বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 32
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
…….
কথাটা বলেই অদ্ভুত এক ভাব প্রকাশ করল তুর। তুরের কথাটা যেন তীব্রের বুকে গিয়ে বিধল। ও কিছু না ভেবেই খুব জোরেই তুরের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। থাপ্পড় এর শব্দটা যেন দেয়াল ভেদ করে যেতে না পাড়ায় বার বার প্রতিধ্বনিত হতে লাগল রুমে। তীব্রের ভাবতেই রাগ লাগছে তুর ওর জন্য নিজের বাচ্চাকে শত্রু বলছে। তুর গালে হাত দিয়ে করুন চোখে তীব্রের দিকে তাকাল। তারপর ও তীব্রকে অবাক করে দিয়ে হেশে দিল। তীব্র এবার অবাকের চুরান্ত পর্যায়ে তুরকে এভাবে হাসতে দেখে। ও সংশয় দৃষ্টিতে তুরের দিকে তাকালে তুর বলল ,
—— “ দেখলেন ? বললাম না এই বাচ্চা আমার শত্রু । ঠিক তাই । নাহলে এই বাচ্চার জন্য আপনি আমাকে মারতে পারতেন না। না এই বাচ্চা রাখব না আপনার সাথে থাকব। “
বলেই বিছানা থেকে উঠে পাগলের মত খুঁজতে লাগল তুর। তীব্র নিচের দিকে তাকিয়ে তুরের কাহিনি গুলো ভাবার জন্য চোখ বন্ধ করে নেয় । তুর পাগলের মত নিজের ক্ষতি করার জন্য কিছু খুঁজতে লাগল। হঠাৎ ওর খেয়াল যায় সরু একটা ফুলদানীর দিকে । ও গিয়ে ফুলদানিটা তুলে নিজের পেটের দিকে তাক করতেই তীব্র দ্রুত ওর হাত থেকে ফুলদানিটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে তুরকে জড়িয়ে ধরে। তুর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে তীব্র আরো জোরে জড়িয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
তীব্র ঠিক যেই ভয়টা পাচ্ছে সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে তার চরম মূল্য দিতে হবে তীব্রকে। ও তুরকে জোর করে বিছানায় বসিয়ে দেয় । খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে তুরকে শান্ত করতে পারবে না। তাই ও লাইট অফ করে তুরকে জড়িয়ে ধরে। তুর প্রচন্ড ছটফট করতে থাকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। কিন্তু পারে না। একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যায় তীব্রের বুকে। তুর যতক্ষন ছটফট করেছে তীব্র কোন কথা বলেনি বরং চুপচাপ তুরকে বুকে জড়িয়ে বসে ছিল।
★————————-★—————————★
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর দেখে ওর বাবা ওর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।বাবাকে দেখে চোখ বন্ধ করে চিলতে হাসি ফুটে উঠে তুরের মুখে। মেয়ের মুখের চিলতে হাসি যেন বাবার কাছে সকালের জ্বলজ্বল রোদের এক রশ্নি আলোক কণা মনে হলো৷ তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
—— ” হাসলে যে। ”
—– ” বাবা তুমি না বুড়ো হয়ে যাচ্ছ।” বলেই বন্ধ চোখে দুহাত গালের নিচে দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠে। ওর বাবা ব্যাপারটা বুঝতে পারে না। তার মেয়ের কাছে সে দুনিয়ার চিরস্থায়ী হ্যান্ডসাম একজন মানুষ৷ ওর বাবাকে কেউ যদি ভুল করেও বলত যে ওনি বুড়ো হয়ে যাবেন তাহলেই হয়েছে। সেই মেয়ে কিনা? অদ্ভুত + হাস্যকর তার কাছে। ওনি কিছুটা সংকোচ নিয়ে বলে উঠে,
_—- ” তাই নাকি? তোমার বাবাই সত্যি বুড়ো হয়ে গেছে নাকি? ”
এইটা শুনে তুর ঘুম চোখে উঠে বসে ওর বাবার বুকে মাথা রেখে অনামিকা আঙুলের প্রথম কড়টা দেখিয়ে ঘুমোঘুমো বাচ্চাদের মত আহ্লাদী কণ্ঠে বলে,
—— ” না বেশি না। শুধু এইটুকুনি। এই যে দেকো, শুধু এইটুকু…. [ একটা কড় দেখিয়ে কড়ের দিকে একচোখে দেখে। যেন অণুবীক্ষণ দিয়ে কোন সুক্ষ জিনিস দেখছে। ] বে….শি না।[ নাক ছিটকে ] ”
তুরের কথায় ওর বাবার বুকে মরুভূমি পানির পিপাসার তৃপ্তি পুরন হয়ে গেল। বাবা তার ১৮ বছরের কন্যার মাঝে ৮ বছরের ছোট আহ্লাদীকে আবিষ্কার করলেন। বিগত সাড়ে ১৭ বছর ধরে এভাবেই তার আহ্লাদীর ঘুম ভাঙিয়ে দুষ্ট দুষ্ট কথা শুনেছে। কিন্তু মাঝের ৬ মাস অন্যরকম হলেও আজ যেন তার সেই তুরকে ফিরে পেলেন। আনন্দে যেন আবেগটাকে হার মানাতে পারল না। কন্ঠের কান্নার আরষ্টতা নিয়ে একটু রাগী ভাব প্রকাশ করেই বললেন,
—— ” বাবাই বুড়ো হয়ে গেছে। আর হবেনাই বা কেন তার ছোট রাজকন্য যে বড় হয়ে গেছে। ”
এইটা শুনে তুরের হাসি যেন আর ধরেই না। হাসতে হাসতে বাবার বুকে লুটিয়ে পরছে। মেয়ের এই হাসির মানেও বোঝার ইচ্ছে হলো না ওনার। হাসতে হাসতে তুর বলল,
—— ” আমি কবে বড় হলাম? এখনো তো আমি ছোট বেই….বি। দেকো দেকো… আর তোমাকে আমি কি বলেছি তুমি বুড়ো হয়েগেছ। এই দেখ একটা পাকা দাঁড়ি দেখা যাচ্ছে । ”
অনেক নিখুঁত ভাবে চোখ নামক অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে পন্ডশ্রম করে বাবাকে একটা দাঁড়ি দেখাতে সক্ষম হল। মেয়ের এমন কান্ডে না হেঁসে পারলেন না। বাবাকে হাসতে দেখে তুরের যেন আহ্লাদের সীমানা বেড়ে গেল। ও বাবাকে পেটানোর জন্য জড়িয়ে ধরে বলল,
—— ” বাবা। ”
—— ” হ্যা বলো… ”
—— ” মাকে বলে দেও না। আজ আমি কিন্তু নাস্তায় ওই আলুভাজি আর পরটা খাব না। আমাকে পাস্তা করে দিতে হবে। নাইলে আজকে কলেজ যাওয়াও বন্ধ। ”
বলেই বাবার বুকে মুখ গুজল তুর। কথাটা শুনে অনেকটা ধাক্কা খেলেন ওনি। কি বলবেন বুঝতে পারল না। তবে এইটা বুঝতে পারল তার মেয়ে ৬মাস আগের স্মৃতিতে আছে৷ ভাবতেই অবাক লাগে যাকে ঘুম না ভাঙালে উঠতে চাইত না সেই মেয়ে মা হতে চলেছে। ছোট সেই তুর যাকে ছোটবেলা থেকে নিজের হাতে বিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিল সেই মেয়ের কখন বিয়ে হয়ে গেল জানতেই পারল না। শুধু ওনার একটাই ভয় যে নিজেকে সামলাতে পারে সে কিভাবে বাচ্চা সামলাবে? তুরকে তো মানিয়ে নেওয়ার মত করে বড় করেনি সে। একমাত্র মেয়েকে তার সামর্থ্যের রাজ্যের রাজকন্যা বানিয়ে রেখেছিল।
বাবার নিরবতায় যেন রাগ লাগল তুরের। গাল ফুলিয়ে বলে উঠল,
—— ” তারমানে তুমি মাকে বলবে না পাস্তা বানাতে? ”
এতক্ষন যা যা হয়েছে তার সবটাই তীব্র দেখেছে। তুরের ছেলেমানুষী আর ওর বাবার রাগী ফেস দেখে বেশ হাসি পেল। আসলেই বাবা মায়ের চেয়ে কেউ কোনদিন কাউকে ভালোবাসতে পারে না। সেই ভালোবাসা হয় নিঃস্বার্থ। কেমন একটা অপরাধবোধ কাজ করল। তুরকে যদি ভালোবেসে থাকে তবে নিজের স্বার্থেই ভালোবেসেছে। প্রথম কারনটা অন্য হলেও পরের কারনটা তুরকে পাওয়া ছিল। কিন্তু মেয়েটাকে যেভাবে ও রেখেছিল তাতে…… আর ভাবতে পারল না।
তুর রাগ করে ওর বাবার বুক থেকে মাথা তুলে ওর বাবার বাহু ঝাকিয়ে ” ও বাবাই। ও বাবাই। ” বলতেই থমকে যায়। তুরের চোখে থাকা ঘুমটা নিমিশেই হারিয়ে যায়। ও একদম স্থীর হয়ে নিচের দিকে তাকায়। এতক্ষন পর ওর বর্তমান সময়ের আভাস হয়েছে। এতক্ষন বাবার রাজকন্যা ভেবেছে নিজেকে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে বাবার রাজ্যের রাজকন্যাকে অন্য এক দেশের রাজা চুরি করে নিজের বন্দীনী করে রেখেছে। সেখানে সে রানী হয়ে নয় বরং রাজার গণিকা রুপে ছিল। যদিও তা রানীত্বের আড়ালে। কারন রানী তো জানতোই না রাজা তাকে বন্ধ দরজায় গণিকা করে রাখলেও দরজার বাইরে সে তার সম্রাজের রানী ছিল। কিন্তু এই রানীর জীবন তো দাসী অপেক্ষা জঘন্য ছিল তা কি করে ভুলবে ও।
এতক্ষন পর তীব্রকে খেয়াল করে মুহূর্তেই ওর সুখের সম্রাজ্যে কালো মেঘের ছায়া নেমে এলো। তীব্রকে রাক্ষস রাজ্যের সেই অত্যাচারী রাজা মনে হতে লাগল। তখনি মনে পড়ল এই রাক্ষস রাজের সন্তান ওর গর্ভে তার মানে সেও একজন রাক্ষস ই হবে। যার জন্য ওকে আরো কষ্ট পেতে। ও চিতকার করে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল। ঘটনার আকস্মিকতায় কেউ কিছু বুঝল না। তীব্র দ্রুত গিয়ে তুরের পিঠে হাত রাখতেই ও তীব্রকে ছিটকে ফেলে দিল। তুরের এমন বিহেভে ওর বাবাও অবাক। তুর চিতকার করে বাবাকে একটা কথাই বলছে,
—– ” বাবা আমাকে বাঁচাও। নাইলে আমাকে নিয়ে যাবে। আমি যেতে চাইনা। আমাকে বাঁচাও। ”
মেয়ের কথার আগা মাথা খুঁজে পেল না। তীব্রের ব্যাপারটা বুঝতে বাকি রইল না। ও তুরের থেকে সরে আসতে চাইলেই তুর পাগলের মত বিছানার সব বালিশ কম্বল ছুড়ে মারতে থাকে। আর মুখে সেই এক কথা
—— “যাব না আমি আপনার সাথে। থাকব না কারো বন্দিনী হয়ে। চলে যান। চলে যান আপনি। ”
প্রচন্ড চিতকার করে কথাগুলো বলছে তুর। তুরকে ওর বাবাও সামলাতে পারছে না। তুর নিজেকে সামলাতে না পেরে নিজের মাথার চুল ছিড়তে শুরু করেছে। তীব্র সেখান থেকে তুরকে এই অবস্থায় রেখে যাওয়ার সুযোগ ও পাচ্ছে না। তখনি তুর আবার বলে উঠে,
——- ” ও বুঝেছি পেটের এই রাক্ষসের জন্য যাচ্ছেন না তাই না। তাহলে…… ”
আশেপাশে কিছু খোজার চেষ্টা করল। ওইপাশে কিছু একটা দিকে নজর পরতেই তীব্র সেদিকে নজর দিল। পিলে চমকে উঠল। সুচালো একটা শো-পিচ। তুর বিছানা থেকে নেমে সেদিকে যেতেই তীব্র দ্রুত ওকে আটকালো। কিন্তু কোন মতেই যেন তুরের শক্তির সাথে পেরে উঠল না। এত শক্তি মেয়েটার শরীরে কিভাবে এলো বুঝল না। তুরের বাবা মেয়েকে এতটা হাইপার দেখে একপ্রকার কেঁদেই দিল। যেই কান্নায় চোখে পানি আসে কিন্তু শব্দ হয় না।
তীব্র দ্রুত ওর বাবাকে তুরকে ধরতে বলে। তুরের বাবা যথাসম্ভব মেয়েকে স্নেহের মাধ্যমে শান্ত করার চেষ্টা করে। বাবার স্নেহে তুর শান্ত স্থীর হতে চাইলেও তীব্রের সামনে থাকা ওর মনকে শান্ত হতে দিল না। পাগলামি আরো বেড়ে গেল। তুর বাবাকে ছাড়িয়ে নিতেই তীব্র জোর করে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর শরীরে ইনজেকশন পুশ করে। ইনজেকশন পুশ করার কয়েক মুহুর্তেই তুর নিস্তেজ হয়ে পরে যায়। তীব্র কোলে করে ওকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
ওর বাবা দ্রুত ওর কাছে গিয়ে বেশ ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠে,
——- ” কি করেছ তুমি ওর সাথে যার কারনে ও নিজের সন্তানকে পর্যন্ত নিজের শত্রু ভাবতে শুরু করেছে। নিজের সন্তানকে খুন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে অথচ এইটা ভুলে গেছে তাতে ও বাঁচবে না। ”
কথা গুলো বলেই কেদে উঠলেন ওনি। তীব্রের কিছু বলার ভাষা নেই। অন্যের সন্তানকে তাদের থেকে আলাদা করতে চেয়েছে৷ কিন্তু এখন নিজের সন্তান জন্মের আগেই তার মৃত্যু ভয় পাচ্ছে। তীব্র এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে বেড়িয়ে এলো রুম থেকে।
,
,
★————————–★—————————★
তুরের জ্ঞান ফিরতেই ওর সামনে মাঝবয়েসী একজন কালো কোর্টধারী ব্যাক্তিকে দেখতে পায়। তুরের চোখা চোখি হতেই লোকটি মুখে হাসির রেশ ফুটিয়ে তুলে বলে,
—— ” কেমন আছো তুর? ”
অপরিচিত ব্যাক্তিকে নিজের সামনে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হলো তুর। উঠে বসতে যাবে তখনি দেখে তুরের বাবা – মা ওর পাশে দাঁড়িয়ে। মায়ের চোখে পানির স্পষ্ট আভাস পেল তুর। ও উঠে বসার চেষ্টা করতেই কালো কোর্টধারী ব্যাক্তিটি বলে উঠল,
——- ” কি করছ তুমি? তোমার এখন বিশ্রাম করা উচিত। তুমি অসুস্থ তুর। ”
তখনি তুর নিজের পেটে হাত দেয়। আর বেশ উত্তেজিত হয়ে বলে,
—— ” আমার পেটের বেবির জন্য আমি অসুস্থ তাই না? ”
তুরের কথায় ডাক্তার দ্বিধায় পরে যায়। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়েও নিজেকে স্বাভাবিক করে বেশ জোরেই হাসে,
—— ” তুমি নিজেই তো পিচ্চি তোমার কি করে বেবি হবে? ”
লোকটির কথায় বেশ দ্বন্ধে পরে যায় তুর। ও প্রেগন্যান্ট নয়। কিছুটা সংশয় নিয়ে পেটে হাত দেয় তুর। লোকটি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,
—— ” তোমার পেটে কোন বেবি নেই। বেবি থাকলে তো তোমার পেট বড় দেখাত তাই না বলো? ”
ওনার কথায় মাথা নাড়ায় তুর। কিন্তু মুখে প্রশ্নসুচক ভাব ফুটিয়ে তুলে জিজ্ঞেস করে,
—— “ তাহলে তীব্র যে বলল আমার পেটে বেবি আছে। আমি মা হতে চলেছি।”
তুর উত্তর পাওয়ার জন্য কতটা মরিয়া তা বুঝতে বাকি রইল না ওনার। এইটা দেখে ওনি বলে,
—— ” তোমার পেটে বেবি নেই।”
—— “ তাহলে ওরা যে সবাই বলল?”
—— “ দেখ কে কি তোমায় বলেছে তা আমি জানিনা। তবে আমি তোমায় দেখে বুঝেছি তুমি প্রেগন্যান্ট নও।”
কথাটা শুনে তুর কিছুটা সংশয় রেখা ফুটিয়ে তুলল। কিন্তু পরক্ষনেই বেশ উত্তেজিত খুশির ঝলক দেখা গেল তুরের চেহারায়। বুঝতে পারল বাচ্চা নেই কথাটায় কতটা খুশি তুর। কিন্তু এই খুশিটা কিছুদিনের জন্য ধরে রাখার জন্য তিনি বললেন,
——- “কিন্তু হ্যা অনেকগুলো কৃমি হয়েছে। কারন তুমি ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করো না। এখন থেকে ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করবে কেমন। নাইলে কিন্তু অনেক সমস্যা হবে। ”
মাথা নাড়ায় তুর।
—— ” এইতো গুড গার্ল। আরেকটা কথা কৃমির জন্য তোমার খারাপ লাগতে পারে। এই ধর বমি, মাথা ব্যাথা, পেট ফাপা, এমনকি পেটটা একটু ফুলেও যেতে পারে।”
—— ” কিন্তু ক্রিমির ট্যাবলেট খেলেই তো ওরা মরে যাবে তাই না?”
জিজ্ঞেসুর দৃষ্টিতে ডাক্তারের দিকে তাকাতেই তিনি স্মিত হাসি দিয়ে বলে,
—— ” আসলে তোমার পেটের কৃমির অনেক বেশি বেড়ে গেছে। নাড় জড়িয়ে গেছে। আর এই জন্য সবার মনে হয়েছে তুমি প্রেগনেট। এখন হয় এগুলো অপারেশন করে বের করতে হবে আর নাহলে ওষুধ খেতে হবে। আর তুমি তো জানো তাতে সময় লাগবে। এবার তুমি বলো কিভাবে কৃমি বের করতে চাও? ”
—— ” ঔ…ঔষধ। হ্যা ঔষধ । ”
ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠল তুর। তা শুনে লোকটি হাসল।
_—– ” এইত গুড গার্ল। তোমার যাবতীয় মেডিসিন দিয়ে যাচ্ছি। তোমার মা সময়মত খাইয়ে দিবে কেমন। আরেকটা কথা কোনরকম দৌড় ঝাপ করবে না। তাতে পেটের কৃমি বেড়িয়ে আসতে পারে নাক মুখ দিয়ে৷ ”
—– ” কতদিন লাগবে? ”
—– ” একটু বেশি সময় লাগবে। আচ্ছা তাহলে আমি আজ যাই। আর হ্যা যদি খারাপ লাগে তবে আমাকে ফোন করো। ”
মাথা নাড়ায় তুর। লোকটি আরো কিছু ইন্সট্রাকশন দিয়ে বেড়িয়ে এলো তুরের রুম থেকে। তুর এখন ওর নিজের বাড়িতে আছে। ইনজেকশন টা দিয়ে তীব্র ওকে এখানে নিয়ে আসে। কারন ওই বাড়িতে তীব্রের কথা মনে আসলেই ও পাগলামী করবে।
তীব্র এতক্ষন বাইরে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনেছে। ওনি বের হতেই তীব্র ওনার হাত ধরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
——- ” থ্যাংস স্যার। ব্যাপারটা এভাবে হ্যান্ডেল করার জন্য। ”
—— ” ইটস ওকে। এটা আমার কাজ। তবে তুমি এটা বুঝতে পারছ তুর যদি কোনভাবে প্রেগ্ন্যাসির ব্যাপার নিয়ে ডেসপারেট হয়ে যায় তাহলে সেটা তুর আর বেবির জন্য বিপদজনক। এজ আ ডক্টর তুমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছ। ”
মাথা নাড়ায় তীব্র। এটা দেখে তিনি বলে উঠে,
—– ” আমি জানিনা তীব্র তোমার সাথে মেয়েটার কি হয়েছে যার কারনে ও মেন্টলি সিক হয়ে গেছে। তবে এটা বুঝতে পারছি এমন কিছু যা ও মেনে নিতে পারেনি। জানিনা তোমার মত ছেলেকে পেয়ে এমনটার কারন? তবে এটা জানি মেয়েটা খুব বেশি আঘাত পেয়েছে। ”
তীব্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওনি বললেন,
—– ” ওর সাথে তোমার কি হয়েছে তা নাহয় নাই জানলাম। তবে একটা কথা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছি৷ তুরের প্রেগ্ন্যাসির অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। তুমি একজন ডক্টর আর তুরের ফিজিক্যাল কান্ডিশন দেখে বুঝলাম তুমি বাচ্চাটা ইচ্ছে করেই নিচ্ছ। ”
—— ” হ্যা আমি ইচ্ছে করেই বেবিটা নিয়েছি। কিন্তু তুর মেন্টালি এতটা দুর্বল হয়ে পরবে তার ধারনা আমার ছিল না। ”
—– ” তা আমি বুঝতে পেরেছি৷ তুর অন্য কারনে মানসিক ভাবে ভেঙে পরেছে। আর তার ইফেক্ট প্রেগ্ন্যাসির উপর পরছে। তবে একটা কথা মনে রেখ ও যদি বেশি হাইপার হয়ে যায় তাহলে মিসক্যারেজ হওয়ার চাঞ্চ আছে। ”
কথাটা শুনে তীব্রের বুক কেঁপে উঠে।
—— ” সবই তো বুঝলাম। কিন্তু এটা বুঝলাম না তুমি এত তাড়াতাড়ি কেন বেবি নিতে চাইছ। দেখ এটা বলার একটাই কারন তা হচ্ছে তুর মানসিক & শারীরিক ভাবে পুরোপুরি স্টেবল নয়। আর হ্যা বলতে পারো তুমি সব দিক ভেবেই নিয়েছ কিন্তু এত তাড়াহুড়োর কি ছিল? তুরের বয়স তো একেবারেই কম। আমাকে যদি সাজেস্ট করতে বলতে তবে আমি বলতাম ওকে এখন বিয়ে না করতে । সে যাই হোক । এখন তা বলে লাভ নেই। ”
তীব্র নিশ্চুপ।
—– ” তুমি অন্যভাবে নিও না। তুমি নিজেই ভেবে দেখ৷ এখানে যদি তুর না হয়ে অন্য কেউ হত তাহলে আমি এটাই বলতাম যাতে বেবিটা না নেওয়া হয়। কারন পেসেন্ট মানসিক ভাবে সক্ষম না। এখন নাহয় ওকে সামলানো যাবে কিন্তু কিছুদিন পর যখন ওর মা হওয়ার লক্ষন প্রকাশ পাবে তখন পারবে সামলাতে?”
——” পারব। আমাকে পারতে হবে। আমি আমার বেবি আর তুর দুইজনকেই চাই৷ আর সেটা যেকোন মুল্যে। ”
—— ” তুমি একজন ডক্টর। তাই তোমাকে বোঝানোর মত আমার কিছু থাকতে পারে না। নিজের স্ত্রী সন্তানের খেয়াল রেখ। তবে তার সামনে যেও না। ”
——” জি ”
তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় তীব্র। তিনিও তাচ্ছিল্যের হাসিটাই হাসে। তারপর ওনাকে বাইরে গাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসে। ওনি গাড়িতে উঠতে যাবে তখনি তীব্র বলে,
—— ” স্যার। ”
—— ” কিছু বলবে? ”
—— ” প্রেগন্যান্সির ব্যাপার যেন বাইরের কেউ না জানে। ”
তীব্রের কথায় একটু অবাক হলেন কিন্তু পরে চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন ঠিক আছে। তিনি কাউকে বলবেন না। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তীব্র। ওনি চলে যেতেই তীব্র বাইরের সিড়িতে বসে পরে। এক পা মাটিতে বিছেয়ে আরেক পা উঠিয়ে তাতে হাত রেখে সিঁড়ির গায়ে আঙ্গুল দিয়ে কিছু আঁকার চেষ্টা করে। কিন্তু অদৃশ্য কিছু যখন সিড়ির গায়ে আকতে ব্যর্থ তখন বেশ রেগেই হাতটা দিয়ে সিড়িতে আঘাত করে। প্রচন্ড ব্যাথা পায় তাতে । তাই হালকা ঝেরে হাতটা ডলে।একটা র্দীঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসে ভিতর থেকে। দুপুরের রোদ প্রচন্ড ভাবে লাগছে বাইরের সিড়িতে বসে থাকা তীব্রের গায়ে । ও জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে জিব্বার অগ্রভাগ দিয়ে নিজের নিচ ঠোঁটটা ভিজিয়ে নেয়। তারপর মাথার ঠিক উপরের থাকা সূর্যের দিকে তাকায়। কিন্তু সূর্যের বোধ হয় তাকে দেখার অনুমতি দিতে নারাজ ।তাই বেশি দৃষ্টি রাখতে পারল না সূর্যের দিকে। তীব্র বুঝল সূর্য তার ও প্রতি সহানূভুতি দেখাতে চায় না। হয়ত সমুদ্রতীরে বলা তাচ্ছিল্য বেশি গায় মাখিয়ে ফেলেছিল। সুর্য বুঝতে পেরেছে কোন কিছুকে বেশি শক্ত করে ধরতে চাইলে তা হাত ফসলে বেড়িয়ে যায়। নিজের ক্ষেত্রে তাই করেছে ও তুরকে বেশি জোরে আকরে রাখতে হারিয়ে ফেলতে ধরেছে। তবে একটা জিনিস বুঝল। সূর্য এত শক্তিসালী হওয়ার পর কেন অহংকার করে না। কারন তীব্র বুঝতে না পারলেও সুর্য বুঝতে পেরেছে জোর দিয়ে কোন কাজ হাসিল করা যায় না।
তীব্র দুহাত দিয়ে নিজের চুল গুলো পিছনে নিয়ে হাত দিয়ে মুখটা মুছল। তারপর তুরের আর নিজের অতীতটা ভাবার চেষ্টা করে। তুরের সাথে রেজিষ্ট্রির পর একমাস পর ও এইজন্যই তুরকে বিয়ের কথা বলেছিল কারন ওর একটা বেবি চাই। ওর সাথে তুরের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যাতে তুর যে ওকে ছেড়ে যেতে পারে তার ধারনা ও আগে থেকেই অনুমান করে নিয়েছিল। তুরকে বন্ধনহীন ভাবে বাধার জন্য আর নিজের প্রয়োজনে বেবিটা চেয়েছিল। তাই বেবিটা অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। এজন্য কোর্টে যখন তুর মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিল তখন কোনরুপ টেস্ট ছাড়াই অনুমাননির্ভর হয়েই তীব্র ওর প্রেগন্যান্সির কথা বলেছিল। ৯০% সিউরিটি ছিল তুরের প্রেগ্ন্যাসি নিয়ে। কিন্তু তার মধ্যে তুর যে বাচ্চা এবোডের কথা বলবে ভাবেনি তীব্র। আর তাই কোর্টের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ও ওই কথাগুলো বলেছিল।
সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
ভেবেছিল তুর আগে কান্নাকাটি করে হলেও ওকে মেনে নিতে পারবে। কিন্তু এটা ভুলে গিয়েছিল তুর মানসিকভাবে দুর্বল। তার উপর তীব্রের বলা কথায় কোর্ট থেকে ছাড়া পাওয়াটা মানতে পারেনি তুর। তীব্র এমন ভাবে ওর নরক তুল্য কষ্টকে বায়না বলবে তা মেনে নিতে পারেনি ওর দুর্বল হৃদয়। কারন সবার কাছে ভাগ্য বলে নিছক মেনে নেওয়া হলেও সেইটা মানতে পারেনি তুর। কারন এই জঘন্য মজাটা ওর সাথেই করা হয়েছিল।
যার জন্য ওর ভালোমন্দের কোন খেয়াল নেই। ও তীব্রের থেকে নিজেকে বাঁচাতে চায়। কিন্তু ওর অবচেতন মন এটা বুঝিয়েছে তীব্র এই বাচ্চার জন্যই ওকে ছাড়ছে না। তাই বাচ্চাটাকে মারতে চাইছে। কিন্তু বাচ্চা মারতে চাওয়ার জন্য যে নিজেকে আঘাত করছে তা বুঝতে পারছে না। বাচ্চাটা যে ওর সেটাও মানা ওর জন্য পসিবল নয়।
কিছুদিনের জন্য হলেও তুরকে শান্ত করতে পারবে। আর এখন যদি তুরকে বোঝানোর চেষ্টা করে তাহলে হিতে বিপরীত হবে। তবে তীব্রের ভয় একটা জায়গায় যখন তুর সত্যিটা জানতে পারবে তখন কি করবে? আর তুরের পাগলামি যে দিন দিন বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বেবিটা দুনিয়ায় আদো সুস্থ ভাবে আনতে পারবে। কিছুই যেন মাথায় খেলছে না। বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে।
,
,
,
,
,
,
[ বাকিটা পরের পর্বে জানবেন ]
জানিনা নেক্সট কি হবে? তবে এতটুকুই বলব যদি মনে করেন এত কিছুর পর একটা মানুষ স্বাভাবিক থাকতে পারে তবে আর কিছু বলার নেই।
তীব্রকে আমি দেখিয়েছি নেগেটিভভাবে। অন্যান্য গল্পের পাগল প্রেমিক যে তীব্র নয় বা ভালোবাসায় পাগল হয়ে যে কিছু করেনাই সেটা বুঝেই গেছেন।
তীব্র তুরকে অপদস্ত করেনি কিন্তু ওর কষ্টটাকে তাচ্ছিল্যের সুরে ছোট করে তাকে ভালোবাসার নাম দিয়েছে।
আদরের বিষ মারাত্তক নয়। আর কিছু বললাম না।
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr