#ফিরে_আসা
#ফারজানা
#পর্ব_৫

রাদ ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতে না বলতেই স্বপ্ন বললো…..

___ওই তুই আমাকে মিথ্যা কথা বললি কেন ওই ছেলেতো আব্বুকে কিছু বলে নাই

___তুই অন্যায় করছিলি একটা মেয়ের উপর তাই তোকে মিথ্যা বলে পাঠিয়ে দিলাম।

___ওই তুই জানিস না মিথ্যা বলা মহাপাপ

___ভালো কাজ করতে হলে মাঝে মাঝে একটু আকটু মিথ্যা বলতেই হয় তাই না মিস(দীবাকে চোখ টিপ দিয়ে)

দীবা রাদের চোখ টিপ দেওয়া দেখে লজ্জায় বলে উঠলো….

___আমি বরং আজ আসি ক্লাসের দেরি হয়ে যাবে

রাদ কিছু বলার আগেই দীবা চলে গেলো তখন ফোনের ঐপাশ থেকে স্বপ্ন বলে উঠলো…..

__মাম্মা কাজ হয়েছে

___ওই শালা ভাইকে মামা বলছিস লজ্জা করে না

___এইটা আদুরে ডাক । এইসব বাদ দে তো পাখি তোর ভালো কাজে পা দিয়েছে নাকি

___হুম পাখি পা দিয়েছে এত্ত এত্ত ধন্যবাদ মেরা জানে জিগার দোস্ত অ্যান্ড ভাই উম্মাহ

__ এখন আপনাকে ভালো বানাতে গিয়ে নিজে যে অপরাধী হলাম তার বেলা(মুখ ফুলিয়ে বললো স্বপ্ন)

____দোস্ত আর ভাইয়ের জন্য তো এইটুকু খারাপ হওয়াই যায় তাই না

___তা তো হচ্ছি তো এখন ট্রিট কই ?

__পেয়ে যাবি আগে প্রেমে তো পড়ুক পরে

___এত কিছু বুঝি না আজকের পার্টির সব খরচ তোর

কথা বলেই ফোন কেটে দিলো স্বপ্ন। আর রাদ ও কিছু বললো না সে কিছুক্ষণ আগে হয়ে যাওয়া ঘটনাটা ভাবতে লাগলো……

রাদ স্বপ্ন আশিক ও পিয়াস বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো ঠিক তখনি রাদের চোখ যায় নীল ওরনা পড়া এক মেয়ের দিকে সে অপলক ভাবে ওই নীল ওরনা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে যাকে বলে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়া তখনি আশিক রাদকে উদ্দেশ্য করে বললো…..

___মাম্মা ওইদিকে নজর দিও না ওই মাইয়া প্রেমে টেমে জীবনেও পড়তো না। ওই মাইয়া প্রেমে বিশ্বাস করে না আমার বড় ভাই কিছুদিন ঘুরে পড়ে দেবদাস হয়ে বাসায় ফিরছে। আর শুনেছি মেয়েটা একটু ডেঞ্জারাস তাই মাম্মা আগে থেকেই সাবধান হয়ে যাও

আশিকের কথা শুনে স্বপ্ন ও তাকালো মেয়েটির দিকে অরো অনেক ভালো লাগে মেয়েটাকে যাকে বলে লাভ এট ফাস্ট সাইট কিন্তু রাদ যেহেতু আগে পছন্দ করেছে তাই ও মুখে কিছু বললো না…

ওই মেয়েকে আমি আমার প্রেমে পড়তে বাধ্য করবই এইটা রাদের চ্যালেঞ্জ

তখন পিয়াস বলে উঠে…

__ কেমনে করবি প্ল্যান করছস নাকি তুলে নিয়া যামু

রাদ ও স্বপ্ন পিয়াসের কথায় রেগে গেলেও মুখে টা প্রকাশ করলো না তখন রাদ বললো….

___তোরা তো জানিস আমার মাথায় প্ল্যান সব সময় ঘুরঘুর করে তাই তো আমার প্রিয়তমা কে দেখেই মাথায় ছট করে একটা প্ল্যান চলে আসলো তো শুন কি করতে হবে……

রাদের প্ল্যান ছিলো স্বপ্ন মেয়েটাকে রেগিং আর নাম করে টিজ করবে আর তখনি রাদ হিরোর মতো এন্ট্রি নিয়ে মেয়েটাকে বাঁচাবে এর ফলে মেয়েটা রাদ কে ভালো ভাববে আর মেয়েটি হলো দীবা ।

ওদের প্ল্যান মতো ওরা কাজ করলো আবার সফল ও হলো আর এইদিকে রাদের চাচ্চু অর্থাৎ স্বপ্নের বাবা এই কলেজের প্রিন্সিপাল সেই জন্য তাদের দীবার সব ইনফর্মেশন জানতে বেশি একটা সময় লাগলো না।

রাতে দীবা বাসায় বসে বসে ওই নীল চোখ গুলোর কথা ভাবছে….

___কি অদ্ভুত মানুষটা। মানুষটাও অদ্ভুদ সাথে মানুষটার চোখ ও । মনে হচ্ছে ওই নীল চোখ আমার সামনে এনে রেখে দেই এত সুন্দর চোখ আমি জীবনেও দেখি নাই

দীবা বসে বসে রাদের চোখ নিয়ে ভাবছে আর গবেষণা করছে ঠিক তখনি তার মা ডাক দিলো….

___ কিরে দীবা আজ প্রথম ভার্সিটিতে গেলি আর এসেই কি ভাবা শুরু করছি

___না আম্মু কিছু না শুধু ভাবছি নীল চোখ

___ওই তোকে কি ভূতে ধরলো নাকি নীল চোখ তো সাপের হয়

___উফফফ আম্মু তুমি বুঝতে পারছো না এইটা সাপ না একটা ছেলে যার চোখ দেখে আমি ক্রাশ খাইছি।

___শেষমেশ সাপের চোখের উপর ক্রাশ। এই জন্যই মুরব্বিরা বলে বাচ্চা কাচ্চা পেটে থাকলে এইসব সাপ কুমির দেখতে নাই

___আল্লাহ আবার শুরু করে দিলে তোমার সেই লেকচার। এইসব বাদ দিয়ে বলো কিসের জন্য এসেছো?

___ওই কই তুমি দেখো তোমার মেয়ে নাকি সাপের চোখের প্রেমে পড়েছে ওই আমার মনে হয় ছেলেটা ইচ্ছাধারি নাগ তাড়াতাড়ি একটা উজা আনো বাসায়

এইগুলো বলে চিল্লাতে চিল্লাতে দীবার আম্মু দীবার আব্বুর কাছে চলে গেলো আর দীবা তো মাথায় হাত বসে বসে বলতে লাগলো….

___এইসব সিরিয়াল দেখে দেখে আমার আম্মু পাগল হয়ে গেছে আর বাসের বাসার কিছু নানু দাদু আছে যারা ওনাকে তো এইসব আজগুবি কথা গুলো মাথায় ভরে দেয় এই জন্য কিছুদিন আগে আমার বিয়ে নিয়ে পড়ছিলো আমি নাকি বুড়ি হয়ে যাচ্ছি পরে ভালো ঘর আসবে না আরো কত কি শেষমেশ আব্বু আমার পাশে ছিলো তানাহলে তো এতো দিনে বিয়ে দিয়ে দিতো আগামীকাল আব্বু কে বলবো এইসব ডিশের লাইন কেটে দিতে আর ওই নানু দাদুদের ও বলবো এইসব যেনো না বলে

এইগুলো ভাবতে ভাবতে দীবার রাদের কথা ভুলে গেলো…..

রাতে ক্লাবে….

___ভাই ফোন নাম্বার এনেছিস?

স্বপ্ন ড্রিঙ্কস হাতে নিয়ে বললো….

___এইটা না এনে কি আর আমার শান্তি আছে এই ফোন নম্বরের জন্য কত ফোন দিয়েছিস বলতো। তোর এত এত কল আসাতে তো আব্বু একটুর জন্য ধরে ফেলতো আর এত এত ফোন দেওয়াতে আব্বু বলছে আমি নাকি প্রেম করি গার্লফ্রেন্ড এত এত ফোন দিচ্ছে

___হাহাহা তাহলে শেষে তোর গার্লফ্রেন্ড হয়ে গেলাম

___ওই তুই গেঁ নাকি যে এইসব বলছিস?(স্বপ্ন ও একটু মজা করলো)

___শালা আমি গেঁ তাই না আজ তোর একদিন কিনা আমার একদিন

বলেই ওইখানে স্বপ্ন কে মারতে লাগলো…..

দীবা ওর মা ওর বাবা আর ওর ছোটো বোন আদিবা খেতে বসলো….

আদিবা এইবার ক্লাস সিক্সে এ পরে দেখতে দীবার থেকেও সুন্দর আর আদিবার বিশেষ সুন্দর হওয়ার কারণ তার লালচে সোনালী চুলের জন্য আর চুলগুলো কোমর ছাড়িয়ে যায় আর দেখতে পুতুলের মতো ।আদিবা কে দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না ও মানুষ নাকি বিদেশি পুতুল। দীবা তো আদিবা কে ডল ছাড়া ডাকে না। দীবাকে সবার আদর করে ভালোবাসে কিন্তু এই পিচ্ছি ডলটাও সবার চোখের মণি….

ওরা যখন খাবার খাচ্ছিলো তখন আদিবা বললো….

___আপ্পি তুমি নাকি আজ ইচ্ছাধারী নাগ দেখেছো ? বলো না আপ্পি কেমন দেখতে আমার রকির মতো নাকি?

দীবা খাচ্ছিলো আদীবার কথা শুনে ও কাশতে লাগলো তখন দীবার আম্মু দীবাকে পানি দিয়ে বললো….

___এই নে পানি খা। আর শুনো আগামীকাল এক উযা আনবে দেখো মেয়েটাকে কিভাবে বশ করে রেখেছে

দীবার আব্বু রাগী দৃষ্টিতে দীবার আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলে…..

___আমি মাঝে মাঝে ভাবী তুমি আমার স্ত্রী নাকি সিনেমার কোনো চরিত্র। শুনো আমার মেয়ের নামে আরেকবার এইসব বললে তোমাকে পাবনা দিয়ে আসবো আর তোমার সব সিরিয়ালের চ্যানেল অফ করে দিবো

দীবার আম্মু এইসব শুনে কিছু বললো না তখন আদিবা বললো….

___আপ্পি আজ আমি তোমার সাথে ঘুমাবো

দীবা অবাক হয়ে বললো এত দয়া আজ কিভাবে আসলো আপনার?

আদিবা মুখে হাসি টেনে বললো…..

____ইচ্ছাধারি নাগের গল্প শুনবো তাই

আদিবা এই কথা বলে হাসতে লাগলো দীবা ছোটো ছোটো চোখে তাকিয়ে আদিবার হাসি দেখে ও হেসে দিলো আর বললো…..

___ওকে আমার কিউট ডল তোকে তোর ইচ্ছাধারী নাগের গল্প বলবো নে এখন তাড়াতাড়ি খা

হাসি আনন্দ দীবা ও তার পরিবার রাতের খাওয়া শেষ করলো……

রাত তখন সাড়ে বারোটা তখন দীবার ফোনে একটা ঠুং করে শব্দ আসলো আর বেচারি দীবা তখন ঘুমের রাজ্য চলে গিয়েছে তখন আদিবা ফোনের শব্দে ঘুম ভেংগে গেলো আর ফোনের দিকে তাকিয়ে একবার বোন কে ডাকতে লাগলো কিন্তু বেচারি তখন গভীর ঘুমে তাই ও ফোন রেখে শুয়ে পড়লো তখন আবারো একটু ঠুং করে শব্দ হলো তখন আদিবা ফোনের লক খুলে দেখলো একটি মেসেজ যাতে লিখা ছিলো……

“তুমি সেই স্বপ্নপরী যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। তুমি সেই অনুভুতি যাকে আমার মন অনুভব করে। তুমি সেই প্রেমিকা যার ভালবাসার ছন্দ প্রেমিক আমি।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here