বাসন্তী
পর্ব-১৬
#লিমু

——” কিছু মানুষ হুট করে এসে আমাদের হৃদয়ের সবটা দখল করে নেয়,অথবা তার জন্যই হয়তো এতোদিন হৃদয় শূন্য ছিল। হৃদয় ঠিকই তার শূন্যতা পূরন করে নেয়,সঠিক সময়ে, সঠিক শব্দ দ্বারা। আর আমার জীবনের সেই সঠিক শব্দটা হলো বাসন্তী। হ্যা, আমার বাসন্তী। যে একটা ঝড়ের মতো আমার জীবনে এসে,আমার মনের রাজ্যে ঝড় তুলেছে। সেই ঝড়,যে ঝড়ে কেবল হৃদয় পোড়ে।

-” হৃদয় পোড়ার গন্ধ আর কেউ বুঝতে পারে না,তবে যার জন্য পুড়ে সে হয়তো কিছুটা বুঝে। অথবা কখনো বুঝেনা বা বুঝেও বুঝতে চায় না। মানব হৃদয় যে বড়ই অদ্ভুত,আর রমণীর হৃদয় তারচেয়েও অদ্ভুত।

-” আচ্ছা সেও কি অন্য রমণীদের মতোই হবে?” কথায় কথায় আমাকে শাসাবে,অভিমানে গাল ফুলাবে। আর একটু ভালোবাসা পেলেই গলে যাবে।”

-” নাহ…..সে তো মায়াচন্ডী এতো সহজে গলবেনা। তাতে কি, আমিও কম না। সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নয় এই প্রণয় মেহবুব।
-” নামেই যার ভালোবাসা প্রকাশ পায়,সে কি ভালোবাসার যুদ্ধে সহজে হাল ছেড়ে দিবে,কখনোই না। সে তার বাসন্তীকে ঠিকই জয় করে নিবে,হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে।

-” মিস আফরা পুষ্প গেট রেডি টু বিকাম মিসেস মেহবুব,মিসেস পুষ্প মেহবুব।
~ ৩রা মে ২০১৯।

-” ডায়রিতে ডেটটা লিখে ডায়রিটা বুকের উপর নিয়ে চার হাত পা চারদিকে মেলে শুয়ে পড়লো প্রণয়। কেমন একটা অস্থিরতা লাগছে, অদ্ভুত একটা অনুভূতি।
যেদিন ওকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিনের অনুভূতির চেয়েও আজকেরটা স্পেশাল।
সেদিন হয়তো শুধু মনে ঝড় উঠেছিল কিন্তুু আজ মন,শরীর দুটোই অবাধ্য আচরণ করছে। খুব ইচ্ছে করছে মায়াচন্ডীর হাতটা একটু ধরতে,যার হাত ধরে বাকীটা জীবন কাটাবো।

-” আচ্ছা পুষ্প তো নিজের মুখে কিছু বলেনি,আমিই কি বেশি ভেবে ফেলছি?

-” নাহ…ওর লজ্জামিশ্রিত হাসিতো অন্তত সেটা বলে না। হয়তো ভালোবাসতে চায়,কিন্তুু কোথাও যেন একটা ভয় ওর মনে। ওর চোখের দিকে যতবার প্রণয় তাকিয়েছে, একটা নিষ্পাপ ভীতহরিণীর চোখ পড়েছে প্রণয়ের। পুষ্প কখনোই ওর চোখে চোখ রাখতে পারে না,আজকে যাও এক মুহুর্তের জন্য তাকিয়েছিল কিন্তুু সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিয়েছে।

অথচ ঐ একটু তাকানোই প্রণয়ের হৃদয়ের কাঁপন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে।

—–“একপলকের একটু দেখা
——“সে কি জানে?
——“খুন হয়ে যায় এই হৃদয়,
——“খুঁজে ভালোবাসার মানে।”

-“হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। প্রণয় বললো,

——-” হ্যা বল।

-” ফোন রাখার পর, প্রণয়ের মুখে একটু চিন্তার রেখা দেখা দিল। তারপর ফোন রেখে গিটারটা নিয়ে ব্যালকুনিতে গিয়ে বসলো। কেমন যেন একটা অনুভূতি,আচ্ছা এটা কি পাওয়ার নাকি হারানোর ভয়ের অনুভূতি!

কাউকে ভালোবাসলে কি তাকে হারানোর ভয়টা অটোমেটিকলি কাজ করে যায়।
গিটারের টুং টাং শব্দের সাথে একটা গানের বেশ কয়েকটা লাইন গাইলো,

—–“শোনো মেয়ে…..
—-“কাজল কভু পরো না চোখে,
—–“এলো চুলে এসো না কাছে,
—–“আমি হুঁশ হারাবো…..
—–“ও ও ও আমি ডুবে যাবো।
—–“শুধু তোমাতে,শুধু তোমাতে,
—–” এই আমি, আমাকে হারাবো।”
——–” শোনো মেয়ে……….

-” একটা টিউশনি শেষ করে আরেকটাতে যাচ্ছিল পুষ্প। খুব বেশি দূরে নয়,তাই হেটেই যাচ্ছিল। আজকাল তো আমরা হাটতে ভুলে গেছি। পুষ্পর মাঝে মাঝে মনে হয়,আগের দিনের মানুষ বেশিদিন বাঁচতো হয়তো নিয়মিত হাঁটার কারনে। কারন তখনতো আর যানবাহন ছিল না তেমন,আর মানুষ অনেক বেশি কর্মঠ ছিল। আর এখনতো আমরা পাঁচটাকার পথও হাঁটতে রাজি নয়।
-” পথে একটা ফুলের দোকানের পাশে থমকে দাঁড়ায় পুষ্প। কেউ একজন ঠিক ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে,তবে মুখটা দেখা যাচ্ছে না। মুখের সামনে একটা সাদা গোলাপের বুকে ধরা,তাই মুখটা দেখতে পারছেনা পুষ্প। পুষ্পর কেন যেন মনে হচ্ছে মানুষটাকে সে চিনে, পুষ্পর হার্টবিট বাড়ছে দ্রুতগতিতে।

-” মুখের সামনে থেকে বুকেটা সরে যাওয়ার সাথে সাথে পুষ্প বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।

-” হোয়াইট শার্ট,ব্লু ব্লেজার, ব্লু জিন্স চোখে সানগ্লাসটাও ব্লু। চুল স্পাইক করা,হাতে হোয়াইট আর ব্লু কম্বিনেশনের একটা ব্রেসলেট। পুষ্পর থেকে কয়েক হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে সে। এই প্রথম মনে হয় কোন ছেলেকে দেখে পুষ্পর চোখ অবাধ্যের মতো বারবার দেখতে চাইছে। অথচ থাকে যে আজকে প্রথমবার দেখছে এমনটা নয়।

-” নাকি আমরা যখন কাউকে নিয়ে বিশেষভাবে ভাবি, তখন তার সবকিছুই বিশেষ লাগে। হয়তো তার সাধারণ কোন জিনিসও তখন অসাধারন লাগতে শুরু করে। এটাই কি তবে ভালোবাসা,ভালোবাসার জাদু। পুষ্প চোখ বন্ধ করে ফেললো,ওর সব হিসেব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। ভেতর বাহির সব এলোমেলো লাগছে। এ কোন ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে সে। এ যে ভয়ানক ব্যাধি,সহজে মুক্তি নেই এর থেকে। তবু মানুষ জেনে বুঝে এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়।

-” ভালোবাসা এমন এক ব্যাধি,যার প্রতিষেধকও ভালোবাসা।”
কেউ ভালোবাসায় মরে,কেউ ভালোবেসে মরে।

-” পুষ্প চোখ খুললো,দেখে ওর সামনে কেউ নেই। এটা কি হলো!
পুষ্প কি তবে দিবাস্বপ্ন দেখছিল,তাও এ মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে। পুষ্প একটু ভালোভাবে আশেপাশে দেখে নিল,নাহ কেউ নেই। তারমানে সবটাই তার মনের ভুল,কিন্তুু এমনটা ভাবার কি মানে?
পুষ্প কি তার অবচেতন মনে তার কথা ভাবছিল!
অনেক সময় এমন হয় আমরা কোনকিছু না ভাবলেও, আমাদের মনের কোন একটা অংশ কিছু নিয়ে ভাবতে থাকে, যেটা আমরা টেরও পায় না। বা কোন কিছু নিয়ে ভাবতে চায় না,তবু ভাবনা এসে যায়।

-” পুষ্প নিজের মাথায় একটা গাট্টা মেরে আবার হাটা শুরু করলো। লোকে ঠিকই বলে প্রেমে পড়লে কল্পনা বেড়ে যায়। এটা বলে পুষ্প নিজেই অবাক হলো। কি হলো ওর,এসব কি বলছে ও। নিজের আয়ত্বের বাইরের কোন জিনিস পাওয়ার স্বপ্ন দেখাটা তো মধ্যবিত্তদের জন্য পাপ। আর পুষ্প সেটা ভালো করে জানে। মানুষ বলে বয়সের সাথে সাথে নাকি ম্যাচিওরিটি আসে,কিন্তুু পুষ্পর ধারণা জীবনে হোচট খেতে খেতে ম্যাচিওরিটি আসে। সেটা যদি অল্প বয়সেই খাই,তবে তখনই আসবে। আর জীবন মানে কি,সেটার সঠিক সংজ্ঞা মধ্যবিত্তরাই জানে।

-” এই গানটা বিশেষ কারো জন্য,জানিনা সে শুনবে কিনা। তবে আমার ভালোবাসাটুকু সবটা সেই বিশেষ মানুষের জন্য,যে আমার শূন্য হৃদয় পুরোপুরি রেজিস্ট্রি করে দখল করতে চলেছে খুব শীগ্রই। আমার হৃদয়ে তার প্রতিচ্ছবি আঁকা হয়ে গেছে ঐদিনই,যেদিন বাসন্তী হয়ে রং ছড়িয়েছিল আমার হৃদমাঝারে। আর সেই হৃদমাঝারে তাকে রাখতে চায় খুব যতনে,ভালোবাসায়।
ভালোবাসলে তো একটু যত্ন করতে হয়, তাই না।

-” সেই বিশেষ মানুষটা কে তা কি আমরা জানতে পারি,মানে আপনার ফ্যানস রা?

-” নিশ্চয়ই,তবে সঠিক সময়ে সবাই জানবে।

-” ওকে। কিন্তুু আপনার ফিমেল ফ্যান ফলোয়ার তো কমে যাবে এটা জানার পর।

-” নেভার,ইফ দে লাভ মি দ্যান দে উইল ফরগেট মি, বাট ইফ দে লাভ মাই মিউজিক দ্যান দে উইল নেভার ফরগেট মি।

-” ইয়াহ,ইউ আর রাইট। সো আমরা এখন কোন গানটা শুনবো?

-” কুমার বিশ্বজিৎ স্যারের একটা বিখ্যাত গান গাইতে চাচ্ছি,আমার সেই স্পেশাল মানুষটিকে ডেডিকেট করে।

-” তার নামটা কি আমরা জানতে পারি?

-” ওকে,বাট এখনি বলতে চাচ্ছি না। সাসপেন্স রাখা ভালো,কৌতুহল বাড়ে। তবে আমার দেওয়া নামটা বলতে পারি,যদি শুনতে চান।

-” সিউর,হোয়াই নট।

-” বাসন্তী।”

-” নাইস নেম।

-” থ্যাংকস।

-” সো ভিউয়ার্স লেটস এনজয় দ্যা সং।

-” ও ডাক্তার….
-” আপনি যখন করবেন আমার
ওপেন হার্ট সার্জারি,
দেখবেন হার্টের মাঝখানে এক
মেয়ে রূপসী ভারি
ছুরি, কাঁচির খুঁচা
তার যেন না লাগে,
আমার বাঁচা মরা পরে,
তার জীবনটা আগে…
ও ডাক্তার….

-” কলি টিভির ভলিউমটা বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক আগেই। কারন ও জানতো প্রণয় আজকে একটা টেলিভিশনের প্রোগ্রামে লাইভে আসবে ওর গ্রুপসহ। পুষ্প ঘুমিয়ে পড়েছিল,কলি অনেক চেষ্টা করেছিল পুষ্পকে সজাগ রাখার। কিন্তুু এ মেয়ে দশটা বাজতেই ঘুমিয়ে পড়ে। আর এদিকে লাইভ শুরুই হবে এগারটায়।

-” কলি মনে মনে ভাবছে ইস বু তোমাকে কত্ত ভালোবাসে ভাইয়া,একেবারে লাইভে সরাসরি বলে দিল তোমার কথা। যদিও নাম বলেনি কিন্তুু আমিতো জানি। সে আমার এই রোবটমার্কা বু টাকেই ভালোবাসে,এবং অনেক বেশিই ভালোবাসে। যারা সত্যিকার ভালোবাসে তাদের চোখ দেখলেই বুঝা যায়,কারন চোখ মিথ্যা বলে না কখনো।

-“ঐদিকে পুষ্প ঠিকই প্রণয়ের গলার স্বরটা শুনতে পেয়েই জেগে উঠে,যদিও হালকা ঘুমেই ছিলো। প্রণয়ের বলা কথাগুলো পুষ্পর মনে খুশির লহর বয়ে দিচ্ছিল। এক অন্যরকম ভালোলাগায় ডুবে যাচ্ছিল পুষ্প। সত্যিই কি সে এতটা চায় পুষ্পকে,নাকি সবটা মরিচিকা!
পুষ্প কি এতোটা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?

-” কিন্তুু মন যে ভালোবাসার পাখায় উড়ে উড়ে স্বপ্ন সাজাতে চায়। মনতো বাস্তব অবাস্তব বুঝতে চায় না,সে শুধুই ভালোবাসা চায়। কাউকে খুব করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে বাঁচতে চায়,পাড়ি দিতে চায় জীবন নামের পথটা।

আজকে কলির রেজাল্ট। এখনতো দুইমাসের মধ্যেই রেজাল্ট দিয়ে দেয়। পুষ্প সকালবেলায় বেরিয়ে গেছে। কলেজে কি জানি জরুরি ক্লাস আছে আজকে।
কলির রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা নেই একদম,বসে বসে কাপিল শর্মা শো দেখছে ফোনে। তার ফোন ভর্তি কাপিল শর্মা শো এর ভিডিও। সারাক্ষণ এগুলো দেখবে,আর হাসবে। একেকটা জোকস বলে বলে নিজেই হেসে গড়াগড়ি খাবে।

-” প্রণয় একটা এ্যাংড়ি মুড নিয়ে তাকিয়ে আছে প্রিয়মের দিকে। মনে হচ্ছে পারলে এখনি প্রিয়মকে কাদার মধ্যে ফেলে চুবাতো। প্রণয় বলতে লাগলো,”তুই তো আমার ভাই না রে,তুই হলি আমার শত্রু। কোন শত্রুও এমন করে না। তুই কি করে পারলি আমার সাথে এমনটা করতে?”

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here