পর্ব ৬
সব রাতের সৌন্দর্যকে কি উপমা দিয়ে বিশেষায়িত করা যায়? হয়তো যায়, কেবল এই একটি রাত্রি ছাড়া। ব্যাখ্যা দিতে গেলে যে রাতের উপমা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যে রাতটি অন্যসব স্বাভাবিক রাতের মতই সন্ধ্যা বয়ে আনে, নিস্তব্ধতায় পূঁযপূর্ণ হয়। সবার কাছেই সাধারণ একটি রাত, খাবার খেয়ে প্রতিদিনকার মতই নিদ্রাযাপন। কেবল দুটি মানুষের কাছে এ রাতের অর্থ আলাদা। যাদের হৃদয়ে আজ সুখের অনুরণন। দেহে প্রেমের জোয়ার। উতলা মনে অচেনা প্রেমের শিহরণ দোল খায়, আন্দোলিত করে সমস্ত ইন্দ্রিয়। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্তগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে প্রেমে পড়ার মুহুর্ত। যেজন একবার প্রেমে পড়েছে, সেই জানে এর অনুভূতির শক্তি কতটা ধারালো। ঠিকমতো বসা যায় না, শোয়া যায় না, শ্বাস গ্রহণ করা যায় না। অস্থির অস্থির লাগে। কোথাও একটা পলকা অনুভূতি হয়, একটা নিবিড় শিহরণ। এই অনুভূতি গুলোর প্রবাহে একটা সাধারণ রাত্রিও জীবনের অন্য সব রাত্রির চেয়ে অনন্যসুলভ মনে হয়।
অম্লানের গরম নিশ্বাসে নীলাক্ষীর শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে। মধুমিলনের স্পর্শে দুটো হৃদয় আরো কাছাকাছি চলে আসে। দুটো শরীরে জাগে আকম্পন অনুভূতি। একজন আরেকজনের এত কাছে আসতে চায়, যত কাছে এলে আর দূরে মনে হবে না। নীলাক্ষী আবিষ্কার করে পুরুষ শরীরের নতুন কিছু অধ্যায়। যার সবটাই ছিল ওর অচেনা। আঙুলের ফাঁকে আঙুল রাখার পর বুকের মধ্যিখানে ঢিপঢিপ করে, ওর বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরার মুহুর্তটা এত বেশি মধুর লাগে যে নীলাক্ষীর চোখ আনন্দে ছলছল করে। নিবিড় আলিঙ্গনে নীলাক্ষীকে সুখের ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে যায় অম্লান। অমরায় প্রবেশের সাথে সাথে দুজনের মনে হয়, পৃথিবীতে এরচেয়ে সুখ আর কোনোকিছুতে থাকতে পারে না। স্ত্রী শরীরের প্রত্যেকটা ভাঁজে ভাঁজে পরম সুখ, দ্য হেভেন।
বাদামী সংসার
মিশু মনি
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে আমজাদ সাহেব যখন বাইরে বের হন, ‘সু র্যাক’ এ রাখা নীলাক্ষীর জুতা দেখে ওনার বুকটা হু হু করে ওঠে। দরজার বাইরে পড়ে আছে নীলাক্ষীর স্যান্ডেল। সবকিছু আগের মত আছে, শুধু ঘরে নীলাক্ষী নেই। একটা মন খারাপ ভাব মুহুর্তেই ঘিরে ধরে ওনাকে। প্রতিদিন সকালে উঠে ‘মা নীলা, উঠে নামাজ পড়ে আবার ঘুমাস’ কথাটা না বললে যেন ওনার সকাল শুরু হতো না। বারবার ড্রয়িংরুমে ঘুরে ঘুরে মেয়েকে ভোরবেলা ঘুম থেকে ডেকে তুলতেন। নীলাক্ষীর ঘর থেকে ‘উঠছি আব্বু’ কথাটা শোনার পরও ওনার চিল্লাচিল্লি থামতো না। নীলাক্ষীর বাথরুম থেকে ওযু করার শব্দ শোনা গেলে আমজাদ সাহেব হাসতেন, আর ডাকতেন না মেয়েকে। নীলাক্ষী নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়তো। সকালের নাস্তা খাওয়ার সময় শুরু হতো মায়ের চিল্লাচিল্লি। মেয়েটা চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে ঘুম থেকে উঠে আসতো। বলতো, ‘আমার সাথে না চিল্লাইলে তোমার হয় না? একটু ঘুমাইতে দিবা না?’ নীলিমা বেগম মেয়ের কথা শুনে রেগে বলতেন, ‘কাম কাজ নাই, সারা রাত মোবাইল টিপবে আর দুপুর পর্যন্ত ঘুমাবে।’
সবকিছু ভাবতে ভাবতে আমজাদ সাহেবের বুকটা খালি খালি লাগে। মেয়েটা নিশ্চয় আজকে তারাতাড়ি উঠবে। আজ কারো ডাকার প্রয়োজনও হবে না। নিজ দায়িত্বে উঠে যাবে। চোখেমুখে বিরক্তি থাকলেও কাউকে দেখাতে পারবে না। মায়ের উপর রাগ ঝাড়তে পারবে না। উঠেই চলে যাবে রান্নাঘরে। কত দায়িত্ব এখন ওর! পারবে তো মেয়েটা সবার মন যুগিয়ে চলতে? বড্ড চিন্তা হয় বাবা মায়ের।
নীলাক্ষীর ঘুম কিন্তু ভোরবেলা ভাঙলো না। বেলা প্রায় সাড়ে আট টায় বড় ভাবির ডাকে আচমকা ঘুম ভেঙে যায় নীলাক্ষীর। ও চোখ পিটপিট করে এদিক সেদিক তাকায়। নতুন বাড়িঘর, সবকিছু নতুন। নীলাক্ষী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হা হয়ে যায়। সবাই কি ভাবছে কে জানে। ভোরে এলার্ম দিয়ে শোয়ার পরও ঘুম ভাঙেনি। কি বিশ্রী ব্যাপার।
ভাবি অনবরত ডেকেই যাচ্ছে। নীলাক্ষী তারাহুরো করে উঠে শাড়ি ঠিক করে। আয়নায় তাকিয়ে লজ্জা লাগে ওর। মধুরাতের পর কি লজ্জাময়ী দেখাচ্ছে তাকে! দরজা খুলতেও সাহস পাচ্ছে না। কি জানি পাঁচ সাতজন দরজায় দাঁড়িয়ে আছে কি না।
অম্লান বললো, ‘তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি দরজা খুলছি।’
– ‘আপনি কখন উঠেছেন?’
– ‘এইমাত্র। ঘুম হয় নি।’
– ‘তাহলে ঘুমান।’
অম্লান বিছানা থেকে বললো, ‘ভাবি একটু পরে ডাকো।’
দরজার ওপাশ থেকে চাচাতো বোনদের খিলখিল হাসির শব্দ শোনা গেলো। ভাবি বললো, ‘বাপু তোদেরকে না ডাকলে তোরা আজ সারাদিনে দরজা খুলবি না এ আমার জানা আছে। ওঠ ওঠ।’
অম্লান বললো, ‘আমার ঘর, আমার বউ। আমি চৌদ্দদিন দরজা খুলবো না। তোমার কি?’
– ‘ভাই বউ পেয়ে ভাবিকে ভুলে গেলি। থাকবে, সব মনে থাকবে।’
– ‘বউ পুরনো হয়ে গেলে আবার ভাবিকে স্মরণ করবো। এখন একটু পরে ডাকো। আমার বউ ফ্রেশ হইতে গেছে।’
নীলাক্ষী মুখ টিপে হাসে। বাথরুমের আয়নায় নিজেকে দেখে বড় ভালো লাগে ওর। কেমন অন্যরকম দেখাচ্ছে। লজ্জাবতী লতার অঙ্গ ছুঁয়ে লজ্জার রক্তিম আভা ছড়িয়েছে। আপন মনেই হাসে ও। কোনো এক অজানা কারণে মন ভীষণ ফুরফুরে। প্রাঁণচঁচল লাগছে। অম্লানকে এখন মোটেও অপরিচিত মনে হচ্ছে না। যেন কত চেনা, কত আপন একটা মানুষ।
নীলাক্ষী বাইরে আসার পর ওর মনে হচ্ছিল কয়েক জোড়া চোখ ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মুরুব্বীদের নিহারা দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে তারা শিকারে বেরিয়েছে। নীলাক্ষী অপ্রস্তুত বোধ করছে। মাথা থেকে শাড়ির আঁচল সরে যাচ্ছে বারবার।
চাচী শাশুড়ী এসে বললেন, ‘বিয়ের দিন একটু সকাল সকাল উঠতে হয় ঘুম থেকে। মাথায় ঘোমটা আরেকটু বড় করে দেও। অর্ধেক চুল তো বাহির হয়ে আছে। আঁচলের এই মাথাটা হাতের মুঠার মধ্যে রাখো।’
নীলাক্ষী জড়োসড়ো হয়ে যায় চাচীর কথায়। এক হাতে আঁচলের মুঠো ধরে ও চোখ পিটপিট করে। হুট করে দাদী শাশুড়ী এসে নীলাক্ষীর হাত ধরে বলে, ‘আয় আমার সাথে।’
অম্লান রাতে এই দাদীর কথাই বলছিলো। নীলাক্ষী মন দিয়ে কিছুই শোনে নি। তাই দাদীর প্রতি ওর আগ্রহ বেড়ে গেছে। দাদী নীলাক্ষীকে নিজের ঘরে নিয়ে এসে বিছানার ওপর বসেন। বলেন, ‘বাইরে গিয়া লাভ নাই। সবাই শকুনের মত তাকাই থাকবে আর ভুল ধরবে। একদিনের মেহমান। পাত্তা দিয়া লাভ নাই।’
নীলাক্ষী বিমোহিত হয়ে দাদীর দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটা কেমন, এই এক কথাতেই নীলাক্ষী সেটা বুঝতে পেরেছে। ও উৎসুক হয়ে বললো, ‘দাদী কি করবো তাহলে?’
– ‘কি আবার? বরের সাথে শুইয়া থাকবি।’
নীলাক্ষী লজ্জা পেয়ে হাসে। একইসাথে অবাকও হয় ভীষণ। তা আবার হয় নাকি?
দাদী বললেন, ‘ফিল্ডে বসে থাকলে সবাই দর্শকের মত তাকাই থাকবে আর হাততালি দেবে। কেউ জিজ্ঞেসও করবে না কি খাইছো, কেমন লাগতেছে? রিসিপশনে সবাই দেখতেই পারবে। এখন দেখানোর ডিউটি নেও নাই। অনেক ধকল গেছে, ঘরে দরজা লাগায়া শুইয়া থাকবা।’
নীলাক্ষী খিলখিল করে হেসে ফেললো। দাদীর হাত ধরে বললো, ‘আপনাকে আমার না খুব ভালো লাগছে দাদী।’
দাদী ভ্রু কুঁচকে বললেন, ‘ছেমড়ি, তুই ভাবছোস আমি মজা নিতেছি? সত্যি কইতেছি রে ভাই। তুই বাইরে সাজুগুজু করে বসে থাকার কোনো দরকার নাই। ঘরে থাক। মাঝেমাঝে বের হবি আর শাশুড়ীকে বেশি বেশি ডাকবি। যত ডাকবি তত মহব্বত বাড়বে। আজীবন এক শাশুড়ী ই তোর সাথে থাকবে। এইসব পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজন কেউ থাকবে না। সবাইরে আজকে দেখবি, আবার অন্য এক বিয়েতে দেখবি। জীবনেও কেউ ফোন দিয়ে ও খোঁজ নিবে না।’
নীলাক্ষী খুব মজা পাচ্ছে দাদীর কথায়। হাসতে হাসতে বললো, ‘দাদী গো, আপনি খুব মজার মানুষ। বাস্তবের কথাটা এক্কেবারে স্পষ্ট করে বলেছেন।’
দাদী দুলতে দুলতে বললেন, ‘আমার বিয়েতে দেখছি। আমার চার ছেলে। চারটার বিয়েতে দেখছি। বউমারা ভোরবেলা উঠে আমার সাথে রান্না করছে, পাশে দাঁড়াই থাকছে। মাথায় ঘোমটা দিয়ে সবার সামনে সার্কাসের হাতির মত বসে থাকছে। সবাই শুধু দেখছে। দিন শেষে এক এই শাশুড়ীই বারবার গিয়ে তাদের খোঁজ নিছি। কোনো আত্মীয় স্বজন জিজ্ঞেসও করে নাই, শরীর ঠিক আছে কি না?’
নীলাক্ষী মাথা ঝাঁকালো। দাদীর কথা ওর হৃদয়ের অন্তপুরে সরাসরি প্রবেশ করছে। শ্বশুরবাড়ির লোকদের মধ্যে ইনিই প্রথম ব্যক্তি যার সাথে প্রথম আলাপেই প্রেমে পড়ে গেলো নীলাক্ষী। আগেও দাদীর সাথে কথা হয়েছে, তবে দু একটা। এভাবে বসে গল্প করা হয় নি।
দাদী বললেন, ‘আমাকে বোন মনে করে নিজের যেকোনো কথা বলতে পারবি। আমার পেটের বাক্সে সব জমা করে রাখবী, কাউরে বলবো না। আমি হইতেছি অম্লানের বেস্ট ফ্রেন্ড। ও ইউনিভার্সিটিতে কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম করছে, কোনদিন কার সাথে কোন জায়গায় ঘুরতে গেছে সব আমি জানি।’
দাদী মুখ টিপে হাসে। দাদীর সাথে হেসে ফেলে নীলাক্ষীও। জটিল একখানা মানুষ বলতে হবে। নীলাক্ষী চোখেমুখে মুগ্ধতা ছড়িয়ে বলে, ‘তাহলে আমাকে টিপস দেন। আপনার নাতির সামনে কিভাবে চলাফেরা করলে বেশি খুশি হবে?’
দাদী বললেন, ‘পুরুষ মানুষ হইতেছে চুম্বুকের মত। তুই হইতেছিস লোহা। খালি আটকায় থাকতে চাইবে। পাত্তা যত কম দিবি, প্রেম তত জমবে। বারবার ঘরের বাহির হবি আর শাশুড়ীর পাশে গিয়া বসে থাকবি। এক ঢিলে দুই পাখি মারা। শাশুড়ী ভাব্বে তুই তাকে অধিক ভালোবাসতেছিস। আর ওইদিকে ছেলের মন উতলা হয়ে যাবে, তোকে বারবার মিস করবে আর ডাকবে। এইটা হইতেছে ট্রিকস। ওর পাশে সারাদিন বসে থাকলে ওর আদর কমবে। বারবার রান্নাঘরে যাবি, আমার ঘরে আসবি। ও তোকে আরো বেশি কাছে চাইবে বুঝলি?’
নীলাক্ষী এবার মুখ টিপে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খায়। ওর হাসি কিছুতেই থামতে চায় না। বলে, ‘দাদী গো দাদী। কি শুনাইলা আমারে। আমি তো পাগল হইয়া যাইতাছি।’
দাদী ঝুঁকে এসে জিজ্ঞেস করেন, ‘রাইতে আদর সোহাগ হইছে?’
নীলাক্ষীর হাসি দুম করে মিলিয়ে যায়। শরীর শিউরে ওঠে। ওর নির্মল চেহারাখানি লজ্জার শ্যাওলায় আবৃত হয়ে যায়। চোখমুখ হয়ে ওঠে ত্রপাময়ী। কানে নরম সুরের বাজনা বাজে আবার হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। কোথায় মুখ লুকাবে বুঝতে পারে না। লাজুক স্বরে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, ‘হুম।’
দাদী নীলাক্ষীর থুতনি ধরে উল্লাস করে বলেন, ‘ওরে আমার আদুরী রে। লজ্জায় মরে যাইতেছে। গান জানিস?’
– ‘না দাদী।’
– ‘একটুও না?’
– ‘হালকা পাতলা গাইতে পারি। কখনো কাউকে শোনাই নি।’
– ‘কাউকে শোনাতে হবে না। আমার নাতিটারে শোনাবি। ও গান বড় ভালোবাসে। দুই কাপ চা নিয়ে গিয়ে বলবি, আপনাকে একটা গান শোনাই?’
নীলাক্ষী আনমনা হয়ে বললো, ‘উনি চা খেতেও ভালোবাসে। রাতে আমাদের গাড়ি থামিয়ে চা খেয়েছে।’
– ‘হুম। ফ্লাক্সে চা করা থাকে সবসময়। তুই খালি কাপ ভালোমতো পরিষ্কার করে চা ঢেলে বারবার ওর সামনে নিয়ে গিয়ে দিবি। সহজ কাম।’
নীলাক্ষী দাদীকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘আপনি খুব সুন্দর দাদী। দেখতেও সুন্দর, মানুষটাও সুন্দর। দাদু কতই না সুখে ছিলো!’
দাদী বললেন, ‘যেইটা বললাম সেইটা করবি। সংসার করতেছিস বলে সং সেজে সবার সামনে বসে থাকা লাগবে না। শুধু বারবার শ্বশুর আর শাশুড়ীর কাছে যাবি। আব্বা আম্মা বলে ডাকবি। জিজ্ঞেস করবি কিছু লাগবে কি না। এতে করে ওদের মহব্বত বাড়বে।’
নীলাক্ষী দাদীর কোলে মাথা রেখে অনেক্ষণ বসে থাকে। দাদীকে ওর এত আপন মনে হচ্ছে! ওর কোনো কাছের বন্ধু নেই। এই মানুষটাকে চোখ বন্ধ করে বন্ধু বানানো যায়। ওর এখনই বলতে ইচ্ছে করছে, ‘আই লাভ ইউ দাদী।’ কথাটা এখনো তার নাতিকেও বলা হয়নি!
নীলাক্ষী ঘরে এসে দেখে অম্লান পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। নিষ্পাপ ভঙ্গিতে। ও দ্রুত শাশুড়ীর দরজায় গিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা আসবো?’
শাশুড়ী মা ভেতরে আসতে বলেন। ঘরে শ্বশুর মশাইও আছেন। নীলাক্ষী ভেতরে গিয়ে একদম শ্বশুরের কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে, ‘আমার উঠতে দেরি হয়ে গেছে। সকালে চা দিতে চেয়েছিলাম আপনাদেরকে। পারলাম না।’
নীলাক্ষীর মুখের দিকে তাকিয়ে ওর এই সরলতা দেখে শাশুড়ী মায়ের মন উতলা হয়ে যায়। উনি কাছে এসে নীলাক্ষীকে ধরে বলেন, ‘এই জন্য কেউ মুখ কালো করে থাকে? আমরা সবাই নাস্তা করে ফেলছি। আমাদেরও এটা অন্যায় হয়ে গেছে। এখন কি আমরাও মুখ কালো করে থাকবো?’
– ‘না না।’
– ‘তাহলে তুমি করতেছো কেন? আমি নাস্তার প্লেট রেডি করে দিতেছি। অম্লান সহ ঘরে বসে খাও। খাবার টেবিলে যাওয়ার উপায় নাই। অনেক মেহমান।’
– ‘আচ্ছা মা।’
– ‘তোমার ভাবীর সাথে কথা বলছো?’
– ‘না।’
মা বললেন, ‘বইলো। একটাই জা তোমার। অম্লানের গাড়িতে থাকতে চাইছিলো। অম্লান নেয় নাই। সে একাই গাড়িতে শুধু বউ নিয়া আসছে। এজন্য দোয়েলের মনটা একটু খারাপ। ওর সাথে যত ভাব করবা, তোমার তত লাভ। দুই জা মিলেই এই বাড়িতে থাকতে হবে। আমরা আর কয়দিন বলো?’
নীলাক্ষী অবাক হয়ে অনেক্ষণ শাশুড়ী মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। বিষয়টা অবাক হওয়ার মতোই। দাদী বললেন ছেলের বউকে সময় দিতে, শাশুড়ী বললেন তার ছেলের বউকে সময় দিতে। একজন আরেকজনকে ভীষণ গুরুত্ব দেয়। ব্যাপারটা চমৎকার তো!
চলবে..