#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 25.+26.
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr…..

— ” আপু ওনি এখন আমাকে বিয়ে করতে চায়। তাই…. ”

— ” তাই কি? তাই তুই নাচতে নাচতে রাজি হয়ে গেলি৷ কতটা নোংরা হলে এরকম কাজ করা যায় তার ধারনা আছে তোর। আমার তো ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে…. ছিহহ…. আর তুই কিনা ওই লোকটাকে.. ” —- তুরকে ঝাকিয়ে ক্রমাগত বলতে থাকে তোয়া। তুর কোন কথা বলতে পারল না। শুধু কাদত লাগল। তখনি তোয়া বলল….

— ” তোকে কিছু করতে হবে না। এবার যা বলার,যা করার আমি করব। ”

— কিন্তু আপু… ওনি আমাকে ভালোবাসে আর তাই….

ভালোবাসি শব্দটা শুনে যেন তোয়ার মেজাজ আরো গরম হয়ে যায়। ও খুব জোরেই তুরকে আরেকটা থাপ্পড় দেয়। তুর টাল সামলাতে না পেরে উপুর হয়ে বিছানায় পরে যায়। তোয়া রাগে ফোসলাতে ফোসলাতে বলে…

-_ ” ভালোবাসা। আরে বোকা মেয়ে তোকে আমাকে এখনো বুঝাতে হবে ওই লোকটা তোকে ভালোবাসে না। শুধুমাত্র তোকে ইউজ করতে চাইছি৷ ”

তোয়ার এমন কথায় তুর উপুর হয়েই বিছানার চাদর খামচে কাদতে থাকে। কান্না গলায় আবছা ভাবে বলে….
— ” কিন্তু আমি তো…”

তুরকে এভাবে কাদতে দেখে বুকটা ছিড়ে যাচ্ছে তোয়ার। আপনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে ও তুরকে। ওর কান্নায় নিজের মন ও দুর্বল হয়ে এলো। তাই ওর পাশে শুয়ে তুরের মাথায় হাত দেয়। শান্ত ধীর কন্ঠে তুরকে বলতে শুরু করে।
——– ” না তুই ওনাকে ভালোবাসিস না ওনি তোকে ভালোবাসে৷ ওনি তোকে ইউজ করার জন্য ব্রেন ওয়াস করেছে আর তুই সেটাকে ভালোবাসা ভেবে তার কথায় কাঠের পুতুল হয়ে নাচছিস… ”

তুর কিছু বুঝতে পারছে না। ও শুধু তোয়ার কথা শুনে কাদছে। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যে সবটাই গুলিয়ে যাচ্ছে। একবার মনে হচ্ছে তীব্র ওকে ইউজ করছে আরেকবার মনে হচ্ছে তীব্র ওকে সত্যি ভালোবাসে। কোনটা যে ঠিক তা বোঝা তুরের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। ও সোজা হয়ে তোয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে….

—– ” আমি সত্যি বুঝতে পারছি নারে আপু। কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। আমি জানি। কিন্তু আমার সাথেই কেন এমন হতে হল বলতে পারবি। আমি কি অন্যায় করেছি। এভাবে কেন শেষ হয়ে গেল আমার জিবন। বাবা মা যখন জানবে সবটা কি হবে। ”

তোয়া কিছু বলল না। এই উত্তরটা ওর জানা কিন্তু দেওয়ার মত সাধ্য নেই ওর। তুরের মাথায় বিলি কাটতে থাকে তোয়া৷ একসময় বুঝতে পারে তুর ঘুমিয়ে গেছে। ও তুরকে বালিশে শুইয়ে কাথা টেনে দেয়। তুরের চোখে ঘুম নামালেও ঘুম নেই ওর চোখে। কাল কি হল এই ভেবেই ওর বুক কাপছে। কিন্তু তীব্রকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে না ও। ওর বোনের সাথে যা হয়েছে তার মাসুল ওকে দিতে হবে। এরকম ভাবনা মনে পোষন করেই কখন ঘুমিয়ে গেল জানা নেই।

,
,

,
,
,বর্তমানে…….
আজকের যা ঘটেছে তাতে যে তীব্র চুপ করে থাকবে না সেটা ভাল করেই জানে তুর। তুর ওনাকে ছেড়ে আসার পর তীব্র যেভাবে ওর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে তাতে সামনে খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে।

ওদিকে তীব্র তায়ানকে না নিয়ে সোজা থানায় গেল। আর যাওয়ার আগে রিদ্ধকে কল দিলো। তীব্র যে থানায় কমপ্লেন করা হয়েছে সেই থানার ইন্সপেক্টরের কেবিনে ঢুকে গেল। এটা দেখে ওনি বেশ রেগে গেল….

—- ” এটা কি ধরনের অসভ্যতা?”

তীব্র ওনার কথায় কেয়ার না করলেও নিজেকে শান্ত করে নিল। ও চায় না তোয়ার রাগ কোন আইনের লোকের উপর দেখাতে। বিনা কারনে পাওয়ার বা রাগ দেখানোর মানসিকতা ওর নেই। তাই ও শান্ত ভাবেই বলল….

_— ” আমি ড. রায়হান। ”

এইটা শুনে ইন্সপেক্টর কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকায়। তারপর একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফাইল দেখতে দেখতে বলে…..

—– ” অনেক নাম শুনেছি আপনার আজ দেখেও নিলাম। সে যাই হোক আপনি তো সেই যার নামে একটা মেয়েকে আটকে রেখে হ্যারাস করেছেন। ”

এইটা শুনে তীব্রের ঠিক লাগল না। ও ভালোভাবে লোকটিকে দেখল। বয়স বেশি না। দেখতে সুদর্শন, আলাদা একটা অ্যাটিটিউড আছে যুবকের মাঝে। সাইনের দিকে খেয়াল করে দেখল, নাম শাওন সায়মান। বোঝাই যাচ্ছে নতুন জয়েন্ট করেছে। রক্ত বেশ গরম। যা হয় আর কি। তবে ওর কথায় কেন জানেনা ভালো লাগল তীব্রের। সাধারণত পুলিশের ব্যাপারে কম ধারনা নেই ওর। আর এর সাথে তর্কে যাওয়াটাও বেমানান…. তীব্র কিছুটা বিরক্তি নিয়েই জিজ্ঞেস করল….

— ” আমাকে এখানে কেন ডাকা হয়েছে? ”

এইটা শুনে ইন্সপেক্টর নিজের চেয়ারে বসল। তারপর বলল….

—- ” আপনার নামে কমপ্লেন এসেছে আপনি একটা মেয়েকে জোর করে আটকে রেখে তার সাথে অশোভন আচরন করেছেন। ”

তীব্র ঠান্ডা মেজাজে উত্তর দিল…

—- ” এটা কি আপনাকে ওই মেয়েটা নিজে বলেছে। ”

কিছুটা সংকোচ নিয়েই বলল…
—– ” নাহহ…। ওর বোন বলেছে। ”

—— ” ওহ। ” —- কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে কথাটা বলে তীব্র আবার জিজ্ঞেস করে,

—– ” আমার বিরুদ্ধে কোন প্রমান আছে আপনাদের কাছে? আমি এমন কিছু করেছি? ”

ইন্সপেক্টর সায়মান একটু বিরক্তি নিয়েই জবাব দিল…

—– ” নাহহ। আপনাদের মত লোকের বিরুদ্ধে প্রমান পাওয়া যে সহজ নয় তা জানা। তাই আপনাকে জিজ্ঞেসাবাদের জন্য ডাকা। ”

-_– ” তা বলুন কি জিজ্ঞেস করতে চান? “— পায়ের উপর পা তুলে। এটা দেখে শাওনের কিছুটা ইগোতে বাধল। কিন্তু নিজেকে শান্ত রেখেই বলল…..
—— ” আপনি কি তুর নামের মেয়েটিকে চেনেন? আর ওনারা যা বলেছে…. ”

–_- ” হ্যা আমি ওই মেয়েটাকে চিনি। ও আমার ফ্রেন্ডের হবু বউয়ের চাচাত বোন। তবে ওকে চিনি মাত্র ২দিন আগে থেকে। এর আগে শুধু ওকে ছবিতে দেখেছিলাম। কারন ওর বোনের কথায় আমি মেয়েটিকে খোজার চেষ্টা করেছি। আর তা কেন সেটা আপনাদের পুলিশ রের্কডে আছে। আমার কিছু বলার নেই আর। এবার আমি আসি…. ”

তীব্র চেয়ার থেকে উঠে বাইরে যেতে নেয়। তখনি শাওনের ডাকে থেমে যায়।

—- ” ড. রায়হান আমি যদি কোনভাবে প্রমান পাই তুর সত্যি বলছে তাহলে অন্তত আমি আপনাকে ছেড়ে দেব না। ”

এইটা শুনে তীব্র পিছনে ঘুরে ওর দিকে ফিরে বলে….
—- ” ইহা শয়র। সাক্ষী প্রমান এনে প্রুভ করো। আপনার কিছু করতে হবে না। আইনির প্রতি সন্মান জানিয়ে আসব। আরেকটা কথা যা নিয়ে কথা বলবেন তা নিয়ে আগে ভালোভাবে জেনে নিবে। ”

এই বলে তীব্র বেড়িয়ে এলো থানা থেকে। এখন এসব নিয়ে ভাবলে হবে না। সমস্যার জরটাই আগে উপরাতে হবে। তোয়ার ব্যাপার আগে সামলাতে হবে…..

ওদিকে শাওনের প্রচন্ড রাগ লাগছে। কিন্তু কিছু করার নেই। কিন্তু এটা বুঝতে পারল কোথাও না কোথাও বড় কোন সত্যি আছে.।।
—– ” ড. রায়হান। আমি যদি একটা সুযোগ পাই সেদিন আপনাকে বুঝিয়ে দেব। ”

🍂
🍂
🍂

পরের দিন সকালে…….

তোয়া বাইরে বেড়িয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। রাস্তাটা বেশ ফাকা। হঠাৎ করেই কোথা থেকে একটা গাড়ি এসে তোয়ার সামনে থামল… গাড়িটাকে দেখে কিঞ্চিৎ ভ্র কুচকালো তোয়া। কেমন একটা অস্বস্তি নিয়ে ওখান থেকে সরে আসতে চাইলো। কিন্তু তোয়া সামনে এগোতেই গাড়ির দরজা খুলে দুজনে লোক তোয়াকে ভিতরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটল তোয়া কিছু বোঝার আগেই কেউ ওর নাকে একটা রুমাল চেপে ধরল। তোয়া কয়েকটান নিশ্বাস নিয়ে মুহুর্তেই জ্ঞান হারালো…….

,
,

,
,
,
,,
হঠাৎ পানির ঝটকায় জ্ঞান ফিরে আতকে উঠে তোয়া। এভাবে মুখের পানির ঝাপটা পরতেই হাপাতে থাকে। পরক্ষনেই দেখে সামনে একটা কালো ফর্মাল পোশাকের লোক। যার চোখে সানগ্লাস, কানে ব্লুটুথ। দেখে বুঝাই যাচ্ছে এ একজন দেহরক্ষী। কিন্তু একটা জিনিস লোকটার সাথে বড্ড বেমানান সেটা হচ্ছে তার হাতে থাকা বালতি। বুঝতে বাকি থাকে না ওর গায়ে পানি এই লোকটা হাতে থাকা বালতি থেকেই এসেছে.. কিন্তু কেন? মনে হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে তোয়া কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি লোকটা বলে উঠে…

-_– ” স্যার। জ্ঞান ফিরেছে। ”

তোয়ার পিছন থেকে ভারী কন্ঠের আওয়াজ এলো…..
-_ ” ওর হাত পায়ের বাধন খুলে দেও ”

তোয়া এতক্ষনে নিজের অবস্থান খেয়াল করে ওকে একটা সুন্দর বাগানে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে। আর এটাও বুঝতে বেগ পেতে হয় না যে, ও কোথায় আছে আর ওকে অপহরন করার কাজটা কে করেছে…. বেশ ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠল… …

— ” তুরের কাছ থেকে সবটা শোনার পর আপনার এমন আচরন দেখে বিন্দু মাত্র অবাক নই আমি ড. রায়হান।”

তোয়ার কথায় কফির মগে চুমুক দিতে গিয়েও দিল না তীব্র। ঠোঁটের কোনে অদ্ভুত এক হাসি ফুটে উঠেছে । তোয়ার ঠিক পিছনে ছোট একটা পুলের সামনে দাড়িয়ে কফি কাপে চুমুক দিতে যাচ্ছিল তীব্র। কিন্তু ওর কথায় থেমে যায়। ওর লোকদের ইশারা করতেই তোয়ার সামনে একটা ছোট টি-টেবিল রাখে। আর তোয়ার ঠিক সামনে টেবিলের পরে একটা চেয়ার।

তীব্র গিয়ে কফির মগটা তোয়ার সামনে রাখে । তারপর পায়ের উপর পা তুলে বসে ডানহাতের কনুই চেয়ারের হাতলের উপর রেখে নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে ওর লোকদের ইশারা করে। পরক্ষনেই ২টো লোক এসে তোয়ার হাত পায়ের বাধন খুলে দেয়…. বাধন খোলা মাত্রই তোয়া উঠে দাড়ায়….

তোয়ার এইরকম বিহেভের আশাই ছিল তীব্রের। ও টেবিলে থাকা কফির মগটা নিয়ে চমুক দিতে দিতে বলল…
—- ” তোমাকে নিশ্চয়ই বলতে হবে না আমি কেন তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি। ”

তীব্রের কথায় তোয়া যেতে গিয়েও থেমে যায়। ওর দিকে তাকাতেই দেখে গরম কফির মগে দিকে তাকিয়ে তার বাষ্পীভবন দেখছে। প্রচন্ড রাগ রাগল। একদিকে এভাবে নিয়ে এসেছে অন্যদিকে এমনভাব করছে যেন ওর দাসী। সব কথা মানতে বাধ্য তোয়া। তার উপর এই শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডা পানি ঢেলে আদিক্ষেতা করে বলা হচ্ছে। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। তবুও নিজের চোখ বন্ধ করে রাগটাকে শান্ত করে বেশ কড়া গলায় বলল….

_- ” যদি ভদ্রভাবে কথা বলার ইচ্ছে হত। তাহলে ভদ্রতার সাথে আমি এখানে উপস্থিত হতাম। কিন্তু আপনি সেটা না করে আমাকে যেভাবে এনেছেন সেই প্রেক্ষিতে এর চেয়ে ভালো ব্যবহার করা আমার রুচিতে বাধল। ”

তোয়ার এরকম কথার প্রত্যাশা ছিল না তীব্রের। চোখ মুখে বিরক্তির ভাব স্পষ্ট। এই কথাটা যেন ওর বোকামির পরিচয় দিল। মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে তোলা তীব্র তোয়ার কথার সৌজন্যতা রক্ষার্থে একটা হাসি দিল যা না চাওয়া সত্ত্বেও তাচ্ছিল্যের চিহ্নটাই বহন করে…. বেশ বিরক্তির কন্ঠেই বলল…
— ” তুমি এরকম নির্বোধের মত কথা বলবে তার আশা আমার ছিল না। আমি তোমাকে খুব বুদ্ধিমতি আর চৌকস একটা মেয়ে ভাবি। আর সেই তুমি এমন কথা বলবে মানতে পারলাম না। ”

তীব্রের কথায় কিঞ্চিত ভ্রু কুচকালো তোয়া। ওকে যে প্রসংশা বা রিওয়ার্ড দেওয়ার জন্য আনা হয়নি তা ভালো করেই জানে। কিন্তু এ কথার মানে কি… বেশ অস্বস্তি নিয়েই ও বলল…” মানে!”

তীব্র কাপটা রেখে বেশ জোরালো কন্ঠেই বলল….
— ” আমি তোমাকে এখানে কেন এনেছি.”

— ” আপনি যে কারনেই আমাকে আনুন।আমার যে কোনো ক্ষতি করতে পারবেন না তা আমি জানি। আর তাই এ নিয়ে চিন্তিত নই। এছাড়া আমাকে এখানে আনার একটাই কারন হতে পারে তুরের ব্যাপারে যা হয়েছে তা নিয়ে কথা বলা।” — তোয়ার স্পষ্ট উত্তর।

কথাটা শুনে বিরক্তির মুখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে… ঠোঁটের সেই হাসিটা বজায় রেখেই ও বলল…..
— ” ঠিক তাই। আর এই জন্য তোমাকে আমার ভালো লাগে। কিন্তু তোমার একটু আগের কথাটা ছেলে মানুষী ছিলো যে, আমি এভাবে তোমাকে কেন এনেছি? এটা তুমিও জান আর আমিও আমি ডাকলে তুমি আমার সাথে কথা বলতে চাইবে না। কারন আমি তোমার আদরের ছোট বোনজামাই হতে চাইলেও, তুমি যে আদর সোহাগে আমাকে বরন করবে না সেটা আমার অজানা নয়। আশা করি আর কিছু বলতে হবে না। ”

এমনই তোয়া রেগে ছিল। এই কথায় বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকায়….. বুঝতে পারে তোয়া কিছু বলবে তার আগেই তীব্র বলে…
— ” বসো। অনেকক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছো। যা আমার খারাপ লাগছে। হাজার হলেও তুমি আমার বউয়ের বড় বোন। মানে তুমি আমার বয়সে ছোট হলেও সম্পর্কে আমার বড়। সো বড়দের কষ্ট দিতে নেই। তাই বস। “_– প্রথম কথাটা ফানি ভাবে বললেও “বস” কথায় চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে ওর।

তোয়ার রাগ হওয়া সত্ত্বেও বসল। এই মুহুর্তে অনেকটা বাধ্য ও। তোয়া বসতেই তীব্র একটা লোককে ইশারা করতেই লোকটি মাথা নাড়িয়ে এক কাপ ধোয়া উঠা কফি তোয়ার সামনে রাখল…. তোয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তীব্র বলল…
–;- ” খেয়ে নেও এমনি ঠান্ডা ভালো লাগবে তোমার। চিন্তা কর না বিষ নেই এতে। ”

ইচ্ছে করছে ছুড়ে ফেলে দিতে সেই উদ্দেশ্য কফির মগটা ছুলো তোয়া। মুহুর্তেই রাগান্বিত হয়ে অবাক চোখে তীব্রের দিকে তাকাল। কারন কফি থেকে ধোয়া উঠলেও সেটা যে গরম না ঠান্ডা কফি । তোয়ার অবাক হওয়াটা বুঝে হাসিতে নিজের কফিটা খেতে গিয়েও পরে গেল তীব্রের….

— ” সরি। সরি। [ কফিটা মুছে আবার বলল ] আসলে তোমার মেজাজ যে পরিমান গরম হয়ে আছে তাতে ঠান্ডা পানি, ঠান্ডা আবহাওয়া আর আমার ঠান্ডা কথায় তোমার মেজাজ শান্ত হবে না। আর এরপর যে কথাগুলো বলব তার জন্য এই ঠান্ডা কফি। সো ড্রিংক ইট… ”

এই শীতের মাঝেও একবালতি পানি দিয়ে ভিজিয়ে এখন আবার কোল্ড কফি দিয়ে আদিক্ষেতা হচ্ছে। এখানে তোয়ার পরির্বতে যেকারো মেজাজ গরম হবার কথা।বেশ ঝাঝাল কন্ঠেই বলল…
-_ ” দেখুন মি. রায়হান….

বলতে না দিয়ে তীব্র বলে উঠল….
*- ” তোমার বোনকে চাই আমার। সেটা যেকোন মূল্য। তারজন্য আমাকে যা করতে হবে আমি তাই করতে রাজি আছি। ”

— ” আপনি তুরের সাথে যা যা করেছেন তারপরেও আমাকে এটা বলতে লজ্জা করছে না আপনার৷ আপনি এতটা নিচ কিভাবে হতে পারেন? ওই টুকু একটা মেয়েকে দিনের পর দিন একটা বন্ধ ঘরে আটকে রেখে বিনা অপরাধে শাস্তি দিতে। শুধু তাই না একটা মেয়ে যার কিনা নিজেকে বোঝার বুদ্ধি হয়নি তাকে ভালোবাসার নামে ব্রেন ওয়াস করে আপনি….. ” — আর বলতে পারল না তোয়া ফুপিয়ে কেদে উঠল। তীব্র ওর এই কথার উত্তরে তেমন কিছু বলল না নিজের অজান্তেই ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। কিন্তু তোয়া ও দমে যাওয়ার পাত্রী নয়। ও সরাসরি তীব্রকে বলল….
—- ” আপনার কথা শোনা মানে তুরকে বেচে দেওয়া। আমার পক্ষে কোন ক্রিমিনালের কাছে নিজের বোনকে বেচা সম্ভব না। অনেক কষ্ট দিয়েছেন ওকে। আমি বোনকে আর আপনার ভোগের সামগ্রী বানাতে চাইনা। ”

কথাটা শুনেই তীব্রের রাগ উঠে গেল। ও সামনে থাকা টি টেবিলে একটা লাথি দিয়ে রাগী চোখে তোয়ার দিকে তাকাল। তোয়া ভয়ে নিজের ওড়না মুঠো করে আছে….

— ” তোমার জায়গায় যদি আজ অন্য কেউ হত তাহলে তাকে এইখানে পুতে দিতাম আমি। আমি চাওয়া সত্ত্বেও তোমায় কিছু বলতে পারি না তার কারন… ১. তুমি তায়ানের ভালোবাসা। আর ২. তুমি তুরের বড় বোন। আর তা নাহলে এতদিন তোমার কি অবস্থা হত তুমি নিজেও জানতে না। ”

— ” আমি খুব ভালো করেই জানি তা। আর এটাও বুঝতে পারছি তুর আপনাকে নিয়ে যা জানে তা সত্যি নয়। ওর ধারনা আপনি ওকে হোটেল থেকে কিনে নিজের কাছে রেখেছেন। যেখানে সত্যিটা অন্যকিছু। ওর কথা শুনে এটাই বুঝেছি ওই লোকগুলো সেদিন তায়্যিরাতকে খুজতে এলেও সে তায়্যিরাত তুর না তোয়া ছিল। মানে আমি। আর আমার বিয়ের দিন আপনার উপর সন্দেহ ছিল যে তার ফ্রেন্ডকে এত ভালোবাসে সে তার ফ্রেন্ডের ওই অবস্তা দেখে কিছু করবে না। তা কি করে হয়? তায়ান সুস্থ হবার পর আমার কোথাও না কোথাও মনে হয়েছিল আপনি তুরের খবর জানেন। কিন্তু সেদিন আপনার সাথে কথা বলার পর নিজের ভাবনা ভুল মনে হয়েছিল। কিন্তু কাল তুরের কথা শোনার পর বুঝলাম বিয়ের দিন আমি ঠিক ছিলাম। ”

ওর কথায় তীব্র চুপচাপ শুনছে….

— ” তুরের বয়সী মেয়েরা একটু বেশি আবেগী হয়। তারা জোর, বেপরোয়া, আর হ্যান্ডসাম টাইপ ছেলে বেশি পছন্দ করে। যেরকম আপনি। কিন্তু এটা বুঝতে পারে সবচেয়ে বেশি বিপদ সবচেয়ে সুন্দর জিনিসেই লুকিয়ে থাকে। আর তাই নিজের প্রেমের জালে ফেলে ওকে নিজের হাতের মুঠোয় করেছেন। তার উপর আপনি একজন ডক্টর। তাই এতকিছু করার পরও তুর আপনার দোষ দেখছে না বরং নিজেকে অপরাধী ভাবছে। বাহ বাহ… ড. রায়হান মানতে হবে আপনাকে। কিন্তু আমি ওর মত কোনো বাচ্চা না যে আপনার মন ভোলানো কথায় ভুলে যাব। একবার ভেবে দেখেছেন ও যখন জানতে পারবে ও যা ভাবে আপনার সম্পর্কে সব ভুল তখন কি হবে। আপনি ওকে হোটেলের লোকগুলো থেকে বাচাননি বরং নিজেই ওদের কাছে তুলে দিয়েছিলেন তখন কি হবে? ”

কথাগুলো বলে ঘৃণার চোখে তীব্রের দিকে তাকাল তোয়া। তীব্র এতক্ষন চুপ করে থাকলেও এবার নিচের দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে তোয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল…..
— ” এসব কি তুমি বলবে ওকে? তাহলে এটাও বলো যে, আজকের ওর শরীরে কলংকের দাগ লাগার কারন ওর বোন তোয়া। তোমার শাস্তি হিসেবে ওকে ওর অসন্মান হারাতে হয়েছে। তারপর আমিও দেখব ও আমাকে কতটা ঘৃনা করে আর তোমাকে কতটা? ” — ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে। ওর এমন হাসিতে আর কথায় তোয়ার বুক কেপে উঠে। জিজ্ঞেসনু চোখে তীব্রের দিকে তাকাতেই ও বলে উঠে……

— ” এত অবাক হওয়ার কি আছে? তুমি যা করেছ আমিও তাই। তুমি তায়ানের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছ শুধুমাত্র নিজের জেদ পুরনের জন্য ওর সাথে ৩-৪ বছর প্রেমের নাটক করেছ। কারন এটাই তুমি ওকে প্রপোজ করেছিল আর ও তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। তাই সুযোগ বুঝে তুমিও তাই করেছ। তাই আমিও ভাবলাম, শুধু শুধু ৩ মাস বন্দি করে লাভ কি? তাই আমিও সেই ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়েছি। আসলেই ভালোবাসায় অনেক জোর সেটা মেডিসিনের কারনে হোক বা ব্রেন ওয়াস। ” —- পৈশাচিক হাসি দিয়ে।

এটা দেখে তোয়া বলে…..

-_— ” একবারো ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে হয়নি ওকে? ”

— ” হয়নি যে তেমন না। সেদিন আমি চেয়েছিলাম তুরকে ফিরিয়ে দিতে কিন্তু দেইনি তার একমাত্র কারন ছিল তোমার বিয়ে আটকানো। কারন আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুরের নিখোজ হওয়ার জন্য তুমি বিয়ে করোনি। তোমার ও কোথাও না কোথাও মনে হয়েছে তুরের নিখোজ হওয়ার জন্য তুমি দায়ী। আর তোমাকে আটকাতে আমি ওকে ফিরিয়ে না দিয়ে ওকে আটকে রেখেছিলাম। আর এমন কোথাও যাতে কোনদিন ওকে খুজে না পাও। ”

_– “তাহলে ওর ব্রেন ওয়াস করে ভালোবাসার নাটকে ওর এত বড় ক্ষতি করলেন কেন? কেন ওর ছোট মনে এত বড় কালি দিলেন? ” — প্রচন্ড রাগে কান্নার করে দিয়েছে তোয়া।

— ” উত্তরটা খুব সোজা। আমি ভেবেছিলাম তায়ান যদি সুস্থ্য হয় তবে আমি তুরকে ছেড়ে দেব। কিন্তু যদি তায়ানের কিছু হয়ে যায় তাহলে ওকে বন্দী বানিয়ে কষ্ট না করে মেরে ফেলব। [ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ] কিন্তু তায়ান সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। আর তাই তুরকেও ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। ওর কোন রকম ক্ষতি না করে। ”

— ” তায়ান তো সুস্থ্য হয়ে গিয়েছিল তাহলে? “”

এবার বেশ রেগে ওর দিকে তাকায় তীব্র। ইচ্ছে করছে তোয়াকে এখানেই শেষ করে দিতে। ও প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে বলল…

_- ” কারন আমার বিশ্বাস ছিল তায়ান তোমাকে ভুলে গিয়ে ঘৃনা করবে কিন্তু না সেটা হয়নি। বরং ও তোমার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল। আর তুমিও সেই সুযোগে তায়ানকে ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে আবার সবটা নিজের করে নিলে। দোষ করেও যখন তুমি কোন শাস্তি পেলে না। তাহলে বিনা অপরাধে কেউ শাস্তি পেতেই পারে। তাই তোমার শাস্তি তুরকে পেতে হলো। ”

— ” মানে ”

— ” মানে… [ হালকা হেসে তোয়ার কাছে যায়। তারপর ওর কানে ফিসফিস করে বলে ] মানে আর কি? তুমি ভালোবাসার অভিনয়ে তায়ানের প্রান নিতে চেয়েছিলে। আর আমি তুরের সন্মান। কারন ওকে মেরে কি লাভ হত?”

— ” আপনি!” — বিস্মিত হয়ে ওর দিকে তাকায়….

— ” ইয়েস তোয়া ইয়েস। ঠিক এই কারনেই। এখানে দুই জায়গায় ভালোবাসাকে ব্যবহার করা হয়েছে। আর ব্যবহারকারী হলো তুমি আর আমি আর ভুক্তভোগী হলো তায়ান আর তুর। তোমার স্বীকার হয়ে আমার ফ্রেন্ড প্রান হারাতে বসলে তোমার বোন কেন আমার স্বীকার হয়ে নিজের সন্মান হারাবে না।”

তীব্রের এমন কথায় তোয়া হাটু গেড়ে নিচে বসে পরে। আর তীব্র একহাটু মুড়ে তোয়ার সামনে বসে বলে….

— ” তায়ান যদি এতকিছু করার পরও তোমাকে মেনে নিয়ে বিয়ে করতে রাজি হয় তাহলে তুরকেও রাজি হতে হবে আমাকে বিয়ে করার জন্য। আমি নিজেকে নির্দোষ বলছি না। আর এটাও সত্যি আমি তুরকে নিজের প্রতি দুর্বল করার জন্য এসব করছি। হিসেবে আমরা সমান অপরাধী। শাস্তি আমাকে পেতে হলে তোমাকেও পেতে হবে। ”

তীব্রের এমন কথায় তোয়া কিছু বলতে পারল না। নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে ক্রমাগত পানি পরছে। এটা দেখে তীব্র নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে টিস্যু দিয়ে তোয়ার থুতনি ধরে ওর চোখে চোখ রেখে বলল……

— ” তাই তুরকে আমার কর্মের বর্ননা দেওয়ার আগে নিজের ইতিহাস বলে নিও যে কেন আমি এসব করেছি? আমি তো একটা পাথর যেই পাথর ওকে ব্যাথা দিয়েছে আর তুমি সেই পাথরের নিক্ষেপকারী তোয়া৷ এখন তুমিও বলো যে পাথর তোমাকে ব্যাথা দিল সেই পাথরকে তুমি শাস্তি দিবে নাকি যে মেরেছে তাকে৷ আর একটা কথা তায়ানের সাথে তুমি যা করেছ তা জানার পর তুর এমনিতেই তোমার মুখো দর্শন করবে না। এখন কি করবে বাকিটা তোমার ইচ্ছে। ”

তীব্র উঠে দাড়ায়৷ আর তোয়া ওভাবেই বসে বলতে থাকে….
— ” মানুষের কর্মের ফল তাকে পেতেই হয়। কিন্তু সেটা তার হয়ে অন্যকেউ কেন পাবে? ”

— ” তোয়া তুমি এর জন্য উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ দেও। সেদিন তুরের জায়গায় যদি তুমি থাকতে তাহলে তোমার কি হত তা আমি জানিনা। ”

তোয়া উঠে তীব্রের সামনে যায়। দুহাত দিয়ে নিজের চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে বলে….
— ” অনেক শাস্তি দিয়েছেন ওই মেয়েটাকে। এবার বিয়ের মত একটা পবিত্র বদ্ধন নিয়ে আর শাস্তি দেবেন না। আপনার রাগ আমার উপর আমি নিজে আমার দোষ সবার সামনে স্বীকার করব। আপনি যা বলবেন তায়ান আর আমার সম্পর্ক আমি তেমন ভাবেই মেনে নিব। কিন্তু প্লিজ তুরকে আর কষ্ট দেবেন না। “— হাত জোর করে বলল।

— ” এসব বলে কোন লাভ নেই তোয়া। তখন যা করার আমি রাগের জন্য করলেও আমি ওকে ইউস করিনি। ওকে যখন নিজের অস্তিত্বের সাথে সংযোজন করে নিয়েছি তখন ওকেই নিজের সঙ্গী করতে চাই। তবে সেটা কোন রাগ বা অপরাধ বোধ থেকে নয় নিজের অস্তিত্বের টানে। যদিও প্রথমে বিয়েটা ওর উপর অন্যায়ের ক্ষতিপুরন হিসেবে করতে চেয়েছি। কিন্তু ও যখন পালিয়ে গিয়েছিল তখন বুঝেছি শুধুমাত্র রাগের কারনে ওর সাথে নিজেকে জড়ায়নি। ” — অজান্তেই একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসল।

— ” কিন্তু… ”

— ” কোন কিন্তু নয় তোয়া। তুমি আমাকে জড়িয়ে যদি কোন রকম আইনি ব্যবস্তা করো তাহলে আমার কিছুই করতে পারবে না। কারন প্রতিটি প্রমান তুরের বিপরীতে স্বাক্ষী দেবে। যে কালি মুছবার জন্য আমি বিয়ে করতে চাইছি। সেই কালি সারা দুনিয়া তুরকে দেবে। কিন্তু সেটা আমাকে না, তুরকে। কারন সবাই জানে তুর বিএফ এর সাথে পালিয়েছে। আর সে সানি। পুলিশ রের্কডেও তাই আছে। আমি নিজেকে বাচানোর চেষ্টা না করলেও আমাকে ফাসানোর মত প্রমান তুর চাইলেও দিতে পারবে না। পরন্তু ফ্রড কেসে তোমাদের ফ্যামিলির মান সন্মান যাবে। আর তুরের গায়েও দাগ লাগবে।।। যা আমি চাইনা। আমি ঝামেলায় গিয়ে কোন কিছু করতে চাইনা। তুমি বুঝদার আশা করি বাকিটা তোমায় বুঝাতে হবে না। তাই আমার আর তুরের বিয়ের কথা নিজের ফ্যামিলিকে বল। তুরকে আমি দেখে নিব। ”

তোয়া আর কিছু বলতে পারে না। বেড়িয়ে আসে তীব্রের বাড়ি থেকে। তীব্রের কথায় যুক্তি আছে। এখন যদি এ নিয়ে কিছু করতে যায় তাহলে সন্মানহানি তুরের হবে। তাছাড়া বাবা মা, চাচা চাচি সবাই যদি সত্যিটা জানে তাহলে কি হবে? তাছাড়া তুর ও চায় তীব্রের কাছে যেতে হোক সে মিথ্যের ধোকা। যদি ওকে সুখে রাখে তাহলে কোন মানেই নেই বাধা দেওয়ার…… রাস্তায় হাটছে আর ভাবছে।

তোয়াকে বের হতে দেখে তীব্র একটা মুড নিয়ে পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসল। তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে তাতে একটা টান দিয়ে ধোঁয়া গুলো ছাড়ল…. ঠোঁটের কোনে রহস্যময় একটা হাসি ফুটিয়ে তুলে নিজেকেই বলল….
— ” এইজন্য হয়ত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব হচ্ছে মানুষ। কারন তাদের কোন কিছু বোঝানোর হলে বুঝে যায়৷ কেউ আদরে বোঝে তো কেউ ধমকিতে। আমার পিচ্চি বউয়ের বড় বোন তো রাজি। এবার দেখা যাক আমার বউটা কি করে। ”

,,#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 26…….

তোয়াকে বের হতে দেখে তীব্র একটা মুড নিয়ে পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসল। তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে তাতে একটা টান দিয়ে ধোঁয়া গুলো ছাড়ল…. ঠোঁটের কোনে রহস্যময় একটা হাসি ফুটিয়ে তুলে নিজেকেই বলল….
— ” এইজন্য হয়ত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব হচ্ছে মানুষ। কারন তাদের কোন কিছু বোঝানোর হলে বুঝে যায়৷ কেউ আদরে বোঝে তো কেউ ধমকিতে। আমার পিচ্চি বউয়ের বড় বোন তো রাজি। এবার দেখা যাক আমার বউটা কি করে। ”

★—————————-★————————–★

তোয়ার বাড়িতে বিয়ের তরজোর চলছে। আনা জায়গা থেকে মেহমান আসছে। এই সপ্তাহে বিয়ে। সবার অনেক ব্যস্ততা। বাড়িতে পাড়া প্রতিবেশি নানা মানুষের আনাগোনা। কাজিনদের মধ্যে কয়েকজন বাদে সবাই এসে পরেছে। তুর আর ওর কাজিনদের সাথে বিয়ের কথা নিয়ে কথা বলছিল। ওদের পাশে প্রতিবেশি কয়েকজন মহিলা বসে ছিল। হঠাৎ করেই তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল….

—– ” হ্যারে এইটা কি সেই মাইয়াটা না যে তোয়ার বিয়ের সময় প্রেমিকের সাথে ভাগছে। যার লাইগা তোয়ার বিয়াটা আটকাই গেছে। ”

ওনার কথার প্রেক্ষিতে বাকি মহিলা গুলোও বিষ নজরে তাকাল। তারপর নিজেদের মধ্যে বলা বলি করতে লাগল….
—— ” সেই মাইয়াই তো। আজকাল কার পোলামাইয়াগো কি লাজ শরমের বালাই আছে রে বইন। কোথায় কি না কি করে বেড়ায়। আর বাবা মা গুলাও সেই রকম কোন খোজ খবর নাই। নাইলে মাইয়া এরকম হয়। ”

_—- ” ঠিক কইছো গো। এগুলারে আবার কিছু বলাও যায় না। ” —- নাক ছিটকে আবার বলল, ” কিন্তু বাব মায়ের ঘাফিলতির জন্য মাইয়া গোল্লায় যায় তখন বদনাম হয় আত্নীয়দের। দেখ না এই মাইয়া মুখ কালি করছে আর বিয়েটা ভাঙছে তোয়া মাইয়াটার। “—– এইটা শুনে পাশের মুটকি আন্টি বলে উঠল …..

-_— ” কি বলবা কিছু বলার নাই। একটা কইলে দুইটা শুনাই ছাড়ে। ”

এসব কথা তুরের কানে ঠিকি আসছে। কিন্তু কিছু বলার নেই। ও এমনিতেই শান্ত স্বভাবের মেয়ে তার উপর নিজেকে প্রমান করার মত সাধ্য ওর নেই। তাই বাধ্য হয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। যা ওর কাজিনরা ঠিকি বুঝতে পারছে। নীমি রেগে গিয়ে তুরকে বলল….

—– ” এই তুই কিছু বলবি না আমি বলব? ”

নীমি কিছু বলতে গেলে তুর ওর হাত চেপে ধরে। নিমীর চোখে চোখ পরতেই দেখে পানিতে টলমল চোখ দুটো থেকে কয়েকফোটা পানি বেইমানি করে বেড়িয়ে পরছে। নিমী কিছু বলতে যাবে তার আগেই ও মাথা নাড়িয়ে না করল। কিন্তু নিমী ওর হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে ননী কে শুনিয়ে ওনাদের উদ্দেশ্য করে বলল….

—– “এই ননী কার ছেলে মেয়ে কত ভালো? কত দুধের ধোয়া, আর তার মা বাপ কেমন শিক্ষা দেয় না সেই টা আমারে বুঝাইতে আসবি না। সেগুলার খবর আহে আমার কাছে। নেহাত ভদ্র নাইলে সবার নিমের পানিতে ধোয়া পোলাপাইনরা কি করে একটু হুনাই দিতাম। ”

নীমীর কথায় একটা মহিলা রাগে গজ গজ করতে বলে…
“—– ” দেখছেন ভাবি এই মাইয়া গুলান রে। ”
——” হো দেখলাম তো। এইজন্য ভালো কথা বলতে চাইনা।

তখনি ননী রাগ দেখিয়ে বলে,
—— ” এই নীমি আমি কি তোর ভালো কথা হুনতে চাইছিরে। আমি কি একবারো বলছি শারমিন খালার [ মুটকি মহিলা ] পোলা। শালায় রাস্তায় গাঞ্জা খাইয়া পইরা থাকে। আর মাইয়াগোরে দেইখা লাফাঙ্গাগিরি করে। সেদিন তো দেখলাম কি করার জন্য পাবলিকে পেদাই লো। ”
——- ” ওই ছেমরি তোরে এসব ফাও কথা কে বলতে কইছে। আরে কইলে রেশমা আন্টির মেয়ের কথা বলবি, বিএফ নিয়ে ঘুরতে গেছিলো পুলিশে কান ধরাইছে। সেইটা নেটে ভাইরাল হইছে। বললে এসব বলবি।”

এবার সব আন্টিরাই চুপ। যে দুইজন বেশি লাফাইছে তারাই চুপ। তখন একটা মহিলা কিছু বলতে চাইলেই ননী আয়েশা [ কাজিন ] কে উদ্দেশ্য করে বলে…..
——– ” বুঝছি আর কওয়া লাগত না। হেগোরে দেইখাও শিক্ষা হয়নাই তাই না। ঠিক আছে পাতিল উদলা আমিও করতে জানি। ”

বলেই সবাই কুটিকুটি করে হেশে উঠল। ওদিকে সব কয়টা মহিলা রাগে একদম অজগর সাপের মত ফুসলাতে থাকে। এটা নিয়ে ওরা আরো মজা করে…..

—— ” ননীরে ননী কথায় আছে না। পরলে কথা সবার মাঝে যেতির কথা হেতির কানে বাজে। “—- হাসির রোল পরে গেল।

ওনারা আর ওখানে বসলেন না সোজা চলে গেলেন তোয়ার মায়ের কাছে……. এই অবস্থা দেখে তুর বেশ ভয় পেয়েই বলে উঠল…….
——” কি দরকার ছিলো ওনাদের পিছে লাগার? ”
——” ওই সালি চুপ নিজে তো কিছু কইবার পারো না। একদম ননীর পুতুল সাইজা বইয়া থাহো। এর লাইগা তোমারে আর বেশি যাইতা ধরে সবাই। ”

ননীর পুতুল শুনে সেটা ননী গায়ে লাগে।
—— “ওই তুই আমার নামে কি কস? ”
——–” এই হইছে আরেক্ষান আবাল। কইছি আমি ননীর পুতুল আরে বাল মোমের পুতুল। আর এ বুঝল হেতের কথা কইছি” — ননীর মাথায় জোরে গাট্টা মেরে। ননী মাথা ঢলতে ঢলতে বলে……
-_—– ” উহু। আগে কইবি তো। হুড্ডাই মারলি।”
——- ” আবালগুলান। তোমরা শিশু কিচ্ছু জানো না ফিডার খাও। আইনা দিমুনি। ”
——– ” যাহহহ ছেমরি। “—– রাগ দেখিয়ে।
,
,
,
,

,
,★—————————-★————————★

,
,

ওদিকে মহিলা গুলা তোয়ার মায়ের কাছে যায়। পাশে। তুরের মা ছিল। আর সামনে তোয়ার বাবা বসে পেপার পরছিলেন। ওই মোটা মহিলা বলে উঠল…….
——- ” কিগো আফা আমাদের কি অপমান করার জন্য নিয়া আসছো? ”

বেশ অবাক হয়েই তোয়ার চাচি জবাব দেয়।
—— ” কেন আপা? এই কথা কেন? ”
–_—- ” তোমাদের বাড়িতে যে মাইয়াটা আসছে কি জানি নাম? হো তুর। সেই মাইয়া কোন পোলার লগে গেছিলো গা। এইটা নিয়া কথা বলাতে ওই মাইয়াটার কি না কি জানি কইলো সেইটা শুনে লগের মাইয়া গুলা আমাগোরে যা না তাই শুনাইছি। এটা শুনে তুরের মায়ের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ওনি বেশ রেগেই বলে,
——– ” আপনাদের সমস্যাটা কি? কে কি করে সেটা আপনাদের দেখতে বলেছে? ”

ওনার কথা তারা যেন আরো রেগে যায়।
—– ” নিজের মাইয়ারে তো ঠিক রাস্তায় নিতে পারোনাই। আর আমরা কইলেই দোশ। মানে চুরি করতে সমস্যা নাই, বললে দোষ।”
—– ” ভাবি এদের সাথে কথা বলতে জান কেন? মেয়ে দেখলে তো বুঝা যায় মা কেমন হবে? ”

তুরের মা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর চাচি বাধা দেয়, তারপর মহিলাদের উদ্দেশ্য বলে…
——-” ভাবি আপনারা কিছু মনে করবেন না। আপনারা বিয়েতে এসেছেন প্লিজ ওদের কথায় কান দেবেন না। ওরা ছোট কি বলতে কি বলে ফেলেছে? ”
——- ” ওরা নাহয় ছোট কি তোমার জাল তো ছোট না তাই না।”__ নাকে মুখে ডাইনিদের মত রিয়েকশন তুলে…
__— ” ওর হয়ে সরি বলছি। আপনারা বসুন। ”
—— ” নাগো আজকে আর বসব না। পরে আসব ক্ষন। এই চল গো। ”

ওনারা নাক ফুলিয়ে চলে যেতেই তুরের মা বলে উঠল,
_—– ” ওনারা আমার মেয়েকে যা নয় তাই বলে গেল আর আপনি আমাকে কিছু বলতে দিলেন না। ”

এইটা শুনে বেশ রেগেই তোয়ার চাচি বলে উঠল…….
——– ” সেই মুখ কি তোমার মেয়ে রেখেছে। আগে তো একবার আমার মেয়ের বিয়েটা ভেঙেছে আর আবার ওর জন্য……. ”
-__— ” ভাবি এইটা তুমি বলতে পারলা? ”
তখনি তুরের চাচা বলে..
—— ” খারাপ তো বলেনি। সত্যিটা মানুষের মুখে মুখে তো থাকবেই। ”
ওদের চেচামেচিতে তুরের বাবা আসতেই ওনাকে উদ্দেশ্য করে বলে……
——- ” দেখ বড় ভাই হিসেবে আমি কিছু বলেনি। কিন্তু আজকের টা বেশি হয়ে যাচ্ছে। এবার যদি তোয়ার বিয়ে ভাঙে তাহলে…..। ”
—— ” বিয়ে কেন ভাঙতে যাবে? আর কি হয়েছে? ”
তুরের মা সবটা বলে। ওনি কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখে তুর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাদছে। ওনি তুর বলে সামনে এগোতেই তুর ওখান থেকে দৌড়ে বাড়ির বাইরে চলে যায়। কিন্তু কোথায় গেছে বুঝতে পারে না। তুরকে খুজতে বের হওয়ার জন্য বের হতে চাইলে তোয়া আসে…. কাকুর মুখে চিন্তার চাপ দেখে কারন জানতে চাইলে ওনি সবটা বলে। সবটা শুনে তোয়া স্তব্ধ হয়ে যায়। ওর বাবা খুজতে বের হতে চাইলে তোয়া বাধা দেয়। কারন স্বরুপ শুধু এই টুকুই বলে…..
——- ” চিন্তা করো না কাকাই আমি জানি তুর কোথায় গেছে? তুমি চিন্তা করো না ও খুব শ্রীঘ্র আসবে। ”

★—————————-★————————–★

তীব্র নিজের রুমে বসে কিছু ফাইল দেখছিল। অনেক দিন ধরে বিজনেসের অনেক কাজ জমে ছিল। তখনি বাইরে চেনা কোন গলার আওয়াজ পায়। তীব্র দ্রুত কাগজপত্র রেখে বাইরে যায়। দেখে তুর অনেকটা পাগলের মত করে চিতকার করে তীব্র তীব্র করছে। তুরকে এমন অবস্থায় দেখে হতবাক ও। ও দ্রুত নিচে নেমে আসতেই তুর ওকে দেখে এগিয়ে আসে। খেয়াল না করার কারনে টেবিলে বেধে পরে যেতে নেয়। কিন্তু পরার আগেই তুরকে জড়িয়ে ধরে তীব্র।

তুর ও চুপ তীব্র ও তাই….. তুরকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় তীব্র শুধু এতটুকুই বুঝতে পারছে তুর হাপাচ্ছে। অনেক জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। অনেক কষ্টে এখানে এসে পৌঁছেছে বুঝতে বাকি নেই। তীব্র এভাবে ওকে জড়িয়ে একহাত দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে তুরকে শান্ত হতে বলে….. কিছুক্ষন তীব্রের বুকে নিজের ক্লান্তির অবসান ঘটিয়ে নিশ্বাসের গতি বেগ স্বাভাবিক হয়ে আসে।

হঠাৎ করেই তীব্র একটা ধাক্কা অনুভব করে। আচমকা এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল না তীব্র। তুরের আকস্মিক এমন ব্যবহারে অপ্রস্তুত ভাবে কিছুটা দুরে ছিটকে পরে। ও আবার তুরের কাছে যেতে চাইলে তুর নিজের হাত সামনে এনে ওকে আটকায়…… নিচে নামানো চোখ গুলোকে আস্তে আস্তে তীব্রের চোখের দিকে ভিরিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে…..
——— ” একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। আর না আমাকে ছোয়ার। তাহলে কিন্তু এবার খুব খারাপ হবে। ”

বিস্ময়ের শেষ প্রান্তে গিয়ে তীব্র জিজ্ঞেসেনু চোখে জানতে চায়……
——– ” কি হয়েছে তোমার তুর?”
তুর চুপ..….তাই একটু সামনে পা বাড়িয়ে দুর থেকে আবার জিজ্ঞেস করে…..
——– ” কি হয়েছে? ”

দুজনের দৃষ্টি দুজনের দিকে। একজনের দৃষ্টিতে তার প্রিয়র মনে থাকে অজানা কিছু প্রশ্ন জানার ইচ্ছে আরেকজনের চোখে ব্যাতিত হৃদয়ের যন্ত্রনা জানানোর জন্য টলোমোলো নোনা পানি। পানিটা আটকে রাখার চেষ্টায় তুরের চোখমুখ গোলাটে হয়ে এসে ঠোঁট জোরা অনবরত কাপছে। কিছু একটা বলতে চাইছে কাপা ঠোঁট জোরা। কিন্তু বুকের ভিতর জমে থাকা পাথরটা যেন শব্দগুলোকে ফুসফুসের মধ্যে আটকে রেখে দিয়েছে যা কন্ঠনালী দিয়ে বের হবার প্রবল আকাঙ্ক্ষায় ছটফট করলেও পারছে না। তুরের এই অবস্থা দেখে তীব্র অজানা এক ঘোরের কন্ঠে বলে…..
——– ” এভাবে নোনা সিক্ত চোখে নিজের অপরাধ বোধটাকে বাড়িয়ে দিও না তুর। তোমার অবাধ্য চোখের পানি আমার ভিতর রক্তক্ষরনের জন্য দায়ী হবে।”

তীব্রের এমন কথায় তুরের কন্ঠনালী ভেদ করে শব্দগুলো বের হতে না পারলেও চোখের পানি গুলো গড়িয়ে ঠিকি পরল। সেই সাথে তীব্রের দিকে এগিয়ে গেল ওর পা গুলো। তীব্রের অনেকটা কাছে গিয়ে দুহাতে ওর শার্টের কলার ধরে পা উচু করে নিল। তুরের এমন বিহেভে বেশ অবাক হয় ও। তুরের চোখ গুলোয় অদ্ভুত এক নেশা দেখতে পাচ্ছে তবে সেটা ভিতরের রাগটাকে নিঃসরণ করার নেশা। আর সেটা যে ওর উপর হতে চলেছে তা ভালভাবেই বুঝতে পারল তীব্র।

তুর নিজের চোখ মুখ শক্ত করে তীব্রের শার্টটা আরো মুষ্টিবদ্ধ করতে চায়। কিন্তু সেটা না পেরে খামচে ধরে। তুর এমন একটা পরিস্তিতিতে আছে যে তীব্র চাইলেও কিছু বলতে পারছে না। একদম তীব্রের মুখের কাছে গিয়ে বলে…..
_—— ” সত্যি কি ভালোবাসেন আমাকে? বিয়ে করে নিজের স্ত্রীর সন্মান দিতে চান? ”

হঠাৎ তুরের এমন কথায় অবাক হয় তীব্র। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে….
——- ” তোমার কি মনে হয় তুর?” — ঘোর কন্ঠে।
——- ” জানিনা আমি। তাই তো জানতে চাইছি।”
——-” বিয়ে করতে না চাইলে তোমার বাড়িতে প্রস্তাব কেন পাঠাতাম? ”
——-“জানিনা আমি।”
——-” তাহলে কি জান?”
——-” কিছু জানিনা আমি? তাইত জানতে চাইছি? ”
—— ” কি জানতে চাইছ বিয়ে করব কিনা?”
—— ” হুমম। ”
—— ” যদি তুমি চাও এই মুহুর্তে, তবে তাই হবে। ”
—— ” আমার ভালোবাসার উপহার হিসেবে আমি সবটা দিয়েছি। তাহলে আপনার ভালোবাসার উপহার হিসেবে আমাকে কি দেবেন? ”

তুরের কথার মানে টা বুঝতে পারল না তীব্র। ও একটু শংশয় নিয়ে জিজ্ঞেস করল…
——– ” উপহার? ”
——– ” হ্যা। ”
——– ” বেশ যা চাইবে তাই দিব। বল কি চাই? ”
——– ” প্রমিস করুন যা চাইব তাই দিবেন। একবার ও প্রশ্ন করতে পারবেন না। ”

তুর হাতটা বাড়িয়ে দেয় তীব্রের প্রতিজ্ঞা করার হাতের আশায়। তীব্র জানে না তুর কি চায়? কিন্তু ও যা চাইবে ওর ভালোবাসার উপহার স্বরুপ তাই দেবে ও। সেটা যাই হোক। তীব্র নিজের হাতটা তুরের হাতের উপর রেখে বলে…..
———- ” প্রমিস করছি তুর তোমার ভালোবাসার উপহার স্বরুপ তুমি যা চাইবে আমি তাই দেব তোমাকে। শুধু তোমার থেকে দুরে যাওয়া ছাড়া। ”
______ ” তাহলে চলুন আমার সাথে। ”

তারপর তীব্রের হাত ধরে বেড়িয়ে আসে তুর।

,
,

★—————————-★————————–★

কয়েকঘন্টা পর……⏰⏰⏰

তোয়ার বাবা বেশ গম্ভীর হয়ে সোফায় বসে আছে। ওনার স্ত্রী ওনার পাশে সোফা ধরে দাড়িয়ে আছে। তুরের মা ওর চাচির পাশে। আর ওর বাবা পাশের সোফায় বসা। কাজিনরা মিলে নিজেদের মধ্যে কিসব বলাবলি করছে। এটা দেখে তোয়া উঠে ওদের ভিতরে যেতে বলে। ওরা কারন জানতে চাইলে জোর করে ওদের উপরে দিয়ে আসে। আর যেন নিচে না নামে সেই কথাই বলে আসে।

তায়ান অবুঝের মত বসে আসে। কি হয়েছে তোয়াকে জিজ্ঞেস করতে ও কিছু বলল না।

নিরবতা ভেঙে তুরের চাচা রাগান্বিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠল,
——- ” এভাবে কি বলার জন্য বসিয়ে রাখা হয়েছে কেউ একটু বলবে? ” ওনার ধমকিতে কেপে উঠল সবাই। তখন তুরের বাবা শান্ত গলায় তুরকে জিজ্ঞেস, ” করে কি হয়েছে? তুই ডক্টর রায়হানকে বাড়িতে এনে কি বলার জন্য আমাদের এভাবে বসিয়ে রেখেছিস?

হ্যা তীব্র তুরের বাড়িতে তুরের পাশে দাড়িয়ে আছে। বাবার এমন কথায় ও তীব্রের দিকে তাকায়। ওর চোখে ভয় দেখতে পাচ্ছে তীব্র। যেখানে ভয়টা তীব্রের পাওয়ার কথা। তীব্র ঘড়ি দেখে নিল। হঠাৎ করেই হাপাতে হাপাতে একজন এলো যাকে দেখে সবাই অবাক। কারন ব্যাক্তিটি অন্য কেউ নয় সানি….. সানি এসে এক রকম হাপাতে হাপাতে তুরের সামনে এসে বলে….
——- ” এত তাড়াহুড়োও কেন ডেকে পাঠালি? সব ঠিক আছে তো? ”

তুর কিছু বলল না। তখনি সানির খেয়াল যায় তুরের পাশে থাকা তীব্রের দিকে। এখানে কি হতে চলেছে কেউ জানেনা। সবাই জানে ওরা সবাইকে কিছু বলতে চায় যার জন্য সবাই এখানে।

——- ” কিরে কিছু বলবি তো নাকি? ” —– বেশ বিরক্তি নিয়েই বলল তুরের চাচা।

এবার তীব্র তুরের দিকে একবার তাকাল। তারপর তুরের পাশ থেকে সরে সামনে গিয়ে বলল….
——- ” তুর না। আজ যা বলার আমি বলব। ”
——- ” তা কি বলবে তুমি? ” [ ব্যাঙ্গ করে ]

তীব্র একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে। তারপর বলে……
——– ” আপনারা সানিকে তুরের বয়ফ্রেন্ড হিসেবে জানেন সেটা সত্যি নয়। ”

কথাটা শুনেই সবার মাথায় বাজ পরে। সবাই জিজ্ঞেসার চোখে ওর দিকে তাকায়। তীব্র সবার নজর উপেক্ষা করে বলা শুরু করে…….
——- ” ভাগ্যের এক অদ্ভুত খেলায় তুরের সাথে আমার দেখা হয় ৬ মাস আগে তোয়ার বিয়ের দিন রাত্রে। ও অসুস্থ ছিল তাই আমি ওকে নিজের সাথে নিয়ে যাই। তখন আমি জানতাম না ও কে? আদো তোয়ার সাথে ওর কোন সম্পর্ক আছে কিনা। ”

তীব্র পুরোপুরি সত্যি টা বলে না। তুর যতটা জানে এর চেয়ে বেশি ও তুরকে জানাতে চায় না। কারন এতে তোয়ার আর তায়ানের সম্পর্ক টানাপোড়ন সৃষ্টি হবে। আর তুরের জানা সব সত্যিটুকু যদি বলে তবে সেটা খুব খারাপ ইফেক্ট করবে তুরের লাইফে যে ওকে বিক্রি করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই তুরের সাথে ঘটা বাজে ঘটনাগুলো এড়িয়ে গেল। ]

তীব্রের এমন কথায় বেশ অবাক হয় সবাই। ওর বাবা বলে উঠে…….
——– ” মানে। তাহলে….. । ”

——– ” বলছি আংকেল। তুর এক্সিডেন্টলি আমার কাছে এসে পৌছায়। আর ও তখন পুরোপুরি সুস্থ ছিল না। আর না আমি তখন ঢাকায় ছিলাম। সো আমি ওকে একজন পেসেন্ট হিসেবে নিজের কাছে নিয়ে যাই। ওর সুস্থ হতে বেশ টাইম লাগে। কিন্তু ততদিনে ওর প্রতি নিজের মনে একটা বাজে চাওয়া ফুটে উঠে। ওকে আমার ভালো লাগতে শুরু করে। ততদিনে ও সুস্থ হয়ে নিজের ফ্যামিলির কাছে যেতে চায়। কিন্তু আমি কেন জানিনা সেটা মেনে নিতে পারিনি। তাই জোর করেই আমি ওকে আমার কাছে আটকে রাখি। ”

কথাটা বলেই তীব্র চুপ হয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। কথাগুলো তীব্র বলছে তা যেন তায়ানের বিশ্বাস হচ্ছে না। ও কিনা একটা মেয়েকে আটকে রেখেছে। তুরের বাবার সাথে সবাই স্তব্ধ। ওনারা কিছু বলবে তার আগে তীব্র আবার বলা শুরু করে.……
_—— ” ৩ মাস পর যখন তায়ানের সুস্থ্য হয়ে উঠে। তখন তোয়ার সাথে আমার দেখা। আর তারপর তোয়ার মাধ্যমে জানতে পারি তুর নিজের বিএফ এর জন্য বাড়ি থেকে পালিয়েছে। তখন আমার ভয়টা আরো বেড়ে যায় যে আমি যদি তুরকে ফিরিয়ে দেই তাহলে ও আমার সাথে থাকবে না। আর সেই ব্যাপার থেকে আমি তুরকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নি। কিন্তু তুর রাজি না হলে আমি বাধ্য করাই বিয়েতে রাজি হতে। আর বিয়ের দিন ও আমাকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। আর সানির সাথে ওর দেখা হয়। তারপরের ঘটনা আপনাদের জানা। ”

কথাগুলো শুনে তুরের বাবা সর্বশক্তি দিয়ে তীব্রের গালে চড় মারে। তারপর ওর কলার ধরে ধরে……
——- ” তোমার জন্য আমরা আমাদের মেয়েকে ভুল বুঝেছি। তোমার জন্য কত কথা শুনতে হয়েছে জানো তুমি? আর তুমি কিনা………. । ”

তীব্র মাথা নিচু করেই জবাব দিল…
——- ” আমি জানি আমি ক্ষমার অযোগ্য পাপ করেছি। আর সেই পাপ মোচনের জন্য আপনারা যে শাস্তি দেবেন তাই মাথা পেতে নেব। ” —- তুরের দিকে তাকায়….. সানি গিয়ে তুরের পাশে দাড়ায়।
—– ” তুই কি চাস চুকলি?”

তুর চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। তখনি ওর চাচা বলে, “এখন আর কি বিয়ে দিয়ে ব্যাপারটা ধামাচাপা দেও। ” এটা শুনে তুরের বাবা প্রচন্ড ক্ষেপে যায়,
—— ” আপনি ভাবলেন কিভাবে আমি আমার মেয়েকে এর কম একটা ক্রিমিনালের হাতে তুলে দিব। আমার মেয়ে আমার জন্য বোঝা নয়। যদি বিয়ে দিতে নাও পারি তবে সারাজিবন নিজের কাধে বসিয়ে খাওয়ানোর ক্ষমতা ওর বাবা রাখে।”

এটা শুনে তীব্র বলে উঠে,
——– ” আমি জানি আমি অন্যায় করেছি আর নিজেকে বাচানোর জন্য আমি তুরকে বিয়ে করতে চাইছি না। তুর নিজেও তাই চায়। জিজ্ঞেস করুন তুরকে? ”

এতক্ষন তুর মাথা নিচু করে কাদছিল। ওর বাবা ওর মাথায় হাত দিয়ে ওর কাছে জিজ্ঞেস করে,
——- ” তুই কি চাস? ”
——- ” শাস্তি। পাপ করলে তার মোচন ওনাকে করতে হবে। ”

তুরের এই কথায় তীব্র শান্ত ভাবে বলে,
_—- ” আপনারা আমাকে শাস্তি দিন। আমি যে অন্যায় করেছি তার শাস্তি আমাকে পেতে হবে। ”

—— ” শাস্তি তো আপনী পাবেনি ড. রায়হান তবে সেটা ওনারা না আইন আপনাকে দেবে। ”

কথাটা শুনে তীব্র পিছনে তাকাতেই দেখে ইন্সপেক্টর শাওন। ও ভ্রু কুচকে বিস্মিত চোখে তোয়ার দিকে তাকাতেই তোয়া মাথা নাড়িয়ে জানায় ও জানে না।
——– ” আপনি?”
——– ” বলেছিলাম না ড. রায়হান যদি হাতে প্রমান আসে আপনি অপরাধী তাহলে আপনার কি হাল করব তা আপনি ভাবতেও পারবেন না। আর আজ আমার কাছে প্রমান ও আছে আর স্বাক্ষী ও।

ওর সামনে একটা ভিডিও অন করা। তারমানে ওর মুখের শিকারুক্তির জন্য এসব কিছু ছিল। ও অবাক চোখে তুরের দিকে তাকায়। এটা দেখে তুর মুখ ফিরিয়ে চোখের পানি মুছে উপরে চলে যায়। তীব্রের আর বোঝার কিছু থাকে না। তখনকার কথা মনে করে তুর বলেছিল…..

——- ” তীব্র আমার বিয়ের উপহার হিসেবে আপনাকে নিজের দোষ স্বীকার করতে হবে আমার বাড়ির সকলের সামনে। আর তার জন্য যে শাস্তি পাবেন তা মাথা পেতে নিতে হবে। ”

তুরের বলা তখনকার কথা এবার তীব্রের মাথায় ঢোকে। ও ভেবেছিল তুর ওর ফ্যামিলির সামনে সব সত্যিটা বের করতে চায়। কিন্তু এতটা দুর তুর ভাববে সেটা জানা ছিল না। কিন্তু তোয়া এটা করবে না ও বুঝেছে। তার এটা তুরের একার প্লান হবে না তাহলে.. ও সানির দিকে তাকায়। সানি তখন বলে……
——– ” চুকলিকে ফ্রেন্ড বানিয়েছি তা ত নেভাবোই। ”
——– ” তা মি. রায়হান সরি এরপর ডক্টর খেতাব থাকবে বলে মনে হয় না। সো আপনি থানায় যাবেন নাকি টেনে হিচড়ে নিয়ে যাব। ” —- বেশ ইগোষ্টিক ভাবে চোখ মুখ শক্ত করে বলল। কথাটা শুনেই তীব্র ওর দিকে রাগী চোখে তাকায়। কিন্তু সেই মুহুর্তে ওর তায়ানের কথা মনে পরে। ও তায়ানের দিকে তাকাতেই দেখে তায়ান মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। ও গিয়ে তায়ানের সামনে দাড়ায়। তায়ানের চোখে পানির রেখা স্পষ্ট। তীব্র ওর হাতটা ধরে বলল…..

——- ” সরি ”
—— ” যাকে নিয়ে আমার গর্ব হত তার জন্য ঘৃনা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তুই…. ”

আর কিছু বলতে পারল না।ও হাত ছাড়িয়ে চলে গেল। আর শাওন এসে ওর হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে নিয়ে থানায় গেল। থানায় যেতেই দেখে রিদ্ধ এসে দাড়িয়ে আছে। তীব্রকে দেখেই ছুটে আসে……বেশ উদগ্রীব হয়ে বলে…..
——- ” স্যার আমি ১ ঘন্টার মধ্যে…. ”
——- ” তুমি এমন কিছু করবে না রিদ্ধ। যা হচ্ছে হতে দেও। ”
_—– ” স্যার এখন পর্যন্ত খবরটা বাইরে লিক হয়নি। সবাই যখন জানবে কি হবে ভাবতে পারছেন বিজন্যাস, হসপিটাল এমনকি আপনার ডক্টরের লাইন্সেস ক্যান্সেল হয়ে যাবে। ”
——- ” আমি জানি। ”
——- ” তাহলে। ”
_—– ” ওয়াদা করেছিলাম পাপের প্রায়শ্চিত্ত করব। কিন্তু সেটা এভাবে তা ভাবিনি। কিন্তু ওয়াদা যখন করেছি তখন তা আমি রাখব। সেটা যেকোন মুল্যে। [ কিন্তু তার বদলে তুরকে আমার চাই। ]”

রিদ্ধর সাথে আর কোন কথা বলল না। রিদ্ধ চাইলেও কিছু করতে পারবেনা যদি তীব্র না চায়।

তীব্রকে জেলে রাখা হয়। আর শাওন গিয়ে ওর সামনে দাড়ায়।
——- অনেক চেষ্টার পরও আপনাকে মারার কোন ফন্দি পাইনি। শেষ পর্যন্ত এমন কেউ আমাকে প্রমান জোগাড় করার উপায় বলবে তা আমি ভাবতেও পারিনি। সে কে জানতে চাইবেন না?

এইটা শুনে তীব্র জেলের দেয়াল গেশে বসে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উপরে তাকায়। তারপর গানের দুটো লাইন কবিতার আকারে বলে…

# দ্বিধা ও দ্বন্ধ ভাঙছে ছন্দ বুকেতে অজানা ভয়,
জানি যেকোন শর্তে লুকিয়ে আছে আমার পরাজয়….
——– ” আমিও খুব ভালো করে জানি আর তুমিও খুব ভালো করেই বুঝে গেছে যে, আমি যাই করি আমার পরাজয় তোমার কাছে। আর তাই তোমাকেও আমার কাছেই হার মানতে হবে তুর। ” —- কথাটা বলে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।

এতক্ষন তুর বাইরে থাকলেও এবার ভিতরে আসে। ওর সাথে সানিও আছে। তুর বেশ রেগে বলে….
___- ” আপনার কি মনে হয় আপনি আমাকে যা বলবেন আমাকে তাই বিশ্বাস করতে হবে। আমি কি কোন বাচ্চা। আমি আপনাকে ভালোবাসি আর নাই বাসি আপনি যে আমার প্রতি দুর্বল তা আমি বেশ বুঝতে পেরেছি। আর যেকোনো মুল্যে আপনি আমাকে চাইবেন তাও জানি।আর তাই জন্য আপনি এখানে। এখানে যা ছিল সবটাই আমি করেছি। মাইন্ড গেম শুধু আপনি খেলতে পারেন না। আপু তো বোকা ছিল এটা বুঝতেই পারেনি খালি হাতে আপনার কিছু করা যাবে না। ”

এটা শুনে তীব্র একই ভঙ্গিতে হাসল। তারপর বলল……
——- ” এই জন্য বলেছিলাম আর যাই করো এই বুকের বাম পাশে আঘাত করো না। ক্ষত সারলেও ব্যাথা কমে না। যাও ছাড় কি করার? শাস্তি দিতে চাও দেও কোন সমস্যা নেই। ওই হিন্দি গানটা আছে না……

কাতেল আগার কারনা হে তো কারনা ধীরে ছে….
উফফফ ভি নেহি নিকলে গি মেরে হোটোছে….

“” যতই যন্ত্রনা দেও না কেন কিছু বলব না….
প্রমিস যখন করেছি রাখব।কিন্তু তোমাকে ছাড়ার প্রমিস করিনি কিন্তু সো….. আমার শাস্তি শেষ হওয়া মানে তুমি আমার বুকে থাকবে তুর । remember it…. ”

,
,
,
,
,
,
,
,
,
,[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]🤣🤣

তা কেমন লাগল আমার সিনেমা জানাতে ভুলবেন না। আশা করি আরো ভাল কিছু থাকবে।

আমার কিছু পাঠক রা আমার মত গল্প নিয়ে ২ভাবে কনফিউশানে থাকে গল্প দেওয়া নিয়ে….
১. আমি তারাতাড়ি গল্প দিলে ভাবে। এইটা নতুন পর্ব😱😱😱 চেক কইরা তারপর পরে।না ঠিক আছে।
আর ২. মেহের আপু তাড়াতাড়ি দিছে মানে আজকে আরো একটা পার্ট দিব😡😡😡 আজব

যাই হোক.…..
সরি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here