বাসন্তী
পর্ব- ৩৩
লেখা-লিমু
-” সরি।”
-” হঠাৎ সরি শুনে কলি চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকালো প্রিয়মের দিকে। যে ছেলে সারাক্ষণ এতো এটিচিউড নিয়ে চলে,সে কিনা নিজ থেকে সরি বলছে!”
ব্যাপারটা হজম করতে কলির বেশ কষ্ট হলো। নিশ্চয়ই কোন বদ মতলব আছে ব্যাটার,তাই সেধে সরি বলতে এসেছে। কিন্তু কলি এতো বোকা না,সে সহজে পাত্তা দিবে না। প্রিয়মকে পাত্তা না দিয়ে কলি অন্যদিকে চলে গেল। প্রিয়ম কিছুটা না,বেশ অবাক হলো কলির আচরণে। কথা না বলে চলে যাওয়ার কি মানে?”
প্রিয়ম কলির পিছু পিছু ছাদে গেল। কলি ছাদের গাছগুলোতে পানি দিচ্ছিল। এখানে আসার পর থেকে প্রতিদিন সকালের রুটিন ওর গাছে পানি দেয়া। প্রিয়ম কলির দিকে চুপচাপ তাকিয়ে আছে কিছু না বলে। কলিও ওর মতো ওর কাজ করে যাচ্ছে। এমন ভাব,যেন ওর আশেপাশে কেউ নেই।
প্রিয়ম ভেবে পাই না,এতোটুকু মেয়ের কিসের এত ভাব।
নাকি নিজ থেকে সরি বলেছে দেখে,ডিমান্ড বেড়ে গেছে।
এসব ভাবছিল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, তখনি কলি চলে যাচ্ছিল।
-” ঐ আনারকলি,এতো ভাব কোথায় পেলি!”
-” কলি পারে তো চোখের দৃষ্টি দিয়েই প্রিয়মকে ভস্ম করে দেয়। অনেক কষ্টে রাগটা হজম করে, প্রিয়মের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর বললো,
-” কি সমস্যা?
-” তুমি!”
-” হোয়াট?”
-” মানে এতো ভাব নিচ্ছো কেন? আমি কালকের জন্য সরি বলতে এসেছি,বলেছিও। আর তুমি এমন এক্সট্রা ভাব নিচ্ছো কেন শুনি? আমি কি ইচ্ছে করে করেছি? নাচের স্টেপটা যেমন ছিলো,আমিতো শুধু সেটাই ফলো করেছি। আমার মনে অন্যকিছু ছিলো না। আমার মন দুধের মত সাদা।
-” কলি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল। প্রিয়মের এবার সত্যি সত্যিই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ও তো ইচ্ছাকৃত কাজটা করেনি,নাচের মধ্যে ডুবে গিয়েছিল দুজনেই। আর এখন প্রিয়মের দোষ হয়ে গেল!”
প্রিয়ম ভাবলো,যাহ আমিও আর গিল্টি ফিল করবো না। কারন আমি ইচ্ছাকৃত করিনি। আমিতো জানি, আমার মনে অন্য কোন ইনটেনশন ছিলো না। ইটস জাস্ট হ্যাপেন্ড সাডেনলি।
গতকালকে নাচের সময় প্রিয়মের হাত কলির পেটে লেগে যায়,ইচ্ছাকৃত নয় অবশ্যই। প্রিয়মের হাত ধরে কলি রাউন্ড দিচ্ছিল,হঠাৎ পরে যেতে নিলে প্রিয়ম পেটে হাত দিয়ে ওকে আটকে ফেলে। যার ফলে দুজনি অসস্থিতে পড়ে। এখন অবশ্য প্রিয়মের বেশি অসস্থি লাগছে,কারন কলির এমন অদ্ভুত ব্যবহার। যাক,যা হয়ে গেছে, তা গেছে। সে সরিও বলেছে। এরপর আর কিছু বলার থাকেনা। অবশ্য কলির মনে কি চলছে,সেটা কলিই ভালো জানে।
সারা বাড়ি ফুল, লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে। অনুষ্ঠান সন্ধ্যায়।
নিজেদের কাছের কিছু আত্মীয়, প্রণয়,প্রিয়মের কিছু বন্ধু বান্ধব নিয়ে মোটামুটি ঘরোয়াভাবেই করা হচ্ছে। পাপড়ি পুষ্পকে পার্লার থেকে সাজাতে চাইলো,কিন্তু প্রণয় তাতে বাঁধ সাধলো। ওর মাকে বললো,
-” তুমি না ওকে ফুল বলে ডাকো? তাহলে ফুল কে কি কৃত্রিম কোন সাজে মানাবে,তুমিই বলো? ফুল যেমন,সে তেমনই সুন্দর। কৃত্রিমতা দিয়ে,কেন তার স্বাভাবিক লাবণ্যতা ঢাকবে?
ছেলের কথার কাছে হার মানলেন পাপড়ি। তাই উনি নিজেই তার ফুলকে তার মতো করে সাজালেন। সবুজ শাড়ির সাথে বিভিন্ন কালারের কম্বিনেশনের গয়না পড়লো। যে কারনে পুষ্পকে দেখে সবুজ গাছে ফোটা ফুলই মনে হচ্ছে। পুষ্পর দীঘল চুল খোঁপা করে,তাতে দুইপাশে গাঢ় লাল গোলাপ গুঁজে দেওয়া হলো। শাড়িটা পরলো গাঁয়ের বধুদের মতো করে। কোমড়ে হালকা গোলাপী রংয়ের পাথরের কোমড়বন্ধনী পরলো তার সাথে। আর কপালে প্রণয়ের পছন্দ করা টিকলি। সেটা পরতে গিয়ে অবশ্য পুষ্প ধরা খেল। কারন পাপড়ি টিকলি কিনে নি। তাই যখন গয়নার বাক্সে টিকলি দেখলেন,তখন মুচকি মুচকি হাসছিলেন। আর পুষ্প পড়লো নিদারুণ করুণ অবস্থায়। না পারছে কিছু বলতে,না পারছে উঠে কোথাও চলে যেতে। ঠিক তখনি পাপড়ি টিকলি টা পরাতে পরাতে বলে উঠলেন,
-” আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে।
-” পুষ্প না বুঝার মতো ভান করে বলে বসলো,মানে?”
-” মানে কিছুনা,আবার অনেক কিছুই। আমার ছেলেটা ভুলে যায় যে,ও আমার পেট থেকে হয়েছে। তবে যাই পছন্দ করুক,সেটা পার্ফেক্ট-ই হয়। এই যেমন ধরো, তুমি অথবা তোমার এই টিকলি। এটা বলে মুখ লুকিয়ে হাসলেন পাপড়ি। আর পুষ্প চোর হাতেনাতে ধরা পরার পর যে অবস্থা হয়,তেমন করে রেখেছে মুখটা। সেটা দেখে পাপড়ি জোরে হেসে উঠলেন। পুষ্প মাথা নিচু করে বসে রইলো। পাপড়ি পুষ্পর মুখটা উপরে তুলে বললেন,
-” তুই কি ভেবেছিস, ঐদিন আমি কিছু বুঝতে পারেনি?
-” পুষ্প কোন জবাব না দিয়ে চোখে বিস্ময় নিয়ে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে রইলো।
-” পাপড়ি বলতে লাগলেন,
আমি কলিকে নিয়ে একটু গাড়ির কাছে গিয়েছিলাম। তখন দূরে একটা গাড়ি দেখা চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। পরে বুঝতে পারলাম,এটা আর কারো না, আমার পুত্রধনের গাড়ি। আর এ কারনেই তুই লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিলি। অবশ্য তোর কোন দোষ নেই। আমার বউ পাগল ছেলেই তোকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছিল,তা আমি জানি। তাই আমরা আমাদের মতো শপিং করতে থাকি। কলি আর প্রিয়ম তো ঝগড়া করেই পারেনা,তোর খেয়াল ওদের থাকবে কি করে? দুটোর মধ্যে কেমন সাপে-নেউলে সম্পর্ক।
-” পুষ্প আর কিছু বলতে পারলনা,চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে। তখন পাপড়ি বললেন,
-” আরে বোকা মেয়ে,এতে মন খারাপের কি আছে? আমি কি তোকে বকা দিয়েছি? দেয় নি তো। তবুও যদি বলিস,আমি শ্বাশুড়ী হিসেবে ভালো না,তবে তো সিরিয়ালের শ্বাশুড়ি হয়ে যাওয়াই ভালো। সারাক্ষণ ছেলের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবো। অবশ্য এটা ভাবিস না,এজন্যই ছেলেকে ঐদিন সাথে নিয়ে যায় নি। আসলে আমি জানতাম যে,ও যাবে আমার থেকে লুকিয়ে।
লুকিয়ে প্রেম করার মজাই আলাদা বুঝেছিস।
-” পুষ্প কি বলবে, কিছু বুঝতে পারছেনা। শ্বাশুড়ী ছেলের হবু বউকে বুঝাচ্ছে,লুকিয়ে প্রেম করার মজা!”
পুষ্প বোকার মতো তাকিয়ে রইলো।
-” পাপড়ি বললেন,
আমার ছেলেটা নিজের জন্য সর্বোত্তম মেয়েটাকেই বেছে নিয়েছে। যে সর্বাবস্থায় ওর পাশে থাকবে,আমি জানি। কোন ভুল বুঝাবুঝি যেন না আসে তোদের মাঝে। সম্পর্কে অনেক ছোট ভুলগুলোই বড় আকৃতি ধারণ করে,সঠিক সময়ে না সুধরালে। একটা সম্পর্কে সর্ব প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো,দুজন দুজনকে বুঝতে পারা। আর সর্বাবস্থায় দুজন দুজনের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস অটুট রাখা।
-” পুষ্প অবাক হয়ে শুনতে লাগলো উনার কথাগুলো। কি যেন একটা অস্থিরতা পুষ্পকে সবসময় তাড়া করে বেড়ায়। মনে হয় সবকিছু যত সহজ মনে হচ্ছে, ততটা সহজ না। কোথায় যেন কি ঝাপসা লাগে। কিন্তু সেটা কি, পুষ্প বুঝতে পারেনা। মনের মধ্যে একটা কুঁ ডাকে সবসময়। কিন্তু কাউকে সেটা বলে না। এমনকি প্রণয়কেও না। অনেকগুলো মানুষের সুখের মুহুর্তটা, নিজের মনের অস্থিরতার কথা বলে নষ্ট করার কোন মানে হয় না। হয়তো এটা শুধুই পুষ্পর মনের উল্টাপাল্টা ভাবনা। মন তো কত কিছুই ভাবে,সব পাত্তা দিলে চলে না।
সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই সব লোকজন আসা শুরু করেছে। প্রিয়মের সো কলড গফও চলে এসেছে ইতিমধ্যে। এবং এসেই কলির সাথে ধাক্কা খেল। সাথে সাথে ইংলিশে বলে উঠলো,
-” হোয়াট দ্যা হেল,হু আর ইউ? ইউ স্পয়লড মাই গাউন,শিট!”
-” কলি বললো,সরি। তখন পাশ থেকে প্রিয়ম বলে উঠলো,
-” হেই ডেইজি,হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
-” কলি বুঝতে পারলো,ইনিই সেই সো কলড ঢংগী পিচ্চি গফ। কারন প্রিয়মের মুখে নামটা শুনেছিল। কলি একটু পরখ করলো মেয়েটাকে। স্লিভলেস গাউন পরে এসেছে,এতটুকু মেয়ে। মেকআপ করেছে ইচ্ছেমত, যত পারছে। ভাব দেখলে মনে হয়,ভার্সিটিতে পড়ে। বেশ লম্বা অবশ্য,তার মধ্যে আবার হাই হিল পরেছে। মনে হচ্ছে আস্তো খাম্বা।
-” তখন মেয়েটা বলে উঠলো,হোয়াই আর ইউ স্ট্যারাং এট মি লাইক দিস?
-” কথায় কথায় এতো ইংরেজি বলছে দেখে কলির মেজাজ বিগড়ে গেল। তাই বললো,
-” বাংলা জানেন না আফামনি? মাতৃভাষা,ভাষার মাসে তো অন্তত বাংলা ভাষায় কথা বলেন। না হলে ঐ যে যারা মরছিল ভাষার জন্য,ওরা ভূত হয়ে গাড় মটকে দিবে।
-” হোয়াট ইজ আফামনি!”
-” এটা ভালো লাগে নাই? ওকে বেশ। তাহলে খালাম্মা ডাকি,এটা বেস্ট। মেয়েটা এবার চূড়ান্ত রেগে গেল। চিৎকার করে বলতে লাগলো,
-” প্রিয় তুমি কিছু বলছোনা কেন? এই মেয়ে আমাকে ইনসাল্ট করছে এভাবে,তাও তোমার সামনেই। তখনি কলি বলে উঠলো,
-” আরে ব্যাস,এতোদিন দেখতাম রেগে গেলে মানুষ ইংরেজিতে কথা বলে। এখানে দেখি উল্টা কেস! রেগে গিয়ে একেবারে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলছে,নট ব্যাড।
প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বললো,
একেবারে পার্ফেক্ট ম্যাচ হবে আপনার সাথে। ইউ বোথ আর জাস্ট মেইড ফর ইচ আদার। এটা বলে চোখ টিপে চলে গেল কলি।
প্রিয়ম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল, কলির কথায় আর কাজে। হঠাৎ ডেইজি আবার চিৎকার দিয়ে বললো,
-” ঐ মেয়ে তোমাকে চোখ মারলো কেন প্রিয়? আনস মি, হোয়াই?
-” আরে, ঐ মেয়ের চোখে সমস্যা আছে। অপারেশন করাতে হবে। ডেইজির অবশ্য কথাটা হজম হলো বলে মনে হলো না, কেমন করে জানি তাকিয়ে আছে। প্রিয়ম সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ওকে নিয়ে বসালো। বাসার সামনে যে বাগানটা,সেখানেই প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে।
পুষ্প একা ওর রুমে বসেছিল। হঠাৎ দরজায় নক হওয়াতে জিজ্ঞেস করলো,কে?”
-” ঐদিক থেকে কোন সাড়াশব্দ পেল না। উঠে ম্যাজিক আই এ চোখ রাখলো। প্রণয়কে দেখেই ওর হার্টবিট সমানতালে বাড়তে লাগলো। দরজা খুলবে কি খুলবেনা,ভাবতে ভাবতে আবার নক পড়লো। পুষ্প কাঁপতে কাঁপতে দরজা খুললো।
প্রণয় ডার্ক গ্রিন শার্টের সাথে কালো স্যুট পরলো। হাতে কালো ঘড়ি,কালো টাই,চুল স্পাইক করা।
প্রণয় রুমে ঢুকলো,কিন্তু পুষ্প দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রইলো। পুষ্পর এমন কান্ড দেখে,প্রণয় বেশ মজা পেল। প্রণয় পুষ্পর বিছানায় বসতে বসতে বললো,
-” চলো না,আজকেই বিয়েটা করে ফেলি। আই ক্যানট ওয়েট এনিমোর!”
এই কথাটা শুনে পুষ্প ওর একটা হার্টবিট মিস করলো মনে হয়। যেখানে দাঁড়িয়েছিল, সেখানেই দরজাটা আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে দাঁড়ালো। প্রণয় যখন বুঝতে পারলো,তখনি নিজেই উঠে পুষ্পর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর দরজা থেকে পুষ্পর হাতটা ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
-” বিয়ে হয়নি,এখনি দরজা লাগাতে চাও?” এটা শুনার সেকেন্ডের মধ্যে পুষ্প দরজা থেকে হাত ছিটকে সরালো। আর সেটা দেখে প্রণয়ের চোখেমুখে দুষ্টু হাসি। পুষ্পকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-” কোন কাজটা করলে, কি বললে তুমি দ্রুত করবে তার সব নিঞ্জা টেকনিক এই প্রণয়ের জানা আছে। পুষ্পর মন চাইছিল প্রণয়ের মাথায় পাথর ভাঙতে,এতো স্টুপিড কেন!”
পুষ্পকে জ্বালানোর সব ট্রেনিং মনে হয় এখন থেকেই নিয়ে রেখেছে।
চোখ কটমট করে প্রণয়ের দিকে তাকালো পুষ্প। আর সেটা দেখে প্রণয় পুষ্পর একটা ওড়না নিয়ে গলায় ফাঁস দেয়ার মতো ভাব করলো। প্রণয়ের এমন কান্ড দেখে পুষ্প হাত দিয়ে গুলি করার মতো করে ,মুখে ঢিশকাও শব্দ করলো। প্রণয়ও একটিং করে পরে যাওয়ার ভাব করলো,আর পুষ্প খিলখিল করে হাসতে লাগলো। আচমকা পরে না গিয়ে,পুষ্পকে হালকা করে জড়িয়ে ধরলো পুষ্প কিছু বুঝে উঠার আগেই। পুষ্প আস্তে করে বললো ,
-” দরজা খোলা,আর বাড়ি ভর্তি মানুষ।
-” প্রণয় পুষ্পকে আরেকটু ভালো ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,তো কি করবো?”
-” কি করবেন মানে?”
-” মানে তুমি কি আমাকে দরজা বন্ধ করে নেয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছো? পুষ্প কপট রাগ দেখিয়ে প্রণয়ের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর প্রাণপন চেষ্টা করতে লাগলো। তখন প্রণয় একদম ঠান্ডাস্বরে বললো,
-” এই এইরকম যখন তখন যেন ছাড়ানোর চেষ্টা না করতে পারো,তার জন্যই পাকাপোক্ত ভাবে বেঁধে নিবো। আর সেটা খুব শীঘ্রই। তখন তোমার কি হবে,কোথায় পালাবে?
-” পুষ্পর মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে,সত্যি সত্যিই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।
-” হঠাৎ দরজায় নক হলো। সাথে সাথে প্রণয় সরে দাঁড়ালো। পরে দেখলো কলি দরজার বাইরে দাঁড়ানো। তখন বললো,ও ফুলকলি তুমি,দিলে তো রং টাইমে এসে মুডটা নষ্ট করে!”
এই কথা শুনে, পুষ্প চোখ গরম করে তাকালো।
কলি বললো,
-” তাও আপনার ভাগ্য ভালো আমি এসেছি,শুকরিয়া জানান। আর দুজন রুমে থাকলে দরজা লক করে রাখতে হয়। সবাই আপনার শালীর মতো এতো ভদ্র নাও হতে পারে।
-” এটা শুনে প্রণয় মাথা চুলকাতে লাগলো। তখন কলি বললো,এবার চলুন দয়া করে। ভালোবাসার জন্য বাকী জীবনটা পড়ে আছে। আগে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ তো হোন পাকাপোক্ত ভাবে। সবাই অপেক্ষা করছে চলুন।
-” প্রণয় পুষ্পকে কোলে করে নিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু পুষ্প ছিটকে সরে গেল। ওদের এমন কান্ড দেখে কলি হেসে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
চারদিকে নানান রঙের লাইট আর বিভিন্ন কালারের ফুলের কারনে একটা অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হলো। প্রণয় আগেই একা বের হয়ে আসলো। পুষ্পকে পাপড়ি আর পুষ্পর মা দুজন একসাথে নিয়ে আসলো। লাইটের আলোতে পুষ্পকে দেখে প্রণয় বেঁহুশ হওয়ার ভান করলো। পাশ থেকে প্রিয়ম বলে উঠলো,
-” ব্রো বিয়েটা আজকে হয়ে গেলেই ভালো হতো, তাই না?
-” তা তো হতোই। এটা বলে পাশে তাকিয়ে দেখে প্রিয়ম মুখ ভেটকিয়ে হাসছে। প্রিয়মের মাথায় একটা মেরে দিল। মার খেয়েও প্রিয়ম মুখ চেপে হাসতে লাগলো। প্রণয় বললো,
-” খুব ভেটকাচ্ছিস না। যাহ তোর জন্য দোয়া করে দিলাম যেন তোর বউ তোকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মারে। এমন দোয়া শুনে প্রিয়ম ভোতামুখ করে তাকিয়ে রইলো। সেটা দেখে প্রণয়ের বেশ লাগলো।
পুষ্পকে স্টেজে নিয়ে আসা হলো। প্রণয়ের দৃষ্টি পুষ্প নামক ফুলটাতেই আবদ্ধ। আংটি পরানো শেষে কিছুক্ষণ ফটোশ্যুট করা হলো। তারপর ওরা দুজন বসলো। বাকীরা একে একে ডান্স শুরু করলো। প্রিয়ম নাচের কিছু অংশে কলিকে টেনে নিয়ে নাচলো। অনেক মানুষ,তাই কলি কোন রিএক্ট করতে পারলনা। তবে ওদের দুজনকে একসাথে নাচতে দেখে, ডেইজি লুচির মতো ফুলছিল শুধু। এবং নাচ শেষ হওয়ার আগেই সে উঠে চলে গেল। প্রিয়ম অবশ্য এতোটা পাত্তা দিলো না। কারন জানে এই মেয়ের একা চলাফেরা করে অভ্যাস। অবশ্য ড্রাইবার হয়তো গাড়ি নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছে। তাই প্রিয়ম নিজের মতো অনুষ্ঠান উপভোগ করতে লাগলো। সবার শেষে যাদের জন্য এই আয়োজন,তাদের কাপোল ডান্সের পালা। প্রণয়ের কথা রাখতে পুষ্প এতো সুন্দর খোপাটা খুলে ফেললো। চুল না খোললে নাকি সে নাচবে না,কি ঢং। সব লাইট অফ করে শুধু স্টেজের স্পটলাইট গুলো জ্বালিয়ে রাখা হলো। ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক প্লে করা হলো…
এতো রোদ্দুর…..
তুই এনে দিলি তাই,
তোর বৃষ্টি, আমি একটু পেতে চাই।
এতো রোদ্দুর…..
তুই এনে দিলি তাই,
তোর বৃষ্টি, আমি একটু পেতে চাই।
এটা বাজার সময় পুষ্প হালকা নেচে স্টেজে উঠলো। আর প্রণয়ের চারদিকে ঘুরে নাচতে লাগলো।
মেঘলা হয়ে যাক,আরো পাঁচটা বারো মাস
কোনো বিকেল বেলাতে, তুই আমার হয়ে যাস….
শুধু তুই,শুধু তুই আর চাইছিনা কিছুই।
শুধু তুই, শুধু তুই আর চাইছিনা কিছুই।
এটা বাজার সময় প্রণয় পুষ্পর বাহুতে ধরে নাচ করলো। তারপর হাটুঘেরে বসলো ঐ অংশটুকুর সময়,যখন বলছিল–
—” শুধু তুই,শুধু তুই আর চাইছিনা কিছুই…
মন…. তোর অলিতে গলিতে ঘুরে,
আর কুড়ায় অভিমান,
এই মন,তোর আকাশে বাতাসে খেলে,
গাই ঘুম পাড়ানোর গান…
মন…. তোর অলিতে গলিতে ঘুরে,
আর কুড়ায় অভিমান,
এই মন,তোর আকাশে বাতাসে খেলে,
গাই ঘুম পাড়ানোর গান…
মেঘলা হয়ে যাক,আরো পাঁচটা বারো মাস
কোনো বিকেল বেলাতে, তুই আমার হয়ে যাস….
শুধু তুই,শুধু তুই আর চাইছিনা কিছুই।
শুধু তুই, শুধু তুই আর চাইছিনা কিছুই।
নাচের শেষে প্রণয় পেছন থেকে হালকা করে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। দুজনেরি চোখ বন্ধ। কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে গেল। হঠাৎ লাইট জ্বলে উঠতেই দুজন চমকে তাকালো। সবাই হাততালি দিতে লাগলো। পুষ্প মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল। তখনি তন্নী স্টেজে উঠে পুষ্পকে এক ধাক্কা দিলো। আর বললো,
-” তুই তো শেষ পুষ্প!”
-” পুষ্প এতো মানুষের সামনে কিছু বলতে পারছেনা,আর নয়তো তন্নীকে দৌড়ানি শুরু করে দিতো এতোক্ষণে।
সবার খাওয়া দাওয়া প্রায় শেষ। পুষ্পকে একপাশে একা দাঁড়িয়েছিল। প্রণয় একটু অন্যদিকে গিয়েছিল কি কারনে। হঠাৎ পুষ্পর চিৎকার শুনে এদিকে ছুটে আসে। কিন্তু এসে দেখে পুষ্প মাটিতে পড়ে আছে। প্রণয় তাড়াতাড়ি ওকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে গেল। মুখে পানির ঝাপটা দিতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে তাকালো পুষ্প। তবে চোখেমুখে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রণয় কিছুই বুঝতে পারছেনা। হঠাৎ এমন হওয়ার কি মানে?
পুষ্প কি কাউকে দেখে ভয় পেয়েছে,কিন্তু কাকে?
প্রণয় পুষ্পকেই জিজ্ঞেস করলো,
-” তুমি কি কোন কারনে ভয় পাচ্ছো?
পুষ্প কোন কথা বলতে পারছেনা। প্রণয় একনাগাড়ে প্রশ্ন করে যাচ্ছে। হঠাৎ পুষ্পর একটা কথাতে সে সম্পূর্ণ স্তব্দ হয়ে গেল। মনে হচ্ছে পুষ্পর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে,অথবা ও কানে ভুল শুনেছে। কিংবা পুষ্প মজা করছে। কিন্তু পুষ্পর চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে না, সে মজা করার মত মুডে আছে। পুষ্প সবাইকে বিস্ময়ের চূড়ান্ত সীমানায় পৌঁছে দিয়ে বলে উঠলো,
-” এ বিয়ে হবে না…
#চলবে…