#ফিরে_আসা
#ফারজানা
#পর্ব_৪
বলতে না বলতেই দীবা অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে গেলো…..
দীবা চোখ খুলে তাকালো ও ওর রুমে শুয়ে আছে। ও চিৎকার করে রাজিনাকে ডাকতে লাগলো…..
___রাজিনাআআআআ এই রাজিনাআআআ কই তুই তাড়াতাড়ি আমার কাছে আয়
রাজিনা দীবার চিৎকার শুনে কাজ ফেলেই দীবার রুমে দৌড়ে আসলো আর বললো….
___আফা আফা কি হইছে আন্নের ?
___কিছু হয় নাই। আগে বল আমাকে এইখানে কে নিয়ে আসছে
__চিনি না আফা একটা লোক আপনেরে খুলে নিয়া ছাদ থেকে নামছে আর আমাকে বলছে যেনো আপনার যত্ন নেই
দীবা রাজিনার কথা শুনে চরম পর্যায় অবাক হয়ে যায় । কে তাকে নিয়ে আসছে স্বপ্ন নাকি না না স্বপ্ন হবে না কেননা রাজিনা একটা লোকের কথা বলছে আর রাজিনা তো স্বপ্ন কে চিনে তাহলে রাদ নাকি এইসব ভাবতেই দীবা ভয়ে কেঁপে উঠলো
___এই আফা কি হইছে আন্নের কথা কন না কেন? আর ওই সাহেব কেডা যে আপনাকে খুলে নিয়ে আসছে
__জানলে কি আর তোকে জিজ্ঞাসা করতাম নাকি।আচ্ছা বাদ দে এইসব কথা বলতো লোকটি দেখতে কেমন?
___আফা লোকটি দেখতে একদম হিরোদের মতো। ঐ যে আন্নে কিতা ছবি টবি দেহেন না কিতা কথা কয় হাউ মাউ কি যে বলে ওইসব হিরোদের মতো দেখতে
দীবা এতক্ষণ ভয়ে থাকলেও রাজীনার কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা
___আরেহ ওইটা হাউ মাউ কথা না ওইটা হলো হিন্দি মুভি আর ইংলিশ মুভি
__ইন্দি মুচি কি?
দীবা এইবার আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো ও হাসতে হাসতে পেট ধরে বসে আছে পরে আবারো বললো…..
___ওইটা হিন্দি মুভি হবে
___আইচ্ছা আফা যাই হোক ওই ছবিতে যে দেহি কি ছোটো ছোটো জামা পরে আর গানের মধ্যে জামা পাল্টায় ওদের কি শরম নাই আর ওরা কি যাদু জানে?
___আরেহ বোকা মেয়ে একটা মুভি করতে অনেক সময় লাগে আর ওরা কিছুক্ষণ পর পর জামা চেঞ্জ করে নতুন পোশাক পরে আর একটা মুভি করতে অনেকদিন সময় লাগে আর ওইসব ছোটো ছোটো পোশাক ওদের পরে অভ্যাস হয়ে গেছে এখন তো বাংলাদেশের নায়ক নায়িকারা ও ছোটো ছোট ড্রেস পরে ওরাও এখন বিদেশিদের মতো হতে চায় এখন ওইটা ওদের কালচারের মাঝে পড়ে যায়
____হহহ বুঝছি তো আফা আপনি ও দেখতে একদম ওইসব নায়িকাদের মতো তোয় আপনেও তো ওইসব ড্রেস পড়েন না
__আমি কি হিরোইন নাকি কি যে বলছিস তুই এইসব
__ আফা আপনে কিন্তু অনেক সুন্দর আমাগো স্বপ্ন সাহেব ও কত সুন্দর কিন্তু ওই যে লোকটা আছে না যে আপনেরে খুলে কইরা রুমে দিয়ে গেছে ওই লোকটা স্বপ্ন সাহেবের থেকেও সুন্দর আর ওই লোকটার চোখ গুলো ছিল নীল
নীল চোখ শুনে দীবার বুকটা কেঁপে উঠলো কেননা রাদের চোখ ও নীল ছিলো আর এই নীল চোখের কারণে যে রাদের প্রেমে পড়েছিল কিন্তু রাদ তাকে ধোঁকা দিয়ে ছিল রাদ তার অনেক ক্ষতি ও করেছে আর সেই ক্ষতি গুলো এখন স্বপ্ন পূরণ করেছে সে যে স্বপ্নের কাছে চির ঋণী এইসব ভাবতে ভাবতে রাজিনার কথা দীবার হুস আসলো…..
___আফা একটা কথা কমু?
__বল কি বলবি…?
___আফা আপনের আর স্বপ্ন সাহেবের প্রেম কেমনে হইছে একটু কইবেন পিলিজ
___ওই প্লিজ হবে পিলিজ না
___ওই একই হলো কণ না আফা আমার অনেক দিনের ইচ্ছা আছিন আপনেরে এই কথাটা কমু কিন্তু ভয়ে কইতে পারি নাই
___ওকে শুন আমার আর তোর সাহেবের প্রেম কাহিনী। আমাদের রিলেশন শুরু হয় ছয় মাস আগে বাট তোর সাহেবের সাথে আমার পরিচয় সেই ভার্সিটি থেকে তোর সাহেব আমি আর আমাদের আরেকজন বন্ধু ছিল নাম রাদ আর তোর সাহেব আর ওই রাদ ছিলো দুইজন চাচাতো ভাই । ভার্সিটি লাইফে যখন আমি নতুন পা দিয়েছিলাম সেই দিন আমি ভার্সিটির গেইটের সামনে পা বাড়িয়ে ভিতরে ঢুকছিলাম……
এত সুন্দর কলেজ ভাবতেই তো আমার নাচতে ইচ্ছা করছে না বাবা বেশি নাচবো না শুনেছি নতুন স্টুডেন্টের রেগিং করানো হয় তার থেকে চুপচাপ ক্লাস রুম খুঁজে বসে থাকি….
এইসব ভাবতে ভাবতেই কেউ একজন পিছন থেকে ডাক দিলো “নীল ওরনা ” বলে আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম এই কালারের ওরনা শুধু আমিই একা পরে আছি তাই ভয়ে ভয়ে ওদের সামনে গেলাম…..
___আসসালামু আলাইকুম
__ওলাইকুম আসসালাম। নতুন নাকি?
___জ্বি ভাইয়া
___কোন ডিপার্টমেন্ট?
___একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট।
___তুমি জানো না নতুন কলেজে আসলে বড়দের সালাম দিয়ে ঢুকতে হয় নাকি আগের কলেজ স্কুল থেকে এইসব শিখাই নাই
___সরি ভাইয়া আর হবে না
___ওই কিসের ভাইয়া আমি তোমার কোন জন্মের ভাই হই । তুমি কি আমার ফুফাতো চাচাতো মামাতো খালাতো বোন নাকি যে ভাইয়া ভাইয়া বলছো
__সরি ভাইয়া আর ভাইয়া বলবো না এইবাবের মতো ক্ষমা করে দিন ভাইয়া
___ইসসসসসস আবারো ভাইয়া(নিজের মাথার চুল টেনে) ওই তুমি কি আমার সাথে মজা করছো
দীবা মাথা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে না বুঝালো।
___মুখে কি বলতে পারো না নাকি
__বলতে তো পারি মামা বাট আপনি তো শুধু রাগ করেন
__ওই মাইয়া আমি তোমার কোন জন্মের মামা
___ভাইয়া বললেও দোষ মামা বললেও দোষ তাহলে কি বলবো?
___আমার নাম স্বপ্ন। স্বপ্ন বলে ডাকবে বুঝতে পেরেছো?
___স্বপ্ন তো ঘুমালে আসে জানতাম সজাগ থাকলেও যে আসে জানতাম না।
__তোমার সাথে যত ভাবী ভালো ব্যাবহার করবো বাট তুমি তো তা হতে দিচ্ছো না তাই ভাবছি তোমাকে আজ খুব কঠিন একটা রেগিং দিবো তাহলে বুঝতে পারবে মজা করার শাস্তি
__সরি সরি মিস্টার স্বপ্ন আর করবো না এই যে কানে ধরছি প্লিজ এইবারের মতো ক্ষমা করুন(কাঁদো কাঁদো মুখ বানিয়ে)
___আহারে বাচ্চা মেয়েটা মুখটাকে কি ইনোসেন্ট বানিয়েছে যতই ইনোসেন্ট সাজার চেষ্টা করো তোমাকে তো আজ শাস্তি পেতেই হবে
স্বপ্ন কথা শেষ করতে না করতেই আরেকজন ছেলে বলে উঠলো…..
____ওই তোকে চাচ্চু ডাকছে তুই নাকি কোন এক ছেলে কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে বলেছিস তাই এই নিয়ে আজ তো বিচার করবে
___কি বলিস রাদ ওই ছেলে আব্বু কে নালিশ করেছে তাহলে তো আমি গেছি। শুন আমি এখন আসছি আব্বু কে বলবি আমি অ্যাকসিডেন্ট করে হসপিটালে ভর্তি
___কিন্তু তুই তো
___আরেহ ভাই এখন গিয়ে হসপিটালে মরার মত শুয়ে থাকবো আর সব প্ল্যান করেই করবো তুই শুধু আব্বু কে বলিস আর এই মেয়ে (দীবাকে উদ্দেশ্য করে) আজকের মতো বেঁচে গেলে বাট রেগিং তো তোমাকে করতে হবেই(কথাটা বলে দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো)
দীবা এতক্ষণ পর মনে হলো হাফ ছেড়ে বেঁচেছে তাই ও রাদ কে বললো….
___আপনাকে ও ওই স্বপ্নের আব্বুকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে এই বজ্জতের থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য
___এইখানে ধন্যবাদ টা শুধু আমারই প্রাপ্য
কথাটা শুনে অনেক অবাক হলো দীবা
___মানে
___মানে আপনাকে স্বপ্ন অনেক্ষণ ধরে আজব আজব কথা বলছিলো আর এখন রিগিং ও করাতো তাই ওর থেকে আপনাকে বাঁচানোর জন্য চাচ্ছুর নামে মিথ্যা বলে অঁকে পাঠিয়ে দিয়েছি
দীবা এতক্ষণ রাদের মুখের দিয়ে তাকিয়ে রইলো আর রাদের কথা গুলো ওর কাছে মনে হচ্ছে কোনো চকোলেটের মতো যা খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে ও রাদের দিকে খুব মুগ্ধ ভাবে তাকালো আর তখনি ওর চোখ গেলো রাদের সেই নীল চোখ ও অপলক ভাবে ওই নীল চোখের দিকে তাকালো ঠিক তখনি রাদ ও দীবার দিকে তাকালো তখন থেকেই শুরু হলো তাদের চোখের শুভ দৃষ্টি। একজন আরেকজনের চোখে যেনো হারিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনি রাদের ফোনে একটা কল আসে আর ফোনের উপরের নাম্বার একবার দেখলো আরেকবার দীবার দিকে তাকালো পরে ফোন রিসিভ করতে শুনতে পেলো……
চলবে…..