#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব-১৫
৩৯.
নিতুর সারা শরীরের শিরা-উপশিরায় সেই স্পর্শ এখনো লেগে আছে।স্নেহাদের বাড়ি থেকে এসেছে তিনদিন হলো। চোখমুখের ভাবান্তরে মাঝে মাঝে লজ্জার রেশ ফুঁটে উঠছে।সেদিন রাতে স্নেহাদের বাসায় যাওয়ার পর নিতু আর রিহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নি।দমমুখ বন্ধ করে কোনোমতে একটা রাত পার করেই সকালের নাস্তা সেরে স্নেহাকে বলে হলে ফিরে আসে নিতু।সেই আসাতে মেয়েটার এখনো স্বস্তি আসছে না মনে।ভাবলো প্রিয়াকে ব্যাপারটা বলবে।তাকেও বলতে পারছে না।
৪০.
নিতুর তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষাটা শেষ হয়ে যায়।ব্যাগপ্যাক বেঁধে এবার বাড়িতে যাওয়ার পালা।প্রিয়াও তাই প্রস্তুতি নিচ্ছে।তবে প্রিয়ার ইচ্ছে যাওয়ার আগে একবার দুইজনে একজায়গায় একটু ঘুরে আসুক একসাথে।ভেবে ফেলে ধানমন্ডি লেকে যাবে।নিতুকে জানায়।নিতু প্রথমে রাজি হতে চাই নি।পরে প্রিয়ার ধমকটমক খেয়ে রাজি হয়ে যায়।পরদিন বিকেলে দুই বান্ধবী লেকে যায় ঘুরতে।চারপাশে বেশিরভাগই কাপল!তাদের মতন সিঙ্গেল পার্টির কচিৎ।প্রিয়া এহেন দেখে মনটা কেনজানি খুব খারাপ হয়ে যায়!চোখমুখে মলীনতা ছুঁয়ে যায়!নিতু দেখে ফেলে তা।ফিঁক করে হেসে দেয় নিতু।বেঞ্চিতে প্রিয়ার পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে বলে,
“নিলয় ভাইয়াকে মিস করতেছিস খুব,না?”
প্রিয়া চুপ হয়ে থাকে।কথা বলে না।নিতু আবার শুধায়,
“মন খারাপ করিস না,দোস!নিলয় ভাইয়া হয়তো খুব বিজি তাই তোকে সময় দিতে পারছে না।মানুষের একটা পার্সোনাল লাইফ থাকে না?একটু সময় দে।উনি কাজ থেকে হালকা হোক।সব ঠিক হয়ে যায়!”
“ওর কি এমন ব্যস্ততা বল?ওকে যখন কল করি ও তখন বলে ওর বস ওকে ডাকছে।আবার যখন বলি, চলো একটু ঘুরে আসি ও আবারও ওর বসের অজুহাত তোলে।বলে,বস অনেকগুলো ফাইল দিয়েছে সেগুলো ফুলফিল করতে হবে!অথচ,ওকে বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে দেখি!আমাকে একটা মেসেজ করারও বোধহয় ওর প্রয়োজন পড়ে না।ও না আমাকে এখন আর ভালোবাসে না!ভালোবাসলে ঠিকই সময় বের করে আমার সাথে কথা বলতো।”
“তুই এত কেনো ভাবিস কেনো প্রিয়ু?”
“আচ্ছা বাদ দে ওর টপিকস!”
নিতু নিঃশ্বাস ছাড়ে একটা।ঠিক সেসময় পেছন থেকে,
“আরেহ,নিতু এবং প্রিয়া দেখি?”
দুই বান্ধবী সেদিকে তাকায়।তাকিয়ে দেখে স্নেহা।স্নেহা কিছুটা দূরে ছিলো।দৌড়ে প্রিয়া এবং নিতুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“কখন এসেছিস?”
প্রিয়া বললো,
“মিনিট বিশেক হবে।তা তুই এখানে কারসাথে?বফের সাথে?”
শেষ কথাটি বলে প্রিয়া চোখ টিপে।স্নেহা চোখ বড় করে ফেলে।তারপর বলে,
“বয়ফ্রেন্ড ছাড়া কি লেকে ঘুরতে আসা যায় না?”
“আরেহ মজা করছি।তা একা এসেছিস?”
“মাথা খারাপ?একা কেউ ঘুরতে আসে?”
“তাহলে?”
“ভার্সিটির ফ্রেন্ডদের সাথে এসেছি দুইটার দিকে।অনেক ঘুরেছি। এবার বাড়ি যাবার পালা।ফ্রেন্ড সবাই একটু আগে চলে গেছে।আর আমি ভাইয়া আসার অপেক্ষা করছি।”
“চলে যাইবি?আমরা এসেছি আরেকটু পরে যাইস। আমাদের সাথেও একটু ঘুর!দুইজন আসছি মাত্র আমরা।কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।থাক না আরেকটু?”
স্নেহা চুপ করে থাকে প্রথমে।পরে বলে,
“ভাইয়াকে যে বলেছি আসতে। আচ্ছা ভাইয়াকে কল করে বারণ করে দিই এখন না আসতে।পরে আসতে।”
প্রিয়া বলে,
“সমস্যা কোথায়?ভাইয়া আসুক।ভাইয়াসহ ঘুরবো।”
ঠিক সেখানে বাঁধ সেঁধে যায় নিতুর।তরবর করে বলে উঠে,
“ইইই না না!আজ আমরা বান্ধবীরা শুধু ঘুরবো।সিনিয়র এলাউ না আজকের জন্যে প্লিজ প্রিয়া!”
“আহা..আমরা কি বফ নিয়া আসছি যে উনি থাকলে প্রবলেম হবে?উনি আসলে তখন আমরা চারজন।চারজনের ভালো একটা দল হবে এবং মজাও হবে।তুই কল দে স্নেহা!”
বেচারী স্নেহা তটস্থায়।একবার নিতুর দিকে তাকায়,আরেকবার প্রিয়ার দিকে!কি করবে?ভাইকে কল করবে নাকি করবে না!তবে আফসোস নিজে স্নেহা ভাইকে কল করার আগেই তার ভাই তাকে কল করে ফেলে।স্নেহা রিসিভ করতে,
“কোথায় তুই?আমিতো লেকেতে চলে এসেছি।”
ফোন লাউডে থাকার কারণে রিহানের কথা প্রিয়া এবং নিতু উভয়ই শুনে ফেলে।প্রিয়া কি করে?ফোনটা স্নেহার হাত থেকে খপ করে টেনে নিয়ে বলে উঠে রিহানকে,
“ভাইয়া?আমরা শিমুল গাছের পাশের বেঞ্চিটার সামনে আছি।আপনি এখানে চলে আসুন।”
বলে কল কেটে দেয়!স্নেহা নিতুর হয়ে বলে,
“দরকার কি ছিলো ভাইয়াকে বলার।এসেছে।বারণ করতাম!”
এমন সময় রিহান এসে হাজির হয়।বলে,
“হাই এভরিঅন?”
নিতু অপ্রস্তুত ধারে পড়ে যায়। পেছন কিছুটা হটে যায়,তাও প্রিয়ার পেছনে।মুখটা অন্যদিকে করে নেয় নিতু।স্নেহা বলে,
“তুমি চলেই এলে ভাইয়া?”
“আমি এসেছি সমস্যা হয়েছে?”
প্রিয়া বলে উঠে,
“আহা ভাইয়া কি বলেন!আপনি এসেছেন আমরা খুব খুশি!”
রিহান সবার দিকে একবার চোখ আওড়ায়!দেখার চেষ্টা করে সবাই আসলে খুশি কিনা।প্রিয়ার মুখের সাদা দাঁতগুলো সেই আগের মতোই বের করানো।নিতু নিজেকে লুকানোর চেষ্টা যেনো।আর তার বোন খুব বেশি স্বাভাবিকও না,আবার অস্বাভাবিকও না।স্নেহা সবার সাক্ষাৎকারের মাঝে বামদিকে পাশে ফিরে দেখে পপকর্ণওয়ালা লোক।সেদিকে আগ্রহটা দ্বিগুন বেড়ে যায়।বলে,
“আচ্ছা তোমরা থাকো ত?আমি এক মিনিটের মধ্যেই আসতেছি।”
বলেই ছুটে যায় পপকর্ণওয়ালার দিকে।স্নেহার পপকর্ণ আবার ভীষণ প্রিয়।বাসা থেকে আসার আগে ডিসিশন নিয়েছে এখানে এসে পপকর্ণ খাবে।কিন্তু ফ্রেন্ডসদের সাথে থাকাকালীন একবারপ পপকর্ণওয়ালাকে চোখে পড়ে নি।এখন পড়েছে যেহেতু।সুযোগটা হাতছাড়া করবে না।স্নেহা চলে যাওয়ার বিশ সেকেন্ডের ভেতরই প্রিয়াও সেদিকে ছুটে যায়।বলে,সেও নাকি পপকর্ণ খাবে!নিতু হয়ে যায় একা।নিতুর অবস্থা বেগতিক!খুবই বেগতিক।এবার সারা শরীর কেঁপে কেঁদে উঠার মতন অবস্থা যেনো!রিহান ওর এই অনুভূতি ধরতে পেরেছে কিনা বুঝতে পারছে না নিতু।তবে কিছুই যেনো না বুঝুক।নিতু নিজেকে মনে মনে আবার শক্ত করার চেষ্টা করলো!এমন সময় রিহানের গলা ঝাঁড়ার শব্দ কানে এলো নিতুর।তার কয়েক সেকেন্ড বাদেই কন্ঠস্বর,
“পপকর্ণ তোমার পছন্দ না?”
নিতুর এবার কাঁপুনি ভাবটা প্রকাশ পেয়ে যায়।কারণ নিতুর এবার কেনজানি ঠোঁটজোড়া প্রবল বেগে কেঁপে উঠছে।আর সেটা রিহানের দৃষ্টিতে নিবদ্ধ হয়ে গেছে!রিহান দৃষ্টি এবার অন্যদিকে আওড়িয়ে নেয়।নিতু হালকা চোখে রিহানের দিকে তাকায়।কাঁপুনির ভরা ঠোঁট এবং শরীরে বলে উঠে নিতু,
“থা-কু-ন আ-প-নি!আ-মি গেলাম।”
বলেই ভো দৌড় ওর।ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রিহান মৃদু হেসে দেয়।নিতু সেদিকে যাওয়ার পর প্রিয়া এবং স্নেহাকে খুঁজে পায়নি।চারপাশে ভালো করে তাকায়।কোথাও নেই।তাহলে ওরা ওকে একা রেখে কোথায় গেলো?প্রিয়াকে কল করবে ভেবেছে।কিন্তু ওর ফোনটাও যে প্রিয়ার কাছে!রাগ উঠে যায় নিতুর!আর পেছন দিকের প্রতি একরাশ ভয়,লজ্জা এবং বিরক্ততা!ওই লোকটি যদি আবার পেছন থেকে সামনে এসে দাঁড়ায়!কি করবে নিতু তখন?কি করবে!?
নিতু জিম্মি দাঁড়িয়ে থাকলো সেখানে।কোনোরকম নড়লো না।আশপাশে বা পেছনেও ফিরে তাকালো না।ওর এই জিম্মি দাঁড়িয়ে থাকা অপেক্ষা শুধুমাত্র এখন স্নেহা এবং প্রিয়া আসার অপেক্ষা।ঠিক মিনিট সাতেক পরে প্রিয়া এবং স্নেহা দুইজনে দুই হাতে দুইটা করে মোট ৪ টা কাচ্চি বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে হাজির হয়।মিনারেল দুইটা বোতলও আছে সাথে।ওদের দেখতে পেয়ে নিতু সেদিকে তেড়ে যাওয়ার মতন হেঁটে যায়।বলে,
“আমাকে একা রেখে তোমরা কীভাবে যেতে পারলে?কীভাবে?!”
প্রিয়া বলে উঠে,
“কীভাবে মানে?রিহান ভাইয়া তো সাথে ছিলো।একা কখন ছিলি!”
নিতুর রাগ উঠতাছে প্রিয়ার উপর এখন! এই ফকিন্নি মাইয়াটার জন্যে এইরকম পরিস্থিতি হইছে!মন চায় একে এখন আস্ত চিবিয়ে খেতে পারলে মন শান্তি হত!তবে বান্ধবীর প্রতি রাগটা নিতু স্নেহার সামনে তা প্রকাশ করতে চাইলো না।পরক্ষণে মুখে হাসি টানার চেষ্টা করলো।প্রিয়া
যেনো নিতুর মনের অবস্থা বুঝে ফেললো।সে নিচের দিকে দৃষ্টি দিয়ে মিটিমিটি হাসছে!নিতু তা দেখলো।এখন কিছু বলবে না বাবুকে।বাবু আগে হলে ফিরুক।তারপর শায়েস্তা করবে।স্বেহা বলে উঠে এবার,
“ভাইয়া কোথায়?ভাইয়াকে যে দেখছি না!”
নিতু বললো,
“আগের জায়গায় ই বোধহয় আছেন।”
স্নেহা সেদিকে এগিয়ে গেলো।গিয়ে দেখে রিহান নেই।প্রিয়া বলে,
“কী রে?রিহান ভাই আবার কোথায় গেলো?”
নিতুও বুঝতেছে না রিহান কোথায় গেলো আবার!এখানেই তো রেখে চলে গেলো সে।স্নেহা বললো,
“আচ্ছা, আমি ভাইয়াকে কল দিতেছি।”
কল দেয়ার পর রিহান কল রিসিভ করে। বলে,
“বান্ধবীদের নিয়ে ভালো করে ঘুর!আমি সিনিয়র তোদের মাঝে যাচ্ছি না।আর কোনো সমস্যায় পড়লে আমাকে কল করে জানাবি।ঠিকাছে?”
“ভাইয়া?তোমার জন্যে একটা বিরিয়ানি প্যাকেট এনেছি।সবাই মিলে খাবো ভেবে।আর তুমি চলে গেলে?”
“লাগবে না।ওটা কোনো পথশিশুকে চোখে পড়লে তার হাতে দিয়ে দিস।বায়,টেক কেয়ার, বোন।”
চলবে…….