#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 40.
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr [ Mêhèr ]
#…..

হাত দিয়ে কিছুক্ষন মুখ ঢেকে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে শুধু এইটুকুই বলে, —- ” সরি। আজ আমার জন্য সবার অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। এর চেয়ে ভালো নিজেকেই শেষ করে দি…। ”

কথাগুলো বলে ওভাবেই থম মেরে বসে রইল তুর। তীব্র চলে যাচ্ছে। হ্যা, যাবেই তো। এরকম মেয়ে জন্য কেউ কেন থাকবে? চলে যাক ও। কারো দরকার নেই। তীব্র এতদিন দূরে থেকে ভালো থেকেছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। আর ও নিজের মত ভালোই থাকবে।

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কাউকে নিজের সামনে অনুভব করে। তুর চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে রিদাম দাঁড়িয়ে আছে। তখনি দেয়াল ঘড়িতে টং…টং… শব্দ শোনা যায়। তুর তার দিকে তাকিয়ে দেখে ৯টা বাজে। ও রিদামকে দেখে চোখ নামিয়ে আবার হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে থাকে। তখন রিদম ওর পাশে বসে নিরহ কণ্ঠে বলে উঠে,
—– ” তুর তুমি বিশ্বাস করো, তোমাকে আমার সম্পর্কে যা যা বলা হয়েছে সব মিথ্যে
আমি এসব কিছুই বলিনি। ”

তুর চুপ।

—– ” আচ্ছা। তোমার বিশ্বাস না হয় তাহলে নিজেই ভেবে দেখ এতদিন তোমার সাথে আছি অথচ তুমি বুঝলে না। এটা হতে পারে।মিথ্যে বলেছে ওরা। ”

তুর ওর কথায় বিরক্ত। এসময় কারো কথা শোনার মত ইচ্ছে, ধৈর্য, মন-মানসিকতা কোনটাই তুরের নেই। তাই ও বেশ শান্ত কণ্ঠে বিরক্তির আভা ফুটিয়ে বলল,
—– ” আমার কথা বলতে ভালো লাগছে না রিদাম। প্লিজ এখান থেকে যাও। ”
—– ” কিন্তু… ”
—– ” প্লিজ…. ” হাত জোর করে রাগী ফেসে।

রিদাম আর কোন কথা বলল না। ও চলে যেতে উঠতে নিল। তখনি তুর ওকে ডাক দিল,
—– ” আই নিড আ ফেভার। করতে পারবে। ”

পিছন থেকে এমন কথায় রিদামের মন যেন নেচে উঠল। ও দ্রুত তুরের কাছে এসে মাটিতে দু’হাটু গেড়ে আনন্দে আত্নহারা হয়ে বলল,
—— ” সবকিছু। এভরি থিং…ক। যা তুমি বলবে। ”

তুর বিশেষ কিছু না বলে চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। আর রিদাম উত্তেজিত হয়ে ওর কথা শোনার জন্য আকুল হয়ে তুরের দিকে চেয়ে রইল৷ কিন্তু তুরকে চুপ থাকতে দেখে ও বলে উঠল,
—— ” কি হল তুর? বলো। যা বলতে চেয়েছিলে। ”

তুর সোজা হয়ে বসে হাতটা মুখ থেকে নামিয়ে নিল। জিহ্বা দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে তা কামঁরে ধরল। চোখে পানি ছলোছলো করছে। রিদম আবার জিজ্ঞেস করল,
—– ” কিহল? ”

তুর ভিজে উঠা গলার স্পষ্ট কণ্ঠে উত্তর দিল,
—– ” আমাকে……. ”

কথাটা শুনে বেশ অবাক হলো রিদম। কিন্তু পরক্ষনেই একটা শয়তানি হাসি ফুটে উঠল। তারপর বেশ নরম মুখ করেই বলল,
_—- ” আচ্ছা যদি এরকম চাও তাহলে তাই। যেমন চাইবে। আমি তোমাকে তো কোন কিছুর জন্য না করতে পারিনা। ”

তুর চুপ।

—– ” আচ্ছা তাহলে কি এখনি যাবে? ”

তুর রিদমের দিকে মৃত চাওনী দেয়। পরক্ষনেই অন্যদিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।

—— ” তাহলে চলো। ”

তুর আর কোন কথা বলে না। উঠে পরে। রিদমের মুখ খুশিতে জ্বলজ্বল করছে। এই সুযোগের আশাই করছিল ও।

★—————————-★————————–★

নিজের ফ্লাটে ফিরে লাইট অন করে নিল রিদ্ধ। হাতের ব্যাগটা রেখেই বিছানায় উপুর হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল।বড্ড ক্লান্ত লাগছে। তীব্র আর তাইয়্যানকে এয়ারপোর্টে ছেড়ে অফিসে গিয়ে সমস্ত কাজ শেষ করতে করতে অনেক দেরি হয়েছে। আপাতত কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিয়েছে। বিয়ের জন্য। খুব খারাপ লাগছে এত চেষ্টার পর তীব্রকে দেশে আনতে পারল কিন্তু লাভ কিছুই হলো না। যাওয়ার সময় অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু তীব্র বড়াবড়ার মতই নাছোড়বান্দা। নিজে থেকে কিছু না করলে কারো সাধ্য নেই তাকে দিয়ে কিছু করায়। ভেবেছিল সবকিছু ঠিক হবে কিন্তু ব্যাপারগুলো আরো বেশি ঘোলা হয়ে গেল। তীব্র যখন বলেছে আর ফিরবে না মানে ফিরবে না। আর তুর যে আরো খারাপ হবে তা নিশ্চিত। আর ভাবতে পারছে না। কোন সম্পর্ক না থাকলেও মানুষগুলো তো আপন৷

রিদ্ধ উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে। তখনি মোবাইলে রিং বেজে উঠে। চোখ পরতেই স্কিনে ভেসে উঠে ” মিস. জাতাকল”।
—— ” ওহ… নো।”

বলেই মোবাইলটা সাইলেন্ট করে রাখে। হ্যা মিস জাতাকল নামে ওর সন্দেহবাদী গার্লফ্রেন্ড নাম সেভ করা। এখন এই ফোনটা ধরে বিগড়ে যাওয়া মেজাজটা খিটখিটে করার ইচ্ছে হলো না রিদ্ধের। এখন কেন? কখনোই না। ও ফোন কল ধরবে না। আর বাবা-মা যেই মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে সেই মেয়েকেই না দেখেই এককথায় বিয়ে করবে। আর ভালো লাগে না। মোবাইলের স্কিনে দেখতে পায় ১০টা বাজে। আর ২ঘন্টা পর তীব্র আর তাইয়্যানের ফ্লাইট। যা হওয়ার হয়েছে এখন আর কিছু করার নেই। তাই এসব না ভাবাই ভালো। বড্ড পরিশ্রম হয়ে গেছে। একটা হট শাওয়ার নিয়ে ঘুম দিতে হবে। তাই আলসেমি ঝেড়ে রিদ্ধ বিছানা থেকে উঠে একটা টাওয়াল হাতে শাওয়ার নিতে গেল।

বেশ কিছুক্ষন পর শাওয়ার নিয়ে বের হলো। কেমন জানি জড়তা কাজ করছে। মুডটা ফ্রেশ করা দরকার। তাই ও আয়নার সামনে গেল। কথায় আছে লাইফের বোরিং, চিন্তা হতাশা দূর করার জন্য পাগলামী অন্যতম উপাদান।

রিদ্ধ বেশ কিছুক্ষন আয়নার দিকে তাকাল। নিজেকে একজন সুপুরুষ লাগছে। সুঠাম দেহের ফর্সা রং। কোন হিরোদের চেয়ে কম না। নিজেকে ভালো ভাবে দেখে নিল। গালটা ধরে ডান-বাম করে কোমরে হাত দিয়ে বলল,
—– ” জানিস রিদ্ধ সন্দেহ করা তোর গার্লফেন্ডের মানসিক রোগ না। বেচারিকে বুঝতে ভুল করেছি। আসলে তুই নিজেই এত হ্যান্ডসাম যে যেকোন মেয়েই ক্রাশ খাবে। আর তাইত সেই ভয়ে ও তোকে সন্দেহ করে। হে… হে… আজ এই সন্দেহবাদী গার্লফেন্ডের জন্য কেমন গর্ব হচ্ছে। কাতুকুতু লাগছে। ”

বলেই বিদ্যুতের মত ঝারা মারে রিদ্ধের শরীর।

—– ” যাই হোক। এত সুন্দর ছেলেটাকে যে বিয়ে করবে সেই মেয়ে তো ধন্য হবে রে রিদ্ধ। আরে রিদ্ধ তুই একটা মেয়ের গর্বের কারন হবি। ”

বলেই হাসা শুরু করল। তখনি কলিংবেল বেজে উঠল। বেশ বিরক্ত হলো রিদ্ধ। এই বিরক্তির জন্য আলাদা ফ্লাট নিয়ে থাকে। তবুও। উফফ… অসহ্য…। ওদিকে লেট হওয়ার জন্য ক্রমাগত কলিং বেল বেজেই চলেছে। বেশ বিরক্তি নিয়েই রিদ্ধ বলে,
—– ” আসছি রে বাবা। আমি কাঁলা না। ”

রিদ্ধ দরজা খুলতে খুলতে ঝাঝালো কণ্ঠে বলে,
—– ” এই কে রে? এমন সুখের মূহুর্তে ডিস্টাব করছিস। ”

দরজা খুলেই বড় রকমের ঝটকা খায়। দুইটা ঢোক গিলে নেয়,
—– ” তু…মি… ধূর কী বলি? ( মাথা ঝেড়ে ) স্যার আপনি! আপনি এখানে কেন? আপনি এয়ারপোর্টে… আপনি না.. ”

ভ্রু কুঁচকায় তীব্র।
—– ” এখানেই বলব নাকি ভিতরে ঢোকার অনুমতি ও পাব। ”
—– ” ভিতরে ঢুকবেন… ( অবাক হয়ে ) ও হে। প্লিজ আসুন। ”

তীব্র সন্দেহের চোখে রিদ্ধর দিকে তাকিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। তাইয়্যান ওর কোলে ঘুমাচ্ছে।
—– ” বেডরুম কোনদিকে? ”
—– ” এদিকে… ”

রিদ্ধ তীব্রকে বেডরুমে নিয়ে যায়। ও তাইয়্যানকে সেখানে শুইয়ে কাঁথা গায়ে দিয়ে কপালে চুমো আঁকে। তারপর রুম থেকে বেড়িয়ে আসে দরজা ভিড়িয়ে। সাথে রিদ্ধ ও।

তীব্র এবার সন্দেহের চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
—– ” তোমার কোন সুখের মূহুর্ত নষ্ট করেছি। কি এমন করছিলে। বিয়ের আগেই কী বউ..

এবার রিদ্ধের দিকে তাকিয়ে তীব্রের চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। ও আগা থেকে মাথা রিদ্ধকে স্ক্যান করে নেয়। এটা দেখে রিদ্ধ ভ্রু কুঁচকে তীব্রের দিকে তাকায়। সন্দেহের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমতা আমতা করতে করতে বলে,
–_– ” দেখুন স্যার, আ..মমি কোন মেয়ে নই যে আমাকে এভাবে দেখছেন। আমাকে এভাবে দেখবেন না। কেমন কেমন লাগে। ”

—— ” হোয়াট? ” ভ্রু কুঁচকে।
—— ” তা নয়তো কী? আপনি যেভাবে দেখছেন যেন আমি একটা মেয়ে। এমনিতে আপনার উপর আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। নাহলে বিয়ের এত বছর বউ ছাড়া…. ”

ওর কথায় রেগে যায় তীব্র,
—— ” স্টাট আপ রিদ্ধ। আমি কী দেখছি সেটা না দেখে নিজেকে দেখ। কী অবতার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো। ”

—— ” আমি তো ঠি…. ”

এবার নিজের দিকে তাকায়। দেখেই এবার ওর মাথা চক্কর দেয়। ও ভুলেই গেছে ও শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়েছে৷ পরনে শুধু একটা টাওয়াল তাও হাটু পর্যন্ত। আর কিছু নেই।নিজেকে আদি মানব লাগছে তীব্রের সামনে। এটা দেখে গাল ফুলিয়ে নিজের শরীর মেয়েদের মত ঢেকে নেয়।

—— ” ছিহহ. ছিহহ স্যার। আপনার নজর এত খারাপ। আমাকে এভাবে দেখতে পারলেন। এইজন্য বলেছি আপনার নজরে সমস্যা…. ”
—— ” জাস্ট গেট লস। এখুনি চোঞ্জ করে আসো। ”
—– ” আপনি… ”

—– ” আরেকটা বাজে কথা বললে দাঁত একটাও রাখব না। গো…. ”
—— ” ওকে স্যার। বুঝতেই পারছি আপনি কেন যেতে বলছেন…. ”
—– ” রিদ্ধ… ”
—– ” ওকে… ওকে। ( কিছুদূর গিয়ে ) কিন্তু স্যার একটা কথা ছিল। ”
—- ” রিদ্ধ.…”

রিদ্ধ আর কিছু না বলে চলে যেতে ধরে দরজার মাঝে একটা উস্টা খেল। ” স..সরি. ” তারপর ভিতরে চলেগেল৷ রিদ্ধের কান্ডে প্রচন্ড হাসি পেল। রিদ্ধ যাওয়ার সাথে সাথে তীব্র হেসে ফেলল। কিছুক্ষন পর একটা টাওজার আরেকটা টি-শার্ট পরে বেড়িয়ে এলো। তীব্র জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খেয়ে নিল। রিদ্ধ এসে তীব্রকে জিজ্ঞেস করল,
—– ” স্যার আপনি যাননি। ”
—– ” গেল নিশ্চয় এখানে আমাকে পেতে না। “রিদ্ধের মুখে হাসি…
—– ” ফিরে এলেন যে? ”
—- ” একটা ভুল হয়ে গেছে। সেটা ঠিক করতে। ”
*—- ” কী ভুল?”

তীব্র চেয়ারে বসে। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে,
—— ” যেই লাভা সৃষ্টি আমি করেছি সেই লাভার গতিপথ ঠিক না করেই চলে গেছি। আর এসে তা তাতিয়ে দিয়ে আবার চলে যেতে চাচ্ছিলাম। এটা ভুলে গেছি তাতে পানি ছিটালে তা নিভবে না বরং আরো প্রখর হবে। ”
—— ” তুরকে ফিরিয়ে নিতে এসেছেন। ”
—— ” ও নিজে থেকে ফিরবে না। ওকে আমি চিনি। ”
—— ” তাহলে… ”
—— ” তাইয়্যান আর তুর আমার শরীরের অংশ। একটা নিয়ে কিভাবে ভালো থাকব। তাছাড়া এইটাতো অস্বীকার করতে পারি না। তুরের এই অবস্থার জন্য কোথাও না কোথাও আমি দায়ী। ”
—— ” তাহলে কী করবেন? ”
—— ” জানিনা। এয়ারপোর্টে তাইয়্যান আমার কাছে মা চেয়েছে। ওর মাকে তো ফিরিয়ে দিতে হবে আমার। ”
—— ” তুরকে তাইয়্যানের কথা বলবেন? ”
—— ” নাহহ। ”
চমকায় রিদ্ধ..
—- ” কেন? ”
—- ” তাহলে তাইয়্যান দো’টানায় থাকবে।আর আমার উপর ওর রাগ আরো বেড়ে যাবে তুরের। এতদিন কেন বলিনি তার জন্য। ”
—– ” তাহলে… ”
—– ” তাইয়্যানকে দেখ। সকালে উঠে যদি আমাকে না দেখে কান্না করবে। আর আমার পরে ও তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি কম্ফোর্টেবল। তাই ওকে তোমার কাছে রাখলাম। ”
—– ” ওকে… ”
–_- ” আমি আসছি… ”

বলেই তীব্র উঠে দাঁড়ায়। রিদ্ধ সচকিত হয়ে বলে,
—— ” কিন্তু কোথায় যাবেন স্যার? ”
—— ” এমনি দেরি হয়ে গেছে৷ আসছি… ”

রিদ্ধকে আর কিছু না বলতে না দিয়েই বেড়িয়ে যায়। এটা দেখে রিদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
—– ” শেষ ভালো যার সব ভালো তার। শেষমেষ স্যার বুঝলেন তুরকে ছাড়া সে ভালো থাকবে না। যাই হোক, আমি চ্যাম্পের কাছে যাই। ”

বিছানায় তাইয়্যানকে শুয়ে থাকতে দেখে হঠাৎ মনে পরে এখন যদি ওর সন্দেহবাদী গার্লফ্রেন্ড ওকে দেখত তাহলে অবশ্যই বলত তাইয়্যান ওর ছেলে। হা… হা.. বেশ মজা হত।

—- ” হায়রে আমার জাতাকল। এ জীবনে তুই আর আমারে সন্দেহ করার সুযোগ পাবি না। কিন্তু পুরানো গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে যদি নতুন গার্লফ্রেন্ড সন্দেহ কর। ওহ নো… ”

★—————————★————————–★

তীব্র রিদ্ধের গাড়ি নিয়ে বেডিয়ে যায়। অস্থির হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে তীব্র। তুরের বাবার কাছে ফোন করে জানতে পারে তুর বাসায় নেই। ও রিদ্ধের কাছ থেকে সামের নাম্বার যোগাড় করে; ওর কাছে ফোন দিয়ে জানতে পারে তুর রিদমের সাথে বেড়িয়ে গেছে ক্লাব থেকে ৯টার সময়। তীব্র ঘড়ির দিকে তাকায়। পৌনে এগারোটা৷ ১০:৪৫। কোথায় যেতে পারে সামকে জিজ্ঞেস করলে সাম সঠিকভাবে বলতে পারবে না বলে। ওকে খোঁজ নিয়ে জানতে বলে। এমনি এমনি যে জানতে পারবে না। তা তীব্র ভালোই জানে। তাই যে, যার ভাষা বোঝে। তার বিনিময়েই তীব্র জানতে চাইল।

ওদিকে তুর নাইট ক্লাবের একপাশে বসে আছে। ৯টার সময় রিদমের সাথে বেড়িয়ে ছিল । কিন্তু একটু আগেই এখানে এসেছে। তখনি রিদাম এসে তুরকে ডাকে । তুর ওর ডাকে ঘোর থেকে বেড়িয়ে আসে। রিদাম একটা হাসি দিয়ে বলে,

—‘‘ তুমি যা চেয়েছিলে তার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। চলো। “
—- “ আমি কোথাও যাব না। এদিকে দেও। “

রিদাম হালকা হেসে একটা সিরিজ ওর দিকে এগিয়ে দেয়। তুর সাথে হাতে নেয় । তখনি রিদাম বলে উঠে ,
—- “ আমি হেল্প করব? “
—- “ নাহ.. আমি নিজেই পারব। “
—- “ ছেলেমানুষী করো না তুর। এটা কোন ড্রিংক নয় যে ওভার ডোজ হয়ে গেলে তেমন কিছু হবে না। এটা ইনজেক্টটিং ড্রাগস। তারপরে তুমি প্রথম । হের ফের হয়ে গেলে বড় রকম কিছু হয়ে যাবে। “

তুর ওর কথার উত্তরে আনমনেই বলে উঠল,
—- “ এই জন্য তো এসেছি। যাতে একেবারেই সবটা শেষ হয়ে যায়। আর কিছু ভাবতেই না হয়। “
—- “ কিছু বললে? “
—- “ কই কিছু নাতো। “ হুশ ফেরে তুরের.
—- “ আচ্ছা সিরিজটা দেও। আমি ইনজেক্ট করে দিচ্ছি। ’’
কিন্তু তুর দিল না। নিজে করবে বলে গোঁ ধরে রইল। রিদাম আর জোরাজুরি করল না । জানে তাতে লাভ নেই। তাই ওকে পরিমাপটা বুঝিয়ে দিল। তুর ওর কথা মত সিরিজে ইনজেক্ট করে নিল। কিন্তু শরীরে পুশ করার আগেই রিদাম বলল,
— “ রিদম আমার জন্য একটা ড্রিংস নিয়ে এসো প্লিজ। “
— “ কিন্তু… “
— “ প্লিজ… “
আর কোন কথা বলতে পারল না রিদম।
— “ ওকে । তুমি যা বলবে। “

তারপর চলে গেল তুরের কথা মত ড্রিংস আনতে। ও চলে যাওয়ার পর তুর দ্রুত ইনজেকশনে পুরোটা ড্রাগস ইনজেক্ট করে নিল। তারপর সেটা নিজের শরীরে ইনজেক্ট করার জন্য শরীরে তাক করল। রিদাম সামান্য যেটুকু দিয়ে গিয়েছিল তার তুলনায় কয়েকগুন বেশি না। বরং পুরোটায় নিয়েছে। এর মানেটাও ওর কাছে খুব ভালোভাবেই জানা যে, এটা নিলে কী হবে ওর। ও কয়েকটা ঢোগ গিলে গভীর নিশ্বাস নিয়ে নিল। তারপর সেটা নিজের বডিতে ইনজেক্ট করতে গেল।

ওদিকে তীব্র সামের কাছ থেকে জানতে পেরেছে তুর কোথায় ? ও দ্রুত সেই ক্লাবে যায়। মন খালি কু গাইছে। বার বার মনে হচ্ছে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে ও । তুরকে এভাবে নিজের কাছ থেকে যেতে দেওয়া কথা বলা ঠিক হয়নি। ক্লাবে ঢুকেই ও পাগলের মত খুঁজতে থাকে। হঠাৎ ওর শেষের দিকের কর্নারে চোখ যায়। তুরের মতই লাগছে কিন্তু স্বাভাবিক না। কাঁপছে প্রচন্ড । ও দ্রুত সেদিকে যায়। মেয়েটা তুরের মতই ড্রেস পরা । কিন্তু মনে হচ্ছে অচেতন। মুখ টেবিলের মাথা দিয়ে রয়েছে। তাই বোঝা গেল না। তীব্র কাঁপাকাঁপা হাতে মেয়েটাকে উল্টিয়ে চেহারা দেখতেই থমকে গেল। নাহহ এ তুর নয়। বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে ঘাম মুছে নিল। পুরো শরীর ঘেমে নেয়ে একসাথ। ও আবার এদিক ওদিক দেখল। ওই জায়গা থেকে বেড়িয়ে উপর দিকে দরজা দিয়ে বেড়িয়ে আবার কি মনে করে পিছু হেটে ফিরে এলো। নিজের বা দিকে মাথা ঘুরায়। হ্যা তুর। কিন্তু ওর হাতে কিছু আছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। তীব্র দ্রুত এগিয়ে যায়।

তুর এতক্ষন পর নিজেকে শক্ত করে নিয়েছে হ্যা ও ইনজেকশন পুশ করবেই। ও সুচটা চামরায় লাগিয়ে যেই মুহুর্তে ফোটাতে যাবে সেই মুহূর্তে তীব্র এসে ওর হাতে সিরিজ দেখতে পায়। কিছু করার আগেই তীব্র তুরের সিরিজ থাকা হাতটা টান দেয়। আর সেটা ওর হাত ফসকে পরে যায়।
—– ” তীব্র…. আপনি… ”

তীব্র ওর কথার জবাব না দিয়েই গিয়ে সিরিজটা তোলে। আর সাথে সেই শিশিটাও। ও সেটা নিজের নাকের কাছে ধরে। খুব ঝাঝালো লাগে। চোখ মুখ খিঁচে আসে। বুঝতে পারে কি হতে পারে। ও সিরিজের থাকা ডোজটা দেখে। সেটা দেখে রাগী চোখে তুরের দিকে তাকায়। বুঝতেই পারে এটা নেশা করার জন্য নেয়নি তুর। এই পরিমান ড্রাগস মানুষের শরীরে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত। ও ওগুলো ফেলে তুরের হাতটা ধরে ছোট করে বলল,
——- ” চলো… ”

কিন্তু তীব্রের ঠিক বিপরীত কাজটাই করল তুর। ও তীব্রের হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে চেচিয়ে বলে উঠল,
—— ” আপনি না চলে গিয়েছিলেন। তাহলে আবার ফিরে এলেন কেন? ”

তীব্র শান্ত গলায় বলল,
-;— ” আমার সাথে এসো। ”
তুর নিজের কণ্ঠে সেই তেজ নিয়েই বলল,
—– ” যাব না আমি। ”

এবার যেন তীব্রের সহ্য হলো না। তুরকে থাপ্পাড় মারতে ধরলেই ও চোখ বন্ধ করে নেয়। কিন্তু তুরকে অবাক করে দিয়ে ও থাপ্পড় মারে না। বরং ঘাড় ধরে নিজের কাছে এনে মিশিয়ে নিয়ে বলে,
_—– ” বিষ নিয়ে মরতে পারলে না তাই আমার হাতের মাইর খেয়ে মরতে চাচ্ছো?”

তুর নিজের ঘাড় ছাড়ানোর জন্য একপ্রকার যুদ্ধ করছে। কিন্তু তীব্র নাছোড় বান্দা। তুরের চুল ঝুটি করা। তাই ঘাড় ধরেছে। তুর ছটফট করছে শুধু….
—— ” ছাড়ুন বলছি। ”
—— ” তোমার মনে আছে তুর যখন প্রথম তুমি আমার কাছে এসেছিলে তখনও এরকম ভাবেই মরার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলে। তারপর মরার ভুত নামানোর জন্য কী করেছিলাম তা নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি? ”

তুর রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে শান্তভাবে বলে,
—— ” সব মনে আছে। আর তাইত আপনাকে ঘৃনা করি। এবার ছাড়ুন আমাকে। ” আবার সেই ছটফটানি।

হালকা হাসে তীব্র।
——- ” তখন শুধু বন্দীনি ছিলে। আর এখন তো ” তুমি “। আমার ভালোবাসার ” তুমি”। আমার বন্ধ দরজার ” তুমি”। তীব্রের “তুমি”। তাই মরতে চাওয়ার কথা বলো না অনেক বেশি দাম দিতে হবে তোমায়। ”
—– ” কী করবেন? সেবারের মত না মেরে মৃত্যু যন্ত্রনা দেবেন। ”

তীব্র নিজের মুখে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে বলে,
_—- ” তীব্রের রাগ যেমন ভয়ংকর ভালোবাসাও। তুমি শুধু আমাকে চিনেছ জানতে পারোনি… ”

—– ” ছাড়ুন। ”

তীব্র ওকে আরো কাছে নিয়ে আসে। মুখোমুখি দুজনেই।
—— ” তখন বন্দীনি ছিলে তাই মরণ যন্ত্রনা দিয়েছিলাম। আর আজ ” তুমি ” হয়েছে। ব্যাপারটা আলাদা। তাই এবার ভালোবাসার যন্ত্রনা পাবে। আর তীব্রের দেওয়া সবকিছুই তোমার সহ্যের বাইরে। তাই বলছি মরার ভুত মাথা থেকে নামাও। অনেক দামী আমার কাছে আমার বন্দীনি। মুক্ত আকাশে ছেড়ে দিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম কতটুকু স্বাধীনতা নিতে সক্ষম সে। কিন্তু তুমি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছ তুমি বন্দীনি হিসেবে সবচেয়ে পার্রফেক্ট। আমার #বন্ধ_দরজার_তুমি🖤 হয়ে। ”

তুরের চোখে পানি পরছে। রাগ, অভিমান, আর ক্ষোভ সবটা যেন মিলে একাকার হয়ে গেছে। তীব্র কখনো বদলাতে পারে না। রাগের চোখ দিয়ে ঝরা পানি গুলো ঠোঁট ভিজিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে তীব্র ওর ঠোঁটটা মুছে দেয়। তখনি হাতে ড্রিংস নিয়ে সেখানে রিদাম আসে। তুরকে কোন লোকের সাথে এতটা ক্লোজ দেখে ওর মাথা গরম হয়ে যায়। ও গ্লাসটা ভেঙে দিতেই তীব্র ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকায়। তখনি রাগে গজগজ করতে করতে বলে উঠে,
—— ” আমাকে তো নখ স্পর্শ করার সুযোগ দেওনা আর এখানে একটা লোকের সাথে। ”

রিদামের কথায় তুর ভয় পেয়ে গেল। নিজের জন্য না। রিদামের জন্য। কিন্তু রিদামের মুখে এই কথা শুনে নিচের দিকে তাকানো তীব্রের ঠোঁটে রহস্যময় বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। ও যা ভেবেছে তাই। তুর ওর দিকে তাকাতেই ও তুরের ঠোঁটে হালকা বাতাস দেয়। ওর হাসিতে কলিজা কেঁপে উঠে তুরের। ও তীব্রের চোখের দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত কণ্ঠে রিদামকে বলে,
—— ” রিদাম। এখান থেকে যাও। ”

কথাটা শুনে রিদামের আরো রাগ উঠে যায়। ওদিকে তীব্র তুরের ঘাড় ছেড়ে একহাতে ওর কোমর পেচিয়ে আরেকহাত দিয়ে ঝুটি থেকে বেড়োনো চুল গুলো কানে গুঁজে দিয়ে তুরের মখে হালকা ফু দিচ্ছে। যেন কেউ এখানে এসেছে ও দেখতেই পায়নি। এতে রিদামের রাগটা আরো বেড়ে যায়। ও তীব্রের দিকে এগিয়ে যায়। তীব্র পিছনে মুখ করে ছিল আর তুরের মুখ রিদামের দিকে। পিছন থেকে রিদামের আসা তুরের দুচোখে ভেসে উঠল। রিদাম ওকে টাচ করার আগেই তীব্র নিজেকে সরিয়ে ঘুরে রিদামকে একটা লাথি দিল। সেই সাথে একহাতে তুরকে খুব জোরে জড়িয়ে বুকের সাথে চেপে ধরল।
—— ” ড. রায়হান। আপনি যাকে চেয়েও টাচ করতে পারেন নাই তার একমাত্র হাজবেন্ড। বাই দ্যা ওয়ে, আপনি নিজের অজান্তেই আমার কনফিউশান ক্লিয়ার করেছেন। সো আপনাকে এখন কিছু করার মুডে নেই আমি
। চলে যান। ”
ও অবাক চোখে তুরের দিকে তাকায়। তুরের শান্তভাবে ওর বুকে থাকায় বুঝতে বাকি রইল না ও সত্যি বলছে। কিন্তু রিদাম ও ছাড়তে নারাজ।
—– ” তুর আপনার সাথে যাবে না। আর না নিয়ে যেত দেব। ”
—– ” তুর কী করবে সেটা ওর হাজবেন্ড ডিসাইড করবে। কিন্তু… একমিনিট তুমি তাহলে সেই রিদাম। যার কিনা আমার তুরকে বিয়ে করার সখ হয়েছে। আর আমি দেশে এসেছি জেনেও তুরকে এখানে এনে ড্রাগস….”

তীব্র মোবাইল নিজের পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা কল দিয়ে আবার তা কেটে দিল। রিদাম কিছু বলতে যাবে তার আগেই কতগুলো লোক ঢুকে গেল। আর এসেই তীব্রের ইশারায় রিদামকে ধরে ফেলল।
—— ” ছাড় আমাকে। ”
—— ” শরীরে শুধু হাড় থাকলেই হবে। ”

—– ” ওকে স্যার। ” কালো ড্রেসের একটা দানব-আকৃতির লোক বলে উঠল। তীব্র মাথা নেড়েই তুরকে কোলে তুলে নিল।
-_— ” কী করছেন? ছাড়ুন আমাকে। ”
—– ” ছটফট কম করো পাখি। নাহলে সময়ের আগেই ডানা ভেঙে ফেলব। ”

বেড়িয়ে আসতে ধরে রিদামের দিকে তাকায়।
_—- ” আমি একজন বিজনেসম্যান। গুন্ডা নই। এসব থার্ডক্লাস জিনিস আমাকে মানায় না।কিন্তু কী করার? কুকুরের লেজ টানলে সজা করা যায় না। তাই কেঁটে ফেলার উত্তম। ”
তীব্র আর কথা না বলে তুরকে কোলে নিয়ে বাইরে চলে এলো। আর তুর নিজেকে ছাড়ানোর জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ট্রাই করছে। বাইরে এসে গাড়ির দরজা খুলে খুব জোরেই সামনের সিটে ছুড়ে মেরে দরজা আটকে গাড়ি লক করে দেয়। তারপর নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে। কিন্তু তুর তো তুর। আরো বেশি পাগলামি শুরু করে চলেছে। কিন্তু তারপরেও ও গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিন্তু তুরের জন্য কিছুদূর যেতেই ফাকা রাস্তায় একটা বিদ্যুতিক পিলারের সাথে ধাক্কা লাগতে ধরে। তীব্র কোনমতে সামলায়। আরেকটু হলেই মারাত্তক কিছু হয়ে যেত। তীব্র রাগী চোখে ওর দিকে তাকায়। তুর নিজেও রাগে ফুসছে। ও তুরকে টেনেই ওর কানের নিচে গলার দিকে ঠোঁট ছোয়ায়। তুর ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ওর হাত ধরে আস্তে আস্তে ওকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে পুরোপুরি জড়িয়ে নেয়। তুর কিছুটা শান্ত হয়েও বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে ওকে দেখে যাচ্ছে।

—– ” এভাবে না জ্বালিয়ে মেরে ফেলুন। ”

আবার হাসে তীব্র। একহাতে তুরকে শক্ত করে জড়িয়ে সকালে থাপ্পাড় দেওয়া গালে আলত করে হাত ছোয়ায়। আলত করে চুমো দেয়। তারপর মোহিত গলায় বলে,
—— ” কতবার বলব নিজের পায়ে কুড়াল মারার মত বোকা আমি নই। তুমি আমার। তোমার রাগ, জেদ, ভালোবাসা, ঘৃনা, প্রেম সব আমার। তোমাকে মারার কোন লাভ দেখিনা আমি। আর নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে। তাই নিজের একমাত্র যন্ত্রনার ভালোবাসাকে শেষ করে যন্ত্রনার সুখ থেকে বঞ্চিত করতে চাই না। ভালোবাসার সবকিছু ভালোবাসাই হয়। আর সেটা জোর করে তুর নামের কাউকে তীব্রের #বন্ধ_দরজার_তুমি🖤 করে হলেও…..

,
,

,
,
,
,
,
[ বাকিটা পরের পর্বে জানবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here