বাসন্তী
পর্ব-০৪
লিমু

____ ” ছেলেরা যে নিজেদেরকে কি মনে করে আজকাল। দেখলাম আর প্রেমে পড়ে গেলাম,ছ্যাচড়া মেন্টালিটি।
আরে একটা মানুষকে জানতে বুঝতে তো টাইম লাগে নাকি?
-” কথা নেই, বার্তা নেই,হুট করে আই লাভ ইউ বলে দিল। মানে আমি ভাত খায়, আই ইট রাইস এটা ট্রান্সলেট করা যেমন সহজ, ঠিক তাদের জন্যও মেয়ে দেখলেই আই লাভ ইউ বলাও সহজ। সবাইকে একরকম মনে করে এরা।

-” এতক্ষণ পুষ্প একা একাই এই বকবক গুলো করছিল। হঠাৎ কলি প্রশ্ন করলো,প্রথম দেখাতেই তোমাকে আই লাভ ইউ বলে দিল,এত সাহস!
কলি পুষ্পর ছোট বোন,এস এস সি পরীক্ষা দিচ্ছে এবার।
-” কলির প্রশ্ন শুনে পুষ্প বললো,এগুলা সাহস না বুঝলি, এগুলো হলো ফাজলামি।
চূড়ান্ত রকমের ফাজলামি।

-” আসলে এরা মেয়েদেরকে বাজিয়ে দেখে,যদি মেয়েটা সহজে রাজি হয়ে যায় তাহলে দু’দিন পরে আর এদের ভালো লাগেনা। আবার যদি না হয়, তাহলে ছ্যাচড়ার মত পিছে ঘুরবে,এটাই এদের স্বভাব।
-” ছেলেটা দেখতে কেমন ছিল বুবু?
-” সেটা জেনে তোর কি?
-” নাহ বলো না কেমন?
-” কি জানি কেমন,আমি খেয়াল করেছি নাকি। আমার এতো আজাইরা শখ নাই তোর মত ছেলেদের খুঁটিয়ে দেখার।

-” তুমি এত নীরস কেন বুবু?
-” কারন জীবনটা এমনি,তুই ছোট এখন বুঝবিনা। আরো বড় হ তখন বুঝবি,তখন আর চকোলেট বয় দেখেই পাগল হয়ে যাবি না।
-” তার মানে কি ছেলেটা চকোলেট বয় ছিল?
-” পুষ্প কলির কথার উত্তর না দিয়ে কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
-” কলিও কাঁথার ভিতর ঢুকে বলতে শুরু করলো,বলো না শাহেদ কাপুরের মত চকোলেট বয় ছিল নাকি?
-” কলি চুপ যা,এত পাকনা পাকনা কথা শিখেছিস কোথা থেকে? আর সারাদিন এত শাহেদ কাপুর কাপুর করোস কেন,জানিস না তার বিয়ে হয়ে গেছে, বাচ্চাও আছে।
-” দূর বু,তাতে কি হয়েছে। হি ইজ স্টিল ইয়াং এন্ড চকোলেট বয়। আর এখনো লাখো মেয়ের ক্রাশ সে,কি যেন আছে ওর চেহারাটায়।
-” তুই তোর ক্রাশ নিয়ে থাক,আমি ঘুমালাম। আর কোন কথা না,হয় পড়তে বস, না হয় চুপচাপ ঘুমা। কালকে পরীক্ষা আছে না,কি পরীক্ষা?
-” ইসলাম শিক্ষা। এটা আমার সব কমপ্লিটই আছে,নো টেনশন।
-” হুম,বুঝলাম। তাও আরো ভালো করে রিভিশন দে গিয়ে, আমার মাথা ধরছে ঘুমাবো।
-” কলি আর কথা না বলে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়তে বসে গেল,মাত্র দশটা বাজে। আরো কিছুক্ষণ নৈর্ব্যক্তিক গুলো রিভিশন দিয়ে নিক,কারন সৃজনশীল প্রশ্নের ক্ষেত্রে বহুনির্বাচনী প্রশ্নগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বহুনির্বাচনী প্রশ্নে ভালো করলে,লিখিত মোটামুটি হলেও রেজাল্ট ভালোই আসে। আর বহুনির্বাচনী প্রশ্নগুলো ভালো করে পড়লে, জ্ঞানমূলক প্রশ্নও কমন পড়ে সহজেই।

.

-” ভোরে ঘুম থেকে উঠে ব্যালকুনিতে গিয়ে দাঁড়ালো পুষ্প। তিনতলা বাসাটার দুইতলায় ভাড়া থাকে ওরা। ওর মা, ছোট ভাই কবির,ছোট বোন কলি আর ও এই চারজনের পরিবার। বাবা নেই,অনেক বছর আগেই গত হয়েছেন। বাবার কথা মনে হলেই পুষ্পর মুড অফ হয়ে যায়। যে মানুষটা ওদের কে এভাবে রাস্তায় ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেলো। একবার পরিবারের কথা ভাবলনা,তার কথা ভেবে পুষ্প মন খারাপ করতে চায় না। জীবনে সমস্যা আসলে তার মোকাবেলা করতে জানতে হয়,পালিয়ে গেলে কোন সমাধান হয় না।
যারা সমস্যা দেখে পালিয়ে বেড়ায়,তারা ভীতু,নির্বোধ।

-” পুষ্প একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাইরে রাস্তাটার দিকে তাকালো,চারদিকে রোদের আলো চিকচিক করছে। মানুষজন নিজেদের কাজে ব্যস্তভাবে ছুটে চলছে,ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে।

-” হঠাৎ একটা গাড়ির দিকে চোখ আটকে গেল পুষ্পর,গাড়িটা চেনা চেনা লাগছে।
প্রায় ছয়ফুট দেহের একটা লোক কানে ফোন চেপে রেখে কথা বলছে,আর হাতে কি যেন কাগজ। কিন্তুু মুখটা দেখা যাচ্ছে না,তবে পিছন থেকে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। পুষ্প সেদিকে আর পাত্তা না দিয়ে রুমে আসছিল,তখন কবির ছুটে এসে ওকে জাপটে ধরলো।
-” বুবু বাইরে চলো, সামনের দোকান থেকে ভাপা পিঠা খাবো।

-” ঐদিন না আম্মু ঘরে ভাপা পিঠা বানালো,তখন তো খাস নাই। শুধু বাইরের গুলো খেতে মজা লাগে তাই না।
-” কবির কিছু বললো না,সরাসরি চোর হাতেনাতে ধরা পড়ে গেছে মনে হয়। মানে বাইরের জিনিসটা ঠিকই খাবে কিন্তুু সেটাই ঘরে বানিয়ে দিলে খাবে না।
-” কবিরের মুখটা দেখে পুষ্পর হাসি পেলো কিন্তুু হাসি চেপে রেখে বললো, ” আচ্ছা চল। আজকে আমিও বাইরে গিয়েই খাবো। ওদের বাসার সামনেই একজন মহিলা ভাপা পিঠা আর চিতই পিঠা বানায়। ইদানিংকালে শীতের সময় বেশ চলে এই ব্যবসা,মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
আর পড়বেই বা না কেন?
এখন কার মেয়ে,বউরা কি আর আগের মত এইসব পিঠা বানায়। বিদেশী রেসিপির আড়ালে হারাতে বসেছে নিজের দেশীয় ঐতিহ্য।

-” পুষ্প নিচে নেমে দোকানীর কাছে গিয়ে দেখে মাত্র কয়েক পিস পিঠা অবশিষ্ট আছে। একদম ভোরে উঠে বানানো শুরু করে এরা,রোদ উঠার পর পরই বিক্রি করে চলে যায়।
-” পুষ্প দোকানী খালাকে বললো তিনটা ভাপা পিঠা আর তিনটা চিতই পিঠা দেয়ার জন্য।
পুষ্প ঐখানে দাঁড়িয়েই একটু চ্যাপা ভর্তা নিয়ে চিতই পিঠা মুখে পুরলো। কিন্তুু মুখে দিয়েই হা হু করতে শুরু করলো। ভর্তাটা মনে হয় অনেক বেশিই ঝাল ছিল,পুষ্প যে পানি চাইবে সেটাও বলতে পারছিলনা।
শুধু হাত নাড়াচ্ছিল একনাগাড়ে, হঠাৎ একটা পানির বোতল ওর সামনে দেখে সাথে সাথে বোতলের মুখ খুলে গড়গড় করে কতটা পানি খেয়ে নিল। তবুও ঝাল কমছেনা,আসলে পানি খেলেই ঝাল সাথে সাথে কমে না।
-” কতক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখে পুষ্প চোখ খুলার আগে ভাবলো,ওকে পানির বোতলটা কে দিল?
দোকানী খালা তো দেয় নি,আর কবির বেঞ্চিতে বসে বসে খাচ্ছে,তাহলে!
এসব ভাবতে ভাবতে পিছনে তাকিয়েই পুষ্পর চোখ ইয়া বড় বড় হয়ে গেল।
-” আপনি আমাকে ফলো করে বাসা অব্দি পৌঁছে গেছেন,এত ছ্যাচড়া মানুষ তো আমি আর দুইটা দেখিনি।
একজন সিংগার হিসেবে তো অন্তত নিজের ওয়েট বজায় রেখে চলবেন,এত ফালতুমি করার কোন মানে হয়।
-” বক্তব্য শেষ হয়েছে?
-” আমার কথাগুলো আপনার কাছে বক্তব্য মনে হয়েছে? এটা বলে পুষ্প একহাত কোমড়ে রেখে দাঁড়ালো প্রণয়ের সামনে।
-” আর প্রণয়,সে তো পুষ্পকে দেখায় ব্যস্ত। পুষ্পর চুল এলোমেলো হয়ে মুখের সামনে পড়ে আছে,যদিও পুষ্পর মাথায় কাপড় দেয়া। কিন্তুু সামনের চুলগুলো বোধহয় কাটা,তাই অবাধ্য আচরণ করছে। চুলগুলো হয়তো বলছে,আমাদের কেটে ছোট করা হয়েছে না,তাই আমরা এভাবে নাকে মুখে পড়ে থেকে আন্দোলন করবো।

-” এটা ভেবে প্রণয় ফিক করে হেসে দিল,যেটা দেখে পুষ্পর গা জ্বালা করছিল।
পুষ্প দোকানীকে টাকা দিয়ে রাগে চলে যাচ্ছিল।
তখন প্রণয় বললো,” মন তো দিবাই না আমার পানির বোতলটা ফেরত দিয়া যাও তাইলে।
-” পুষ্প ওর হাতে বোতলটার দিকে তাকালো,ইচ্ছে তো করছিল রাস্তায় ফেলে দিতে কিন্তুু পরক্ষণে মত পাল্টালো। কারন যেহেতু ওর প্রয়োজনে পানির বোতলটা দিয়েছিল,তাই সেটা ফেরত দেয়াই উচিত।
তবে এভাবেও কেউ পানির বোতল ফেরত চাইতে পারে সেটা পুষ্পর জানা ছিল না।
পানির বোতলটা প্রণয়ের হাতে দিতে গেলে,হুট করে প্রণয় পুষ্পর কপালে যে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়েছিল,তা ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিল। পুষ্প সম্পুর্ণ জমে গেল এ কাজে।

-” আকস্মিক এমন কিছু করবে তা পুষ্পর ভাবনার বাইরে ছিল,কোনরকমে বোতলটা ফেরত দিয়ে কবিরের হাত ধরে টেনে নিয়ে ভেতরে চলে গেল। এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে মানুষ নানান কথা বলতে শুরু করবে।
-” পেছন থেকে শুনতে পেল প্রণয় বলছে,আমি কিন্তুু আপনাকে ফলো করে এখানে আসিনি,অন্য কাজে এসেছিলাম।
আমার সৌভাগ্যই হোক আর আপনার দুর্ভাগ্য দেখাটা হয়ে গেল। পুষ্প আর কোন উত্তর দিল না,সোজা গেটের ভেতর ঢুকে গেল। আর প্রণয় এই সুবাদে বাসাটা চিনে গেল।
কিন্তুু আজকেও নামটা জানা হলো না,আর নাম জিজ্ঞেস করলে কি জানি বলে কে জানে। মেয়েতো নয় যেন আগুন! অথচ দেখলে মনে হয় শুভ্র মেঘের মতো কোমল।

প্রণয় একবার ভাবলো দোকানীকে জিজ্ঞেস করবে নাম,পরে আবার ভাবলো নাহ। মায়াচন্ডীর মুখ থেকেই নাম শুনবো আমি,তার আগে না হয় আমিই একটা নাম দেয় তার,বাসন্তী।”
-” হুম বাসন্তী,যে আমার জীবনে বসন্তে বসন্ত নিয়ে এসেছে। আমি জানিনা এভাবে হুট করে ভালোবাসা হয় কিনা, কিন্তুু জীবনের আটাশটা বসন্ত কেটে গেছে।
কখনো তো কারো জন্য এমন অনুভূতি হয় নি। কাল সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি,শুধু তার মুখটা চোখে ভাসছিল। ইচ্ছে করছিল শুধু তাকে নিয়ে ভাবতে,এটা কোন রোগ!
-“ভালোবাস কি এমনি,হুট করে এসে লুট করে নেয় সর্বস্ব!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here