বাসন্তী
পর্ব-১
#লিমু
-” চকলেট হিরো…. না সরি…মানে উনিই আমার সেই স্পেশাল গেস্ট। এটা বলেই কলি প্রণয়ের দিকে ইশারা করলো।
-” পুষ্পর মনে হচ্ছে ও কানে ভুল শুনছ,অথবা কলি ভুল কিছু বলছে।
ওর মনে হচ্ছে সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা লাগছে,হচ্ছেটা কি এখানে?
-“এই ত্রিপলি কলির স্পেশাল গেস্ট কি করে হয়,হাউ ইজ ইট পসিবল!
-” বড় কোন ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছে পুষ্প,আর এই ষড়যন্ত্রের রচয়িতা ওর সামনের দাঁড়িয়ে থাকা দুজন ব্যাক্তি। কিন্তুু কি সে ষড়যন্ত্র সেটা তো পুষ্প খুঁজে বের করবেই,আজ হোক বা কাল।
-” আপাতত এদের দুজনকে কিছুই বুঝতে দেয়া যাবে না,এমন বিহেভ করতে হবে যেন মনে হয় আমি কিছুই বুঝিনি। মানে ত্রিপলি এখানে আসতেই পারে,কলির স্পেশাল গেস্ট হতেই পারে,ইটস সিম্পল।
এখানে কোন জটিলতার কিছু নেই।
-” পুষ্প সম্পুর্ণ নরমালি প্রণয়কে সালাম দিল,যেটা দেখে কলি আর প্রণয় দুজনি ভ্যাবাচ্যাকা খেল। কারন একটু আগেও যে ভূত ভূত বলে চিৎকার করছিল,সে হঠাৎ করে এত নরমাল বিহেভ কি করে করছে, সেটা বোধগম্য হচ্ছে না ওদের দুজনের কারোই।
-” আসলে কলি পুষ্প ওকে ডাকছে শুনে ইচ্ছে করেই বাথরুমে ঢুকে গিয়েছিল,কারন ও জানতো প্রণয় নিচে এসে গেছিল। তাই এতক্ষণ ধরে এমনি বাথরুমে বসে ছিল। তবে ওর বোন যে এত গাধী,জলজ্যান্ত মানুষটাকে ভূত বানিয়ে দিল। একটু তো লজিক্যালি চিন্তা করবে,ঐ সাহিত্যের স্টুডেন্টদের এটাই সমস্যা। গল্প,উপন্যাস পড়ে পড়ে খালি ভূত ভূত করে।
-” কোথায় এতদিন পর হিরো কে দেখে খুশি হবে,কল্পনায় বিভোর হবে তা না তিনি ভূত ভূত শুরু করলেন। এই মেয়ের দ্বারা প্রেম হবে না, অন্তত আর যাই হোক।
-” পারবে শুধু জটিল জটিল উপন্যাস পড়তে। শরৎচন্দ্রের শেষ প্রশ্ন এর মতো জটিল বই আর নেই,এটার কাহিনী কিছুই বুঝতে পারিনা আমি। একবার নিছিলাম পড়তে,প্রথম পৃষ্ঠা আর শেষের পৃষ্ঠা পড়ে রেখে দিছি। এত কঠিন বই আমার দ্বারা পড়া হবে না,আর ঐ সাহিত্যের পোকা ঠিকই বইটা পড়ে ফেলেছে। ওর ধৈর্য আছে বলতে হবে। অবশ্য আমারও আছে,তবে তা রসায়নের সংকেত,যোজনী মনে রাখার ক্ষেত্রে। কলি এটা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আর পুষ্পর দিকে তাকালো।
-” পুষ্প একদম শান্ত স্বরে কলিকে বললো,তুই তোর গেস্টের সাথে বসে আলাপ কর, আমি রান্না শেষ করে আসি। কলি রোবটের মতো মাথা নাড়ালো পুষ্পর কথায়। পুষ্প আর কিছু না বলে চলে গেল রান্নাঘরে।
-” পুষ্প চলে যেতেই কলি বড় বড় চোখ করে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,কাহিনীটা কি হলো বলেনতো হিরো? এটা কি ঝড় আসার পূর্ভাবাস, মানে এত নীরবতা?
-“আমার না হজম হচ্ছে না বিষয়টা।”
-” প্রণয় সহজভাবে বললো,” মায়াচন্ডী ভীষণ বুদ্ধিমতী,আই লাইক ইট।
-” রাখেন আপনার লাইক ইট,এইটা রিয়েক্ট ইট এর যুগ।
-” মানে?”
-” ঐসব ফেসবুকের ভাষা বুঝবেন না,বাদ দিন।
-” পরীক্ষা শেষ তাই খুব নেট চালানো হয় তাই না?
-” তা তো হয়ই। এস এস সি পরই তো একটু রিলাক্স করা যায়,ইন্টারের পরতো ভার্সিটির জন্য যুদ্ধে নামতে হয়।
-” তা অবশ্য ঠিক বলেছো ফুলকলি।
-” এএএ….এসব পঁচা নাম বলবেন না।
-” ওমা,এটা পঁচা হবে কেন?
-” এটা পঁচাই।
-” কিন্তুু আমারতো এটাই ভালো লাগে।
-” তুমি ফুলকলি,আর তোমার মায়াচন্ডী বোন হলো ফুলবাসন্তী।”
-” আপনি কি নাম বিশারদ?
-” প্রণয় হো হো করে হেসে দিল। তারপর বললো, প্রেমে পড়লে মানুষ কত কিছু হয়,আমিও না হয় হলাম। তাও আবার নতুন কিছু,নাম বিশারদ, নট ব্যাড এট অল।
-” তা তো বুঝলাম,কিন্তুু আপনার প্রেমের চাকা তো আগাচ্ছেই না। ঢাকার বিখ্যাত ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়লো নাকি?
-” তুমি তো বেশ মজার কথা বলো।
-” সাইন্সের স্টুডেন্টরা মজার কথাই বলে,নিজেদের সুস্থ রাখতে।
-” মানে? এটার সাথে সুস্থ থাকার কি সম্পর্ক?
-” আরে সূত্র, সংকেত শিখতে শিখতে আমরা অসুস্থ হয়ে যায়,তাই মজার কথা বলে সুস্থ থাকি আর কি।
-” আচ্ছা তোমার প্রিয় সেলিব্রেটি কে?
-” কাপিল শর্মা।
-” সিরিয়াসলি?
-” হুম,অবাক হওয়ার কি আছে। যে মানুষকে হাসাতে পারে তার দাম কি কোন হিরোর চেয়ে কম নাকি। বরং বেশি,আর হাসাতে সবাই পারে না। কাপিল শর্মার শো দেখে অনেক ডিপ্রেশন রোগী ভালো হয়ে যাচ্ছে,এটা নিশ্চয়ই তার অনেক বড় এচিভম্যান্ট।
-” হু তা তো অবশ্যই। গুড চয়েস।
-” তা তোমার বোনটাকে একটু এগুলো দেখাতে পারো না, মায়াচন্ডী তো হাসতেই জানেনা। সবসময় সিরিয়াস মুখ করে থাকে। আচ্ছা ঘুমানোর সময়ও কি এমন সিরিয়াস মুখ করেই ঘুমায়?
-” প্রণয়ের কথায় যেন কলি ভাবনায় পড়লো। কিছুক্ষণ ভেবে বললো,আমিতো খেয়াল করিনি কখনো এভাবে। আজকে করবো।
-” কি বলো এতদিনেও বোনের সম্পর্কে এটা বলতে পারো না। আর আমাকে একবার বিয়েটা করতে দাও, তোমার বোনের গ্রহ,নক্ষত্র সব বলে দিতে পারবো।
-” কলি কেমন মুখ করে তাকালো প্রণয়ের দিকে। যেটা দেখে প্রনয় বললো,আরে এমন লুক দিচ্ছো কেন?
বলতে চেয়েছি আমি তোমার বোনের সবকিছু পর্যবেক্ষণ করবো। রাগ,অভিমান,জেদ আর….
-” থাক বাকীগুলো আপনার আর আমাকে বলতে হবে না। এখনো পটাতেই পারলেন না,আবার বিয়ের স্বপ্ন। একেই বলে গাছে কাঠাল,গোঁফে তেল।
.
-” পুষ্প স্পষ্ট ওদের দুজনের কথোপকথন শুনতে না পেলেও,হাসির শব্দ ঠিকই শুনতে পাচ্ছে। অবশ্য কলির হাসিটাই বেশি শুনা যাচ্ছে,রাক্ষসীর মতো বিকট শব্দ করে হাসে মেয়েটা। তার হাসির আড়ালে শ’খানেক মানুষের হাসি চাপা পড়বে,আর এ তো একজন।
-” কিন্তুু পুষ্পর মাথায় এটা কিছুতেই ঢুকছেনা, ওদের আচরণ এতো নরমাল মনে হচ্ছে কতদিনের জানি পরিচিত দুজন। কিন্তুু সেটা কি করে সম্ভব!
-” তারমানে কি ঐ ত্রিপলি কলিকে ফলো করেছে এ অবধি আসার জন্য?
-” আর কলি ম্যাডামতো আমাকে প্রেম করিয়ে বিয়ে দিতে পারলে মনে হয় বাঁচে,নিজের রাস্তা ক্লিয়ার করতে চাই।
ওকে তো আমি পরে দেখে নিবো,আপাতত আগে একে বিদায় করি।
-” এসব ভাবছিল আর পকোড়া ভাজছিল পুষ্প,তাও আবার কাচামরিচের পকোড়া। যারা খুব বেশি ঝাল খেতে ভালোবাসে তারাই শুধু এটা খেতে পারে। আর পুষ্পর ঝাল বেশি প্রিয়,টক মিষ্টির চেয়ে। তবে আজকে এটা ও ইচ্ছে করেই বানাচ্ছে এখন। কারন তখন কলি যখন বলেছিল যে,ওর পছন্দমত রান্না করার কথা,তখন কিছু মনে হয়নি পুষ্পর। কিন্তুু এখন সবটা জলের মতো পরিষ্কার পুষ্পর কাছে,কলির তো খবর আছে। এতো পাকনামি,চালাকি তাও আমার সাথে। ওর কানমলার ডোজ টা বাড়িয়ে দিতে হবে। তবেই ওর পাকনামি বন্ধ হবে।
.
-” সব রান্না শেষ করে পুষ্প খাবার টেবিলে পরিবেশন করছিল। ও প্রায় পাঁচ পদের ভর্তাই করলো,আগে দুই পদের করেছিল।
-” কিন্তুু অতিথি টা কে সেটা দেখে আরো তিন পদ যোগ করলো। টাকি মাছের ভর্তা,শিম আলু দিয়ে একসাথে ভর্তা, কেচকি শুটকির ভর্তা, সরিষা ভর্তা আর ডিম ভর্তা।
-” ঝাল না খেতে জানলে আজকে ত্রিপলির নাক মুখ দিয়ে একসাথে পানি পড়বে, এটা বলে পুষ্প চোখের সামনের চুল গুলো সরালো। আর বললো আমাকে নিয়ে আমার অজান্তে ষড়যন্ত্র,তার জন্য একটু স্পেশাল ট্রিট তো হওয়া চাই।
-” নতুন দেশি ছোট আলু দিয়ে খাসির মাংস রান্না করলো,আর কই মাছ ভাজি আর মসুর ডাল পাতলা করে।
-” সব রেখে পুষ্প কলিকে গিয়ে বললো,” তোর স্পেশাল গেস্ট তুই – ই খাবার পরিবেশন কর। আমি গোসলটা সেরে আসি। এটা শুনে প্রণয় খুব হতাশ হলো, কারন ও ভেবেছিল হয়তো পুষ্প সার্ভ করবে। কিন্তুু এই মায়াচন্ডীকে তো যতো ধরতে চাই,ততই সে আমার নাগালের বাইরে যেতে চাই। নাহ এভাবে হবে না,একে একেবারে বন্দি করতে হবে,তা না হলে এরকম উড়বেই শুধু,ধরা দিবে না মনের কুঠুরীতে। কিন্তুু আমিতো এত সহজে হেরে যাওয়ার পাত্র না,এটা বলে প্রণয় ওর কলার ঠিক করলো।
অতঃপর কলি বললো,” চলুন হিরো মহাশয়, আপনার কপালটাই খারাপ। প্রণয়ও এটা শুনে জোর করে হাসার ব্যর্থ চেষ্টা করলো।
.
-” পুষ্পর গোসল করতে বেশিক্ষন লাগে না,বড়জোর দশ মিনিট। ও গোসল থেকে বের হয়ে দেখে প্রণয় খাচ্ছে আর তার নাক মুখ লাল হয়ে আছে। পুষ্প লুকিয়ে দরজার ওপাশ থেকে সেটা দেখছিল,কিন্তুু তার ঝাল লাগছে তবু কেন এগুলোই খাচ্ছে পুষ্প বুঝতে পারলনা।
-” আর কলিও কিছু বলছেনা,শুধু চোখ বড় বড় করে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এবার পুষ্পর ঠিকই খারাপ লাগছে,ভর্তাগুলো আসলেই একটু বেশিই ঝাল ছিল। কিন্তুু পুষ্পরা তো এসব খেয়ে অভ্যস্ত। পুষ্প কি করবে বুঝতে না পেরে তাড়াহুড়ো করে ফ্রিজ থেকে নারকেল আর গাজরের যে বরফি বানিয়েছিল মিষ্টান্ন হিসেবে সেটা নিয়ে প্রণয়ের সামনে রাখলো। কিন্তুু প্রণয়ের অবস্থা এতটাই খারাপ যে,পুষ্পর এবার ভয় লেগে গেল। কারন যারা ঝাল খেতে পারে না,তারা হঠাৎ করে খেলে অসুস্থও হয়ে যেতে পারে।
-” পুষ্প আগ পিছ কিছু না ভেবে বরফির এক টুকরো প্রণয়ের মুখের সামনে ধরলো। প্রণয় বিস্ময়ে হা করে তাকিয়ে রইলো পুষ্পর দিকে,আর এটা দেখে কলি চুপচাপ কেটে পড়লো সেখান থেকে। আর দূরে গিয়ে ফোন সাইলেন্ট করে টুপ করে একটা ছবি তুলে নিলো ঐ দৃশ্যটার। কারন একজন আরেকজনের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। এই মোমেন্টটা ক্যামেরাবন্দি না করলে সেটা খুবই বেমানান হতো।
#চলবে……