিজ আর কিছু জানতে চাইবেন না!🙂)