#বসন্তের_এক_সন্ধ্যায়
#পর্ব_৬
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)
“নতুন একটি সকাল। এই সকালে অবশ্যই সব খারাপ মুছে গিয়ে সব ভালো হবে। থাকবে না কোনো খারাপের চিহ্ন। রোদেলা আর ইশানের মান-অভিমান ভে’ঙে ভালোবাসাময় একটি সকাল। প্রভাতের হাওয়ায় হেলেদুলে পড়ছে গাছের প্রতিটি পাতা। সারারাত বৃষ্টি হয়েছে তাই এখন প্রকৃতি স্নিগ্ধ, শীতল। ঠান্ডা হাওয়া বইছে। সেই হাওয়ায় বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে রোদেলা। ফজরের নামাজ পড়ে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে নতুন সকাল’টাকে উপভোগ করছিলো রোদেলা। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর উল্টো ঘুরে ইশানের দিকে তাকাতেই দেখে, ইশান ওর দিকেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে”। ও একটু ভ্রু কুচকে ইশানের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো…
‘কি মিষ্টার, এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন’?
‘দেখছি’
‘কাকে’?
‘আমার রোদু রানী কে’।
‘ইসসস সকাল সকাল ঢং শুরু হয়ে গেলো’।
‘ঢং না গো প্রিয়তমা, ইহা ভালোবাসা’।
‘আমিও ভালোবাসি’। আচ্ছা আচ্ছা এখন আর কোনো কথা হবে না। এখন ফ্রেশ হয়ে খেতে হবে তো নাকি।
“ইশানকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে ফ্রেশ করিয়ে খাইয়ে দিলাম। দেখতে দেখতে কে/টে গেছে ৭ দিন। এখন ইশান আগের থেকে অনেক’টা সুস্থ তাই আজকে ওকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে দিচ্ছে। আমি ডাক্তারের সাথে ভালোভাবে কথা বলে সবকিছু বুঝে নিয়ে ইশানকে নিয়ে ওর বাসার উদ্দেশ্যে বের হলাম। ইশানের বাবা-মা আমার সাথে থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি’ই উনাদের জোড় করে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। উনাদেরও তো বয়স হয়েছে৷ এই কয়েকদিন উনার কমবেশি হসপিটালে ছিলো তাই আজকে উনাদের উপর কোনো চাপ দেই নি”।
“বাসায় এসে ইশানকে রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলাম। তারপর আমি ফ্রেশ হয়ে, স্যুপ বানিয়ে ইশানকে নিজের হাতে খাইয়ে দিলাম”। ইশান বললো…
‘তুমি এখন চলে যাবে রোদু’?
‘হুম এখন তো যেতেই হবে। কিন্তু আমি ফোন দিবো, তুমি কোনো অনিয়ম করবে না বুঝলে’।
‘হুমম’
‘কি হলো’?
‘কিছু না’।
‘আরে বো’কা মন খারাপ করছো কেন? আমি কালকে আবার আসবো তো’।
‘তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি আমার ঘরের রানী করে নিয়ে আসবো’।
‘তার আগে আপনাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে হবে। এখন তুমি ঘুমাবে ঠিক আছে’।
‘আচ্ছা’।
“ইশান আর ওর বাবা-মাকে বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে আসলাম। এভাবেই দিন যেতে লাগলো। এখন ইশান একদম সুস্থ হয়ে গেছে। নিয়মিত কলেজ যাওয়া, দেখা করা, ঘুরতে যাওয়া, ফোনে কথা বলা এগুলো যেনো এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। এতো কিছুর মধ্যে একজনের মনে অনেক ক্ষো’ভ সৃষ্টি হয়েছে আর সেটা হচ্ছে মৌ এর। ইশান আমাকে আগলে রাখে সেটা ওর ভালো লাগে না”। একদিন মৌ আমাকে একটা ফাঁকা ক্লাসে টেনে নিয়ে গিয়ে বললো…
‘তুমি ইশানকে ছেড়ে দাও। আমি ইশানকে ভালোবাসি। তোমার লজ্জা করে না ইশানের পিছনে পড়ে আছো’।
‘আপনি ভুল করছেন মৌ আপু। আমি ইশানের পিছনে পড়ে নেই। ও নিজে এসেছে আমার কাছে। যখন ও এ’ক্সি’ডে’ন্ট করে হসপিটালে ছিলো তখন আপনি কোথায় ছিলেন? তখন আপনার ভালোবাসা কোথায় ছিলো’?
‘তুমি একদম বেশি কথা বলবে না। আমার বিষয়ে তুমি নাক গলানোর কে? হ্যা বুঝতে পেরেছি, তোমাদের মতো থার্ড ক্লাস মেয়েদের তো এগুলাই কাজ। ভালো ভদ্র বড়লোক ছেলেদের নিজেদের রূপের জ্বা’লে ফাঁ’সি’য়ে গলায় ঝুলে পড়া। তোমরা এসব ছাড়া আর কি করতে পারো হুহ্’।
‘মৌওওওওওওওওওও’
“আমি কিছু বলে উঠার আগেই হঠাৎ এমন বিকট চিৎকার শুনে আমি আর মৌ আপু দু’জনেই চমকে উঠে দরজার দিকে তাকাতেই দেখি, ইশান র’ক্ত চক্ষু নিয়ে মৌ আপুর দিকে তাকিয়ে আছে। আর মৌ আপু ভয়ে ঢোক গিলছে”। ইশান হনহন করে এগিয়ে এসে মৌ আপুকে ঠাসস করে একটা চ’ড় মে/রে দিলেন। মৌ আপু তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেলেন”।
“ইশান তুমি আমাকে মা’র’লে? সামান্য একটা রাস্তার মেয়ের জন্য তুমি আমার গায়ে হাত তুললে? তুমি তো আগে এমন ছিলে না। এই মেয়ে আসার পরে থেকেই তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন?”
“মৌ মুখ সামলে কথা বলো। তোমাকে তো শুধু একটা থা/প্প/ড় মে’রে’ছি আরো কয়েকটা মা’র’তে পারলে আমার শান্তি লাগতো। তুমি সেই প্রথম দিন থেকেই রোদেলার সাথে মিসবিহেভ করে যাচ্ছো, কিছু বলছি না দেখে এই না যে তুমি ওর সাথে যা তা ব্যবহার করবা। আর মৌ তোমার একটা জিনিস ক্লিয়ার করে জানা উচিত আমি রোদেলাকে ভালোবাসি। তাই তুমি আমার আর রোদেলার লাইফ থেকে সরে যাবে। কখনো যদি রোদেলার আশে পাশে দেখি আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম।”
“মৌ আর কিছু না বলেই সেইখান থেকে দৌড়ে চলে গেল। বাসায় গিয়ে মৌ তার রুমের সকল জিনিস ভে’ঙে ফেলছে তাকে কেউ শান্ত করতে পারছে না। মৌ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো সে রোদেলাকে ছাড়বে না। ওর জন্য তার ইশান আজকে তার গায়ে হাত তুললো। সে এই থা/প্প/ড় এর প্রতিশোধ নিবেই যেকোনো মূল্যে”।
“এদিকে মৌ চলে যাওয়ার পর ইশান রোদেলার কাছে গিয়ে মৌ এর ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইলো। ‘রোদেলা প্লিজ মৌ এর কথায় কিছু মনে করো না। আর আমার মনে হয় না আজকের অপমানের পরে মৌ আর ২য় বার আমাদের সামনে আসবে’। রোদেলা নিশ্চুপ হয়ে শুধু শুনে গেল কিন্তু তার মন কেন যেন বলছে মৌ তার এই থা/প্প/ড় এর জবাব ঠিকই দিবে। এতোদিনে অল্প একটু হলেও সে মৌ’কে চিনেছে। তবুও সে ইশানকে এসব কিছু না বলে বললো,’আমাদের এবার যাওয়া উচিত’। ইশান ভাবলো, রোদেলা হয়তো মৌ এর কথায় কষ্ট পেয়েছে তাই বেশি কিছু না বলে রোদেলার কথায় সম্মতি প্রকাশ করলো”।
#চলবে….