বাদামী সংসার
পর্ব ১১
মিশু মনি

পাখিডাকা ভোর।
আমজাদ সাহেব ফজরের নামাজ আদায় করে বসার ঘরে পায়চারি করছিলেন। এই সময়ে নীলাক্ষীর নাম ধরে ডেকে মেয়ের ঘুম ভাঙানোটা ওনার নিত্যদিনের অভ্যাস। কিন্তু আজ ডাকতে পারছেন না, বিব্রতবোধ করছেন। নীলার বিয়ে হয়ে গেছে, সে তো আর আগের মতো শুধু ওনার মেয়ে নয়। এখন কারো স্ত্রী। যখন তখন মেয়েকে ডাকতেও ওনাকে ভাবতে হবে। যদি জামাইয়ের ঘুম ভেঙে যায়? যদি মেয়েটা বিরক্ত হয়? রাতে নিশ্চয় ঘুমাতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আমজাদ সাহেবের বুকটা আনচান করে। সেদিনের ছোট্ট মেয়েটার প্রতি অধিকারবোধ বদলে গেছে মুহুর্তেই। সবচেয়ে আপন, কলিজার টুকরা মেয়ের প্রতি আবদারগুলো আর অনায়াসে করা যাবে না। নীলার জীবন পুরোপুরি বদলে গেছে বিষয়টা ভাবলেও আমজাদ সাহেবের বুক শূন্য হয়ে আসে। নীলা একমাত্র তারই মেয়ে, তার কোলে বড় হওয়া সেই পুঁচকে বাচ্চাটা। যে আব্বুর কোলে পায়খানা করে দিতো, আব্বুর কোলে চড়ে পুরো শহর ঘুরতো। অথচ আজকে মেয়েকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতেও তিনি বিব্রতবোধ করছেন। বুক তো শূন্য লাগবেই। সমাজের নিয়মগুলোকে ওনার ভীষণ অদ্ভুতুড়ে মনে হয়। আদরের মেয়েটা, পর হয়ে গেছে। মুহুর্তেই পর হয়ে গেছে!

নীলাক্ষীর ঘুম ভাঙলো বেশ বেলা করে। অম্লানের হাত ওকে ভীষণ স্নেহশীলতার সাথে জড়িয়ে ধরে আছে। হাত ছাড়াতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ঠায় শুয়ে থাকে ও। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা নয়টা বাজে। অস্পৃশ্য এক ছায়া মুহুর্তেই নেমে এলো ওর মনে। বিষাদের জলে কানায় কানায় হৃদয়টা সিক্ত হতে লাগলো।

প্রতিদিনকার মতো আজকে ঘুম থেকে ওঠা হলো না। সে নিজের বাড়িতেই ঘুমাচ্ছে অথচ আজ একবারও মা বকাবকি করে ঘুম ভাঙালো না। ভোরবেলা আব্বুও নামাজের জন্য ডেকে তুললো না। নীলাক্ষীর মনে হয় সে বোধহয় খুব দূরে চলে গেছে সবাইকে ছেড়ে। বিয়ে নামক একটা বন্ধন যেমন নতুন কিছু সম্পর্কের সাথে যোগসূত্র তৈরি করে, তেমনই পুরনো বন্ধনগুলোর মায়া কাটাতে গিয়ে দ্বিগুণ কষ্টও দেয়। বুকটা খা খা করে নীলাক্ষীর। অম্লানের হাত ছাড়াতে উঠতে গেলে অম্লান ওকে বুকের ভেতর খুব করে জাপটে ধরে রাখে। কোলবালিশের মতোই একটা মানুষ বালিশ। যে বালিশ কথা বলতে পারে। নীলাক্ষীও আর ওঠার চেষ্টা করে না। শুয়ে শুয়ে গম্ভীর মুখে সিলিংয়ের দিকে চেয়ে থাকে। ভাবে, সমাজে বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেকটা মানুষকেই নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মাঝেমাঝে ভীষণ কঠিন লাগে এই নিয়ম কানুন।

আমজাদ সাহেব নীলিমা বেগমের পাশে এসে বসেন। স্বামীকে রান্নাঘরে দেখে চোখ উপরে তুলে নীলিমা বেগম জিজ্ঞেস করেন, ‘এইখানে কি করতেছো তুমি?’
আমজাদ সাহেব কি বলবেন খুঁজে পান না। হেসে বলেন, ‘এমনি আসলাম। তুমি কি রান্না করো?’
– ‘গরুর গোশত ভুনা করছি, রুটি বানাইছি। সবজি, বিফ কাবাব, রোল, কাস্টার্ড ফ্রিজে রাখছি। ওরা উঠলে ডিমের ওমলেট করবো।’
– ‘তুমি খুব দ্রুত রান্না করতে পারো নীলিমা। তোমার রান্না অনেক স্বাদ হয়।’

নীলিমা বেগম ভ্রু কুঁচকে ফেললেন। এত বছরের সংসারে একাই সবকিছু সামলেছেন, কখনো আমজাদ সাহেব রান্নাঘরটা কেমন সেটাও দেখতে আসেন না। গত দুদিন ধরে তার স্বভাবে বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আজকাল আবার প্রশংসাও করছেন দেখি! নীলিমা বিস্মিত হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে।

আমজাদ সাহেব গরুর গোশতের ঢাকনা তুলে সুঘ্রাণ নিয়ে বললেন, ‘খুব সুন্দর ঘ্রাণ। অনেক মজা হয়েছে মনে হচ্ছে।’
নীলিমা হেসে বলেন, ‘তোমারে একটা প্লেটে দেই? খাবা?’
– ‘না। ওরা উঠলে একসাথে খাবো।’
– ‘আরে অল্প করে খাও। পরে আবার খাইয়ো।’
– ‘দিতে চাইতেছো যখন দেও।’

নীলিমা বেগম হাসলেন। একটা বাটি ভর্তি করে গোশত তুলে দিলে বললেন, ‘নাও।’

আমজাদ সাহেব বাটি ভর্তি গোশত দেখে দ্রুত বলে উঠলেন, ‘এতগুলো দিছো কেন? নীলা আর জামাইয়ের জন্য রাখো।’
– ‘অনেক আছে। তুমি খাও তো।’

নীলিমা বেগম জোর করে গোশতের বাটি ধরিয়ে দেন স্বামীর হাতে। বউয়ের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখে আমজাদ সাহেব বললেন, ‘তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাই না?’

নীলিমা নিমিষহারা চোখে স্বামীর দিকে তাকান। কাঁচের ওপর জমে থাকা জলের বিন্দুর মতো অসংখ্য সুখের বিন্দু জমে তার হৃদয়ে। মন পুলকিত হয়। লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে মিষ্টি হাসেন নীলিমা বেগম।

নীলাক্ষী ‘আম্মু, আম্মু’ করে ডাকছে। ছুটে এসে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বললো, ‘আম্মু, আমার ছবির এলবামটা কোথায় রেখেছো?’
– ‘তুই এই সাত সকালে এলবামের পেছনে লাগলি কেন? জামাই উঠেছে? নাস্তা করবে না?’
– ‘উঠেছে। ফ্রেশ হতে গেছে। এলবামটা কোথায় বলো না।’
– ‘আমি বের করে দিচ্ছি। আগে নাস্তা করে নে। তুইও হইছিস ভীষণ অধৈর্য। একদম বাপটার মতো। সাত সকালে উঠেই লাগছে এলবামের পিছনে।’

নীলিমা বেগম কথা বলতে বলতে দুই হাতে দুটো খাবারের বাটি নিয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে যান। নীলাক্ষীর ভালো লাগে খুব। আগের মায়ের বকুনিকে বিরক্ত লাগলেও এখন সেটাকেই সবচেয়ে বেশি মিস করে ও। ঘরে এসে দেখে অম্লান ভেজা চুল ঝাড়ছে। মুহুর্তেই লাজুক হাসির কিঞ্চিৎ রেখা ফুটে ওঠে নীলাক্ষীর ঠোঁটের কোণে। কারা যেন বলে যে ভেজা চুলে মেয়েদেরকে স্নিগ্ধ দেখায়। তারা বোধহয় জানে না, ভেজা চুলে পুরুষদের স্নিগ্ধতাটুকুও নেহাত কম নয়। মুহূর্তমধ্যে দৃষ্টি নামিয়ে নেয় নীলাক্ষী। অম্লানের সাথে চোখাচোখি হোক সেটা চায় না। ওর চোখে চোখ পড়লেই কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগে।

নাস্তা শেষ করে নীলাক্ষী ছুটে গিয়ে এলবাম নিয়ে এসে বসলো। ওর ছোটবেলার ছবি থেকে শুরু করে যত ছবি এলবামে সংগ্রহ করে রাখা আছে সব একটা একটা করে দেখাতে লাগলো। প্রত্যেকটা ছবির পেছনের গল্পও বললো একের পর এক। এলবাম দেখা শেষ হলে অম্লান নীলাক্ষীকে তৈরি হতে বলে। বাইরে বেড়াতে যাবে। নীলাক্ষী বললো, ‘এখনই? বিকেলে যাই?’
– ‘না। এখনই যাবো চলো।’
– ‘আমার না ঘোরাঘুরি পছন্দ না।’

নীলাক্ষীর মুখে এমন কথা শুনে মুহুর্তের জন্য থমকে গেলো অম্লান। কারণ ওর নিজের যে ঘুরতে ভীষণ ভালো লাগে। দলবেঁধে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার মতো আনন্দ আর কিসে আছে? অথচ কাছের মানুষটার এটা পছন্দ নয়। তবে তাৎক্ষণিক কিছু বললো না অম্লান। বিছানায় গিয়ে বসলো। নীলাক্ষী বিছানার আরেকদিকে বসে বললো, ‘আমার চাচার বাসায় আজকে বিকেলে দাওয়াত আছে।’

অম্লানের বিরক্ত লাগলো কথাটা শুনে। সমাজের এত আনুষ্ঠানিকতা ওর একেবারেই পছন্দ নয়। দুজন মানুষের বিয়ে হলে তাদেরকে নিজেদের মতো ছেড়ে দেয়া উচিত। তারা একে অপরকে জানবে, বুঝবে। ওদের যা ভালো লাগবে তাই করুক না। প্রেমের সূচনা তো সেখানেই। অথচ আমাদের সমাজে বিয়ের পর প্রথম একমাস শুধু দাওয়াত খেয়ে বেড়াতে হয়। দাওয়াত করার সময় কি ফুরিয়ে গেছে?

অম্লানকে চুপ থাকতে দেখে নীলাক্ষী বললো, ‘আপনি কিছু বলছেন না যে?’
অম্লান প্রত্যুত্তরে বললো, ‘কি বলবো আর?’

নীলাক্ষীর বুকের ভেতর চিনচিন করে উঠলো। গত দুদিন ধরে মানুষটার মিষ্টি কণ্ঠস্বর, চেহারা, হাসি সবকিছু দেখেই অভ্যস্ত হয়েছে ও। অথচ এখন গলাটা অন্যরকম লাগছে। ও উদ্বিগ্ন হয়ে বললো, ‘আপনি কি রাগ করলেন? আমি বাইরে যাবো না বলে?’
– ‘না। রাগ করবো কেন? প্রত্যেকের ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে। আমার ভালোলাগা আর তোমার ভালোলাগা তো এক না। তোমার যেটা ভালো লাগবে না আমি জোর করে তো সেটা করতে পারবো না।’

নীলাক্ষী বিছানার চাঁদরের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর শরীরে আনচান করছে। মানুষটাকে অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেলার অনুশোচনা মুহুর্তেই গ্রাস করে ফেললো ওকে। এত সুন্দর সময়গুলোর পর ক্ষণিকের মনোমালিন্য টাকেও ভয়াবহ বিপর্যয় বলে মনে হলো। কিন্তু কিছু বলতে পারলো না। হাতের মুঠোয় আলগোছে চেপে ধরলো বিছানার চাঁদর।

অম্লান বললো, ‘আমার ফোনটা কোথায় দেখো তো?’
– ‘কেন?’
– ‘এমনি। দেখো না কোথায়?’

নীলাক্ষী বালিশের নিচ থেকে অম্লানের ফোন বের করে এগিয়ে দেয় ওর দিকে। অম্লান ফোন নিয়ে মনোযোগ সেখানেই দিয়ে দিলো। একটা অদ্ভুত সুক্ষ্ম যন্ত্রণা পীড়া দিতে শুরু করেছে নীলাক্ষীকে। ক্রমশ ভীষণ বিষাদে কানায় কানায় ভরে যাচ্ছে ও। অম্লানের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে ফোনের দিকে ব্যস্ত। মনেমনে সমাজের উদ্ভট সব নিয়মনীতিকে গালি দিচ্ছে। সারাক্ষণ বউকে নিয়ে ঘরে আবদ্ধ থাকার মানেই কি সংসার? একসাথে পথ চলা, একসাথে পৃথিবী দেখা, সব কাজে একসাথে অগ্রসর হওয়া এসব কি দাম্পত্য জীবনের অংশ নয়? আমাদের সমাজ স্ত্রী দেরকে ঘরের আসবাবপত্র বানিয়ে রেখেছে। অসহ্য! মনেমনে ক্ষুদ্ধ হয়ে অম্লান ক্রমাগত ফেসবুকে স্ক্রলিং করতে লাগলো।

নীলাক্ষী আস্তে করে উঠে বেলকনিতে চলে আসে। ওর খুব কান্না আসছে। কিন্তু বাইরের রোদ, ধুলাবালি, এত গাড়ির হর্ন, এত লোকজন এসব ওর একেবারেই ভালো লাগে না। দমবন্ধ হয়ে আসতে চায়। ও ঘরে থাকতেই অভ্যস্ত। কখনো বন্ধুবান্ধব নিয়ে কোথাও ঘুরতেও যাওয়া হয়নি ওর। অম্লানের সামনে যেতেও ওর সংকোচ লাগছে। দুঃখের যাতনায় পিষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো নীলাক্ষী।

অম্লান এসে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘আমার পাখিটার কি মন খারাপ?’

নীলাক্ষী চুপ করে থাকে। গলা দিয়ে শব্দ আসে না ওর। নিরবে নিশ্বাস ফেলে শুধু।

অম্লান বললো, ‘কি গো চুপ করে আছো যে?’
– ‘আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন?’
– ‘না।’
– ‘আমার মনে হলো কেন?’
– ‘সেটা তোমার মনকেই জিজ্ঞেস করো। তোমার মন কোন জায়গায় আছে বলো? আমি জিজ্ঞেস করি। এখানে?’

অম্লান নীলাক্ষীর বক্ষস্থল স্পর্শ করতেই শিউরে ওঠে নীলাক্ষী। খপ করে অম্লানের হাত ধরে ও জবাব দেয়, ‘না। মন বলে কিছু নেই। মস্তিষ্কের কাজ সব।’
– ‘আচ্ছা তাহলে মস্তিষ্ককে জিজ্ঞেস করো। এই মস্তিষ্ক, তুমি হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলে কেন?’

নীলাক্ষীর হাসি পেলো। ও ফিক করে হেসে জবাব দিলো, ‘আমি ভয় পেয়েছিলাম। আসলে সত্যি বলতে আমি বাইরে গেলে মাথা ঘোরে আমার। এত লোকজন, চারিদিকে মানুষ গিজগিজ করে। এত গাড়ি, এত শব্দ সবকিছু বিরক্ত লাগে। এজন্যই বাইরে যেতে ইচ্ছে করে না। প্লিজ কিছু মনে করবেন না। আমি আপনার সাথে যাবো। সত্যি যাবো।’

অম্লান শব্দ করে হাসলো। মাথাটা দুদিকে দুলিয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেলো ও। গিয়ে আবারও ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নীলাক্ষী ঢোক গিলে রুমে এসে মুখ কাঁচুমাচু করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অম্লান কি আবার রাগ করলো? কপালে ভাঁজ পড়লো নীলাক্ষীর৷

অম্লান ফোন রেখে বললো, ‘ব্যস। হয়ে গেছে।’

নীলাক্ষীর কাঁধে হাত রেখে অম্লান নরম সুরে বললো, ‘নীলু, আমরা আগামী রবিবার হানিমুনে যাচ্ছি। যেখানে কোনো মানুষ নেই, গাড়ি নেই, শব্দ নেই, ধুলাবালি নেই। খুব নির্জন, শান্ত, সবুজ, নীলাকাশ, অনেক আলোবাতাস, অনেক স্নিগ্ধতা আর কি চাও?’

নীলাক্ষী বললো, ‘কিন্তু আম্মা তো শুক্রবারে আমাদেরকে নিতে আসবে বলেছেন। তারপর নাকি আপুর শ্বশুরবাড়িতে যেতে হবে?’

অম্লান কঠিন স্বরে বলল, ‘শোনো, এসব বালের কথাবার্তা আমার সামনে বলবা না। তুমি আমার লাইফ পার্টনার। আমার আপুর শ্বশুরবাড়ি, আত্মীয় স্বজন চোদ্দগুষ্টি তোমার সাথে লআইফ লিড করবে না। দিনশেষে একজনই তোমার সবকিছুর সঙ্গী।’

কিছুক্ষণ থেমে অম্লান আবারও বললো, ‘বিয়ের পর একটা ছেলে মেয়ের একে অপরকে বোঝার জন্যও কিছু সময় দেয়া দরকার। আমাদের বালের সোসাইটি শুধু বুঝে বিয়া দেও রে, দাওয়াত দিয়া খাওয়াও রে, জামাকাপড় আর থালাবাসন গিফট করো রে। জীবনে আর কোনোদিনও সেসব আত্মীয় স্বজনের দেখা পাবা না। স্রেফ একজন রিলেটিভ ই তারা। অথচ যে জিনিসটা ইম্পর্ট্যান্ট, স্বামী স্ত্রীর একে অপরের সাথে বোঝাপড়া, একে অপরকে জানা, প্রেমে পড়া, দুজনের মন মানসিকতা সেট আপ করা, এইগুলা আমাদের সোসাইটি বুঝবে না। বিয়ের পর প্রথম কাজ হচ্ছে তাদেরকে একটা ভ্রমণে পাঠানো যেখানে রিলাক্স থাকবে, কোনো টেনশন থাকবে না। দুজন দুজনকে সময় দিবে। অথচ সবাই ভাবে হানিমুনে যাচ্ছে শুধু খেলাধুলা করতে। যত্তসব। স্বামী স্ত্রী একজন আরেকজনের প্রতি রেস্পেক্ট আসবে কোথ থেকে? যদি স্ত্রীর সম্পর্কে কিছু নাই জানে? যার সম্পর্কে জানে না তার প্রতি কি রেস্পেক্ট আসবে? ফিলিংস আসাটাও একটা ফ্যাক্ট। এসব কেউ বুঝবে না। মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়।’

অম্লানের রাগত কথাবার্তা শুনে নীলাক্ষী আর কিছু বলার সাহস পেলো না। কথাগুলো শুনতে খারাপ মনে হলেও সত্য। নীলাক্ষী নিজেও কখনো এভাবে ভেবে দেখে নি। শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো শুধু। অম্লান ফোন রেখে বিছানার ওপর বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর মেজাজ ঠান্ডা করে বললো, ‘আমি তোমাকে ভালোভাবে চিনি না, জানি না। আমরা ক্লোজ হবো কিভাবে? ফর্মালিটি মেইনটেইন করলেই হবে শুধু? এক সপ্তাহের একটা হানিমুন ট্রিপেই যতোটা ক্লোজ হওয়া সম্ভব, বিয়ের এক বছরেও অনেকে সেটা হতে পারে না। আমরা রবিবারেই যাচ্ছি, ফাইনাল। বাসায় কে কি বললো আমি ওসব কেয়ার করি না।’

নীলাক্ষী ধীরপায়ে অম্লানের পাশে এসে দাঁড়ালো। কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। অম্লান রেগে গেলে কপালের শিরা স্পষ্ট দেখা যায়। লাল হয়ে যায় চোখ দুটো। তবে ওকে অসম্ভব মিষ্টি লাগে। অম্লানের সামনে দাঁড়িয়ে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো নীলাক্ষী।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here