#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 35
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
…….
🖤
🖤
🖤
দুপুর ১টা…..
তুরের বাবা তাহনাফ রহমান উচু বালিশে চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে নিজের বিছানায় । ইদানিং শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন । যদিও যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। তবুও স্ত্রীর জোরাজুরিতে যেতে বাধ্য হলো । ডাক্তার ওনাকে কয়েকদিন কমপ্লিট বেড রেষ্ট আর টেনশন ফ্রি থাকতে বলেছেন। তাই কয়েকদিনের জন্য বাসায় আছেন। তবে এটা খুব ভালোই জানেন বাসায় থেকে , বিশ্রাম নিয়ে লাভ নেই। ওনার সকল অসুস্থতা হচ্ছে মানসিক অশান্তি। মনে যদি শান্তি না থাকে , তাহলে টেনশন ফ্রি কিভাবে থাকা যায়। কিন্তু স্ত্রী মন রাখতে তাকে বাসায় বিশ্রামে থাকতে হচ্ছে।
হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পান। তার দেখার প্রয়োজন পরে না কে? তার স্ত্রী তাহমিনা এসেছেন। আর স্বাভাবিক ভাবে এটা বোঝার কারন এই বাড়িতে তিনি, তার স্ত্রী আর তার একমাত্র মেয়ের বাস। কিন্তু মেয়ে যে এখন তার বাবার রুমে আসবে না সেটা খুব ভালো করেই জানে। তিনি শান্ত মলিন কন্ঠে চোখের উপর হাত রেখে স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে,
——- ” তুর কী কিছু খেয়েছে? ”
গম্ভীর কন্ঠে কিছুটা বিরক্ত হয়ে তাহমিনা জবাব দেয়, ” না। ”
কথাটায় অবাক হয় না তিনি। কিন্তু তবুও শোয়া থেকে উঠে বসে। লম্বা শ্বাস টেনে ভিতরে নিয়ে বিক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে ভারী কন্ঠে স্ত্রী তাহমিনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস, ” তুমি কী ডেকেছিলে? ”
—— ” আমি ডাকলেই বুঝি তোমার মেয়ে উঠবে? দিন দুনিয়ায় কী না কি করবে তা পোঁহাতে হবে আমাদের। কি পাপ করেছিলাম যে এমন মেয়ে পেটে জন্মেছিল? আগে জানলে…. ”
তাহমিনা স্বামীর দিকে তাকিয়ে দেখলেন মুখটা কালো হয়ে গেছে। মানুষটা এমনিতেই অনেক কষ্ট পাচ্ছে। আর দিতে ইচ্ছে হলো না। তাই তিনি থেমে গেলেন। তারপর আবেগটা কন্ট্রোল করে নিজেকে শান্ত করে জবাব দিলেন,
—– ” কাল অনেক রাতে দিয়ে গিয়েছিল। ডাকতে গিয়েছিলাম। কিন্তু উঠেনি। তাই আর বাড়াবাড়ি করিনি। ”
তাহনাফ রহমান কিছু বলবে তার আগেই তাহমিনা বেড়িয়ে গেল রুম থেকে। নিজের অজান্তেই ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। তারপর বিছানা থেকে নেমে আস্তে আস্তে মেয়ের রুমের দিকে পা বাড়ায়। আগে যতটা জোর ছিল এখন তার চেয়েও অনেক কমে গেছে। বয়সের কথা বললে ভুল হবে মানসিক চাপে। তিনি মেয়ের রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। রুমে ঢুকতে গিয়েও থেমে গেলেন। কী মনে করে ঢুকলেন না। তারপর নিজের মনে কিছু একটা আঁউরে রুমের দরজায় নক করলেন। কিন্তু সাঁড়া পাওয়া গেল না। তিনি আরও কয়েকবার নক করলেন , ফলাফল শুন্য। তাই একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালেন।
★————————–★—————————-★
—- ” ভাইয়া আমার কথা শুনুন। ”
তীব্র তোয়ার কথা না শুনেই তাইয়্যানের হাত ধরে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে হাটা দেয়। আর তোয়া তীরকে নিয়ে দ্রুত পায়ে বার বার তীব্রকে থামতে বলে। এভাবে পিছন থেকে ডাকাটা একটু দৃষ্টিকটু লাগে। তীব্র বেশ বিরক্ত। কিন্তু তোয়া সমান তালে ডেকেই যাচ্ছে। যেন না শুনলে পৃথিবী উল্টে যাবে। আসলে তীব্র তাইয়্যানের সামনে কোন কথা বলতে চায় না অতীত নিয়ে। পরিস্তিতি বুঝে তাইয়্যানকে সবটা বলতে হবে। তাইয়্যান এতটাও ছোট না। তাই ওর মনে ইফেক্ট করার মত কোন কথা তাইয়্যানের সামনে বলতে চায় না। কিন্তু তোয়া নাছোড়বান্দা।
—– ” ভাইয়া প্লিজ। একবার আমার কথা শুনুন। ”
তীব্র বেশ বিরক্তি নিয়েই থামে। তোয়া হাপাতে হাপাতে বলে,
—– ” থ্যাংকস গড। আপনি থামলেন। ”
তীব্র বেশ বিরক্তি নিয়েই জিজ্ঞেস করল,
—– ” আর কি? ”
—– ” বিগত ৫ বছর ধরে আপনাকে পাগলের মত খুঁজছি। কিন্তু কোন ভাবেই আপনার সন্ধান পায়নি। হাজার বার রিদ্ধর কাছে গিয়েছি। কিন্তু ও দেয়নি। জানি আপনার কথাতেই। ”
—– ” আমাকে খোঁজার মানে আমি দেখিনা তোয়া। আর এমনিতেও যার জন্য দেশে আসতাম। আমার থাকা না থাকায় তার কিছু আসে যায় না। তবে আমি না থাকলে, সে ভালো থাকবে। এইটুকু আমি জানি। ”
—- ” আপনি যার কষ্ট হবে ভেবে তার থেকে দূরে থাকার কথা ভাবছেন; আপনার জন্য না হলেও তার ভালোর জন্য আপনার সান্নিধ্য তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ”
তোয়ার কথার মানে বুঝলনা। বেশ উৎকন্ঠিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল , ” মানে? ”
তোয়া কিছু বলতে যাবে, আর আগেই ঘটে রিদ্ধর আগমন। তোয়াকে এসময় এয়ারপোর্টে দেখে অবাক হয়৷ ওর ধারনা মতে , তোয়ার এখন এখানে আর যাই হোক তীব্রের জন্য আসার কথা না। আর তীব্র যে তোয়াকে নিজের আসার কথা জানতে দিবে না তাও রিদ্ধের জানা। বেশ গম্ভীর ভাবে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তোয়াকে জিজ্ঞেস করল,
—- ” ভাবী! আপনি এখানে? স্যার কী আপনাকে….?”
—– ” আসলে আমার এক ফ্রেন্ডকে বিদায় জানাতে এসেছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের চক্রে ড. রায়হানের সাথে দেখা হয়ে গেল৷ ”
রিদ্ধ আর কিছু বলল না তোয়াকে।
—– ” তোয়া তুমি কিছু বলছিলে? ” তীব্র তোয়ার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করে।
তোয়া যেই তীব্রকে কিছু বলতে যাবে তখনি রিদ্ধ বলে,
—- ” স্যার অনেকটা জার্নি করে এসেছেন? হোটেলে চলুন। আপনার কথা মত হোটেল বুক করেছি। ”
অবাক হয় তোয়া। ” হোটেল কেন? ”
জবাবে তীব্র বলে,
—- ” যাতে তোমরা জানতে না পারো। যাই হোক। কী বলছিলে? ”
তোয়া আবারো কিছু বলতে যায়। রিদ্ধ তোয়ার কথা কেড়ে নিয়ে বলে,
—- ” স্যার যখন দেশে ফিরেছেন তখন সব শুনতেই পারবেন। এতটা পথ জার্নি করেছেন তাইয়্যানের কথাও ভাবুন। ”
তাইয়্যানের কথা মনে পরতেই দেখে তাইয়্যান নেই। এদিক ওদিক তাকাতেই দেখে তাইয়্যান দূরে বসে মনোযোগ দিয়ে কোন কাজ করছে। ও তাইয়্যানের দিকে এগিয়ে যায়। আর ভাবতে থাকে তোয়া কিছু বলতে চায়৷ যা রিদ্ধ বলতে বাঁধ সাধছে। দেশে আসার আগেও রিদ্ধর কথা ভালো লাগেনি তীব্রের। কেমন জানি একটা অস্বস্তি হচ্ছে। বার বার মনে হচ্ছে, “সামথিং ওয়ান্টস টু রং।” কিন্তু কী বুঝতে পারছে না। তবে ব্যাপারটা গুরুতর এবং সেটা তুরকে নিয়ে। তুরের কথা মনে হতেই বুকের মধ্যে একটা ব্যাথার আভাস পেল। কতদিন পর দেখবে ও তুরকে। নিজের ভালোবাসার সেই মানুষ যাকে দেখার তৃষ্ণায় ছটফট করছে ওর চোখ দু’টো। যাকে একবার ছুয়ে দেখার আশ সব সময় তাড়না করে বেড়ায় ওকে। স্বীকার করুক বা না করুক হাজার অভিমান জমা থাকলেও তীব্র জানে তুরকে ছেড়ে ও ভালো নেই। তুরের সবকিছুতেই যে ওর আধিপত্য। আজও সেই আধিপত্যের স্বাদ তাড়া করে বেড়ায় তীব্রকে। তাই হয়তো ফিরতে চাইনি দেশে। যদি অবাধ্য মন আবার তুরকে নিজের বন্দীনি করতে চায়। কিন্তু তাহলে তো কথার খেলাপ হবে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে তাইয়্যানের কাছে যায়। বেশ গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, ” কি ভাবছ? ”
তাইয়্যান আরও কিছুক্ষন ভাবে। তারপর বলে, ” আগে ভেবে নেই তারপর বলব। ”
—– ” দরকার নেই চলো। ”
ছেলের হাত ধরে তোয়া আর রিদ্ধর দিকে পা বাড়ায়। আর তখনি রিদ্ধ তোয়াকে বলে,
—– ” আপনি নিশ্চয় তুরের কথা বলতে যাচ্ছিলেন? ”
অপরাধীর দৃষ্টিতে মাথা নাড়ায় তোয়া।
—— ” দেখুন স্যার অনেকদিন পর দেশে এসেছেন। যতটুকু বুঝেছি কোথাও না কোথাও তুরের জন্যই এসেছেন। তাই আপনাকে বলছি প্লিজ ওনাকে কিছু বলতে যাবেন না। বরং নিজ চোখে দেখে অনুভব করতে দিন। তাতে যদি বুঝতে পারে কী করা উচিত? আপনারা তো আর কম ট্রাই করলেন না। ”
নিশ্চুপ তোয়া। ওর নিরবতায় রিদ্ধ আবার বলল,
—– ” তুরের কথা জানলে স্যার ওকে ছেড়ে দেবেন না। আমি জানি। স্যার ওর প্রতি ঠিক কতটা দূর্বল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই ওনার আমানত ওনাকেও বুঝে নিতে দিন। স্যার নিজেরটা যেমন বুঝে নিতে জানে, তেমনি কেড়ে নিতেও। ভালোবাসা আগলে রাখতে মাঝে মাঝে কঠোর হতে হয়। যা আপনারা পারবেন না। তাই যার টা তাকে তার মত করে গুছিয়ে বুঝে নিতে দিন। ”
তোয়া কিছু বলল না। মাথা নেড়ে সন্মতি জানাল। রিদ্ধ ঠিক বলেছে। যারটা তাকেই বুঝে নিতে হবে। তোয়ার সন্মতিতে রিদ্ধ একটা গভীর নিঃশ্বাস নিল। এতদিনে সে সফল হতে পেরেছে। তীব্রকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। তাই ও বাইরের দিকে পা বাড়ায়। তোয়া তীরকে নিয়ে অগ্রসর হয়। তীব্র তাইয়্যানকে নিয়ে ওদের ফলো করে। বড্ড দুষ্টামি করছে ছেলেটা। এবার এটাকে ওর মার কাছে ট্রান্সফার করতে পারলেই বাঁচে। ভেবেই ছেলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। এটা দেখে তাইয়্যান বলে,
—– ” এভাবে বোকার মত হেস না। লোকে দেখলে আমার বদনাম হবে। ভাববে আমি একটা পাগলকে নিয়ে চলি। ”
—– ” তাইয়্যান…. ” — চোখ গরম করে ।
বাইরে বেড়িয়ে দেখে রিদ্ধ গাড়ির কাছে। তীব্র ওদের কাছে গিয়ে তাইয়্যানকে গাড়িতে বসিয়ে দরজা লাগিয়ে তোয়াকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে,
—- ” কি বলতে চাইছিলে? ”
তোয়া রিদ্ধর দিকে তাকায়। রিদ্ধ ইশারায় মাথা নাড়িয়ে বলতে নিষেধ করে। যা চোখ এড়ায় না তীব্রের। তবুও না বোঝার ভান করে জিজ্ঞাসুর দৃষ্টিতে জানতে চায়,
—- ” কী বলছিলে? ”
তোয়া নিজেকে সামলে নেয়। তারপর বলে,
—- ” আজ তীরের জন্মদিন। একটা পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। বিজনেস পার্টি ও বলতে পারেন। আপনি যদি তাইয়্যানকে নিয়ে আসতেন তাহলে? ”
তীব্র চিন্তায় পরে যায়। তোয়া বুঝতে পারে। তাই তীব্রের ভাবনা শেষ হবার আগেই বলে,
_– ” তুর আসবে না। হয়ত চাচা-চাচি আসতে পারে। কিন্তু আপনাকে দেখে খুশি হবে। ”
কথাটা যেন খটলা লাগল। তোয়ার মেয়ের জন্মদিন অথচ তুর আসবে না। এটা কিভাবে সম্ভব? তবুও ঠোঁটের কোন সৌজন্যের হাসি ফুটিয়ে বলল,
—- ” চেষ্টা করব। ”
তারপর কোন কথা না বলে বেড়িয়ে যায়। তোয়া আপনমনে তাকিয়ে থাকে। সবকিছু ঠিক হবার একটা আশা উঁকি দিচ্ছে মনে। তখনি তীর তোয়াকে ঝাকিয়ে বলে,
—- ” মা দাবে লা? ”
মেয়ের দিকে তাকাতেই দেখে মেয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে পুতুলের মত দাঁডিয়ে দুলছে। ও বসে মেয়ের দুগালে হাত দিয়ে কপালে চুমো দেয়। তারপর বলে,
—- ” এইত মা চল। ”
–
★————————— ★————————–★
তখন থেকে মোবাইলটা বাজছে। বেশ বিরক্ত লাগছে৷ পারে না মোবাইলটা ভেঙে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। বিছানায় এলোমেলো ভাবে উপুর হয়ে শুয়ে হাঁতরে মোবাইলটা খোজার চেষ্টা করছে। এই সময় যে ঘুম ভাঙিয়েছে তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিছুটা হাঁতরে পেয়েও গেল মোবাইলটা। রিসিভ করে মোবাইলটা কানে ধরতেই ওপাশ থেকে প্রশ্ন করে,
—- ” কিরে কই তুই? আসবি না নাকি?”
একে তো ঘুম ভাঙিয়েছে তার উপর এরকম আদেশ সূচক বানী শুনে মেজাজটা খিঁচরে গেল৷ অত্যন্ত বাঁজঘাই গলায় ভয়ংকর এক গালি দিল। তারপর আবার বলল,
—- ” আমারে না খিঁচাইলে তোমাগে মজা লাগে না। এত চুলকানি লইয়া আমারে ফোন দিবার মানা করছি না। কাল রাইতের হ্যাং ওভার এখনো কাটে নাই। ঘুমাইতাসি। যখন মন চাইব যামু। ”
ওপাশ থেকে কিছু বলার আগেই কেটে দিল। তারপর মোবাইলটা সোফায় ছুড়ে আবার ঘুমিয়ে গেল৷ ওই মোবাইলের এখন বাঁজার সাহস নেই।
★————————–★————————–★
রিদ্ধ ওদের আলাদা গেস্টহাউজে নিয়ে আসে। হোটেলে নিলে তাইয়্যানের ভালো লাগবে না। তাইয়্যান এখানের আবহাওয়া পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত না। তাই তীব্র তাইয়্যানকে জিজ্ঞেস করল,
_— ” বাবাই তোমার কেমন লেগেছে? আমার তো ভালো লেগেছে। ”
তীব্র জানে বাচ্চাদের উপর বড়দের প্রভাব পরে। তাই ও সবকিছুর পভেটিভ দিক গুলোই আগে তাইয়্যানের সামনে রাখে। বাবার পছন্দ হয়েছে শুনে তাইয়্যানের ভালোভাবে দেখে নিল। বাবাইয়ের যেহেতু পছন্দ তাই পছন্দ হবার মানসিকতা নিয়েই সে চারদিক দেখল।
—- ” আমারও খুব পছন্দ হয়েছে পাপাই।”
তারপর উৎফুল্ল মনে চারপাশটা দেখতে থাকে। তখনি তীব্র এসে ওকে কোলে তুলে নেয়।
—- ” কিহল পাপাই? ছাড় আমাকে। আমি সবকিছু দেখব। ”
—– ” এই জন্য তো কোলে তুলে নিয়েছি। জানি তো তুমি কত ভালো? এতটা জার্নি করে এসেছি। আমার সাথে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে রেষ্ট নিবে। ”
—– ” কিন্তু পাপাই…. ”
—- ” কোন ” But কিন্তু What কী ” শুনতে চাই না। যা বলেছি তাই। ”
—– ” পাপাই…. ”
কান্না করে দিয়ে হাত পা ছুড়ছে। তীব্র হাসি দিয়ে ওকে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। গোছল করে বাপ- বেটা একসাথে তোয়ালে পরে বের হলো। তাইয়্যান একটা মুডে আছে। আর তীব্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে। তারপর আবার শুরু হলো খুনশুটি। কিছুতেই গায়ে লোশন লাগাতে দেয় না। তীব্র জোর করে লোশন লাগিয়ে তৈরি হয়ে খেতে যায়। রিদ্ধ সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। তীব্র তাইয়্যানকে খাইয়ে ওকে ঘুম পাড়ায়। তাইয়্যানের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে নিজেও কখন ঘুমিয়ে যায় বুঝতেও পারে না।
★————————— ★————————★
মিসেস তাহমিনা মেয়ের রুমে গিয়ে দেখেন তুর শাওয়ারে। ওনি দরজার ওপাশ থেকে বলে উঠেন,
—— ” আজ তীরের জন্মদিন তুমি কি যাবে? ”
কোন সাড়া নেই। তাই তিনি আবারো বললেন,
—– ” মেয়েটা অনেক আশা নিয়ে বসে আছে। যদি যাস তো….. ”
তবুও কোন আওয়াজ পেলেন না। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেড়িয়ে এলেন রুম থেকে।
★—————————★————————–★
—- ” হে ব্রো। ওয়াটস আপ? ”
—- ” আরে রোহিত অনেকদিন পর দেখলাম।”
দুজনে হাগ করে কুশল বিনিময় করল। রোহিতের পাশে নতুন একটা ছেলেকে দেখে সাম জিজ্ঞেস করল,
—- ” ও কে ব্রো? ”
—- ” ও… উফফ ( হাত দিয়ে নিজের চোখ ঢেকে এক্সসাইড হয়ে বলল) ও আমার ফ্রেন্ড রামী। এখানে এসেছে তাই ভাবলাম আমাদের সাথে জয়েন্ট করুক। ”
—- ” দ্যাট’স গুড। হে আ’ম সাম। ”
—- ” রামী। ” দুজনে হ্যান্ডশেখ করল।
তারপর রোহিত রামীকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—- ” আচ্ছা তুই ক্লাবটা ঘুরে দেখ। আমি একটু সামের সাথে কথা বলে আসছি। ”
—- ” ওকে ব্রো..। কিন্তু এখানে কী এক্সসাইটিং কিছু পাব। নাকি নিরামিষ। তাহলে আগেই বলে দিচ্ছি…. ”
—– ” চিল ইয়ার ঘুরে দেখ ভালো লাগবে। ”
সাম কথাটা বলতেই রোহিত তাল দিল। তিনজনের ঠোঁটে শয়তানি হাসি। রোহিত আর রামী দুজনে হাই ফাইভ করে রামী দু’আঙুল দিয়ে কিস করল। রোহিত চোখ মেরে ইশারায় যেতে বলল। তারপর সামের সাথে কোথাও চলে গেল।রামী ক্লাবটা ভালোমত দেখে নিল। বেশ ইন্টারেস্টিং বোঝাই যাচ্ছে বেশ ভালোই মালদার পার্টি দিয়ে চলে। বাড়ির ছাদের উপরে এমন ক্লাব ভাবা যায় না। এটা সাম আর ওর বন্ধুদের। তবে ওদের টাকায় চলে না। এত টাকা নেই ওদের৷ ক্লাবটা বেশ বড় আর সাজানো। ওই যেমন থাকে। সব কিছুই আছে ড্রিংস, ড্রাগস ইভরিথিংক। সব কিছুই ব্রান্ডেড। সবকিছু দেখে ভালোই লাগল৷ কিন্তু ও তো অন্যকিছু চাই। তারপর দেখল কয়েকটা শর্ট ড়্রেসের মেয়ে নিজেদের মত কাজে ব্যস্ত। কেউ ড্রিংক করছে, তো কেউ অন্য নেশা। বোঝাই যাচ্ছে সবগুলো বড় লোকের বিগড়ে যাওয়া সন্তান। সে যে ভদ্র তা ঠিক নয়। তাইত এখানে আসা। ও ওদের দিকে এগিয়ে গেল। হঠাৎ তার মনে হল একটু দূরে ভি-আইপি মানে স্পেশাল দিকটাই কেউ আছে৷ ও পাশ কাটিয়ে একটা গ্লাস হাতে নিয়ে সেখানে গেল। কিছুটা অবাক হয় গিয়ে! সোফায় একটা মেয়ে চোখ বন্ধ করে পায়ের উপর পা দুলিয়ে শুয়ে আছে ৷এখানে মেয়েদের পরনে শর্ট ড্রেস হলেও মেয়েটি সাদা ঢিলে টি-শার্ট আর থ্রি-কোয়াটার জিন্স পরে আছে। একহাত মাথার নিচে আরেকহাত হাতে অর্ধ পোড়া সিগারেট। পাশে থাকা টেবিলে ড্রিংসের বোতল আর একটা গ্লাসে রাখা কিছুটা ড্রিংস। অল্প একটু খাওয়া হয়েছে বোধহয়৷ এখন শুধু সিগারেট টানছে। বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটার অন্য রকম এটিটিউড। বাকি সবার থেকে আলাদা। আর আলাদা হওয়ার কারন আছে৷
মেয়েটিকে আগা মাথা পর্যবেক্ষন করে নিল রামী । ড্রেস-আপে ফিগার বোঝার কায়দা নেই। কিন্তু বেশ স্লিম মেয়েটি। তাই হয়ত। তবে চেহারা নেশা ধরানোর মত। সরু চিকন পার্রফেক্ট সাচে আঁকা ঠোঁট। ফ্লাগবিহীন চিকন ভ্রু-যুগল। খাঁড়া নাক সাথে মসৃন ফর্সা গাল। সবকিছু মিলিয়ে হিন্দি মুভির কোন নায়িকার চেয়ে কম না। নিজের অজান্তেই রামীর ঠোঁটের কোনে শয়তানি হাসি ফুটে উঠে। মনে জন্ম নেয় নিষিদ্ধ চাওয়া। মুখ ফুটে বেড়িয়ে আসে বিকৃত একটা শব্দ, “উফছ।” বলেই সাথে সাথে ড্রিংকে এক সিপ দিল।
মেয়েটি তখনও চোখ বন্ধ করে পা দুলিয়ে যাচ্ছে। রামী ধীর পায়ে তার দিকে অগ্রসর হলো। মেয়েটির পায়ের কাছে গেলে পায়ের পাতার উপরের অংশে নজর পরে। অসম্ভব সাদা। ভিতরের রক্ত যেন বোঝা যাচ্ছে। এটা দেখে মেয়েটির মুখের দিকে তাকায়। মতিষ্কের একটাই ভাবনা আসে৷ এই মেয়ে এই পরিবেশের সাথে বেমানান। তার চেহারা যেন খাপ খাচ্ছে না তার এরকম আচরনে।
রামী শয়তানির বাঁকা হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে তুলে মেয়েটির পায়ের উন্মুক্ত অংশে টার্চ করে। হঠাৎ এমন অযাচিত স্পর্শে মেয়েটির তেমন চকিত হয় না। শুধু চোখটা খুলে ভ্রু কুঁচকে অযাচিত স্পর্শদাতার দিকে তাকায়। তারপর আবার নিজেকে স্বাভাবিক করে উঠে বসে। বা হাত সোফার উপরি অংশে দিয়ে সিগারেটে আরেকটা টান দেয়। মেয়েটির ভাবান্তর না দেখে মনে মনে খুশি হয় রামী। মেয়েটি আগা থেকে মাথা ওকে দেখে নেয়। কেমন একটা লোভাতুর দৃষ্টি। এই দৃষ্টি দেখে যেন একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল মেয়েটির ঠোঁটে। যেন তার কাছে যায় আসে না। অভস্থ সে। নিচের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে ঠোঁট বাঁকালো। তারপর রামীর দিকে তাকিয়ে বলল,
—– ” কী ব্রো? মেয়ে দেখলে খালি ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে নাকি? ” কিছুটা ভ্রু নাচিয়ে।
রামী একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,
—- ” সবাইকে বললে ভুল হবে। তবে তোমার মত গোলাপকে দেখলে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করা তো দোষের না। ”
—- ” হুমম। তা ঠিক। ( কিছুটা ভাবনার মুখ করে ) কিন্তু ব্রো তুমি কী জানো না গোলাপে কাঁটা থাকে। আর তা ছুঁতে গেলে কাঁটা ফোঁটার আশঙ্কা থাকে। ”
কথাটায় যেন সায় পায় রামী। ও মেয়েটির আরেকটু কাছে এগিয়ে বলে,
—- ” গোলাপকে স্পর্শ করতে যাব আর কাঁটার ভয় এড়ালে চলে৷ ”
—- ” তাই নাকি। কাঁটায় ভয় লাগে না? ”
_— ” হুমম। ”
বলেই মেয়েটির দিকে হাত বাড়িয়ে ওর গাল স্পর্শ করতে চায়৷ মেয়েটি ওর হাতের দিকে তাকিয়ে টেবিলে থাকা ড্রিংসের বোতলটা দেখে নেয়। রামী কিছু বুঝে উঠার আগেই কাঁচের বোতলটা টেবিলে বারি দিয়েই ভেঙে সরু অংশটা রামীর বাড়ানো হাতের তারায় গুজে দেয়। এতটাই দ্রুত ঘটে যায় ব্যাপারটা যে রামী কিছু বুঝতেই পারে না। ও ভয়ংকর এক চিৎকার করে বাম হাত দিয়ে কাচ ডুকানোর হাতের কব্জি চেপে ধরে। মেয়েটি সোফা থেকে উঠেই ওর হাটুর ভাজে একটা লাথি মারে। ও তৎক্ষনাৎ এক হাটু গেড়ে বসে পরে। রামীর ভেঙে পরা হাটুতে পা দিয়ে মেয়েটি বাম হাতে ওর চুল গুলো টেনে হাতের জলন্ত সিগারেট ওর কানের গোড়ায় চেপে দেয়। রামী আবার চিৎকার করে সরাতে চায়৷ মেয়েটি নিভে যাওয়া সিগারেট ফেলে ডান হাত দিয়ে গাল চেপে ধরে বলে,
_– ” বিনা অনুমতিতে তুরকে কেউ স্পর্শ করুক তুরের তা পছন্দ নয়৷ অযাচিত স্পর্শ আমি বেয়ার করি না। আর শোন ( আরো জোরে চুল টেনে ) গোলাপকে ছুঁতে গেলে কাঁটাকে অভয় নয় তার বিষ মাপতে হয়। আর যদি কোনদিন ইউথআউট পার্রমিশন টার্চ করতে আসিস তাহলে পরের বার টার্চ করার কারন পাবি না।
বলেই একটা লাথি মারল রামীর বুকে। মুখ থুবড়ে পড়ল। মেঝেতে পরে হাতের ব্যাথা আর পোঁড়ায় কাতরাচ্ছে ও….. এতক্ষনে সেখানে সবাই জমা হয়ে গেছে। কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব করে তুর প্যাক থেকে আরেকটা সিগারেট বের করে ধরায়। তারপর ধোঁয়া ছাড়ে। ওখানের কেউ তুরের এই কাজে অবাক হয় না। কিন্তু রামীর জন্য মায়া হয়। এখানের সবাই জানে তুর কোন ছেলেকে নিজের আশে পাশে দেখতে পারে না। সেখানে রামী নতুন তাই।
তখনি সাম আর রোহিত আসে। রামীকে এভাবে দেখে ছুটে ওর কাছে যায়। সাম বুঝতে পারে কি হয়েছে? আর রোহিত ক্ষেপে যায় তুরের উপর। ওর তুরের দিকে এগিয়ে বলে,
—- ” এখানে এসে সতী সাজা হচ্ছে। তোকে আমি আজ…. ”
রোহিত ওর কাছে যাওয়ার আগেই তুর আরেকটা বোতল উঠিয়ে রোহিতের মাথায় আঘাত করে। রোহিতের মাথা কেটে রক্ত বের হতেই ও সেখানে বসে পরে। তুর ওকে একটা লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর পায়ের শক্ত কেস দিয়ে মুখ চেপে ধরে। রোহিত ছটফট করলে জঘন্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে তুর। ছেলেদের সাহস নেই তুরকে থামানোর৷ সাম ইশারা করতেই মেয়েগুলো তুরকে ছাড়ায়। তুর তবুও ওকে আবারো মারতে যায়,
—- ” শু** বা*, হারামির বা** তোর সাহস কেমনে হয় আমারে এসব কথা কওয়ার? তোর বন্ধু রে ক..…. ” তারপর আরো অনেক গালাগালি……। সাম দ্রুত ওদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। জানে নাহলে তুরকে থামানো যাবে না। ওদের নিয়ে গেলে দেখে তুর রাগে ফোপাঁচ্ছ৷ সাম গিয়ে তুরকে শান্ত হতে বলে,
—– ” তুর প্লিজ ঠান্ডা হো। ওদের পাঠিয়ে দিছি। আমি ( তুরের কাধে হাত রাখতে নিলেই তুর রাগী চোখে তাকায়। ) ও সরি। আসলে…. ”
ওকে বলতে না দিয়েই।
—- ” আরেকদিন যদি এইগুলারে এইখানে দেখি তাহলে মামা তোমার ক্লাবের…. 👏( হাত দুটো জোর করে৷)
—- ” আচ্ছা ঠিক আছে। তুই শান্ত হো। ”
তুর গিয়ে নিজের সোফায় বসে। তারপর আবার সিগারেটে টান দেয়। সাম হাফ ছেড়ে বাঁচে।
বেশ কিছুক্ষন পর সাম এসে দেখে তুর আবার সোফায় শুয়ে আছে। এতকিছু করে এমন ভাব যেন কিছুই হয়নি। ও একটা বিরক্তির শ্বাস নিয়ে তুরকে গিয়ে বলে,
—– ” তুর কিছু টাকা দিতে পারবি। আসলে…
—- ” শুয়* বা* গুলা কী গেছে? ”
—- ” হুমম। তবে বাড়ি না হাসপাতালে। এভাবে কেউ মারে। ”
—- ” চাইছিলাম মাইরা ফেলমু। ”
—- ” পুলিশে নিতো তোরে। ”
এইকথা শুনে তুর হাসিতে ফেটে পরে।
—- ” ওই ভয় আমারে দেখাইস না। তোমার বিনা লাইন্সেস এর ক্লাব অবৈধ ভাবে যে, ড্রাগস বেঁচাকেনা করো তা যদি পুলিশ জানে কী হইব জানো? তাই আমারে…. ”
— ” আচ্ছা বাদ দে। কিছু টাকা দে… ”
—- ” যত লাগব আমার কথা বলে নিয়ায়। ” সোফায় আগের মত পা দুলিয়ে শুয়ে।
–_- ” আগের বার ঝামেলা বাধাঁই ছিলো। আর টাকা দিব না, বলে দিছে৷ ”
এইটা শুনে তুর রেগে যায়।
—- ” যদি না দেয়, তাহলে কবি আমি আমু। টাকা দিব না কেন অয়। ওর বাপের টাকা। বা** কথা কস? ”
—– ” আচ্ছা। কত চামু? ”
—– ” তোর ইচ্ছা। এখন ফ্যাস ফ্যাস করিস না। মজা লাগে না। ”
সাম আর কিছু বলল না। শয়তানি হাসি ফুটিয়ে চলে গেল। এইজন্য এতকিছুর পর তুরকে কিছু না বলে ওকে আগলায়। তখনি একটা মেয়ে তুরকে বলে উঠে,
—- ” এত টাকা কই পাস রে? যখন চায় নিয়ে নিতে বলিস। ”
—- ” জামাই দেয়। ”
—- ” তোর বিয়ে হয়েছে? মজা করছিস। ”
—- ” বিশ্বাস না করলে নাই। ”
—- ” তোর হাজবেন্ড তোকে এসবের জন্য এত টাকা দেয়। এসব করিস কিছু বলে না।”
—- ” বললে আমি শুনব কেন? আর আমার টাকা আমি নি। ও কি বলব?”
—– ” তোর টাকা মানে? ”
_— ” ওনার যা চাই তা নিছে আর আমাকে আমারটা দিয়ে গেছে। ”
—– ” কই গেছে। তোর লগে যে থাকতে পারবে না তা ত জানা। ”
—– ” জাহান্নামের চুলায় গেছে। তুমি যাবি। ” আবার রেগে যায়।
—– ” না থাক। তবে তোর জামাইরে তুই ছাড়সোস নাকি তরে ছাইড়া আরেক মাইয়ার পিছে গেছে গা। ”
এবার আর সইল না। গিয়ে মেয়েটার গলা চেপে ধরে,
—- ” কই গেছে? কার লগে? তুই জাইনা কি করবি? তুই যাবি? আরেকটা বাজে কথা কইলে…? ”
ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় নিচে।
★—————————–★————————-★
রিদ্ধ তীব্রকে সব কিছু বুঝিয়ে অফিসে ফিরছিলো তখনি ফোন আসে। রিদ্ধ ব্লুটুথ দিয়ে কল রিসিভ করে গাড়ি চালাতে মন দেয়,
—- ” হ্যা বল। ”
—- ” স্যার ওই ছেলেটা আবার টাকার জন্য এসেছে। বলছে তুর ম্যাম পাঠিয়েছে। ”
ওর কথায় রিদ্ধের গাড়ি থেমে যায়। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
—– ” কত চাইছে? ”
—– ” এবার একটু বেশি। ”
—– ” কত? ”
—– ” ৫ লাক্ষ ”
—- ” দিয়ে দেও। ” আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। তারপর কিছুক্ষন স্টেয়ারিং এ মাথা দেয়। কিছুক্ষন পর মাথা তুলে চোখে গ্লাস দেয়। তারপর আবার গাড়ি স্টার্ট দেয়।
★—————————-★————————-★
টাকা নিয়ে সাম হাসপাতালে যায়। ও যেতেই রামী হাইপার হয়ে যায়। রোহিত বেহুশ।
—— ” ওই সালি আমাগো সাথে এত কিছু করল আর তুই…। ”
আর কিছু বলার আগেই সাম রামীকে কষে থাপ্পাড় মারে। তারপর টাকার ব্যাগ ওর সামনে ধরে। রামী অবাক হয়ে যায়।
—- ” এত টাকা। ”
—- ” আর এই জন্য ওরে কিছু বলি না। বরং কেউ যাতে কিছু না করে তাই আগলাই। ”
—– ” মাইয়ার বাপে কি অনেক ধনী? ”
—– ” নাহহ। ওর জামাই। ডির্বোস দিছে বোধহয়। লগে নিজের সম্পদ ও। আর তাই ওরে ভাঙাইগা চুইরা খাই। ”
—– ” তাইত কই এরকম একটা মাইয়া হাতের কাছে পাইয়া ছাইরা দেস কেমনে? ”
—– ” কি যে কস? ক্ষনিকের মজার লাইগা সোনার ডিম পারা হাস জঁবাই দিমু। ”
—- ” সালা ভালোই ধান্দা করছ। ” বিদখুটে হাসি দিয়ে।
—– ” আরে আমি তো কিছুই না।আমার চেয়েও বড় একটা আছে। আমি তো উপরি খাই। কিন্তু সালায় সব চায়।”
—- ” কে? ”
—- ” রিদাম। তুরের বিএফ বোধহয়। সালায় ছায়ার মত লাইগা থাকে। বিয়া করতে চায় তুররে। তাই পটাইতাসে। তুর শুধু ওই পোলার লগেই থাকে। ”
—– ” যে মাইয়া।ওরে বিয়া?”
—- ” তাহলে Sr. কোম্পানির তুরের শেয়ার আর তুর দুইটাই ওর। সালায় পাক্কা ফাজিল। কিন্তু তুরের কাছে ভাজা মাছ খাইতে জানে না। ”
—- ” কিছু হইছে ওগো মধ্যে? ”
—– ” জানিনা। হইলে আমার কি?তুর যতদিন আমার হাতে আছে ততদিন নিজেরটা গুছানোই ভালো। ”
দুজনেই হেসে উঠে…….
★—————————-★————————–★
অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন চলুন ঘুরে আসি একটু অতীতে….. তীব্র চলে যাওয়ার ১বছরের মাথায় তুর সম্পুর্ন সুস্থ্য হয়ে যায়। তীব্রের কথা মনে থাকলেও বেবির কথা না। সুস্থ হওয়ার পর সবসময় মন মরা থাকত। তাই ওর বাবা ওকে নামকরা ভার্রসিটিতে ভর্তি করায়। তুর ও নিজের স্বাভাবিক লাইফে ফেরে। কিন্তু ভালো থাকতে পারে না। সেই ভার্রসিটির কিছু মাদকাসক্ত মেয়েদের পাল্লায় পরে। যেহেতু ও মানসিক চাপে ছিল তাই ওরা সহজেই তুরকে ঠেলে দেয় অন্ধকার জগতে। প্রথমে ওর বাবা-মা কেউ বুঝতে পারেনি। কিন্তু যখন তুরের মাঝে চেঞ্জ দেখল। তখন ব্যাপারটা ভাবায়। তারা যখন বুঝতে পারে পরিস্তিতি হাতের বাইরে। তারপর তুর ওনাদের কাছ থেকে টাকা নিতে থাকে। কিন্তু যখন তারা মেয়েকে বোঝাতে চায় তখন ঘটে বিপত্তি। তুর ওনাদের কথা শোনে না বরং আরো বিগড়ে যায়। কিন্তু টাকা যোগাড় করতে না পারায় তীব্রের দেওয়া প্রপার্টির কথা মাথায় আসে। সেটা তুর গ্রহন করে। এই ভেবে তীব্র তুরের থেকে যা নিয়েছে তার দাম। রিদ্ধের কাছে গিয়ে টাকা চাইলে ও অবাক হয়। কারন তুর আর যাই হোক তীব্রের টাকা নেওয়ার মানুষ না।প্রথমে কিছু না ভাবলেও যখন দেখল দিন দিন তুরের টাকার পরিমান বাড়ছে তখনি ও ব্যপারটা দেখে। আর যা বুঝতে পারে তাতে….. ও টাকা বন্ধ করে দিলে তুর এমন সিনক্রিয়েট করে যে ও বাধ্য হয়ে টাকা দেয়। আর তুরের জন্য ওর বাবা-মা সবার জীবন বিষিয়ে যায়। এই অবস্থায় তুরকে কেউ কন্ট্রোল করতে পারেনি। সব কিছুই ট্রাই করেছে কিন্তু তুর আরো খারাপের পথে গেছে। তাই সবার শেষ ভরসা তীব্র। যদি ওকে কেউ ভালো বানাতে পারে তবে সে তীব্র। তাই সবাই রিদ্ধর কাছে তীব্রের ঠিকানা জানতে চায়। কিন্তু রিদ্ধ জানেনা বলে সাফ না করে দেয়। তীব্রের আর ওর ছেলের লাইফে কোনভাবেই যেন তুরের ছায়া দেখতে চায় না রিদ্ধ। তাছাড়া তীব্র যখন এখানে ছিল কয়েকজন বাদে ওদের ফ্যামিলি থেকে অনেক অপমান সহ্য করেছে তীব্র। সেই রাগ থেকে আরো বলেনি। কিন্তু মাঝে তুরের বাবা অসুস্থ হয়ে পরে ওর জন্য। সেদিন ওদের অবস্থা আর তুরের উপর রাগে তীব্রকে দেশে আনার সিন্ধান্ত নেয়। তাছাড়া তুরের সাথে থাকা ছেলেটা বিজনেসে নাক গলিয়েছি কয়েকবার। আর এইজন্য ডেকেছে তীব্রকে। তবে তুরের নয় বরং কয়েকটা মানুষের জন্য।
★—————————-★————————–★
সন্ধ্যা নেমে আসে ধরনীর বুকে। তুর তখনো ক্লাবে বসে আছে। বাসায় কখন ফিরবে ইয়াত্তা নেই। আজকে তেমন ড্রিংস করেন তুর। ভালো লাগছে না। বার বার ড্রিংসের গ্লাসটা দেখছে। অদ্ভুত লাগছে আজকে। তখনি রিদাম নামের ছেলেটা আসে। তুরকে দূর থেকে খানিকক্ষন পর্যবেক্ষন করে।
—– ” হাই তুর। ” ওকে দেখে তুর উঠে বসে। রিদাম এসে ওর পাশে বসে। ” কী হল? কি ভাবছ? ”
—– ” কিছুনা রিদাম। ভালো লাগছে না। বোর হচ্ছি।”
—– ” ডান্স ক্লাবে যাবে। অনেকদিন হলো যাওনি। একটু চিল করতে পারব। ”
—– ” ওকে। বাট একটু রাইডে যাব। ”
—– ” ওকে বেবি। যেমন তুমি চাও। আমরা বাইকে ঘুরেই নাহয় নাইট ক্লাব যাব। ”
—– ” ওকে। চল। ”
তুর কালো একটা জ্যাকেট পরে নেয়।তারপর বেড়িয়ে আসে। বাইকে উঠতে নেয় তখনি ওর ফোনটা বেজে উঠে প্রচন্ড বিরক্ত হয় ও। মোবাইল তুলে দেখে তোয়ার ফোন। ও কেটে দেয়। কিন্তু আবার কল দেয় ও। এটা দেখে রিদাম বলে,
—– ” কে? ”
—– ” তোয়া। ”
—– ” তোমার চাচাত বোন। ”
—– ” হুমম। ”
—– ” তাহলে ফোন ধর। নাইলে বার বার বিরক্ত করবে। ”
—– ” আসলে আজ ওর মেয়ের জন্মদিন মা বলেছিল। ”
—– ” তীরের। ”
—– ” ওই…. ”
—– ” তুমি যাবে। ”
—– ” প্লিজ রিদাম। আমাকে বল না। আমার এসব জায়গায় যেতে ভালো লাগে না। ”
_– ” কিন্তু…. ”
—– ” প্লিজ… ”
—–” আচ্ছা। আপনি যা চান। ”
রিদামের মুখে শয়তানির হাসি। আর তোয়ার কলে ও বিরক্ত হয়ে ফোনটা বন্ধ করে রাখে। ফোন উঠালেই এডভাইস করে, বিরক্ত লাগে তুরের। তারপর রিদামের সাথে বাইকে উঠে চলে যায়।
,
,,
,
,
,
,
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন। ]
আমি জানি আজকের পার্ট পরে অনেকের হার্টে ব্লক করব। কিন্তু কালকে আইডিয়া চাইলাম কেউ দিলেন না৷ যারা দিলেন তাদের কোন আইডিয়া নিব আমি কনফিউজড 😷তাই লিখে ফেললাম যেইটা মাথায় আসল।😁 অনেকে ভাবছেন তুর হয় পুরা পাগল নাহয় তীব্রের আর ছেলের জন্য কষ্ট পাবে। তাদের এখন কি ফিলিংস🐸🐸 এর পরে তুর তীব্রকে দেখে পাগল হবে😁😁 নাকি তীব্র তাইয়্যানের জন্য মনের মত মা পাবে।
সবাই এই নিয়া চিন্তিত ছিল তুর তীব্রকে দেখে কি করবে। আমি তো চিন্তায় আছি তীব্র এসব জেনে কী করব🤧🤧🤧 যাই হোক তুরকে ভালো আর ভালো লাগল।
আপনাদের মূল্যবান মতামত দিয়ে বাধ্য করবেন আমাকে…..🐸🐸🐸🐸
ওয়েট ফর নেক্সট😁😁….🐸
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr