#ভালবাসি_প্রিয়
(রিপোস্ট)
পর্ব_২
©জারিন তামান্না

পলক যখন মুগ্ধ নয়নে সিফাতের হাসিতে ধীরে ধীরে মশগুল হচ্ছিল ঠিক তখনই হাসিটা থেমে গেল আচমকাই।কিন্তু চোখ মুখ জুড়ে মৃদু হাসির আভা তখনো বিদ্যমান। ওই মৃদু হাসির রেশ ধরে রেখেই সিফাত বললো, ‘আরে ওটা তো আমি আপনাকেই বলেছি। আর তাছাড়া এই ছাদে আপনি আমি ছাড়া কেউ নেই আর আমি তো দিব্যি আছি..কিন্তু অন্যজন কোন একটা ভাবনায় ডুবে ছিল।তাকে উদ্ধার করতেই তো…’

সিফাতের মুখের কথা শেষ করতে না দিয়েই পালক বলে উঠল,’ _আপনি তো মৃণ্ময়ী বলে ডাকলেন কিন্তু আমার নাম তো..’

_হ্যাঁ,জানি। আপনার নাম পলক। সাজিয়া মেহরিন পলক। মৃন্ময়ী নামটা বেখেয়ালে বলে ফেলেছি আর কি! সিফাতের নির্বিকার উত্তর। ভাব এমন যে বেখেয়ালে এক মেয়ের সাথে থেকে তাকে অন্য মেয়ের নাম ধরে ডাকাটা খুব স্বাভাবিক কিছু।

সিফাতের এহেন কথা আর ভাব দেখে এবারে বেশ সরু চোখে তাকালো পলক তার দিকে। মুখে চিন্তার ভাঁজ।মনে মনে ভাবছে,’এই মৃন্ময়ীটা আবার কে? উনার এক্স গার্লফ্রেন্ড নয় তো! যার জন্য আমাকে সে ভেবে…’

_এই,,কি হলো আবার কোন ভাবনায় ডুব দিলেন আপনি?

সিফাতের এই প্রশ্নে এবার খুব বিরক্ত হলো পলক। যেন তার কোন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার মাঝে ব্যাগড়া দিয়ে দিয়েছে সে। মুখে সেই বিরক্তি স্পষ্ট ফুটে উঠলো তার। সেই বিরক্তি ঝাড়তে যেই না সে মুখ খুলছিল কিছু বলার জন্য ঠিক তখনই ছাদের দরজা থেকে একটা কণ্ঠস্বর শোনা গেল।

_এই বুবু, হলো তোদের? মা নিচে যেতে বলেছে তাড়াতাড়ি। ভাইয়াকে আর কতক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখবি এখানে। চল, আয়..নিচে যাবি।

কথাগুলো এক নাগারে বলে দম নিল নিশাত। উত্তরের আশায় পলকের মুখের দিকে চাইলো। তা দেখে পলক কিছু বলতে যাবে নিশাত কে তার আগেই সিফাত বলে উঠলো,
_হ্যাঁ আপু। যাবো তো নিচে। তুমি যাও,আমরাও আসছি।

সিফাতের কথা শুনে মুচকি হাসলো নিশাত। আর একপলক দুজনকে দেখেই উলটো হাঁটা দিলো সিঁড়ির পথে। তার নেমে যাওয়ার আওয়াজ পেতেই সিফাতও তাড়া দিল পলককে নিচে যাওয়ার জন্য।

_এই,চলুন। নিচে যাই।
পলক যেন এমন ঘটনায় আরও বিরক্ত হলো। তার কথা যে অসম্পূর্ণ রয়ে গেল।ধরতে গেলে,,কোন কথাই তো হলো না ঠিক করে। এই লোকটা নিজের প্রশ্নের পাঁচগুটি ছুঁড়েই তো তাকে একবার ভাবনায় ডুবালো আবার ধপাস করে তুলে আনলো আর আবার…। আর সে তো কিছু বলতে বা জিজ্ঞেস করতেই পারলো না। অবশ্য এমনিতেও সে নিজ থেকে কিছু বলতোও না। কখনোই বলে না।সব বারই ছেলে পক্ষ থেকে প্রশ্ন করে আর সে শুধু জবাব দেয়। কারণ সে জানেই প্রশ্ন করে লাভ নেই কোন। যেখানে সমন্ধটাই হবে না সেখানে নিজের থেকে কথা বলার, কিছু জানারই বা কি আছে। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা আলাদা। এই মানুষটাও আলাদা লাগছে আর সবার থেকে। তাই নিজ থেকে কিছু বললেও হয় তো বলা হতো এবার। কিন্তু সে আর হলো কই! একটা ছোট্ট চাপা শ্বাস ফেললো সে। কানে ভেসে এলো কারো ডাক।
সিফাত ছাদের দরজায় কাছে দাঁড়িয়ে আছে,,তাকে যাওয়ার জন্য ডাকছে। পলকও আর কিছু না বলে পা বাড়ালো যাওয়ার জন্য।

_________________________________

পলকরা যে ভাড়া বাড়িতে থাকে সেটা ৫ তলা বিল্ডিং। আর তারা থাকে ৪ তলায়। তাই ছাদে যেতে আসতে খুব বেশিসিড়ি ভাঙতে হয় না। পলক যখন ছাদের দরজাটা লাগিয়ে দিল,সিড়ির দিকটা খানিক আবছায়া অন্ধকার হয়ে এলো। সিফাতের পিছু পিছু গেলেও ১ সিড়ির ফাঁক রয়েছে তাদের মাঝে। ৪ সিড়ি নামার পর হুট করেই দাঁড়িয়ে গেল সিফাত। ঘাঁড় ঘুরিয়ে একবার দেখলো পলকে। সিফাতের দাঁড়িয়ে পড়া দেখে সেও ২য় সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে গেল। সিফাতের দিকে তাকাতেই দেখলো সিফাত পকেটে হাত দিয়ে কি যেন বের করছে। কয়েক সেকেন্ড গড়াতেই সিফাত তার মোবাইল ফোনটা বের করে অন করলো। সেটা দেখে পলক ভাবলো অন্ধকার হওয়ায় হয় তো ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করবে বলেই ফোন বের করেছে। কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সিফাত ফোনটা তার দিকে এগিয়ে দিলো। পলককে কোন প্রশ্ন করতে না দিয়ে সে নিজেই বললো।

_আপনার কন্টাক্ট নাম্বারটা আর সোশ্যাল মিডিয়ার আইডিগুলো…লাইক ফেইসবুক, হোয়াটস অ্যাপ,ইমেল এসব সেভ করে দিন। ঝটপট। বাসায় গেলে আর সুযোগ পাওয়া যাবে না।

এবার যেন পলক অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল। সিফাতের এইমাত্র বলা কথাগুলো একদম সহজ ভাষায় হুকুমের মত শোনাল তার কাছে। মনে মনে বলেই ফেললো,
_ইশ..কি লোক রে বাবা! কেমন হুকুম করছে দেখো। এএএএহহহহ…আমি যেন তার সেবাদাসী যে তার সব কথা হুকুমের মত পালন করতে বাধ্য আমি! মনে মনে এসব বললেও বাইরে তার কিছুই প্রকাশ পেলো না। নির্বিকার ভঙ্গিতে” বার দুয়েক একবার সিফাতের দিকে আরেকবার ফোনের দিকে চাইলো সে। কিন্তু না কিছু বললো আর না ফোনটা হাতে নিল। পলকের এমন নির্বিকার ভাব দেখে এবার বেশ বিরক্ত হলো সিফাত।কিছুটা কড়া গলায় বললো,
_কি হলো নিন ফোনটা। ঝটপট হাত চালান।সব সময় সব কাজে এত স্লো হলে চলে নাকি। বাসায় যেতে হবে তো নাকি? সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

সিফাতের এমন গমগমে গলায় বলা সহজ কথাগুলো তথা ঝাড়ি যেন ম্যাজিকের মত কাজ করলো। পলক এক ঝটকায় ফোনটা হাতে নিয়ে ঝটপট টাইপ করতে লাগলো। মিনিট দুই পরে ফোনটা বাড়িয়ে দিল সিফাতের দিকে। ফোনটা নিয়ে এক নজর দেখলো স্ক্রিনের দিকে। তারপ্র ভ্রুকুটি কুচকে উপরের ঠোঁটের ভাঁজে নিচের ঠোঁটটা চেপে ধরে কি যেন ভাবলো। সিড়ির দিকটা আবছায়া আঁধার হওয়ায় স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল না কিছু। কিন্তু এরমাঝেই পলক তাকিয়ে রইলো সামনের মানুষটার দিকে। কি যেন ভাবছে সে মনোযোগ দিয়ে। তার এই ভাবনা বিভোর মুখখানা বেশ লাগলো পলকের কাছে। মৃদু হাসলো সে আপনমনেই। কিন্তু সে হাসি মেঘের ফাঁকে খনিকের উঁকি দেয়া রোদের মতই মিলিয়ে গেল নিমিষেই।

_হুমমম…আইডির নাম তাহলে মেঘ বন্দী আলো।এই জন্যই বায়োডেটার নাম দিয়ে এতবার করে সার্চ করেও খুঁজে পাইনি। বাহ! আইডির নামটাও তো দেখছি বেশ রেয়ার। এই নামে একটাই আইডি সারা দুনিয়ায়। কথাগুলো ফোনের স্ক্রিনে চোখ রেখেই বলছিল সিফাত। কন্টাক্ট ডিটেলইস দেখে ফেইসবুকে গিয়ে আইডি সার্চ দিয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টও পাঠিয়ে দিল। কথা শেষ করে এবার চোখ তুলে চাইলো পলকের মুখের দিকে। কিন্তু একদম উপরের দিকের সিড়িতে হওয়ায় কম আলোতে ভালোভাবে দেখা গেল না তাকে।

সিফাতের দৃষ্টিতে ঠিক কি ছিল বুঝে উঠতে পারলো না পলক।চেয়েও থাকা যাচ্ছিল না সেই দৃষ্টি পানে। তাই পরিস্থিতি সামলে নিতেই সে বললো,
_এবার দেরি হচ্ছে না? আমাকে তাড়া দিয়ে নিজেই তো এখন দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তা বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে কি আছে নাকি এখানেই থেকে যাওয়ার প্ল্যান করছেন?

পলকের এহেন ধাঁচের কথায় কিছুটা ভড়কে গেল সিফাত। গলা ঝেড়ে সামনের দিকে ফিরলো। নামে যেতে যেতেই পলকের উদ্দেশ্যে বললো,মিসডকল গেছে আমার নাম্বার থেকে,,ঘরে গিয়ে সেভ করে নিবেন। রাতে কল দিবো আমি। রিসিভ করতে যেন ভুল না হয়। কথা গুলো বলতে বলতে হন হন করে নেমে বাসার ভেতরে চলে গেল সে। আর পলক আরও একবার পলক ফেলতে ভুলে গিয়ে ব্যাক্কলের মত সিফাতের চলে যাওয়া দেখলো সিড়িতে দাঁড়িয়েই।

_________________________________

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে পলক। আজ বহুকাল পরে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে। বিকেলে সিফাতরা চলে যাওয়ার পর ঘরে এসেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গেছে। মনে অনেক প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন আজকের বিকেলের ঘটনাটা নিয়ে। লোকটা কি সব বলে গেল তাকে। কিসের জোরে সে এভাবে একজন অপরিচিত মেয়েকে এতসব কথা বলে গেল। কিসের এত অধিকারবোধ তার! প্রশ্নগুলোর সঠিক কোন উত্তর খুঁজে পায় না পলক। এসবের উত্তর যে কেবল ঐ মানুষটাই দিতে পারে।

শেষ কবে এভাবে নিজেকে ভালো করে দেখেছে মনে পড়ে না তার। কারণ, তার না আছে দেখার মত রূপ আর না আছে রঙ। তবে সেসব নিয়ে তার কোনকালে আফসোস না থাকলেও যেদিন থেকে সমাজের দৃষ্টি, মূল্যায়নের বাস্তব ধরণ বুঝতে শিখেছে একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছে সেসবের তোয়াক্কা করা। এখন কে কি বললো সেটাও কানে তুলে না। তুলেই বা কি লাভ, এমন রূপ রঙ তো আর সে যেচে নিজের করে নেইনি। সৃষ্টিকর্তা তাকে যে রূপে চেয়েছেন তাতেই গড়েছেন। তার সৃষ্টির গড়ন নিয়ে আফসোস করার প্রশ্নই আসেনা। তো লোকের কথায় কি আর মনে করবে। সে যেমন তেমনই নিজেকে পছন্দ করে। অন্য কেউ করলো কি করলো না সেসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। কিন্তু আজকে কিছুটা ভিন্ন ব্যাপার ঘটেছে। লোকটা তাকে বিয়ে করতে চাইছে। কিন্তু কেন? লোকটা..উউউউমমম,,কি যেন নাম তার! ও..হ্যাঁ,সিফাত। সুন্দর নাম। মানুষটা দেখতেও তো মাশাল্লাহ সুন্দর। বলতে গেলে গড়নে গঠনে মায়ের ভাষায় তো রাজপুত্র একেবারে। আর সেই রাজপুত্রের মত মানুষটা কি না তার মত শ্যামলা সাদামাটা মেয়েকে পছন্দ করলো? কেন?করুণা করছে? নাকি কেবল বাবার উপকারের প্রতিদান এসব?! নেই…কোন উত্তর জানা নেই তার।

এক এক করে বিকেলের ছাদের ঘটনাগুলো খন্ড খন্ড হয়ে ভেসে উঠতে লাগলো পলকের মস্তিষ্কে। খানিক বিস্ময়,কিছু অসম্পূর্ণ রয়ে যাওয়া কথার চিন্তা, অস্বস্তি,নানান প্রশ্নের ভিড়,আর কিছুটা নতুন ভালো লাগা অনুভূতির আনাগোনায় একটা মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে তার। আয়নায় শেষবারের মত একনজর নিজেকে দেখে মৃদু হাসলো সে। তবে এ হাসি আনন্দের নাকি তাচ্ছিল্যের বোঝা গেল না।

________________________________

_এই নিয়ে ৫ বার কল করলাম কিন্তু ভুলেও একটাবার রিসিভ করার সময় হলো না ম্যাডামের। কি করছেটা কি? ‘কিছুটা রাগ আর অস্থিরতা নিয়ে সারারুমে পায়চারি করছে সিফাত। একের পর এক কল করে যাচ্ছে পলকের নাম্বারে। কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না বলে মেজাজ খিঁচে আছে সিফাতের।

_আরেএএএএ….রিল্যাক্স ব্রো। এত অস্থির হওয়ার কি আছে! হয় তো ব্যস্ত আছে কোন কাজে। নয় তো ফোন কাছে নেই। আর এখন ঘড়ি দেখ..রাত ১১:৩০ টা বাজে। ঘুমিয়ে গেছে হয় তো। পরে কথা বলে নিস না হয়।

_কিসের ঘুম? কিসের ব্যস্ততা, হ্যাঁ? আমি তো বলে এসছিলাম যে রাতে কল দিবো। রিসিভ যেন করে। তো সে কথা কি চিলেকোঠার ঘরেই ফেলে চলে এসছে? কেন রিসিভ করছে না সে..হাউ কুড বি সি সো ইরেসপন্সিবল!!!

_বাপ রেএএএ..এত রাগ? একবেলার পরিচয়েই এতদূর? ক্যায়া বাত হে ভাই!! বাট এখন..এদিকে আয় তুই, শান্ত হয়ে বস তো একটু। আর এত অস্থির হওয়ারই বা কি আছে বল তো…তোর মত ছেলের বেলায় এটা যে এটমবোম পড়ে দুনিয়া ধ্বংস হওয়ার থেকেও ভয়ংকর ব্যাপার এটা তুই বুঝতে পারছিস? সিরিয়াসলি ব্রো!আই জাস্ট কান্ট বিলিভ দিস। ইভেন আই কান্ট ইমাজিন যে তুই.. ব্রো তুইইই…এত বছরের লাইফে যে কিনা একটা মেয়ের দিকে একবার ছেড়ে দুবার ফিরে দেখলো না, সেই মি.সাফওয়ান সিফাত..আজ এমন একটা মেয়ের জন্য অস্থির হচ্ছে। ওয়াও..ও গড..এইদিনও আমার দেখার ছিল!!

_আহ, রিহান..থামবি তুই? কি সব বলে যাচ্ছিস তখন থেকে। দেখছিস তো একে তো সে ফোন তুলছে না,আর তুই কিনা কন্টিনিউয়াসলি কি সব বকবক করে যাচ্ছিস। আর হ্যাঁ,,এমন একটা মেয়ে কি রে? কি মিন করছিস তুই? তোর ভাবী হবে কদিন পরে.. সম্মান দিয়ে কথা বল তার সম্পর্কে।

একে তো পলক ফোন তুলছে না পলক। তারওপর রিহানের এমন কথাবার্তায় মেজাজ যেন আরও বিগড়ে গেল সিফাতের। এমনিতে বেশ ঠান্ডা মেজাজের মানুষ হলেও নিজের কাজ বা চাওয়া ঠিকঠাক না হলে সে মেজাজ বিগড়াতেও সময় লাগে না। যদিও সেটা প্রত্যেক্ষভাবে অন্যের ওপর খুব কমই প্রকাশ করে। তবুও, নিজের কিছু কিছু বিষয়ে বেশ সেনসেটিভ সে। তাই এই মূহুর্তে রিফাতের কথার রিয়্যাকশন হিসেবে এই ঝাড়িটা বেচারার কপালে জুটলো আর কি।

_আচ্ছা..আচ্ছা…স্যরি ব্রো। আর বলবো না ওভাবে। বাট ইউ জাস্ট সীট হিয়ার এন্ড রিল্যাক্স।

_হুম

রিহানের কথায় কিছুটা শান্ত হয়ে ওর পাশেই বিছানায় বসে পড়লো সে। রিল্যাক্স হওয়ার জন্য মাথাটা নিচু গভীরভাবে শ্বাস নিলো বার কয়েক।

_আচ্ছা,তুমি কি সত্যি সত্যি ডিসাইড করে নিয়েছো যে উনাকেই বিয়ে করবে?আই মিন আরও তো মেয়ে আছে.. চাইলে একবার মিট করে নিতে পা…

রিহানের কথাটা আর শেষ করা হলো না..তার আগেই সিফাত এমন ভাব নিয়ে তার দিকে তাকালো যেন সে যা বলতে যাচ্ছিল তার মত ভুল কথা আর কিছুই হতে পারে না। এর সাজা সোজা মৃত্যুদন্ড। তাই শেষ যে দুটো অক্ষর মুখের কাছে এসেছিল সেগুলোকে সে একটা শুকনো ঢুকে আবার গিলে ফেললো। আর ক্যাবলাকান্তের মত একটা হাসি দিয়ে চুপ করে গেল।

সিফাতের এই মূহুর্তে মেজাজ খুব বিশ্রীভাবে খিঁচে আছে। তবুও সে নিজেকে সামলে খুব শান্তস্বরে বললো,
_হ্যাঁ। আমি ওকেই বিয়ে করবো। কারণ আমার জন্য ওর থেকে পার্ফেক্ট কেউ আর হবে না। আমি এতদিন নিজের জন্য যেমন মেয়েকে এক্সপেক্ট করেছি,সে একদম তেমন না হলেও অনেকটাই কাছাকাছি। আর বাকিটা আমি নিজে গড়ে নিবো। সো,এটা নিয়ে যেন আর কোন কথা না হয়। আন্ডারস্যান্ড?

_ওকে, ব্রো। আই গট ইট। এনওয়ে,,কংগ্রাচুলেশনস ব্রো। ফাইনালি ইউ গট ইউর লেডি। ‘বলেই জড়িয়ে ধরলো সিফাতকে।

সিফাতও সব ভুলে আগলে নিলো তার প্রিয় ভাইটাকে।

আদতে সিফাতের কাজিন, বন্ধু অনেক থাকলেও সবচেয়ে প্রিয় আর কাছের তার এই ভাইটাই। বছর ৫ এর তফাৎ দুজনের।সম্পর্কে ছোট খালাতো ভাই হলেও বন্ডিংটা একদম বন্ধু আর নিজের ভাইয়ের মত স্ট্রং এন্ড পিওর।

রিহানকে ছেড়ে আরও একবার ফোনের দিকে চাইলো সে। নয়টা মিসডকল। কিন্তুরেসপন্স। এবার রাগ ছেড়ে হতাশ ভঙ্গিতে ফোনটা ছুঁড়ে মারলো বিছানার এক কোণায়। বিছানা ছেড়ে উঠে চলে গেল ব্যালকনিতে। এখন তার এই সময়টা,এই মন খারাপ,রাগ কিংবা হতাশা যাই হোক না কেন..সেটা কাটানোর একমাত্র উপায় আকাশের গভীরতায় বিলীন হওয়া।

যাওয়ার আগে রিহানকে তার রুমে চলে যেতে বলে সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটারটা হাতে তুলে নিল সিফাত।

বেলকনির রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালো সে।সিগারেট জ্বেলে লম্বা একটা টান দিয়ে ধোঁয়ার বেশে হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো এই মূহুর্তের তার সব অনুভূতি।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here