#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 23+24.
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#……

এই বলে শিকগুলো তুরের দিকে এগিয়ে দিতে লাগল। একটা শিক তুরের ডান হাতে আরেকটা ওর পেটের দিকে…. তুর নিজেকে বাচানোর জন্য ছটফট করছে । এতটাই যে ওর হাত কেটে রক্ত বের হওয়ার উপক্রম। কিন্তু মুখ বাধা থাকার কারনে শব্দ করতে পারল না। ইশারায় না করল কিন্তু তীব্র শুনল না। এক পর্যায়ে তুর উপরের দিকে তাকিয়ে কাদতে শুরু করল….

তখনি তীব্র তুরের দুহাতে শিক দুটো চেপে ধরতেই তুর চোখ বন্ধ করে চিতকার দিল।

কিন্তু অদ্ভুত ভাবে হাত গুলো পোড়ার জায়গায় হাত গুলো মুক্ত হওয়ার আভাস পেল। ও চোখ খুলে তাকিয়ে প্রচন্ড ভয়ে কোনো দিশা না পেয়ে তীব্রর গলা সজোরে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগল। তীব্র নিজের হাত থেকে গরম শিকগুলো ফেলে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তুরকে…

তীব্র শিকগুলো দিয়ে তুরের হাত নয় ওর হাতের বাধন গুলো পুড়িয়েছে। কারনটাই ছিল তুরকে ভয় দেখানো।

কতক্ষন তুরকে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে বলতে পারবে না তীব্র। আর তুরও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে না। তীব্রের গলা জড়িয়ে কাদতে কাদতে হিচকি তুলে ফেলেছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে কিন্তু একটুও নড়ল না। কারন ওর পা এখনো টেবিলের সাথে বাধা। আর মুখও বাধা।

তীব্র ওকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় একহাত দিয়ে ওর পিঠ ধরে আরেকহাত দিয়ে ওর পায়ের বাধন খুলে দেয়। বাধা জায়গায় আলত করে হাত বুলায়। ব্যাথা পেয়ে পাটা সরিয়ে নেয় তুর। তীব্র ওকে ছেড়ে নিজেই পা ঝুলিয়ে টেবিলে উঠে বসে। তুর ওর বাম দিকে থাকার কারনে ওর বাম উরুতে তুরকে বসিয়ে ডান পা উঠিয়ে তুরকে হেলান দেওয়ায়….. আর মাথার ভর সম্পুর্ন তীব্রের ডান বাহুতে।

তুর করুন চোখে তীব্রের দিকে তাকিয়ে হিচকি তুলছে। কান্না থেমে গেছে। এভাবে কিছুক্ষন তুরের দিকে চেয়ে থেকে ওর মুখের কাপরটা খুলে দেয় তীব্র। তারপর ওর গাল থেকে লেগে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয় তীব্র। ওর গালটা ধরে বলে…

_- খুব ভয় পেয়েছিলে তাই না। তীব্র সত্যি এমন করবে কিনা। হুমম করতে চেয়েছিলাম কারন পারব না তাই…..

অবাক চোখে তাকায় তুর….

— কেন ছেড়ে চলে গিয়েছিলে তুর। জানোনা তোমাকে ছেড়ে আমি পাগল হয়ে যাব। তাহলে কেন করলে এমন? জানো কতটা রেগে গিয়েছিলাম তোমার উপর….

চপ করে আছে তুর….

— তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না। এক কথায় বলে দিতে ব্যস আমি মেনে নিতাম। কিন্তু নিজে বলে আশা দিয়ে তুমি সেই আশা ভেঙে কি ঠিক করেছ?

..…..

— আচ্ছা তুর তুমি নিজে একটা কথা ভাব তো। আমি তোমাকে আটকে রাখা ছাড়া এখন পর্যন্ত তোমার সাথে কোনো কিছু কি জোর করে করেছি। তোমার সাথে ফিজিক্যালি ইনভলভ হয়েছি তাও কিন্তু তোমার সন্মতিতে। তুমি যদি বাধা দিতে তোমার কি মনে হয় আমি জোর করতাম। না তুর….

এবার যেন তুর আকাশ থেকে পরে ওর কথায়।

— তুমি যা চেয়েছ তাই দিয়েছি। এমনকি এতকিছুর পর তুমি যখন বিয়ের কথা বলেছে এক বাক্যে আমি রাজি হয়ে গেছি। কারন আমি বুঝতে পেরেছি আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। আর তুমি কি করলে নিজে ভালোবাসার কথা বলে, বিয়ের আশা দেখিয়ে নিজেই চলে গেলে…. আমার রাগটা কি স্বাভাবিক নয় তুর।

তুর চুপ করে আছে। কিছু বলতে পারছে না। ওর একটা কাজের জন্য আজ তীব্র ওকে অপরাধী করে দিতে চাইছে।

— আচ্ছা তুর তোমার সত্যি মনে হয়েছিল আমি আজ তোমাকে আঘাত করব। একটা কথা বলো আমার কাছে থাকার পুরোটা সময় আমি কি তোমাকে মেরেছি বা আঘাত করেছি। হ্যা বলতেই পারো তুমি যখন আত্নহত্যা করতে চেয়েছিল আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা কেন তুর শুধুমাত্র তোমার মাথা থেকে মরে যাওয়ার ভুত নামানোর জন্য। এছাড়া আর কোনদিন আঘাত দেওয়ার জন্য তোমাকে স্পর্শ করিনি।

এবার তুর কাপা গলায় বলল… আমাকে আটকে রাখা কি অন্যায় নয় তীব্র। ” এইটা শুনে আলত হাসল তীব্র।

— নিজের বুকে হাত রেখে বলো তোমাকে আটকে না রাখলে কি আমার সাথে থাকতে চাইতে। আমি যেখান থেকে তোমাকে এনেছি তারপরও কি তুমি আমার হতে তুর ..

তীব্রের কথায় তুর ভাবনায় পরে গেল। সত্যি তো কথাগুলো। তীব্র ওকে ওই লোকগুলোর কাছ থেকে কিনে এনেছে। আর তুর সুযোগ পেলে যে ও পালিয়ে যেত তাও ঠিক। আর কারন ছাড়া আঘাত বা জোর তো করেনি তীব্র। হ্যা সেচ্ছায় কিন্তু তুর কেন করেছিল? তীব্রের প্রতি ফিলিংস থাকার কারনে নাকি ভয়ে । তাহলে ও কি অন্যায় করে ফেলল তীব্রকে ছেড়ে গিয়ে।

তীব্র খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে ওর কথাগুলো তুরের মনে ইফেক্ট করছে। মেডিসিনের কারনে বা রোবো ক্যাটের কারনে তুরের মনে নিজের জন্য ফিলিংস তৈরি করতে পেরেছে তীব্র। আর এতকিছুর পর তুর তীব্রের প্রতি দুর্বল হবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। আর এমনিতে ও তুর ইমোশনালী এতটা স্ট্রং নয় মেয়ে নয়। তুর যে কতটা আবেগী তা এই কয়মাসে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। আর ও নিজে…. ও নিজে কি তুরের মায়ায় পরা থেকে নিজেকে আটকে রাখতে পেরেছে ….

— তুমি কি ভেবেছ তোমাকে বন্দীনী করে ভালোবাসি। না তুর ভালোবাসি তাই বন্দীনী করে রেখেছিলাম। নিজের ভালোবাসার মানুষকে কে ছাড়তে চায় বলো।

_- আচ্ছা তুর তুমি বলো, আমি যদি তোমাকে শুধু ইউজ করতে চাইতাম তাহলে তোমার এক কথায় তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হতাম…..

তুর কি করবে বুঝতে পারছে না। সত্যি মিথ্যার মাঝে ঘোরপাক খাচ্ছে। তীব্রের প্রতিটি কথা ওর মনে আঘাত করছে। মন এক কথা বলছে আর বিবেক অন্য কথা। দুইয়ের টানাপোড়নে পাগল হয়ে যাচ্ছে তুর…

গখনি তুরের মুখটা নিজের কাছে টেনে নেয় তীব্র। তীব্রের চোখের দিকে তাকাতেই হৃদয়টা ভেঙে যাচ্ছে ওর। নিজেকে অপরাধী লাগছে। তীব্রের চোখের কোনে জমে থাকা পানি তুরের ভিতর হাহাকার তৈরি করেছে….. তুরের চোখ বেয়ে পানি পরল কিন্তু সেটা কিসের বুঝতে পারল না। তখনি

— আচ্ছা তুর আমি কি তোমায় শুধু কষ্ট দিয়েছি। আমার স্পর্শে কোনদিন ও কি ভালোবাসা খুজে পাওনি তুমি। তোমার মনে ভালবাসার ফুল ফোটাতে এতটাই ব্যর্থ আমি…. চুপ করে থেকে না। উত্তর যদি না হয় তাহলে কোনোদিনও আমি তোমাকে জালাব না। তোমার থেকে দুরে থাকার জন্য আমাকে যদি মরতেও হয় তাহলে আমি…..

আর কিছু বলার আগেই তুর ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। এটা দেখে তীব্রের ঠোঁটের কোনে অদ্ভুত রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল। নিজেও খুব জোরে জড়িয়ে ধরল তুরকে।

তুরকে কোলে করে নিজের রুমে নিয়ে আসে। ওকে বিছানায় বসিয়ে বলে…..

— চুপচাপ বসে থাকবে। আমি এসে যেন এভাবেই দেখি।

তীব্র চলে যায়। কিছুক্ষন পর একটা বোলে হালকা গরম পানি আর পাতলা কাপরের টুকরো এনে বাধা জায়গা মুছিয়ে দেয়। পায়ে হাত দিতেই তুর বাধা দেয়। কিন্তু তীব্রের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলে না। তীব্র বাধা জায়গা পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দেয়। তারপর ঠান্ডা পানি এনে তুরের মুখসহ গলা মুছে দেয়। তুর সবসময়ের মত অবাক হয়ে ওকে দেখছে…. এরমধ্যে একজন স্টাফ এসে গরম দুধ দিয়ে গেছে। তুর না চাওয়া সত্ত্বেও ওকে খাইয়ে দেয়। তীব্র নিজের কাজ শেষ করে ওকে শুইয়ে গায়ে কাথা টেনে চলে যেতে নেয়…. তখনি তুর ওর হাত টেনে ধরে…

— কোথায় যাচ্ছেন তীব্র।

তীব্র ওর দিকে তাকায়। তারপর শান্ত সুরেই বলে….

— আমি এখানে থাকলে তোমার খারাপ লাগতে পারে।

-_ আমার ভালোলাগা খারাপলাগার এত খেয়াল আপনার।

তুর কেন বলল বুঝতে পারল তীব্র।

— আগে শুধু ভালোলাগার দাম ছিল। তোমার খারাপ লাগার দাম দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু তুমি যাওয়ার পর তোমার ভালোলাগা খারাপলাগা দুটোই আমার কাছে ইমর্পোটেন্ট। [ অন্যদিকে ফিরে ]

— যদি বলি আমার আপনার সাথে থাকতে ভালোলাগে না। আমি আমার ফ্যামিলির কাছে চলে যেতে চাই তাহলে….

— যেতে দেব। আটকে রাখব না। বললাম তো তোমার খারাপ লাগাও জরুরি আমার জন্য। তুমি যা বলবে তাই।

-_ আমি আমার পরিবারের কাছে যেতে চাই তীব্র।

কথাটা শুনে তীব্রের রাগ উঠে গেল কিন্তু কিছু বলল না। এটা রাগার সময় নয়। তাহলে নিজের হাতে তুরকে ফিরে পাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। ও নিজের রাগটাকে শান্ত করে নেয়। তারপর তুরের কাছে গিয়ে ওর গাল মুঠোয় নিয়ে বলে…..

— সেই তুমি এখনো আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছ। যাও না করব না। কিন্তু আমার শর্ত আছে….

— শর্ত মানে। [ ঘাবড়ে যায় তুর.. ]

— আমি তোমাকে তোমার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেব। কিন্তু তাতে আমার কি হবে তুর
।আমি যে পাগল হয়ে যাবো। তুমি যাওয়ার পর বিগত ১০দিন আমি দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। একটা মুহুর্তের জন্য ঘুমোতে পারিনি আমি। আমার ঘুম আমার চোখে ফিরিয়ে দিতে হবে….

— মানে… [ বেশ অবাক হয়ে ]

তীব্র উঠে ওর গালে হাত দিয়ে বলে…

প্লিজ তুর আমাকে একটু ঘুমাতে দেও। আমি না ঘুমিয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি। তোমাকে এনেছি একটাই কারন একটু ঘুম।

তীব্রের কথার আগা মাথা পেল না তুর। তবে এটা বুঝতে পারছে তীব্র সত্যি বলছে।। ও নির্ঘুম থাকার সাক্ষী বহন করছে তীব্রের চোখে নিচে পরা কালী।
.
— আমি একটু ঘুমোতে চাই। যেটা তুমি ছাড়া আর কোথাও পাব না আমি। প্লিজ তুর দয়া করে আমাকে ঘুমোতে দেও।

তীব্রের কথার সায় দিতে পারল না। কিন্তু তীব্রের ক্লান্ত চাওনী তুরকে বুঝিয়ে দিচ্ছে কতটা অসহায় হয়ে ও ঘুমাতে চাইছে। কিন্তু তুর কি বলবে তা বুঝতে পারল না। কি বলা উচিত ওর। আর তীব্রকে কিভাবে ঘুম পাড়াবে? তুরের চোখ তীব্রের চোখে আটকে গেছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর তীব্র আর চেয়ে থাকতে পারল না। অদ্ভুত এক ঘোর কাজ করল নিজের মাঝে। অজান্তেই চোখ গুলো বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। তীব্র কাপা কাপা ঠোঁটে তুরের কপালে স্পর্শ আকে। তুরের নাকে আরেকটা স্পর্শ একে ঠোঁটের দিকে তাকাতেই ঘোরটা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু তুরকে অবাক করে দিয়ে তীব্র ওর পেটের উপর মাথা রেখে কোমর জড়িয়ে ধরে বলে….

— আমার ঘুমের ওষুধ পেয়ে গেছি। আর সেটা হচ্ছে নেশা। অন্যকিছুর নয় তোমা……

নিশ্চুপ হয়ে যায় তীব্র। কিছুক্ষন পর তুর উঠতে চাইলে পারে না। তীব্রকে ডাকতেই দেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তীব্র….. তীব্রকে দেখে মনে হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ সে। এতটা নিশ্চিন্তে আর গভীর ভাবে সুখী মানুষই ঘুমোতে পারে। তবে একটা জিনিস অবাক লাগছে যেই মানুষটা কিছুক্ষন আগেও একটু ঘুমের জন্য ছটফট করেছে সে এতটা মগ্ন হয়ে কিভাবে ঘুমায়।

সন্ধ্যার পর … ৬টা বাজবে হয়তো। চারদিকে অন্ধকার। তবুও তুরের এই সময় ঘুম আসবে না। কিন্তু তীব্রের ঘুমটাও নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না। তীব্র কতটা শান্তিতে ঘুমোচ্ছে সেটা ওর মুখে প্রশান্তির আভায় ফুটে উঠেছে। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে ওর। এই ঘুমটা যেন অনেক্ষন স্থায়ী হয় ওর এটাই তুরের চাওয়া। কিন্তু কারনটা অজানা। যদিও সব সময় সবকিছুর কারন বাঞ্চনীয় নয়। নিজের অজান্তেই তুরের হাত তীব্রের মাথায় প্রবেশ করে। আলত করে টানতে থাকে। আর তীব্র পরশ আবেশে ঘুমিয়ে আছে প্রান-প্রিয়াকে নিয়ে। যদিও তাকে সে নিজের #বন্ধ_দরজার_তুমি উপাধি দিয়েছে। কিন্তু কি আসে যায় তাতে……..

,
,
,

,
,
রাত ১০টা….
হঠাৎ করেই তুরের ঘুমটা ভেঙে যায়। তীব্রের সাথে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছে নিজেও জানে না। বেলকনির দরজার পর্দা গুলো উড়ছে এক নাগাড়ে। সাথে মেঘের থাকে থাকা চাদটাও উকি দিচ্ছি। ঠান্ডা বাতাসে শীত শীত লাগছে তুরের। তুর উঠতে চাইলে নিজেকে তীব্রের বাম বাহুতে আবিষ্কার করল। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তীব্র। “এই লোকটাও না যেভাবে ঘুমাক। একসময় দেখা যাবে তুরকে সেই নিজের বাম বাহুতে জড়িয়ে শুয়ে আছে। বলতে গেলে এটা অভ্যাস। ” কথাটা ভেবেই আলত হাসে তুর। তীব্রকে এভাবে ঘুমাতে দেখে তুর নিজে নড়াচড়া করল না। তবে বাইরের থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসে ওর যেমন শীত করছে তীব্রের গুটিশুটি মেরে শোয়াতে বুঝল ওর ও তাই। কিন্তু বেচারা এতটাই ঘুমে মগ্ন যে কোনো খেয়াল নেই। তুর নিজের মাথার কাছ থেকে একটা কম্বল নিয়ে দুজনের গায়ে জড়িয়ে দিল। উষ্ণতায় আবছা অন্ধকারে তীব্রের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। আলত হাসল তুর। এবার তীব্র নয় নিজেই ওর বুকে মুখ গুজল তুর। তীব্র ঘুমের ঘোরেই ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। কিছুক্ষনের মধ্যে তুর ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গেল।

,

,
,
,
,
ওদিকে তোয়ার অনেক টেনশন হচ্ছে। যা কিছু বলে ম্যানেজ করেছে। সানিকে ফোন দিলো কিন্তু ধরছে না। আর তুরের ফোন সুইচড অফ বলছে।

,
,
,

,
,
,
,
হঠাৎ করেই ঘুমের মাঝে তুর ফিল কাউকে খুজল কিন্তু পেল না। ঘুমঘুম চোখে পাশ ফিরিয়ে তীব্রকে খোজার চেষ্টা করল। কিন্তু বিছানায় তীব্র নেই। তুর আশেপাশে খোজার চেষ্টা করতেই বেলকনির উড়তে থাকা পর্দার ওপাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। তুর কম্বলটা সরিয়ে আস্তে আস্তে বেলকনিতে গিয়ে দেখে তীব্র দুহাত গুজে দাড়িয়ে সামনেটা দেখছিল। তুরের আসার আভাস পেয়ে নিজের চোখটা বন্ধ করে বলল করল….

_- ঠান্ডা লাগছে ভিতরে যাও।

— আপনার লাগছে না।

কথাটা শুনে বিস্মিত হয়ে চোখ খুলে ওর দিকে তাকায়। তুর নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

— ভিতরে যাও…

তুর কোনো রেসপন্স করল না। এটা দেখে তীব্র চেয়ার থাকা চাদরটা তুলে তুরের গায়ে জড়িয়ে দিতে চাইল। কিন্তু তুর বলল…

— আমার শীত লাগছে না। আপনি বরং নিজের গায়ে জড়িয়ে নিন।

কথাটা শুনে তীব্র চাদরটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিল। এটা দেখে তুর আবার চোখ নামিয়ে নিল। তীব্র বুঝতে পারছে ওর শীত করছে। ও কথা না বাড়িয়ে তুরকে বুকের মধ্যে টেনে দুজনকে ঢেকে দেয়।

-_ বললাম তো আমার শীত লাগছে না।

— আমি কখন বললাম তোমার শীত লাগছে। আসলে আমার এত বেশি শীত লাগছে যে চাদরে শীত মানছে না।

তুর কিছু বলল না। তুরকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইল ও। বাতাসের বেগটাও ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। তুরের মুখ ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে। আর ওর অবাধ্য চুলগুলো তীব্রের মুখে বারি খাচ্ছে। হঠাৎ করে তুরকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ওকে চাদরে সম্পুর্ন আবৃত করে নিল। তুরের ঠান্ডা মুখটা ওর বুকে লাগতেই কেপে উঠল। আর উষ্ণতায় মিশে গেল।

বেশ কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর তুর মুখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলল.….

— আপনি কি আমাকে এখানে রাখবেন তীব্র!

তীব্র স্থীর চাওনীতে ওর দিকে তাকাল….

— তুমি কি থাকতে চাও…

নিশ্চুপ তুর…..

— তাহলে রাখব না। বাসায় দিয়ে আসব তোমাকে।

— সত্যি… [ শান্ত গলায় ]

-_ হুমম….

— তাহলে চলুন…

কিন্তু তীব্র অনড়। আর তুরকেও যেতে দিল না। বিস্মিত হয়ে তাকাল তুর..…

— তোমায় যেতে দেব তুর। তবে তোমার থেকে আমার কিছু চাই…

কাপা কাপা গলায় তুর জিজ্ঞেস করল… কি? আর মৃদু হেসে তীব্র জবাব দিল.….

— তোমার ২৪ ঘন্টার সামান্য কিছু সময়।

— মানে….

— মানে… তোমাকে সারাদিনের কিছুটা সময় আমাকে দিতে হবে। আমার ঘুমের সঙ্গী হয়ে। এতটা তো বুঝতেই পেরেছ তুমি আমার জন্য স্লিপিং পিল হিসেবে কাজ করো। তাই আমার ঘুমের সঙ্গী হতে হবে তোমায়। যদি তা পারো তবেই আমি যেতে দেব তোমায়….

— সেটা কতদিন?

— যতদিন না তুমি মন থেকে আমার কাছে চিরদিনের জন্য চলে আসবে ঠিক ততদিন।

— আর যদি না আসি তবে?

— তাহলে সারাজীবন আমার ঘুমের সঙ্গী হয়ে কাটাতে হবে তোমায়….

— তারমানে আপনি ছাড়বেন না?

একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় তীব্র…..

— হুমম। তবে যেদিন মারা যাবো।

কথাটা শুনে কলিজা কেপে উঠে তুরের। আবার একটা হাসি দিয়ে বলে….

— তবে চিন্তা করো না তার জন্য বেশি অপেক্ষা করাবো না। কারন তোমার উপর বিশ্বাস আছে আমার। আমাকে মারার চেষ্টা তুমি ঠিক করবে। তবে একটা কথা রাখবে আমার।

এই কথার উত্তর কি হয় জানা নেই। কিন্তু তীব্র নিজে থেকেই বলল….

— আমাকে আর যেখানে আঘাত করো এখানে করো না। [ বুকের বাম পাশ দেখিয়ে ] আসলে কি জানো অন্য কোথাও মারলে যদি বেচে যাই তাহলে ঘা শুকানোর পর ব্যাথাটা চলে যাবে। কিন্তু এখানে আঘাত করলে অসুখ সারলেও ব্যাথা সারবে না। কারন বিশ্বাস ভাঙলে অনেক কষ্ট হয় তুর। আমাকে হাজার আঘাত করলেও কিছু বলব না। কিন্তু প্লিজ এখানে না।

তীব্রের কথায় ওর চোখে পানি চলে এলো। শরীরের আঘাত পুরন মনের আঘাত না। আর তীব্র নিজের কথায় বুঝিয়ে দিয়েছে ও তুরকে ভয় পায়। তবে শরীরের আঘাতের নয় বিশ্বাস ভাঙার আঘাত….ও তীব্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ও কি ভেবে ধরল জানেনা। তীব্র এটাকে কি ভাববে তাও জানেনা।

— আমি যদি চিরদিনের জন্য আপনার না হই তখন।

— আমি জানি সেটা একদিন না একদিন ঠিক হবে। কারন তীব্র ঘুমের সঙ্গী করে বা জীবনের সঙ্গী তুরকে হতেই হবে। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে প্রমান করে দিব। চ্যালেঞ্জ করছি তোমায়। আর তীব্র কখনো হারে না। আর তা যদি হয় তার তুরের জন্য তাহলে তো আমি জিতবই….

— জোর করবেন তাইনা।

— না… কিন্তু এটা বলতে পারি। হয় একদিন তুমি নিজের হাতে আমাকে শেষ করবে নয়তো নিজে আমার #বন্ধ_দরজায়_বন্দীনী হতে চাইবে। এখন দেখার বিষয় তুমি কোন অপশন চুস করো…..

তুরের কপালে গভীর চুমো আকে…..

-_ যাও ফেশ হয়ে নেও। তোমায় বাড়ি দিয়ে আসব।

,
,
,

,
,
,
,,
,
তারপর তীব্র তুরকে ওর চাচার বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়ির পাশে গাড়িতে দুজনেই বসে আছে…. কারো মুখে কোন কথা নেই। নিরবতা ভেঙে তুর বলে উঠল আমি আসছি…..

তীব্র ওর হাত চেপে ধরল। তীব্রের দিকে তাকাতেই দেখে ও সিটে হেলান দিয়ে ডানহাত চোখে দিয়ে আছে… তুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীব্র বলল….

— Can i ki…. [ বলতে গিয়েও থেমে গেল তীব্র ] আমাকে একটা স্ট্রোংলি হাগ করবে তুর।

তুর কি বলবে বুঝতে পারল না। ও কিছু বলার আগেই তীব্র ওকে টেনে খুব জোরে জড়িয়ে ধরল। তুর কি করবে বুঝতে না পেরে তীব্রের আলত করে তীব্রকে ধরল। ঠিক তখনি আচমকা তুর নিজের পিঠে গরম পানির আভাস পায়। তারমানে তীব্র কি কাদছে। নিজের চোখের পানি লুকাতে জড়িয়ে ধরল ওকে…. তুর কিছু বুঝে উঠার আগেই তীব্র ওকে ছেড়ে বলে….

-_ চলে যাও তুর…[ অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে ]

তুর আর অপেক্ষা করল না। এক দৌড়ে বেড়িয়ে চলে গেল বাড়ির ভিতরে তীব্রও ওয়েট করল না। চলে এলো সেখান থেকে….

— আমি জানিনা তুর… আজকের কাটানো সময়টা সত্যি ছিল নাকি মিথ্যে। তবে যেটা ছিল সুন্দর ছিল। তুমি যদি মিথ্যে করেও আমাকে এভাবে ভালোবাস আমি সারাজীবন তা সত্যি মনে করে গ্রহণ করব। ভালোবেসে যদি নিজ হাতে বিষ দেও তবে অমৃত ভেবে তৃপ্ত হব আমি। জানোতো ধোকাটা যখন জানা থাকে তখন তা পাওয়ার স্বাদ আরো তীব্র হয়। আজকের টা সত্যি হলেও আমি জানি হয়ত খুব দ্রুত তা মিথ্যে হয়ে ধরা দেবে। আমি তবুও তাই চাই। কারন তাতেই তোমার ভালোবাসা থাকবে…..

নিজের মনে ড্রাইভ করতে থাকে…

,
,#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 24…….

— আমি জানিনা তুর… আজকের কাটানো সময়টা সত্যি ছিল নাকি মিথ্যে। তবে যেটা ছিল সুন্দর ছিল। তুমি যদি মিথ্যে করেও আমাকে এভাবে ভালোবাস আমি সারাজীবন তা সত্যি মনে করে গ্রহণ করব। ভালোবেসে যদি নিজ হাতে বিষ দেও তবে অমৃত ভেবে তৃপ্ত হব আমি। জানোতো ধোকাটা যখন জানা থাকে তখন তা পাওয়ার স্বাদ আরো তীব্র হয়। আজকের টা সত্যি হলেও আমি জানি হয়ত খুব দ্রুত তা মিথ্যে হয়ে ধরা দেবে। আমি তবুও তাই চাই। কারন তাতেই তোমার ভালোবাসা থাকবে…..

নিজের মনে ড্রাইভ করতে থাকে…

বাসায় ফিরে তুর দেখল তোয়া ড্রয়িং রুমে কপালে একহাত দিয়ে কপাল ধরে বসে আছে। তুর খুব ভালোভাবে বুঝতে পারল যে তোয়া তার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু ও কি বলব সেটা বুঝতে পারল না। কারন যাই হোক এই মুহুর্তে তীব্রের কথা তোয়াকে জানানো যাবে না। তাহলে তীব্রের সাথে ঘটে যাওয়া সব কাহিনী বলতে হবে। কিন্তু এটা ভেবে ভয়ে ভিতরটা হালকা হয়ে যাচ্ছে তোয়া যদি কিছু জিজ্ঞেস করবে তখন কি বলবে….. এসব ভাবতে ভাবতে তোয়ার ডাক শুনতে পেল…..

_- কিরে সানির সাথে গেলি অথচ সানিকে একবারো আমার সাথে দেখা করতে বললি না। জানিস কত টেনশন হচ্ছিল….

তোয়ার কথায় একটু স্বস্তি পেল তুর। তারমানে তোয়া জানে ও সানির সাথে গেছে।

— না মানে আপু আমি সানিকে বলেছিলাম। কিন্তু ও শোনেনি।

এই কথায় তোয়া আর তেমন কিছু বলল না। রুমে গিয়ে রেষ্ট নিতে বলল। তুর একটা স্বস্তীর নিশ্বাস নিয়ে ভিতরে চলে গেল। যা চোখ এড়ালো না তোয়ার। তোয়া খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে তুর মিথ্যে বলছে। আর তার কারন টাও খুব সহজ। কারন ও বাবার কাছে থেকে নাম্বার নিয়ে সানিকে ফোন করে। কিন্তু সানিকে কল করলেও ও কল ধরেনি। প্রচন্ড চিন্তা হয়েছিল। কিন্তু সেটা প্রকাশ করেনি। কিছুক্ষন আগেই সানি নিজে থেকে ফোন করে জানায় ও সারাদিন একটা কাজে ব্যস্ত ছিল তাই ফোন ধরতে পারেনি। ঠিক তখনি গাড়ি থেকে তুর নামে। যেহেতু ও জানালার সামনে দাড়িয়ে ফোন করেছে। তাই দেখেছে আর ও যার সাথে ছিল সে অবশ্যই সানি নয় তা বলার বাহুল্য রাখে না। কিন্তু তুরের দৌড়ে চলে আসা ওর মনে শংশয়ের সৃষ্টি করেছে৷

সকালে ঘুম থেকে উঠে তুরের ফ্রেশ হয়ে খেয়ে বিয়ের কেনাকাটা দেখছিল। তখনি ওর মনে হয় সবার জন্য কেনা হলেও নিজের জন্য কেনা হয়নি তার আগেই তীব্র ওকে নিয়ে গেছে…….

তখনি ননী এসে বলে…… তোয়া আপু তায়ান ভাইয়া এসেছে তোমার সাথে দেখা করবে নিচে যাও। তোয়া সবকিছু রেখে বাইরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় ঠিক তখনি ননী আবার বলে, তায়ান ভাইয়া তুরকেও নিয়ে যেতে বলেছে। আর হ্যা ওনার কোনো বন্ধু এসেছে। তাই তাড়াতাড়ি …..

কথাটা বলেই চলে গেল। তোয়া তুরকে যেতে বললে পরে আসছে। তোয়া একাই চলে যায়।

কিছুক্ষন পর ননী তুরকে ডাকে।

— তায়ান ভাইয়া চলে যাবে। তোকে দেখতে চায়।

— আচ্ছা চল।

তুর ওরনাটা মাথায় দিয়ে নেয়। এই বাড়িতে এটাই নিয়ম। তুর নিচে গিয়ে তায়ানকে সালাম দেয়….

— ভাইয়া ভালো আছ… অনেক দিন পর দেখলাম। জানো তোয়া আপুর যখন অন্য একটা ছেলের সাথে অনেক রাগ হয়েছিল। কিন্তু সেদিন বিয়েটা হয়নি তুমি জান আমি কতটা খুশি😁😁😁

তুরের কথায় তোয়া চুপ হয়ে গেল। কিন্তু তায়ান মৃদু হেসে জবাব দিল…

— আসলে দেখতে চেয়েছিলাম তোমার আপুকে অন্য ছেলের ঘাড়ে চাপানো যায় কিনা। কিন্তু দেখ তা তোমার আপুর পছন্দ হলো না সেই আমার ঘাড়ে উঠার জন্য বসে রইল।

কথাটা বলেই তায়ান হাসা শুরু করল। সাথে তরও তাল মিলালো। তখন তায়ান আবার বলল….

— তবে তুমি আমার কথাটা রাখলে না তুর। কই ভাবলাম তোমাকে আমার বন্ধুর মিষ্টি বউ করে নিব। কিন্তু সেটা ওই ছেলেটা পন্ড করে তোমাকে ছো মেরে নিয়ে চলে গেল। কিন্তু আমি সিউর যার জন্য ঠিক করেছিলাম সে যদি আগে তোমাকে দেখতে তাহলে কাউকে নিতে দিত না।

ক্লথাটা শুনে তুর চুপ হয়ে গেল… তায়ান বুঝতে পারল ওর খারাপ লাগছে তাই তায়ান কথা ঘুড়িয়ে বলল….

— আমার ফ্রেন্ড আজ তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে।

— কেন?

— আসলে আমি নিয়ে এসেছি। আগে আসত না কিন্তু আজ এসেছে হয়ত আমার বিয়ের জন্য…

তখন ননী বলল…

— হ্যারে তুই যখন হারিয়ে গিয়েছিলি তখন ওনি অনেক হেল্প করেছেন।

— হুমম…

— কিন্তু ড. রায়হান কোথায়..?

তখনি তীব্র আসে বলে…

— আমার খোজ করা হচ্ছিল বুঝি।

কন্ঠস্বরটা পেয়ে তুর থমকে গেল। ওর পুরো শরীর কাপতে লাগল। অজানা এক ভয় নিয়ে সামনে থাকা মানুষের দিকে তাকাল তুর। আর তার চেহারা দেখে কলিজা কেপে উঠল তুরের… ও বসা থেকে দাড়িয়ে গেল। অস্পষ্ট সুরে বলে উঠল….

— তীব্র……

তুরের পুরো শরীর কাপছে। এই ঠান্ডার মাঝেও তুরের শরীর ঘামতে থাকে । তীব্র শুধু হালকা হেসে স্বাভাবিক ভাবেই সোফায় বসল… তুরের দাঁড়িয়ে থাকা দেখে তীব্র বলল…..

— এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন বস?

তোয়া এবার রেগে গিয়ে তুরকে টান দিয়ে বসিয়ে বলল…

— কি হয়েছে রে তোর 😡 বাড়িতে গেস্ট এসেছ আর তুই….

— না মানে আপু….

— হইহে চুপচাপ বস।

তারপর ওরা সবাই কথা বলতে লাগল। তুর শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে হাত ঘসশে আর তীব্র তুরকে তখন থেকে ওদের কথায় তাল মিলিয়ে তুরকে দেখে যাচ্ছে…. তখনি তোয়ার মা এসে বলল… তায়ান তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলল…

— দেখ এসেছিস যখন তাহলে দুপুরের খাবার খেয়ে যাবি। নাইলে কিন্তু….

তীব্র হালকা হেসে বলল…

— ঠিক আছে। আচ্ছা এই বাড়িটা অনেক পুরানো….

তখনি ননী জবাব দিলো।

— হুমম আমার নানু বানিয়েছিলেন।

— হুমম বুঝতেই পারছি। আচ্ছা আমি কি বাড়িটা একটু ঘুরে দেখতে পারি। যদি আপনাদের কারও সমস্যা না হয়৷

তীব্রের কথায় তায়ান এমন একটা রিয়েকশন দিল যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নেতা এডলফ হিটলার ইহুদি হত্য না করে বরং তাদের পুরুষ্কৃত করতে চাইছে।

— কিরে এভাবে দেখছিস কেন?

— না আমি কি তোর জায়গায় অন্য কাউকে নিয়ে চলে এলাম নাকি। নাকি আজ ঘড়ির কাটা উল্টো দিকে ঘুরছে যা বলছি তাতেই রাজি। তার উপর আবার এই বাড়ি ঘুরে দেখার ইচ্ছে। হ্যারে তোকে জাদুঘরে নিয়ে গেলেও তো তুই দর্শনার্থীদের মত না ঘরে থাকা এন্টিক পিছের মত বিহেভ করে এক জায়গায় দাড়িয়ে থাকিস। কিন্তু আজ কি হল…

— আমি যাই করি কিন্তু তোর কথা আমার রিদ্ধর মত লাগছে…

তখনি তোয়া বলে..

— প্রবলেম কেন হতে যাবে? আপনি চাইলে দেখতেই পারেন। আর বাড়িটা বড় বাগান আছে আপনার ভালো লাগবে….

-_ আমি বাড়ি ঘুড়িয়ে দেখাব। [ নীমি ]

তোয়া বুঝল নিমী আর ননী যেকোন কাউকে পাঠালে দুজনেই কোনো না কোনো উল্টো পাল্টা কথা বলবে। আর সেটা ওদের ভাবসাবে প্রকাশ পাচ্ছে…. তাই ও তুরকে বলল… এটা শুনে তুর ঘাবড়ে গেল… ও কিছু বলতে চাইল কিন্তু তার আগেই তীব্র বলে।উঠল তাহলে চল.. তুর বাড়িটা একটু ঘুরে দেখাবা। তুর কিছু বলতে পারে না। এখন না করা মানে তীব্রকে অপমান করা। তাই তুর কথা না বলে হাটা দেয়৷ ওর পিছে যায় তীব্র। ঠোঁটের কোনে আলত হাসি…. তায়ান যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তাহলে কি তুরকে ওর ভালো লেগে গেছে কিন্তু তুর…..

তুর বাড়ির ভিতরটা ঘুরে দেখাতে ঠিক যখন উপরে গেল ঠিক তখনি তীব্র ওর হাত ধরে তোয়ার রুমে নিয়ে গেল।

— কি করছেন ছাড়ুন…. কেউ দেখে ফেললে। আর আপনি আপনি এখানে…. [ অনেকক্ষন নিজের কান্নাটা চেপে রাখলেও এবার আর পারল না তুর। কেদেই দিল ] আপনি তায়ান ভাইয়ের সেই ফ্রেন্ড অথচ আপনি…..

তুর ওকে ছেড়ে চলে যেতে নেয়। কিন্তু তীব্র ওকে টেনে জড়িয়ে ধরে নিজের মধ্যে আবদ্ধ করে…..

— সরি তুর আমি জানতাম না যে আমি যাকে আটকে রেখেছি সে তোয়ার বোন। মানে তুমি….

— জানতেন না আপনি? [ কাদতে কাদতে ]

— দেখ তায়ান যখন সুস্থ হয়ে ফিরেছিলো। তখন তোয়া তোমাকে খোজার জন্য আমার কাছে এসেছিল আর আমি তখন জানতে পেরেছি তুমি তোয়ার বোন….

— তাহলে কেন ফিরিয়ে দেন নি? [ কাদতে কাদতে ]

— কারন যতদিনে আমি জানতে পেরেছি ততদিনে নিজেকে সম্পুর্ন ভাবে তোমার সাথে জড়িয়ে ফেলেছিলাম। আর তুমিও আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলে তাই ভেবেছিলাম তোমাকে বিয়ে করে তারপর আমি তোমার পরিবারের কাছে তোমাকে ফিরিয়ে দেব কিন্তু তুমি তার আগেই…..

— কেন এসেছেন এখানে.??

— তোমার জন্য….

— আমাকে নিজের বন্দী বানানোর জন্য…

-_ না তুর। তোমার পরিবারের সন্মতিতে তোমাকে বিয়ে করে নিজের বউ বানানোর জন্য…. আমি শুধু তোমার অপেক্ষায় আছি। তুমি যদি হ্যা বলো তাহলে….

— ছাড়ুন আমাকে… দরজা খোলা কেউ এসে পরলে….

তীব্র তুরকে ছেড়ে দিয়ে দুরে দাড়ায়। তারপর নিজের পকেট থেকে একটা পেনডেন বের করে তুরের গলায় পড়িয়ে দেয়…

— এটা কি?

— মুখ দেখার উপহার। মনে কর আজ ছেলে পক্ষ তোমাকে দেখতে এলো যার সাথে ধমীয় অনুযায়ী বিয়ে করবে তুমি।

তুরের প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। তুর কিছু বলতে যাবে তখনি তোয়ার ডাক শুনে। ও দ্রুত চোখ মুছে তোয়ার কাছে যায়। তীব্রও নিচে নেমে আসে। ওকে বাগান দেখানোর কথা বললে না করে দেয়।

তারপর ওদের সাথে গল্প করায় মেতে উঠে। তুর ওর শরীর ভালো লাগছে না বলে চলে যায়। দুপুরের খাবার তায়ান আর তীব্র একসাথেই ওদের বাড়িতে করে। তুরের দিকে খেয়াল করলে দেখে ও প্লেটে আঙুলের রেখা কাটতে ব্যস্ত খাওয়ার কোনো নাম নেই।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেড়িয়ে যায় তীব্র। রেষ্ট নিয়ে যেতে বললে ও না করে দিয়ে চলে যায়। তাই তায়ান ও বেড়িয়ে যায়।

ওরা যাওয়ার পর তোয়া তুরকে টেনে রুমে নিয়ে রুমের দরজা লক করে দেয়। তারপর বেশ গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে…

— তুই কি ড. রায়হানকে চিনিস তুর।

তোয়ার এই কথায় চমকে উঠে তুর। হঠাৎ আপু এই কথা জিজ্ঞেস করছে কেন?

— কিরে বলছিস না যে তুই ডক্টর রায়হানকে চিনিস কিনা….

— আসলে আপু……

,
,

,
,
,
,
,

,,রাতে…

তীব্র নিজের রুমে বসে কাজ করছিল তখনি রিদ্ধ আসে। ওকে তীব্র সমস্ত কাজ বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু কিছুক্ষন পর খেয়াল করল রিদ্ধ ওর আগের জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছে…. বুঝতে পারল ও কিছু বলতে চায়….

— কিছু বলবে…

— স্যার আপনি তুরকে বিয়ে করবেন তাহলে এত ঝামেলা কেন পোহাচ্ছেন ওর ফ্যামিলিকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে নাচতে নাচতে বিয়ের জন্য রাজি হবে।

— হবে না।

— মানে।

— আমি কোনো ঝামেলা চাই না। তাই এসব করছি। যেহেতু ওরা জানে সানিকে তুরের বিএফ ভাবে। আর এটা জানে তুর এতদিন সানির বাড়িতে ছিল তাই ওরা সানির সাথেই তুরের বিয়ে দিতে চাইবে….

— তাহলে….

— সেটা তোমার ভাবতে হবে না। যাও তুমি।

— কিন্তু..

-_ রিদ্ধ…

— ওকে স্যার।

, রিদ্ধ চলে গেল। ঠিক তখনি তীব্র নিজের মনেই বলল…

— তুমি বুঝবে না রিদ্ধ। তুরের ফ্যামিলির কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর আগে তুরকে দুর্বল করাটা জরুরি। আর তার জন্যই আমার প্রতি ওর অনুভুতি কাজে লাগিয়ে ওকে দুর্বল করতে চেয়েছি। কারন আমি যদি ওর উপর ডিসিশন চাপিয়ে ওকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেই। আর জেদে ও যদি সবাইকে সবটা বলে দেয় তাহলে সবটা আমার হাতের বাইরে চলে যাবে। যাকে খোজার জন্য আমি সবাইকে হেল্প করেছি অথচ সে আমার কাছে বন্দী ছিল এটা কারোই কাম্য হবে না।

,

,
,
,
,
পরের দিন তীব্র তুরের বাড়ি যায়….. ওকে দেখে সবাই বেশ খুশি হয়। তখন তীব্র তুরের চাচা আর ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে চায়। তীব্র দেখে মনেই হচ্ছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তীব্রের সাথে তায়ানও এসেছে। তবে কেন সেটা জানে না। তখনি তোয়ার বাবা বলে উঠল….

— তায়ান আর তোয়ার বিয়ে নিয়ে কিছু….

ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বলে…

— আমি তায়ান আর তোয়ার বিয়ে নিয়ে কিছু বলতে আসেনি।

— তাহলে….

— আমি আপনার ভাস্তি তুরকে বিয়ে করতে চাই।

কথাটা শোনামাত্র ওনাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল। তীব্র সব জেনেও…. ওনাদের অবাক হওয়ার কারনটা বুঝতে পারল তীব্র তাই নিজে থেকে বলল….

— আমি তুরের মতামত জানতে চাই। যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয় তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। আর যদি আগের কথা ধরে বসে থাকেন তাহলে….

তখনি তোয়া বলে উঠে….

— We are sorry mr. Rayhan… কিন্তু আমার বোনের বিয়ে অলরেডি সানির সাথে ঠিক হয়ে গিয়েছে আর তাই আমাদের পক্ষে আপনার সাথে তুরের বিয়ে দেওয়াটা সম্ভব না।

— সেটা আমি তুরের কাছ থেকে জানতে চাই। তুর তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?

তুর একবার তোয়ার দিকে তাকায় একবার তীব্রের দিকে। তোয়া বলে উঠল….

— বল তুর তুই ওনাকে নয় সানিকে বিয়ে করবি বল….

তুর কিছু বলল না শুধু মাথা নাড়াল।

এইটা দেখে তীব্রের ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেল। কিন্তু কিছু বলল না। তায়ান নিজেও অবাক তীব্রের এই প্রস্তাবে। আর তোয়া কিভাবে এতটা স্পষ্ট করে তীব্রকে ফিরিয়ে দিল…. তীব্র তুরের বাবা মায়ের কাছে জানতে চাইল।

— আপনারা আপনাদের মেয়েকে কি আমার সাথে বিয়ে দিতে আপত্তি আছে।

এইটা শুনে তুরের বাবা বলে…

— তোমার সাথে বিয়ে দিতে তেমন ভাবে কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু আমি তুরের অমতে…

তীব্র কিছু বলল না। নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে চাইল। এই প্রথম নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে তীব্রের। প্রথম কোনো কিছুর জন্য আরেকজনকে চাইছে….তীব্রের রাগটা আরো বেশি লাগছে তুরের উপর। ওর মতে তুরের বিয়ে না করার কারন ছিল না। ও তুরের দিকে তাকাতেই দেখে তুর নিচের দিকে তাকিয়ে কাদছে। ভালোভাবেই বুঝল এটা তুরের মর্জিতে হচ্ছে না। তোয়ার দিকে তাকাতেই ওর ঠোঁটে একটা অদ্ভুত হাসির আভা দেখতে পেল…. তীব্র তায়ানের দিকে তাকাতেই ওর বাড়ি থেকে বেড়োতে চাইল। ঠিক তখনি একটা ফোন আসে…. তীব্র ফোনটা রিসিভ করতেই. …..

-_ স্যার থানা থেকে বলছি। আপনার নামে একজন মেয়ে কমপ্লেন করেছে আপনি তার বোনকে আটকে রেখে চর্রচার করেছেন। আপনাকে শুধুমাত্র জিজ্ঞসাবাদের জন্য ডাকা হবে। কাইন্ডলি যদি আসতেন….

— আমি আসছি…. [ তুরের দিকে তাকিয়ে ফোনটা নামিয়ে নিল। তুরের ভয়ে কলিজা কেপে উঠছে। ] তায়ান আমি আসছি….

— কোথায় যাচ্ছিস….

— মেয়ে দেখতে এসেছি তার গিফট আনতে যাচ্ছি….

— মানে…

কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে এসে নিজের গাড়িতে বসে থানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেল তীব্র।

,
,
,
,

কালকের ঘটনা…..

কালকে যখন তোয়া তুরকে জিজ্ঞেস করছিল….

— কিরে তুই ডক্টর রায়হানকে চিনিস..??

— না আপু….

কথাটা শোনা মাত্র সজোরে তুরের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় তোয়া।

-_ আমাকে মিথ্যে বলছিস যে তোর থেকে তোকে ভালো করে চেনে। কাল তুই সানির সাথে যাসনি। তুই ডক্টর রায়হানের সাথে গিয়েছিলি… কারন যে গাড়িতে আজ আমি ডক্টর রায়হান এসেছে ঠিক সেই গাড়িটা কাল তোকে নামিয়ে দিয়েছে। আর আমি সানিকে ফোন দিয়েছিলাম ও স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছে তুই আর সাথে নেই।

— আপু আসলে… [ কাদতে কাদতে ]

— কোন মিথ্যে কথা না। এই লকেট এই লকেট ওনি তোকে কেন দিবে?

—…….

— এই লকেটটা মিনিমাম ১০ লক্ষ+ হবে এত দামী জিনিস তোকে কেন দিব…. বল… তার মানে এটাই ধরব তুই সানিকে ঠকিয়ে ডক্টর রায়হানের সাথে…

তখনি তুর গিয়ে তোয়ার পা জড়িয়ে ধরে….

— আপু তুই আমাকে ভুল বুঝিস না। আমি কোনো অন্যায় করিনি।

এটা দেখে তোয়া নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে তুরকে উঠায়…. তারপর বলে…

-_ তাহলে সত্যি টা কি?

— সত্যি টা হলো…. [ আরো জোরে কেদে ফেলে তুর ] সেদিন বিয়ে থেকে আমাকে কিছু লোক তুলে নিয়ে যায়। জানিনা কেন ওরা নীমী আর ননীকে ছেড়ে দিল। কিন্তু আমাকে ওরা কিছু লোকদের হাতে তুলে দিল। যারা আমাকে একটা হোটেলে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। যার সেখান থেকে তীব্র…. মানে ডক্টর রায়হান আমাকে কেনে….. তারপর….

সবকথা তোয়াকে খুলে বলে… ওর বিয়ে থেকে পালানো। কথাগুলো শুনে তোয়ার গায়ে আগুন জলে উঠে। যে তুরকে খোজার জন্য ও তীব্রের কাছে ছুটে গিয়েছে সে নিজেই ওর বোনকে আটকে রেখে তুরকে খোজার মিথ্যে নাটক করল….

— আপু ওনি এখন আমাকে বিয়ে করতে চায়। তাই….

— তাই কি? তাই তুই নাচতে নাচতে রাজি হয়ে গেলি৷ কতটা নোংরা হলে এরকম কাজ করা যায় তার ধারনা আছে তোর। আমার তো ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে…. ছিহহ….

তুর কোন কথা বলতে পারল না। শুধু কাদত লাগল। তখনি তোয়া বলল….

— তোকে কিছু করতে হবে না। এবার যা বলার,যা করার আমি করব….

,
,
,
,
,
,
,
,

,[ বাকিটা পরের পর্বে জানবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here