#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 38
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr [ Mêhèr ]
……

—– “ তারপরের কথা তো আপনি জানেন । আপনি চাননি তুরের কথা জানতে । আর তাই জন্য আমিও বলিনি। সো সে দোষ আমার নেই। যদিও আমিও চাই নি। দায় বোধ থেকে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনার বারণে সে দায় বোধের প্রয়োজন মনে করিনি। ”

তীব্র চুপ।

—- “ এখন যা করবেন আপনার ইচ্ছে। অনেক তো ভুলের মাসূল দিলেন। আর কত? তবে নিতান্তই যদি তাইয়্যানের মা হিসেবে ওকে চান তবে ভেবে দেখবেন। সত্যি কথা বলতে…..”

রিদ্ধকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে উঠে,
—- “ তুরকে এখন কই পাব? “

—- ‘‘ কিন্তু স্যার? “
—- “ তুরকে এখন কই পাব?” খুব জোরে চিল্লিয়ে । ওর আওয়াজে কেঁপে উঠে রিদ্ধ।
— “ স্যার…স্যার ওনি….. “

★—————————★—————————★

প্রচন্ড রেগে ড্রাইভ করছে তীব্র। গন্তব্য তুর। তীব্রের জীবনের গতিপথটাই অদ্ভুত হয়ে গেছে। যেদিকে যেতে চায় না কেন ঘুরে ফিরে তার পথ শেষ হয় তুরের মাঝে। যতটা না অবাধ্য এই মেয়েটা তার চেয়েও কয়েকগুন বেশি প্রয়োজন অনুভুব করে। কিন্তু অনেক হয়েছে তুরকে চাইতে চাইতে ক্লান্ত ও। পরিশ্রান্ত হয়ে পরেছে। জীবনের শেষ সীমা অব্দি চেয়েছে। আর আজ ক্লান্ত হয়ে পরেছে। অনেক হিসেব-নিকেশ বাকি আছে তুরের সাথে আজ তা মেটাতে হবে। জানতে হবে কী চায় তুর? আর পারছে না এই বোঝা মেনে নিতে। বড্ড হাপিয়ে উঠেছে ও। ওয়াদা করেছিল তাই দূরে থেকেছে। আজ ফিরেছে তাইয়্যানের জন্য। কিন্তু যা শুনেছে তাতে কিভাবে তাইয়্যানের মা হবে? ভেবে পায় না ও..

হঠাৎ করেই তীব্র গাড়ি থামায়। হ্যা, ও সেই ব্লিন্ডিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে সামের ক্লাব। রিদ্ধ ওকে এখানের ঠিকানা দিয়েছে। তীব্র রেগেই গাড়ি থেকে নামে। জানেনা কেন এসেছে এখানে? কী চায় ও? তবুও এসেছে। হয়ত এইটা ভেবে সবার কথা মিথ্যে হবে। হয়ত যা শুনেছে সত্যি নয়। মনের কোণে এখনো ক্ষীণ একটা আশা আছে। মানুষ যতই খারাপ কিছু শুনুক না কেন? নিজ চোখে দেখা না হওয়া পর্যন্ত সে চায় সবার কথা মিথ্যে হোক। একটা মিরাক্কেল চায়। যাতে সবটা ঠিক থাকুক। ও তুরের উপর প্রচন্ড রেগে থাকলেও এই দোয়াই করছে ওর ভাবনা যেন ভুল হয়। নিজের ভাবনা সঠিক করতে চায় না। মতিষ্ক সবসময় কম্ফোর্ট জোন চায়। তীব্র ও তাই। ও মিথ্যে সান্ত্বনা দিচ্ছে নিজেকে। যদি সবটা ঠিক হয়ে যায়। সেই আশায়।

এতসব ভাবনা চিন্তা করার পর তীব্র পা বাঁড়ায় ছাদে থাকা সামের ক্লাবের দিকে। তীব্র ছাদে যেতে তেমন বেগ পায়নি। এখানে কত মানুষই তো আসে। তীব্র ও তাই।

তীব্র ক্লাবে গিয়ে আশ-পাশ দেখতে চাইছে। ক্লাবের পরিবেশ বাকি ক্লাবের মতই। তখন তীব্রের কাছে একটা ছেলে এসে জিজ্ঞেস করে,
—– ” এইখানে পুরোনো বলে মনে হচ্ছে না। নতুন? ”
তীব্র ছেলেটার দিকে কেয়ার না করেই আশ-পাশে তুরকে খুঁজতে লাগল। ছেলেটা ওর সামনে ডান হাতে তুরি বাজিয়ে বলল,
—– ” হে ব্রো। কথা বলছ না যে। ”

তীব্র এবার ছেলেটার দিকে তাকাল। হাফ প্যান্ট সাথে হাতা কাটা স্যান্ডেল গেঞ্জি। কোথায় কোথায় যে কানের দুল পরেছে ইয়াত্তা নেই। হাতে তো মেয়েদের মত কিসব পরে আছে। মাথার দু-পাশে খালি মাঝে মোরগের ঝুটির মত কয়েকগুচ্ছ চুল। বোঝাই যাচ্ছে এটা মোরগের বংশভুত কোন মানুষরুপি প্রানী। যে ওর সামনে বলছে “ম্যাহা….🐮🐮” যার সাথে তীব্রের কথা বলার ইচ্ছে নেই। ও বিরক্তির ভাব প্রকাশ করল। কিন্তু প্রানীটা মেভি তীব্রের কথা বুঝতে পারেনি। তাই “ম্যা…” ছেড়ে “হাম্বা”🐮 ডাকা শুরু করেছে।
—–” হে ব্রো তুমি কী আমার কথা শুনতে পারছ না। আমি ছাড়া এইখানের সদস্য হতে পারবে না। সো রেসপেক্ট মি… ”

এবার আর তীব্রের সহ্য হল না। জোকারের কাজ সবসময় মজা লাগে না। সো ছেলেটা না সরার কারনে তীব্র একটু কপালে আঙুল দিয়ে স্লাইড করে নিজের হাতাটা টেনে দিল এক থাপ্পাড়। একথাপ্পাড়ে মূলত চোখ উল্টে গেল। কিছুক্ষন চক্কর খেয়ে ছেলেটা বলল,
—_ ” ভাই! আমি তো মজা করছি। বলুন কি দরকারে এসেছেন। ”

এবার যেন তীব্র স্যাটিসফাই হল।
—– ” তুর। তুর কই? ”

—- ” তুরকে দিয়ে কী করবেন? ওই মেয়ে যা জিনিস? পুরাই বোম্বাই… ”

তীব্র রাগী চোখে তাকাতেই গলার সুর নরম করে বলে,
—— ” সে যাই হোক আমার কী? সামনে গিয়ে বা‘দিকের কর্নারে যে স্পেশাল রুম আছে সেটা তুরের। আমি যাই ভাই। ভালো থাকবেন।

বলেই তীব্রকে সালাম দিয়ে পাশ কেটে গেল। তীব্র নিজের গন্তব্য হেটে যাচ্ছে। আশেপাশের মেয়ে গুলো ভ্রু কুঁচকে দেখল ওকে। ও সোজা তুরের রুমটায় ঢুকল। আর রুমে গিয়ে যা দেখল তাতে পুরাই “থ”। তুর সেদিনের মতই টি-শার্ট জিন্স পরে সিগারেট টানছে। মূহুর্তেই তীব্রের দুনিয়া চক্কর দিল। তুর পাশে থাকা ডিংসের গ্লাস হাতে নিতেই দরজার দিকে চোখ গেল। হাতের থেকে গ্লাস আর সিগারেট দুটোই পরে গেল। ও দ্রুত বসা থেকে দাঁড়িয়ে শুধু এইটুকু বলতে পারল,
—– ” তীব্র আপনি… ”

আর কিছু বলার সুযোগ পেল না। তীব্র এসেই শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে পরপর দু’টো চড় বসিয়ে দেয় তুরের গালে। একই গালে পরাপর দু’টো চড় এতই দ্রুত লাগে যে তুর কিছু বুঝে উঠার আগেই সব নিরব। লাঠি দিয়ে ফাকা মেঝেতে বাড়ি দিলে যে শব্দ হয় ঠিক সে-রকম প্রতিধ্বনি হতে লাগল চারদিকে। তুর সোফায় মুখ থুবড়ে পরে। কয়েক মুহুর্তে ফর্সা গাল লাল হয়ে নীলাভ হতে শুরু করে। তুর সোফা থেকে মুখ তুলে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে,
—– ” হাউ ডেয়ার ইউ… ” আবার সেই শব্দ। উঠার আগেই ঠিক একই গালে আরেকটা চড় বসায় তীব্র। এবার তুরের চোখ দিয়ে আপনাতেই পানি পরতে শুরু করছে। ও আর উঠার সাহস পেল না। যেই অবস্থায় তীব্র ওকে দেখেছে তাতে এই থাপ্পড় যে কিছুই না তুর জানে। তুরকে এখন মেরে ফেললেও ওর রাগ কমবে না। মরাটা বড় কথা না। কিন্তু এই থাপ্পাড় খাওয়ার সহ্য ক্ষমতা আর নেই। তাই ও সোফায় হাটুতে মুখ গুঁজে “দ” স্টাইলে বসে রইল। ওখানের রীতিমতো তীব্রের আর তুরের এই বিহেভে অবাক। তখনি একটা ছেলে এসে বলল,
—– ” কে রে তুই? এই ক্লাবে এসে এখানের মেয়েকে… ”

তীব্রের আর সহ্য হলো না। একে তো তুর চুপচাপ বসে থেকে ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। তুর কিছু বললেও তো ওকে কয়েকটা চড় দিত। কিন্তু তুর চুপচাপ থেকে রাগটা আরো বাড়িয়ে দিল। তার উপর এই ছেলের হিরোগিরি। সহ্য হলো না। ও ছেলেটার মাথাটা পাশে থাকা কাচের টেবিলে সাথে সজোরে আঘাত করে চেচিয়ে বলল,
—- ” এখানের কারো যদি আমার আর তুরের কথার মাঝে নাক গলানোর ইচ্ছে হয় তবে তার এই হাল হবে। ”

ওর কথায় কেঁপে উঠল তুর সহ সকলে। তখনি সাম এসে, ” এখানে কী হয়ে… ছেছ.. ( তীব্রের দিকে নজর পরতেই বলে ) ড. রায়হান। ”

তীব্র রাগী চোখে ওর দিকে তাকায়।

—– ” সরি স্যার। ওনারা আপনাকে চিনতে পারে নাই। ওই জায়গা খালি কর। ”

সবাইকে নিয়ে বেডিয়ে গেল সাম। বাইরে এসে এক প্রকার হাফ ছেড়ে বাঁচল। তখনি একটা ছেলে এসে জিজ্ঞেস করে,
—- ” কিরে তুরকে রাইখা আমাগো বাইর কইরা দিলি যে? লোকটা যদি তুররে কিছু করে। ”
কথাটা শুনেই সাম ছেলেটাকে থাপ্পাড় মারে।
—- ” আরে নিজে বাঁচলে বাপের নাম। এইটাই হলো ড. রায়হান। তুরের সেই হাজবেন্ড। ভাবছিলাম তো তুররে ছাইরা দিছে। কিন্তু এর দেহি বউয়ের প্রতি দরদ কম না। ”

তুর এখনো গুটিশুটি মেরে বসে আছে। তীব্র ওর চুপ থাকায় কিছু বলতে পারছে না। ও নিজেকে শান্ত করে তুরের সামনে সোফায় বসে পরে। তারপর মাটি থেকে জলন্ত সিগারেট উঠায়। সেটা তুরের দিকে এগোতেই তুর অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে তীব্র সিগারেটটা ওর দিকে এগিয়ে বলে,
—– ” কিহল তুর নেও? আমাকে দেখে ফেলে দিলে কেন? তুমি তো আমাকে বলেই দিয়েছ তুমি আগের মত নেই বদলে গেছ। আমিও মেনে নিছি। তাহলে ভয় কেন পাচ্ছ? ”

তুর চুপ। একেবারেই স্তব্ধ। হাত-পা কাঁপছে।
—- ” আমাকে রাগিও না তুর। যেটা বলছি সেটা করো। ধরো বলছি সিগারেট। ”

তীব্রের ধমকে কেঁপে উঠে ও। তীব্র ইশারা করতেই কাঁপাকাঁপা হাতে তা ধরে। কিন্তু তীব্রের দিকে তাঁকানোর কারনে ভূল বশত জলন্ত দিকটা ধরে সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে নেয়। আর তীব্রের হাত থেকে সেটা পরে যায়। এটা দেখে তীব্র একবার সিগারেট আরেকবার তুরের দিকে তাকায়। এবার বেশ শান্ত গলায় বলে,
—– ” মাটি থেকে তোলো। ”

তীব্রের কথামত ও তোলে ঠিকি। কিন্তু কাঁপছে কী করতে চাইছে বুঝতে পারছে না। তখনি তীব্র বলে,
—– ” মুখে দেও। দেও। ”

এতক্ষন তীব্রের কথা শুনলেও এবার যেন সাহসে কুলালো না। তীব্রের কথা মানতে আরো ভয় লাগছে।
—– ” কিহল দেও। ”
—– ” আ.. আয়াপনি… ”

আর কিছু বলতে পারল না রক্ত জমাট বাধা গালে আরেকটা থাপ্পাড় দিয়েই তুরের গাল দু’টো চেঁপে ধরল।
—– ” এখন কেন পারছিস না। একটু আগে যেটা করলি সেটা আমার সামনে করতে বাধছে তোর। এই ঠোঁটে তুই সিগারেট ছুঁইয়েছিস যেখানে আমি আমার ভালোবাসার পরশ দিতাম। এত সাহস হয় কি হয় তোর…”

এবার তুর আর শান্ত থাকতে পারল না। ব্যাথায়, যন্ত্রনায় হুহু করে কেঁদেই দিল। সেই কান্না যা ও ৫ বছর আগে কাঁদত। তীব্রকে ভয় পাবার সেই কান্না। ভেবেছিল তা ভুলে গেছে । কিন্তু…
—– ” আমার লাগছে ছাড়ুন তীব্র। প্লিজ ব্যাথা পাচ্ছি। ”

-_— ” তাই নাকি? তা কই ব্যাথা লাগছে। আমার তো মনে হয়েছিল স্বভাবের সাথে নিজের শরীরের পরিবর্তন করেছিস। আমার ছোয়ায় অনুভুতি যেমন ভুলে গেছিস তেমনি আমার দেওয়া ব্যাথাও গায় লাগে না। ”

তুর কাঁদতে কাঁদতে বলল,
—– ” আমার সত্যি লাগছে।”

এইটা শুনে ও তুরকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। তারপর ডিংসের বোতলটা হাতে নিয়ে বলে,
—— ” সেই ব্যান্ড যা আমি কখনো খেতাম। যাই হোক। এখন একটা কথা বল রিদাম কে? আর তোর সম্পর্ক কি? আচ্ছা বাদ দে। সম্পর্কের ব্যাপারটা পরে হিসেব করব। ও কি জানে না তোর স্বামী আমি। আছি না ছিলাম পরের কথা। তারপরেও ও কিভাবে তোকে বিয়ে করতে চায়। আর তুই আমার…. ( তুরের চুল গুলো ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে ) তীব্র তার ব্যবহারের টিস্যু পেপার কাউকে টাচ করতে দেয় না। সেখানে তুই আমার ভালোবাসার একমাত্র আলো ছিলি। তোর সাহস কিভাবে হলো আরেকজনের কাছে যাওয়ার। ”

উঠে দাঁড়িয়ে সজোরে টেবিল লাথি মারে। তুর কি করবে বুঝতে পারছে না। তীব্র রিদামকে নিয়ে যা বলছে তাও যেন বোধগম্য হচ্ছে না। নিজের দিশা হারিয়ে ফেলেছে।

—— ” কিরে কথা বলছিস না? ( আশেপাশে কিছু দেখল। একটা হকিস্টিক পেয়ে তুরের দিকে মারতে গেল। কিন্তু না। ও আশেপাশের সবকিছু ভাঙতে লাগল। পুরো তছনছ করে দিয়েছে।) রিদাম কে? কী সম্পর্ক? ভালোয় ভালোয় বলছি বল তুর। নাইলে কিন্তু…. ”

—— ” আমি… ” কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেছে। শ্বাস নিতে পারছে না।
—– ” আজকে হয় তোকে মারব। তারপর নিজে মরব। অনেক শখ না মরার। তাই এসব গিলছিস। যা তোর শখ পুরন করে দিব। বল রিদাম কে? ”
—–” রি… ( কথায় আসছে না। )

তীব্র ওর কাছে এসে হকিস্টিকটা তুলতেই তুর ভয়ে তীব্রেরি পেট জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। দুনিয়ার সবচেয়ে সেইভ স্থান। কেউ চাইলেও পারবে না এইখান থেকে ওর কোন ক্ষতি করতে তীব্র নিজেও না। সম্ভব না তীব্রের পক্ষে। তীব্র হকিস্টিক হাতে নিয়ে কাঁপছে। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। একসময় স্টিকটা পরে যায় হাত থেকে। ও তুরের মাথাটা কাঁপাকাঁপা হাতে ধরতে যায়। কিন্তু কোথাও একটা আটকে যায়। এতকিছুর পর তীব্রের একটা কথা মানতে কষ্ট হচ্ছে ও ছাড়া তুরের মনে অন্য কেউ থাকতে পারে। অন্য কেউ ছুঁতে পারে ওকে। না এটা কিছুতেই পসিবল না। সবটা সত্যির মাঝে এটা মিথ্যা। তুর শুধু ওর। অন্য কারো নয়।

তুর কিছু বলতে পারছে না। অনবরত কেঁদেই চলেছে। তীব্র নিজেকে ওর থেকে ছাড়িয়ে ওখানেই হাটু গেড়ে বসে পরে। তুরের হাতে আলত করে ঠোঁট ছুঁইয়ে নিজের হাতে আবদ্ধ করে বলে,
—– ” ভালোবাসার জন্য তোমাকে দেওয়া কথা রাখতে তোমার থেকে দূরে চলে গিয়েছিলাম। নিজের দেওয়া কথা বারবার বাধা হয়েছে তোমার কাছে ফিরতে। কিন্তু কথায় আছে না মন ঠিকি ভালোবাসার রাস্তা খুঁজে নেয়। আমিও তাই করেছি। তোমাকে তোমার কাছ থেকে নেওয়া দামী কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার অজুহাতে তোমার কাছে এসেছিলাম। অন্য বাহানা দিয়ে তোমাকে পেতে চেয়েছিলাম। যাতে তোমাকে দেওয়া কথা ক্ষুণ্ণ না হয়। তবুও তোমাকেই চাই তুর। দেখ না যাকে কাউকে দেখতে দিতে চাইনি নিজের চোখে আগলে রাখতে চেয়েছি সে নাকি অন্য কাউকে ( কিছুক্ষন থেমে ) আমাকে আঘাত করতে নিজেকে কোথায় নামিয়ে নিয়েছ জানো? আমাকে কষ্ট দিতে নিজের মানুষদের ও কষ্ট দিয়ে ফেলেছ। ”

তীব্রকে জড়িয়ে শুধু কাঁদছে।

—– ” আর পারছি না আমি। সবটা তোমার থাক। যেটা তোমাকে দিতে এসেছিলাম সেটার অযোগ্য তুমি। তার যোগ্যতা তোমার নেই। আর অপ্রাপ্তিতে দান করব না আমি। তুমি তোমারটা নিয়ে থাক। আমি আমারটা। এরপরে নিজেকে আর নিজের চোখে ছোট করতে পারব না। ভাল থেক। ”

তুর নিজের থেকে ছাড়িয়ে চলে গেল তীব্র। আর তুর সেখানেই বসে কাঁদতে লাগল। তীব্র সোজা তুরের বাড়িতে ওর বাবা-মায়ের কাছে। তীব্র দরজা নক করতেই তুরের মা দরজা খোলে। তীব্রকে পুরোপুরি বিধস্ত লাগছে।

—— ” তুমি? ”
—– ” আপনার হাজবেন্ড কোথায়? ”
তীব্রের কথায় অপ্রস্তুত হন ওনি। তখনি তুরের বাবা তাহনাফ রহমান আসে। ওনাকে দেখে তীব্র ক্ষেপে যায়,
—— ” কি বলেছিলেন আপনারা? আমি না থাকলে আপনাদের মেয়ে খুশি থাকবে। আর আপনার বড় ভাই কি বলেছিল, আমার ছেলে আর আমি আপনার মেয়ের জন্য অভিশাপ স্বরুপ। কাল সাপ। যে কিনা আমার সন্তানের মৃত্যু কামনা করেছিল। ”
—– ” আমার কথাটা… ”
—– ” কোন কথা শোনার নেই। কম অপমান পাইনি আপনাদের থেকে। নিজের সবকিছু ভুলে আপনাদের জন্য পরে ছিলাম। কিন্তু আপনারা। আপনাদের কথায় বাধ্য হয়ে আমি আমার দুধের শিশুকে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। মা ছাড়া বড় করেছিলাম। এমনকি আপনাদের বলেছিলাম ছেলের কথা তুরকে জানাতে। কিন্তু আপনারা নিজেদের মেয়ের ভালোর জন্য তা করেনি। ”

চুপ করে আছেন। তিনি তার ভাইয়ের কথাতেই এসব করেছেন।

—– ” ভালো হয়েছে আপনার মেয়ের। সুস্থ হয়েছে কিন্তু স্বাভাবিক না। নিজেদের বুঝ বুঝেছেন মেয়ে কি চায় জানতে চাননি। সো এখন আমার কিছু করার নেই। আমি নিজেকে অপমান করে বার বার পারব না। ”

—– ” ভুল হয়ে গেছে। তার মাসুল দিচ্ছি আমরা। অনেক চেষ্টা করেও তুরকে ফেরাতে পারিনি। এখন যদি তুমি না…. ”

—– ” পারব না আমি। বার বার সব কিছুর দায় নিয়ে ক্লান্ত আমি। সেদিন আপনাদের অনুরোধে বাধ্য হয়েছি। আপনাদের কথায় পারিনি ওর সাথে কথা বলতে আর আজ… পারব না। ”

চুপ আছে ওনারা।

—– ” চলে যাচ্ছি আমি। যেখান থেকে এসেছিলাম সেখানে। তুরকে শুধু ভালোবাসা খাতিরে মেনে নিতাম যদি না তাইয়্যান থাকত। তাইয়্যানকে তুরের মত মা দিতে চাই না। ভালো থাকবেন। চলে যাচ্ছি। ”

—– ” শোন…. ”

—– ” আরেকটা কথা তুর যেন কোনদিন ছেলের ব্যাপারে জানতে না পারে।। মেয়ের ভালোর জন্য যখন ওকে বলেনি। তখন দয়া করে স্বার্থপর হয়ে এবার বলতে যাবেন না। কারন আমি আর ফিরব না।।জানলে আপনার মেয়ে খারাপ বই ভালো হবে না। আসি….. ”

আর কথা না বলে বেড়িয়ে যায়। ও সত্যি চলে যাওয়ার জন্য মনস্থির করেছে। থাকবে না ও আর এইখানে চলে যাবে।
.
.
.
..

.
.
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোেতে জানবেন । ]
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here