#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 37
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr [ Mêhèr ]
…….
দুজনের মধ্যকার পিনপতন নিরবতা কাটিয়ে তীব্র মুখ তুলে তুরের চোখের দিকে তাকিয়ে ,আলত ভাবে ঠোঁট ছোয়ায় ওর ভেজা চোখে। তুর বড় বড় শ্বাস ফেলে কিছুক্ষন ওভাবেই তীব্রর বাহু বন্ধনে থাকে। চোখ এখনো বন্ধ। এতক্ষন পর যেন বুঝতে পেরেছে, যা ঘটেছে তা ওর অবচেতন মনের খেয়াল নয়। ওর সামনে সত্যি তীব্র। এই ছোয়া , এই অনুভূতি ,এত আবেগ না মিথ্যে , না কল্পনা। সবটাই বাস্তব। এতক্ষন পর ও চোখ মেলে। আস্তে আস্তে তাকায় তীব্রের চোখের দিকে……..
তীব্র অপলক চাওনিতে দেখছে তুরকে। পরিবেশ, পরিস্তিতি আর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো এতক্ষন না বুঝলেও এবার যেন তা বোধগম্য হচ্ছে। সব কিছু বদলেছে। সময়, পরিস্থিতি,চাওয়া-পাওয়া,লেনা-দেনা, জীবনের মানে, এমনকি তার গতিপথ। কিন্তু ভালোবাসার সেই আবেগ, উন্মাদনা, দিশাহীন অনুভূতির সামান্য ব্যতিক্রম হয়নি। তীব্র আগের মতই আছে। চেহারা, ঠোঁট আর সেই ভয়ংকর দৃষ্টির নিরব চাওনী। যেই চাওনী শুধু তুরকে ঘিরে।
কিন্তু বলা হয়েছে ৫ বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু। তীব্র আগের মত হলেও সেই তুর আর আগের মতন নেই। থাকবেই বা কি করে , নদীও যে নিজের গতিপথ পাল্টায় । সেখানে তুর তো মানুষ। তীব্রের ভয়ে যে চুপসে যাবে, ভালোবাসা বা রাগের যেকোন ছোয়ায় কাতর হবে, হাজারো অভিমান জমে থাকার পরেও তাকে নিজের থেকে দূরে সরাতে ব্যর্থ হবে। হারিয়ে যাবে অনূভুতির স্পর্শে ।এটা ভাবাটা নিছক বোকামি।
সেই তুর আর নেই। হ্যা, বদলে নিয়েছে নিজেকে। এখন আর ইচ্ছে করে না কারো বুকে মাথা দিয়ে ঘুমাতে।চায় না মাথায় বিলি কেঁটে কেউ ওকে ঘুম পারাক। কেউ ওর কেয়ার করুক। ভাবুক ওর কথা। মানিয়ে নিয়েছে নিজের বর্তমান জীবনে। অগোছালো হলেও এটাই ওর গোছানো জীবন। এই জীবনে খুশি ও । ফিরতে চায় না স্বাভাবিক জীবনে। তাহলে কেন এসেছে তীব্র? তখন অভিমানে চাইত না। আর এখন প্রয়োজনবোধ করে না। ভালো আছে। নিজের দুনিয়ায়, নিজের খুশিতে, নিজের মত করে গুছিয়ে নিয়েছে নিজেকে। যদিও সেটা অন্ধকার জগৎ। বস্তুত তুরের কাছে সেটাই জীবনের মানে…… বাঁচতে চায় ও নিজের জগৎ নিয়ে…
কিন্তু তবুও কেন কন্ঠস্বর বেইমানি করছে? শব্দদ্বয় যেন বেড়োতেই চাইছি না। বার বার আটকে আসছে। তুর দু‘চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করল। গভীর নিশ্বাস নিয়ে প্রকৃতি থেকে শক্তি সঞ্চয় করতে চাইছে। দু‘হাত মুঠ করে দু’টো ঢোক গিলে নিল। নিশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তুর নিজের চোখটা খুলে তীব্রের দিকে তাকায়। এতক্ষন যে মুখে মোহনীয়তার কাতরতা বিরাজ করছিল কিছুক্ষনের ব্যবধানেই তা কঠোরতার রুপ নিতে বিলম্ব করল না।
শান্ত গলার প্রশ্ন, ” কেন এসেছেন এখানে? ” কন্ঠের স্থীরতা তীব্রকে ধোকা দিতে পারেনি। শান্ত ভঙ্গির কঠোরতা তীব্রের কাছে স্পষ্ট। একটুও বিচলিত হলো না। তুরকে সে চেনে। এতদিন পর তুর যে তার জন্য বরমাল্য নিয়ে অপেক্ষায় থাকবে না। সেটা তার অজানা নয়। কিন্তু অভিমানের পরিমান কতটা সেটা মাপতে হবে। তাই মুখে প্রশান্তির আভা ফুটিয়ে নিচের দিকে চোখ বুলিয়ে আবার ওর চোখে চোখ রাখে।
—– ” কেন এসেছি? ( কিছুটা থেমে ) এখানে এসেছি কেন জানিনা? কিন্তু এসে বুঝলাম কেন এসেছি? ”
তুর আগের মতই ওর দিকে দৃষ্টি দিয়ে আছে। চোখের গভীরে হারাতে চাইছে না বরং তার পরিমাপ করার চেষ্টা করছে। এই মূহুর্তে সামনে থাকা ব্যক্তিটির মনকে উপলব্ধি করার অভিপ্রায়ে আছে। তীব্রের চোখের দৃষ্টি লক্ষ্য করে নিজেকে একবার দেখে নিল। নিজেকে সেই রুপেই আবিষ্কার করল যে রুপে তাকে চায় তীব্র। কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকালো। পরক্ষনেই স্বাভাবিক করে নেয় নিজেকে। অদ্ভুত এক আনন্দ জাগে মনে। ভাবতেই কেমন জানি লাগছে; না বুঝেই তীব্রকে বোকা বানিয়ে দিয়েছে আজ। তীব্র যেমন ভাবছে সে তেমন নয়। আর না নিজেকে সেভাবে প্রকাশ করতে চায়।
এতদিনে এইটুকু বুঝতেই পেরেছে, কাউকে কষ্ট দেওয়ার সহজ উপায় তার এক্সপেকটেশন নষ্ট করা। তীব্র যদি জানে ও যেটা দেখছে সেটা সত্যি নয়। তখন? দেখে বুঝতে পারল তীব্র চাইছে ও যেন রাগটা প্রকাশ করে। কিন্তু তা হচ্ছে না। রাগের বহিঃপ্রকাশ মানেই মনের ক্ষোভগুলো মিইয়ে যাওয়া, আর তার ফল যদি তীব্র পায় তাহলে তো কোন অবস্থায় না। নিচের দিকে দৃষ্টি রাখা ভাবান্তিত তুরকে দেখে তীব্র কিছুটা শান্ত হয়েই আবার জিজ্ঞেস করে,
—- ” কি হল তুর? চুপ করে আছ যে? ”
ওর কথায় রাগ করার বিন্দুমাত্র চিহ্ন প্রকাশ করল না। নিচের দিকে থাকা চোখ দু’টো কিছুটা ভাবনার ভঙ্গিতে ভ্রু কুঁচকে তাকায় সামনের মানুষটির চোখের দিকে । চোখে-চোখ পরতেই নামিয়ে নেয়। অস্বস্তি হচ্ছে। অস্থির লাগছে। কিন্তু না প্রকাশ করলে চলবে না। সামনের জন অন্য কেউ নয় “ তীব্র“। ওর সামান্য বলার ধরনেও নিজের কার্য হাসিল করার মত সামর্থ্য সে রাখে। অতি সর্তকতায় একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস টানে। শব্দহীন ভাবে গলা পরিষ্কার করে এদিক-ওদিক দৃষ্টি দিয়ে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে। ফের আবার চোখের দিকে তাকায় । স্পষ্ট গলার স্বাভাবিক ভঙ্গিমাতে তাচ্ছিল্য নিয়ে ছোট করে বলে,
—_ ” আসছি… ”
ওর এমন তাচ্ছিল্যের উদাসীন কথাটা যেন তীব্রর কানে বাড়ি খায় । কেমন জানো নিতে পারল না তুরের এই উদাসীন মনোভাব। তুরের স্বাভাবিক ভাবে এই রিয়েক্ট করার কথা না। কিন্তু তুর?
তুর কোন কথা না শুনেই ওকে পাশ কাঁটিয়ে চলে যেতে নেয়। কিন্তু আটকে যায়। তীব্রের বাম দিক দিয়ে যাবার কারনে ওর ডান হাত‘টা ধরে ফেলে। তুরের প্রচন্ড রাগ লাগে কিন্তু চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিয়ে আয়ত্তে আনে নিজের আবেগ। পিছনে ফিরতেই দেখে তীব্র মাথা নিঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তুর স্বাভাবিকভাবে হাত ছাড়াতে চাইলে তীব্র ওকে এক টানে বুকের মাঝে নিয়ে তুরের দু‘বাহু উঁচু করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে রাগটাকে সামলে শান্ত গলায় বলার চেষ্টা করে,
—– “ জানি আমার উপর রেগে আছ। সেটা স্বাভাবিক তা নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। অধিকার আছে তোমার। চেয়ে বা না চেয়ে তোমার থেকে অনেকগুলো বছর দূরে থেকেছি। রাগ , বকো যা ইচ্ছে করো কিন্তু প্লিজ এভাবে ইগনোর করো না। তোমার রাগ মানিয়ে নিতে পারলেও ইগনোরেন্স নয়।”
এটা শুনে তুর শান্ত ভাবেই জবাব দিল,
—- ” আমি আপনার উপর অযথা রাগ করতে যাব কেন? কোন রাগ নেই আপনার উপর ভুল ভাবছেন আপনি। ”
কথাটা শুনে তীব্র আরো রেগে যায়। রাগ-বিস্ময় উভয়ই ফুটে উঠেছে ওর চোখে। তবুও তীব্র নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টায় বলল,
_—- ” আমাকে রাগিও না তুর। আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। আমার সহ্যের পরীক্ষা নিও না। ”
তুর নিজের ভাব অপরিবর্তিত রেখে আলত হাসি ফুটিয়ে বলল,
—– ” আমি আপনাকে কিছুই বলছি না। সেখানে আপনাকে রাগানোর প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? আর আপনার কি হচ্ছে সেটা আপনার প্রব্লেম।নট মি… ”
—– ” তুর… ” প্রচন্ড রেগে আরো জোরে চেপে ধরে তুরের বাহু। কিছুতেই হজম করতে পারছে না। এদিকে বাহুতে ব্যাথা পাচ্ছে তুর। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ” দেখুন ড. রায়হান। আমাকে যেতে দিন। ব্যাথা লাগছে আমার। ”
তুরের কথায় পাত্তা দিল না ও।কিন্তু তুরের মুখে ড. রায়হান ডাক’টা বিষের চেয়েও বিষাক্ত লাগছে ওর কানে। আরো জোরে চেপে ধরে তুরের বাহু….
-_– ” আমি তোমার কাছে ড. রায়হান কবে থেকে হলাম? ”
তুর কঠোর গলায় জবাব দেয়, ” সবসময়ের জন্য। আপনার আসল নাম আমাকে বলেছিলেন কোথায়; যে আপনাকে সেই নামে ডাকব। যখন জেনেছি তখন অভ্যাসের কারনে বললেও এখন সেটা নেই। ”
—- ” তুর তুমি কিন্তু…. ”
—- ” আমাকে ছাড়ুন যেতে হবে। ”
তীব্র রাগে ওর মুখ নিজের মুখের একেবারে কাছে নিয়ে এসে বলে,
_— ” আমাকে এভাবে ইগনোর করার পার্রমিট তোমাকে আমি দেয়নি। আমাকে ইগনোর করে কোথাও যেতে পারবে না। ”
এবার আর তুর সহ্য করতে পারে না। প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছে। তাই ও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে তীব্রের চোখে চোখে রেখে বলতে শুরু করে,
—– ” আপনাকে নোটিশ করার মত কোন কারন আমি খুঁজে পাচ্ছি না। আর যেকোন অযাচিত ব্যক্তিকে ইগনোর করাই শ্রেয়। ”
তীব্রকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে নিলে ও আবার টেনে নেয়,
—– ” নোটিশ করার কারন খুঁজে পাচ্ছ না মানে? আমি…… ”
তীব্রকে বলার আগেই তুর নিজের ছটফটানি হামিয়ে নিজেই ওর শার্টের কলার ধরে বলে,
—– ” Who are you? ”
অবাক হয়ে চোখগুলো ছোটছোট হয়ে আসে তীব্রের। বেশ অস্বস্তি নিয়ে তুরের প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়৷
–_- ” মানে? ”
–_- ” মানে। ( তুরের মাঝে আলাদা একটা জোর ফুটে উঠে ) মানে হচ্ছে আপনি কে? আমার লাইফে আপনার পরিচয় কি? ”
—- ” আমি…. ” বলার আগেই থামিয়ে দিয়ে বলে,
—– ” সেই ব্যক্তি যে হাজবেন্ড হিসেবে আমাকে আমাকে বন করেছে অথচ তা জানতে দেয়নি। নাকি সে যে আমার অসুস্থতায় আমাকে ডির্বোস দিয়ে ছেড়ে চলে গেছে। কোনটা? ”
—– ” তুর… ” কথাটা শুনেই তীব্রের হাত আলগা হয়ে আসে। তুর একটু দূরে সরে যায়। তীব্র ব্যাপারটা বুঝে সামনে এগোতেই তুর হাত দিয়ে থামিয়ে বলে উঠে,
—— ” একদম না ড. রায়হান। ভুলে যাচ্ছেন আপনি আমাকে ডির্বোস দিয়েছেন। আর ডির্বোসের পর আমি আর আপনার লিগেল বনের সামগ্রী নই। ”
“— ” তুর আমার কথাটা শোন। ”
—- ” কিচ্ছু শোনার নেই আমার। আপনি আমার সাথে যা যা করেছেন তারপরেও নিজের মনে এটা ভেবে কোথাও না কোথাও সান্ত্বনা দিয়েছিলাম আপনি আমাকে যেকোন অবস্থায় ছাড়বেন না। কিন্তু অসুস্থতার পর যখন সুস্থ হই তখন জানতে পারি আমার বর আমার অসুস্থতার জন্য ডির্বোস দিয়ে দায়মুক্ত হওয়ার জন্য চলে গেছে। যদি এটা অসুস্থতার আগের সময় হতো তাহলে খুশি হতাম। কিন্তু সুস্থ হবার পর জানলাম নিজেকে ঠিক কতটা ছোট মনে হয়েছে বলে বোঝাতে পারব না। সবার মুখে এক কথা তুর পাগল হয়ে গেছিলো তাই তুরের বর ওকে ফেলে চলে গেছে। হাউ ফানি! তাই না!”
—– ” যা জানোনা তা নিয়ে কথা বলো না তুর। ”
এটা দেখে তুর মাথা নেড়ে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করে ঠোঁট কাঁমরে বলল,
—– ” আপনি নিজের মিথ্যেটা ছাড়বেন না। তাই না? ওকে বাট আমার কিছু শোনার নেই। আপনার সাথে সেদিনও থাকতে চাইতাম না। আর আজ তো থাকার কোন মানেই নেই। আর এটা রাগ বা অভিমান নয়। ক্ষোভ। রাগ বা অভিমানের মানুষ আপনি নন। ”
তুরের কথায় স্তব্ধ তীব্র।
–_সত্যি কি তাই? ”
—- ” আপনার সন্দেহ থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই। ”
—– ” যদি তাই হতো তাহলে ফিরে আসতাম না। ”
এইটা শুনে তুর থমকে যায়। নিজের মনে কিছু একটা আওড়ে নেয়।
—– ” কি বলতে চাইছেন? ”
_— ” সেটা বোঝার মত বোধ তোমার হয়েছে।”
তীব্রের কথায় তুর ওর কাছে যায়। জিজ্ঞাসুর দৃষ্টিতে ওর চোখে চোখ রেখে বলে,
—- ” কেন এসেছেন আমি বলব? ”
তুরের কথার ধরন ভালো লাগছে না ওর। তুর ওর খুব কাছে চলে যায়। নিজের পা’টা উঁচু করে দু’হাতে পেঁচিয়ে ধরে ওর গলা। তুরের কার্যকলাপ কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। কী করতে চাইছে তুর? ও অস্বস্তির কণ্ঠে ” তুর ” বলতেই ” হুসস ” শব্দে থামিয়ে দিল তুর। ” প্লিজ কথা বলবেন না। ” নেশাক্ত কন্ঠে কথাটা বলে গভীরভাবে তীব্রের গালে ঠোঁট ছোঁয়ায় । তীব্র হালকা নড়াতেই তুর বেশ জোরেই নখ বসিয়ে দেয় তীব্রের ঘাড়ে।। সজোরে আঁকড়ে ধরে তীব্রকে। হঠাৎ খেয়াল করল তুরের নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। নিশ্বাসের শব্দ তীব্রের কানে স্পষ্ট৷ ওদিকে আঁচরে ঘাড় বেয়ে তাজা রক্ত বের হতে লাগল। তীব্র জমে গেছে তুরের এহেন আচরাণে। কিছু বলতেও পারছে না। তুরের প্রতি এখন তার কি আচরণ প্রকাশ করা উচিত জানেনা। ও দু-একটা ঢোক গিলে আবারো ডাকল, ” তুর। ” তখনি তুর কয়েকটা ছোট ছোট চুমো খেল তীব্রের গালে। তারপর গাল থেকে সরে তীব্রের চোখের দিকে তাকাল। কী হচ্ছে কারোই যেন বোধগম্য না। তুর তীব্রেকে কাছে চাচ্ছে নাকি দূরে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে কেউ জানেনা। তীব্র রেগেও রাগ করার সুযোগ পাচ্ছে না। তুরের চোখের দিকে তাকাতেই অন্যরকম নেশা দেখতে পাচ্ছে। যেই নেশায় নিজেও হারিয়ে যাচ্ছে। তীব্রের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই হঠাৎ জড়িয়ে ধরে ওকে। এটা ওর জন্য ধাক্কা ছাড়া কিছু না। একদম গুটিশুটি মেরে বুকে লুকালো তুর। আগে যেমন ভয় পেলে লুকালো তেমন ভাবে। তীব্রের মনে হচ্ছে তুর যতটা না পারছে ততটা শক্ত করে জড়িয়ে নিতে চাইছে। পারে না ওর ভিতর ঢুকে যায়।
পিনপতন নিরবতার এই রোমাঞ্চিত পরিবেশের নিরবতা কাটিয়ে তুর নেশামিশ্রিত কণ্ঠ বলে উঠল,
—- ” কিহল তীব্র? আপনার এতটা কাছে আমি। বুকের মাঝে মিশে আছি। আমাকে নিজের মাঝে আবদ্ধ করবেন না। জড়িয়ে নেবেন না।”
তীব্র কী করবে বুঝতে পারছে না। তুরের এই ক্ষনে ক্ষনে পরিবর্তিত স্বভাবের থেকে অপরিচিত ও। একবার রাগ, একবার অভিমান আবার এই প্রণয়ী ডাক। কোনটা সত্যি? সবটা সত্যি হতে পারে না। এ তুরকে অবগত নয় ও। যার নখের কুনিও জানত, বড্ড অচেনা আজ সে। তুরকে নিজের মাঝে চায় ও। কিছুক্ষন আগে যে তুরকে সে জোর করে নিজের আয়ত্তে নিয়েছিল সেচ্ছায় তার দান যেন গ্রহন করতে পারছে না। আপন মনে হচ্ছে না। তার চাওয়া স্পর্শে, স্পর্শ করতে বাধছে তাকে….. কিন্তু কেন?
প্রশ্নের জালে জড়িয়ে যাচ্ছে আজ সে নিজেই, কিন্তু উত্তর সব ধোয়াশায় পূর্ন।
হঠাৎ আবার তুরের সেই বিনয়ী কণ্ঠস্বর।
—– ” কিহল তীব্র? ভালোবাসবেন না। টেনে নিবেন না নিজের কাছে। ”
—– ” তুর আমি…. ” কিছুটা ইতস্তত গলায় কিছু একটা মনে করে বলার চেষ্টা করল। কিন্তু তুর বুক থেকে মুখ তুলে তীব্রের গালে একহাত দিয়ে টেডি স্মাইল দিয়ে বলল,
—– ” আমি জানি তীব্র ।আপনি ভালোবাসার তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত। আর এটাও জানি আমি ছাড়া আপনি কোনদিন অন্য কারো কাছে তা চাইবেন না। তার জন্য ৫ বছর কেন ৫০ বছরও যদি লাগে। আপনার হৃদয়ের জমানো সমস্ত ভালোবাসা আমার জন্য সঞ্চয় করে রেখেছেন। শুধু আমাকে দেবার জন্য। তাই না। ”
নিশ্চুপ তীব্র। তুরের প্রতি এই দূর্বলতাই ওর সমস্ত ক্ষতির কারন সেটা আজ তুর ওকে বলছে। হ্যা তুর ওর দূর্বলতাটাকেই ওর সামনে তুলে ধরেছে তাও অত্যন্ত নিঁখুত ভাবে।
—– ” কিহল তীব্র। সত্যি বলছি তো আমি। আপনি তো বলেছিলেন ভালোবাসা নাকি ড্রাগসের মত। নেশা হয় তাতে। ড্রাগস এডিক্ট্রেক না হলেও আজ আমি নেশাগ্রস্ত। হ্যা তীব্র নেশাগ্রস্ত আমি। বিগত কয়েকবছর ধরে। তারমানে আমিও ভালোবাসি। আপনাকে। কারন নেশাগ্রস্ত আমি। ”
তুরের কথার আগা-মাথা মিলছে না। সবটাই কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।
—- ” তীব্র… চলুন না ভালোবাসার খেলা খেলি। যেই খেলা আপনি কখনো খেলতেন আমার সাথে। আজ নাহয় আমিও সেই খেলার ভাগীদার হব। তখন আপনার বন্দীনি হয়ে আর এখন একজন প্লেয়ার হয়ে। ”
কথাটা শোনা মাত্রই তীব্র সজোরে ধাক্কা মেরে তুরকে নিজের থেকে সরিয়ে দিল। বিস্ময়ের শেষ সীমান্তে গিয়ে তাকিয়ে আছে তুরের দিকে। এমন অনেক কথা থাকে যে কথা গুলো শুনতে কাছে টানার হয় কিন্তু বাহ্যিক ভাবে সেই কথা গুলোর মানে অত্যন্ত জঘন্য হয়। ঠিক সেই কথা বলছে তুর।
_— ” এসব কি বলছ তুমি তুর। ”
তুরের শক্ত চোয়াল নরম করে সেই রহস্যময়ী হাসি ফুটিয়ে তীব্রকে বলে,
—– ” বাহ রে! যে কারনে এসেছেন সেই কারনের কথাই তো বলছি। এই জন্যই তো এসেছেন আপনি। আমাকে দিয়ে নিজের…. ”
কথা শেষ করার আগেই ওর গালে সজোরে চড় বসিয়ে দেয় তীব্র। রাগে কাঁপছে শরীর। চড়টা এতটাই জোরে ছিল তুরের ঠোঁট কেটে রক্ত পরছে। তুর উঠে দাঁড়িয়ে বাম হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে ঠোঁটের রক্ত মুছে তা তর্জনি আর বৃদ্ধা দিয়ে ঘসে তাকিয়ে বলে,
—- ” খারাপ লাগছে শুনতে তাই না। কিন্তু এটাই সত্যি। আমি জানিনা আপনি ৫ বছরে নতুন কোন বন্দীনি করেছেন কিনা? তবে এটা জানি আমাকে ছাড়া আপনি কাউকে মনের মত পাননি। ( তীব্রের দিকে তাকাল ) এম আই রাইট ড. রায়হান? ”
তীব্র অবাক হয়ে দেখছে ওকে। এ তার তুর নয়। আবার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তুর বলে,
—– ” কারন এত কিছুর পর দেশে ফিরে এমন করলে এর চেয়ে ভালো কিছু বলা যায় না। ( কিছুটা চুপ থেকে ) আচ্ছা সে বাদ দিন। তা নিয়ে আমার আফসোস নেই।”
—- ” তোমার সত্যি এসব মনে হয়? আমি দেশে ফিরেছি এই জন্য যে, নিজের লাইফে তোমার চেয়ে বেটার কাউকে পাইনি। ”
এটা শুনে তুর শরীর দুলিয়ে হাসি দেয়। যেন তীব্র বড়সড় কোন জোক্স বলেছে।
—- ” এটা ছাড়া অন্যকিছু ভাবার উপায় কি রেখেছেন? ৫বছর আগে অসুস্থ থাকা অবস্থায় ডির্বোস দিয়ে গিয়ে এখন ভালোবাসার কথা বললে কি ভাববে পাবলিক? সিনেমার কাহিনীতেই কোন যুক্তি নেই। বাংলা সিনেমার সোনালি যুগ নাকি? বিচ্ছেদ, বেদনা, মিল ,কান্নাকাটি এমন কিছু ভেবেছিলেন নাকি। কামন তীব্র আপডেট হন। আপনাকে দিয়ে এমন আশা ছিল না। দুনিয়া পাল্টেছে , সাথে মানুষকেও। কেউ কারো জন্য বসে নেই। ”
নিশ্চুপ তীব্র।
—- ” ইউ নো দ্যাট। ডির্বোসের পর যেকোন সম্পর্ক অবৈধ। সেই হিসেবে আমাদের সম্পর্ক। যদিও তার কোন মানে নেই। কারন প্রথম থেকেই আমাদের সম্পর্কের লিগেল দিকটাই ছিল না। সেই হিসেবে আমার…. চল ছাড়ুন… ( বিরক্তি প্রকাশ করে। ) ভালো লাগছে না আমার। আ…আম… ( আটকে যাচ্ছে তুরের কথা। )
কিছুক্ষন চুপ থেকে করুনভাবে তীব্রর দিকে তাকিয়ে ভেজা কন্ঠে বলল,
—- “ আমি আর সেই তুর নেই । যাকে আপনি রেখে গিয়েছিলেন। সে অনেক আগেই মারা গেছে। তাকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করবেন না। নিজের মত থাকেন । আর আমাকে আমারে মত থাকতে দিন। “
তুর আর একমূহুর্ত অপেক্ষা করল না। এই ওই অবস্থায় দৌড়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে গেল। এতক্ষন ঘোরে ছিল তীব্র। তুর চলে যাওয়াতে ধ্যান ভাঙে।
—– ” তুর… দাঁড়াও। শোন আমার কথা। ”
তীব্র ওর পিছে গেটের বাইরে আসতেই দেখে তুর একটা সিএনজিতে উঠে চলে যাচ্ছে। তুরকে বার বার দাঁড়ানোর কথা বললেও তুর থামে না। ও কিছুটা দৌড়ে ধরতে পারেনা ওকে। ” সিট…” বলেই রেগে হাপাতে লাগল। প ভিতরে যেতেই রিদ্ধর সামনে পরে যায়।
—- ” রিদ্ধ গাড়ির চাবিটা দেও। ” তীব্রকে উত্তেজিত দেখে রিদ্ধ ভারী কণ্ঠে বলল,
—- ” স্যার এতটা উত্তেজিত হবেন না। শান্ত হোন।।”
—- ” রিদ্ধ তুর। ”
—- ” সব জানি আমি। আপনার সাথে ওর দেখা হওয়ার পর কি হতে পারে ধারনা করতে পারি। কিন্তু আপনাকে আরো অনেক কিছু জানানোর আছে। যা আমি ৪বছরে ধরে আপনি জানতে চাইলেও বলিনি। ”
তীব্র রিদ্ধের কথা বুঝল না। সবকিছুই অস্বাভাবিক লাগছে। তুরের কথাটা না যতটা স্পষ্ট ছিল রিদ্ধর কথা তার চেয়েও বেশি ধোঁয়াশা। রিদ্ধ এমন ভাবে বলছে যেন তুরের সাথে যাই হোক সবটাই ওর নখ দর্পনে ছিল। ও ছোট করে বলল,
—- ” রিদ্ধ.… ”
রিদ্ধ নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তীব্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
—– ” স্যার কাল আপনাকে অফিসে যেতে হবে। আপনাকে কিছু দেখানোর আছে। ”
—– ” কিন্তু… ”
—– ” প্লিজ স্যার আর কিছু জানতে চাইবেন না। কাল সব জানবেন। ”
তীব্র আর কিছু বলার আগেই রিদ্ধ চলে গেল। তীব্র কি হবে, ভেবে না পেয়ে ভেতরে চলে গেল।
——————————-★—————————-
পরের দিন……
আজ কয়েকবছর পর নিজের কেবিনে এসেছে তীব্র। সবকিছু আগের মতই আছে। এতটুকু চেঞ্জ হয়নি। যেমন রেখে গিয়েছিল তেমন ভাবেই সব সাজানো। অফিসে আসা মাত্র পুরানো সব স্টাফের কৌতুহল বেড়ে গিয়েছে। পুরাতনদের সবাই তীব্রের সাথে কথা বলার জন্য বেশ উৎসুক। তীব্র সবার সাথে বেশ হাসি-খুশি ভাবেই কথা বলেছে। তবে একটা ব্যাপার বুঝতে পেরেছে নতুন-পুরাতন সবার মাঝেই একটা চাঁপা উদ্বেগ। ও সেসবে পাত্তা না দিয়ে কেবিনে এসে বসে। ম্যানেজার আগের চেয়ে কিছুটা বেশি বয়স্ক মনে হচ্ছে। তিনি তীব্রকে যাবতীয় ব্যাপার গুলো বলছে কিন্তু তীব্র অন্যমনস্ক হয়ে টেবিলে হাতের কনুই রেখে কিছু একটা ভাবছে।
ম্যানেজারের কথার মাঝেই অন্যমনস্ক তীব্র বলে উঠল,
—– ” রিদ্ধ কই? ”
হঠাৎ কথার মাঝে বাধা পরায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন তিনি। কিছুটা অস্বস্তিতে বলে উঠেন,
—– ” ও কোন একটা ফাইল আনতে গিয়েছে। এখুনি এসে পরবে। ”
তীব্র কিছু জিজ্ঞেস করবে তখনি দরজার পাশ থেকে রিদ্ধর আওয়াজ পাওয়া যায়,
—– ” মে আই… ”
তীব্র ওদিকে তাকাতেই রিদ্ধ কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
—– ” কতদিন পর এই কথাটা বলার সুযোগ পেয়েছি। উফফ…. ”
তীব্র ওর হাতে একটা ফাইল দেখতে পায়।
—– ” কোথায় গিয়েছিলে তুমি? আর ফোন বন্ধ ছিল কেন? ” বেশ গম্ভীর ভাবে।
কথাটা শুনে রিদ্ধ পকেট থেকে নিজের ফোন বের করতেই দেখে ফোন সত্যি বন্ধ। ও সচকিত হয়ে আমতা আমতা করে বলে,
—– ” সরি স্যার। আসলে তাড়াহুড়ায় কখন ফোনটা অফ ছিল বুঝিনি। সরি…”
তীব্র ওর উত্তরে সন্তুষ্ট হলো না। ভাবলেশহীন ভাবে ” ওকে। ” বলে ওর চোখ রিদ্ধর হাতের ফাইলে পরে। রিদ্ধ সেটা বুঝে ম্যানেজারকে ইশারা করতেই, সে চলে যায়। রিদ্ধ ফাইলটা তীব্রের দিকে এগিয়ে দেয়। তীব্র ফাইলটা হাতে নিয়ে ফাইল চোখ রেখে খুলতে খুলতে বলে,
—– ” কিসের ফাইল এটা… ”
রিদ্ধ সোজা হয়ে গম্ভীর গলায় উত্তর দেয়,
—– ” তুর ম্যামের বর্তমান বিএফ & তার ফূর্তির সকল প্রকার খরচের এমাউন্টের ডাটা। ”
কথাটা শুনে তীব্র থমকে যায়। ও ফাইল ছেড়ে রিদ্ধর মুখের দিকে তাকায়। বেশ ঝাঝালো কণ্ঠে বলে উঠে,
—- ” কি যা তা বকছো? মাথা ঠিক আছে তোমার। ”
প্রচন্ড রেগে দাঁড়িয়ে যায় ও। রিদ্ধ মাথা নিচু করে বলে,
—- ” আমি ঠিকি বলছি স্যার। বিশ্বাস নাহয় নিজেই চেক করে দেখুন। ”
তীব্র প্রচন্ড রেগে গেছে। ও দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বাম হাতে ফাইল নিয়ে ডান হাত দিয়ে পৃষ্টা উল্টায় রিদ্ধর দিকে তাকিয়ে।ফাইল দ্রুত চেক করতে গিয়ে চোখে যায় টোটাল এমাউন্টের দিকে। সেখানে মোট ৫কোটি ৭৫ লক্ষ ৮৭টাকার উপর জের টানা হয়েছে। আর তা তুরের নামে। এত বড় এমাউন্ট তুরের নামে। অবিশ্বাস্য লাগছে। এত টাকা কিসে খরচ হয়েছে। প্রেমেন্টের তারিখ গুলোর দিকে নজর যায়। সাড়ে ৩ বছরের বিল এখানে। কোনটা চেক, কোনটা ক্যাশ , কোনটা আবার বিল আকারে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তুরের এত টাকা কিসে লাগতে পারে। বিলের এন্টি গুলো দেখতে কতগুলো ক্লাবের নাম আসে । কিন্তু তুরের নামে ক্লাব থেকে বিল কেন আসবে। তুরকে দেওয়া প্রোর্পাটির কাছে এই এমাউন্ট কিছু না । কিন্তু তুরের হিসেবে এই এমাউন্ট অনেক বেশি । এত টাকা ও কিসে খরচ করল। তাছাড়া যে মেয়ে ওকে সহ্য করতে পারে না। সে আর যাই হোক লোভে পরে এমন করবে না। এটা তুরের কাজ হতে পারে না। কিন্তু হিসেব তো মিথ্যে বলছে না। তাহলে কী ওকে ভুল বোঝানো হচ্ছে ? কিন্তু তাতে কি লাভ? তীব্র ফাইলটা ছুড়ে ফেলে দেয়। তারপর চেঁচিয়ে বলে..
—– “এসবের মানে কি রিদ্ধ? তুর এত টাকা নষ্ট কেন করবে? “
রিদ্ধ শান্তভাবে নিচের দিকে তাঁকিয়ে বলে,“ ওইযে বললাম নিজের বিএফ আর ফূর্তি করতে গিয়ে নষ্ট করেছে। “
“ রিদ্ধ… [ প্রচন্ড জোরে চিল্লিয়ে ] তুমি ভুলে যেওয়া না কার সর্ম্পকে কথা বলছ। “
রিদ্ধ বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মাথা নিচু করে বলে উঠে, “ ক্ষমা করবেন স্যার । আমি আপনার বেতনে পোষা একজন স্টাফ। আর আমি আমার কাজেটাই করছি। তুর ম্যামের খরচের নাম গুলো বলছি। এখন এটা যদি খারাপ শোনা যায় তাহলে তো আমার কিছু করার নেই। আপনার কোম্পানির সাথে জড়িত ভালো মন্দ সব কথা আপনার জানা দরকার। “
তীব্র চুপ করে আছে। এবার রিদ্ধ নিজেই বলা শুরু করে, ‘‘ আপনি যাবার পর মেম ১ বছরের মাথায় সুস্থ হয়ে যায় ঠিকি ,কিন্তু কিছু অসুস্থ মানুষের পাল্লায় পরে নিজেও তাদের দলে নাম লেখায়। নেশা করতে শুরু করে। মূলত নেশাই ছিল আপনার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার মূল কারন । কথায় আছে না, “ নেশা মানুষকে দিয়ে সব কিছু করায় সেইটাই তুর ম্যামের সাথে হয়েছে।সে নেশা করে সব কিছু ভূলে গেছে। তবে আরেকটা ব্যাপার আছে যার কারনে সে এমনটা করেছে? “
তীব্র চেয়ারে বসে থুঁতনিতে ভর দিয়ে কথা শুনছে। রিদ্ধের কথার কারন জানতে ও বলল, “ কী? “
রিদ্ধ আবার বলতে শুরু করল, ‘‘ আপনাকে ছোট করা । হ্যা , এটা বলার কারনও আছে। ম্যাম যদি চাইত তবে সে কাউকে না জানিয়ে টাকা নিতে পারত কিন্তু সে তা করেনি। আর সবচেয়ে মজার কথা হল; এই টাকার কোন টাকাই তুর ম্যাম খরচ করেনি। সব টাকাই তার নামে তার সাথের মানুষগুলোর পকেটে ঢুকেছে। তার মাঝে একজন হচ্ছে রিদাম। যাকে সবাই তুরের বিএফ হিসেবেই জানে। ‘’
কথাটা শুনেই তীব্র নিজের চোখ বন্ধ করে নিল।
— “ তবে স্যার , আমি সব কিছুর খবর রাখলেও এই খবরটা রাখতে পারেনি রিদাম আসলেই ওনার বিএফ কিনা? বা ওদের মধ্যে এডজেক্টলি কি সম্পর্ক। তবে রিদাম ছেলেটার ব্যাপারে যা জেনেছি ,ছেলেটা একটা প্লে বয়। কত শত মেয়ের সাথে সম্পর্ক তার ইয়াত্তা নেই। সে নাকি তুর ম্যামকে বিয়ে করতে চায় । এখন কী কারনে তা জানি না। টাকার কারনে নাকি অন্য কারন। ”
তীব্র সবটা শুনে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকল। তারপর রিদ্ধের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে উঠে,
—- “ এসব কথা আমাকে আগে জানাও নি কেন? “
—- “ আপনার মনে আছে স্যার ৩ বছর আগে তাইয়্যানের মারাত্তক অসুখ হয়েছিল। যার জন্য আপনি পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। এটা সেই সময়ের ঘটনা। আপনি তাইয়্যানকে বাঁচানোর জন্য এতটাই দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন কোন কিছুর খেয়াল আপনার ছিল না। আমি যদি তখন এসব আপনাকে জানাতাম তাহলে আপনি আরো বেশি ডিপ্রেস হয়ে পড়তেন। কিন্তু তাইয়্যানকে রেখে আপনি কখনোই আসতে পারতেন না। তাই তখন চেয়ে বলতে পারিনি।”
একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে রিদ্ধ। তীব্র নিজেও কথা গুলো ভেবে দেখে । ৩ বছর আগেই ও তুরের খবর নেওয়া বাদ দিয়েছিল। তুর সুস্থ হয়েছে জেনে অনেক ট্রাই করেছিল তুরের সাথে যোগাযোগ করার। কিন্তু ওর বাবা-মায়ের জন্য পারেনি । বারং বার ব্যর্থ হয়েছিল। ওনাদের কথা ছিল তুর এখন ভালো আছে ওকে দেখলে আবার পাগলামি করবে। তীব্র চেয়েছিল দেশে ফেরার কিন্তু তার আগেই তাইয়্যান প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পরে। এমন অবস্থা হয়েছিল যে বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিল সবাই। অনেক চেষ্টায় ১ বছর পর সুস্থ হয় তাইয়্যান। মাঝে কেঁটে যায় ৩ বছর। তুরের অবহেলা , ওর বাবা মায়ের নিজের সন্তানের ভালো চাইতে তুরের থেকে বার বার সরে যেতে বলা, তার উপর তাইয়্যানের এই অসুস্থ্যতা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল তীব্র। তাই তাইয়্যান যখন সুস্থ্য হলো তখন ও ভাবল সত্যি সব বাবা-মা সন্তানের ভালো চায় তুরের বাবা-মাও তুরের ভালো চাইবে। সত্যি ও যাওয়াতে তুর আবার অসুস্থ্য হয়ে যেতে পারে। তাই এক প্রকার রাগ, অভিমান , বে-তৃষ্ণা থেকে ক্লান্ত হয়ে ও দেশে যাওয়া ক্যান্সল করে দিয়েছিল। নিজের সন্তানের অসুস্থ্যতায় সে সন্তান হারানোর ভয় বুঝেছিল ।তাই তুরের বাবা মায়ের আর সেই ভয়টা দিতে চায়নি। আর “ কায়া দেখলে মায়া বাড়ে ” তাই তুরকে নিজের মত থাকতে দিয়ে তাইয়্যানকে নিয়ে নিজের সুখ খুঁজতে চেয়েছিল ও। রিদ্ধ যখন তুরের কথা বলতে চেয়েছিল তখন ওর কথাটা এই ছিল, “ ও এখন সুস্থ্য তাই আমি চাই না ওর কথা শুনে নিজের কষ্টটা বাড়াতে। ওকে ছাড়া যখন সবাই ভালো থাকতে চায় তাহলে কী দরকার সবার জীবনে জোর করে এসে বিষিয়ে দেবার । থাক না সবাই তার মত।আমি আমার মত ভালো থাকব।”
তাছাড়া তাইয়্যান ততদিনে অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল। তাই ও চায়নি তাইয়্যান ওকে কাঁদতে দেখুক। তাহলে ওর ছোট মনে দাগ লাগতে পারবে। আর তুর যদি ওকে মেনে না নেয় তখন তাইয়্যানের মনে বিরুপ প্রভাব পরবে। বাবা-মায়ের ঝমেলা দেখার চেয়ে তা না জানাই ভালো।তুর যখন জানেনা ওর ছেলের কথা দরকার নেই। তাইয়্যানের ক্ষেত্রেও তাই। দুজনের টানা-পোড়নে বেঁচে থাকার চেয়ে একজনের ছায়ায় থাকাই ভালো।চাঁপা একটা অভিমানে জন্মেছিল তীব্রের মনে। এই ভেবে নিজের আবেগ আর সবার ভালোর কথা চিন্তা করে ও মায়া কাটানোর জন্যই তুরের খোঁজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু যখন বুঝতে পারে ও না থাকলে তাইয়্যান বাঁচবে না। তাই ওর জন্য তুরের কাছে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। কারন তীব্রকে মারার চেষ্টা হয়েছে কয়েকবার। আর তাই ও বাধ্য হয়েছে নিজের ছেলের জন্য। চায়না তাইয়্যান ওর মত একা জীবন কাঁটাক তাইয়্যান। মা মারা যাওয়ার পর তো একাই ছিল সারাজিবন হোস্টলে।বাবা না থাকার মতই ছিল। চায়না তেমন কিছু তাইয়্যানের সাথে হোক। কারন ওর স্বজন না থাকলেও ওর ছেলের তো আছে। তাহলে কেন নিঃসঙ্গতা দিবে ছেলের জীবনে….. না চাইতেই ভিজে আসে ওর চোখ……..
.
.
.
.
.
.
.
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন। ]
আজকের পর্বটা লিখে কেমন জানি লাগছিল।😔😔