#গল্পের_নাম: ||প্রেম পায়রা||পর্ব______০২
#লেখনীতে: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব______০২

পরক্ষণে কান্নার বেগ বাড়তে একটা বলিষ্ঠ হাত তিথির মুখ চেপে রাখা হাতটাতে নরম স্পর্শ করে ধরতে সে এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল।দ্রুত সরে গিয়ে জানালা ঘেঁষে বসলো।নিজের সংবিৎ ফিরে পেয়েছে তিথি।ডান হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুখ মুছে নিল।এতক্ষণ অচেনা মানুষের সামনে কান্না করেছে বলে লজ্জায় মিইয়ে গেল।

ইশ!কি ভাববে সবাই?তার মতো এতবড় মেয়ের এভাবে কান্না করা একদম অনুচিত হয়েছে।নিজের লজ্জা ভাবটা কমানোর জন্য সে জানালার কাচের ওপাশের ফিনিক আলাতে ফুটে উঠা রাতের ঢাকার দিকে তাকিয়ে রইলো।আজ আকাশে বিশাল বড় চাঁদ উঠেছে।চাঁদের আলো আর অন্ধকার মিলে নানারকম নকশা সৃষ্টি হয়েছে বাইরে।এই ফকফকে জোসনা রাতে তার জীবন কতটা পাল্টে গেল। কি অদ্ভুত মানব জীবন।আর কি অদ্ভুত তার সমীকরণ গুলো!

কান্না করতে করতে ক্লান্ত তিথি।মন ও মস্তিষ্ক কোনোটাই ঠিক নেই।নিজের শরীর নিজের কাছে বড্ড ভারী মনে হচ্ছে।চোখ জ্বালা করছে।মস্তিষ্ক ছিঁড়ে পড়তে চাইছে।তবুও ভাবনা বাদ যাচ্ছে না।উল্টো পাল্টা ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো ভারী হয়ে এলো।একটা সময় সিটে মাথাটা এলিয়ে ক্লান্ত চোখ দুটো বন্ধ করলো সে।

এরপর কতক্ষণ কেটে গেছে সে জানে না।তার ঘুম ভাঙে কারো মিহি সুরে।সেই বিষণ্ণ সুন্দর কন্ঠের মানুষটি ক্রমাগত বলে যাচ্ছে,

—‘শুনছো?আমরা পৌঁছে গেছি।এই! তিথি!আমরা পৌঁছে গেছি।নেমে পড়ো।’

তিথি অতি কষ্টে চোখের পাতা খুলল।কেউ একজন অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে তার দিকে ঝুঁকে আছে।অন্ধকারে মুখটা আবছা!সেই আবছা মুখ আর তার মুখের মধ্যবর্তী দুরত্ব বড্ড কম।তিথি ঝট করে মাথা উঠাতে মানুষটি সরে গেল।গাড়ি থেকে নেমে যেতে তিথির চোখে পড়লো সমস্ত গাড়িতে সে একা।ড্রাইভার আগেই নেমে গেছে।

সে আর এক মুহূর্ত দেরি করলো না।সাবধানে দরজা খুলে নেমে পড়লো।সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি একটা মেয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো।এই মেয়েটাকে তিথি আরো একবার দেখেছে।কবুল বলার আগে মেয়েটা তাকে জড়িয়ে ধরে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলেছিল,

—‘আমি স্নেহা।তুমি আমার একটিমাত্র ভাইয়ের একটিমাত্র বউ হবে।’

প্রতিত্তরে তিথি লজ্জামিশ্রিত হাসিটুকু বাদে তাকে আর কিছু উপহার দিতে পারেনি।সে চারপাশে তাকিয়ে সেই বিষণ্ণ সুন্দর কন্ঠের মানুষটাকে খুঁজলো।কোথাও নজরে এলো না।অতঃপর স্নেহার হাত ধরে শ্বশুর বাড়িতে পা রাখলো।মনের ভেতর লক্ষ কোটি প্রশ্নের মেলা।কেমন হবে তার নতুন জীবন?সে কি মানিয়ে নিতে পারবে?তাকে পারতে হবে যে!আজ থেকে শুরু হলো তার ‘এডজাস্টমেন্ট’ শব্দের পরীক্ষা দেয়ার লড়াই।

ড্রয়িং রুমের সোফায় তিথিকে বসাল স্নেহা।তারপর এক দৌঁড়ে ছুটে গেল।কয়েক সেকেন্ড পরেই তিথির চোখের সামনে একটা স্বচ্ছ গ্লাসে পানি বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

—‘নতুন ভাবী,পানিটুকু খাও!’

তিথির সত্যি সত্যি পানি পিপাসা পেয়েছিল।কিন্তু এতক্ষণ আগ বাড়িয়ে বলার সাহস পাচ্ছিল না।সে কৃতজ্ঞতার চোখে স্নেহার দিকে তাকাল।চোখে মুখে হাসি উপচে পড়া মেয়েটাকে তার চট করে মনে ধরে গেল।সে গ্লাসটা হাতে নিয়ে নিঃশব্দে পানিটুকু খেয়ে ফেলল।

কয়েক জন মহিলা বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকে দেখল।কেউ কেউ আবার বিব্রতকর প্রশ্ন ছুঁড়লো।তিথি কোনোরকমে সেগুলোর ঢিলেঢালা উত্তর দিল।মাথার ঘোমটা সামান্য উঁচিয়ে সে এদিক ওদিক তাকাল।স্নেহাকে এখন দেখা যাচ্ছে না।তাছাড়া যার সাথে তার বিয়ে হলো সেই মানুষটিও কোথাও নেই।মানুষটাকে এক পলক চাক্ষুষ দেখবে না?

সবার নানাবিধ প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত তিথিকে উদ্ধার করলো স্নেহা।সে কোথা থেকে যেন একছুটে এসে হাত নেড়ে বলল,

—‘আপনাদের যারা থাকবেন তারা গেস্ট রুমে শুয়ে পড়ুন।আর যারা চলে যাবেন তারা দ্রুত বেরিয়ে পড়ুন।রাত কিন্তু অনেক হয়েছে।’

স্নেহার বিরক্তি মাখা কথাগুলো কেমন যেন লাগলো তিথির কাছে।বুঝতে পারলো মেয়েটা এদের পছন্দ করছে না।পরক্ষণে মেয়েটি তার হাত চেপে পুনরায় উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো,

—‘চলো ভাবী।বাবার সাথে দেখা করবে।’

স্নেহার হাত ধরে তিথি সিঁড়ি দিয়ে উপরে পা রাখলো।স্নেহার মা কোথায়?বাবা নিচে নামলো না কেন?বিয়েতে কি তিনি উপস্থিত ছিলেন না?তারা কয় ভাই বোন?এরকম বহু প্রশ্ন তিথির মাথায় আসলেও সে করলো না।তার মাথা এখন কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।কিছুই ভাবতে ইচ্ছে করছে না।কোনো কৌতূহল মেটাতে ইচ্ছে করছে না।স্নেহার হাত ধরে সে দোতলার সিঁড়ির অপজিটের রুমটাতে প্রবেশ করলো।

মাঝারি একটা রুম।চারপাশে বইয়ের স্তুপ।বুকসেলফগুলো কানায় কানায় ভর্তি বইয়ে।দক্ষিণ দিকে কাচের জানালা ঘেঁষে একটা খাট পাতা।খাটের শিয়রের কাছে একটা টেবিল।টেবিলে বেশকিছু কলম আর নোটপ্যাড অগোছালো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।ঘরে কোনো চেয়ার নেই।খাটের কাছে শুধু একটা হুইল চেয়ার রয়েছে।দরজার কাছে একটা র‌্যাক ভর্তি মেডিসিন।র‌্যাকের পাশে ছোটখাটো একটা আলমারি।

খাটের মাঝামাঝি জায়গা পা সোজা করে আধ শোয়া হয়ে বয়স্ক একজন মানুষ বালিশে হেলান দিয়ে আছে।তার হাতে ধূসর একটা বই ধরা।ভারী কাচের চশমার আড়ালে লুকানো চোখ দুটো বইয়ের পাতায় নিবদ্ধ।স্নেহা এগিয়ে গিয়ে বলল,

—‘বাবা,দেখো কে এসেছে।তোমার বৌ মা!’

স্নেহার উচ্ছ্বসিত কন্ঠে লোকটা চোখ তুলে তাকালেন।চশমাটা ঠেলেঠুলে ভালো মতো চোখে সেঁটে স্মিত হেসে বললেন,

—‘কাছে এসো।পাশে বসো তো মা!’

তিথি বুঝতে পারলো মানুষটা তার শ্বশুর মশাই।সে এগিয়ে গিয়ে মানুষটার পা ছুঁয়ে সালাম করলো।বিচিত্রতার সাথে লক্ষ্য করলো মানুষটা পা দুটো সরাতে চাইলেও একবিন্দু নড়াতে পারলো না।তিথির আর বুঝতে বাকি রইলো না রুমে হুইল চেয়ার কেন!

তিনি সাবলীল ভাবে বললেন,

—‘কেমন আছ গো মা?’

—‘ভালো!আপনি?’

—‘ভীষণ ভালো।’

তারপর মানুষটা তিথির মাথায় হাত দিয়ে বন্ধ চোখে বিড়বিড় করে কিছু বললেন। তার সে মুখের দিকে তাকিয়ে তিথি বিস্মিত হয়ে বোঝার চেষ্টা করলো যে এই মানুষটাকেও তার পছন্দ হয়েছে।সর্বনাশ!একের পর এক এভাবে পছন্দ হতে হতে সে কি স্বামীর স্বীকৃতি দেয়া মানুষটাকেও পছন্দ করে ফেলবে?তা কি করে হয়?নিশান ভাই যে আর প্রথম পছন্দ, প্রথম ভালো লাগা,প্রথম ভালোবাসা!

তিথি ছলছলে চোখ দুটো বালিশের উপর রাখা বইটার উপর দিল।বইটি ইংরেজি বই।বইয়ের উপর টানা টানা অক্ষরে লেখা, “Private world of dying children”!
আচ্ছা সে যদি এমন কোনো বই লিখতো তাহলে কি নাম দেয়া যেত?” Private world of dying mind” এটা দেয়া যায়।তার মনের রাজ্যে যে ঝড়ো হাওয়ায় তছনছ হয়ে গেছে সব।এখন সেখানে শুধু ই ধ্বংসস্তূপ।কিন্তু কেউ জানে না!কেউ জানে না!

৪.

তিথি সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা রুমে বসে আছে।মাথায় ঘোমটা নেই।বহুক্ষণ ঘোমটা দিয়ে থাকতে থাকতে সে ক্লান্ত।সে মুখ ঘুরিয়ে বিরক্তি ভরা চোখে টেবিল সোজা উপরের দেয়ালঘড়ির দিকে তাকালো।ঘড়িতে একটা ছুঁই ছুঁই!

সে এ বাড়িতে এসেছে ঘন্টা খানেক হলো।স্নেহার সাথে কিছুক্ষণ থেকেছে।শ্বশুরের সাথে দেখা হয়েছে।স্নেহা নিজে থেকে বলেছে তারা দুই ভাই বোন শুধু।আর কোনো ভাই বোন নেই।মায়ের চেহারা তার মনে নেই।সে যখন খুব ছোট ছিল তখন মা মারা গেছে।তার বাবা মোহাম্মদ সোবাহান আর দ্বিতীয় বিয়ে করেননি।স্নেহা তাকে আরো চমকপ্রদ একটা তথ্য বলেছে।স্নেহা আর সে একই ভার্সিটিতে।স্নেহা ফিলোসোফি ডিপার্টমেন্টের প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট।

তিথি সম্পূর্ণ রুমে একবার নজর বুলালো।বিয়ে উপলক্ষে ডেকোরেশন করা হয়নি।পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন,ঝকঝকে একটা রুম।সাদা আর নীলের সংমিশ্রণে তৈরি একটা রঙে দেয়ালে রাঙানো।প্রয়োজনীয় বাদে রুমে আসবাবপত্র তেমন নেই!এমনকি একটা ছবিও নেই।সম্পদ নামক ছেলেটা কি ছবি তোলা পছন্দ করে না?

তিথি বিছানার দিকে তাকালো।বিছানায় দুটো বালিশ,আর একটা কোলবালিশ।বিছানায় হাত বুলাতে চোখে অশ্রুর বন্যা বয়ে গেল।সে আজ অন্য কারো বউ!অন্য কারো রুমে,অন্য কারো বিছানায়, অন্য কারো শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে বাকি জীবন টুকু কাটাতে হবে।সে ফের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করলো।

কিছুক্ষণ পর হালকা একটা শাড়ি বের করে ওয়াশরুমে ঢুকলো।ফ্রেশ হয়ে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো।টকটকে লাল চোখে রুমে পর্যবেক্ষণ করলো।সম্পদ নামের ছেলেটার কোনো খবর নেই।এখনো রুমে আসেনি।সে ভেবেছিল, মানুষটাকে একটা সালাম করবে।নিজের ভাঙা মনের দায়ভার কেন ওই মানুষটিকে দিবে?কিন্তু সে তো আসছে না।

তিথি আর দেরি করলো না।ড্রেসিং টেবিলের পাশে রাখা নিজের লাগেজটা খুলে মেডিসিন বের করলো।আজ রাতে তার ঘুম আসবে না।ঘুমের ওষুধ একমাত্র অবলম্বন।বাকিটুকু সকালে দেখা যাবে।

গ্লাসে পানি ঢেলে একটা ডরমিকাম খেয়ে তিথি শুয়ে পড়লো।মাঝখানে কোলবালিশটা চেপে একদম কর্ণারে গিয়ে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়লো।চোখের কোণ বেয়ে অযাচিত পানির বালিশ ভেজানো বন্ধ হলো না।নিশান ভাই কি করছে?সে কি জানে তার এক সময়ের পুতুল বউ আজ অন্য কারো ঘরে,অন্য কারো বিছানায় শুয়ে?চোখের অশ্রুর ধারা বেড়ে গেল।কিন্তু সে সেগুলো পাত্তা না দিয়ে আধ ঘন্টার মধ্যে ঘুমের অতলে হারিয়ে গেল।

৫.

মুখের কাছে একটা মশা অনেক্ক্ষণ হলো ঘুরঘুর করছে।সেই সাথে তার ক্রমাগত পাখা ঝাপটানোর ফলে সৃষ্ট শাঁ শাঁ শব্দে তিথি চরম বিরক্ত।সে আছে আধো ঘুমে,আধো জাগরণে!পায়ের পাতায় রোদ পড়ে চিটচিট করছে।সে অনুভব করছে কিন্তু পা টা সরিয়ে কাঁথার নিচে ঢুকানোর শক্তি পাচ্ছে না যেন।আজ কি বেশি তাড়াতাড়ি রোদ উঠে গেছে?ইশ!কেউ যদি জানালার পর্দাটা টেনে দিত বা পায়ের উপর কাঁথাটা দিয়ে দিত!

মশাটা এখনো জ্বালাচ্ছে। চোখের উপর বসতে সব বাদ রেখে তিথি কপাল কুঁচকে চোখ খুলল।সে শুয়ে আছে বাম কাত হয়ে।তার চোখের তিন-চার ইঞ্চি সামনে একটা ঘুমন্ত পুরুষ মুখোচ্ছবি।সঙ্গে সঙ্গে তার কুঁচকানো কপাল শিথিল হয়ে গেল।এক সেকেন্ডের জন্য তার মনে হলো নিশান ভাই এটা!পরক্ষণে বুঝতে পারলো এটা নিশান ভাই নয়।সম্পূর্ণ অপরিচিত সুদর্শন একটা ছেলে।খাড়া নাক,পুরু ঠোঁট, ঘন চোখের পাপড়ি,গৌঢ় বর্ণের মসৃণ ত্বক,সাথে খোঁচা খোঁচা দাড়ি!ঘন কৃষ্ণ চুলগুলোর প্রায় সবটা কপালে অগোছালো ভাবে লেপ্টে আছে।যার কারণে ছেলেটার কপাল অদৃশ্যমান!তিথি ঘুম ঘুম চোখে হাত বাড়িয়ে এই ভয়ংকর সুন্দর মানুষটার চুল স্পর্শ করলো।সাজ কাটা ঠোঁটের চারপাশে হালকা করে ছুঁয়ে দিল।

হুট করে তার চোখ বড়সড় হয়ে গেল।থ্যালামাস কাজ শুরু করে দিয়েছে।দ্রুত হাত সরিয়ে উঠতে নিতে বুঝতে পারলো একটা বলিষ্ঠ হাত তার শাড়ি ভেদ করে খোলা পেট জড়িয়ে রেখেছে!অপরিচিত সেই স্পর্শ মানসপটে অনুভব করতেই তার গা গুলিয়ে উঠলো। সে ঝট করে মাথা ঘুরিয়ে ঘুমন্ত ছেলেটার মুখের দিকে এক নজর তাকাল।কোলবালিশ ভেদ করেই ছেলেটার একটা হাত তার পেটের উপর!

নিজের দিকে ভালো মতো পরখ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।সব ঠিকঠাক আছে।

অতীব সাবধানে হাতটা সরিয়ে কোলবালিশের উপর রাখলো তিথি।উঠে বসে মাথার খোলা চুলগুলো হাত খোঁপা করলো।বিছানার নিচে পা রেখে উঠতে নিতে শাড়ির লম্বা আঁচলে টান পড়ল।ভয়ে বুকের ভেতর কেঁপে উঠলো তার।মানুষটা শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো কেন?রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল বলে তার শাস্তি এখন দিবে?বাজে ভাবে ছুঁয়ে দিবে তাকে এখন?

তিথি নিজের কান্না লুকিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললো,

—‘শাড়ির আঁচলটা ছাড়ুন!প্লিজ!’

পেছন থেকে কোনো উত্তর আসলো না।হয়তো ছেড়ে দিয়েছে ভেবে উঠতে নিতে আবার টান পড়ল।অবশেষে আজ তাকে অন্য একজনের হাতে ধরা দিতে হবে?দু ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে গালে পড়তে তিথি জলদি মুছে নিল।শুকনো ঢোক গিলে পেছন ঘুরে তাকাতে বোকা বনে গেল।

নাহ!কেউ তার শাড়ির আঁচল টেনে ধরেনি।ছেলেটা এখনো গভীর ঘুমে।শাড়ির লম্বা আঁচলের অনেকখানি অংশ মানুষটার পিঠের নিচে।নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেল তিথি।ঘুরে সাবধানে একটু একটু করে শাড়ির আঁচল টানা শুরু করলো।কিন্তু বিশেষ সুবিধা করতে পারলো না।দু ইঞ্চির মতো বের হয়ে আর বের হচ্ছে না।ইতোমধ্যে ছেলেটা নড়েচড়ে আরো কিছুটা এগিয়ে এসে সম্পূর্ণ শাড়ির আঁচলে শুয়ে পড়লো যেন!এতক্ষণে তিথির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠলো।

কি করবে এখন?জোরেশোরে টান দিলেই তো ছেলেটার ঘুম ভেঙে যাবে।তখন কি একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হবে।তাহলে উপায়?

তিথি ডান হাতটা ছেলেটার চোখের খুব কাছে নিয়ে কয়েকবার পরীক্ষা করলো।নাহ!গভীর ঘুমে।অগত্যা সে দ্বিতীয় বার চিন্তা না করে পিনবিহীন শাড়িটা একটানে খুলে ফেলল।রাগান্বিত স্বরটা ক্ষীণ করে বলল,

—‘ব্যাটা বদের হাড্ডি।তুই এখন খালি শাড়ি বুক,পেট,পিঠসহ সব জায়গার নিচে ফেলে ঘুমা!’

তারপর অতি সন্তপর্নে পা ফেলে জানালার পর্দা টেনে দিল।তারপর কিছুটা সময় নিয়ে লাগেজের তলদেশ থেকে হালকা গোলাপি রঙের শাড়িটা বের করলো।টাওয়ালটা কাঁধে ঝুলিয়ে ওয়াশরুমের দরজা খুলে এক পা রাখতে ঘুমজড়ানো অস্পষ্ট কন্ঠ কানে এলো,

—‘আই লাইক ইট!’

তিথির পা থেমে গেল।মনে হলো পায়ের তলা দিয়ে শিকড় গজিয়ে ভূ মধ্যত্বক স্পর্শ করেছে।সে বোধ হয় আরো কোনো কালে পা টা টেনে তুলতে পারবে না।দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে তিথি।এত বেয়াদব একটা ছেলের সাথে তার জীবন জুড়ে গেল?এতক্ষণ জেগে থেকেও ঘুমের ভান ধরে পড়ে ছিল।ছি!পেছন থেকে আবার বিস্মিত কন্ঠ কানে আসলো,

—‘হাউ স্ট্রেন্জ!তুমি আমার সামনে বিয়ের প্রথম সকালেই সব খুলে টুলে রুমে হাঁটাহাঁটি করছো?’

(চলবে)

সারাদিন অনেক ক্লান্ত থাকি।রমযান মাসে গল্প শুরু করা উচিত হয়নি।শুরু যেহেতু করেছি,শেষ করতে হবে!প্রতিদিন দেয়ার চেষ্টা করবো।তবে মাঝে মধ্যে মিসিং হতে পারে।ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।🦩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here