#ভাগ্যবতী
#লাবিবা_তানহা_এলিজা
#পর্ব_২

৩.
বিয়ে বাড়ি জমজমাট পরিবেশ। উঠোনে বসে মহিলারা কুটনো কুটছে। বাড়ির এক কোণে নয়টা ছাগল জবেহ করা হয়েছে বরযাত্রীদের জন্য।তারা গোমাংস খাবে না। অবশ্য জাহ্নবীও আজ পর্যন্ত গোমাংস খায়নি। কাঠাল গাছটায় দড়ি দিয়ে বেধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ছাগলগুলোকে। এখনো চামড়া ছাড়ানো হয়নি। কালো মিচমিচে চামড়ার সাথে পেছনের অন্ধকার ঝুপ যেনো মিশে একাকার হয়ে গেছে। একজন দুটো বস্তা এনে ফেলে দেয় উঠোনে। দড়ি খুলে উপুড় করে বস্তা ঢেলে দেয় বিছানো পাটিতে। বেরিয়ে আসে জবাই করা অনেকগুলো ব্রয়লার মুরগী। এবার এগুলোর ছাল ছাড়িয়ে কেটে নেওয়া হবে। কাল দুপুরে রোস্ট হয়ে সবার প্লেটে উঠবে। জানালায় বসে আবছা চোখে দেখে যায় এসব পূরবী। তার চোখে ছল ছল করছে জল। কিন্তু গড়িয়ে পড়ছে না। বুকের ভেতর কষ্ট গুলো উদাম নাচ নাচছে। বুক ফেটে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে সব কিন্তু পারছেনা। মরে যাবে সে। এ যন্ত্রনা এমন যন্ত্রণা যে মৃত্যু যন্ত্রনাকেও হার মানায়। মা মা বলে কেঁদে উঠে পূরবী। ” আমাকে রেখে কেনো গেলে মা? আমাকে কেনো নিয়ে গেলে না মা? তোমার পূবরীকে এরা শেষ করে দিচ্ছে মা। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমার সাথে সবাই বেঈমানী করছে মা। যেদিন ভাবী আমার উপর চোরের বদনাম চাপালো ভাইয়া টু শব্দ করেনি। বাবা ভাইয়ার টাকায় চলে জন্য সেও চুপ করে ছিলো । মামা নিয়ে এলে মামীর বুকে মাথা রেখে ঘুমাতাম। বকুল আপু সহ্য করতে পারতোনা আমাকে। হিংসা করতো। আমি মামা মামীর আদরে বেশ ছিলাম। কিন্তু ওরাই আমার সাথে বেঈমানীটা বেশী করলো। তুমি ছাড়া আমাকে কেউ ভালোবাসে না মা। কেউ না। আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও মা.. আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও। ..

পূরবীর চিৎকারে অনেকের চোখে কান্না চলে এলেও কেউ কিছু বলতে পারে না। কাজ শেষ করে ঘুমাতে চলে যায়। সকাল সকাল আবার রান্না শুরু করবে বাবুর্চি। পূরবীর চোখে ঘুম নেই। খাওয়া নেই। পশ্চিমের মসজিদ থেকে ফজরের আজান ভেসে আসে। দূর্বল শরীরটাকে টেনে টুনে বাথরুমে গিয়ে ওযূ করে নেয় পূরবী। রুমে এসে ফ্লোরে জায়নামাজ বিছিয়ে চার রাকাত নাম শেষ করে সিজদায় গিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকে। বার বার আল্লাহকে বলতে থাকে এই অমানুষটার হাত থেকে আমাকে বাঁচাও মা’বুদ। তুমিই রক্ষাকর্তা। চোখ দুটো লেগে আসে তখনি দরজার শব্দে চোখ মেলে পূরবী। তাকিয়ে দেখেই ভয়ে কুঁজো হয়ে যায়। উঠে দু পা পিছিয়ে যায়। কাপতে কাঁপতে বলে, ” আপনি এখানে কেনো?চলে যান এখান থেকে। ”
আশু ভেতরে ঢুকে আলোতে এসে দাঁড়ায়। মাটি কালার শার্ট পড়েছে সে। বুকের দিকে দুটো বোতাম লাগানো বাকি সব খোলা। সাদা ফর্সা শরীর। হাতে কয়েকটা লাল সুতো বাধা। সোনা রুপার প্রত্যেক আঙুলে আংটি। গলায় সোনার মোটা চেইন। মাথার চুল গুলো উশকো খুশকো। মুখ ভর্তি ঘন জঙ্গল দাড়ি । কষাইয়ের মতো গোফ। মানুষ ঠিকই বলে। খুনীদের চেহারা অটোমেটিক জল্লাদের মতো হয়ে যায়। আশু খুনী গুন্ডা।আশুকে এই মুহুর্তে গুন্ডাও মনে হচ্ছে না জল্লাদ ও মনে হচ্ছে না। তাকে দেখেই বলা যায় সে মাতাল। দাঁড়িয়ে থেকেও টলছে। মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ঘরে ঢুকেছে ভেবেই পূরবীর বুক কেঁপে উঠে।
আশু মাতাল কন্ঠে বলে,
“বাহ! সুন্দরী। তুমি তো দেখি বরকে অন্ধকারে দেখেও চিনে ফেলো। ফুলসজ্জা করার পর তো বাকিটাও চিনে ফেলবে। ”
অশালীন কথা শুনে পেটের ভেতর ঘুটা শুরু করে পূরবীর। এই বিদখুটে চেহারা দেখে আর নোংরা কথা শুনে মনে হচ্ছে তার এখনি বমি হবে। ভাগ্যিস পেটে কিছু নেই নয়তো এতোক্ষনে বমি একদফা হয়ে যেতো। আর সরাসরি সেই বমি পড়তো আশুগুন্ডার মুখের উপর। এই মুহুর্তে কিছু না খাওয়ার জন্য একটু আফসোস হচ্ছে পূরবীর। এসব কথা আর সে শুনবেনা। গলা বাড়িয়ে বলে,
” আপনি কেনো এসেছেন এখানে? মদ খেয়ে মাতলামি করার জায়গা পাননা না? কে আপনাকে আমার ঘরে ঢুকতে দিয়েছে? বের হোন আপনি। আমি মানিনা আপনাকে। শুনেছেন আপনি? ”
” কেনো মানোনা সুন্দরী? কি নেই আমার? তোমাকে সুখী করার জন্য সব ই আছে। তুমি যদি চাও দিনে দুবার টি টুয়েন্টি খেলতেও রাজি আমি। বিলাস বহুল হোটেলেও রাখবো। ”
পূরবী কান চেপে ধরে। সে আর শুনতে পাচ্ছে না। এই কান কেনো বধির হয়ে যাচ্ছে না।
” কান কেনো চেপে রেখেছো সুন্দরী? কত প্রেমের কথা বলবো আমি সব তো শোনতে হবে তোমাকে। কান খুলা রাখো। ”
এগিয়ে এসেই হাত ধরে আশু। কান থেকে সরাতে চায়। পূরবী চিৎকার করে উঠে, ” হাত ছাড়ুন আমার। আপনার কথা শোনবোনা কিছুতেই আমি। ” আশু চুলের মুঠি ধরে টান দেয়। দাতে কটমট করে বলে,
” মা** কান থেকে হাত নামা বলতাছি। পিরিতের কথা শুনবিনা কেন তুই? আমার গায়ের হলুদ ফালাইয়ে দেস সাহস কতো বড় তোর ” ব্যথায় পূরবী চিৎকার দিয়ে উঠে।
” চেচা কুত্তি চেচা । আমি নাকি গুন্ডা? অমানুষ? আজকে অমানুষ গিরি কাকে বলে তোকে বুঝাইয়া দিমু। আমাকে বিয়া করবিনা তুই। কোন নাগর পাতাইছোস দেখে ছাড়মুনা আমি? ” বাড়ির সকলেই সেখানে চলে আসে। সকাল হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। আশুকে দেখে চমকে উঠে।
” আমার চুল ছাড় কুত্তা । ও আল্লাহ ব্যথা। ছাড় কুত্তা। আমি মরে গেলেও তোকে বিয়ে করবোনা। কিছুতেই না। ”
” তুই বিয়ে করবিনা তোর বাপ বিয়ে করবো। ”
পূরবীর চুলের মুঠি ছাড়তেই পূরবি মাথায় হাত চেপে বসে পড়ে। আশু পকেট থেকে একটা সিদুরের কৌটা বের করে একমুঠ সিঁদুর পূরবির সিথিতে ভরে দেয়।
” এবার দেখি আমাকে বিয়ে না করে কাকে করস। ”
ঘটনার আকষ্মিকতায় সকলেই চমকে যায়। পূরবীও চমকে যায়। সাজু ও কিছুলোক এসে আশুকে বের করে নিয়ে যায়। জাহ্নবী মুখে হাত রেখে বলে, ” ওমা এতো বিয়ে হয়ে গেলো। নিয়তির লেখন খন্ডায় কে?
নাকের উপর সিঁদুর পরেছে। অনেক সোহাগ পাবী রে পূরবী। ”
মামীর এমন কথায় পূরবী যেনো ভড়কে যায়। মাথায় হাত দিয়ে দেখে একগাদা লাল রং। এসব কি? নাকের কাছে আনতেই বমি করে দেয়। পানি ছাড়া কিছুই বের হয়না। বাথরুমে ছুটে যায় ধুয়ে ফেলতে জাহ্নবী ধুয়ে ফেলতে দেয়না। পূরবীকে বলে, সকালের লগ্নেই সিথিতে সিঁদুর পরেছে । তোর বিয়ে হয়ে গেছে পূরবী। এই সিঁদুর তোর স্বামীর দেওয়া।এটা মুছার চেষ্টাও করবিনা। ”
” চুপ করো মামী। তুমি যে মনে প্রানে এখনো হিন্দুধর্ম পালন করো সেটা আর কারো বুঝতে দেরি নেই। তুমি আজো গরুর মাংস খাওনি। তোমার কথাবার্তা সব হিন্দুদের মতো। এতোকাল তুমি ঠকিয়েছো সবাইকে। তোমার জায়গা কোথাও নেই। না আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবে না তোমাদের ভগবান। আমার মামাকে পাপের ভাগী করেছো তুমি। আমি মুসলমান মেয়ে। এই রংয়ের কোন দাম নেই আমার কাছে। আমি এটা কিছুতেই করতে পারি না। এসব করে লাভ কি তোমার? কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছো তুমি? ”
” শোন যা সত্য তাই বলছি। কিছুতেই এই সিঁদুর মুছবিনা।তুই বিবাহিতা। ”
” আমি মানিনা। ইসলামে এর কোন মূল্য নেই। ”
সাজু এসে সব দেখে পূরবীকে নিয়ে যায়। যার কারনে পূরবীর সিঁদুর ধোয়া হয়না। পূরবী সাজুকে বলতে থাকে, ” মামী তোমাকে ঠকিয়েছে মামা। নাটক করেছেন উনি। সে একজন চিটার। লোভী মহিলা। তুমি উনার সাথে আর সম্পর্ক রাখবেনা মামা। কিছুতেই রাখবেনা। উনি প্রতিশোধ নিচ্ছেন। তার বাবা মারা গিয়েছিলো তোমার জন্য তুমি মামীকে নিয়ে পালিয়েছিলে তাই। এখন মামী প্রতিশোধ নিচ্ছেন।

৪.
আশু এবাড়িতেই রেখে দেওয়া হয়। টক খাইয়ে তার নেশা কাটানো হয়েছে। তার বাড়ি থেকে বিয়ের পোশাক আনিয়েছে সাজু ।সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে তাকে। দুপুরবেলা বিয়ে পড়ানোর কথা। কিন্তু এই মত টাই ঠিক করতে পারছেনা যে হিন্দুমতে বিয়ে পড়াবে নাকি ইসলামের শরিয়ত মোতাবেক? ছেলের বাড়িরা মন্দিরে মন্ডপ সাজিয়ে রেখেছেন। সেখানেই বিয়ে পড়ানো হবে। এদিকে সাজু কাজী ঢেকে রেখেছেন। সে ঘোর অমত জানায়। কনে যেহেতু মুসলমান সেহেতু মুসলমান মোতাবেক ই তার বিয়ে হবে। ব্যপারটা আশুকে জিজ্ঞাসা করতেই সে গা ছাড়া ভাব দেখায়।
“আমি তো বিয়ে করেছিই।পূরবী আমার বউ । ইচ্ছে করলেই এখনি ফুলসজ্জা করে নিতে পারি কিন্তু তোমাদের জন্য করছিনা। এখন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে বিয়ে হোক দেখার বিষয় না। ”
জাহ্নবী বলছে, তাড়াতাড়ি বিয়েটা হয়ে গেলেই বাচি। এসব কথা বাতাসের আগে ঘুর ঘুর করে। ননদাইয়ের বাড়ি যেনো না যায়। বিয়েটা হয়ে গেলে কেউ আর কিছুই করতে পারবে না। ”

পূরবিকে খুব সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। শহর থেকে সাজানোর লোক আনিয়েছে আশু পূরবীকে সাজানোর জন্যে। লাল বেনারসীতে রুপ যেনো উথলে পড়ছে তার। সাজু দেখেই বলে, ” তুই তোর মায়ের মতো হয়েছিস। কি যে রুপ! সেজন্যই তোর বাবার কাছে বিয়ে দিতে পেরেছিলাম। নয়তো আমাদের মতো গরীব ঘরের মেয়ের কি এতো বড়ো ঘরে যাওয়ার সৌভাগ্য হতো! ” পূরবীর চোখদিয়ে জল গড়িয়ে পরে। আজ তার মাকে খুব মনে পড়ছে। মা থাকলে এসব হতো না। মা হতে দিতো না। চোখের সাজটা ঘেটে যায় জলে। মুছে দিয়ে আবার সাজাতে বসেছে চোখ। কাঁদতে নিষেধ করে। এর মাঝেই বকুল আসে কয়েকটা গহনার বক্স নিয়ে। সাথে একটা ট্রে। তাতে কিছু আপেল আর ছাল ছাড়ানো কলা স্লাইস করে কাটা। একহাতে বক্সগুলো আরেকহাতে ফলের ট্রে। বক্স গুলো ছড়িয়ে রেখে ট্রে থেকে একটা আপেলের স্লাইস নিয়ে নিজের মুখে পুরে নেয়। আরেকটা স্লাইস নিয়ে পূরবীর মুখে ঢুকিয়ে দেয়। পূরবী অবাক হলেও খেয়ে নেয়। বকুল গহনার বাক্স গুলো খুলে এতো সোনার গহনা দেখে যেনো আকাশ থেকে পরে। কি ভারী ভারী সুন্দর ডিজাইনের সব গহনা! খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। মনে হয় যেনো এগুলো সব তার বিয়ের গহনা। ” তোর কপাল রে পূরবী। ” আরেক স্লাইজ পূরবীর মুখে ঢুকিয়ে দেয়। গহনা গুলো নিজ হাতে পূরবীকে পরাতে থাকে। আবার পূরবীর মুখে ফল তুলে দেয়। পূরবী বকুলের এরূপ আচরন দেখে চোখ থেকে জল ফেলতে থাকে। যে বকুল পূরবীর কিছুই সহ্য করতে পারতো না। খেট খেট করতো সব সময় আজ সে নিজ হাতে গহনা পরাচ্ছে। মুখে ফল তুলে দিচ্ছে। হয়তো শেষ বিদায় তাই। বোনের এই আদর সে ফেলতে পারবে না। বকুলের হাতে ট্রেতে সাজানো পুরো ফল পূরবী খেয়ে নেয়।একগ্লাস দুধও খাওয়ায়। সম্পূর্ণ সাজ শেষ করে দাড় করায় পূরবীকে। এমন সুন্দর যেনো পৃথিবীতে আর নেই। বকুল বলে, ” তোকে হিংসে হচ্ছে আমার পূরবী। ফুফু, তুই এতো সুন্দর হলে আমি কেনো হলাম না? আমি কেনো আমার খালার মতো দেখতে হলাম?তোর রুপ আমাকে দিবি পূরবী? ”
” তুমি বেঁচে গেছো আপু। এ রুপ তোমার হলে আমার জায়গায় এতোক্ষনে তুমি ঐ অমানুষটার জন্য বউ সাজতে। তোমার সিথিতে সিঁদুর থাকতো। তোমার মা ও তোমাকে বাঁচাতে পারতো না। ”
বকুল কিছু না বলে বেরিয়ে যায়।

সময় যত পার হচ্ছে বুকের ভিতর ধুকধুকানিটা আরো বাড়ছে। সবাই চলে গেছে। একা রুমে বউ সেজে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে পূরবী। নিজের চেহারা দেখে কষ্ট টা আরো বাড়ছে। ইচ্ছে করছে ছুরি দিয়ে নিজেকে কেটে ছিন্নভিন্ন করে দিতে। এ রুপ সে আর রাখবেনা। কাছে ছুরির বড় অভাব বোধ করছে সে। মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আত্মহত্যা যে মহাপাপ । এর মাঝেই ছেলের বাড়ির কয়েকটা মেয়ে ঢুকে রুমে। পূরবীরকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। সামনে বসে রুপের প্রশংসার ঢালী নিয়ে বসে। আর কি কি যে ব‌লে! আশুদা পাগল হয়ে যাবে আজ। এমনি এমনি কি বিয়ে করছে তাও আবার পনের লক্ষ টাকা দিয়ে বউ কিনে! টাকার পরিমাণ শুনে আগেই বুঝেছিলাম । দামী জিনিস দাম তো পড়বেই। আরো চাইলে আরো দেওয়া যেতো তবুও মিস করা যেতো না। আহা! দেখেছিস কি শ্রী! একদম প্রতিমার মতো। ঠিক যেনো মা দুর্গা।

পূরবীর আর সহ্য হচ্ছে না এসব। সে জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েরা চলে যায়। বিয়ে পড়ানো শুরু হবে কিছুক্ষনের মধ্যেই। পূরবী চোখ বন্ধ করে বার বার আল্লাহকে ডাকছে যেনো এই মুহুর্তে তাকে মৃত্যু দান করে। এর মাঝেই বকুল ঘরে ঢুকে। সাথে বকুলের এক বান্ধবী। পূরবী চোখ মেলে তাকায়। বকুল ঝটপট পূরবীর পা থেকে জুতো জোড়া খুলে পূরবির হাতে ধরিয়ে দেয়। পূরবী কিছু বুঝে না উঠার আগেই বকুল টেনে পেছনের দরজায় নিয়ে আসে। বকুলের বান্ধবীর হাতে একটা লাগেজ। পূরবী জিজ্ঞাসা করে ” আপু কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?” পূরবীর কাধে একটা বেনেটি ব্যাগ ঝুলিয়ে দিয়ে দরজা খুলে দৌড় দেয় তিনজনে। পূরবীকে বলে, ” আড়াইটার দিকে বাস পাওয়া যাবে । দূরে কোথাও চলে যায়। এবাড়ি মুখো আর হবি না। আরেকটু দেড়ি হলে না জানি কি হয়ে যেতো। আমি ফুফা আর ভাইয়াকে খবর দিয়েছি। তারা আসতে দেরি হচ্ছে জন্য তোকে ভাগিয়ে দিতে হলো আমাকে। ”
” আপু…. ।”
বড় রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানে একটা সি এন জি দাঁড়িয়ে আছে। বকুল পূরবীকে সি এন জিতে তুলে দেয়। বকুলের বান্ধবীও গিয়ে সি এন জিতে উঠে। বকুল বলে,
” শোন তোর লাগেজে তোর কিছু জামা কাপড় দিয়ে দিয়েছি আর সব কাগজপত্র। আর এইযে বেনেটি ব্যাগে আশুর দেওয়া কিছু টাকা আছে। মা আমার গহনার জন্য খরচ করেছে কয়েক বান্ডিল। বাকি যা ছিলো এখানে দিয়ে দিয়েছি। হোটেলে থাকলেও তোর দু তিন বছর চলে যাবে। পরনের গহনা গুলো সামলে রাখিস। ”
” আপু এগুলো তো আশু গুন্ডা মামি কে দিয়েছে। ওর টাকা আমি কেনো নিবো? ”
” তোর দাম হিসেবেই তো দিয়েছে তাইনা? তোর টাকা তুই নিবি নাতো কে নিবে? এই কয়দিন কম কষ্ট দিয়েছে তোকে? সেগুলোর বিল উঠেনি নাকি? এগুলো তোর টাকা বুঝছিস? আমার গহনার টাকা মাফ করে দিস। শ্যামলী তোকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসবে। আর যেখানে গিয়ে নামবি আমাকে কারো ফোন থেকে যাস্ট একটা কল দিয়ে জানাবি যে তুই ঠিক আছিস। ব্যস তাহলেই হলো। ”
পূরবীর বুক ভেসে যাচ্ছে। যে বোন তাকে দেখতে পারতো না সেই যে একমাত্র তাকে ভালোবাসে আজ সে জানতে পেরেছে।
শেষ মুহূর্তের জন্য একবার জড়িয়ে ধরে বকুলকে। বকুল ও চোখের পানি ফেলে বলে, ” আর কোন দিন দেখা হবে কিনা কে জানে? বোন হয়ে বোনের ক্ষতি কিভাবে হতে দেই বল? ভালো থাকিস। ”
চোখের জলে বিদায় হয় দু-বোনের। স্মৃতিতে ভেসে যায় দুজনে। কতো ঝগড়া কতো মারামারি কতো কাড়াকাড়ি কতো হিংসাহিংসি আজ সব ভুলে ভালোবাসাই উজ্বল হয়ে উঠেছে। প্রকাশ পেয়েছে অদৃশ্য বন্ধন । কিন্তু হায়! সে তো বিদায় বেলায় !

চলবে,

তৃতীয় পর্ব আগামীকাল ইনশাআল্লাহ। নতুন করে লিখতে হচ্ছে আবার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here