বাসন্তী
পর্ব- ৩২ ko
লেখা-লিমু
এনগেজমেন্ট এর ডেট ফিক্সড হলো পহেলা ফাল্গুন। গতবছরের যেদিনটাতে ওদের প্রথম দেখা হয়েছিল। অবশ্য ইন্টারেসটিং ব্যাপার হলো এ বছর পহেলা ফাল্গুন আর ভ্যালেনটাইন ডে একই দিনে। তাও আবার শুক্রবারে। নিব্বা-নিব্বিদের কপাল খারাপ,স্কুল কলেজ বন্ধ।
সেটা নিয়ে কলি প্রিয়মকে বেশ খেপালো। কারন প্রিয়ম আগের সিনিয়র আপুর সাথে কবেই ব্রেকআপ করেছে। এখন ক্লাস সেভেনের এক মেয়ে নাকি ওকে প্রপোজ করেছে। এবং বরাবরের মতোই প্রপোজ এক্সেপ্ট করে উদার মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন তিনি। কলির মাথায় আসেনা,এটা কোন ধরনের উদারতা। কয়েকদিন ঘোরাঘুরি করে ব্রেকআপ। মানে ব্রেকআপ করাটাও একটা ফ্যাশন এদের কাছে।
একরাশ বিরক্তি নিয়ে ছাদের দিকে যাচ্ছিল কলি। সিঁড়িতে প্রিয়মের সাথে দেখা। কলি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে,প্রিয়ম পথ আগলে দাঁড়ায়। সেটা দেখে কলি চোখ কুঁচকে তাকায়।
-” প্রিয়ম ভ্রু নাচায়। সেটা দেখে কলিও ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-” কি সমস্যা? ”
-” নাথিং। নাথিং এট অল।
-” তাহলে রাস্তা আটকেছেন কেন?
-” আরে এতো মুড নিচ্ছো কেন? কয়েকদিন ধরেই খেয়াল করছি বিষয়টা।
-” মুড নিবো কেন? আর কি খেয়াল করছেন?
-” এই যে আমাকে দেখলেই কেমন এড়িয়ে চলো,মুখটা হনুমানের মত করে রাখো।
-” আপনাকে এড়িয়ে চলবো কোন কারনে?
-” সেটা তো তুমিই ভালো জানো। আমার মনে হলো তাই বললাম।
-” আপনার মনে হওয়া নিয়ে আপনি বসে থাকেন,আমার এতো ঠেকা পরে নাই।
-” তাই না।
-” হুহ।
-” ওকে যাও তাহলে। কলি চলে যেতে নিয়ে আবার সামনে আসলো। তারপর বললো,
-” আপনার গফ আসছে তো ভ্যালেনটাইন সেলিব্রেট করতে? মানে শুক্রবার বলে কথা। নাকি ঐ ট্রিকস শিখিয়ে দিয়েছেন, যে স্পেশাল ক্লাস আছে বা শুক্রবারেও প্রাইভেট আছে?
—” প্রিয়ম বেশ মনোযোগ সহকারে কলিকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। কেমন যেন অন্যরকম লাগছে কলিকে। তাই কলির কথা খেয়াল করে শুনেনি। হঠাৎ কলির ডাকে সংবিত ফিরে পেলো। তারপর বললো,
-” কিছু বলছিলে?
-” মানে! এতোক্ষণ কি বললাম কিছু শুনেন নাই?
-” নাহ।
-” গুড।
-” হু?
-” বাই। কলি ছাদে চলে গেল। প্রিয়ম পিছু যেতে নিয়েও, কি জানি ভেবে আবার গেল না।
ভ্যালেনটাইনের দিনই যেহেতু এনগেজমেন্ট, তাই প্রিয়মের বাইরে যাওয়ার কোন চান্স নেই। কিন্তু ওর পিচ্চি গফ সেটা বুঝতে নারাজ। অগত্যা প্রিয়ম তাকে এনগেজমেন্টে ইনভাইট করলো। এতো মানুষের মাঝে কেউ নিশ্চয়ই খেয়াল করবে না। অন্যদিকে ওর গফ ভাবছে প্রিয়ম সবার সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দিবে। অল্পবয়সী মেয়েদের তো সবকিছুতেই প্রচুর ফ্যান্টাসি কাজ করে। তবে প্রিয়ম এই পিচ্চি গফকে নিয়ে একটু টেনশনে আছে। কারন পিচ্চি হলে কি হবে,খুব চালু মেয়ে। ঐদিন আবার কোন ঝামেলা পাকিয়ে ফেলে কিনা, সেটাই টেনশনের কারন।
প্রিয়মের লাস্ট প্রোফাইলটা দেখে সে নাকি ক্রাশ খেয়েছে। তারপর প্রিয়মের প্রোফাইল ঘেটে সব ছবিতে সমানে লাভ রিএক্ট দিয়ে যাচ্ছে। মেসেজ রিকুয়েষ্ট দিয়ে ভরে ফেলেছে। প্রিয়ম ইগনোর করছিলো, কারন বার্থ ডেট। এতো পিচ্চি মেয়েদের সে পাত্তা দেয় না। তবে আজকালের স্কুল পড়ুয়া মেয়েগুলো আগের দিনের ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েদের থেকেও চালু। আর এ বয়সের মেয়েদের মাথায় কখন কি চলে,তা বুঝা কঠিন। আবেগ তাড়িত হয়ে যেকোন কাজ করে বসে। তাই প্রিয়ম যদিও তাকে ফ্রেন্ড হিসেবে নিয়েছে,কিন্তু মেয়ে তার সব বান্ধবীদের কাছে বলে বেড়াচ্ছে প্রিয়ম তার বয়ফ্রেন্ড। কলি একদিন ওদের একসাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে দেখেছে। মেয়েটা প্রিয়মকে জোর করে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছিল। কলি পাশ কেটে চলে এসেছে,তাই প্রিয়ম দেখতে পায়নি।
কলি ভেবে পায়না,এই মানুষটা কাপড় চোপড় চেঞ্জ করার মতো গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করে। কলির অসম্ভব বিরক্ত লাগে এটা দেখে। একটা মানুষ এমন করবে কেন!”
যদি সত্যি কাউকে ভালো লাগে,তাহলে তাকেই লাইফ পার্টনার করে নিক। তা না, তার কাছে গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করাটাও ফ্যান্টাসি। আর মেয়েগুলোও হ্যান্ডসাম,চাপ দাঁড়িওয়ালা ছেলে দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্রাশ খাওয়া শুরু করে আজকাল। আর সেদিক থেকে প্রিয়ম ক্রাশ খাওয়ার মতোই ছেলে। কিন্তু সে নিজ থেকে কাউকে প্রপোজ করে না। এটিচিউড দেখলে কলির কচু গাছের সাথে ফাঁস লাগতে মন চায়। পরে আবার ভাবে,যা খুশি করুক তাতে আমার কি। আমি আমার সময় কেন নষ্ট করছি ঐ সাদা ভাল্লুকের কথা ভেবে।
এনগেজমেন্ট এর শপিং করার জন্য পাপড়ি পুষ্পকে সাথে নিয়ে শপিং এ গেলেন। প্রণয় যেতে চাইলে বললেন,
—” তোর পছন্দের উপর যদি আমার ভরসা থাকে, তাহলে আমার পছন্দের উপর তোর ভরসা নেই নাকি?”
পাপড়ি এমন,এক কথাতেই কাজ শেষ। অগত্যা প্রণয়ের আর যাওয়া হলো না। প্রিয়মকে আর কলিকে সাথে নিলেন। রাস্তায় প্রিয়ম গাড়ির লুকিং গ্লাসে পিছনে কলির দিকে বেশ কয়েকবার তাকালো,কিন্তু কলি সেটা টেরই পেল না। বোনের সাথে চুটিয়ে আলাপ করছে। প্রিয়ম একগাল হাসলো কলির বকবকানি শুনে। একদম প্রথম দিনের মতো বকবক করছে। অবশ্য তাকে এরকমই মানায়। হঠাৎ পুষ্পর চোখ পড়লো প্রিয়মের দিকে,দেখে মুচকি হাসছে। কিন্তু অকারনে হাসার কারন খুঁজে পেল না। পুষ্প বিষয়টাকে এতোটা পাত্তা দিলো না। এমনি কোন কথা মনে হয়ে হয়তো হাসছে। হয়না অনেকসময় এমন। আগের কোন কথা মনে পড়ে হাসি আসে।
কলি তখনও বকবক করেই যাচ্ছে।
শপিং মলের সামনে গাড়ি থামলো। সবাই নেমে শাড়ির দোকানে ঢুকলো। পাপড়ি একটা সবুজ কাতান শাড়ি কিনলো পুষ্পর জন্য। এর সাথে ম্যাচিং করে জুয়েলারি।
পুষ্প আরেকটা শাড়ি হাতে নিয়ে দেখছিলো,সেটা অফ হোয়াইট কালারের। পাপড়ি তখন অন্য দোকানে চলে গেছেন। পুষ্প যে পিছনে পড়ে গেছে খেয়াল করে নি,ভেবেছে সাথেই আছে। সেই ফাকে প্রণয় পুষ্পকে টান দিয়ে অন্যদিকে নিয়ে গেল। পুষ্প চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,
-” আপনি এখানে কি করছেন?
-” বউটাকে দেখতে এসেছি।
-” বউ হয় নি এখনো, ওকে।
-” হতে কতক্ষণ। এটা বলে প্রণয় দুষ্টু হাসি দিল।
-” পুষ্প বললো,হুহ ঢং।
-” প্রণয় বললো,হুহ ঢংগী।
-” পুষ্প চোখ কটমট করে তাকালো। সেটা দেখে প্রণয় ফ্লাইং কিস ছুড়লো। পুষ্প এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো,কেউ দেখেছে কিনা। প্রণয় এক কর্ণারেই নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, তাই কেউ দেখতে পায় নি। পুষ্প একটা হাফ ছাড়লো। পুষ্পর অবস্থা দেখে প্রণয় বেশ মজা পাচ্ছে। আর পুষ্প রাগে ফুঁসছে।
প্রণয় জিজ্ঞেস করলো,কি কি কিনেছো?
-” আমার কেনা শেষ। এখন সবার জন্য কেনা হবে।
-” হুম,বুঝলাম। চলো।
-” কোথায়?
-” কাজী অফিসে।
-” কিহ!”
-” শুনো নাই,কি বলেছি?
-” না,আমার কানে প্রবলেম দেখা দিচ্ছে।
-” কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করলেই ঠিক হয়ে যাবে।
-” মাথা নষ্ট হয়ে গেছে আপনার। আমি নিশ্চিত।
-” তা তো একটু হয়েছে বটেই। তবে বিয়ে করলেই ঠিক হয়ে যাবে।
-” কি তখন থেকে বিয়ে বিয়ে করছেন,আর বলছেন বিয়ে করলে আমার কান ঠিক হয়ে যাবে,আপনার মাথা ঠিক হয়ে যাবে। পাবনা কি সিট বুক দিতে হবে?
-” আপাতত যেখানে বলি,সেখানে চলো। পাবনা বিয়ের পরে এমনি যেতে হবে,বউয়ের প্যারায়।
-” কিহ!”
-” কিহ না,জিইইই….
পুষ্প আর কিছু বলার আগেই প্রণয় ওকে অন্য একটা দোকানে নিয়ে গেল। অরনামেন্টের দোকান। প্রণয় পুষ্পকে টিকলি পছন্দ করতে বললো। পুষ্প বললো,
-” আরে এনগেজমেন্টে টিকলি পরে কে?
-” আমার বউ। প্রণয়ের ছোট্ট জবাব।
-” পুষ্প বললো,এতো যে বউ বউ করছেন,যদি বিয়ে না করি?
-” সে সুযোগ আর আপনাকে দেওয়া হচ্ছেনা মহারানী। আর যেন আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে না পারেন,সে ব্যবস্থায় পাকাপোক্ত ভাবে করবো। অনেক ঘুরিয়েছেন,আর না।
—” পুষ্প হেসে দিল এ কথা শুনে। তারপর বললো,
কি আর এমন ঘুরিয়েছি। ঘুরানো কি জিনিস,সেটাতো বিয়ের পর টের পাবেন।
-” আচ্ছা সে দেখা যাবে। আগে বিয়েটা তো হোক খালাম্মা।
-” কিহ, আমি খালাম্মা। তাহলে আপনি বুইড়া দাদা।
-” কোন এংগেল থেকে আমাকে তোমার বুইড়া দাদা লাগে?
-” তাহলে আমাকে কি খালাম্মা লাগে?
-” তা তো কুড়ি যখন পার করে ফেলেছো,একটু খালাম্মা খালাম্মা তো লাগেই। পুষ্প রাগে প্রণয়কে মারতে যাবে,কিন্তু তার আগে দোকানের একটা লোক ওদের কাছে চলে আসে। তাই পুষ্পও চুপ হয়ে দাঁড়ালো।
একটা সবুজ আর গোল্ডেন স্টোনের টিকলি কিনলো। পুষ্প বুঝতে পারলনা,প্রণয় কি করে বুঝলো যে ওরা টিকলি কিনে নি? তার মানে কি প্রণয় ওদের ফলো করছিলো শুরু থেকেই?
প্রণয়ের ডাকে পুষ্পর ঘোর কাটলো।
-” আজ্ঞে চলুন মেডাম। না হলে আপনার শ্বাশুড়ী আমাকে কথা শুনাতে একচুল ছাড়বে না। আর আপনাদের আগেই আমাকে বাসায় পৌঁছাতে হবে। প্রণয় তড়িঘড়ি করে চলে গেল। পুষ্প একটু এগুতে গিয়েই দেখে সবাই এদিকেই আসছে। পাপড়ি ধমকে বললেন,একা কোথায় গিয়েছিলে?
-” কোথাও না তো,এখানেই দেখছিলাম
-” তোমার হাতে কি ঐটা?
-” কই, কি-কিছুনা তো।
পাপড়ি আড়চোখে পুষ্পকে দেখলেন। কিছুতো লুকাচ্ছে পুষ্প। পুষ্পও পাপড়ির তাকানো দেখে ভয়ে চুপসে যাচ্ছে।
বাসায় ফিরতেই দেখলেন প্রণয় ড্রয়িংরুমে টিভি চালিয়ে বসে আছে। ওদেরকে দেখেই প্রণয় বলে উঠলো,
-” ওয়াও লেডিস,এতো দ্রুত শপিং শেষ?
-” পাপড়ি বললেন,তো আমরা কি মার্কেট সবটা নিয়ে আসবো নাকি যে,সারাদিন লাগবে?
-” তাও বটে। এটা বলে প্রণয় হাসার চেষ্টা করলো। পাপড়িও হালকা হাসলেন। তবে পুষ্প চুপ হয়ে আছে একদম। সেটা অবশ্য প্রণয়ের চোখ এড়ালো না।
প্রণয় চোখের ইশারায় পুষ্পর সাথে কথা বলতে লাগলো। পাপড়ি পানি খেতে খেতে বললেন,
-” কয়েক ঘন্টার জন্যই তো ফুল বাইরে ছিল,এতো চোখে হারানোর কি আছে?
এটা শুনে প্রণয় বিষম খেয়ে গেল।
-” পাপড়ি বললেন,
পানি খাচ্ছি আমি,আর বিষম খাচ্ছিস তুই। ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে লাগছে। কি লুকাচ্ছিস আমার কাছ থেকে বলতো?
-” পুষ্পর হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। প্রণয় বললো,আরে কি আবার লুকাবো। তোমাদের মেয়েদের সবকিছুতেই সন্দেহ।
-” সন্দেহ জনক কিছু পেলে তবে তো সন্দেহ করবোই,তাই না আব্বাজান?
-” প্রণয় কিছু না বলে হতাশ চোখে তাকালো পাপড়ির দিকে।
-” কিহ, তুই বিয়ে করে ফেলছিস? আমাকে সিংগেল রেখে তুই একা বিয়ে করে নিতে পারলি? কেমন স্বার্থপর বান্ধবী রে তুই।
-” হয়েছে,তোর নটাংকী শেষ হয়েছে?
-” এখনতো আমার কথা ভালো লাগবেই না। জানি জানি,বান্ধবীর বিয়ে হয়ে যাওয়া মানে অর্ধেক অধিকার শেষ।
-” হু বলছে তোর কাছে। আর বিয়ে কোথায়, এনগেজমেন্ট।
-” ঐ একই কথা। বিয়ের সিড়ির অর্ধেক ধাপে উঠে যাবি এনগেজমেন্ট এর পর। আমাকে তো ভুলেই যাবি,যেই হ্যান্ডসাম বর পাচ্ছিস। আমার জন্যও একটা খুঁজে দেনা রে। হ্যান্ডসাম না হয়ে পেটুসাম হলেও চলবে।
-” পুষ্প হতাশ গলায় বললো,এই পেটুসাম জিনিসটা আবার কি?
-” আরে যে ছেলে আমার মত পেটুক,সে পেটুসাম। আমি হলাম পেটুসুন্দরী,তাই আমারটা তো পেটুসামই লাগবে। এরকম একটা ছেলে খুঁজে দেনা,যে সপ্তাহে পার্কে ঘুরতে না নিয়ে গেলেও, অন্তত বিরিয়ানী খাওয়াতে নিয়ে যাবে।
-” পুষ্প কি বলবে ভেবে পেল না। এই তন্নী,আর বিরিয়ানী দুইটা আলাদা করা অসম্ভব। নামটাও কেমন বিরিয়ানীর সাথে মিল। পুষ্প তন্নীকে শুক্রবারে সকালে আসার কথা বলে ফোন রেখে দিল। এই মেয়ে না হয় পুষ্পর মাথা খারাপ করে দিবে এখন। এমনি মাথা ধরেছে প্রচন্ড।
দু’দিন আছে এংগেজমেন্টের। প্রণয়,প্রিয়ম,কলি আর পুষ্প সবাই একসাথে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। হঠাৎ পুষ্প চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
-” না না না।
-” এখানে তোমার নানা আসলো কোথা থেকে?
-” পুষ্প রেগে তাকালো। প্রণয় চুপসে গেল। তখন কিছুক্ষণ চুপ থেকে পুষ্প বলে উঠলো,আমার দ্বারা এসব কাপোল ডান্স-ফান্স হবে না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন সবাই।
প্রণয় বললো,আমিও তো ডান্স তেমন একটা পারিনা। কাপোল ডান্সের প্লানটা বাদ দে না ভাই।
-” নো চান্স। এতো কিউট একটা কাপোল, তারা ডান্স না করলে প্রোগ্রামটাই ফানসে লাগবে। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণই তো কাপোল ডান্স। প্রণয় পুষ্প দুজনি মানা করছে,কিন্তু প্রিয়ম আর কলির জেদের কাছে অবশেষে দুজন হার মানলো। প্রণয় বললো,ওকে ডান্স করবো। তবে বাংলা গানে,ম্যাডাম বাংলা সাহিত্যের স্টুডেন্ট বলে কথা। হিন্দি গানে নাচলে উনার সাহিত্যের অবমাননা হবে। পুষ্প অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো,প্রণয় সেটা দেখেও না দেখার ভান করলো।
প্রণয়ের রুমটাই ঠিক করা হলো ডান্স রিহার্সালের জন্য। ওর রুমটা বেশ বড়ো,মাঝখানে অনেকটা স্পেস আছে। পুষ্প না চাইতেও মুখ ভার করে চললো।
প্রণয় পুষ্পর পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছিল। পুষ্পকে আস্তে করে বললো,আচ্ছা তুমি ঠিক কি কারনে নাচতে মানা করছো বলো তো? নাচ পারোনা সেজন্য, নাকি অন্যকিছু?
-” পুষ্প কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
-” আরে এভাবে তাকানোর কি আছে? আমি বলতে চাইছিলাম যে তোমার কি আমার প্রতি কোন ভরসা নেই? আমি এতোটাও বাজে নয়। আমার একটা পার্সোনালিটি আছে না।
-” আসছে আমার পার্সোনালিটির জাহাজ রে…
-” তুমিই খালি দাম দিলা না,আর সবাই ঠিকই দেয়।
-” আহারে!”
-” সবি কপাল। কপালের নাম গোপাল। যদি না থাকে নসিবে,কান্দিলে কি আর কেউ দাম দিবে!”
-” পুষ্প মিটি মিটি হাসছিলো প্রণয়ের কথা শুনে।
-” জীবনে কোনদিন নাচো নাই? প্রণয় বিরক্ত নিয়ে বললো। আর পুষ্প রাগে চলে যেতে নিল এটা শুনে। তখন প্রণয়ই আবার হাত ধরে টান দিয়ে আটকালো। এতো রাগ কিসের শুনি? পুষ্প মুখ ভোতা করে নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হুট করে প্রণয় একটা ছবি তুলে নিলো। মোবাইলের ফ্লাশ জলতেই, পুষ্প চোখ তুলে তাকালো। তখনি ছবিটা তুললো। পুষ্প কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এতো ইরিটিটিং করে না। একটা ডান্স স্টেপ করতে গিয়ে পুষ্প নিচে পড়ে গিয়েছিল,তাই প্রণয় ঐ কথাটা বলে ধমক দেয়। আর তাতেই পুষ্প রেগে লাল টমেটো হয়ে গেছে। একটা ভিডিও দেখে দেখে ওরা ডান্স প্র্যাকটিস করছে। কিন্তু স্টেপ মিলাতে পারছেনা ওরা। দুজনি হতাশ হয়ে বসে পড়লো। তখন প্রিয়ম বলে উঠলো,
দুইদিন সময় আছে,এর মধ্যে কমপ্লিট করতে হবে এট এনি কস্ট। প্রণয় বললো,
আমার দ্বারা হবে না,এই বেগুনির সাথে ডান্স।
-” পুষ্প পানি খাচ্ছিল,প্রণয়ের কথা শুনে গ্লাসের অবশিষ্ট পানিটুকু ওর মুখ ছুড়ে মারলো। সবাই হতভম্ব!”
কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করে,কলি আর প্রিয়ম হেসে উঠলো। প্রণয় অসহায়ের মতো পুষ্পর দিকে তাকিয়ে আছে,আর পুষ্প অন্যদিকে। তখন প্রিয়ম বললো,আচ্ছা তোমরা একটু রেস্ট নাও। আমি আর কলি বরং একটু স্টেপগুলো তোমাদের সরাসরি করে দেখায়। শুনেছি উনি নাকি ডান্স চ্যাম্পিয়ন,তা দেখি কেমন স্টেপ মিলাতে পারে। প্রিয়ম জানে এটা বললে কলি নিশ্চিত রাজি হবে,তাই এই টুপ ব্যবহার করলো।
ওদের দুজনের নাচ দেখে প্রণয় হা করে তাকিয়ে রইলো,মানে দুজন পার্ফেক্ট ডান্সার। প্রথমবারেই স্টেপ মিলিয়ে ফেললো। পুষ্পও বেশ অবাক হলো। অবশ্য জানে যে কলি নাচ পারে। তবে কাপোল ডান্স এতো ভালো পারে,সেটা জানা ছিলো না। নাচ শেষে কলি কিছুটা অসস্তি বোধ করতে লাগলো,সাথে প্রিয়মও। কলি অন্য রুমে চলে গেল,মাথা কেমন করছে বলে। প্রিয়মও বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর ওদের বললো,আজকের মত এতটুকুই থাক। আগামীকাল কমপ্লিট করতে হবে। এটা বলে প্রিয়মও ওর রুমে চলে গেল।
প্রণয় আর পুষ্প দুজনি হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
তবে ওদের দুজনকে নিয়ে পুষ্পর একটু চিন্তা হচ্ছে। জানে কলি ওর চেয়েও অনেক স্ট্রং একটা মেয়ে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে স্ট্রং মেয়েরাই আগে দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রিয়মের সাথে একটু আলাদা কথা বলতে হবে। যদিও দুজন সারাক্ষণ ঝগড়া লেগে থাকে,তবে আজকে নাচের সময় একটু অন্যরকম লাগছিলো দুজনকেই। আর সেটাই পুষ্পকে ভাবাচ্ছে। প্রিয়মের ব্যাপারে পুষ্প মোটামুটি সব জানে,ওর মন স্থির নয়। তাই পুষ্প চাইনা ওর বোন কোনভাবে কষ্ট পাক। তাই আগেই বিষয়টা সর্ট আউট করতে হবে।
#চলবে……