#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব-১২

৩৪.
বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সব টিচার বক্তব্য রাখার পর “বিদায় অভ্যর্থনা” পাঠের কাজ শুরু হলো।অনেকেই “বিদায় অভ্যর্থনায়” পাঠ করে।পাঠ করতে যেয়ে এদের মাঝে কেউ বিদায়ী সিনিয়র আপু-ভাইদের জন্যে একছিটা কেঁদে দেয়।আবার কারো গলার স্বর ভেঙ্গে যায়।অতঃপর মোটামুটি সবার “বিদায় অভ্যর্থনা” পাঠ করা শেষ হলে নিতুর ডাক আসে।প্রেজেন্টেশন টা তাসফিয়া ম্যামই দিচ্ছেন।তিনি নিতুকে স্টেজে উঠার আহবান করেন।নিতু হাতের ব্যাগটা প্রিয়ার কোলে দিয়ে হাতে কাগজ তুলে নেয়।তারপর অন্যহাতে শাড়ির কুচি সামলে নিয়ে স্টেজের দিকে হাঁটা ধরে নিতু।স্টেজে এসে সোজা এবং সহজ-সাবলীল ভঙ্গিমায় নিতু ওর সমধুর কন্ঠে পাঠ করতে থাকে।নিতুর পাঠ করা অভ্যর্থনায় সবাই চুপ করে শুনে।কেউ কেউ গাঢ় শ্বাস ফেলে।সেই শ্বাসে অতৃপ্ত অনুভূতিতে ভরা!তারপর নিতুর পাঠ শেষ হলে নিতু নিজের জায়গায় ফিরে আসে।বিদায়ী অনুষ্ঠান শেষ হলে বিদায়ী আপু-ভাইয়ারা নিজেদের মাঝে সেলফি,ফটো তোলা শুরু করে।রাহুল ভাইয়া আমাদের বার কয়েক ডেকেছিলেন সেদিকে যেতে। ছবি তুলতে উনাদের সাথে।আমার সাথে গোমত্রী ছিলো!তাই উনার ঝোঁক ছিলো এই শেষ সময়ে গৌমত্রীর সাথে এই ভার্সিটিতে শেষ স্মৃতিটুকু রেখে দিতে।কিন্তু গৌমত্রী লজ্জায় যায় নি।সে এখান থেকে সরে যেতে চাইলো উল্টো।নিতুকে বললো,

“আমার পক্ষে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না!নিতু চল চলে যাই।”

প্রিয়া আবার গেলো বাইরের দিকে ওর ফ্রেন্ডের থেকে ফোন আনতে।ফ্রেন্ডকে কখন নাকি আবার এরফাঁকে ফোন দিয়েছিলো কি দরকারে।এখন ফ্রেন্ডের থেকে ফোন নিতে গিয়েছে।নিতুরা ওর জন্যেই দাঁড়িয়ে আছে।নিতু বললো,

“কষ্ট করে আরেকটু থাক।প্রিয়া চলে আসবে!”

ঠিক তিন মিনিট পর প্রিয়া ফোন হাতে নিয়া চলে আসে। প্রিয়া আসতে গৌমত্রী পূর্বদিকে লম্বা পা ফেলে চলে যেতে।ঠিক তখনই রাহুলের ফ্রেন্ডরা এসে গৌমত্রীকে ঘিরে দাঁড়ায়।অর্ণব বলে,

“আরেহ ভাবী?কোথায় যাচ্ছেন?আগে আমাদের সাথে সেলফি তুলে নেন।তারপর যাবেন।”

মিহিতা,
“আমাদের ওরফে উনি!”
বলে চোখ টিপ মারে মিহিতা।গৌমত্রীর লজ্জায় আরো কাচুমাচু অবস্থা!খুশিতা তা দেখে বলে,
“আহা,বাদ দাও তো।তুমি আমাদের ছোট্ট আপু।আসো আমাদের সাথে সেলফি তুলো।”

খুশিতার কথায় এবার মিহিতা এবং অর্ণবও সায় দে।গৌমত্রী নিতুর দিকে একনজর তাকায় তুলবে কিনা।নিতু চোখ দিয়ে ইশারা করে তুলতে।কারণ,নিতুও মিহিতার,খুশিতার এবং অর্ণবের উদ্দেশ্য বুঝে গেছে তারা যে তাদের নাম করে রাহুলের সাথে গৌমত্রীর ছবি তুলাবে!নিতুর সায় পেয়ে গৌমত্রী ছবি তুলতে রাজি হয়ে যায়।নিতু পাস কেঁটে চলে আসতে নিতুরও বাঁধ সেজে যায়।মিহিতা বলে,

“তুমি কোথায় যাও,ছোট্ট বোন?তুমিও আসো!”

নিতু এই মুখগুলার দিকে তাকায়।এই মুখগুলাকে সে সেই ৮ মাস আগে অন্যরূপে দেখেছিলো।এদের চেহারাও ভালো মতন মনে আছে নিতুর!কিন্তু সেদিনের এদের বলা সেই বিদ্রুপ,তুচ্ছতাচ্ছিল্যতা নিতু প্রকাশ ঘটালো না।সাবলীলতায় বললো,
“নাহ,আপু!”

এমন সময় খুশিতা এসে নিতুর দুইহাত ধরে।অতি সযত্নেই ধরে।তারপর বলে,
“আমাদের উপর রাগ তাই আসতে চাচ্ছো না।তাইতো?”

নিতু অপ্রস্তুত দ্বার হেসে দেয়।বলে,
“নাহ,আপু!এসব কি বলেন!কেনো রাগ করবো!”

মিহিতাও যোগ দেয় সাথে।বলে,
“আমরা রাগ করার মতনই আমাদের ছোট্টবোনটির সাথে বিহেভ করেছি।তুমি খুবই ভালো, ছোট্টবোন।আমরা তোমাকে বুঝতে পারিনি।আমাদের উপর কোনোরকম রাগ অভিমান রেখো না!”

নিতু এবার আরো লজ্জা পেয়ে যায়।বলে,
“প্লিজ আপু।”

খুশিতা এবার হেসে দেয়।পিঠ চাপে বলে,
“আমাদের উদ্দেশ্যে তোমার ” বিদায় অভ্যর্থনা “পাঠ খুবই সুন্দর হলো!খুব!সারা শরীর শিরায় শিরায় কাঁটা দিয়েছিলো!চোখে পানিও এসেছিলো!”
“ধন্যবাদ,আপু।তাহলে আসি।আমার আবার কিছু কাজ আছে।তাসফিয়া ম্যাম ডেকেছেন তখন।”

বলে মিহিতা, এবং খুশিতাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না নিতু।পাশ কেঁটে চলে এলো।এসে নিজের ডিপার্টমেন্টে ঢুকলো।তাসফিয়া ম্যামের অফিসে যায় নি।তাসফিয়া ম্যামের অফিস জাস্ট একটা এক্সকিউজ ছিলো।শুধু মিহিতা,খুশিতার ছবি তোলার প্যারা থেকে বাঁচতে নিতু।

৩৫.
সিনিয়রদের পরিক্ষা শেষ হয়ে গেলো।ছুটি পড়লো।নিতু বাড়ি যাবে এবার।জামাকাপড় সব গুছিয়ে ফেলে।প্রিয়াও নিতুর সাথে বের হয়।সেও তার বাড়িতে যাবে।নিতুকে শাহবাগ ছেড়ে দিয়ে প্রিয়া উত্তরায় ফিরবে।প্রিয়ায় বাড়ি উত্তরায়।

৩৬.
এভাবেই চলতে থাকে নিতুর ভার্সিটির জীবন।এই জীবনে প্যারা নেই।নিজের ডিপার্টমেন্টের সাথে,জুনিয়রদের সাথে,সিনিয়রদের সাথে,টিচারদের কথা বলতে এখন আর জড়তা কাজ করে না।সবার সাথে মাইন্ড ফ্রী কথা বলে।নিতুর এবার তৃতীয় বর্ষে ফাইনাল ইয়ার পরিক্ষা দেবে।গত ইয়ারের রেজাল্ট খুবই ভালো। টপে সেই যে ফার্স্ট ইয়ারে লুপে নিয়েছে তা এখনো চলছে নিতুর।তাই,এখন আর নিতুর এক্সাম প্রিপারেশন নিয়ে চাপ নেই।নিতু এক্সামের রুটিন নিয়ে হলে ফিরে।হলে ঢুকতে প্রিয়া বলে,

“নিতু?আজ একজায়গায় যাবো।”
“কোথায়?”
হাতের ব্যাগ টেবিলের উপর রাখতে রাখতে উত্তর করলে নিতু।
“আমার ওই যে ফ্রেন্ড স্নেহা আছে না?ওর ব্রার্থডে আজ! যেতে কত আকুতি-মিনতি!এখন না গেলে আবার রাগ করবে!”
“সো যা?”
“একা না।তুই যাইবি সাথে।”
প্রিয়া গলার স্বর ছোট্ট করে কথাটা বললো।নিতু অবাক চোখে তাকালো।বললো,

“আরেহ,নাহ!মাথা খারাপ?আমি কেনো যাবো।তোর ফ্রেন্ড তোকে ইনভাইট করছে। যা।”
“সে তোকেও ইনভাইট করছে!বলেছে তোকেও নিয়ে যেতে।”
“সে আমাকে চেনে?”
“তোর কথা যে প্রায় বলি।ওইভাবে চেনে।আর তুই আমার রুমমেট তোকে জানবে না?”
“সে কি তোর স্কুলের বান্ধবী?”
“হু।”
“আচ্ছা। তা দোস্ত আমি যেতে পারবো না।তুই ই যা।”
“নাহ,যেতে হবে।আমি এতকিছু মানি না।কতদিন হলো বাইরে বেরুস নাই।দম বন্ধ হয়ে গেছে।চল সাথে একটু ঘুরাই হবে।এবং মনটাও ফ্রেশ হবে।”

প্রিয়ার জবরদস্তি শুরু হলো।পরে নিতু আর বারণ করতে পারলো না।রাজি হলো।নিতু একটা শোপেজ,আর প্রিয়া একটা ডল কিনে নিয়ে রওনা করলো স্নেহ তাদের বাড়িতে!সময় তখন বিকেলের শেষ সময়।প্রিয়া এবং নিতুর স্নেহাদের বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধের পর হয়ে যায়।যেয়ে দেখে পুরো ঘর মোটামুটি সাজিয়েছে।আগরবাতি,টিম বাতি,জোনাকী বাতি সব দিয়ে ঘরটায় বেশ সাজ সাজ রব!মোটামুটি গেস্টও এসেছে!প্রিয়া, নিতু ভেতরে ঢুকতেই স্নেহা কোথা থেকে এসে জড়িয়ে ধরে প্রিয়াকে।বলে,

“তোদের জন্যেই অপেক্ষা করেছিলাম এতক্ষণ!”
“আরো আগে আসতাম।জ্যামে আঁটকে গিয়েছি।”
“আচ্ছা। তো কেমন আছিস?আর তুমি নিতু,না?”
“জ্বী।”
“হুম!খুবই খুশি হয়েছি।তুমি যে এসেছো!”
“ধন্যবাদ।”
“আচ্ছা ভেতরে আসো।”

নিতু ভেতরের দিকে চোখ ফিরিয়ে সামনে পা ফেলতেই নিতুর পা চলার গতি থেমে যায়!সোফার ঠিক মাঝ বরাবর একজন বসে আছে।চোখে চশমা। গাঁয়ে ইন করা শার্ট, কালো জিন্স পায়ে স্যু!বেশ ফর্মাল গেটআপে রিহান ভাইয়া বসে বসে ল্যাপটপের কীবোর্ডে টাইপিং করছে।খুবই পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।এই দুইবছর পর আজ দেখা হলো নিতুর!ভেতরটা কেনজানি খুব মুচড়ে উঠলো।স্নেহা পেছনে ফিরলো!দেখে ওরা সেই আগের জায়গায়ই দাঁড়িয়ে।বললো,

“কী ব্যাপার?দাঁড়িয়ে যে তোমরা? আসো?”

নিতুর টনক নড়লো!পা ফেলতে সামনের দিকে ইচ্ছে করছে না।মনচায় এখন বাসায় ফিরে যেতে!প্রিয়া পেছন থেকে কাঁধে আলতো হাত রাখলো নিতুর।নিতু যে আহত হয়েছে প্রিয়া যেনো ওর মনোকষ্ট বুঝতে পেরেছে!বললো,
“চল,দোস?আমরা বেশিক্ষণ থাকবো না।একটুপর ফিরে যাবো।”

নিতু আলতো পা ফেলে এগিয়ে গেলো সেদিকে।স্নেহা চেয়ার টেনে দিলো। দুইজন বসলো।স্নেহা নিতু,প্রিয়াকে পাশ কেঁটে সোফার দিকে এগিয়ে গেলো।রিহানের সামনে থেকে ল্যাপটপটা এক টান মারলো।বললো,

“ভাই,হইছে!আর তোমার এম্পায়ারদের সাথে কথা বলতে হবে না।বহুৎ কথা বলেছো এতক্ষণ যা দেখলাম।এবার উঠো।আমার কেক কাঁটার সময় হয়ে গেছে!”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here