#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব-১১
“আমাদের রেখে একা একা খাবি?ট্রিটে ভাগ আমরাও তো পাই!কিরে ভাই,ঠিক বলছি না?”
রাহুল ওমনি সামনে তাকায়।তাকিয়ে দেখে ওর সবগুলা হারমাী বন্ধু এখানে তরতর করে হাজির !আর কথাগুলো বলছে রিহান!রাহুল অপ্রস্তুতকর হয়ে যায়।সে কি বলবে ভেবে পেলো না।মিনিট একের মতন বন্ধুদের দিকে নির্বোধ চোখে তাকিয়ে থাকে।বন্ধুরা এরমাঝে খালি থাকা সিটগুলো বুকিং করে ফেলে!মিহিতা বলে উঠে,
“তো কি খাওয়া যায়?কি খাওয়াবি আমাদের?”
অর্ণব ফিক করে হেসে বলে উঠে,
“ব্যাটা,ভিত্রে ভিত্রে ট্যাম্পু চালাও আমাদের না জানিয়ে?”
খুশিতা বলে,
“সাইজ করার অনেক সময় পামু।আগে খেয়ে পেটটাকে শান্তি করে নিই।কি বলিস রিহান?”
রিহান ওমনি দায়সারা ভঙ্গি করে হাত-পা ছেড়ে দিয়ে নিতুর দিকে সামান্য তাকালো!পরক্ষণে দৃষ্টি আবার ফের খুশিতার দিকে দিয়ে,
” ইট’স নট টু লেইট!লেট’স গেট স্টার্ড!”
খুশিতা রিহানের পারমিশন পাওয়া মাত্রই ওয়েটারকে ডাকা শুরু করে দিলো।আর নিতু?ওর অবস্থা কেমন এখন?খুবই বেসামাল!সে আর এক মুহূর্তেও বসে থাকতে চাইলো না।ওমনি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো।রাহুলের দিকে সরু চোখ করে বলে উঠলো নিতু,
“ভাইয়া?আমি আসি।”
বলে নিতু সবার সামনে থেকে চলে আসলো।নিতুর চলে যাওয়া দেখে গৌমত্রীও কেমন অসংযত হয়ে গেলো!তারউপর এদের সবার সামনে আরো বেশি লজ্জা!গৌমত্রী দাঁড়িয়ে গেলো!বলে উঠলো,
“নিতু?দাঁড়া!আমিও যাবো।”
বলে গৌমত্রী নিতুর দিকে ছুটে গেলো।আর মুহূর্তে তারা হাওয়া হয়ে গেলো!ওরা দুজন চলে যাওয়ায় রাহুলের ফ্রেন্ডসরা কেমন অপ্রস্তুত হয়ে গেলো!একে-অপরের দিকে তাকাতে থাকলো!আর রাহুল তো ভেতরে ভেতরে ক্রোধে ফেঁটে চৌচির বন্ধুদের উপর!তীব্র গরম চোখ করে বলো উঠলো রাহুল,
“আজ গৌমত্রীর সাথে আমার আজ প্রথম মিট হচ্ছে?আর তোরা এরইমাঝে ঢুকে পড়লি?জেনেছিস যেহেতু আমি কারো সাথে এনগেইজ হয়ে গেছি,আমাকে একা পেলে নাহয় তারজন্যে তখন ধরতিস!কিন্তু ওদের সামনে এভাবে!দাৎ!!কমন্সেন্স নাই তোদের!”
৩২.
নিতু বাসায় ফিরতে রাহুল বিশ বারের বারের মতন বোধহয় কল করলো নিতুর ফোনে।নিতু ফোন পারে নি।সে বাথরুমে ছিলো।নিতু বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে রাহুল ভাইয়ার কল।নিজে ওমনি ডায়াল করলো।রিসিভ হলো।
“জ্বী,ভাইয়া?”
“তোমরা আজ রাগ করেছো আমার উপর?”
“নাহ,ভাইয়া!রাগ করিনি।কেনো করবো রাগ!”
“আসলে আমার ওই ফ্রেন্ড গুলা হঠাৎ এভাবে এসে হাজির হবে আমি বুঝতে পারিনি।আমি জানিও না ওরা যে আমাকে ফলো করেছে!”
“ইট’স ওকে,ভাইয়া।প্রেশার নিয়েন না।আমরা তা বুঝতে পেরেছি।”
“গৌমত্রী কি বলেছে?”
“সে কিছুই বলে নি।সে আপনার ফ্রেন্ডসদের সামনে পড়ে যাওয়ায় লজ্জা পেয়েছে তাই চলে এসেছে।আর কিছু না!”
“যাক,ঠাকুর।টেনশনমুক্ত হলাম!”
নিতু হাসলো।রাহুল বললো,
“গৌমত্রীর নাম্বারটা আজো আমি কালেক্ট করতে পারি নি।দিবা ওর নাম্বারটা?”
“নো প্রবলেম ভাইয়া!আপনার গার্লফ্রেন্ডের নাম্বার আপনি নেবেন না তো।কে নেবে!”
“থ্যাংকুউউ,ছোট্ট বোন।”
পরে নিতু রাহুলকে গৌমত্রীর নাম্বারটা মেসেজ করে পাঠিয়ে দিলো।
৩৩.
নিতুকে অন্যদিন থেকে আজ একদম আলাদা লাগছে।গাঁয়ে লাল শাড়ি জড়ানো।চোখে কালো কাজল।ঠোঁটে গাঢ় করে লাল লিপস্টিক। মাথায় বড় করে খোঁপা বেঁধে গাজরা লাগানো।উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের এই মেয়েকে এই সাঁজে প্রিয়া যতবার দেখছে ততবারই মুগ্ধ হচ্ছে!প্রিয়াও সেভাবে সেজেছে।কিন্তু তাতে তাকে ওতটা মানায় নি।তারপরও প্রিয়া তা নিয়ে আপসেট নেই একদম।নিতুকে যে খুবই ভালো লাগছে এটা নিয়েই সে ঢের খুশি।প্রিয়া তরহর ব্যাগের মধ্যে মোবাইল ঢুকিয়ে নিতুকে বলে,
“বিদায় অভ্যর্থনা পাঠ করার কাগজটি নিয়েছিস তো সাথে?”
নিতু যেনো ওটা নিতে ভুলে গেলো।প্রিয়া বলাতে হকচকিয়ে উঠলো।বললো,
“নিই নি মনে হয়।ওয়েট… চেক করিনি!”
চেক করে দেখলো আসলেই কাগজটি নেয়নি সাথে।তারপর টেবিলের উপর থেকে ডায়েরীর ভাঁজের মধ্য থেকে কাগজটি নিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে নিতু এবং প্রিয়া ছুটলো ভার্সিটির দিকে।ক্যাম্পাসে এসে দেখে পুরো ভার্সিটি সেজেছে নতুন রূপে।রং দিয়ে আল্পনা ক্যাম্পাসের প্রতিটি পথে পথে।ফিঁতা,ফুল,বেলুন দিয়ে সাজিয়েছে ক্যাম্পাসের আশপাশ!নিতু প্রিয়াকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।সব মেয়েরাই শাড়ি পড়েছে আজ!সিনিয়র-জুনিয়র থেকে সব!নিতুর এমন সাঁজে কেনজানি লজ্জা লজ্জা লাগছে খুব।সে প্রিয়া কে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে।কিছুটা সামনে হাঁটতে,
“আরেহ বোনটা যে?দারুণ দেখাচ্ছে বোন!”
নিতু ফের সামনে তাকায়।তাকিয়ে রাহুল ভাইয়া!নিতু যেনো আরো লজ্জা পেয়ে গেলো !রাহুল ভাইয়ার সাথে আরো কয়েকজনও ছিলো।উনারাও নিতুকে লক্ষ্য করলো।তবে, ভাগ্য ভালো রিহান ভাইয়া ছিলো না।নিতু রাহুলের দিকে আবছা চোখে তাকিয়ে হালকা হেসে চলে গেলো।ডিপার্টমেন্টে এলো।ডিপার্টমেন্টে আসতে নিতুর ডিপার্টমেন্টের সবাই নিতুর দিকে তাকিয়ে থাকলো।তাও কেমন ড্যাবড্যাব চোখে।এদের মাঝে তো একজন প্রায়ই বলেই ফেললো,
“আজকে নিতুকে যে দেখবে সেই প্রেমে পড়ে যাবে।”
নিতু কিছু বললো না।শুধু একটু মুচকি হাসলো।তারপর সবার সাথে হালকাপাতলা কথা সেরে তাসফিয়া ম্যামের অফিসে গেলো নিতু।তাসফিয়া ম্যাম নিতুকে দেখে ভারী খুশি হলেন।আর বললেন,
“প্রিপারেশন কেমন?”
“আলহামদুলিল্লাহ, ম্যাম!”
প্রিপারেশন বলতে নিতু যে বিদায়ী গ্রাজুয়েটদের জন্যে “বিদায় অভ্যর্থনা”যে পাঠ করবে তারই কথা বলছেন তাসফিয়া ম্যাম।তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে নিতু প্রিয়া কে নিয়ে বেরিয়ে এলো ম্যামের অফিস থেকে।ম্যামের অফিসের ছেড়ে তারা যখন সিড়ি বেয়ে নামছিলো ঠিক তখন গৌমত্রী ওদের সাথে যোগ দিলো!প্রিয়া বললো,
” চল!টি.এস.সি তে যাই!”
“হ্যাঁ,চল!”
নিতু গৌমত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
“টি.এস.সি তে যেয়ে তোমার কাজ কি?সেখানে তো রাহুল ভাইয়া নেই।রাহুল ভাইয়া তো পদার্থবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন!”
“তুমিও না সময়-অসময় মজা করো!”
প্রিয়া নিতুর তালে বলে উঠে,
“তোমার কি কষ্ট লাগছে না, গৌমত্রী?”
“কি কষ্ট?”
“এই যে ভাইয়া আজ বিদায় নিচ্ছেন!”
“তোমরা তো আমাকে পঁচানো শুরু করছো!”
“আহা,ম্যান!জাস্ট কিডিং।নোট সিরিয়াস!”
“হইছে! এবার চলো টি.এস.সি!”
টি.এস.সি তে যেয়ে দেখে খুবই ভীড়!গাদাগাদি করে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।একটু যে কোথাও বসবে সেই সুযোগ নাই!প্রিয়ায় বিরক্তি উঠে যায়!গৌমত্রীরও!গৌমত্রী বলে,
“এখানে থাকা অসম্ভব!চারুকলা ইনস্টিটিউটের দিকে যাই।সেই দিকটায় ফাঁকা আছে খুব!আর অনুষ্ঠান শুরু হতে আরো ঘন্টাখানেক বাকি।”
“হু!তবে,সাথে করে কোনো খাবার নিয়ে গেলে ভালো হয়।যেতে যেতে কথা বলবো।আর খাবো।”
“কি খাওয়া যায়?”
গৌমত্রী বলে,
“ঝালমুড়ি নিই আমরা!”
নিতু,
“ওকে।”
গৌমত্রী দৌড়ে ঝাঁলমুড়ির দিকে ছুটে যায়।পেছন থেকে নিতু এবং প্রিয়া বলে উঠে,
“এই টাকা নে!”
“লাগবে না।আজ আমি তোমাদের খাওয়াবো।”
গৌমত্রী ভিড়টিড় ঠেলে অনেক কষ্টে অতঃপর তিন প্যাকেট ঝাঁলমুড়ি নিয়ে আসে।ঝাঁলমুড়ি নিতু এবং প্রিয়ার হাতে দিতে দিতে বলে,
“ভাইরে,জানটা গেছে!এরকম জানলে ঝাঁলমুড়িই খেতাম না।এত ভীড় ঠেলে কেউ যায়!”
গৌমত্রীর কথা শুনে নিতু এবং প্রিয়া খিলখিল করে হেসে দিলো।তারপর ওরা তিনজন চারুকলার দিকে যায়।চারুকলা ইনস্টিটিউট টা আসলেই ফাঁকা।চারজন ছাড়া তেমন কেউ নেই।একদম নিরিবিলি।ওরা গ্যালারী রুমের দিকে যায়।হাঁটার মাঝে গৌমত্রী হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়।গোমত্রীকে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যেতে দেখে নিতু এবং প্রিয়া গৌমত্রীর দৃষ্টি অনুসরণ করে গ্যালারীর বামদিক বরাবর করিডোরটার দিকে তাকায়।তার একদম পশ্চিম কর্ণারে লামিয়া আপু দাঁড়িয়ে আছে।চোখমুখ উদাসীনতা,মীলন এবং রুক্ষ।উনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিহান ভাই!রিহান ভাইকে দেখে প্রিয়া চিৎকারের মতন একটা আওয়াজ করতে যেয়েও থেমে যায়।লামিয়া আপুর স্পষ্ট গলার আওয়াজ এখানে আাছে।
“রিহান?আমাকে কেনো তুমি ফিরিয়ে দিচ্ছ?কেনো?দেড়টা বছর ধরে তোমাকে ভালোবেসে আসছি। কখনো বলিনি আমার ভালোবাসার কথা।ভাবলাম সারপ্রাইজ দেব তোমাকে এটা।তোমার
এই ভার্সিটি থেকে চলে যাওয়ার শেষমুহুর্তে তোমাকে প্রপোজ করবো।।ওইদিন তোমাকে সবার সামনে প্রপোজ করি।এই আশায় প্রপোজ করি,তুমি আমার প্রপোজাল একসেপ্ট করবে।কিন্তু তুমি তোমার ডিসিশন জানাবে জানাবে বলে তোমার পেছনে আমাকে ঘুরিয়েছো!ঘুরেছি এই কয়েকটা দিন তোমার মতামত পাবার আশায়।অথচ আজ বলছো, অসম্ভব!কী নেই আমার রিহান?বলো কিসে কমতি আমার!আমি দেখতে খারাপ?আমার স্ট্যাটাস খারাপ?”
“প্লিজ,লামিয়া লিভ দিস টপিক!”
“তাহলে কেনো আমার প্রপোজাল রিজেক্ট করে দিচ্ছ!”
“আসলে কেনো করে দিচ্ছি তা আমি নিজেও জানি না!”
“অন্যকাউকে ভালোবাসো?”
“তাও জানি না।আসলে কাউকে ভালোবাসতে তার প্রতি অপর মানুষটির এক অন্যরকম ফিল হয়।কিন্তু তোমার প্রতি আমার সেই ফিলটা আসছে না।তাই আমি পারছি না তোমাকে এনগেইজ করতে আমার লাইফে!”
“কী রকম ফিলের কথা বলছো তুমি!”
“লামিয়া,এভয়েড!আমি আসি।আমার আবার লেইট হয়ে যাচ্ছে।টেক কেয়ার!”
ওমনি নিতু,প্রিয়া এবং গৌমত্রী একপাশ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।রিহান নিতু, প্রিয়া এবং গৌমত্রীকে পেছনে রেখে ক্রস করে চলে গেলো।ওদের কাউকে খেয়াল করলো না।এবার নিতু,প্রিয়া এবং গৌমত্রীর মনে প্রশ্নের বাণ সৃষ্টি হলো,
“কী ব্যাপার?রুহান ভাই লামিয়া আপুর প্রপোজাল রিজেক্ট করলো কেনো!আর আমরা ভাবলাম উনারা দুইজন এনগেইজ হয়ে গেছে!”
চলবে…