#ভালবেসে_অবশেষে
#নুশরাত_জেরিন
পর্ব: ৫
টিভিতে ভালো কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তবু মিলি একের পর এক চ্যানেল বদলে চলেছে। বিকেল হয়ে এসেছে। রেনু বেগম এ সময় বাইরে হাটতে বের হন। নীরাও ব্যস্ত থাকে। তাছাড়া এ বাড়িতে রান্না করা থেকে শুরু করে অন্যান্য সব কাজের জন্য আলাদা লোক রাখা আছে। মিলিকে কোনো কাজে হাত লাগাতে হয় না।
দিনের বেশিরভাগ সময় সে টিভি দেখে আর ঘুমিয়ে পাড় করে। মাঝে মাঝে অকারণে নিজের রুম ঝাড়পোছ করে, কাপড় গোছায়।
নীরার সাথেও সময় কাটায়।
সপ্তাহ খানেক হয়েছে সে এ বাড়িতে আছে৷ এতগুলো দিনেও সিয়ামের সাথে তার সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি।
আগে তবু মিলি সেধে সেধে আগবাড়িয়ে কথা বলতে যেত, এখন সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে। এককথায় সে বেশ রেগে আছে সিয়ামের উপর। যদিও সিয়ামের এসবে কোনো ভ্রক্ষেপ নেই।
সে নিজের মতো সকালে উঠে নাস্তা সেরে অফিস যায়, বিকেলে ফেরে। রাতে ডিনার শেষে ল্যাপটপ নিয়ে বসে, তারপর ঘুম। ব্যাস তার রুটিনে এ’কটা কাজেই সীমাবদ্ধ।
মিলির এতে যেনো রাগ আরও বাড়ে।
সেদিন ফুচকা খেতে যাওয়ার সময় মিলির মনটা কী ফুরফুরে ছিলো। কত গল্প করতে করতে গিয়েছিলে সেখানে। অথচ সিয়াম যেনো সেখানে থেকেও ছিলো না। ফোনের মধ্যে ডুবে ছিলো।
তবুও মিলি খুশি ছিলো, গোমড়ামুখোটা এসেছে এই তো কত!
সৌরভের সাথে যখন মিলি ফুচকা খাওয়ার প্রতিযোগীতা শুরু করলো, তখন ফুচকার ঝালে মিলির চোখে পানি এসে গিয়েছিলো।
সে ভেবেছিলো সিয়াম সরাসরি মিলিকে খেয়াল না করলেও আড়ালে করছে। তার কষ্ট দেখে নিশ্চয় উতলা হবে। কিন্তু তাকে হতাশ করে দিয়ে সিয়াম ফোন কানে ধরে দুরে গিয়ে দাড়ালো।
তার নাকি অফিস থেকে কল এসেছিলো।
মিলি তার পর থেকে কঠিন প্রতিজ্ঞা করেছে, লোকটার সাথে আগবাড়িয়ে সে আর কথা বলবে না। সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাবার দায়িত্ব শুধু তার একার নাকি? সিয়ামের নেই?
কই, মিলিও তো একসময় সিয়ামকে অপছন্দ করতো, বিয়ে অবদি করতে চায়নি। তবুও এখন সব মেনে নিয়েছে, ঠিকঠাক করতে চাইছে।
তবে সিয়াম কেনো চাইছে না?
একটু পরে নীরা এসে পাশে বসলো। কিছুক্ষণ ধারালো চোখে মিলিকে পর্যবেক্ষন করে বলল,
“কী হয়েছে তোর বোন? মুখটা ওমন কুমড়োর আকার ধরেছে কেনো রে?”
মিলি উত্তর না দিয়ে গালটা আরেকটু ফুলালো। তার বোনও তার কষ্ট বুঝলো না!
নীরা বলল,
“কথা বলিস না কেনো? দাঁতে ব্যাথা?”
মিলি কটমট ভঙ্গিতে তাকালো।
“তুই সৌরভ ভাইয়ের সাথে থাকতে থাকতে তার মতো হয়ে যাচ্ছিস আপা।”
“তুই ও তাহলে সিয়াম ভাইয়ের সাথে থাকতে থাকতে তার মতো হয়ে যাবি বুঝলি?”
“আমি তার মতো নিষ্ঠুর কখনো হবো না।”
মিলির অভিমানী মুখটা দেখে নীরা মুচকি হাসলো।
“ওওও তারমানে এই ব্যাপার?”
“কোন ব্যাপার?”
“কোন বিষয়ে কথা বলছি বুঝছিস না? আসল কথা বলতো, ভাইয়ের উপর রেগে আছিস কেনো? বকেছে?”
“সে আমাকে কখনও বকে না আপা, কথা বললে তো রাগারাগি করার প্রশ্ন উঠবে। আমার সাথে সে দরকার ছাড়া কথাই বলে না। আমি বললেও হু হা বলে জবাব দেয়।”
নীরা মিলির কাধ ধরে মুখোমুখি বসালো।
“এই জন্য রাগ করলি? এই সামান্য কারনে? কেনো রে? ভালো টালো বেসে ফেললি নাকি?”
“ভালবাসা কী এতই সহজ আপা? এত সোজা? সপ্তাহ পেরুলো না বিয়ের, তাকে ঠিক মতো জানলাম কোথায়? তাছাড়া হুটহাট প্রেমে পড়া যায়, ভালবাসা যায় না।
প্রেম জিবনে আসে হুট করে, কিন্তু ভালবাসা ধীরে ধীরে।”
“বাহ্, বেশ বললি তো।”
মিলি উত্তর না দিয়ে টিভি দেখায় মনোযোগ দিলো।
সিয়াম এলো তারও ঘন্টা খানেক পরে। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দিলো।
ঘর্মাক্ত দেহের ক্লান্ত মুখশ্রীর মানুষটাকে দেখে মিলির মনটা একটু নরম হতে চাইলেও সে আবার শক্ত করলো৷ আগবাড়িয়ে সে আর কথা বলবে না।
রাতে ঘুমাতে এলো মিলি দেরি করে। ঘড়িতে এগারোটার বেশি বাজে। মিলি সৌরভের সাথে লুডু খেলতে বসেছিলো। সৌরভ বারবার চিটিং করতে গিয়ে ধরা পরেছে। এ নিয়ে কী হাসাহাসি!
রেনু বেগম তো একবার সৌরভের কান টেনে ধরলেন।
নীরা তখন মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলল,
“আরেকটু জোরে টানুন মা, যেনো কানে দুদিন ব্যাথা থেকে যায়। এমনিতেও কান দিয়ে তার কী কাজ! কারো কথা তো কানে তোলে না, এককান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়
!”
সৌরভের মুখটা ছিল দেখার মতো। অসহায় ফেসটা দেখে মিলি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়েছে।
বর্তমানে তার পেট ব্যাথা হয়ে গেছে।
রুমে ঢুকে দেখলো সিয়াম বিছানায় বসেছে ল্যাপটপ নিয়ে, এমনিদিনে সোফায় বসে কাজ করে।
মিলি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বিছানার একপাশে দাড়িয়ে রইলো। সিয়াম বলল,
“ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে আমার চশমাটা এনে দাও তো।”
মিলি চুপচাপ চশমা তুলতে গিয়ে পাশে রাখা ছোট্ট ব্যাগটার ওপর চোখ রাখলো। সিয়াম এনেছে আসার সময়। ঘরে ঢোকার সময় মিলি তার হাতে এটা দেখেছিলো।
ভেতরে কী আছে জানার আগ্রহ প্রকাশ করলো না। চুপচাপ চশমা নিয়ে সিয়ামের পাশে রেখে বলল,
“আমি কী সোফায় ঘুমোবো?”
সিয়াম ল্যাপটপ সরিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
“কেনো, সোফায় কেনো শোবে?”
মিলি মনে মনে একটু খুশিই হলো। যাক লোকটার মুখে একটু কথা ফুটেছে।
তবু বাইরে প্রকাশ করলো না। বলল,
“বিছানায় আপনি বসে কাজ করছেন, তাহলে আমি ঘুমাবো কোথায়?”
“আমাকে সরতে বলা গেলো না?”
মিলি ঝাঝালো সুরে বলল,
“আমি কেনো বলবো, আপনি বুঝতে পারেন না?”
সিয়াম গম্ভীর হয়ে বলল,
“বুঝি।”
“বোঝেন?”
সিয়াম এবার চোখে চোখ রাখলো।
“তোমার কী মনে হয়, আমি বুঝি না?
মিলির মনে হলো সিয়াম অন্যকিছু বলতে চেয়েছে। তবু মাথা ঘামাতে ইচ্ছে হলো না। তার ঘুম পেয়েছে। সিয়ামের সাথে পরেও ঝগড়া করা যাবে। এ’কটা দিনে মিলি এটুকু কথা বুঝেছে, সিয়াম অন্য সবার সাথে রাগারাগি ধমকাধমকি করলেও তাকে কিচ্ছু বলে না। তার বেলায় সিয়াম শান্ত।
ব্যাপারটা মিলির ভালো ও লেগেছে।
বিয়ের আগে সে লোকটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলো, ততটা খারাপ সে নয়।
,
ড্রেসিং টেবিলের উপর এখনও সেই ছোট্ট ব্যাগটা পরে আছে। সিয়াম সেটাকে আর ধরেও দেখেনি। আবার অন্য কোথাও সরিয়েও রাখেনি।
মিলি কাল রাতে ব্যাগটা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ না করলেও বর্তমানে সে কৌতুহলে ছটফট করছে। সারাদিন ড্রেসিং টেবিলের পাশ দিয়ে ঘুরঘুর করেছে। তবে ব্যাগটা খোলার সাহস হয়নি, একপ্রকার ইগো থেকেই সে খুলতে চাচ্ছে না।
এর ভেতরে কী আছে না জানতে পারলে নিশ্চিত মিলির আজ রাতে ঘুম হবে না। অতিরিক্ত কৌতুহল নিয়ে মিলি ঘুমাতে পারে না। মনোযোগ সরাতে সে উপন্যাসের একটা বই নিয়ে বসেছিলো। সিয়ামের একটা রিডিং রুম আছে। মাঝারি রুমটা বইয়ে একদম ঠাসা। সেখান থেকেই উপন্যাসের বইটা নিয়ে এসেছিল মিলি। তবে বেশিক্ষণ বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেনি, তার মন পরে আছে ব্যাগের ভেতর।
মিলির কেন যেন মনে হচ্ছে ব্যাগটা সিয়াম তার জন্য এনেছে। রাত থেকে সকাল অবদি সিয়াম মানিব্যাগ থেকে শুরু করে ঘড়ি, চিরুনি একেক করে যাবতীয় সব জিনিস মিলিকে দিয়ে আনিয়েছে, এবং সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে সবগুলো জিনিসই ছিল ড্রেসিংটেবিলের ওপর।
মিলির ধারণা সিয়াম ইচ্ছে করে তাকে বারবার ব্যাগটার কাছে পাঠিয়েছে।
ব্যাগটা হাতে নিয়ে বাইরের রুমে বসেও মিলির খুলতে ইতস্তত বোধ হচ্ছে। নীরা একটু আগেই মিলির কর্মকান্ড দেখে তাকে যথেষ্ট সাহস যুগিয়ে গেছে। বারবার বলেছে,
“তোর স্বামীর যেকোনো কিছুর উপর তোর সম্পূর্ন অধিকার আছে বোন। তাছাড়া সিয়াম ভাই নিশ্চয়ই তোর জন্যই কিছু এনেছে বুঝলি, নয়ত এভাবে ফেলে রাখতো না।”
মিলি ব্যাগটা সন্তপর্ণে খুলতেই ব্যাগটা মতো মুখটাও হা করে ফেললো। ভেতরে ছোট একটা বক্সে সোনার ব্রেসলেট।
মিলির আনন্দে চোখে জল চলে এলো। কিছুদিন আগে নীরার হাতে সেইম ডিজাইনের ব্রেসলেটটা দেখে মিলির কী যে ভালো লেগেছিলো। সৌরভ ভাইয়ের একচোট প্রশংসাও করে ফেলেছিলো মিলি। নীরার ম্যারেজ ডে তে সৌরভ গিফট করেছিলো ব্রেসলেটটা। মিলি আফসোস করে বলেছিলো,
“তোর বরটা কত ভালো রে আপা, কী ভালো পছন্দ তার।”
সিয়াম কখন কীভাবে কথাটা শুনেছে কে জানে? নয়তো সেইম ডিজাইনের ব্রেসলেট আনলো কিভাবে? তবে গিফট যে হাতে তুলে দিতে হয় একথা কী সিয়াম জানে না?
এ নিয়ে একটু অভিমান হলেও সেসব চাপা পড়লো অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তিতে।
মিলি খামোখাই সিয়ামের উপর রেগে ছিল এতদিন। লোকটা নেহাৎ কম কথা বলে, নিজের মনোভাব প্রকাশ করে না তবে মিলির খেয়াল সে ঠিকই রাখে।
কথাগুলো ভেবেই মিলি লজ্জায় লাল নীল হতে শুরু করলো।
সৌরভ অফিস থেকে ফিরেই মিলির পাশের সোফায় ঠাস করে বসে পড়লো। আজ তার খুব খাটুনি হয়েছে।
বড়ভাইয়ের আন্ডারে কাজ করলে অন্যেরা সুবিধা পায়, সৌরভ পায় অসুবিধা।
প্রথম প্রথম অফিসের কেউ জানতোও না সৌরভ সিয়ামের ছোট ভাই।
পরে জানতেই সবাই অবাক হয়েছিলো। একদিন তার কলিগ আসিফ সাহেব তো বলেই ফেললো,
“সিয়াম স্যার আপনার আপন ভাই তো সৌরভ ভাই?”
যদিও সৌরভ এতে ভাইয়ের উপর রাগ করে না, বরং গর্ব করে। তার ভাই নিজের দায়িত্বর সাথে কখনও হেলাফেলা করে না। এই কারনে নিজের ভাইকেও কোনো বাড়তি এডভান্টেজ দেয় না।
সে পাশে বসা মিলির চোখমুখ লক্ষ্য করে বলল,
“এত লজ্জা পাবার কারণ কী বোনভাবি? ভাই তো অফিসে, বাড়িতে থাকলে না কিছু একটা সন্দেহ করা যেত।”
মিলি সোফার কুশন ছুড়ে মারলো। সৌরভ ক্যাচ ধরে আতংকিত হয়ে বলল,
“ভাইয়ের মতো তুমিও ডেন্জারাস হয়ে যাচ্ছো নাকি? এক্ষুনি অবলা শিশুটাকে খুন করে ফেলতে ”
সৌরভের অভিনয় দেখে মিলি হেসে ফেললো।
“আপনি শিশু সৌরভ ভাই? ক’দিন পর শিশুর বাবা হবেন যে।”
সৌরভ হাসলো। তবে বুকে কোথাও চিনচিনে ব্যাথাটা মাথা চাড়া দিলো। নীরা কন্সিভ করতে পারছে না। চিকিৎসা চলছে। তবে সৌরভ আশা ছারছে না। নীরাকেও সে সাহস দেয়, ভরসা দেয়।
রেনু বেগম নিজেও নীরাকে প্রচন্ড ভরসা দেন।
…
সারাবিকেল মিলি সিয়ামের অপেক্ষায় বসে রইলো। আজকে সিয়ামের বড়সড় একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য আছে।
তবে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে, সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়ে এলেও সিয়াম এলো না।
মিলি কয়েকবার সিয়ামের নম্বরে কল করলো। ফোন বন্ধ। রেনু বেগম চিন্তায় কান্না কাটি শুরু করে দিলেন। তার বড় আদরের ছেলে সিয়াম। প্রথম সন্তান, প্রথম মা ডাকটা তার মুখেই তো শুনেছিলেন।
তাছাড়া সিয়ামের ওপর দিয়ে কম ঝড় তো যায়নি। অতিরিক্ত চিন্তায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। নীরা কোনোরকমে বুঝিয়ে তাকে ঘরে নিয়ে শুইয়ে দিলো।
ঘড়ির কাটা এগারোটা ছাড়াতেই মিলিও আর কান্না আটকাতে পারলো না, ফ্লোরে বসে ফুপিয়ে উঠলো। নীরা একবার রেনু বেগম একবার মিলিকে সামলাতে লাগলো।
সৌরভ বাইরে সিয়ামের খোঁজে বেরিয়েছে। তার ভাই কখনও এত দায়িত্বজ্ঞ্যানহীন দের মতো কাজ করে না। আজ কী হলো কে জানে! একটু পর পর মিলি কল দিয়ে সৌরভের কাছে আশার বাণী শুনতে চাইছে। সৌরভ নিজেও খুব দূর্বল হয়ে পড়লো।
…
সিয়াম বাড়ি ফিরলো রাত তিনটের দিকে। রেনু বেগম ঘুমিয়ে পরেছেন। তাকে ঘুমের ঔষধ খাওয়াতে হয়েছে। বয়স্ক মানুষ, এত টেনশন সহ্য হচ্ছিল না। মিলি, নীরা ড্রয়িং রুমে বসে ছিলো। কলিং বেলের আওয়াজে ধড়ফড় করে উঠলো।
সৌরভের কাঁধে হাত রেখে বাড়িতে ঢোকে সিয়াম। শরীরে তার ব্যন্ডেজ, মাথাতেও আছে। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে। নিশ্চয় পায়েও লেগেছে।
মিলি তার অবস্থা দেখে হাসফাস করে উঠলো।
সুস্থ সবল মানুষটা অফিসে গেলো, ফিরলো কী না এইভাবে?
….
সিয়াম বাড়ি ফেরার পথে এক্সিডেন্ট করেছিলো। খুব গভীর কোনো ক্ষত হয়নি। তবু যা হয়েছে কমও বলা যায় না। ফোনটা রাস্তায় পরে ভেঙে গেছে বিধায় বাড়িতে কল করে জানাতে পারেনি।
রুম অবদি সৌরভ পৌঁছে দিয়ে গেছে। সিয়াম আস্তে আস্তে বিছানার দিকে এগোলো। তখনি মিলি হুড়মুড় করে রুমে ঢুকলো। হড়বড় করে বলল,
“কোথায় ছিলেন আপনি? কীভাবে ব্যাথা পেলেন? ঠিক মতো চলাফেরা করতে পারেন না?ফোন কোথায় থাকে? দরকারের সময় বন্ধ থাকলে এমন ফোন ব্যবহার করার কী দরকার? কান্ডজ্ঞ্যানহীন মানুষ কোথাকার, বাড়িতে সবাই টেনশন করে জানেন না?”
সিয়ামের সকাল থেকেই মেজাজ গরম। অফিসে যাবার পরে আরিয়াকে দেখেছে সে, দেশে এসেছে মাস খানেক হবে। এর মাঝে দুবার দেখা হলো। তবে আজ আরিয়ার সাথে ইশতিয়াক ছিলো। হাত ধরে কেমন হেসে হেসে কথা বলছিলো। সিয়ামের সহ্য হয়নি সেসব। কেনো সহ্য হবে তার? বেঈমানরা কেনো এত ভালো থাকবে?
অফিসে সারাদিন সেই দৃশ্য চোখে ভেসেছে। আসার পথেও তাই। গাড়ি রাস্তা ছেড়ে মোটা গাছটার সাথে বাড়ি খাবার পরেই না তার হুশ ফিরলো।
তবে মিলিকে দেখে আবার সেসব মনে পড়লো সিয়ামের।
একসময় আরিয়াও তার মত এমন চিন্তা করতো। একবার বাইক এক্সিডেন্ট করায় ঠিক এভাবেই উদ্দিগ্নতা প্রকাশ করেছিলো। কিন্তু পরে তো সিয়াম জানলো আরিয়ার সেসব চিন্তা, ভালবাসা, কেয়ার সব ছিল নাটক, অভিনয়।
মাথার যন্ত্রণা বাড়লো সিয়ামের। মৃদু চিৎকারে গমগমে সুরে বলল,
“আমাকে নিয়ে এত ভাবতে কে বলেছে তোমায়? আমি বলেছি? বলো? কোন সাহসে আমার সাথে এভাবে কথা বলো তুমি? ”
মিলি মিনিট দুয়েক থমকানো চোখে তাকিয়েই থাকলো। তাদের বিয়ে হয়েছে বেশ কিছুদিন। এর মাঝে কখনও সিয়াম এত রুড ব্যবহার করেনি।
ক’দিন আগে যখন রাতের খাবারে ডালে ঝালের পরিমাণ বেশি হলো তখন কাজের মেয়েটাকে কী ধমকালো সিয়াম। বলল, সে আজ ভাতই খাবে না। অথচ মিলি বলতেই বিনা বাক্যে সেই ঝাল ডালই খেলো।
মিলির ধারণা হয়েছিল সিয়াম অন্য সবার সাথে এময় ব্যবহার করলেও তার সাথে করবেনা। কিন্তু মিলির ধারণা ভুল! এই সামান্য কারনে সিয়াম এভাবে বলল।
মিলি একছুটে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
ঢের শিক্ষা হয়েছে তার!
,, চলবে….