#বসন্তের_এক_সন্ধ্যায়
#পর্ব_৪
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)
“আমার কোন খবর না পেয়ে ইশান নাকি পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলো।ভালোবাসলে বুঝি মানুষের সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়, এটা আমি ইশান কে দেখে বুঝেছি। ওর সাথে কথা না বললেও ঠিকই ওর বন্ধুদের কাছ থেকে ওর খবর নিয়েছি। সত্যি বলতে ইশানের প্রতি হালকা দুর্বলতা আমার ও কাজ করতো কিন্তু কখনো প্রকাশ করি নি। এখন ওর পা’গ’লা’মো দেখে আমিও ওকে প্রচন্ড ভালোবাসে ফেলেছি। তাই ভাবলাম, ওকে আর কষ্ট দিবো না। কালকেই কলেজে গিয়ে ওকে মনের কথা বলে দিবো। এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম”।
“সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভা’ঙ’লো। ফুড়ফুড়ে একটা মন নিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম। ফোন’টা হাতে নিয়ে অন করলাম। আসলে এতোদিন রাগে ফোন অফ করে রেখেছিলাম, কারো সাথে কথা বলি নি। ফোন অন করতেই শতশত মেসেজ আর অনেকগুলো মিসডকল আসলো, সব ইশান করেছে। মুহুর্তেই মন’টা একটু খারাপ হয়ে গেলো। এতোদিন ওকে কত কষ্ট দিয়েছি। আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি গোসল করে, খাওয়া-দাওয়া করে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলাম। মাঝ রাস্তায় আমার ফোনে আননোন নাম্বারে কল আসলো। প্রথমে রিসিভ করবো না ভেবেও, পরে কি যেনো মনে করে রিসিভ করে ফেললাম। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে এক পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসলো”। তিনি বলছেন….
‘হ্যালো! আপনি কি রোদেলা বলছেন’?
‘জ্বী। কিন্তু আপনি কে বলছেন? আর আমার নাম্বার কোথায় পেলেন’?
‘আসলে ইশান চৌধুরীর ফোন থেকে আপনার নাম্বার পেয়েছি। ওনার ডায়াল লিস্টের প্রথমেই আপনার নাম্বার ছিলো। উনি একটি গুরুতর এ’ক্সি’ডে’ন্ট করেছেন। আমরা উনার জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে উনার পরিচয় জানতে পেরেছি। আমরা উনাকে নিয়ে সিটি হসপিটাল যাচ্ছি। আপনিও ওখানে চলে আসুন। হ্যালো…হ্যালো, আপনি কি শুনতে পারছেন? হ্যালো..’
“আমার কানে যেনো আর কোনো কথা যাচ্ছে না। আমার পৃথিবী যেন থমকে গেছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আজকেই ওকে নিজের মনের কথা জানাতাম আর আজকেই ওকে হারাতে বসেছি। এসব কি হচ্ছে আমার সাথে? কোনো রকমে একটা রিক্সা নিয়ে সিটি হসপিটালের দিকে চললাম। আমার চোখ দিয়ে কোনো পানি পড়ছে না, শুধু সামনের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে আছি। ওইযে কথায় আছে না, অল্প শোকের কাতর আর অধিক শোকে পাথর। আমার সাথে যেনো ঠিক এমন’টাই হচ্ছে”।
“হাসপাতালে পৌঁছাতে’ই দৌঁড়ে রিসেপশনে গিয়ে ইশানের কথা জিজ্ঞেস করলাম। তারা বললো, ইশানের অপারেশন হচ্ছে। ইশানকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেছে। আমি দৌঁড়ে সেখানে গেলাম। গিয়ে দেখি, সেখানে একজন বয়স্ক লোক আর একজন মহিলা আছেন, সম্ভবত তারা ইশানের মা-বাবা। আমি সেখানে যেতেই ভদ্র মহিলা হাত বাড়িয়ে আমাকে ডাকলেন”। আমি সামনে যেতেই, আমাকে জিজ্ঞেস করলেন…
‘তুমি’ই কি রোদেলা’?
‘হ্যা’
‘আমরা ইশানের বাবা-মা’।
‘আসসালামু আলাইকুম আন্টি। আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?’
‘ইশান তোমার কথা আমাদের বলেছে। আমার ছেলে’টা বড্ড বেশি ভালোবাসে তোমাকে। আমার ছেলে’টাকে বাঁচাও মা…আর কিছু বলার আগেই উনি কান্নায় ভে’ঙে পড়লেন।
“উনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। আমার চোখেও পানি, আমার শুধু মনে হচ্ছে এসব আমার কারনে হয়েছে। আমি যদি ইশানকে কষ্ট না দিতাম তাহলে এমন কিছুই হতো না। ইশান আমাকে ভালোবেসে কষ্ট ছাড়া কিছুই পেলো না। আমি ওকে কিছুই দিতে পারলাম না….এসব আকাশ-পাতাল ভাবছিলাম এর মাঝে ও’টি থেকে ডাক্তার বের হয়ে আসলেন। কিন্তু সে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমার বুক’টা হঠাৎ মুচড়ে উঠলো। তাহলে কি কোনো খারাপ খবর আছে? না, না আমি এসব কি ভাবছি, এমন কিছু হবে না। আমি দৌঁড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ইশানের কথা জিজ্ঞেস করতেই, উনি আমাকে যা বললেন তাতে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো। উনি বললেন….
চলবে…