#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব-১৩
রিহান বোনের সাথে আর না উঠতে পেরে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।ভাই-বোনের এইটুকুন খুঁনসুটিতে সবাই হেঁসে ফেললো।রিহানও বোনের দিকে তাকিয়ে হাসলো।একটামাত্র বোন ওর।খুবই আদরের।
এই বোন ছাড়া ওর আর পৃথিবীতে দ্বিতীয় কেউই নেই।হঠাৎ অফিস থেকে ক্লায়েন্টের কল আসে এক আসামীকে ধরেছে তার জরুরী শাস্তির ব্যবস্থা নিতে!আসামী অনেক বড় আসামী, যে বউকে মারতে চেয়েছে!এরকম একটা ইস্যুতে রিহানের দায়িত্বও এড়িয়ে যাওয়া বেমানান একজন নির্বাহী ম্যাজিট্রেট হিসেবে।অন্যদিক দিয়ে আবার বোনের ব্রার্থ ডে অনুষ্ঠান।বোনের অনুষ্ঠান রেখেও যাওয়া সম্ভব নয়। এহেন অবস্থায় কী করা যায়?পরে ভেবে ফেলে ক্লায়েন্টের সাথে ভিডিও কলে কথা বল ঝামেলাটা কিছুটা চুকাবে সিদ্ধান্ত নেয়।রিহান টি-টেবিলের দিকে এগিয়ে এলো।মোমবাতি ধরালো।গেস্ট সব টি-টেবিল ঘিরে দাঁড়ালো।বাতি অফ করে দিলো।মোমবাতির লাল লাল আলোতে রিহান বোনকে সামনে দাঁড় করালো!স্নেহা মোমবাতি সব ফুল দিয়ে নিভিয়ে ফেললো।সবার মুখ থেকে একত্রে ভেসে এলো “হ্যাপী ব্রার্থ ডে!”
পরে স্নেহা সবাইকে এক এক করে কেক খাইয়ে দেয়।প্রিয়াকেও খাওয়ায়। নিতুকে খাওয়াতে যেয়ে দেখে নিতু সবার পেছনে চুপচাপ একা দাঁড়িয়ে আছে।নিতুর কাছে দৌড়ে যায়।উচ্চ আওয়াজে বলে উঠে,
“এ্যাই?তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কেনো?কেক খাও?”
নিতু অপ্রস্তুত হয়ে যায় একদম।স্নেহা কথাগুলো এত জোরেই বললো যে সবাই নিতুর দিকে তো তাকায়ই,সাথে রিহানের চোখও এড়ায় নি তাতে!নিতু জোরপূর্বক হেসে স্নেহার কেক খায়।তারপর স্নেহাকে খাইয়ে দেয়।খাওয়ানো শেষ হলে স্নেহা ওর ভাইয়ার দিকে আবার ফিরে যায়।যেয়ে বলে,
“ভাইয়া?তোমাকে বললাম না?আমার একটা স্কুল ফ্রেন্ড আছে ;নাম প্রিয়া?এই সে।আর ও(নিতু)হলো প্রিয়ার ফ্রেন্ড!রিহান প্রিয়ার দিকে তাকায়।তাকাতেই প্রিয়া বলে উঠে,
“ভাইয়া কেমন আছেন?”
রিহান চোখজোড়া কুঁচকে আনলো!বললো,
“আমাকে চেনো তুমি?”
“কি বলেন ভাইয়া আপনাকে চিনবো না?আপনি ঢাকা ভার্সিটিতে পড়াশুনা করেছেন।আমাদের সিনিয়র ছিলেন।চিনবো না?কতবার আপনার সামনে পড়েছি।”
“হ্যাঁ,তা হতে পারে।কিন্তু চিনি না।আসলে স্টুডেন্টস তো।”
“একজেক্টলি!আর চাপ নিয়েন না।এখন তো চিনতে পেরেছেন!”
বলে হেসে দেয় প্রিয়া।রিহান বলে,
“কোন ডিপার্টমেন্ট তোমার?”
“পদার্থবিজ্ঞান, ভাইয়া।”
“কোন বর্ষে এবার?”
“চতুর্থ বর্ষে উঠবো ভাইয়া।সপ্তাহখানেক পর ফাইনাল পরিক্ষা!”
“আচ্ছা!”
“জ্বী,ভাইয়া।”
“আজকে বান্ধবীর কাছে থেকে যেও।”
স্নেহা ওর ভাইয়ার সাথে তাল মিলিয়ে বলে উঠে,
“হ্যাঁ, হ্যাঁ,আজকে তুই এবং নিতু থাকবি আমার সাথে!”
“নাহ ভাইয়া,হলের কর্তৃপক্ষ জানে না আমরা এখানে এসেছি।হলে ফিরলে ঝামেলা হবে। ”
“ওটা টেনশন নিও না।ইনফর্ম করে দেবো তোমরা এখানে আছো।”
প্রিয়া চুপ করে থাকে।তারমানে থাকবে কি থাকবে না ভাবছে।তখনই নিতু বাঁধ সাঁধে।পেছন থেকে বলে উঠে,
“নাহ,প্রিয়া!ফিরতে হবে।”
৩৭.
রাতে প্রিয়া এবং নিতু আর থাকলো না।ফিরে এলো।স্নেহার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।প্রিয়া বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে থাকতে বললো,
“তবে থাকা উচিত ছিলো আমাদের।স্নেহা একা!আমরা থাকলে সে ভীষণ খুশি হত।”
নিতু প্রিয়ার মুখের দিকে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।প্রিয়াও তাকালো।পরক্ষণে মৃদু হাসলো।তারপর চোখযুগল কুঁচকে এনে বললো,
“তবে রিহান ভাই যে স্নেহার ভাই আজ জানলাম!”
এবার নিতু বলে,
“সেটা তো আমারও প্রশ্ন!তোর এত পুরনো বান্ধবী।তার ব্যাপারেই ডিটেইলস জানোস না।আর আমরা আমাদের কলেজ বান্ধবীদের নানীদের বাড়ি পর্যন্ত চিনতাম!”
“আসলে ওদের বাড়িতে কখনো যাওয়া হয়নি।পড়তাম একসাথে ঠিকই।আর একসাথে পড়লে কে কার ওত ডিটেইলস জেনে নেয় বল?”
নিতু চুপ করে রইলো।প্রিয়া আবার বললো,
“তবে ও এমনিতে সব সময় ওর ভাইয়ার কথা বলতো।বলতো আমার ভাইয়া ছাড়া আমার আর কেউ নেই।আমার ভাইয়া আমাকে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসে।আমার ভাইয়া ভীষণ ভালো!অনেক রিভিউ শুনতাম ওর মুখ থেকে ওর ভাইয়ার ব্যাপারে।আর ওর ভাইয়াটা যে আমাদের রিহান ভাইয়া কে জানতো!”
বলে প্রিয়া আবারো হালকা বৈচিত্র্যময় হাসার চেষ্টা করলো।নিতু শান্ত গলায় বললো,
“স্নেহার মা-বাবা কি ছোট্টবেলার থেকেই নেই?”
প্রিয়া এবার চোখমুখ নরম করে আনলো।বললো,
“নাহ!”
“হ্যাঁ।”
“মরলেন কীভাবে উনারা?”
“কার এক্সিডেন্টে!স্নেহার বয়স যখন ৫ বছর,তখন রিহান ভাইয়ার বয়স ৯ বছর।স্নেহা খুবই ছোট্ট ছিল তখন।একটা ফ্যামিলি ট্যুরে গিয়েছিলো।আর সেখানে কীভাবে নাকি অন্য আরেকটা কারের সাথে ধাক্কা খেয়ে কাঁচের টুকরো স্নেহার মা-বাবার সারা শরীরে ঢুকে যায়।রক্তপাত করেই হাসপাতাল নেওয়ার আগল সেখানেই মারা যায়!”
“আর রিহান ভাইয়া এবং স্নেহা কোথায় ছিলো?”
“রিহান ভাইয়া এবং স্নেহা নাকি পেছনের সিটে বসা ছিলো।”
“ওহ।খুবই দুঃখজনক।স্নেহা তো তারপর থেকে খুব একা হয়ে গেলো।না?”
“অনেক।তবে,ওর ভাই ওকে তার বুঝতে দেয়নি খুব!”
“দেখেই বুঝলাম আজ।বোনকে ভীষণ ভালোবাসে!”
“তোকেও একদিন বাসবে!”
বলে প্রিয়া খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠলো।নিতু ঝাঁঝ কন্ঠস্বরে বলে উঠলো,
“মজা করতে যখন তখন ভালো লাগে না প্রিয়া!আমি এখন আর উনাকে ভালোবাসি না।সেই দুই বছর আগের কথা এখন আর কিছুই মনে নাই!”
“আচ্ছা,বুঝেছি ম্যান।মজা করেছি।কুল!”
৩৮.
হলে ফেরার পর রাতে ঘুমানোর সময় নিতুর একটুও ঘুম আসতে চাইলো না।চোখজোড়া বন্ধ করতে গেলেই ভেতরটা উসখুস করে উঠে!বারবার অনুশোচনা করে নিজেকে,
“কেনো আজ ওই বাসায় গেলো!কি দরকারে!না গেলে এরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়তো!”
বিছানা থেকে এবার নেমে গেলো নিতু।আর ভালো লাগতেছে না কিছুই!বেলকনির দিকে পা বাড়ালো।হঠাৎ প্রিয়ার ফোন বেজে উঠলো।মেয়েটা সন্ধের পর বাসায় ফিরে ডিনারটা তাড়াতাড়ি সেরে সেই যে ঘুম দিলো এখনও নাক ডেকে ঘুমচ্ছে।ক্লান্ত হয়েই ঘুমচ্ছে।যাতায়াতের ঝামেলা ও আবার তেমন সহ্য করতে পারে না।নিতু মৃদু পায়ে হেঁটে প্রিয়ার বালিশের কাছে যেয়ে ফোনটা তুলে নিলো।স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে স্নেহার্থী নাম্বার। কল রিসিভ করলো নিতু,
“হ্যাঁ,স্নেহা বলো?”
“আচ্ছা,তোমরা কি ফোন রেখে এসেছো?”
“ফোন রেখে এসেছি মানে?”
“ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা ফোন পেয়েছি।ফোনটা বোধহয় তোমার হবে।কেননা,ফোনের উল্টোপিঠের কভারের উপর সুন্দর করে লেখা “N”। নিতু বললো,
” আচ্ছা,লাইনে থাকো একটু।আসলে তোমাদের বাসা থেকে আসার পর আমার ব্যাগটা আর চেক করিনি।”
বলে নিতু ওর ব্যাগ খুলে তন্নতন্ন করলো।কিন্তু ফোনটা ওর পেলো না।পরে সিউর হলো ওটা ওপরই ফোন।কারণ,ফোনেরর উল্টোপিঠের কভারে ওর নামের অক্ষর লেখা।নিতু চোখমুখ ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো একটা।বললো,
“স্নেহা?কাম সারছে!আমার ফোন এটা!”
স্নেহা হালকা হাসলো।বললে,
“কালকে ভাইয়া ভার্সিটিতে যাবে কি দরকারে জানি।ভাইয়ার কাছে আমি ফোনটা দিয়ে দিব।প্রিয়ার নাম্বারও ভাইয়াকে দিয়ে দেব।যাতে ভাইয়া ভার্সিটিতে যেয়ে তোমাদের কল করে তোমার ফোনটা ফেরত দিতে পারে।প্রিয়াকে বলো ফোনটা যেনো ওপেন রাখে।”
নিতু জমে যাওয়া হাড্ডির মতন দাঁড়িয়ে রইলো।স্নেহা বললো,
“আচ্ছা রাখলাম।টেক কেয়ার।অনেক রাত হয়েছে।তোমাদের ডিস্টার্ব করলাম।”
বলে কেঁটে দিলো!নিতু এবার ফোনটা খাটের উপর ছুঁড়ে মারতে চাইলো।কিন্তু পরক্ষণে প্রিয়ায় ফোন কথাটা মাথায় নড়ে উঠতে আবার হাতটা শান্ত হয়ে গেলো। টেবিলের উপর প্রিয়ার ফোনটা রেখে দিয়ে নিজের বিছানার উপর এসে শব্দ করে বসলো।রাগ উঠতেছে এখন নিতুর উপর!খালি ভুলবাল কাজ বসতেছে!এখন ফোন কে আনতে যাবে!উফস!
চলবে…