বাসন্তী
পর্ব-০৭
লিমু

-” কিভাবে আমার রুমটা চিনলো,ম্যাজিক জানে নাকি,আজব!
আর চাইছে টা কি সে?
এভাবে আমার পিছন পিছন ঘুরলেই আমি পটে যাবে,সে গুড়েবালি। এই টাইপ ছেলেদেরকে আমি জাস্ট নিতে পারে না। একটা মেয়েকে হেনস্তা করে যে এরা কি মজা পায় বুঝে আসে না। অথচ এটা তো আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য নিত্য দিনের ঘটনা।

-” এসব ভাবছিল আর টিউশনি শেষ করে কলেজের দিকে যাচ্ছিল,হেটেই যাচ্ছিল। কারন টিউশনির প্লেস টা থেকে কলেজ খুব বেশি দূরে নয়,ঠিকমতো হাটলে বড়জোর দশ মিনিট লাগে। আর পুষ্প যখন একা হাটে তখন ডান বাম না তাকিয়ে সর্বোচ্চ স্পিডে হাটে।
আর যদি সাথে তন্নী থাকে তাহলে গল্প করে করে হাঁটতে সময় লাগে। তন্নীদের বাসা কলেজের একদম কাছেই।

-” এসব ভেবে ভেবে হাঁটছিল পুষ্প আর অনেক্ষণ যাবৎ খেয়াল করছে অনেক দূর থেকে একটা গাড়ি ওকে ফলো করছে। প্রথমে বিষয়টা পাত্তা দেয় নি পুষ্প,কিন্তুু এবার ভাবাচ্ছে।

-” হুট করেই পুষ্প একটা বাসার গেটের ভিতর ঢুকে গেল। গেটের ফাঁক দিয়ে লুকিয়ে দেখছিল গাড়িটা কোথায় যায়। গাড়িটাও ঠিক ঐ গেটের সামনেই থেমে গেল,এবং একজন খাম্বা আকারের লোক নেমে এলো গাড়ি থেকে। আর এই খাম্বাটা যে কে সেটা চিনতে পুষ্পর দুইবার ভাবতে হলো। লেডি আইনস্টাইন কালকে আমাকে বললো যে,এ নাকি আমাকে ফলো করছেনা। মন চাইছে এখন ওকে এনে দেখায়,তাহলে এই খাম্বাটা কে দাঁড়িয়ে আছে এখানে। কিন্তুু আমি কখন বাসা থেকে বের হয়,বা টিউশনি কোথায় সেটা জানলো কি করে? খাম্বা কি আমার পিছনে স্পাই লাগিয়েছে নাকি!
লাগাতেও পারে,দেখেতো মনে হচ্ছে কোন বড়লোকের দুলাল,তা এভাবে একটা মিডল ক্লাস মেয়ের পিছনে ঘুরার কি মানে?
-” টাইমপাস করার জন্য?

-” এই পুষ্প টাইমপাসের মেয়ে নয়,আর যদি টাইমপাস করতেই হয় তাহলে সেটা নিজের বরের সাথে করবো।

-” প্রণয় গেইটের কাছাকাছি এসে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল,ঠিক তখনি পুষ্প গেইট খুলে বেরিয়ে আসে। হঠাৎ গেইট খুলায় প্রণয় একটু হকচকিয়ে যায়,আর পুষ্প আবার একহাত কোমড়ে দিয়ে প্রণয়ের সামনে দাঁড়ালো একটা মুডি লুক নিয়ে।
-” প্রণয় একটা বোকা বোকা হাসি হাসি ভাব করে হাত নাড়তে থাকলো।
-” পুষ্প সরাসরি বললো,” এখানে কি?
-” নাথিং,নাথিং এট অল। প্রণয় কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ওর মাথার ভিতর সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে,কারন এভাবে পুষ্পর হাতে ধরা খাবে বুঝতে পারে নি। ও যে ফলো করছিল সেটা যে পুষ্প টের পেয়ে এ কাজটা করেছে তা বুঝতে পারে নি। মায়াচন্ডীর ব্রেইন মনে হচ্ছে শার্প আছে একদম,কিন্তুু এখন কি বলে বেরুবো এখান থেকে।

-” তখনি পুষ্প আবার বললো,আপনি কি ভেবেছেন এভাবে বখাটে পোলাপানের মত আমার পিছনে ঘুরলেই আমি পটে যাবো?
-” আরে তোমরা মেয়েরা কি বলোতো?
-” পুষ্প ভ্রু কুচকে বললো, মানে?
-” আরে তোমাদের পিছনে ঘুরলে বলো বখাটে,না ঘুরলে বলো ডিমান্ড দেখায়,তা আমরা ছেলেরা করবো কোনটা শুনি?
-” পুষ্প এ কথা শুনে বললো,এত ঘুরতে হয় কেন আপনাদের?
কে বলছে ঘুরতে?
আমি বলছি আপনাকে আমার পিছনে ঘুরার জন্য,আমাকে পাহারা দেয়ার জন্য?
বলি নাই তো,তাহলে?
-” আরে না ঘুরলে বুঝবে কি করে আমি তোমাকে পছন্দ করি?
-” আমি পছন্দ করিনা,হয়েছে?
এবার ফুটুন এখান থেকে।
-” আরে বললেই হলো পছন্দ করো না। এভাবে হুট করেই কাউকে পছন্দ হয় নাকি,সময় লাগে তো। তুমিও সময় নাও,যতখুশি। কিন্তুু উত্তরটা যেন পজিটিভই আসে।
-” ওয়েট…..ওয়েট। কি বললেন আবার বলুন।
-” কি বলবো?
-” একটু আগে যেটা বললেন।
-” কি উত্তরটা যেন পজিটিভ আসে?
-” তার আগের কথাটা।
-” মনে নেই,তুমিই বলো।
-” বলছি তার আগে এইটা বলেন,আপনি আমাকে হঠাৎ তুমি করে বলছেন কেন? আমি আপনার কোন জন্মের বউ লাগি?
-” এটা শুনে প্রণয় চোখ মুখ ভর্তি খুশি নিয়ে থাকালো পুষ্পর দিকে,পুষ্প খুশি হওয়ার মতো কি বললো সেটা ও ভেবে পাচ্ছে না।
-” ঠিক তখনি প্রণয় বলে উঠলো,আরে আমিতো তোমাকে গার্লফ্রেন্ড ভেবে তুমি বলছিলাম। কিন্তুু তুমিতো আমার চেয়েও ফার্স্ট,এটা বলে প্রণয় ভ্রু নাচালো পুষ্পর চোখে তাকিয়ে।
-” পুষ্পর মাথা রাগে হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। প্রণয়কে বললো,আমি কি ফার্স্ট কাজটা করেছি জানতে পারি?
-” আরে তুমি সরাসরি বউ বলে দাবী করলে নিজেকে। আসলে আমারই ভুল হয়েছে, বউ ভাবলে যে ফিলিংসটা আসে,সেটা গার্লফ্রেন্ড ভাবলে কখনোই আসে না।
-” এবার পুষ্পর চূড়ান্ত রাগ উঠে গেল আর মনে মনে একশো কোটি বকা দিল প্রণয়কে। খাম্বা,অসভ্য,লুইচ্চা কোথাকার।
এটা বলে পুষ্প চলে যেতে নিল,কিন্তুু আজকেও প্রণয় পুষ্পর সাথে সাথে হাঁটছিল। পুষ্প সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ না করে, প্রণয়কে কোন পাত্তা না দিয়ে একদম কলেজের গেটে ঢুকে গেল। প্রণয়ের কোন কথার জবাবই পুষ্প দিলো না,উফফ মেয়েটা এত জেদী। আর আমার কেন যেন ঐ জিদটাই ভালো লাগে,এটা ভেবে প্রণয় হাসলো। প্রণয় চোখে সানগ্লাসটা লাগিয়ে গেটের সামনে থেকে চলে যাচ্ছিল,যদিও এটা ছেলেমেয়ের মিলিত কলেজ।
তবে ভিতরে যাওয়াটা নিরাপদ মনে করলো না প্রণয়,কারন পুষ্পকে কোন ভরসা নেই। দেখা যাবে বখাটে পরিচয় দিয়ে বন্ধুদের দিয়ে মাইর খাওয়াবে,তার চেয়ে রিস্ক না নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
.

-” কলেজ শেষে বাইরে বেরিয়ে পুষ্প এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল,তন্নী বলে উঠলো কি রে কি হয়েছে?
কাউকে খুঁজছিস নাকি?
-” নাহ….হু।
-” এসব কি পুষ্প,নাহ, হু। ঠিক করে বল কি হয়েছে,কাকে খুঁজছিস?

-“খাম্বা কে।
-” হোয়াট!
-” পুষ্প বললো কি হয়েছে?
-” খাম্বাটা আবার কে? খাম্বা কে খুঁজছিস মানে? টিউশনি করে করে তোর মাথাটা কি সবটা গেছে , কি সব বলছিস।
-” আরে মাথা ঠিক আছে,দুই তিনটা টিউশনি করে কারো মাথা নষ্ট হয় না।
-” তাহলে দয়া করে বলুন খাম্বাটা কে?
-” ত্রিপলি।
-” মানে!
-” ঐ ত্রিপলিই খাম্বা।
-” তন্নী হতবাক হয়ে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে রইলো। তখন পুষ্প কাল থেকে সবটা তন্নীকে খুলে বললো। সবটা শুনে তন্নীর রিএকশান দেখে পুষ্পর মন চাইছিল তন্নীর মুখে কতটা তিতা করলার রস খাওয়িয়ে দিতে।
-” কারন তন্নী প্রথমে একটু হা করলো,তারপর যখন রাতের ঘটনাটা বললো, তখন ইয়া বড় করে হা করলো।
ইস রে পুষ্প তোর ভাগ্যটা কি ভালো রে,এরকম একটু কুল,হ্যান্ডসাম ছেলে তোকে প্রপোজ করেছে।
আর আমাকে দেখ,আমার ওয়েট দেখেই বুঝে যায় ছেলেরে যে, এ বিরিয়ানী খেয়ে খেয়েই ফকির বানিয়ে দিবে, সেই ভয়ে একটা ছেলেও প্রপোজ করে না।

-” তন্নীর কথা শুনে পুষ্প হাসবে না দুঃখ প্রকাশ করবে ভেবে পেল না। প্রপোজ করার সাথে বিরিয়ানীর কি কানেকশান থাকতে পারে,সেটা পুষ্পর ধারণার বাইরে।

.

-” সন্ধ্যার টিউশনিটা শেষ করে পুষ্প বের হলো মাত্র,রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। কারন এমন সময় হেটে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ, আর রাস্তায়ও মানুষ আজেবাজে কথা বলে। দিনে যতটা না কথা শুনতে হয়,রাতে একা হাঁটতে গেলে একটা মেয়েকে দ্বিগুণ কথা শুনতে হয়। অথচ কোন মেয়ে শখ করে রাতে বাইরে বেরোয় না,অন্তত মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েরা তো নয়ই।

-” তাদেরকে প্রয়োজনই বাইরে বের হতে হয়,তবু পাড়া প্রতিবেশীরা বাজে কথা শোনাতে একচুল ছাড়ে না। আসলে কিছু মানুষ পৃথিবীতে আসেই বোধহয় মানুষের নামে মিথ্যা বদনাম রটাতে। কি শান্তি যে পায় এরা এমনটা করে তারাই জানে।

-” হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন পুষ্পর হাত ধরে টান মারলো,পুষ্প একদম ভয়ে কুকড়ে গেল।

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here