#ফিরে_আসা
#ফারজানা
#পর্ব_৩

দীবা গাছটির দিকে তাকিয়ে দেখলো বড় বড় অক্ষরে লেখা রাদের দীবা তা দেখে দীবা ভয়ে স্বপ্নে কে জড়িয়ে ধরে তখন স্বপ্ন বললো…

___ আজ তো দেখছি মেঘনা চাইতেই বৃষ্টি। তোমাকে অনেক বলার পরও আমাকে কোনোদিন জড়িয়ে ধরো নাই আর সেই তুমি কিনা আজ এত মানুষের মাঝে আমায় জড়িয়ে ধরেছো । দীবা আমি কি ভুল দেখছি নাকি স্বপ্ন দেখছি(হাসতে হাসতে)

___স্বপ্ন তুমি এই সিরিয়াস মুহূর্তে ও হাসসো তোমাকে তো আমি বুঝতেই পারি না তুমি কি আদৌও আমাকে ভালোবাসো নাকি। যে আমার এই অবস্থা জেনেও মজা করতে পারে সে কি আর ভালো বাসতে পারে

দীবা রাগে কি বলছে যে জানে না ও ভয়+ রাগে যা মুখে আসছে তাই বলছে স্বপ্ন কিছুক্ষণ দীবার মুখের দিকে তাকিয়ে পরে আবারো সামনে হাঁটা দিলো ওর এখন রাগে মন চাচ্ছে দীবাকে কষে কয়েটা থাপ্পড় মারতে কিন্তু দীবা অসুস্থ্য থাকায় সে পারছে না তাই রাগে দীবা কে রেখে গাড়িতে উঠে বসে জোড়ে জোড়ে হর্ন বাজাতে লাগলো ।দীবা হর্নের শব্দ শুনে বুঝলো স্বপ্ন যে এখন বেশি রেগে আছে তাই ও আর ভয়ে কথা না বলে চুপচাপ গাড়ির পিছনে বসার জন্য দরজা খুলতেই স্বপ্ন বললো…

____আমি আপনার ড্রাইভার না। সামনে এসে বসেন নাহলে গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছি

দীবা কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়ীর সামনে এসে স্বপ্নের পাশে বসলো আর ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা টেনে মনে মনে বললো…

___আমি জানতাম এমন না করলে তুমি কথা বলতে না তাই তো ইচ্ছা করে পিছনে গিয়ে বসেছি। বয়স তো আর এমনি এমনি ২১ হলো না (মনে মনে বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে)

___আমি জানি তুমি এইটা ইচ্ছা করেই এমন করেছো। এতই যেহেতু ভয় পাও তাহলে ভয়ের মতো কথা কেনো বলো আজ যদি এইটা পাবলিক প্লেস না হতো তাহলে থাপ্পর একটাও কম পড়তো না গালে (গাড়ি চালাচ্ছে আর এইসব মনে মনে বলছে রাগটা এখনো কমে নাই)

দীবা চুপচাপ বসে আছে তার কিছুতেই চুপচাপ থাকতে ভালো লাগছে না কিন্তু ভয়ে কিছু বলছে না তাই ফোনটা নিয়ে একটু ফেইসবুকে ঢুকলো আর সাথে সাথে মেসেজ একটার পর একটা আসতেই লাগলো ওর ফোন সাইলেন্ট করতে মনে ছিলো না।দীবা ভেবে পেলো না কে এত মেসেজ দিলো তাই মেসেঞ্জারের উপরে নামটা দেখতেই তার হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গেল কেননা মেসেজ গুলো ছিল রাদের ।ফোনটা নিচে পড়তেই স্বপ্ন বললো…..

___আজকাল কি ফোন ধরার মতো ও শক্তি নাই নাকি তোমার? আর এত মেসেজ কে দিলো তোমায় নাকি এখন আবার নতুন করে রিলেশনে গেছো?

____যা জানো না তা নিয়ে কথা বলবে না । ম্যাসেজ গুলো ছিল রাদের বলছিনা ও ফিরে এসেছে আমাকে দেওয়া প্রমিজ রাখতে ও আবার ফিরে এসেছে

স্বপ্ন এতক্ষণ সব শুনছিল এখন ও রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে খুব জোরেই গাড়ি ব্রেক করে পরে দীবার দিকে তাকিয়ে বলে…..

___তুমি এখনও রাদকেই ভালোবাসো তাই না

___নাহ আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি বিশ্বাস করো স্বপ্ন

__তুমি রাদের কথা যতবার ভাবো আমার কথা তো একটি বারও ভাবো না। তোমার সাথে খারাপ বিহেভ করতে তুমিই বাধ্য করছো আমায়। তোমাকে কতবার বলেছি রাদ মারা গেছে মরে যাবার পর ও কি কোনো মানুষ ফিরে আসতে পারে বলো তুমি? তোমার বাবা মা যে রোড অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে তারা কি আসছে বলো…..

দীবা মাথা নিচু করে মাথায় ইশারা দিয়ে বললো ‘না’

___তাহলে রাদ আসবে কিভাবে ? তুমি ওর কথা এত ভাবো যে তাই ও তোমার মাথায় এত ঘুরপাক খাচ্ছে । তুমি যাকেই দেখছো তাকেই রাদ ভাবছো। যদি এতই ভালোবাসো রাদকে তাহলে আমার জীবনে আসলে কেনো আমাকে কেনো ভালোবাসলে বলো বলো দীবা বলো

দীবার বাহু ধরে ঝাকি দিয়ে বললো স্বপ্ন….

___সরি স্বপ্ন আর হবে না। আমি তোমাকে সত্যই খুব ভালোবাসি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না। তোমাকে হারাতে পারবো না আমি। একজনকে ভালোবেসে যে ধোঁকা খেয়েছি আর পারবো না। তুমি ওই সময় পাশে না থাকলে যে কি হতো আমার তখন তো আমি চোখে অন্ধকার দেখছিলাম তুমি ওই সময় যেভাবে আমার পাশে এসেছিলে। হুম জানি তোমার সাথে প্রথম প্রথম আমি যা করেছি তার জন্য তুমি হয়তো আমায় ট্রাস্ট করতে পারো না।

__ওইসব পুরনো দিনের কথা বাদ দেও বর্তমান আর ফিউচার নিয়ে ভাবো। আমাদের হানিমুন পরে বাচ্চা কাচ্চা নাতি নাতনী ওদের নিয়ে ভাবো যা চলে গেছে তা ভাবা শুধু কষ্টের হবে বুঝতে পেরেছো আমার লজ্জাবতী

এইসব কথা শুনে দীবা আবারো লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেলো….

স্বপ্ন শুধু তার ঠোঁট জোড়া দীবার ওই লাল গালে আলতো করে ছোঁয়ালো সাথে সাথে দীবা কেপে উঠলো আর লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো…..

___রোমান্স তো অনেক করলাম এখন বাসায় যাই কি বলো লজ্জাবতী

___হুম

স্বপ্ন গাড়ি স্টার্ট দিলো আর মুখে ডেভিল হাসি দিয়ে বললো…..

___আমি যা চাই তা তো আমার পেতেই হবে। যার জন্য যত বাধা আসুক আমার কিছুই যায় আসে না। আমার কাছে আমার চাওয়ার শেষ চাওয়া (মনে মনে)

পুরো রাস্তা স্বপ্ন ও দীবা হাসি ঠাট্টায় চলে গেলো….

বিকালে দীবা ছাদে বসে বসে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের ভৌতিক অমনিবাস গল্পটি পড়ছে আর কফি খাচ্ছে তখন মনে হলো কেউ তাকে দেখছে তাই ও বইটি রেখে ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকালো বাট কিছুই দেখতে পেলো তখন মনের ভুল ভেবে বইটি আবারো পড়া শুরু করলো কিন্তু তখন ও এমন লাগায় সে বইটি রেখে দিলো….

___মনে হয় ভূতের গল্প পড়ছি তাই এমন লাগছে তার চেয়ে বরং রোমান্টিক গল্প পড়ি

এই কথা ভেবে ও fb তে গিয়ে গল্প পড়তে লাগলো আর গল্প পড়তে পড়তে কিভাবে যে সন্ধ্যা হয়ে গেলো ও বুঝতেই পারে নি । মাগরিবের আজান শুনে ও যখন বুঝতে পারলো সন্ধ্যা হয়ে এসেছে তাই ও ছাদ থেকে চলে যেতে নিলেই দেখলো কিছু একটার ছায়া ও ভয়ে জিজ্ঞাসা করলো….

___কে কে ওইখানে

কোনো সাড়া শব্দ পেলো না ছায়াটা তার কাছে আসতেই দীবার নাকে খুব চেনা একটা পারফিউমের ঘ্রাণ ভেসে আসলো যা দীবাকে আরো ভয় দেখাতে শুরু করলো…..

___র রা রাদ তুমি(ভয় পেয়ে)

__হুম আমি

বলতে না বলতেই দীবা অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে গেলো…..

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here