বিয়ের দিন সকালে বর বিয়ে করবে না বলে বেঁকে বসলে মিলির যতটা না কষ্ট লেগেছে তার থেকেও বেশি কষ্ট লেগেছে এটা শুনে যে সম্মান বাঁচাতে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে বড় বোনের ভাসুরের সাথে।
মিলির বড় বোনের নাম নীরা। খুবই চমৎকার একটা মেয়ে। বিয়ে করেছে নামী দামি পরিবারের এক ছেলেকে৷ যদিও অত বড় ঘরে মিলিদের পরিবারের সম্মন্ধ হয় না তবুও হয়ে গেছে, লাভ ম্যারেজের কেরামতিতে।
কিন্তু তাই বলে সেই একই পরিবারে আরও একটি মেয়ে যাবে? তাও কি না বোনের ভাসুরের বউ হয়ে?
মিলি না পারছে হাউমাউ করে কেঁদে দুনিয়া ভাসাতে। তার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো অলোক নামক এক ছেলের সাথে। কী মিষ্টি ব্যবহার ছেলেটার…অথচ শেষ মুহূর্তে কাজটা কী করলো? পছন্দের মেয়ে আছে সে কথা আগে জানাতে পারল না? বিয়ের দিনই জানাতে হলো?
কারো তো কিচ্ছুটি হলো না, উল্টো মিলির কত বড় ক্ষতি হয়ে গেলো।

নীরা তাড়াহুরো করতে করতে বলল, “গোমড়া মুখ করে আর কতক্ষণ বসে থাকবি বোন, এবার তৈরী হ। বাইরে যে সবাই তাড়া দিচ্ছে। ”

মিলি তড়াক করে খাট থেকে উঠে বসলো।
“বিয়েটা কী কোনোভাবে আটকানো যায় না রে আপা?”

“আটকানো গেলেও বা, আটকাবি বা কেনো? বাবার মানসম্মানের কথা ভাববি না? বাড়ি ভর্তি মেহমান, সবাই তোর বিয়ের জন্য এসেছে। এখন কীভাবে বলবো সবাইকে যে বিয়ে হবে না?”

মিলির হঠাৎ আশার আলোর সন্ধান পাবার আশায় উজ্জ্বল হওয়া চোখগুলো নিমিষেই মিইয়ে গেলো।
“তাই বলে আর কোনো ছেলে পেলি না? ঐ গোমড়ামুখো টাকেই?”

নীরা সামান্য হাসলো, “কেনো রে, সিয়াম ভাই খারাপ কোথায় শুনি? নাহয় আগে একবার বিয়েই হয়েছিল কিন্তু সংসার তো করতে পারলো না, তার আগেই বউটা…..”

মিলি ফোড়ন কাটলো, “অমন গম্ভীর চেহারা দেখলে কোন বউই বা তার সাথে সংসার করতে চাইবে? আর যা ব্যবহার… দেখো এইজন্যই হয়তো তার বউ পালিয়েছিল।”

নীরার হাসিখুশি মুখে বিষাদের ছায়া নামলো। বাইরের রুক্ষ রুপটা দেখে কত সহজেই সবাই বিচার করে ফেলে, অথচ….
“না জেনে কারো সম্মন্ধে এসব বলা উচিৎ নয় মিলি। তাছাড়া সে খারাপ হোক বা ভালো, আজ তার সাথেই তোর বিয়ে হচ্ছে।”

মিলির মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেলো। তার বোনটা এমনি সময় তাকে বোন বলে ডাকে কিন্তু শুধু রেগে গেলে মিলি বলে। এই যে এইমাত্র বলল, নিশ্চয় সে রেগে আছে তাও আবার কার জন্য, ঐ গোমড়ামুখোটার জন্য!
লোকটাও বলি হারি। এতদিন ধরে শুনে এলো লোকটা নাকি জিবনে বিয়েই করবে না, অথচ এখন ধেই ধেই করে বিয়ের আসরে বসে গেলো!

মিলি চোপসানো মুখ নিয়েই বেনাশরী পড়তে শুরু করলো। তার চিন্তার কারণ আসলে অন্যকিছু।
যে লোকটাকে দেখলে সে দশহাত দুরে লুকিয়ে পড়ে তাকে বিয়ে করে সারাজীবন একসাথে কাটাবে কীকরে? ভালবাসা দুরে থাক ভয়েই তো মিলি মরে যাবে, কিছু বলার আগেই লোকটা যেমন লাল চোখ করে তাকায়! বাপরে!!
মিলি সুরা পড়ে বুকে ফু দিলো। তার জীবনে শনির দশা আসতে চলেছে। সামনে কী হবে কে জানে!

বিয়ের মিনিট দশেক আগে মিলির বাবা আতাউর রহমান তার কাছে এলেন। মিলি মুখ কালো করে বিছানার মধ্যভাগে বসে ছিলো। আতাউর রহমান তার পাশে বসে চুপ রইলেন। মেয়েটাকে তিনি অত্যাধিক ভালবাসেন। পরিবারের ছোট মেয়ে মিলি, সবার কাছে অতি প্রিয়।
তার বিয়ের বর বাছাই করতে তিনি খুব বাছ বিচার করেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কী যে হলো! হয়তো মিলির ভাগ্যে সিয়াম ছিল বলেই….
মিলি থমথমে গলায় বলল,
“কী বলার জন্য এসেছো তাড়াতাড়ি বলো বাবা।”

“বুড়িমা রাগ করেছিস বাবার উপর?”

বাবার আদরের ডাক শুনেই মিলির রাগ পরে গেলো।
“রাগ করিনি বাবা, অভিমান করেছি। তুমি হুটহাট এমন সিদ্ধান্ত নিলে অথচ আমায় একবারও জিজ্ঞেস করলে না?”

আতাউর রহমান অসহায় কন্ঠে বললেন, “কী ই বা করতাম আমি বল? বাড়ি ভর্তি মেহমান গিজগিজ করছে, তাছাড়া তোরও তো কম বদনাম হতো না। বিয়ে ভাঙা মেয়েকে সমাজের সামনে কত কটু কথা শুনতে হতো? অনিক এমন ভাবে ভরাডুবি করবে সেটা ক্ষুনাক্ষরেও কী টের পেয়েছিলাম।”

“তাই বলে ঐ লোকটার সাথে বিয়ে ঠিক করলে?”

“ছেলেটা তো খারাপ না বুড়িমা, নেহাৎ একটু কম কথা বলে, চুপচাপ ধরনের। তাই বলে কী সে খারাপ? তার মত ছেলে লাখে একটা পাওয়া যায়। প্রথমে তো সিয়ামকেই জামাই বানাবো ভেবেছিলাম কিন্তু মাঝে অনিক এলো….”

মিলি মনে মনে ভেঙচি কাটলো। তার বাবাও দেখছি লোকটার ফ্যান। কী দেখে ঐ গোমরামুখোটাকে সবাই এত পছন্দ করে কে জানে!

আতাউর রহমান চলে যেতেই মিলি বসার ঘরে উঁকি দিলো। লোকজনের সংখ্যা কম নয়, তবে তার মাঝে মধ্যমনি হয়ে বসে আছেন সিয়াম নামক লোকটা। বরাবরের মতই মুখ গম্ভীর করে রেখেছেন। কালো শার্ট, জিন্স পড়নে দেখে মিলি কপাল কুচকে ফেললো। বিয়েতে কেউ শার্ট প্যান্ট পরে আসে? পরক্ষনেই মনে পরলো, লোকটা তো বিয়ে খেতে এসেছিল, বিয়ে করতে নয়। তার মত সেও তো একই পরিস্থিতির স্বীকার।
মিলি দরজা ছেড়ে আবার রুমে চলে এলো।
তার চিন্তা হচ্ছে, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়ের ভবিষ্যৎ কী হবে কে জানে!

.চলবে……

#ভালবেসে_অবশেষে
#নুশরাত_জেরিন
পর্ব: ১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here