“প্রেমে পড়া বারণ “
পর্ব ২
রমিলা কি যে করবে বুঝে পাচ্ছে না । জলিল হঠাৎ এইসব কি শুরু
করল সিনেমা হলের ভেতর । আচ্ছা , জলিলের কোন খারাপ উদ্দেশ্য নাই তো? অবশ্য রমিলার যে একটু একটু ভাল লাগছে না , তাও না ।
ওদের বয়সটাই তো এমন।
একসময় জলিল রমিলাকে জড়িয়ে ধরে চুমুতে চুমুতে ঠোঁট ভিজিয়ে দিল। রমিলার বুকে যেন অসংখ্য ড্রাম বেজে চলছে , নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম ! আর এমনি সময় টিকেট চেকার এসে ওদের টিকেট দেখতে চাইলো। জলিল ভীষন বিরক্ত হয়ে বললো , “বেটা আর সময় পাইলো না আসার “। রমিলা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
গভীর রাতে ঐন্দ্রিলার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল । ওদের আ্যপার্টমেন্টের সামনে একটা সার্ভিস আ্যপার্টমেন্ট হয়েছে কিছুদিন হলো। সেখান থেকে করুণ বেহালার সুর ভেসে
আসছে।
এতো রাতে কে এমন অসাধারন নিখুঁত বেহালা বাজাচ্ছে ?
ঐন্দ্রিলার খুব জানতে ইচ্ছে হলো সে কে ? তার মতোই একাকী কোন রাতজাগা পাখী হয়তো। ঐন্দ্রিলা অনেকক্ষণ কান পেতে শুনলো বারান্দার দোলনাতে বসে।
সুরটি ঐন্দ্রিলার খুব চেনা । সোপিন এর নকটারনের সি শার্প মাইনোর। পিয়ানোতে ওর নিজেরও বেশ দখল আছে এই সুরটির।
আহা কি করুন হৃদয় ছোঁয়া সুর !
গুলশান- ২ এর ডিপলোমেটিক জোনে ঐন্দ্রিলাদের বাড়ী । এর আশেপাশে আজকাল বেশ কিছু সার্ভিস আ্যপার্টমেন্ট হয়েছে । ঢাকায় আজকাল কেউ বিদেশ থেকে বেড়াতে এলে আত্মীয়স্বজনদের বাড়ীতে আর উঠতে চায় না , প্রায়শঃ তারা এই সব সার্ভিস আ্যপার্টমেন্টে থাকে।
এদের ফ্যাসিলিটিগুলো খুবই চমৎকার , ফুল ফার্নিশড , ২৪/৭ গাড়ী , উবার , টেক আউট খাওয়া- দাওয়া , লন্ড্রি সার্ভিস ইত্যাদি ইত্যাদি । তাই যারা অল্প কিছুদিনের জন্য দেশে বেড়াতে আসেন কিংবা কাজ উপলক্ষ্য করে দেশে আসেন , তাদের জন্য এইসব সার্ভিস আ্যপার্টমেন্টেগুলো বেশ উপযোগী । কিন্তু মুশকিল হলো এতে করে আবাসিক এলাকার লোকজনেরা প্রতিবেশীদের সাথে সখ্যতার সুযোগ থেকে বন্চিত
হয় , একে অপরকে চেনার কোনই অবকাশ থাকে না ।
ঐন্দ্রিলার মাঝে মাঝে খুব একাকীত্বের কষ্ট হয় । মনে হয় কেউ একজন যদি থাকতো যার সাথে মনের ভাবনা গুলো শেয়ার করা যেতো।
এতো ছেলে প্রেম নিবেদন করলেও একটা গভীর প্রেম তাঁর জীবনে কখনও এলো না। কাউকে সে রকম ভাবে ভাল লাগেনি , মনে ধরেনি।
আজকালকার ছেলেরা পাত্তা না পেলে , নেক্সট অপসান খোঁজে।
মানুষের মনের গভীরতা কমে আসছে ধীরে ধীরে।সবাই সুপারফিসিয়াল হাল্কা যুগোপযোগী হিন্দি সিরিয়াল টাইপ ভালবাসার পেছনে ছুটছে।
ঐন্দ্রিলার ভাবনা চিন্তা এখনও সেকেলে।
অড্রে হেপবার্নের “ রোমান হলিডে “ আর ইনগ্রিড বারগমেনের “ কাসাব্লানকা “ সিনেমার মতো অতুলনীয় ক্লাসিক রোমানটিক টাইপের গভীর প্রেম কি কখনও আসবে তার জীবনে ?
ঐন্দ্রিলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
একমাত্র রূপসার সাথে মনের কথা শেয়ার করতে পারে সে ।
কিন্তু রূপসার তো আবার এটেনশন ডেফিসিট ডিসওর্ডার রোগ আছে যার জন্য ছোটকাল থেকেই ওর ওষুধ খেতে হয়।
ওর সাথে কথা বলতে গেলে অল্প কিছুক্ষণ পরই সে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। রূপসা এমনিতেও অবশ্য অনেক ড্রামাটিক, কিন্তু ওর মনটা খুবই সরল আর সাদা ।
আচ্ছা তন্ময় এতোদিন পর কেন এলো আর কেনই বা ওকে
খুঁজছে ? ওর তো এতোদিনে অনেক গার্লফ্রেন্ড থাকার কথা
লন্ডনে। ঐন্দ্রিলা ভাবলো তন্ময়ের সাথে দেখা হলে খারাপ হতো না।
কেমন হয়েছে দেখতে সে এখন ?
নিশ্চয়ই কথায় কথায় ইংরেজী বলে, সেটাই স্বাভাবিক যেহেতু অনেকদিন ধরে দেশের বাইরে থাকে।
রমিলার চোখেও আজ রাতে কোনো ঘুম নেই । শুয়ে শুয়ে সে সপ্তবর্নের রঙীন স্বপ্ন দেখছে, ভাবছে আর মিটি মিটি হাসছে । জলিল আজ একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে সিনেমা
হলে।
যদিও কেমন যেন শিহরণ লাগছে ওসব কথা ভাবতেই। কাউকে তো বলাও যাবে না এইসব অভিজ্ঞতার কথা।
ছি ছি ! কি লজ্জার ব্যাপার !
আচ্ছা, ওর যে একটু একটু ভাল লাগলো, এটা কি পাপ ? ভালোবাসার মানুষের হাত ধরা নয়তো চুমু খাওয়া কি খুব অন্যায় ? টিভি – সিনেমাতে হর হামেশাই এসব দেখায়।
জলিলের সাথে বিয়ে হলে ওদের জীবন ভালবাসায় কানায় কানায় পূর্ণ হতো।
আহা এই সব স্বপ্ন দেখেও সুখ !
পরদিন শুক্রবার সকাল এগারোটার দিকে রমিলা ঐন্দ্রিলার
রুমে আস্তে আস্তে নক করলো ।
— আপা , আপনার জন্য একটা জিনিস আসছে ।
ঐন্দ্রিলা দরজা খুলতেই দেখলো, এক রাশ লঙ স্টেম রক্ত লাল গোলাপ আর চকোলেট এসেছে ওর জন্য।
প্রেরকের নাম নেই ।
শুধু একটা কার্ডে লেখা :
“I’ve come here with no expectations, only to profess, now that I am at liberty to do so, that my heart is, and always will be, yours.”
ঐন্দ্রিলা বিস্ময়ে হতবা।
এই যুগে কেউ কি আবার তার মতো সেকেলে মনোভাব নিয়ে বসে বসে এখনও জেইন অস্টেনের “সেন্স এন্ড সেন্সিবিলিটি “ পড়ে বা সেই বই থেকে কোট করে ?
এতো সুন্দর গোলাপ কে পাঠালো ?
নাম লিখলো না কেন ?
ইস্ ! আজ দিনটা হঠাৎ করেই কি ভীষণ সুন্দর হয়ে গেল !
-বিপাশা বাশার