“প্রেমে পড়া বারণ”
পর্ব ৮
ঐন্দ্রিলার ঘুম ভেঙে গেল অনেক ভোরে ফজরের আজানের সাথে সাথে। নামাজ পড়ে সে তার বারান্দার দোলনায় এসে বসলো। চারদিকে এখনও পুরোপুরি আলো ফোটে নি। পূবের আকাশে সুবহে সাদিকের নরম রক্তিম আভা। ঐন্দ্রিলা মুগ্ধ হয়ে দেখছে। হঠাৎ চোখ পড়লো সামনের সার্ভিস এ্যাপার্টমেন্টের দিকে। তিনতলার বারান্দায় অসম্ভব সুদর্শন একটি ছেলে দাঁড়িয়ে, স্থির চোখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ছেলেটার চোখের মনির রং সবার মতো কালো নয়। মনে হলো হাল্কা সবুজ বা নীল …..অত্যন্ত আকর্ষনীয় !
চোখাচোখি হতেই ঐন্দ্রিলা চোখ নামিয়ে নিল। সে ভাবলো এই কি আদিত্য ?
ঐন্দ্রিলা আবার মুখ তুলে তাকালো। ওমা ছেলেটা এক নিমেষেই হাওয়া হয়ে গেছে।
কোথায় গেলো সে ?
অনেকক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে আর খুঁজে পেলো না ঐন্দ্রিলা।
কেমন একটা অপূর্ণ মনোভাব নিয়ে সে ঘরে ফিরে এল।
আজ সকালে অনলাইনে একটা এ্যাসাইনমেন্ট সাবমিট করতে হবে। ঐন্দ্রিলা বারবার নিজেকে বলছে,
—ফোকাস ঐন্দ্রিলা, ফোকাস !
~~~##~~~
রমিলা সকালে উঠে রান্না ঘরে নাস্তা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ।
এ বাড়ীতে থাকে চারজন, কিন্তু চারজনের নাস্তা চার রকমের ।
খালু সকালে ব্ল্যাক কফি আর ডিমের সাদা অংশ ভাজি দিয়ে টোস্ট খায়, খালাম্মা নেন হাল্কা গ্রীন টি আর এক বাটি ফ্রেশ ফল।
শীতের দিনে বড়ো আপা পছন্দ করেন চালের আটা রুটি আর ভুনা গরুর মাংস, আর ছোট আপা জ্বালাতন করে সবচেয়ে বেশী। তার নাস্তা নির্ভর করে তার মেজাজ মর্জির উপর, একেক দিন একেক রকম!
জলিল ড্রাইভার প্রতিদিন সকালে এসেই ইন্টারকমে একটা ফোন করে, তারপর একটু রং তামাশা করে রমিলার সাথে। রমিলার খুব ভালো লাগে, দিনের শুরুটা হাসি ঠাট্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। আজ তিনি এখনও ফোন করেন নাই, রমিলা ভাবছে এত দেরী হচ্ছে কেন জলিলের।
টুং করে ঐন্দ্রিলার একটা টেক্সট এলো, নিশ্চিত তন্ময় ! প্রতিদিন সকালে ‘গুড মর্নিং ‘ টেক্সট ওর পাঠানো চাই।
ঐন্দ্রিলা মনে মনে ভাবে,
—হি ইজ সো সুইট! ইয়েট সো প্রেডিকটেবল !
—গুড মর্নিং ঐন্দ্রিলা !
—গুড মর্নিং ‘মিস্টার ফিশ ‘!
ঐন্দ্রিলা একটু মজা করল।
—কেমন আছো প্রিয়তমেষু ? আজ বিকেলে দেখা হচ্ছে কিন্তু ! তোমার জন্য আজ একটা বিশেষ সারপ্রাইজ আছে।
তন্ময় টেক্সটে জানালো।
তন্ময়ের সারপ্রাইজের কোন শেষ নেই। ঐন্দ্রিলা মনে মনে ভেবে একটা ‘স্মাইল’ ইমোজি দিয়ে টেক্সট পাঠিয়ে মিটিমিটি হাসল ।
তন্ময়কে বিয়ে করলে, ওর জীবনে যে আরও কত সব চমক আর সারপ্রাইজ আসবে কে জানে !
প্রথম দেখা হওয়ার তিন দিনের আ্যনিভারসারী কেউ কি করে ? ঐন্দ্রিলা আবারও হাসল মনে মনে।
~~##~~
আজ সন্ধ্যায় বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আদিত্য-এর একক বেহালা কনসার্ট। রূপসা কি করে যেন দুটো টিকেটও জোগাড় করে ফেলেছে।
ঐন্দ্রিলার সময় কাটছে না।
আজ সকালে বারান্দায় কে ছিল ছেলেটা ?
আদিত্য না কি অন্য কেউ? কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে চেহারা টা।
কোথায় দেখেছে সে ?
অনলাইনে এ্যাসাইনমেন্ট সাবমিট করে, ঐন্দ্রিলা বাইরে বেরুলো। সকাল ১১টায় ম্যাকরো ইকোনমিক্সের একটা ক্লাস আছে। জলিল ড্রাইভার গ্যারেজ থেকে গাড়ী বের করে আনতেই একই সময়ে কাল মার্সিডিস গাড়ীটা বের হল সার্ভিস এ্যাপার্টমেন্ট থেকে। গাড়ী দুটো যখন পাশাপাশি এলো , ঐন্দ্রিলা দেখলো সকালে যে ছেলেটা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল সে গাড়ীর পেছনের সিটে বসে আছে । তার পরনে কালো শার্ট, কালো প্যান্ট আর কালো টাই।
ছেলেটা অপলক দৃষ্টিতে ঐন্দ্রিলার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই হাল্কা সবুজ রঙের চোখের মনি , আরও স্বচ্ছ মনে হলো কাছ থেকে দেখে । ঐন্দ্রিলা এবার আর একই ভুল করলো না।
সেও তাকিয়ে রইল যতক্ষণ না গাড়ী দুটো দুদিকে চলে গেল।
ইস্! কেমন তীক্ষ্ণ সম্মোহনী দৃষ্টি ছেলেটার।
জলিল চাপা গলায় বলল ,
—আপা, এই সেই লোক যিনি রাতে গীটার বাজায়। এর নাম ‘ আ’ দিয়ে কি যেন একটা ! রূপসা আপা এর ব্যাপারে আমারে গোয়েন্দা গিরি করতে দিয়েছেন।
—গীটার নয়, উনি খুব সুন্দর বেহালা বাজান।
বলেই ঐন্দ্রিলা গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল।
ইউনিভার্সিটিতে আসতেই রূপসা ফোন দিল
—তুই কই দোস্ত ? ক্যাম্পাসে এসেছিস ?
—হ্যাঁ রে, মাত্র এলাম । ১১ টার ‘ম্যাকরো’ ক্লাসে যাবি না ?
ঐন্দ্রিলা জিজ্ঞাসা করল।
তারা দুজন কাপাচিনো কফি হাতে নিয়ে হাটতে হাটতে গল্প করছে।
—জানিস, আজ মনে হয় আদিত্য কে দেখেছি !
ঐন্দ্রিলা পুরো ঘটনাটা জানালো রূপসাকে ।
সব কথা শুনে রূপসা যেন উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে ! পুঙ্খানুপুঙ্খ ডিটেইল জেনে না নেওয়া পর্যন্ত সে ছাড়বে না ঐন্দ্রিলাকে।
—হুম …. মনে হচ্ছে ছেলেটা একচুয়ালি তোকে নোটিস করেছে।
নইলে সে তোর দিকে কেন এমন গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রবে?
অবশ্য তুই তো ভয়ঙ্কর টাইপের সুন্দরী ।তোর দিকে ইউনিভার্সিটির ছোট বড়ো সব ছেলেদের নজর।
রূপসা অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে ।
ঐন্দ্রিলার মন উদাস হয়ে আছে, সে ভাবছে অন্য কথা। সেই হাল্কা সবুজ রঙের চোখের দৃষ্টি আর বেহালার করুন সুর…..আদিত্যকে মন থেকে সরানো যাচ্ছে না কোন ভাবেই।
—ইজ দিস্ লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট অর ইনফ্যাচুয়েশন ?
বিকেলে তন্ময়ের আসবার কথা।
ঐন্দ্রিলা ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরে এলো। এইবার সে রূপসাকে জানিয়েছে সব কথা, আর কোন কিছু গোপন করে নি।
রূপসা বলা যায় প্রায় জোর করে নিমন্ত্রণ নিলো।
—জানি, আমি ‘কাবাব মে হাড্ডি’ হবো, বাট আই ডোন্ট কেয়ার ! আমি শিং মাছকে দেখতে চাই। ওর বডি ল্যান্গুয়েজ দেখেই বলে দিতে পারব সে তোকে কতটা জেনুইনলি ভালবাসে। তুই তো একটা বোকা টাইপের মেয়ে , কোনদিন ডেট ফেট করিস নাই ! প্লিজ লেট মি বি দা জাজ !
ঐন্দ্রিলার মনে হল,
—রূপসা মনে হয় আজ ওষুধ খায় নি, অসম্ভব হাইপার হয়ে আছে, ননস্টপ কথা বলছে!
ঐন্দ্রিলা আর কথা বাড়ালো না।
বাড়ীতে ফিরে এসে রমিলাকে বলল কড়া করে এক কাপ চা বানিয়ে দিতে। হট শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
একটা হাল্কা পীচ কালারের শিফন শাড়ী পড়ল কি মনে করে। ওর দুধে আলতা গায়ের রঙের সাথে শাড়ীটা মিলে মিশে একাকার । ঘন কালো রেশমী খোলা চুলে ওকে দেখাচ্ছে অপ্সরীর মতো।
রমিলা ঘরে চা নিয়ে ঢুকে ঐন্দ্রিলাকে দেখে বিশাল এক ধাক্কা খেলো।
—ও আল্লাহ্ , বড়ো আপা! আপনারে পরীর মত সুন্দর লাগতাসে !
রমিলা বিস্ময়ে হা করে চেয়ে আছে।
ঐন্দ্রিলা একটু লজ্জা পেল।
—সাজগোজ কি খুব বেশী হয়ে গেছে রমিলা ?
—না না আপা, আপনারে ঐ হিন্দি সিনেমার নায়িকার মতো লাগতাসে। কি জানি নাম , ঐ যে নীল চোখ ?
রমিলা নামটা মনে করতে পারছে না।
—কার মতো? নীল চোখ ? ও আচ্ছা ঐশ্বরিয়া ! থাক আর বেশী বেশী বলতে হবে না। যাও তো দেখো বাসায় ভালো নাস্তা আছে কি
না ? আমার এক বন্ধু বেড়াতে আসবে একটু পরে।
রমিলা খুব আগ্রহ সহকারে বলল,
—কোন বন্ধু আপা ? ঐ যে লন্ডন থেইকা আইছে ? জলিল ড্রাইভার আমারে বলছে উনি না কি খুব ভালো আর ভদ্র কিসিমের !
ঐন্দ্রিলা একটু উদাস ভাবে বললো,
—হুম….আমার ছোটকালের স্কুলের বন্ধু, তন্ময়।খুব ভাল ছেলে ।
কিছুক্ষণ পরেই কলিং বেল বেজে উঠলো। রূপসা এসেছে আর সাথে সাথে ঐন্দ্রিলার দাদীও ঘরে ঢুকলেন । দাদী মনে হলো কেমন মুচকি মুচকি হাসছে রূপসার দিকে চেয়ে।
—দাদী, আপনি হঠাৎ কি মনে করে ? সব কিছু ঠিক আছে তো?
ঐন্দ্রিলা একটু চিন্তায় পড়ে গেছে।
কি হচ্ছে এ সব ?
দাদী কেন এলো হঠাৎ করে ?
—ঐন্দ্রিলা আম্মাজান , আমাকে নিয়ে একদম চিন্তা করবে না । আমি ফার্স্ট ক্লাস আছি । আজ সকালে পাড়ার মহিলাদের সাথে তিন মাইল হেঁটেছি !
দাদী খুব গর্বের সাথে বললেন।
—কিন্তু তুই এতো সুন্দর শাড়ী পড়ে কোথায় যাচ্ছিস?
ঐন্দ্রিলা কিছু বলার আগেই রূপসা উত্তর দিলো,
—দাদী , আজ রাতে আমরা একটা কনসার্ট দেখতে যাবো দুজন।
—ও আচ্ছা। ঐন্দ্রিলা, যাও মা রমিলা কে বল একটু চা করতে।
—জী দাদী, এখনই বলছি । আপনি একটু বসেন, আরাম করেন।
ঐন্দ্রিলা কোনমতে ড্রয়িং রুম থেকে ছিঁটকে বেড়িয়ে এসে তন্ময়কে ফোন দিল। কিন্তু সে ফোন ধরছে না।
ঐন্দ্রিলা বার বার ফোন করছে।
পাঁচ বারের বার তন্ময় ফোন ধরল।
—কি ব্যাপার তন্ময় , ফোন ধরছ না কেন ?
ঐন্দ্রিলার গলায় উৎকণ্ঠা।
—কি জানি নেটওয়ার্ক ছিল না হয়তো। আমি তো তোমার ফোন মাত্র এখনই পেলাম। কি ব্যাপার , তোমার কি হয়েছে?
তন্ময় উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইল।
—তুমি এক কাজ করো…আজ আর এসো না । আমার দাদী বাসায় বেড়াতে এসেছেন। তোমাকে দেখলে হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে! ঐন্দ্রিলা খুব বিনয়ের সাথে বলল।
তন্ময় জানালো,
—কিন্তু আমি তো চলে এসেছি, এখন তোমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে।
(চলবে)
–বিপাশা বাশার
#বিপাশা_বাশার
বিঃদ্রঃ
এই গল্পের বাকি পর্বগুলো আমার পেইজের পোস্ট করা আছে।“প্রেমে পড়া বারণ”
পর্ব ৮
ঐন্দ্রিলার ঘুম ভেঙে গেল অনেক ভোরে ফজরের আজানের সাথে সাথে। নামাজ পড়ে সে তার বারান্দার দোলনায় এসে বসলো। চারদিকে এখনও পুরোপুরি আলো ফোটে নি। পূবের আকাশে সুবহে সাদিকের নরম রক্তিম আভা। ঐন্দ্রিলা মুগ্ধ হয়ে দেখছে। হঠাৎ চোখ পড়লো সামনের সার্ভিস এ্যাপার্টমেন্টের দিকে। তিনতলার বারান্দায় অসম্ভব সুদর্শন একটি ছেলে দাঁড়িয়ে, স্থির চোখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ছেলেটার চোখের মনির রং সবার মতো কালো নয়। মনে হলো হাল্কা সবুজ বা নীল …..অত্যন্ত আকর্ষনীয় !
চোখাচোখি হতেই ঐন্দ্রিলা চোখ নামিয়ে নিল। সে ভাবলো এই কি আদিত্য ?
ঐন্দ্রিলা আবার মুখ তুলে তাকালো। ওমা ছেলেটা এক নিমেষেই হাওয়া হয়ে গেছে।
কোথায় গেলো সে ?
অনেকক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে আর খুঁজে পেলো না ঐন্দ্রিলা।
কেমন একটা অপূর্ণ মনোভাব নিয়ে সে ঘরে ফিরে এল।
আজ সকালে অনলাইনে একটা এ্যাসাইনমেন্ট সাবমিট করতে হবে। ঐন্দ্রিলা বারবার নিজেকে বলছে,
—ফোকাস ঐন্দ্রিলা, ফোকাস !
~~~##~~~
রমিলা সকালে উঠে রান্না ঘরে নাস্তা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ।
এ বাড়ীতে থাকে চারজন, কিন্তু চারজনের নাস্তা চার রকমের ।
খালু সকালে ব্ল্যাক কফি আর ডিমের সাদা অংশ ভাজি দিয়ে টোস্ট খায়, খালাম্মা নেন হাল্কা গ্রীন টি আর এক বাটি ফ্রেশ ফল।
শীতের দিনে বড়ো আপা পছন্দ করেন চালের আটা রুটি আর ভুনা গরুর মাংস, আর ছোট আপা জ্বালাতন করে সবচেয়ে বেশী। তার নাস্তা নির্ভর করে তার মেজাজ মর্জির উপর, একেক দিন একেক রকম!
জলিল ড্রাইভার প্রতিদিন সকালে এসেই ইন্টারকমে একটা ফোন করে, তারপর একটু রং তামাশা করে রমিলার সাথে। রমিলার খুব ভালো লাগে, দিনের শুরুটা হাসি ঠাট্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। আজ তিনি এখনও ফোন করেন নাই, রমিলা ভাবছে এত দেরী হচ্ছে কেন জলিলের।
টুং করে ঐন্দ্রিলার একটা টেক্সট এলো, নিশ্চিত তন্ময় ! প্রতিদিন সকালে ‘গুড মর্নিং ‘ টেক্সট ওর পাঠানো চাই।
ঐন্দ্রিলা মনে মনে ভাবে,
—হি ইজ সো সুইট! ইয়েট সো প্রেডিকটেবল !
—গুড মর্নিং ঐন্দ্রিলা !
—গুড মর্নিং ‘মিস্টার ফিশ ‘!
ঐন্দ্রিলা একটু মজা করল।
—কেমন আছো প্রিয়তমেষু ? আজ বিকেলে দেখা হচ্ছে কিন্তু ! তোমার জন্য আজ একটা বিশেষ সারপ্রাইজ আছে।
তন্ময় টেক্সটে জানালো।
তন্ময়ের সারপ্রাইজের কোন শেষ নেই। ঐন্দ্রিলা মনে মনে ভেবে একটা ‘স্মাইল’ ইমোজি দিয়ে টেক্সট পাঠিয়ে মিটিমিটি হাসল ।
তন্ময়কে বিয়ে করলে, ওর জীবনে যে আরও কত সব চমক আর সারপ্রাইজ আসবে কে জানে !
প্রথম দেখা হওয়ার তিন দিনের আ্যনিভারসারী কেউ কি করে ? ঐন্দ্রিলা আবারও হাসল মনে মনে।
~~##~~
আজ সন্ধ্যায় বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আদিত্য-এর একক বেহালা কনসার্ট। রূপসা কি করে যেন দুটো টিকেটও জোগাড় করে ফেলেছে।
ঐন্দ্রিলার সময় কাটছে না।
আজ সকালে বারান্দায় কে ছিল ছেলেটা ?
আদিত্য না কি অন্য কেউ? কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে চেহারা টা।
কোথায় দেখেছে সে ?
অনলাইনে এ্যাসাইনমেন্ট সাবমিট করে, ঐন্দ্রিলা বাইরে বেরুলো। সকাল ১১টায় ম্যাকরো ইকোনমিক্সের একটা ক্লাস আছে। জলিল ড্রাইভার গ্যারেজ থেকে গাড়ী বের করে আনতেই একই সময়ে কাল মার্সিডিস গাড়ীটা বের হল সার্ভিস এ্যাপার্টমেন্ট থেকে। গাড়ী দুটো যখন পাশাপাশি এলো , ঐন্দ্রিলা দেখলো সকালে যে ছেলেটা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল সে গাড়ীর পেছনের সিটে বসে আছে । তার পরনে কালো শার্ট, কালো প্যান্ট আর কালো টাই।
ছেলেটা অপলক দৃষ্টিতে ঐন্দ্রিলার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই হাল্কা সবুজ রঙের চোখের মনি , আরও স্বচ্ছ মনে হলো কাছ থেকে দেখে । ঐন্দ্রিলা এবার আর একই ভুল করলো না।
সেও তাকিয়ে রইল যতক্ষণ না গাড়ী দুটো দুদিকে চলে গেল।
ইস্! কেমন তীক্ষ্ণ সম্মোহনী দৃষ্টি ছেলেটার।
জলিল চাপা গলায় বলল ,
—আপা, এই সেই লোক যিনি রাতে গীটার বাজায়। এর নাম ‘ আ’ দিয়ে কি যেন একটা ! রূপসা আপা এর ব্যাপারে আমারে গোয়েন্দা গিরি করতে দিয়েছেন।
—গীটার নয়, উনি খুব সুন্দর বেহালা বাজান।
বলেই ঐন্দ্রিলা গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল।
ইউনিভার্সিটিতে আসতেই রূপসা ফোন দিল
—তুই কই দোস্ত ? ক্যাম্পাসে এসেছিস ?
—হ্যাঁ রে, মাত্র এলাম । ১১ টার ‘ম্যাকরো’ ক্লাসে যাবি না ?
ঐন্দ্রিলা জিজ্ঞাসা করল।
তারা দুজন কাপাচিনো কফি হাতে নিয়ে হাটতে হাটতে গল্প করছে।
—জানিস, আজ মনে হয় আদিত্য কে দেখেছি !
ঐন্দ্রিলা পুরো ঘটনাটা জানালো রূপসাকে ।
সব কথা শুনে রূপসা যেন উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে ! পুঙ্খানুপুঙ্খ ডিটেইল জেনে না নেওয়া পর্যন্ত সে ছাড়বে না ঐন্দ্রিলাকে।
—হুম …. মনে হচ্ছে ছেলেটা একচুয়ালি তোকে নোটিস করেছে।
নইলে সে তোর দিকে কেন এমন গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রবে?
অবশ্য তুই তো ভয়ঙ্কর টাইপের সুন্দরী ।তোর দিকে ইউনিভার্সিটির ছোট বড়ো সব ছেলেদের নজর।
রূপসা অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে ।
ঐন্দ্রিলার মন উদাস হয়ে আছে, সে ভাবছে অন্য কথা। সেই হাল্কা সবুজ রঙের চোখের দৃষ্টি আর বেহালার করুন সুর…..আদিত্যকে মন থেকে সরানো যাচ্ছে না কোন ভাবেই।
—ইজ দিস্ লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট অর ইনফ্যাচুয়েশন ?
বিকেলে তন্ময়ের আসবার কথা।
ঐন্দ্রিলা ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরে এলো। এইবার সে রূপসাকে জানিয়েছে সব কথা, আর কোন কিছু গোপন করে নি।
রূপসা বলা যায় প্রায় জোর করে নিমন্ত্রণ নিলো।
—জানি, আমি ‘কাবাব মে হাড্ডি’ হবো, বাট আই ডোন্ট কেয়ার ! আমি শিং মাছকে দেখতে চাই। ওর বডি ল্যান্গুয়েজ দেখেই বলে দিতে পারব সে তোকে কতটা জেনুইনলি ভালবাসে। তুই তো একটা বোকা টাইপের মেয়ে , কোনদিন ডেট ফেট করিস নাই ! প্লিজ লেট মি বি দা জাজ !
ঐন্দ্রিলার মনে হল,
—রূপসা মনে হয় আজ ওষুধ খায় নি, অসম্ভব হাইপার হয়ে আছে, ননস্টপ কথা বলছে!
ঐন্দ্রিলা আর কথা বাড়ালো না।
বাড়ীতে ফিরে এসে রমিলাকে বলল কড়া করে এক কাপ চা বানিয়ে দিতে। হট শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
একটা হাল্কা পীচ কালারের শিফন শাড়ী পড়ল কি মনে করে। ওর দুধে আলতা গায়ের রঙের সাথে শাড়ীটা মিলে মিশে একাকার । ঘন কালো রেশমী খোলা চুলে ওকে দেখাচ্ছে অপ্সরীর মতো।
রমিলা ঘরে চা নিয়ে ঢুকে ঐন্দ্রিলাকে দেখে বিশাল এক ধাক্কা খেলো।
—ও আল্লাহ্ , বড়ো আপা! আপনারে পরীর মত সুন্দর লাগতাসে !
রমিলা বিস্ময়ে হা করে চেয়ে আছে।
ঐন্দ্রিলা একটু লজ্জা পেল।
—সাজগোজ কি খুব বেশী হয়ে গেছে রমিলা ?
—না না আপা, আপনারে ঐ হিন্দি সিনেমার নায়িকার মতো লাগতাসে। কি জানি নাম , ঐ যে নীল চোখ ?
রমিলা নামটা মনে করতে পারছে না।
—কার মতো? নীল চোখ ? ও আচ্ছা ঐশ্বরিয়া ! থাক আর বেশী বেশী বলতে হবে না। যাও তো দেখো বাসায় ভালো নাস্তা আছে কি
না ? আমার এক বন্ধু বেড়াতে আসবে একটু পরে।
রমিলা খুব আগ্রহ সহকারে বলল,
—কোন বন্ধু আপা ? ঐ যে লন্ডন থেইকা আইছে ? জলিল ড্রাইভার আমারে বলছে উনি না কি খুব ভালো আর ভদ্র কিসিমের !
ঐন্দ্রিলা একটু উদাস ভাবে বললো,
—হুম….আমার ছোটকালের স্কুলের বন্ধু, তন্ময়।খুব ভাল ছেলে ।
কিছুক্ষণ পরেই কলিং বেল বেজে উঠলো। রূপসা এসেছে আর সাথে সাথে ঐন্দ্রিলার দাদীও ঘরে ঢুকলেন । দাদী মনে হলো কেমন মুচকি মুচকি হাসছে রূপসার দিকে চেয়ে।
—দাদী, আপনি হঠাৎ কি মনে করে ? সব কিছু ঠিক আছে তো?
ঐন্দ্রিলা একটু চিন্তায় পড়ে গেছে।
কি হচ্ছে এ সব ?
দাদী কেন এলো হঠাৎ করে ?
—ঐন্দ্রিলা আম্মাজান , আমাকে নিয়ে একদম চিন্তা করবে না । আমি ফার্স্ট ক্লাস আছি । আজ সকালে পাড়ার মহিলাদের সাথে তিন মাইল হেঁটেছি !
দাদী খুব গর্বের সাথে বললেন।
—কিন্তু তুই এতো সুন্দর শাড়ী পড়ে কোথায় যাচ্ছিস?
ঐন্দ্রিলা কিছু বলার আগেই রূপসা উত্তর দিলো,
—দাদী , আজ রাতে আমরা একটা কনসার্ট দেখতে যাবো দুজন।
—ও আচ্ছা। ঐন্দ্রিলা, যাও মা রমিলা কে বল একটু চা করতে।
—জী দাদী, এখনই বলছি । আপনি একটু বসেন, আরাম করেন।
ঐন্দ্রিলা কোনমতে ড্রয়িং রুম থেকে ছিঁটকে বেড়িয়ে এসে তন্ময়কে ফোন দিল। কিন্তু সে ফোন ধরছে না।
ঐন্দ্রিলা বার বার ফোন করছে।
পাঁচ বারের বার তন্ময় ফোন ধরল।
—কি ব্যাপার তন্ময় , ফোন ধরছ না কেন ?
ঐন্দ্রিলার গলায় উৎকণ্ঠা।
—কি জানি নেটওয়ার্ক ছিল না হয়তো। আমি তো তোমার ফোন মাত্র এখনই পেলাম। কি ব্যাপার , তোমার কি হয়েছে?
তন্ময় উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইল।
—তুমি এক কাজ করো…আজ আর এসো না । আমার দাদী বাসায় বেড়াতে এসেছেন। তোমাকে দেখলে হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে! ঐন্দ্রিলা খুব বিনয়ের সাথে বলল।
তন্ময় জানালো,
—কিন্তু আমি তো চলে এসেছি, এখন তোমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে।
(চলবে)
–বিপাশা বাশার
#বিপাশা_বাশার