বাদামী সংসার
পর্ব ১৬
মিশু মনি

প্রফুল্ল দরজা বন্ধ করে কঠিন মুখ করে বসে আছে। ওর ইচ্ছে করছে একটা একটা করে অম্লানের সব স্মৃতি পুড়িয়ে ফেলতে। কাছে থাকা জামাকাপড়, হরেক রকমের গিফট এসব হয়তো পুড়িয়ে ফেলা সম্ভব। কিন্তু মগজের স্তরে স্তরে যে হাজারও ভয়ানক স্মৃতি জমে আছে, সেগুলো দূর করবে কি করে? নিশ্চয় মাথার খুলির ভেতর থেকে মগজটাকে উপরে ফেলে দেয়া যাবে না। তবে কি আজীবন এই স্মৃতি বহন করেই বাঁচতে হবে! ছেলেরা যেমন খুব দ্রুত সবকিছু ভুলে জীবনকে নতুন করে সাজাতে পারে, মেয়েরা কেন সেটা পারে না? আপন মনেই নিজেকে প্রশ্নটা করে বসলো প্রফুল্ল। কিন্তু মন থেকে পেলো না কোনো উত্তর। কারণ উত্তরটা যে অম্লানের বিরুদ্ধে, যা সহ্য করার শক্তি প্রফুল্ল’র নেই। অম্লানকে সে ভালোবেসেছে, বিশ্বাস করেছে। কভু স্বার্থপর তো ভাবতে পারে নি! আর এই ভাবনাটা ভাবতেও চায় না। যাকে ভালোবাসার যায়, তাকে তো হুট করেই ঘৃণার পাত্রে ছুঁড়ে ফেলা যায় না। অন্তত প্রফুল্ল সেটা পারবে না।

বাবা মায়ের ঘর থেকে উচ্চস্বরে হাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। তারা দিব্যি আনন্দে আছে। মেয়েকে নিয়ে এত বছর ধরে জমানো গাদা গাদা দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই পেয়ে গিয়েছে তারা। দিনশেষে সবাই জিতে গেলো, শুধু হারটা মেনে নিতে হলো প্রফুল্লকে। ইচ্ছে করছে ঘরের সবকিছু ভেঙে ফেলতে।

আলমারি খুলতেই খপ করে মেঝেতে পড়লো একটা ছবির ফ্রেম। অম্লানের বাঁধাই করা ছবি। ছবিটা মোড়ের বাশার ভাইয়ের দোকানে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বাঁধাই করিয়েছিলো প্রফুল্ল। দামী রূপোর ফ্রেমে মোড়ানো একটা ছবি। অম্লানের নিষ্পাপ চেহারা দেখলে মনেই হয়না সে কোনো অন্যায় করতে পারে। ওর ছবি দেখলে প্রফুল্ল’র খুব পাগল পাগল লাগে। ইচ্ছে করে সবকিছু ছেড়ে ছুটে ওর কাছে চলে যেতে।

হঠাৎ কি মনে হলো কে জানে। ছবিটা মেঝের ওপর গায়ের জোরে ছুঁড়ে মারলো প্রফুল্ল। কাঁচের ফ্রেম মরমর শব্দ করে ভেঙে গেলো। এদিক সেদিক ছুটে গেলো কয়েক টুকরো কাঁচ। যাক, ওই কাঁচের ওপর পা পড়ে সবকিছু কেটে যাক, রক্তাক্ত হয়ে যাক। শরীরে আঘাত পেয়ে কিইবা এসে যায়। এ তো অনেক সামান্য। ভেতরে যে ভয়াবহ যন্ত্রণা, তা বয়ে বেড়ানো পৃথিবীর আর সব কষ্টকেও হার মানায়।

প্রফুল্ল আলমারি খুলে একটা একটা করে অম্লানের দেয়া সব জিনিস বের করলো। একটা কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি। শাড়িতে বেগুনী রঙের ময়ূরের পালক আঁকা। আঁচলে পেইন্টিং করে লেখা, ‘ময়ূরাক্ষী’। শাড়িটা দিয়েছিলো সেবার ফায়রুজের জন্মদিনের আগের দিন। ওরা একটা পার্টি দিয়েছিলো। অম্লানের জন্য প্রফুল্ল কিনেছিলো একটা বেগুনী রঙের পাঞ্জাবী, আর অম্লান ওকে দিয়েছিলো এই শাড়িটা। ফায়রুজের জন্মদিনে দুজনে সুন্দর ম্যাচিং করে পরে গিয়েছিলো সেগুলি। দেখে মনে হচ্ছিলো কত সুখী সুখী একটা জুঁটি! সুখ সবার কপালে সয় না। কেন?

প্রফুল্ল শাড়িটা দূরে ছুঁড়ে মারলো। মেজাজ ক্ষিপ্ত হয়েছে। আলমারি সুদ্ধ ভেঙে ফেলতে পারলে ওর শান্তি হতো। বিছানার কাছে মেঝের ওপর বসে কেঁদে উঠলো প্রফুল্ল।

দরজায় শব্দ হলো, ঠকঠক ঠক।

প্রফুল্ল চোখ মুছে মাথা উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কে?’
ওপাশ থেকে মায়ের গলা শোনা গেলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন ‘কি রে মা, খেয়েছিস তুই? প্লেট নিতে এলাম।’
– ‘খেয়েছি। প্লেট সকালে নিয়ে যেও। আমি ঘুমাচ্ছি।’
– ‘লাইট জ্বালানো কেন? ঘুমিয়ে পড় মা তারাতাড়ি। তোর শরীর খারাপ। জ্বর এসেছিলো আরো?’
– ‘না।’

মায়ের আর কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। একনাগাড়ে টানা তিনটা মিথ্যে কথা বলার পর প্রফুল্ল ভেতরে ভেতরে আরো মুষড়ে পড়লো। আজ রাতে সে খায়নি। খেতে একদমই ইচ্ছে করছে না। জ্বর এসেছে গায়ে, হবে হয়তো একশো দুই। মাথা ব্যথাও করছে। সেদিন রাতে অনেক্ষণ ধরে ঝরনায় ভিজে গোসল করার পর থেকেই ভীষণ জ্বর। ওষুধ দেখলেই সব একসাথে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। কি এক মানসিক সমস্যায় পড়েছে সে। কেন যেন নিজেকে আঘাত করতে আজকাল বড্ড ভালো লাগে!

প্রফুল্ল মেঝেতে বসে বিছানায় মাথা রেখে একটু জিরোচ্ছে, হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো। এত রাতে ওকে কল দেয়ার তো তেমন কেউ নেই। কতগুলো দিন ফোনে রিং বাজে না। ওর যে একটা মোবাইল রয়েছে সেটাও তো ভুলে বসে আছে বেচারী।

অচেনা নাম্বার। প্রফুল্ল ‘ধরবে কি ধরবে না’ ভাবতে ভাবতে অবশেষে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো। ওপাশে মৃদু ভলিউমে গান বাজছে, ‘তুমি চেয়ে আছো তাই, আমি পথ হেঁটে যাই..’ এরকম কিছু একটা। খুব একটা শোনা যাচ্ছে না। তবে লিরিক গুলো এরকমই।

প্রফুল্ল কান্না সামলে কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক করে জিজ্ঞেস করলো, ‘কে? কে বলছেন?’
ওপাশ থেকে একটা অচেনা কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো, ‘এই হ্যালো। কল রিসিভ করেছেন। আমি ভেবেছিলাম এখনো ধরেন নি। প্রফুল্ল বলছেন?’
– ‘জি। আপনি কে বলুন তো? এত রাতে কেন ফোন করেছেন?’
– ‘সব কেন’র উত্তর দেবো নন্দিনী। আগে বলুন কেমন আছেন?’
– ‘ভালো নেই। ভয়ংকর রকমের খারাপ আছি। আর কিছু?’
প্রফুল্ল’র ঝাঁজমিশ্রিত গলা শুনে ওপাশের লোকটা একটু দমে গেলো মনে হচ্ছে। ঝটপট বললো, ‘আরে নন্দিনী রেগে যাচ্ছেন কেন? রং নাম্বার সব খারাপ লোক হয় না।’
– ‘আপনি তো রং নাম্বার না, আমাকে ভালোই চেনেন মনে হচ্ছে।’
– ‘ভালোই চিনি না। তবে নামটা জানি। তা, আপনার খারাপ থাকার মাত্রাটা কি অনেক বেশি নাকি কম?’
– ‘খারাপ থাকা মাপার যন্ত্র আছে নাকি? যে পরিমাণ মাপা যাবে?’
– ‘হ্যাঁ আপনি বলুন। আমি মেপে দিচ্ছি।’
– ‘একজনকে প্রচন্ড ভালোবাসি। সম্পর্ক নেই অনেকদিন। ভালোই ছিলাম। হঠাৎ দেখি সে বিয়ে করেছে। এরপর থেকে ইচ্ছে করছে সবকিছু ভেঙে ফেলতে। সামনে যা পাচ্ছি তাই ভাঙতে ইচ্ছে করছে।’

ছেলেটা বললো, ‘বাবারে। তাহলে তো সামনে বিষধর সাপ পেলেও মট করে ভেঙে ফেলবেন মনে হচ্ছে।’
– ‘খানিকটা সেরকমই। মাপা হলো আপনার?’
– ‘হ্যাঁ। ৯ দশমিক তিন।’
– ‘দশ নয় কেন?’
– ‘দশ হলে আপনি এতক্ষণে মরে ভুত হয়ে যেতেন। আপনার কবরের ওপর ঘাসফুলের চারা রোপণ করতে হতো। যাইহোক, কাল একবার দেখা করতে পারবেন?’

প্রফুল্ল কোনো উত্তর না দিয়ে মোবাইলটা বিছানার ওপর রেখে দিলো। ওর ভীষণ বিরক্ত লাগছে। এতক্ষণ বিরক্ত নিয়েও ফোন কানে ধরে ছিলো। নিতান্তই ঘোরের ভেতর। দেখা করার কথা শুনে ঘোর কেটে গেছে। নিশ্চয় বাবা আরেকটা ছেলে জোগাড় করেছে বিয়ের জন্য। বাবা এরকমই। এর আগেও একটা ছেলে এমন করে ফোন দিয়েছিলো। বাবার এই কাজগুলো অসহ্য লাগে প্রফুল্ল’র। তাদের কথামতো চলার পরেও ঠিকই বিয়ের ব্যাপারে একটা ঝামেলা বাঁধিয়ে বসে থাকবে।

আবারও ফোন বেজে উঠলো। প্রফুল্ল কানে ধরে বললো, ‘দেখুন, আমার বাবা আপনাকে ঠিক করেছে তাই তো? আমি এখন মানসিক ভাবে খুবই বাজে সিচুয়েশনে আছি। আপনি আর বিরক্ত না করলেই ভালো হয়। আমাকে বিয়ে করলে আপনি সুখী হবেন না।’

ছেলেটা অনেক্ষণ ধরে শব্দ করে হাসলো। হাসির মাত্রা ধীরেধীরে কমে এলে সে বললো, ‘সরাসরি বিয়েতে চলে গেছেন? যাক ভালো। আমি অবশ্য বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানিনা। কল দিয়েছিলাম অন্য কারণে। যাক গে, আপনি একটা কাজ করুন। একটা ভালো পরামর্শ দেই। হঠাৎ করে নিজের গেট আপ আর লাইফ স্টাইল চেঞ্জ করে ফেলুন। তারপর সুন্দর জামাকাপড় পরে, সুন্দর করে সেজেগুজে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। বিভিন্ন জায়গায় ট্যুরে যান। আর দারুণ দারুণ ছবি ফেসবুকে আপলোড করা শুরু করুন। তারপর দেখবেন আপনার প্রাক্তন কিভাবে জ্বলে পুড়ে মরে। সে নিজে যতটাই সুখে থাকুক না কেন, আপনার হাসি খুশি ছবি দেখলে তার বুক ফাটবে।’

প্রফুল্ল রেগে একটা গালি দিতে যাচ্ছিলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, ‘এসব সস্তা আইডিয়া কোথ থেকে আমদানি করেন শুনি? নাকি নিজেই পয়দা করেন? সে আমার ছবি দেখলে ভাব্বে আমি মহাসুখে আছি। সে এতে জ্বলবে তো দূরের কথা, খুশিই হবে।’
– ‘হবে না ম্যাডাম। একবার করেই দেখুন না। সে যদি বিয়ে করে সুখী হতে পারে আপনি সিঙেল থেকে সুখী হয়ে তাকে দেখিয়ে দিতে পারবেন না?’

প্রফুল্ল কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইলো। তারপর মোবাইলটা একহাত সামনে নিয়ে জোরে জোরে বললো, ‘গালি খাইতে না চাইলে আর কল দিয়েন না। রাখেন। ফালতু।’

মোবাইলটা বিছানার ওপর ছুঁড়ে মারলো প্রফুল্ল। কয়েক মিনিট থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎ ওর মনে হলো, শেষ কবে নিজেকে আয়নায় দেখেছিলাম? এই সপ্তাহে অন্তত নয়। অথচ রোজ শতবার অম্লানের চেহারা মনে করি, ওকে গালি দেই, ভালোবাসি, রাগ হই। অথচ নিজেকে শুধু কষ্টই দেই। আমি দেখতে কেমন হয়েছি এখন? মনেমনে প্রশ্নটা জপে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো প্রফুল্ল। কি কুৎসিত লাগছে নিজেকে। চোখের নিচে দুই ইঞ্চি পুরু কালচে ছোপ, গালে জায়গায় জায়গায় ব্রণের দাগ, ছোপ ছোপ দাগও জমেছে কয়েক জায়গায়। চুলের কি বিচ্ছিরি হাল হয়েছে। যেন কতদিন চিরুনি পড়ে নি। জট লেগে দয়াল বাবা সাধু সন্যাসীর মতো দেখতে লাগছে। গাল দুটো চিমসানো মুড়ির মতোন চুপসে গেছে। ঠোঁট তো নয় যেন মিরপুরের ভাঙাচোরা রাস্তা। নাকের ওপর ভরে গেছে হোয়াইট হেডস দিয়ে। আয়নার ধূলো মুছলেই যদি চেহারা আবার আগের মতো হয়ে যেতো তবে কতই না ভালো হতো! প্রফুল্ল হঠাৎ অনুভব করলো, আমি অনেকদিন নিজেকে ভালোবাসি না। আমাকে আঘাত করতে করতে শেষ করে দিয়েছি। মানুষ এই কাজটা খুব সহজেই পারে। নিজেকে দ্রুত ময়লা করে ফেলতে।

প্রফুল্ল বাইরে গিয়ে একটা ঝাড়ু নিয়ে এসে মেঝেতে পড়ে থাকা কাঁচ পরিষ্কার করলো। শাড়িটা ভাঁজ করে চেয়ারের ওপর রাখলো। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বললো, ‘অনেক হইছে। এখন ঘুমা।’

ভোরবেলা ঘুম ভাঙার পর পাখির কিচিরমিচির শুনে এক লাফে উঠে বসলো নীলাক্ষী। আহা সেই প্রকৃতির ছোঁয়া! একবার বাইরে না গেলেই নয়। অম্লানকে বেশ কয়েকবার ধাক্কাধাক্কি করেও ওর ঘুম ভাঙাতে পারলো না। বেচারা বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।
নীলাক্ষী ঘড়ি দেখলো, ভোর পাঁচটা দশ। হাতের মুঠোয় পানি ভর্তি করে এনে অম্লানের মুখের ওপর ছিঁটিয়ে দিতেই ধসমস করে ঘুম ভেঙে উঠে বসলো অম্লান। চোখেমুখে বিরক্তির রেখা ফুটিয়ে বললো, ‘সমস্যাটা কি? এই ভোরবেলা ডাকছো কি জন্য?’
– ‘প্লিজ ওঠো না। বাইরে হেঁটে আসি। এত সুন্দর একটা সকাল।’
– ‘না আমার ঘুম হয়নি, মাথা ব্যথা করছে।’
– ‘বাইরে গেলে মাথাব্যথা সেরে যাবে। প্লিজ চলো না।’

রীতিমতো টানতে টানতে অম্লানকে নিয়ে বাইরে এলো নীলাক্ষী। অম্লানের চোখে মুখে ঘুম লেগে রয়েছে। বিশাল বারান্দায় এসেই শীতল হাওয়া লেগে মন ফুরফুরে হয়ে গেলো। নীলাক্ষী জুতা খুলে হাসতে হাসতে বললো, ‘ইস! ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটার কত ইচ্ছে ছিলো। জায়গাটা ভারি সুন্দর তাইনা?’
অম্লান হাই তুলতে তুলতে বললো, ‘হুম জায়গাটা অনেক সুন্দর।’

ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে শিশিরভেজা ঘাস, ঘাসের ওপর ঝরে পড়া পাতা, শিরশিরে একটা হাওয়া বইছে। নীলাক্ষীর মনের ভেতর খুশির আগডুম বাগডুম করছে। তবে ওর সমস্যা হচ্ছে ও খুশিটা কাউকে দেখাতে পারে না। অন্যেরা যেমন আনন্দে লাফালাফি করে, ওর সেটা ঠিক আসে না। ও সবসময় একইরকম, ঠান্ডা স্বভাবের।

নীলাক্ষী দোলনায় গিয়ে বসলো। বারকয়েক দোল দিলো অম্লান। নীলাক্ষী শাড়ির আঁচল মাটিতে বিছিয়ে দোল খেতে লাগলো। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে! দূরে লেকের সবুজ জলের পাশ দিয়ে সরু রাস্তাখানা চোখে পড়তেই নীলাক্ষী বললো, ‘চলো ওদিকটায় হেঁটে আসি?’

অম্লান ফ্যাকাসেভাবে উত্তর দিলো, ‘খুব ঘুম পাচ্ছে নীলু। আমরা বিকেলে হাঁটতে যাই?’

নীলাক্ষী আর দ্বিতীয় বার বলার সাহস পেলো না। জোর করে তাকে তুলে বাইরে আনার কারণে ওর এখন নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে। ঘুমাচ্ছিলো ঘুমাক না। কেন যে তুলতে গেলাম!

নীলাক্ষী বললো, ‘আচ্ছা চলো। রুমে গিয়ে ঘুমাই।’

অম্লানের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেলো। দ্রুত ঘরে এসে কম্বলের ভেতর ঢুকে মুহুর্তেই ঘুমিয়ে পড়লো। নীলাক্ষীর ঘুম আসছে না। শিয়রে রাখা অম্লানের মোবাইলটা হাতে নিয়ে দু তিনবার নাড়াচাড়া করলো। পাসওয়ার্ড জানে না সে। ভুলভাল পাসওয়ার্ড মেরে ফোনটা আলগোছে শিয়রে রেখে দিলো। অন্যের জিনিস ঘাঁটাঘাঁটি করার অভ্যাস যদিও তার নেই, কেন যেন অম্লানের মোবাইল টার প্রতি একটা চাপা আকর্ষণ কাজ করছে।

চিৎ হয়ে শুয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে নীলাক্ষী। মানুষ কেন বিয়ে করে? এইযে পাশাপাশি শুয়ে থাকা, কথা বলা, ঝগড়া করা, মাঝেমাঝে বাইরে খাওয়া, মাঝেমাঝে ঘুরতে যাওয়া আর বাচ্চাকাচ্চার বাবা মা হওয়া। ঘুরেফিরে জীবনটা যেন একইরকম ধারায় চলতে থাকে সবসময়। অথচ লোকে বলে জীবনটা নাকি বিচিত্র!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here